ভালোবাসা কারে কয়,৩৩,৩৪
শবনম মারিয়া
পর্ব ৩৩
তূর্ণর ফোন একের পর এক বেজেই চলছে। তূর্ণ রিসিভ করছে না। চেয়েছিল নাম্বারটা অনেক আগেই ব্লক করে দিতে। কিন্তু কেনো যেন পারে না। হাত কাঁপে। কিন্তু তূর্ণর এই মহিলাকে পছন্দও না। প্রায়ই ফোন করে তূর্ণকে। তূর্ণ এরকমই ফেলে রাখে তখন ফোনটা। মেজাজ ভীষণ বিগড়ে যায়। কখনো কখনো ফোন ধরে আছাড় মারে। কখনো তো বন্ধ করে রাখে। আজ ফোনটা রেখে ছাদে চলে যায়। এই কনকনে শীতের মধ্যে ছাদে গিয়ে বসে থাকবে। এই শীতের মধ্যে একটু সিগারেট যেন উষ্ণতা আনে। তূর্ণ ডেস্কের ড্রয়ার থেকে সিগারেটপর প্যাকেটটা বের করে পকেটে নেয়। তূর্ণ রেগুলার সিগারেট খায় না। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয়। ইচ্ছে হয় মনের দুঃখগুলোকে সিগারেটের ধোয়ার সাথে উঁড়িয়ে দিতে। তাই দেয়।
তূর্ণ চলে গেল ছাদে। গিয়ে সিগারেট ধরিয়ে সিগারেট টানছিল আর ধোয়া ছাড়ছিল। কুয়াশায় মিশে যাচ্ছে সিগারেটের ধোয়াগুলো। এর মাঝেই ছাদে পরশি এলো। দূর থেকে দেখেই বুঝতে পারলো এটা তূর্ণ। তবে তূরণর হাতে সিগারেট দেখে পরশি খুব অবাক হলো। এতদিনে সে কখনো দেখেনি যে তূর্ণ স্মোক করে। কিন্তু কিছুই মনে করল না পরশি। বরং তার মনে পড়লো অন্যকিছু।
পরশির খুব চেনা মানুষটা সারারাত সিগারেট টানতো। একের পর এক সিগারেট শেষ করে ফেলতো পরশির সাথে গল্প করতে করতে। পরশি অনেক রাগ করেও সিগারেট ছাড়াতে পারতো না। খুব আবেগ জড়িয়ে নেশালো কন্ঠে লোকটা বলতো,
“সিগারেট আর তুমি হলে আমার প্রাণ। মরে গেলেও এ দুটো ছাড়তে পারব না।”
পরশি মনোযোগ দিতে শুনতো সেই কন্ঠ। কি যেন ছিল সেই কথাগুলোয়। কই এই কথাগুলোও তো রাখলো না। মরে গিয়েও তো নেই পরশির কাছে। তাহলে কেন বলতো কথাগুলো?
পরশি ভাবতে ভাবতে সামনের দিক আগালো। তূর্ণ পরশির উপস্থিতি টের পেয়ে পিছনে ফিরে তাকালো। মুখ থেকে অনেকগুলো ধুঁয়া ছেড়ে বলল,
“আরে পরশি আপনি?”
“হ্যাঁ। আসলাম একটু শীত কেমন পড়েছে অনুভব করতে।”
“ওহ্ আচ্ছা।”
“তা আপনি আবার সময় পেলেন ছাদে আসার জন্য?”
“এই আসলাম একটু।”
তূর্ণর হাতে সিগারেটটা জ্বলছে৷ পরশি সিগারেটের দিক তাকিয়ে বলল,
“আপনি স্মোক করেন?”
তূর্ণর খেয়াল হলো। সে হাত থেকে সিগারেটটা ফেলে দিতে চাইলে পরশি মানা করে বলল,
“উহু, আমার জন্য ফেলতে হবে না। অসুবিধা নেই কোনো।”
তূর্ণ সিগারেটটা ফেলল না। পরশি বলল,
“আপনাকে তো সচারাচর দেখিনি স্মোক করতে। আজ প্রথম দেখলাম। তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
তূর্ণ ধোঁয়া ছেড়ে বলল,
“মেজাজ খারাপ হলে মেজাজ ভালো করার সবথেকে ভালো ওষুধ। এই যে দেখেন বাতাসের সাথে ধোঁয়াটা মিশে চলে যায়, মনে হয় দুঃখ, রাগ, জেদ, কষ্ট সব যেন উড়ে চলে যাচ্ছে।”
“আসলেই কি তাই হয়?”
“হুম৷ বলতে পারেন আপেক্ষিক ব্যাপার-স্যাপার।”
পরশি হাত পেতে এগিয়ে দিল তূর্ণর দিকে। তূর্ণ অবাক হয়ে তাকালো পরশির দিকে। পরশি হাতটা ওভাবেই রেখেছে। তূর্ণ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে?”
“আমাকে একটা দিন।”
“কি?”
“সিগারেট। আছে না? না কি নেই?”
“আছে। তবে আপনি সিগারেট দিয়ে কি করবেন?”
“মনের দুঃখ, কষ্ট সব উড়িয়ে দিবো।”
“আর ইউ সিরিয়াস?”
“আরে বাবা হ্যাঁ।”
“আপনি পারবেন?”
“হ্যাঁ। এটা আমার ফার্স্ট টাইম না। এর আগে অনেক করেছি।”
তূর্ণ পরশিকে একটা সিগারট দিল। দুজনেই মনোযোগ সহকারে সিগারেট টানতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পর তূর্ণ জিজ্ঞেস করল,
“মনে কিসের দুঃখ শেয়ার করবেন না?”
পরশি তূর্ণ দিক তাকিয়ে বলল,
“সব সময় তো আমিই বলি। আজ না হয় আপনি বললেন৷ অসুবিধা কি?”
“আমি আর কি বলবো?”
“কেন মানসিকভাবে অনেক শান্তিতে আছেন?”
তূর্ণ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। তারপর বলল,
“আমার মেজাজ খারাপের কাহিনি শোনার মতো না৷ তেমন কিছুই না।”
“বললে কোনো অসুবিধা?”
তূর্ণ তাকায় পরশির চোখের দিকে। পরশির তাকায় তূর্ণর চোখের দিকে। কতক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তূর্ণর মনে হয় এই চোখের দিক তাকিয়ে অনেক কিছু ভুলতে পারবে সে। কিন্তু পরশি বলল,
“কি হয়েছে? আমার দিক তাকিয়ে না থেকে বলুন।”
“না কিছু না।”
এই বলে তূর্ণ চলে যাওয়া ধরছিল। পিছন থেকে পরশি তূর্ণর হাত টেনে ধরে বলল,
“এই মিস্টার!”
তূর্ণ থমকে দাঁড়ায়। পিছে ফিরে পরশির দিক তাকায়। পরশি মুচকি হসেে বলল,
“শুনান না আপনার ছ্যাঁকা খাওয়ার কাহিনী।”
তূর্ণ কপালে ভাজ ফেলে জিজ্ঞেস করল,
“আমার ছ্যাঁকা খাওয়ার কাহিনী!”
“জানি, আপনি অনেক বাজে ভাবে ছ্যাঁকা খেয়েছেন৷”
এই বলে পরশি তূর্ণর হাতটা ছেড়ে দিল। তূর্ণ বলল,
“আমি কোনো ছ্যাঁকা খাই নি।”
“খেয়েছেন তো অবশ্যই। বলেছিলেন না প্রেম ভালোবাসায় আপনি মোটেও বিশ্বাসী নন। এসব আপনার কাছে মনে হয় ক্ষনিকের এ্যাট্রাকশন। যা কিছু সময় পর ফুরিয়ে যায়। আরও কি কি যেন বলেছিলেন একদিন৷ মনে আছে আমার। ঐ দিনই টের পেয়েছি খুব বাজে ভাবে ছ্যাঁকা খেয়েছেন।”
“আচ্ছা আমার এসব কথায় আপনার কেন মনে হলো আমি ছ্যাঁকা খেয়েছি? এসব কথা কি অন্য কেউ বলতে পারে না?”
“আমার মনে হয় না কারো এমন হয়৷ কারণ যার ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না সে-ই বলে এরকম কথা।”
“আপনার ধারণা ভুল।”
“কেন?”
“আমি ছ্যাঁকা খাই নাই। জীবনে প্রেমই আসে নি। আমি এসবে বিশ্বাসী না।”
“কেন?”
“শুনবেন গল্প?”
“সেটাই তো শুনতে চাচ্ছি।”
“মনে আছে একবার বলেছিলাম আমার বাবা মায়ের সাথে আমার সম্পর্ক স্বাভাবিক না?”
“হ্যাঁ। বলেছিলেন তো। কিন্তু কেন?”
“আমার বাবা মা অনেক অল্প বয়সে বিয়ে করে। প্রেম করতো। ভালোবাসতো একে অপরকে অনেক। বাবার পড়া শেষ হয় নাই। মায়েরও হয় নাই। কিন্তু মায়ের বিয়ে হয়ে যাবে শুনে বাবা মা পালিয়ে অল্প বয়সে বিয়ে করে। আমার দাদু দাদির আবার এতে সমস্যা ছিল না। তারা আবার ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা বাবা মাকে মেনে নেয়। বিয়ের পর বাবা মা দুজনেই নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। শুরুতে তাদের মধ্যে অনেক প্রেম ছিল। ভালোবাসা ছিল। একে অপরের জন্য জান দিতে পারতো। মায়ের পড়া পুরোপুরি শেষ হয় নি, তখন আমি হয়ে যাই। বাবা মা কখনোই চায় নি আমাকে। তারপরেও আমার জন্ম হলো। আমার সব দায়িত্ব দাদি নিল। মা তার পড়াশোনা চাকরি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠলো। বাবাও তার চাকরি নিয়ে ব্যস্ত হলেন। মাঝে আমার খোঁজ তো তারা রাখেনও না। তবুও দিন শেষে মাকে পেতাম এটাই শান্তি ছিল। কিন্তু আমার মার আমার প্রতি কোনো মমতা, ভালোবাসা ছিল না। সে তার ক্যারিয়ার নিয়ে সিরিয়াস। বাবাও। একসময় তাদের দুজনের মধ্যকার সম্পর্কেও ফাটল ধরে। আমাকে নিয়েও ঝগড়া হতো৷ মা প্রায়ই বলতো এই ছেলেকে আমার পক্ষে সামলানো সম্ভব না। এসব নিয়ে অনেক ঝগড়া হতো। দুজনের মধ্যের ভালোবাসা মিটতে থাকলো আস্তে আস্তে। ভালোবাসার মানুষগুলো পরিণত হতে থাকলো বিরক্তিতে। রোজকার ঝগড়া দেখতাম। সেরকম কিছু না বুঝলেও এটুকু বুঝতাম আমার বাবা মায়ের আমাকে নিয়ে অনেক সমস্যা। একসময় সম্পর্কটা হয়ে গেল দায়বদ্ধতার মতো। তাও তারা এই দায়বদ্ধতার মাঝে থাকতে পারছিল না। সিদ্ধান্ত নিল ডিভোর্সের। এতো ভালোবাসার সম্পর্কের সমাপ্তি হলো। তারা আলদা হলো। কিন্ত এতো কিছুর মধ্যে তারা কখনো আমার কথা ভাবে নি। আমি কান্না করতাম মায়ের কাছে থাকার জন্য। কিন্তু মা আমাকে ঝামেলা ভাবতো। তাই আমার থেকে দূরে থাকতে শুরু করল। বাবারও আমার প্রতি কোনো খেয়াল ছিল না। সত্যি বলতে শুনেছি সম্পর্কের শুরুতে তাদের মধ্যে অনেক ভালেবাসা ছিল। কিন্তু কোথায় গেল ভালোবাসা? ভালেবাসা তো ফুরিয়ে গিয়েছে। রইলো কি? আমি! আর আমি তাদের কাছে ঝামেলা। কখনো বাবা মায়ের দায়িত্ব পালন করেনি। আমি তাদের কাছে সামান্য ভুল মাত্র। বাবা মা ছাড়া সব সময় কাটিয়োছি। দাদা দাদি বড় করেছে। সবকিছু তারা করেছে আমার জন্য। এটাকে ভালোবাসা বলে? তাহলে ভালোবাসার মতো নিকৃষ্ট কিছু নেই। এই সাময়িক অনুভূতি খারাপ। অনেক বেশি খারাপ। ওনাদের সাময়িক অনুভূতির জন্য আমার ছোটবেলা নষ্ট হয়েছে। আর পাঁচটা দশটা বাচ্চার মতো বাবা মা ছিল না আমার সাথে। তাই আমি এই ভালোবাসায় বিশ্বাস করি না। এই ক্ষনিকের অনুভূতি আমার পছন্দ না। ঘৃণা করি এগুলো। এগুলো হয় তো এখন কিছুই না। এখন আমি ঠিক আছি। কিন্তু ঐ ছোটবেলা পাওয়া কষ্টগুলো মনে গেঁথে গিয়েছে। চেয়েও ভুলতে পারিনি। এখনও কষ্ট দেয়। বড় হয়েছি। অনেক বয়স হয়েছে। তবুও মনের মধ্যকার ছোট্ট বাবা মায়ের অবহেলিত বাচ্চাটার কষ্ট রয়ে গিয়েছে আজীবন। তাই এসবে আর বিশ্বাস হয় না। মনে হয় না ভালোবাসা কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয়। না হলে এতো ভালোবাসার মানুষগুলোও এক সময় একে অপরকে কেন ছাড়বে? কেন তাদের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে যাবে? ভয় হয়। ভালোবাসতে ভয় হয়। তাই কাউকে ভালোবাসা হয় না। যদি সে ভালোবাসা এক সময় অবহেলায় আর পরে ঘৃণায় পরিণত হয়! এইজন্য এই ভালোবাসা নামক জিনিসটাকে জীবনে আনতে চাই না। দাদু দাদি সবসময় আমাকে বিয়ে নিয়ে জোর করে। কিন্তু আমি এসবে জড়াতে চাই না। কারণ একজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পরে যদি সম্পর্ক না টিকে! যদি একটা পরিবার তৈরি হয় তাহলে সম্পর্কের ভাঙনে কষ্ট হবে পরিবারের বাকি সদস্যগুলোর। আমি চাই না কোনো শিশু আমার মতো বাবা মা থেকেও না থাকার মতো হয়। এগুলো অনেক কষ্টদায়ক।”
তূর্ণর চোখ শীতল। পরশি খুব মনোযোগ দিয়ে চুপচাপ শুনছে তূর্ণর কথাগুলো। খুব খারাপ লাগছে কথাগুলো শুনে। কিন্তু তূর্ণর ভাবনাতে যুক্তি নেই৷ ও একটা মাত্র সম্পর্ক দেখে এমন বিশ্বাস করে? সব সম্পর্ক তো এমন ভাঙে না। পরশি বলল,
“শুধুমাত্র একটা ব্যর্থ সম্পর্ক দেখে আপনার মনে ভালোবাসা নিয়ে এসব ধারণা কেন? ভালোবাসা ব্যর্থ হলেও তো অনেকের ভালোবাসা সফল হয় তাই না?”
“না হয় না। শুধুমাত্র একটা উদাহরণ না৷ আরও একটা উদাহরণ আমার দেখা। আরও একটা মানুষের জীবন নষ্ট হয়ে গিয়েছে এইসব ভালোবাসা নামক জিনিসের জন্য। বাবা মায়ের ভালোবাসা নামক জিনিসটার জন্য মেয়েটা ভুক্তভোগী। জীবনটা তার অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।”
“মানে? আর কে?”
“চন্দ্রার মা, মানে আমার ফুফু। সেও কাউকে অনেক ভালোবেসেছিল। ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। সুখে সংসার বেঁধেছিল। সেই সুখের সংসারে কবে যেন আমার ফুফার ভালোবাসা প্রতারণায় পরিণত হলো। সে অন্য নারীতে আসক্ত হলো। শুরু হলো আমার ফুফুর সংসারে অশান্তি। এমন চলতে চলতে আমার ফুফু আর সইতে পারলো না আর। একদিন এই পৃথিবী থেকে চলে গেল ভালোবাসা নামক অনুভূতির কাছে হেরে। যার যাওয়ার সে চলে গিয়েছে। আমার ফুফা তার মতো ভালো আছে। কিন্তু মাঝ দিয়ে চন্দ্রা বাবা মা হারিয়েছে। জীবন তার কঠিন হয়েছে।”
পরশির কথাগুলো শুনে অনেক খারাপ লাগলো। সে কিছু বলল না। তূর্ণই আবার বলল,
“এমন অনেক ঘটনা দেখেছি। তাই ভালোবাসার উপর বিশ্বাস নেই। জীবনকে যারা কঠিন বানিয়েছিল তাদেরও ঘৃণা করি।”
পরশি বলল,
“বুঝেছি। হয় তো সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না৷ কিছু ভালোবাসা ঠকায়। কিছু ভালোবাসা দূরে গিয়ে কষ্ট দেয়। ভালোবাসা বড়ই অদ্ভুত!”
তূর্ণ সামান্য হেসে বলে,
“সত্যিই। এই অদ্ভুত জিনিস থেকে দূরে থাকা ভালো। কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয় ভালোবাসা হয় তো এমনি এমনিই হয়ে যায়। টের পাওয়া যায় না এটা কিভাবে আসে জীবনে। হঠাৎ করে মানুষ কারো প্রতি ভীষণ দুর্বল হয়ে যায়। কেমন যেন অনুভূতি তৈরি হয়।”
“কারো প্রতি জন্মেছে এমন অনুভূতি?”
তূর্ণ তাকায় পরশির দিক। কিছুক্ষণ পর চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলে,
“জানি না। কনফিউজড। যদি অনুভূতিগুলো ফুরিয়ে যায়। হয় তো কোনো এক সময় এই অনুভূতিগুলো ফুরিয়েই যাবে। তাই অনুভূতিগুলোকে জন্মাতেই দিই না।”
কথাগুলো বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তূর্ণ। পরশি বলল,
“একবার ভালোবেসেই দেখুন না। যদি এমনও হতে পারে এই ভালোবাসা কখনো ফুরালো না৷ চিরস্থায়ী হয়ে থাকলো। যদি কখনো অনুভূতি জন্মাতে চায়, তবে জন্মাতে দিন৷”
“দাদু বলে কিছু ভালোবাসা ফুরায় না। যেমন তাদের ভালোবাসা ফুরিয়ে যায় নি। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে তাই হবে বলে বিশ্বাস করি না।”
“আর সবার ক্ষেত্রেও যে ভালোবাসা স্বল্পস্থায়ী হবে তাও কিন্তু না।”
“হয় তো।”
দুজনেই চুপ থাকে কতক্ষণ। তারপর পরশি জিজ্ঞেস করে,
“আচ্ছা চন্দ্রা অস্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে মানে?”
“মানে হলো, ওর বাবার প্রতি আজীবনের ঘৃণা। অনুভুতিবিহীন হয়ে গিয়েছে। মাকে হারিয়ে ওর শৈশব খুব কষ্টে কেটেছে। সব নিজ চোখে দেখে ওর বাচ্চা মনে প্রভাব পড়েছিল। আর কিছুই না। এখন চন্দ্রা ভালো আছে।”
“ওহ্। শুনে খুবই খারাপ লাগলো।”
পরশির ফোন বাজতে শুরু হলো। পরশি তূর্ণকে বলল,
“আচ্ছা আমি এখন যাই। একটা ফোন এসেছে।”
“আচ্ছা। শুভরাত্রি।”
“শুভরাত্রি।”
চলবে….
ভালোবাসা কারে কয়
শবনম মারিয়া
পর্ব ৩৪
পরশি বাসায় এসে ফোন কলটা ব্যাক করল। ফোন করেছেন অফিসার রেহানা। পরশি ফোন ব্যাক করে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কেমন আছেন ম্যাম?”
“ভালো নেই বাবা।”
“কেন?”
“মনটা অনেক খারাপ।”
“কিছু হয়েছে ম্যাম?”
“আর কি হবে! আমার জীবনে যেই কষ্ট সেই কষ্ট নিয়েই বেঁচে আছি।”
“আপনার ছেলের সাথে কথা হয়েছে?”
“কথা হলে কি আর কষ্টে থাকতাম?”
“ম্যাম, প্লিজ যেই ছেলের আপনার জন্য কোনো চিন্তা নেই, যে আপনার সাথে কথাও বলতে চায় না তার জন্য এতো কষ্ট পাওয়ার কোনো দরকার নেই৷ তাকে ভুলে যান।”
“কি করব। মা তো। মা হলে বুঝতে মায়েদের কি জ্বালা। অবশ্য দোষ আমারও ছিল। তাই হয় তো এখন এতো কষ্ট পেতে হচ্ছে।”
পরশি চুপ করে রইলো। রেহানা বললেন,
“পরশি? চুপ হয়ে আছো কেন?”
পরশি বলল,
“ভাবছিলাম ম্যাম।”
“কি ভাবছিলে?”
“ভাবছিলাম আমার মায়ের ক্ষেত্রে কেন উল্টা হয় সবকিছু। আমার মায়ের কি একটুও আমার জন্য জ্বালা হয় না? চিন্তা হয় না?”
“পরশি তোমার মায়ের অবস্থা তুমি জানো। তোমার মা তোমার সাথে এমন কেন করেন? তোমার চিন্তা করেই করে। সবাই তোমায় মায়ের কাছে তোামর নামে খারাপ কথা বলে। এগুলো শুনতে শুনতে তোমার মায়ের এসব আর সহ্য হয় না। তারপরেও মহিলার কত কিছু সইতে হয়? তোমার বাবা অসুস্থ। তার উপর ছোট মেয়ের বিয়ে নিয়ে ঝামেলা। আবার তোমার ভাই ভাবি কেমন ব্যবহার করেন। সবকিছুতে মহিলা হাঁপিয়ে উঠেছে। মানুষ এক সময় এগুলো দেখতে দেখতে, সইতে সইতে হাঁপিয়ে উঠে। আর ভালো লাগে না। তার মন চায় দূরে কোথাও চলে যেতে। চায় একটা ঝামেলাবিহীন জীবন পেতে। আমাকেই দেখো না। ভালো লাগছিল না দেখে তিন মাসের ছুটি নিয়ে এখানে এসে বসে আছি। তোমার মা তো চাইলেই তা পারছেন না। তার সবকিছু সহ্য করে ঐ সংসারে পড়ে থাকতে হয়। তোমার মা চায় তুমি বিয়ে কর। তুমি সংসার কর। তুমি আর পাঁচটা মেয়ের মতো জীবন কাটাও। স্বামী সংসার এগুলো নিয়ে ব্যস্ত হও। তাহলে মানুষ কিছু বলবে না। তোমার মায়ের কটু কথা শুনতে হবে না। কিন্তু তুমি এগুলোর বিরুদ্ধে। তাই তোমার মা রাগ হয়ে আছেন। কিন্তু তার মনটা একবার বুঝলে জানতে পারবে তার মনে তোমায় নিয়ে কত চিন্তা।”
“হয় তো। কিন্তু আপনিই বলুন ম্যাম, আমি কি এভাবে ভালো নেই? আমি এভাবে সম্মান পাবো না?”
“অবশ্যই তুমি এভাবে ভালো আছো। নিজের একটা জীবন আছে৷ আর সম্মান পাও না কে বলেছে? অবশ্যই সম্মান পাও একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে। আমি নিজেও ভালো আছি আছি এই জীবনে। তবে লোকেরা আমায় খারাপ জানে কারণ আমার সংসার টিকেনি৷ তাতে আমার কি আসে যায়? কিন্তু যায় আসে আমার তাহরানের জন্য। ছেলেটাও বাকি সবার মতো আমায় ভুল বুঝে গেল। আমার ভুল ছিল একটাই আমি ক্যারিয়ার নিয়ে এতোই ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম যে ছেলেটাকে সময় দেইনি। ছেলেটাকে ঝামেলা মনে হয়েছে। আর এই দোষের জন্য আমাকে আজীবন কষ্ট পেয়ে যেতে হচ্ছে।”
“আচ্ছা ম্যাম?”
“হুম।”
“আপনি বলেন যে তাহরান তার বাবাকেও পছন্দ করেন না। তাদের সম্পর্কও ওতোটা ভালো না। তবে থেকে বড় হয়েছে তার কাছেই। তাহলে কি আপনার মনে হয় না একবারের জন্যও যে তাহরানের বাবাই তাহরানের চোখে আপনাকে খারাপ করেছেন?”
“না পরশি। এই কথা তোমাকে আগেই বলেছি যে তাহরানের বাবা এমন কখনো করবেন না। আর তাহরানের দাদা দাদিও না। তাহরান নিজের বাবাকেও পছন্দ করে না। তাহরান কেমন যেন একা হয়ে গিয়েছে। এর পিছনে দোষ তাহরানের বাবার আর আমার দুজনেরই। আমি যতদূর জেনেছি বাবা ছেলের মধ্যে আজ পর্যন্ত ভালোভাবে কখনো কথা হয় নাই।”
“হুম। জানেন তো আজ একজনের গল্প শুনলাম। তার গল্পটাও এমনটাই কিছু। মা বাবার ডিভোর্স। এইজন্য বাবা মায়ের সাথে সম্পর্ক খারাপ। তার কাহিনি শুনে অনেক খারাপ লেগেছে অনেক ছোটবেলায় হয়ে যাওয়া কাহিনি এখনও ভুলতে পারেনি। এখনও অনেক কষ্ট পায় এইজন্য। ভালোবাসাকে ঘৃণা করে।”
“কি অদ্ভুত না! কত মানুষের কাহিনি মিলে যায়। কত মানুষ কষ্টে আছে ভাবতে পারো!”
“হুম। ম্যাম প্লিজ মন খারাপ করবেন না৷ তাহরান একদিন নিশ্চয়ই নিজের ভুল বুঝবেন আর আপনার কাছে আসবেন৷”
“জানি না। আজও ফোন করেছিলাম অনেক। ফোন রিসিভ করলো না।
“কোনো একদিন করবে। আপনি এখন রেস্ট নিন। ভাল মতো ঘুরে ফিরে আসুন।”
“হ্যাঁ। খুব শীঘ্রই দেখা হচ্ছে কিন্তু।”
“জি।”
.
চন্দ্রা জব শুরু করেছে প্রণয়ের অফিসেই। প্রণয়ই তূর্ণকে বলেছিল ওদের অফিসে ইন্টার্ন হায়ার করছে। চন্দ্রাকে চেষ্টা করতে বলতে। চন্দ্রাও রাজি হলো। আর তূর্ণও কিছুটা স্বস্তি পেল। প্রণয়ের অফিস মানেই চন্দ্রা প্রণয়ের চোখে চোখে থাকবে। কি করবে না করবে সবই প্রণয়ের খেয়ালের মধ্যে থাকবে। তূর্ণর চন্দ্রাকে নিয়ে ভয় হয় না জানি মেয়েটা কোথায় কি করে ফেলে! কিন্তু প্রণয় থাকলে ভরসা পায় একটু। তূর্ণ মনে করে এই জীবনে প্রণয় তার জন্য একটা আশীর্বাদ। এমন বন্ধু কয়জন পায়? কি সুন্দর তার বোনটাকে আগলে রাখে। কতকিছু করে। প্রণয় না থাকলে যে তূর্ণর কি হতো!
চন্দ্রা অফিসে বসে কাজ করছে। প্রণয় অফিসে আজকে একটু দেরি করে এসেছে। তার মেয়ে অসুস্থ। চন্দ্রা খবরটা জানতে পারে অবশ্য অফিসের লোকদের কাছ থেকেই। দুজন বলাবলি করছিল,
“প্রণয় স্যার এখনও এলেন না?”
“স্যারের আসতে দেরি হবে। স্যারের মেয়ে একটু অসুস্থ।”
এই কথা শুনে চন্দ্রার মন খারাপ হয়ে গেল। সে প্রণয়িনীর খোঁজ নিতে চায়। কিন্তু অফিসের কারো সাথে চন্দ্রা বেশি একটা কথা বলে না। আর কেউ জানেও না চন্দ্রা প্রণয়ের পরিচিত। তাই সে লোকটার কাছে প্রণয়িনীর কথা জিজ্ঞেস করতে চেয়েও করেনি। প্রণয়কে ফোন করতে যাবে তখন একজন এসে চন্দ্রাকে কিছু ফাইল দিল। লোকটা অফিসের ম্যানেজার। সে চন্দ্রাকে আদেশ দিল ফাইলগুলো তাড়াতাড়ি ঠিক করে যেন তার কেবিনে গিয়ে দিয়ে আসে।
চন্দ্রা কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল। প্রণয়কে অফিসে ঢুকতে দেখেই চন্দ্রা উঠে দাঁড়ালো। প্রণয় বুঝতে পারছে চন্দ্রা কিছু বলবে। প্রণয় চন্দ্রাকে বলল,
“চন্দ্রা একটু আমার কেবিনে এসো তো।”
চন্দ্রা গেল। গিয়েই উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“প্রণয়িনীর কি হয়েছে? শুনলাম অসুস্থ?”
প্রণয় তাকিয়ে দেখলো। অবাক হলো। এতো বেশি ভালোবাসে প্রণয়িনীকে চন্দ্রা! অসুস্থ শুনেই কেমন হাল হয়েছে। প্রণয় বলল,
“ঠিক আছে। একটু জ্বর হয়েছে। বাচ্চা মানুষ এইরকম একটু হয়। চিন্তার কিছু নেই।”
“আমি কথা বলতে চাই।”
প্রণয় বলল,
“আচ্ছা। আমি মাকে কল করে বলছি ওকে দিতে।”
প্রণয় তার মাকে কল দিয়ে বলল চন্দ্রা প্রণয়িনীর সাথে কথা বলতে চায়। তারপর চন্দ্রাকে ফোনটা দিল। প্রণয়িনী চন্দ্রার সাথে কথা শুরু করলো,
“আন্তি আন্তি তুমি কেমন আচো?”
“আমি ভালো আছি বাবা। তুমি কেমন আছো?”
“আমি ভালো আচি কিন্তু নেই। আমার জ্বর হয়েচে।”
প্রণয়িনীর কথা শুনে চন্দ্রা হেসে দিল। তারপর বলল,
“জ্বর ঠিক হয়ে যাবে। তুমি ঠিকমতো ওষুধ খাও খাওয়া দাওয়া করো। আর দাদুর কথা শুনো।”
“ঠিকাচে আন্তি। তুমি প্লিজ একটু আসবে?”
“আমি তো একটু ব্যস্ত।”
“প্লিজ আসো না।”
“আচ্ছা। কাজ শেষ করে আসবো।”
“ঠিকাচে আন্তি। তুমি অনেক ভালো।”
“তুমিও অনেক ভালো। এখন আমি ফোন রাখি ঠিকাছে?”
“আচ্চা আন্তি।”
ফোন রাখতেই চন্দ্রা দেখলো ফোনের ওয়ালপেপারে প্রণয়িনীর একটা ছবি। অনেক মিষ্টি লাগছে। এটা সেদিন প্রণয়িনীর জন্মদিনের তোলা। পাশে একটু চন্দ্রাকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু প্রণয়িনীর তো আরও কত ছবি আছে প্রণয়ের কাছে। তাহলে এই ছবিটা কেন দেওয়া? ছবিটায় অবশ্য প্রণয়িনীকে সুন্দর লাগছে অনেক। চন্দ্রার জন্য ছবিটা নষ্ট হয়েছে শুধু শুধু।
চন্দ্রা প্রণয়কে বলল,
“বাহ প্রণয়িনীর ছবিটা তো সুন্দর হয়েছে। কিন্তু পাশে একটু আমি চলে এসেছি। ছবিটাই নষ্ট করে দিয়েছি।”
“আরে না। তুমি কখনো ছবি নষ্টই করতে পারো না।”
চন্দ্রা আর কিছু বলল না। শুধু হাসলো।
.
চন্দ্রা ফাইলগুলো ঠিকঠাক করে ম্যানেজারের কেবিনে গেল। লোকটা সামান্য বয়স্ক। চন্দ্রা যাওয়ার পর তাকে চেয়ারে বসতে বলল,
চন্দ্রা বসলো। লোকটার দিকে চন্দ্রা ফাইলটা এগিয়ে দিল। লোকটা চন্দ্রার হাতে হালকা স্পর্শ করে ফাইলটা নিল। ব্যাপারটা টের পেয়েই চন্দ্রা গা ঘিনঘিনে উঠলো। ও ফাইলটা দ্রুত ছেড়ে দিল। টেবিলের উপর পড়ে গেল ফাইলটা। লোকটা বলল,
“কি হয়েছে এতো নার্ভাস হচ্ছো কেন?”
“কিছু না।”
চন্দ্রার ঘৃণা করছে। মন চাইছে এখনি লোকটাকে টুকরা টুকরা করে দিক।
লোকটা কেমন কেমন করে চন্দ্রার দিক তাকাচ্ছে। চন্দ্রা জিজ্ঞেস করল,
“স্যার ফাইলগুলো ঠিক আছে?”
“হ্যাঁ। এতো সুন্দর মানুষের কাজ তো সুন্দর হবেই।” এই বলে লোকটা হাসছে। চন্দ্রার গা জ্বলে যাচ্ছে লোকটার হাসি শুনে। মন চাচ্ছে গলা বরাবর ছু`রি ঢু`কিয়ে দিতে।
চন্দ্রা বলল,
“স্যার, আমি এখন তাহলে আসি?”
“যাওয়ার এতো তাড়াতাড়ি কিসের? এসেছো একটু বসো।”
চন্দ্রা কি রকবে বুঝতে পারছে না৷ ওর রাগ সামলাতে পারছে না। এই লোকটাকে খু`ন না করা পর্যন্ত ওর শান্তি নেই। চন্দ্রা এই জায়গা থেকে যাওয়ার জন্য বাহানা খুঁজছিল।
“স্যার, আসলে কাজ আছে তো।”
“এতো কি কাজ? আমার কাছে আসবে। কোনো কাজ নেই৷ শুধু আরাম।”
“স্যার, প্রণয় স্যার ডেকেছেন।”
“প্রণয়ে স্যারের কাছে গেলে শুধু কাজই দিবে। আর কিছু পারে না। হা হা হা।”
চন্দ্রার রাগ এবার আর সামলাতে পারছে না। চন্দ্রা এবার অগ্নি দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বলল,
“সব কিছুতে তো আপনার অনেক তাড়া স্যার। একটু সময় নিন। একটু ওয়েট করুন। প্রণয় স্যারের কাজটা করে আসি। না হলে বুঝেনই তো ডিস্টার্ব করবে। অফিস শেষে না হয় গল্প হবে। অনেক কিছু হবে।”
এই বলে চন্দ্রা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। লোকটা চন্দ্রার কথাগুলো শুনে অবাক হলেও খুশি হলো। এক চোখ টিপে বলল,
“সুইটহার্ট দেরি করো না কিন্তু। একদম অফিসের পরপরই।”
“আচ্ছা।”
.
অফিস শেষে চন্দ্রা প্রস্তুতি নিচ্ছে। ব্যাগের থেকে ইনজেকশনটা একবার বের করে দেখলো। তারপর অফিস থেকে সবাই চলে গেল। এরপর সাবধানে ঐ লোকের কেবিনে গেল চন্দ্রা। ম্যানেজারকে বলল,
“দেরি করে ফেললাম না তো?”
“না না। একদমই দেরি করো নি।”
“সবাই গিয়েছে কি?”
“হ্যাঁ। কেউ নেই৷ শুধু আমি আর আপনি।”
“বেশ তো। কাছে আসো। দূরে কি করছো।”
চন্দ্রা এগিয়ে যায় কাছে। ডান হাতটা পিছনের দিকে রেখেছে। হাতে রেখেছে ইনজেকশন। চন্দ্রা হাসতে হাসতে লোকটার কাছে গেল। লোকটা চন্দ্রাকে স্পর্শ করতে যাবে ঠিক তখনই চন্দ্রা লোকটার ঘাড়ে ইনজেকশন ঢু`কিয়ে দিল। লোকটা জ্ঞা`ন হারালো।
অফিস শেষে সকলে গেলেও প্রণয় যায় নি। প্রণয় প্রায়ই এমন অফিসে থাকে কিছুক্ষণ একা একা। আজ যদিও প্রণয়িনী অসুস্থ। বাসায় আগে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু ইচ্ছে করছে না৷ আর মায়ের সাথে কথা বলে জেনেছে প্রণয়িনী এখন ঠিক আছে। জ্বর নেই এখন। তাই সে দেরিতেই যাবে ভাবলো। যখন অফিস থেকে বের হবে তখন দেখতে পেল বসে আছে চন্দ্রা৷ প্রণয় ওকে দেখে বলল,
“কি হয়েছে চন্দ্রা? তুমি এখনও যাও নি?”
“একটু কাজ আছে স্যার।”
“কি কাজ? সবাই তো চলে গিয়েছে।”
“সবাই চলে গিয়েছে। কিন্তু আপনার ম্যানেজার আছে। তার একটু স্পেশাল ট্রিটমেন্ট দরকার। সে জন্যই বসে আছি।”
“মানে?”
“মানে আপনি বুঝবেন না। শুধু একটু রফিকুলকে পাঠিয়ে দিন৷ বাকি আমি সামলে নিব।”
বলেই ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো চন্দ্রা। প্রণয় চোখ বড় করে তাকালো চন্দ্রার দিকে।
চলবে….