ভালোবাসা কারে কয়,৩৫,৩৬

0
116

ভালোবাসা কারে কয়,৩৫,৩৬
শবনম মারিয়া
পর্ব ৩৫

“চন্দ্রা!”
বলে চিৎকার করে উঠলো। চন্দ্রা তার ঠোঁটের বাঁকা হাসিটা একইভাবে রেখে তাকিয়ে আছে। প্রণয় আশে পাশে দেখে চন্দ্রার কাছে গিয়ে আস্তে করে বলল,
“চন্দ্রা তুমি কি পাগল হয়ে গিয়েছো? মাথা কি কোনো সময় কাজ করে না নাকি? কতবার আমি আর তূর্ণ বুঝিয়েছি নিজেকে কন্ট্রোল করো। যা কর বাইরে কর ঠিকাছে। কোনো প্রুভ রাখি না আমি। কোনো চিহ্ন থাকতে দেই না। তাই বলে অফিসে! অফিসে বসে অফিসের লোক গা`য়েব হয়ে যাবে? ভাবতে পারছো কি হবে? একবার ভেবেছো পুলিশ খুঁজলে সব দোষ এসে আমার মাথায় পড়বে? আর একজনকে পেয়ে গেলে বাকি সবাইকে পেয়ে যাওয়া কঠিন কিছু না। এরপর সবাই ফেঁসে যাবো। অফিসের কোণায় কোণায় সিসি ক্যামেরা। বাইরে সিকিউরিটি গার্ড। এতোগুলো মানুষের উপস্থিতিতে তুমি অফিস থেকে বের হবে?”
চন্দ্রা এবার ভাবতে শুরু করলো। প্রণয় তো আসলেই ভুল কিছু বলেনি। তাহলে কি করবে এখন চন্দ্রা? চন্দ্রা বলল,
“তাহলে এখন আমি কি করব? আপনি প্লিজ কিছু একটা ব্যবস্থা করুন।”
“কিসের ব্যবস্থা করব? চুপচাপ বাসায় যাও। উনার জ্ঞান ফিরলে উনি চলে যাবেন। বাকিটা আমি ম্যানেজ করে নিব।”
“না। আমি ওকে খু`ন না করে যাব না।”
প্রণয় এবার রেগে চন্দ্রার হাত শক্ত করে বলল,
“চন্দ্রা বাড়াবাড়ি করবে না একদম। যা বলছি তাই করো।”
চন্দ্রা নিজের হাত প্রণয়ের হাত থেকে ছাড়িয়ে বলল,
“কিহ্! ওকে আমি ছেড়ে দিব? ওর টু`করা টু`করা করব। না হলে আমি শান্তি পাব না। এতে সহজে কিভাবে ছেড়ে দিব? ওকে ছেড়ে দিব! যে খারাপ দৃষ্টি দিয়ে আমার দিক তাকিয়েছে! যে খারাপ কথা বলেছে আমাকে! ফাইল নেওয়ার বাহানায় আমার হাতে স্পর্শ করেছে? তাকে আপনি ছেড়ে দিতে বলছেন? তাকে আপনি কিভাবে ছেড়ে দিতে বলেন? ছাড়বো না আমি। ছাড়বো না। ওর টু`করা টু`করা করব।”
এই বলে চন্দ্রা তাকায় প্রণয়ের চোখের দিকে। চন্দ্রার চোখ শীতল। চোখে ঘৃণা, খু`নের নেশা। প্রণয় সবটা শুনে হতবাক। প্রণয় রাগে গজগজ করছে। হাত মুষ্টিবদ্ধ। কপাল বেয়ে বয়ে যাচ্ছে ঘামের স্রোত। প্রণয় চন্দ্রার দিক তাকিয়ে বলল,
“তোমার সাথে! বলো আর কি করেছে? আজ ওকে তুমি না আমি মা`রবো। আমি খু`ন করব।”
এই বলে প্রণয় যাওয়া ধরলে চন্দ্রা ওর পথ আটকে বলল,
“আপনি কিছু করবেন না। আমি মা`রব। না হলে আমি শান্তি পাবো না। খু`ন করা আমার কাজ। আপনি শুধু সাহায্য করুন। ওকে আমি দেখে নিব।” প্রণয় থামে। চন্দ্রার দিকে তাকায়। চন্দ্রাকে দেখে ওর চোখ শীতল হয়ে আসছে। প্রণয় মেনে নিতে পারছে না যে ওর চন্দ্রার দিক কেউ খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়েছে! প্রণয় কাঁপা স্বরে বলল,
“আমার চন্দ্রমল্লিকার দিক যে খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়েছে তার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। ওকে ম`রতেই হবে।”
চন্দ্রা বলল,
“কিন্তু এখন আমি কিভাবে কি করব? ও এখন ম`রলে সহজেই যে কেউ বুঝে যাবে এর পিছে আমরা আছি। কারণ অফিস থেকে আমরা বের হই নাই। বের হয় নাই ঐ শয়তানটা। তাহলে?”
“ব্যবস্থা করছি। তুমি এখন আমার সাথে অফিস থেকে বের হয়ে যাবে। ঠিক দুই থেকে তিন ঘন্টার মধ্যে ওর জ্ঞান ফিরবে। তখন অফিসে কাউকে না পেয়ে ও বাসায় যাওয়ার জন্য বের হবে। চেতনা না`শকের কারণে ওর কিছু মনে পড়বে না সহজে। ততক্ষণে ও যখন বের হবে রফিকুল ওকে নিয়ে যাবে। আর আমরা সেখানে চলে যাব।”
“ঠিকাছে। চলুন।”
“ভয় পাচ্ছো নাকি?”
চন্দ্রা হেসে বলল,
“আজ পর্যন্ত ভয় পেয়েছি?”
প্রণয় কিছু বলল না। সামান্য হাসলো। প্রণয় চন্দ্রাকে নিয়ে অফিস থেকে বের হলো। ওরা এমন ভাবে গল্প করছিল যেন কাজ নিয়ে কথা বলছে। অফিসের নিচে গার্ড বসা একজন। প্রণয়কে দেখেই উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিল। প্রনয় সামনে এগিয়ে গ্যারেজের দিকে গেল তার গাড়ির কাছে। সাথে চন্দ্রাও গেল। গাড়ির সামনে গিয়ে প্রণয় ফোন দিয়ে রফিকুলকে সব বুঝিয়ে দিল। তারপর প্রণয় গাড়ি নিয়ে সামনের দিকে বের হয়ে পিছনের দিকে গেল। তারপর গাড়ি থামিয়ে সেখানেই চন্দ্রা আর সে বসে রইলো।
চন্দ্রা চুপচাপ বসে আছে। প্রণয় একবার চন্দ্রার দিক তাকাচ্ছে। আরেকবার অন্যদিক। চন্দ্রা যেহেতু চুপচাপ আছে তাই আর কিছু বলল না প্রণয়। ওর মেজাজ ভীষণ খারাপ। কিছু ভালো লাগছে না। ফোনের লকটা খুলে দেখল ওর মার মিসড কল। ব্যাক করতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু প্রণয়িনীর খবর নেওয়াটাও জরুরি। তাই প্রণয় কল ব্যাক করলো। কল ধরার পর ওর মা বলল,
“প্রণয় কখন আসবি বাবা?”
“মা একটু দেরি হবে। একটা কাজ আছে।”
“বলেছিলি তো তাড়াতাড়ি আসবি।”
“হঠাৎ করে কাজ পড়ে গিয়েছে মা। আর বললে তো প্রণয়িনী সুস্থ আছে এখন। তাহলে দেড়িতে আসলে অসুবিধা কি?”
“আচ্ছা ঠিকাছে। বুঝেছি কাজের চাপ অনেক। এইজন্য তোর মেজাজটাও খারাপ হয়ে আছে তাই না?”
“না, মানে একটু ব্যস্ত তো।”
“অসুবিধা নেই। কাজ সেরে বাসায় আয়।”
“প্রণয়িনীকে খাইয়ে দাও। ওষুধ খাওয়ানোর পর ঘুমিয়ে যেতে বলো।”
“সে তো আরেক পাগলামি শুরু করেছে।”
“আবার কি?”
“ঐ সময় চন্দ্রার সাথে কথা হলো। কথায় কথায় চন্দ্রা ওকে বলে দিয়েছে যে আসবে৷ এই ধরে নিয়ে ও চন্দ্রার অপেক্ষায় আছে।”
প্রণয় চন্দ্রার দিক তাকালো। চন্দ্রাও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রণয়ের দিকে। প্রণয় তারপর তার মা কে বলল,
“হ্যাঁ, ওকে বলো চন্দ্রা একটু অসুস্থ হয়ে গিয়েছে। তাই আজ যাবে না৷ কাল যাবে।”
“সে কি? চন্দ্রা অসুস্থ!”
“না, মানে ওর একটু মাথা ব্যথা ছিল অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে গিয়েছে। আমায় বলে গিয়েছিল প্রণয়িনীকে বলতে।”
“আচ্ছা।”
প্রণয় ফোনটা কেটে দিল। তারপর ফোনের স্ক্রিনেই তাকিয়ে ছিল। কিছু একটা করছে। হয় তো ফেইসবুকিং। চন্দ্রা ধারণা করলো। সে হঠাৎ বলে উঠলো,
“আন্টিকে, প্রণয়িনীকে এতগুলো মিথ্যা কথা বললেন?”
প্রণয় ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়েই বলল,
“কিছুই করার নেই। সত্যি তো বলতে পারব না। আর যেখানে সত্যি বলা যায় না সেখানে মিথ্যার আশ্রয় নিতে বাধ্য।”
চন্দ্রা বলল,
“আমি আর কাল থেকে অফিস আসবো না।”
প্রণয় ফোন রেখে কপালে ভাজ ফেলে চন্দ্রার দিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কারণ?”
“আমার জন্য আপনার অনেক অসুবিধা হবে। আমি থাকলে আস্তে আস্তে দেখা গেল অফিসের সবাই গায়েব হয়ে গিয়েছে। তখন? তখন আপনারই সমস্যা হবে।”
“এসব চিন্তা বাদ দাও। ভালো করেই জানি আজকের কাহিনিতে তোমার কিছুই যায় আসবে না৷ তুমি নরমালি থাকতে পারবে। তাই এসব করার কোনো দরকার নেই। আর একজন লোক নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর তুমি আসা বন্ধ করে দিলে কি হবে ভাবতে পারছো? সব কিছু নরমালি চলতে দাও। পুলিশ আসলে ছুটির কাগজ দেখিয়ে বলব ছুটি নিয়ে গিয়েছে। আমার উপর কোনো ঝামেলাই থাকবে না।”
“আচ্ছা।”
আর কিছু বলল না চন্দ্রা। দুজনেই অপেক্ষা করতে লাগলো সময় অতিক্রম হওয়ার জন্য।

রফিকুল ওত পেতে বসে আছে অফিসের বাইরে দিক। তিন ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরলো লোকটার। সে কিছু মনে করতে পারছে না৷ তবে অফিসে নিজেকে দেখেও বুঝতে পারছে না কিছু৷ সবকিছু ঝাপসা দেখতে। মোবাইলে সময়টাও ঝাপসা দেখছে। তবে বুঝলো অফিস ছুটি হয়ে গিয়েছে। ঘাড়েও বেশ ব্যথা করছে। ঢুলতে ঢুলতে অফিস থেকে বের হলো। রাস্তায় কিছু দূরত্বে ফাঁকা জায়গায় যেখানে লোকজন কম সেখানে যাওয়ার সাথে সাথে মুখ চেপে ধরে আড়ালে টেনে নিয়ে বস্তায় ভরলো রফিকুল। তারপর ভ্যানে করে বস্তায় নিয়ে আবার অফিসে গিল। ওষুধের প্রভাব তখনো কমেনি বলে লোকটা কিছুই করতে পারেনি। টেরও পায় নি।

রফিকুল নিয়ে গেল তাকে গোডাউনের সেই সুরঙ্গ পথে। চন্দ্রা আর প্রণয়কে ফোন করলো। চন্দ্রা আর প্রণয় আসলো। লোকটাকে চেয়ারে বসিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। লোকটা অচেতন হলেও জ্ঞান আছে। প্রণয় নিজেকে সামলাতে পারলো না। লোকটার কাছে গিয়ে ঘুষানো শুরু করলো। ঘুষিয়ে ঠোঁটের কাছে র`ক্ত বের করে ফেলল। নাক থেকে র`ক্ত বের হতে শুরু করলো।
লোকটা ভয়ার্ত স্বরে বলল,
“স্যা…স্যার আপনি আমাকে মা`রছেন কেন? আমি কি করেছি? বিশ্বাস করেন স্যার আমি কিছু করিনি।”
প্রণয় শুনছে না৷ তার মতো মে`রেই যাচ্ছে। আর বলছে,
“তোর কত বড় সাহস তুই চন্দ্রার দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকাস! আবার খারাপ প্রস্তাব দিস!”
চন্দ্রা প্রণয়কে বলল,
“ওকে ছাড়ুন। ওকে এতো সহজে মেরে ফেলবেন না। আমাকে দেন। একটু মজা নেই। অনেক দিন মজা নিতে দেন না আপনি আর তূর্ণ ভাইয়া।”
এই বলে চন্দ্রা হা হা করে হাসে। চন্দ্রার হাতে ধা`রালে ছু`রি। চন্দ্রাকে দেখা যাচ্ছে ভয়ংকর। লোকটা চন্দ্রার এই রূপ দেখে আঁতকে উঠলো।
প্রণয় সরে গিয়ে বলল,
“নাও। যেভাবে খুশি সেভাবে মা`রো।”
চন্দ্রা ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে এগিয়ে গেল। লোকটার গ`লা বরাবর ছু`রি ধরে বলল,
“কি কেমন লাগছে? বলেছিলাম না অনেক মজা হবে। হা হা হা।”
লোকটা কাঁপা স্বরে কেঁদে বলতে লাগলো,
” আমাকে ছেড়ে দিন। আমি ভুল করেছি। আর করব না। কোনোদিনও না। জীবনেও আর কোনো মেয়ের দিক তাকাবো না। ”
“আরে কেন? বলেছিলি না কাছে আসতে? নে এবার কাছে আসলাম। এই বলে লোকটার মুখের সাথে ছু`রিটা মিশিয়ে ধরলো। তারপর আঁচড় দিল। লোকটা চিৎকার করে উঠলো। চন্দ্রা বলল,
“আরে সবে তো শুরু। এখনই এমন চিৎকার করলে হয় নাকি?”
এই বলে চন্দ্রা লোকটার হা`ত বরাবর ছু`রি নিয়ে কয়টা টান দিল। কেটে র`ক্ত বের হলো। লোকটা চিৎকার করছে। সে প্রাণ ভিক্ষা চাইছে।
চন্দ্রা ছু`রিটা আবার নিয়ে ঠোঁট বরাবর রাখলো তারপর আড়াআড়িভাবে বসিয়ে আস্তে আস্তে ছুরির উপর ভর প্রয়োগ করে কা`টলো। লোকটা ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে। রক্ত বেয়ে পড়ছে। তারপর চন্দ্রা বলল,
“এই হাত দিয়ে মেয়েদের স্পর্শ করিস তাই না?”
এই বলে হাতের আঙুলগুলো হা`তুড়ি দিয়ে বারি দিয়ে দিয়ে ভাঙলো। লোকটার ম`রা ম`রা অবস্থা। তারপর ছু`রিটা আস্তে আস্তে লোকটার পুরুষাঙ্গের দিকে নিল। তারপর জোরে আ`ঘাত করলো ছু`রি দিয়ে। একবার নয় বেশ কয়েকবার। জোরে জোরে। লোকটা চিৎকার করতে করতে আর চিৎকার করার মতো অবস্থাও নেই। প্রাণটা যেন শরীর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। শেষ বারের মতো নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় ছু`রিটা চন্দ্রা চোখ বরাবর নিয়ে একটা চোখ উপরে ফেলল।
লোকটা ম`রে গিয়েছে। তাও চন্দ্রা থামলো না। কাটতেই থাকলো। র`ক্ত ছিটে এসে চন্দ্রার গাঁয়ে লেগেছে। তাতে চন্দ্রার কিছু যায় আসে না। চন্দ্রা এখন খু`নে ব্যস্ত।
প্রণয় সম্পূর্ণ দৃশ্য দেখে শান্তি পাচ্ছে। তার চন্দ্রমল্লিকার দিকে দেওয়া খারাপ দৃষ্টির চোখগুলো এখন ফ্লোরে পড়ে আসে। তার চন্দ্রমল্লিকার হাত যেই হাত দিয়ে স্পর্শ করা হয়েছে সেগুলো এখন মাটিতে টুকরা হয়ে পড়ে আছে। এগুলো দেখে প্রণয় আলাদা রকমের শান্তি পাচ্ছে।

এই লা`শের কিছু অংশ দেওয়া হয় কুকুরদের। আর বাকি অংশ পুড়িয়ে ফেলা হয়। কোনো রকমের কোনো চিহ্ন কোথাও থাকে না।

চন্দ্রা শান্ত হয়ে বসে আছে। প্রণয় চন্দ্রার মাথায় হাত রেখে বলল,
“হাত পরিষ্কার করে নাও চন্দ্রমল্লিকা।”
চন্দ্রা উঠে দাঁড়ালো। রফিকুল পানি দিলো। চন্দ্রা হাত মুখ পরিষ্কার করে নিল। ঘৃণা লাগছে ওর। জামায়ও র`ক্ত ছিটে লেগেছে। যদিও এগুলো চন্দ্রা রেগুলার করে দেখে এখানে এপ্রোন রাখা আছে। কালো জামা দেখে অসুবিধা হচ্ছে না। কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।
প্রণয় চন্দ্রাকে বলল,
“চলো বাসায় দিয়ে আসি।”
চন্দ্রা চুপচাপ প্রণয়ের পিছ পিছ গেল তারপর গাড়িতে উঠলো। বাসার সামনে এসে প্রণয় তূর্ণকে ফোন করে। আসার আগেও একবার ফোন করে বলে রেখেছিল। তূর্ণ সেভাবেই প্রস্তুত হয়ে আছে। সে হসপিটাল থেকে বাসা চলে এসেছে। প্রণয় ফোন করায় তূর্ণ তাকে বলল,
“তুই আয় ওকে নিয়ে উপরে। দাদা আর দাদিকে বলেছিলাম ও তোদের বাসায় গিয়েছে অফিসের পর প্রণয়িনী অসুস্থ তাই।”
“আচ্ছা।”
চন্দ্রাকে নিয়ে যায় প্রণয়৷ বাসায় ঢুকেই চন্দ্রা নিজের রুমে চলে যায়। অন্যদিকে তূর্ণ প্রণয়ের সাথে নিজের রুমে গিয়ে কথা বলে। প্রণয় তাকে সবটা বলে। তূর্ণ বুঝতে পারে না সে কি বলবে। আসলে কিছুই বলার নেই। চন্দ্রা এগুলো করবেই। অন্য মেয়ের দিক কেউ তাকালে তাকে বাঁ`চতে দেয় না চন্দ্রা। আর তার নিজের দিক যে তাকিয়েছে তাকে তো চন্দ্রা মা`রবেই। তূর্ণও সবটা শুনে লোকটার উপর ভীষণ রাগ হচ্ছিল। মনে হচ্ছিলো নিজে মা`রতে পারলে আরও শান্তি পেত।

চন্দ্রা রুমে গিয়ে এই রাতের বেলাও ঠান্ডা পানি দিয়ে এই শীতের মধ্যে গোসল করলো। ঐ নোংরা লোকের র`ক্ত ছিটে এসেছে গায়ে। এগুলো চন্দ্রার সহ্য হয় না।
সে গোসল করে এসে তূর্ণ আর প্রণয়ের সাথে এমন ভাবে কথা বলা শুরু করল যেন কিছুই হয় নাই। অবশ্য প্রত্যেকবারই চন্দ্রা এমন স্বাভাবিক থাকে। ওর সাথে স্বাভাবিক হয়ে যায় তূর্ণ আর প্রণয়ও। তবে মাথায় থাকে চন্দ্রাকে নিজে হাজারো চিন্তা।

.
প্রণয় যখন যাচ্ছিল তখন চন্দ্রা বলল,
“প্রণয়িনীকে আমার পক্ষ থেকে সরি বলে দিয়েন। আর বলবেন আমি কাল অবশ্যই দেখা করতে যাব ওর সাথে।”
প্রণয় হাসিমুখে বলল,
“আচ্ছা।”

চলবে……

ভালোবাসা কারে কয়
শবনম মারিয়া
পর্ব ৩৬

তূর্ণর মন খারাপ থাকলে আজকাল পরশি তার মন ভালো করার চেষ্টা করে। তাদের একে অপরের বন্ধুত্ব আরও ভালো হয়েছে। তূর্ণ আজকাল সব কিছু নির্দ্বিধায় পরশির সাথে শেয়ার করে। দুজনেরই একসাথে সময় কাটাতে ভালো লাগে। আজ তূর্ণর আবার তোহরাব সাহেবের সাথে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে। এই নিয়ে তূর্ণর মেজাজ ভীষণ খারাপ ছিল। তূর্ণ ভাবলো তার মন এখন পরশির সাথে কথা বললেই ভালো হবে।
পরশি অফিসে একটা কেস নিয়ে ব্যস্ত ছিল। তূর্ণ ফোন করলো তাকে। তূর্ণ জিজ্ঞেস করলো,
“পরশি অফিস থেকে কখন আসবেন?”
“আজ তো একটু ব্যস্ত আছি। কেন?”
তূ্র্ণ মন খারাপ করে বলল,
“কিছু না এমনি।”
“তূর্ণ আপনি কি কিছু নিয়ে আপসেট।”
“নাথিং।”
“তূর্ণ দেখেন আমাকে বলতেই তো ফোন করেছেন? কিছু হয়েছে তো অবশ্যই। না হলে আপনার কন্ঠ শুনে আপসেট লাগছে কেন আপনাকে? আর আপনি না আমাকে সব বলেন? তাহলে এখন বলছেন না কেন?”
“পরশি আপনি এখন বিজি। পরে কথা হবে।”
“আচ্ছা শুধু বলেন কি নিয়ে আপসেট? আংকেলের সাথে আবার ঝগড়া হয়েছে? আংকেল তো বাসায় এসেছেন কাল।”
“পরশি আপনি কিভাবে এতো ভালো করে বুঝে যান?”
“হা হা হা। ম্যাজিক। আচ্ছা শুনেন, আজ সন্ধ্যা ৭ টায় মুভি দেখতে যাই? আমি পাঁচটার মধ্যে বাসায় ফিরবো। তারপর একটু বের হই।”
“শিওর?”
“হ্যাঁ। চলেন আপনার মুড ঠিক করি।”
“ওকে।”

পরশি তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরলো। ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিল। তারপর গিয়ে তূর্ণর বাসার দরজায় নক করল। দরজা খুললেন চন্দ্রা। চন্দ্রার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে পরশি গেল রোকেয়া এবং মিরাজ সাহেবের সাথে দেখা করতে। তাদের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করলো। ততক্ষণে তূর্ণও রেডি হয়ে আসলো। তারপর দুজনে ঘুরতে বের হলো।

রোকেয়া আর মিরাজ সাহেব তাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারেন তূর্ণর মনে পরশির জন্য কিছু একটা আছে। আর পরশির সাথে মিশে তূর্ণর মধ্যে কিছু কিছু জিনিস পাল্টেছে। যেমন তূর্ণ কিছু কিছু জিনিস নিয়ে এখন আর রাগ হয় না৷ হেসেই উড়িয়ে দেয়। ওরা যাওয়ার পর রোকেয়া মিরাজ সাহবেকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“আপনার কি মনে হয়?”
“কি?”
“আমার নাতির গায়ে প্রেমের বাতাস লেগেছে?”
“ব্যাপারটা উপেক্ষা করার মতো না। প্রেম কখন, কিভাবে কার সাথে হয় এসব বোঝা যায় না। ভালোবাসা হয় হঠাৎ করে। অনুভূতি সৃষ্টি হয় হঠাৎ করে। অচেনা অজানা কেউ খুব কাছের কেউ হয়ে উঠে। হয়ে উঠে খুব পরিচিত।”
“কিন্তু তূর্ণ কি মানবে?”
“কি জানি! দেখি কি হয়।”

.
পরশি আর তূর্ণ ঘুরে বেড়াচ্ছে। শো সাতটায়। তাদের হাতে এখনও এক ঘন্টা সময়। তাই তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। লেক পারে বসে একসাথে ধোয়া ওঠা চা খাচ্ছে দুজনে। পরশি চায়ের কাপে চুমুক দিল। তূর্ণও চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে হঠাৎ করে পরশির দিক তাকালো। কি সুন্দর লাগছে পরশিকে! পরশিকে সব ধরনের আউটফিটে বেশ মানায়। কখনো শাড়িতে দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় তূর্ণ। আবার কখনো পুলিশের ইউনিফর্মেও সুন্দর লাগে। আবার সালোয়ার কামিজেও স্নিগ্ধ লাগে। ওয়েস্টার্নেও লাগে বেশ সুন্দর। আজ পরশির পরনে একটা অফ হোয়াইট কালারের প্যান্ট আর সাদা একটা টপস। তার উপরে কালো রংয়ের জ্যাকেট৷ চুলগুলো ছাড়া। কোনো রকমের মেকাপ নেই মুখে। সাধারণ লাগছে। তবে সৌন্দর্যে কমতি নেই।
তূর্ণ তাকিয়ে আছে।
“আজ একটু বেশিই ঠান্ডা পড়েছ তাই না?” এই বলে পরশি তাকালো তূর্ণর দিকে। দেখল তূ্র্ণ তাকিয়ে আছে। পরশি বলল,
“কি হয়েছে?”
তূর্ণ চোখ সরিয়ে বলল,
“কিছু না।”
পরক্ষণেই পরশির মাথার কাছে হাত দিয়ে মাছি তাড়ানোর মতো করে বলল,
“একটা পোকা ছিল। তাই দেখলাম।”
“ওহ্ আচ্ছা।”
আসলে কোনো পোকা ছিল না। কিন্তু ও এভাবে তাকিয়ে ছিল এটা পরশি কিভাবে নিবে এটা ভেবেই তূর্ন এমনটা করল। মানুষ অপরজনের সামনে লজ্জিত হওয়ার থেকে বাঁচার জন্য এরকম নানা কাহিনি বানায়। মানুষ এমনই যাকে ভালো লাগে তার সামনে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়লে তা থেকে বাঁচতে চায়। প্রাণপণ চেষ্টা করে মানুষটা যেন তাকে ভুল না বুঝে। তাকে খারাপ না ভাবে।

দুজনে গল্প চালিয়ে যাচ্ছে। গল্প করতে করতে প্রত্যেকেই চার কাপ চা শেষ করে ফেলেছে। পরশি হঠাৎ ঘড়ি দেখে বলল,
“গল্প করতে করতে সময় পার হয়ে গেল কত তাড়াতাড়ি! চলেন এখন শো টাইম হয়ে গিয়েছে।”
“ওহ্, খেয়ালই ছিল না। চলেন রিকশায় বসে বাকি কথা হবে।”
রিকশা নিয়ে দুজনে গল্প করতে করতে চলে গেল।
শো শেষে দুজনে বের হলো। সীমান্ত সম্ভারের বাহিরে বের হয়ে তূর্ণ দেখলো একটা বাচ্চা বেলীফুলের মালা বিক্রি করছে। বাচ্চাটা এগিয়ে এসে বলল,
“আপা একটা মালা নেন না।”
পরশি বেলীফুলের মালা কিনে না৷ বেলীফুলের মালা দেওয়া লোকটার সাথে যেন বেলীফুলের প্রতি ভালোবাসাটাও হারিয়ে গিয়েছে।
ছেলেটা তূর্ণ দিক এগিয়ে বলল,
“ও ভাই মালা নেন না।”
তূর্ণ পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে সেখান থেকে টাকা দিয়ে সবগুলো বেলীফুলের মালা কিনে নিল। সেখানে নয়টার মতো বেলীফুলের মালা ছিল। ছেলেটা খুশি মনে চলে গেল। পরশি তূর্ণর কান্ড দেকে অবাক হলো। পরশি জিজ্ঞেস করলো,
“ফুলগুলো দিয়ে কি করবেন?”
তূর্ণ হেসে বলল,
“বসে বসে মালা থেকে একট একটা করে ফুল বের করে গুনবো কয়টা ফুল দিয়ে বানানো হয়েছে।”
পরশি বলল,
“এটা করে কিসের মজা?”
তূর্ণ এবার জোরে হেসে দিল। বলল,
“আরে বাবা, এমন কিছু না। মজা করলাম। আমিও জানি না এগুলো দিয়ে কি করব। কিন্তু ছোট বাচ্চা ঘুরে ঘুরে মালা বিক্রি করে বেড়াচ্ছে। আমার এসব ভালো লাগে না। তাই কিনে নিলাম। আমি না হয় ফুলগুলো আপনাকে দেই?”
এই বলে তূর্ণ ফুলের মালাগুলো এগিয়ে দিল পরশির দিকে। পরশির গম্ভীর হয়ে বলল,
“আমি ফুল পছন্দ করি না।”
“সেটা না করতেই পারেন৷ অস্বাভাবিক কিছু না। সবার সব জিনিস ভালো লাগবে এটা কোনো কথা না। কিন্তু কেউ ফুল দিলে নিতে হয়। ফর্মালিটি করে হলেও। আমি সেখানে আপনার বন্ধু আপনাকে ফুল দিচ্ছি। আপনি ফিরিয়ে দিবেন?”
পরশি বুঝতে পারছে না কি করবে। কেন যেন মন চাচ্ছে বেলীফুলগুলো নিয়ে নিতে। তারপর ঘ্রাণ নিবে। অনেকদিন বেলীফুলের ঘ্রাণ নেওয়া হয় না। আগে পরশির বিছানার বালিশের নিচে বেলীফুলের শুকনো মালাগুলো থাকতো। আর তাজা ফুলের ঘ্রাণ পরশি নিতেই থাকতো। কতদিন হয়ে গিয়েছে! আজ এতোবছর পর কেন হঠাৎ মন চাচ্ছে? কিছু মন চাইলে কি সেটা করা উচিত? মনকে শান্ত করতে কি নেওয়া উচিত ফুলগুলো? ফুলগুলো নিলে কি পরশি আদৌও শান্তি পাবে নাকি কিছুক্ষণ পর অনেক খারাপ লাগবে? পরশি জানে না।
তবে সে সাহস করে হাতটা এগিয়ে দিল। মালাগুলো নিল তূর্ণ হাত থেকে। তারপর তূর্ণকে ধন্যবাদ জানালো। মালাগুলো নিয়েই পরশি চোখ বন্ধ করে ফুলগুলো নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রাণ শুষে নিল। তূর্ণ শুধু তাকিয়ে দেখছে। আহা! সে কি শান্তি।

পরশি আর তূর্ণ রিকশায় করে যাচ্ছিল। এই ডিসেম্বরের তীব্র শীতের রাতে তারা রিকশা দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরশি এখনও হাতে মালাগুলো নিয়ে আছে। রিকশায় বসে বসে পরশি মালাগুলো গুনলো। তারপর বলল,
“দেখেন এখানে নয়টা মালা আছে।”
“হ্যাঁ। কি হয়েছে?”
“ছেলেটার কাছে খুব সম্ভবত দশটা মালা ছিল। একটা মালা হয় তো কেউ নিয়েছে তার প্রিয় মানুষের জন্য।”
“হতেই পারে।”
তূর্ণ মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করলো,
“মালা কি তবে প্রিয় মানুষকেই দেওয়া হয়? আমি তাহলে কেন পরশিকে মালা দিলাম? ও কি আমার প্রিয় কেউ? অপ্রিয় তো না। তবে হয় তো প্রিয়ই হবে। আবার হয় তো খুব প্রিয়ও হতে পারে। খুব প্রিয় কাউকে ফুল দিয়ে এতো ভালো লাগে? আমার যে ভালো লাগছে এখন। এই যে পরশি মালাগুলো নিল তারপর একটু পর পর ঘ্রাণ নিচ্ছে! এগুলো দেখতে তো আমার ভালো লাগছে। শান্তি লাগছে।”

তূর্ণ আর পরশি যার যার বাসায় চলে যায়। পরশির মন আজ ভালো৷ মন খারাপ দূরে সরে গিয়েছে কেন যেন। আজ বেলীফুলের মালাগুলো ধরে আর কান্না করতে ইচ্ছে করছে না৷ বালিশের পাশে বেলীফুলের মালাগুলো রেখে ঘুমিয়ে গেল পরশি। ঠিক আগের মতো।
তূর্নর মনও ভালো হয়ে গিয়েছে। প্রণয় হঠাৎ রাতেরবেলা ফোন করল। তূর্ণকে ফোন করে বলল বের হতে। বেশ কিছুদিন একসাথে আড্ডা দেয় না৷ ব্যস্ততায় হয়ে উঠছে না। তূর্ণও ভাবলো প্রণয়ই একমাত্র লোক যার সাথে কথা বললে ওর মনের মধ্যকার কনফিউশান দূর হবে। প্রণয় আর তূর্ণ বের হলো। এই রাতের বেলায় ড্রাইভ করতে থাকলো। কাল শুক্রবার। আজ যতদূরে সম্ভব যাবে। দুজনেরই কাল ছুটি। একটু ঘুরে ফিরে রাত করে বাসায় ফিরলে অসুবিধা নেই। দুজনে গল্প করতে করতে যাচ্ছিল। ফাঁকা একটা জায়গায় এসে প্রণয় গাড়ি থামালো। তারপর দুই বন্ধু গাড়ি থেকে নেমে দুজনে দুটো সিগারেট ধরিয়ে গল্প শুরু করল।
প্রণয় বলল,
“কি যেনো বলতে চাচ্ছিলি। বল এখন।”
“একটা ব্যাপার নিয়ে খুব কনফিউজড।”
“কি?”
“উম…তুই কি আনিকাকে ভালোবাসতি?”
প্রণয় চমকে গেল। তূর্ণ সব জেনেও আজ হঠাৎ কেন ওর মৃত স্ত্রীর কথা টেনে আনছে? প্রণয় বলল,
“মানে? কি হয়েছে?”
“বল না।”
“তুই তো সব জানিস।”
“হ্যাঁ। কিন্তু বল ওর প্রতি তোর ভালোবাসা হয়েছিল কি করে?”
“আমাদের বিয়ে তো পারিবারিকভাবে হয়েছিল। বিয়ের পর আনিকাকে আমি আমার স্ত্রী হিসেবেই ভালোবেসেছিলাম। অনেক বেশি লয়্যাল ছিলাম। আর ও আমাকে বাঁশ দিয়ে গিয়েছে।”
“না মানে যখন ভালোবাসা শুরু হয়, মানে তোর মনে যখন ওর জন্য ফিলিংস তৈরি হয় তখন কেমন লাগতো তোর?”
“এই তূর্ণ ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলিস না তো। সোজা বল কি বলবি।”
“না আমি জানতে চাচ্ছিলাম কাউকে ভালোবাসলে কেমন ফিলিংস তৈরি হয়?”
“কাউকে ভালোবাসলে?”
“হুম।”
“ভালোবাসা কেমন যেন৷ হুট করে হয়ে যায়। তুমি কখনো ভাবতেও পারবে না তোমার এই মানুষটাকে ভালো লাগবে। অথচ তোমার ঐ মানুষটাকে ভালো লেগে যাবে। কিছু অনুভূতির সৃষ্টি হবে। ভালোলাগার সৃষ্টি হবে। যাকে ভালো লাগবে তার সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগবে। তার সাথে কথা বলতে ভালো লাগবে। তাকে দেখতে ভালো লাগবে। তার সূক্ষ্ণ সূক্ষ্ণ ব্যাপারগুলো খেয়াল করতে ভালো লাগবে। বুঝতেও পারবি না কিভাবে কি হয়ে গেল। তাকে কষ্টে দেখা যায় না। ইচ্ছে করে তাকে ভালো রাখতে। তার মুখের হাসিটার দিকে চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।”
“আমার না এরকম কিছুই হচ্ছে প্রণয়।”
“কি বলিস? কার প্রতি? কাকে ভালো লাগলো?”
“পরশি।”
“হোয়াট!”
“হ্যাঁ। এই অল্প সময়ের মধ্যে পরশিকে আমার খুব কাছের কেউ মনে হয়। পরশির সাথে কথা বলতে ভালো লাগে। ও আমার মন ভালো করার চেষ্টা করে। আমিও ওর মন খারাপ হলে চেষ্টা করি মন ভালো করার। ওর সাথে আমার ভালো ফ্রেন্ডশিপ হয়েছে। কিন্তু পরশির কিছু ছোট ছোট ব্যাপার আমার ভীষণ ভালো লাগে। আমি কখনো কোনো মেয়ের দিকে সেভাবে লক্ষ্য করিনি। বাট পরশির সবকিছু আমার ভালো লাগে। ওর সাথে সময় কাটাতে নানা বাহানা খুঁজি। আজ খুব ইচ্ছে করলো বেলীফুলের মালা কিনে দিতে। না ভেবে তাই দিলাম। পরশির কথা ভাবলে মন কেমন যেন শান্ত হয়। প্রণয় এগুলো কি ভালোবাসা?”
“আমার তো মনে হয় ভালোবাসাই।”
“কিন্তু এই ভালোবাসা কি স্থায়ী হবে? এই ভালোবাসা কখনো কষ্টদায়ক হবে না তো?”
“জানি না৷ ভালোবাসায় বিশ্বাস থাকলে সে ভালোবাসা পূর্ণতা পায়। আর ভালোবাসার কথা অপর মানুষটাকে বলে দিতে পারলে শান্তি পাওয়া যায়। তুমি যখন কাউকে ভালোবাসো কিন্তু সেটা তাকে বলতে পারো না তখন তা ভীষণ কষ্ট দেয়।”
“তবে কি বলছিস৷ আমার পরশিকে বলে দেওয়া উচিত?”
“পরশি কি তোকে ভালোবাসে?”
“তা জানি না। কিন্তু আমি দিন দিন কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি। মাঝে চেষ্টা করেছিলাম পরশির থেকে একটু দূরত্বে থাকতে। কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়েছি। আমি পারিনি।”
“ভালেবাসা হঠাৎ করেই হয় তূর্ণ। সব ভালোবাসার শেষে বিশ্বাসঘাতকতা থাকে না। সব ভালোবাসা কিছুদিন পর শেষ হয়ে যায় না। কিছু ভালোবাসা সত্যিকারের হয়। আজীবনের জন্য হয়। আর আমার বিশ্বাস তোর ভালোবাসা তোকে ঠকাবে না।”
“তাহলে কি বলছিস? একবার ট্রাই করে দেখবো?”
“হুম।”
“কিন্তু যদি পরশি না মানে?”
“সেটা পরের বিষয়। তুই আগে তোর মনের বোঝা দূর কর।”
“কিন্তু আমি পরশিকে কি করে বলব?”
“যেভাবে বললে ও তোকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না।”
“আমি বুঝতে পারছি না কি করব। কিন্তু আমার পরশিকে ভালোলাগে। ওর সঙ্গ ভালো লাগে। অল্পের জন্যও মনে হয় না এটা ক্ষণিকের এ্যাট্রাকশন। আমার থেকে দূরত্ব ভালো লাগে না। আই ডোন্ট নো আমার এসব ফিলিংস কিভাবে তৈরি হলো।”
“এরকমটাই হয়। কিন্তু মনে ভয় একটাই ভালোবাসার মানুষটা যদি তোমায় পছন্দ না করে যদি তোমায় ফিরিয়ে দেয়!”
“আমারও সেটাই ভয় করছে।”
“সুযোগ আছে। মনের কথা বলে ফেল। না হলে আজীবন পস্তানো লাগে।”

দুজনেই সিগারটের ধোয়া ছাড়ে। সাথে ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস। একজন জানে সে কাউকে অনেক ভালোবাসে৷ কিন্তু তাকে বলতে পারছে না৷ কারণ সে জানে সে তার জন্য পারফেক্ট না। আর সে কোনোদিনও তাকে ভালোবাসবে না। অপরদিকে অন্যজনের মনে এখনও দ্বিধা। এটা কি ভালোবাসা নাকি অন্যকিছু? ভালোলাগার মানুষটাকে এগুলো বললে সে কি বুঝবে? সেও কি বাড়িয়ে দিবে ভালোবাসার হাত?

❝হৃদয়ের কোণে থাকলে ভালেবাসা,
মনে কি জাগে না, তাকে পাওয়ার ক্ষুদ্র আশা?❞

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here