ভালোবাসা কারে কয়,৩৭,৩৮

0
144

ভালোবাসা কারে কয়,৩৭,৩৮
শবনম মারিয়া
পর্ব ৩৭

এই শুক্রবার প্রণয় আসতে চায় নি৷ তার আজ শরীরটা ভালো লাগছে না। এই শীতের মধ্যে কাল তূর্ণর সাথে রাতেরবেলা বাইরে ঘুরেফিরে ঠান্ডা লেগে গিয়েছে। প্রণয়িনী বায়না ধরেছিল তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু প্রণয় যখন বলল,
“মা আজ বাবার শরীরটা ভালো নেই। আজ না গেলে হ না?”
“আচ্চা বাবা। তুমি সুত্ত হও।”
“ভালো মেয়ে। সব বুঝে।”
প্রণয়িনী গিয়ে প্রণয়ের গালে চুমু দিয়ে বলে,
“আমার বাবা ঠিক হয়ে যাবে তো।”
প্রণয় প্রণয়িনীর কপালে চুমু দিয়ে বলে,
“ঠিক তো হতেই হবে। আমার মেয়ে যে বাবাকে আদর করে দিয়েছে।”
প্রণয়িনী হাসি দিয়ে বাবার চুলে হাত বুলিয়ে দেয় যেভাবে তার বাবা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। প্রণয় হাসে। প্রণয়িনীকে কোলে জড়িয়ে বসে থাকে।
অন্যদিকে চন্দ্রা আজ অনেক কষ্ট করে ইউটিউব দেখে ইলিশ পোলাও রান্না করার চেষ্টা করছে। সে আগে কখনো এটা রান্না করেনি। ইলিশ মাছ কখনো সে ধরেও না৷ আজ কি বুঝে তার মন চাইলো যেন ইলিশ পোলাও করতে৷ প্রণয় আর প্রণয়িনী দুজনেরই পছন্দ। বিশেষ করে প্রণয় অনেক ভালোবাসে।আজকাল কেন যেন চন্দ্রার সেগুলো করতে ভালো লাগছে যেগুলো প্রণয় পছন্দ করে। ইলিশের গন্ধ ভালো লাগে না দেখে কাজে সাহায্যকারী আমেনা খালা বললেন তিনিই করে দিবেন৷ কিন্তু চন্দ্রা মানলো না৷ এটা সে নিজেই করবে। তারপর দেখে দেখে করে নিল। ঘ্রাণ অনেক সুন্দর আসছে। চন্দ্রা আগে আগেই রান্নাটা সেরে ফেলেছে৷
শুক্রবার তূর্ণ ঘুম থেকে দেরি করে উঠে রান্না ঘরে এসে চন্দ্রার রান্না দেখে বলল,
“বেশ সুন্দর ঘ্রাণ আসছে তো। কি রান্না করেছিস?”
“ইলিশ পোলাও।”
“হঠাৎ? তুই তো ইলিশ সহ্য করতে পারিস না৷ সেখানে ইলিশ পোলাও কেন?”
“প্রণয়িনীর ভালো লাগে।”
“ওহ্ এই কাহিনি। এটা তো প্রণয়েরও খুব পছন্দের। ওর বেশ ভালো লাগবে।”
“হুম।”

চন্দ্রা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো ঠিক করল। কতক্ষণ আয়না দেখলো। কয়েকবার চুলগুলো চিরুনি করল। তারপর ভাবলো প্রণয়কে একটা ফোন দিবে। কখন আসবে জিজ্ঞেস করতে। চন্দ্রা ফোন করতেই প্রণয়ের ফোন বেজে উঠলো। প্রণয় ঘুমিয়ে পড়েছিল। মাথা অনেক ব্যথা করছিল প্রণয়ের। চন্দ্রার ফোনটা পেয়ে ঘুম থেকে উঠলো। তারপর ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,
“হ্যালো!”
চন্দ্রা কেমন থমকে গেল। প্রণয়ের ঘুম জড়ানো কন্ঠ ওর কেমন যেন লাগছে। খুব ভালো লাগছে। পুরুষ মানুষের ঘুম জড়ানো কন্ঠ কি এতোই ভালো লাগে?
প্রণয় আবার বলল,
“চন্দ্রমল্লিকা?”
চন্দ্রার আরও ভালো লাগছে। প্রণয় কি সুন্দর ঘুম জড়ানো কন্ঠে ‘চন্দ্রমল্লিকা’ বলে ডাকছে। আগে বিরক্ত লাগতো। কিন্তু আজকাল তার চন্দ্রমল্লিকা নামটাই ভালো লাগছে। প্রণয় চন্দ্রা বলে ডাকলেই বরং ভালো লাগে না এখন৷ চন্দ্রমল্লিকা ডাকলেই ভালো লাগে।
চন্দ্রা মৃদু স্বরে বলল,
“হুম।”
“কিছু বলবে?”
“বলছিলাম আমি কি ডিস্টার্ব করলাম? আপনি হয় তো ঘুমাচ্ছিলেন। আমি ফোন দিয়ে আপনার ঘুম নষ্ট করে দিলাম।”
প্রণয় তন্দ্রাঘোরে বলে,
“উহু।”
“আমি কি ফোন রেখে দিবো?”
“উহু, না।”
“আসলে৷ আমি ফোন দিয়েছিলাম প্রণয়িনীর খোঁজ করতে। আপনারা আসবেন না? এখনও ঘুমাচ্ছেন? বিকেলবেলা আসবেন তাহলে?”
“চন্দ্রা আজকে আসলে আমি একটু অসুস্থ। কাল রাতে তূর্ণ আর আমি ঠান্ডার মধ্যে ঘুরে বেড়িয়েছি। এখন আমার ঠান্ডা লেগে গিয়েছে। খুব খারাপ লাগছে। আজ না আসলে হয় না? প্রণয়িনীও যেতে চেয়েছিল কিন্তু ওকে বুঝিয়েছি। এখন যাবে না বলেছিল।”
চন্দ্রা মন খারাপ করে বলল,
” আচ্ছা।”
“সরি।”
“ইটস ওকে।”
বলে কিছুক্ষণ থেমে থাকে চন্দ্রা। তারপর নিজে থেকে বলে,
“আমি গিয়ে প্রণয়িনীর সাথে দেখা করে আসি?”
“আসো। এটা আবার জিজ্ঞেস করছো? তোমাকে না বলেছি প্রণয়িনীর সাথে তোমার যখন খুশি তুমি দেখা করো।”
“ধন্যবাদ।”
প্রণয় সামান্য ধমকে বলল,
“এই! এইসব থ্যাংকিউ কাকে বলছো? আমাকে কখনো থ্যাংকস বলবে না।”
“কেন?”
প্রণয় চুপ করে৷ তারপর বলে,
“জানি না। ভালো লাগে না এতো ফর্মালিটি। পরিচিতদের কেউ থ্যাংকস জানায় না।”
“আমি আপনার কতটুকু পরিচিত?” প্রশ্ন করে বসে চন্দ্রা। প্রণয় বলে,
“তা তো জানি না। তুমি আসো প্রণয়িনীর সাথে দেখা করে যাও। ওর ভালো লাগবে।”
“আচ্ছা।”
ফোনটা কাটার পর প্রণয় বলল,
“তুমি আসলে আমারও অনেক ভালো লাগবে চন্দ্রমল্লিকা।”

চন্দ্রা রেডি হয়ে নিল। তারপর বের হওয়ার আগে দাদা দাদুকে আর তূর্ণকে বলল। তূর্ণ শুনে বলল সেও যাবে। দুই ভাইবোন একসাথে চলে গেল প্রণয়দের বাসায়। চন্দ্রা আর তূর্ণকে দেখে প্রণয়ের বাবা মা অনেক খুশি হলেন৷ সকলে মিলে একসাথে দুপুরের খাবার খেতে বসলো। চন্দ্রা যা রান্না করেছিল তা নিয়ে এসেছে প্রণয়িনীর জন্য।
প্রণয়িনী চন্দ্রাকে পেয়ে তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে। তূর্ণ গিয়ে গল্প করছে প্রণয়ের সাথে। খাওয়ার সময় প্রণয়ের মা লক্ষ্য করলেন চন্দ্রা প্রণয়ের পছন্দের জিনিস রান্না করে এনেছে যেখানে চন্দ্রা নিজেই এই জিনিসগুলো খায় না। তাহলে এতো কষ্ট করে রান্না করে নিয়ে এসেছে কেন? বলছে তো প্রণয়িনীর জন্য। কিন্তু প্রণয়িনীর থেকেও এগুলো বেশি পছন্দ প্রণয়ের। তাহলে কি চন্দ্রার মনেও প্রণয়ের জন্য কিছু আছে? মনে প্রশ্ন জমে প্রণয়ের মায়ের। ছেলের কথা সারাদিন ভাবেন এই মহিলা। ছেলের মনের অবস্থা বুঝতে পারেন৷ কিন্তু কিছুই করতে পারে না। কিন্তু যদি চন্দ্রাও সত্যিই প্রণয়কে পছন্দ করে থাকে তাহলে তিনি কিছু একটা করবেন। দুজনকে একসাথে খারাপ লাগবে না। এসব ভাবতে থাকেন প্রণয়ের মা।

চন্দ্রা প্রণয়িনীকে খাইয়ে দিচ্ছে। প্রণয়িনীর অভ্যাস সে বেশির ভাগ সময় তার বাবার রুমের বারান্দায় বসে খায়। চন্দ্রা বারান্দায় গিয়ে অবাক হয়ে গেল। তার দেওয়া গাছটা প্রণয় অনেক যত্ন করে রেখেছে। গাছ ভর্তি ফুল ফুটে আছে। প্রণয় এতো ব্যস্ততার মধ্যেও গাছটার খেয়াল নিতে ভুলেনি! আচ্ছা প্রণয় কি এমনই? সব কিছুর খেয়াল থাকে ওর! কোনো কিছুই ভুলে না কখনো। শত ব্যস্ততার মধ্যেও না। প্রণয়ের এসব ব্যাপারগুলো চন্দ্রার খুব ভালো লাগে। এক সময় চন্দ্রা ভাবতো প্রণয় প্রণয়িনীর জন্য তেমন কিছুই করে না৷ কিন্তু এখন জানে প্রণয় প্রণয়িনীর জন্য কতটা পাগল। আর সে বাবা হিসেবে সকল দায়িত্বই পালন করে। চন্দ্রার মাঝে মাঝে মনে হয় প্রণয়িনী সবথেকে ভালো বাবা পেয়েছে।
চন্দ্রা হাতে প্লেটটা নিয়ে ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে আর এগুলো ভাবছ। প্রণয়িনী বলল,
“আন্তি তুমি কি দেখচো?”
চন্দ্রার খেয়াল হলো। সে হেসে বলল,
“কিছু না। তুমি খাও।”
তারপর প্রণয়িনীর মুখে খাবার দিল। প্রণয় ফোনটা নিতে রুমে এসেছিল। সে ঘরের ভেতর থেকেই ব্যাপারটা দেখে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“কি হয়েছে?”
প্রণয়িনী বলল,
“কিচু না।”
প্রণয় চন্দ্রাকে বলল,
“সব ঠিকাছে? তুমি কি কিছু নিয়ে চিন্তিত?”
“না। আসলে আমি দেখছিলাম চন্দ্রামল্লিকা গাছটা বেশ যত্নে বড় হচ্ছে। কি সুন্দর ফুল ফুটেছে।”
প্রণয় সামান্য হেসে বলল,
“প্রণয় এহসানের কাছে থাকা কোনো কিছুই অযত্নে থাকে না।”
চন্দ্রা প্রণয়ের দিক তাকালো। প্রণয় বলল,
“সরি ডিস্টার্ব করার জন্য। আমি আসি।”
এই বলে প্রণয় চলে গেল।

চন্দ্রা আর তূর্ণ বাসায় আসলো। চন্দ্রা তার নানা নানুর সাথে গল্প করছে। চন্দ্রার মামা তোহরাব সাহেব একটু বাহিরে বেড়িয়েছেন। তাই তূর্ণও এখন দাদা দাদির রুমে এসেছে। সকলে মিলে এ কথা সে কথা বলছে। চন্দ্রা বলল,
“তোমারা সবাই বসো। আমি চা নিয়ে আসি।”
মিরাজ সাহেব বলল,
“তোমার যাওয়া লাগবে না। আমেনা কে বলো।”
তূর্ণ বলল,
“না। তুই যা। তোর নামে একটু গুটিবাজি করব দাদুর কাছে।”
এই বলে তূর্ণ হাসে। চন্দ্রা কপালে ভাজ ফেলে বিরক্ত হয়ে তাকায়। তারপর চলে যায়।
তূর্ণ বলে দাদু দাদি তোমাদের সাথে একটা টপিকে ডিসকাস করতে চাই।
মিরাজ সাহেব বললেন,
“কি টপিক?”
“দাদু তোমার পরশিকে কেমন লাগে?”
মিরাজ সাহেব আর রোকেয়া বেগম একে অপরের দিক বিস্ময়ের সাথে তাকান। তারপর রোকেয়া বলেন,
“পরশি তো অনেক ভালো মেয়ে। কেন কি হয়েছে?”
“আমি যদি পরশিকে আমার অনুভূতির কথা বলি তাহলে ও কি করবে?”
মিরাজ সাহেব সবটা বুঝেও না বোঝার ভান করে বলেন,
“কিসের অনুভূতি?”
তূর্ণ চুপ করে থাকে। সে বুঝতে পারে না কি বলবে। তারপর দাদা দাদির দিক তাকিয়ে বলে,
“আমি হয়ত পরশিকে ভালোবেসে ফেলেছি।”
রোকেয়া আর মিরাজ হেসে দেন। তারপর মিরাজ বলে,
“তুমি? সত্যি তো? তুমি না ভালোবাসায় বিশ্বাস করো না দাদু ভাই।”
“আমিও এটা নিয়ে কনফিউজড। কিন্তু পরশির কাছাকাছি থাকলে আমার ভালো লাগে। আমার ওকে ভালো লাগে। আমি চেয়েও ওর কথা ভাবা বন্ধ করতে পারি না। এটাই কি ভালোবাসা?”
রোকেয়া কিঞ্চিৎ হেসে বললেন,
“হ্যাঁ। এতোদিনে বুঝলা?”
তূর্ণ বলল,
“কিন্তু আমি ওকে বলতে পারছি না আমার অনুভূতির কথা। আমি জানি না পরশি কিভাবে রিঅ্যাক্ট করবে। যদি পরশির আমাকে ভালো না লাগে। যদি পরশি আমাকে খারাপ ভাবে। যদি আমার থেকে দূরে সরে যায়?”
মিরাজ সাহেব বললেন,
“কি হবে সেটা ভেবে না এগিয়ে পিছিয়ে গেলে তো চলবে না। তোমাকে আগে তোমার ভেতরকার অনুভূতি প্রকাশ করতে হবে। একবার চেষ্টা করে দেখতে হবে৷ ভালোবাসা এতো সহজ নয়।”
রোকেয়া বললেন,
“একবার মনের মধ্যে থাকা কথাগুলো তো বলে দেখো দাদুভাই। আমার মন বলে পরশিও তোমাকে পছন্দ করবে। তোমাদের একসাথে অনেক সুন্দর লাগে। তোমাদের মধ্যকার বন্ধুত্ব সুন্দর লাগে। এত অল্প সময়ের মধ্যেই একে অপরকে কতোটা বুঝতে শিখেছো তুমি!”
তূর্ণ কিছুটা আশা পেল। সে ভাবছে তবে কি আজই বলে দিবে মনের মধ্যে থাকা সকল কথাগুলো? কিন্তু আবার এটাও ভাবে সে কি পারবে? হবে কি তার আর পরশির ভালোবাসার সূচনা?

.
দাদা দাদুর রুম থেকে গল্প করে এসে চা খেয়ে এখন চন্দ্রা নিজের রুমে বসে আছে।ল্যাপটপটা নিয়ে বসলো। চন্দ্রার আগে নিজস্ব ল্যাপটপ ছিল না। প্রয়োজনে তূর্ণরটা ব্যবহার করতো। কিন্তু প্রণয়ের অফিস জয়েন করার পর প্রণয় তাকে একটা ল্যাপটপ দিয়েছে। তাই এই ল্যাপটপ কেউ ধরে না। তাই সে ইচ্ছা করেই প্রণয়িনীর ছবি দিয়ে রেখেছে ওয়ালপেপারে। ল্যাপটপটা খুলে চন্দ্রা কতক্ষণ প্রণয়িনীর ছবির দিক তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর তার খেয়াল হলো অফিস থেকে তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অফিসের সকল প্রকার কাজের জন্য একটা নতুন ই-মেইল আইডি খুলতে। চন্দ্রা একটা ই-মেইল খুলে সেটাতেই লগইন করে রাখলো। ফোনেও আগেরটা থেকে লগআউট করে নতুনটায় লগইন করে রাখলো। কারণ তার ঐ ই-মেইল কোনো কাজেরই না। কিন্তু অফিসেরটা কাজে লাগবে। তাই সে এটায় লগইন করে রাখলো।
প্রণয়কে কিছু ফাইল সেন্ড করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তাই চন্দ্রা প্রণয়কে ফাইলগুলো সেন্ড করে দিল।
প্রণয়েরও ভালো লাগছিল না বলে অফিসের কাজ করছিল। হঠাৎ মেইল চেক করে দেখে চন্দ্রার মেইল। এই সময় চন্দ্রাকে অফিসের কাজ করতে দেখে প্রণয় চন্দ্রাকে ফোন দিল। চন্দ্রা ফোনটা রিসিভ করে সালাম দিল। প্রণয় সালামের উত্তর দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কি অবস্থা?”
“এইতো। আপনার কি অবস্থা? ঠান্ডা মাথা ব্যথা কমেছে?”
“কিছুটা।”
“ওহ্। ওষুধ খেয়েন ঠিকমতো।”
“আচ্ছা। কিন্তু আজ তো অফ ডে। তুমি হঠাৎ অফিসের কাজ করছো?”
“এমনিই বসে ছিলাম ভালো লাগছিল না, তাই।”
“আচ্ছা। আমিও অফিসের কাজ করছিলাম। তারপর দেখলাম তোমার মেইল। পরে ভাবলাম ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করি৷ হঠাৎ এ সময় কাজ কেন।”
“আপনিও তো এই সময় অফ ডে তে অসুস্থ হওয়ার পরেও কাজ করছেন।”
“সারাদিন তো রেস্ট নিলাম। এখন ভালো লাগছিল না।”
“প্রণয়িনী কোথায়?”
“বাবা মায়ের কাছে।”
“ওহ্। একটা কথা জিজ্ঞেস করি? কিছু মনে করবেন না তো?”
“না৷ বলো।”
“প্রণয়িনী কখনো ওর মায়ের কথা জিজ্ঞেস করে না?”
“হঠাৎ এমন কথা কেন?”
“না, মানে আপনার রুমে গেলে প্রণয়িনী আর আপনার ছবি পাওয়া যায়। প্রণয়িনীর মার ছবি নেই কেন?”
“তোমার মনে হয় এতোকিছুর পরেও আমি আনিকার ছবি রেখে দিবো আমার রুমে?”
“কিন্তু প্রণয়িনী কখনো জিজ্ঞেস করেনি?”
“আমার মেয়ে যথেষ্ট বুদ্ধিমতি। ওকে একবার বোঝানো হয়েছিল ওর মাকে আল্লাহ নিয়ে গিয়েছেন। আর যারা নেই তাদের দেখা যায় না। প্রণয়িনী আর কিছু বলেনি। শুধু আগে বলতো সবার মা আছে ওর মা কই। তখনও একই কথা বলে বুঝাতাম। এখন বুঝে গিয়েছে। আর বলে না।”
“ওহ্। আই এ্যাম সরি। আমার এভাবে জিজ্ঞেস করা ঠিক হয়নি আপনাদের পারসোনাল ব্যাপার।”
“ইটস ওকে। এখানে পারসোনালের কি আছে? সম্পূর্ণটাই তুমি জানো।”
“হুম। আচ্ছা এখন রাখি।”
“আচ্ছা।”

চলবে…..

ভালোবাসা কারে কয়
শবনম মারিয়া
পর্ব ৩৮

তূর্ণ আজ তার মনের কথাগুলো সব পরশিকে বলবেই। যত যাই হোক। আজ বছরের শেষ দিন৷ নতুন বছের শুরুটা তূর্ণ পরশিকে নিয়েই করতে চায়৷ নিজের মনকে অনেক রকমের বুঝ দিয়ে শান্ত করে ঠিক করেছে সে পরশিকে নিজের সকল অনুভূতি বলে দিবে। না হলে সে শান্তিতে থাকতে পারবে না। তার স্পষ্ট মনে আছে সে একবার পরশিকে বলেছিল মানসিক শান্তির জন্য যা খুশি তাই করা উচিত। আজ সে নিজেও এটা করবে। তবে মনে ভয় যদি পরশি না মেনে নেয়। তবুও সে বলবে। এভাবে কথা আঁটকে রেখে থাকা যায় না। তূর্ণর অভ্যাস হয়ে গিয়েছে পরশির সঙ্গ পাওয়া। এখন আর ভালো লাগে না তাকে ছাড়া। ইদানীং রোজ রাতে সে পরশির সেই ওড়নাটা যেটা দিয়ে পরশি তূর্ণর ক্ষত হওয়া হাত বেঁধে দিয়েছিল সেটা হাতে নিয়ে ঘুমিয়ে থাকে।
তূর্ণ বুঝতে পারছে না কিভাবে কি করবে। সে সবটা স্পেশাল ভাবে করতে চাচ্ছে। কিন্তু কিভাবে পছন্দের মানুষটাকে স্পেশাল ফিল করাতে হয় তা সে জানে না৷ অনেক চিন্তা ভাবনা করে কিছুই করতে পারলো না তূর্ণ৷ অবশেষে কিছু ফুল আর ছোট্ট একটা গিফট নিল সে। গিফট হিসেবে কি নিবে তাও বুঝতে পারছিল না তূর্ণ। অবশেষে একটা উপন্যাসের বই কিনে নিল।
তূর্ণ পরশিকে সারপ্রাইজ দিতে তার অফিসে গেল। ভেবেছিল সেখানে গিয়ে পরশিকে নিয়ে আসবে। তারপর রিকশায় করে এই শহরের অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়াবে। ঠিক যেভাবে ঘুরে প্রেমিক প্রেমিকারা। কিন্তু অফিস গিয়ে জানতে পারলো পরশি আজ অফিসে যায় নি। শুনে তূর্ণ অবাক হলো। তাহলে পরশি গিয়েছে কোথায়? তবে কি বাসায় আছে? জানার জন্য পরশিকে তূর্ণ ফোন দিল। কিন্তু পরশির ফোন বন্ধ।সে অনেকবার ফোন দিয়ে দেখলো। কিন্তু প্রত্যেকবারই পরশির ফোন সুইচড অফ বলছে। তূর্ণ চিন্তিত হয়ে গেল। কোথায় গিয়েছে পরশি? অফিসে খোঁজ করেও কিছু জানতে পারছে না৷ কেউ কিছু বলতে পারছে না। তূর্ণ ছুটে গেল বাসায়। তখন বিকেল পেরিয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যা নেমে আসছে। জ্যামে বসে থাকতে থাকতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। না তূর্ণ আর পারছে না। সে রিকশা থেকে নেমে ছুটতে শুরু করল। তূর্ণ বাসায় গিয়েও বেশ কয়েকবার কলিং বেল বাজালো। পরশি দরজা খুলছে না। তূর্ণ অনেক বেশি অস্থির হয়ে গেল। তবে কি পরশি বাসায়ও নেই? হঠাৎ করে তূর্ণর মাথায় খেয়াল আসলো পরশি কি ওর বাবার বাসায় গিয়েছে? হতেই পারে। এটা ভেবে তূর্ণ মনকে কিছুটা শান্ত করে। তারপর পিছন ফিরে চলে যাওয়া ধরলো। এমন সময়ই দরজা খোলার শব্দ পেয়ে ফিরে তাকালো।
পরশি দরজা খুলেছে। পরশিকে দেখে তূর্ণ শান্ত হলো। তূর্ণর কিছু খেয়াল নেই। সে পরশিকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“উফ তুমি ঠিক আছো! তোমাকে কত খুঁজেছি। কত ফোন করেছি। কিন্তু তোমার ফোন বন্ধ। এভাবে কেউ ফোন বন্ধ করে রাখে?”
পরশি নির্বিকার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না। সে যেন তার দুনিয়াতে নেই। তার চারদিকে কি হচ্ছে তার কোনো খেয়াল নেই। সে তার ঘোরেই আছে।
তূর্ণর হঠাৎ খেয়াল হলো যে পরশি কিছু বলছে না। সে পরশিকে ছেড়ে তার দিক তাকালো। দেখছে পরশির কেমন বিধস্ত অবস্থা। মনে হচ্ছে কান্না করেছে। চেহারা কেমন হয়ে আছে। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। পরশিকে দেখে তূর্ণর স্বাভাবিক লাগছে না। পরশির কিছু তো একটা হয়েছে?
তূর্ণ পরশিকে জিজ্ঞেস করল,
“পরশি কি হয়েছে? আর ইউ ওকে? পরশি কিছু বলুন। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে। পরশি!”
পরশি কিছু বলল না। শুধু তাকালো তূর্ণর দিকে। পরশি বুঝতে পারছে না কি করবে। ওর মনের অবস্থা ভালো নেই। আবার সেই পুরোনো ব্যথাগুলো ব্যথা দিচ্ছে। দিবেই না কেন? কিন্তু এই কথাগুলো কি পরশি তূর্ণকে বলবে? ওর কি বলা উচিত? এই কথাগুলো তো পরশির একদম একার। কাউকেই বলতে চায় না। সে তো সকলের সামনে ভালো থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু ভেতরে থেকে যে সে ভালো নেই। কি করবে? তূর্ণ একমাত্র মানুষ যে পরশিকে ভালো থাকতে সাহায্য করে। তূর্ণকে কি সবটা বলবে পরশি? পরশি ভাবতে থাকে।
তূর্ণ বলে,
“পরশি আপনাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে আপনি ভালো নেই। প্লিজ বলুন পরশি কি হয়েছে।”
পরশি আচমকা কেঁদে ফেলে। তারপর কান্না করতে করতে বলে আমি ভালো নেই তূর্ণ, আমি ভালো নেই। সত্যিই আমি ভালো নেই। এই বলে পরশি অঝোরে কাঁদতে থাকে। তূর্ণ বুঝতে পারছে না কি হলো। তূর্ণ পরশিকে নিয়ে বসালো। পরশি কান্নাই করছে। তূর্ণ পরশির সামনাসামনি বসে ওর মাথায় হাত রেখে পরশিকে বলল,
“পরশি কিছু তো বলুন।”
পরশি কিছু বলছে না৷ সে কান্নাই করে যাচ্ছে। আর কি যেন বলছে। তূর্ণ বুঝতে পারছে না।
বেশ কিছুক্ষণ পর পরশি থামলো। তূর্ণ বলল,
“পরশি কি হয়েছে?”
পরশি তার সামনে রাখা পানির গ্লাসটা থেকে পানি পান করলো। তূর্ণ পানি এনে দিয়েছিল তাকে। তারপর পরশি বলল,
“তূর্ণ আমি আপনাকে এই অল্প সময়ের বহু গল্প বললেও একটা গল্প বলতে পারিনি। এই গল্পটাকে আমিই ভুলে থাকতে চাই। কিন্তু আমি পারি না। সারাটা বছর নিজেকে সামলে রাখলেও এই সময়টা, আজকের দিনটা আমি নিজেকে সামলে রাখতে পারি না৷ মনে পড়ে যায় সব৷ মনে পড়ে যায় পুরোনো মানুষটাকে। ভুলে থাকতে পারি না। আচ্ছা মানুষ কেনো পুরোনো জিনিস ভুলে থাকতে পারে না? পুরোনো জিনিস ভোলা যায় না কেন? মস্তিষ্ক থেকে কেন একটা মানুষের স্মৃতি মুছে ফেলা যায় না?”
তূর্ণ বুঝছে পারছে না পরশি কি বলছে। পরশি তারপর শুরু করল তার অতীতের গল্প বলা।
পরশির বয়স তখন অনেক অল্প। সবে মাত্র এইচএসসি পাশ করে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। সেখানেই প্রথম দেখা হয়েছিল আবিরের সাথে। আবির ছিল পরশির সিনিয়র। পরশি যখন ফার্স্ট ইয়ারে আবির তখন ফাইনাল ইয়ারে। কিন্তু তাদের মধ্যে কথা হতো। একদিন আবির ভার্সিটিতে সকলের সামনে পরশিকে প্রপোজ করে। পরশিও তা একসেপ্ট করে। পরশিরও খুব ভালো লাগতো আবিরকে। পরশির সব ভালো লাগা খারাপ লাগার খেয়াল রাখতো। একে অপরকে অনেক বেশি ভালোবাসতো। পাগলের মতো ভালোবাসতো। একজন যেন অপরজনকে ছাড়া থাকতে পারতো না। একসাথে কত ঘুরেছে। এক সাথে অনেক সময় কাটিয়েছে। আবির পরশির সব ভালো লাগার খেয়াল রাখতো। পরশির জন্য প্রতিদিন ফুল কিনতো। পরশি বাসা থেকে না খেয়ে বের হলে নিজ হাতে আগে পরশিকে খাবার খাইয়ে দিত। পরশিকে ছাড়া যেন আবিরের দিন শুরু হতো না৷ দুজনের বাসায়ই ওদের ভালোবাসার কথা জানতো। দুটো মানুষ রোজ একসাথে না না রকমের স্বপ্ন বুনতো।তাদের ছোট্ট একটা ঘর হবে। ছোট একটা সংসার হবে। সেই সংসারে পরশির ইচ্ছায় সব হবে।যখন আবিরের একটা চাকরি হলো। পরশি তাকে খুব জোর দিতে শুরু করল বিয়ের জন্য। আবিরেরও খুব ইচ্ছে ছিল বিয়ে করে দুজনে সংসার করবে। আবির অপেক্ষা করল ভালো একটা চাকরির জন্য। ভালো একটা চাকরি না হলে পরশি সুখে থাকবে না সেইজন্য। আবিরের একটা ভালো চাকরিও হলো। কিন্তু আবির তার চাকরি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় আরও পরে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু দুই পরিবারের চাপে আবিরকে বিয়ের জন্য রাজি হতে হয়েছিল। অবশেষে তারা বিয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। বিয়ের আগে কতশত তাদের জল্পনা কল্পনা! বাসা নিয়ে সংসার সাজিয়ে ফেলেছিল। বিয়ে করে তারা সেই বাসায়ই থাকবে। সব পরশির ইচ্ছায় হতো। আবির প্রত্যেকদিন অফিসের পর পরশিকে নিয়ে মার্কেটে যেতো। বিয়ের সকল কিছু আবির নিজের ইচ্ছায় কিনেছিল। টকটকে একটা লাল বেনারসী পরশির অনেক পছন্দ্ হয়েছিল। কিন্তু তাদের বাজেট থেকে আরও বেশি দাম হওয়ার কারণে পরশি সেটা নেয়নি। পরের দিন দেখে আবির তার জন্য সেই বেনারসীটাই নিয়ে এসেছে। তারপর থেকে আবির শুধু পরশিকে ডাকতো ‘আমার লাল টুকটুকে বউ’। পরশির এতো ভালো লাগতো। বিয়ের সব রকমের আয়োজন হলো।হঠাৎ হলুদের দিন পরশি আবির আর পরশির চাচাতো বোনকে একসাথে আপত্তিকর অবস্থায় নিজে দেখে ফেলে পরশি। পরশি তার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না৷ পরশি যেন ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিল। পরশিকে তাও আবির বুঝাতে চেয়েছিল যে এখানে তার কোনো দোষ নেই। পরশিও আবিরকে ছাড়া থাকতে পারবে না। আবির বলেছিল বিয়ের আগের দিন পার্টি করে তার বন্ধুরা জোর করে ড্রিংক করিয়েছে এজন্য এমনটা হয়ে গিয়েছে। দোষ পরশির চাচাতো বোনের। সে আবিরের এই অবস্থার সুযোগ নিয়েছে। পরশি বিশ্বাস না করতে চাইলেও তার ভালোবাসার কাছে হার মেনেছিল। কারণ যেই মানুষটা এতোবছর ওকে ভালোবেসেছে সে এরকম করতে পারে না৷ আর পরশি তার বাবা মায়ের পরিবারের সম্মানের চিন্তা করেও বিয়ে ভেঙ্গে দেয় নি। সুযোগ দিয়েছিল আবিরকে। যদিও কেউই ব্যাপারটা জানতে পারেনি। পরশি আবিরকে সুযোগ দিয়ে বিয়ের জন্য প্রস্তুত হয়। পরের দিন বিয়েতে পরশি আবিরের অপেক্ষায় ছিল। তার দেওয়া সেই লাল টুকটুকে বেনারসী পরে তার লালা টুকটুকে বউ সেজে বসে ছিল। কিন্তু সময় পার হয়ে যাচ্ছিল। আবির আসছিল না। শেষ পর্যন্ত আসলো৷ কিন্তু আসলো আবিরের লাশ। বিয়ের দিন পরশি লাল টুকটুকে বউ সেজে লাশের পাশে বসেছিল। জানা যায় আবির এক্সিডেন্ট করেই মারা গিয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত পরশি মনে করে হয় তো আবিরের দোষ ছিল না৷ সে পরশির উপর অভিমান করেই চলে গিয়েছে। পরশি ভুলতে পারেনি আবিরের ভালোবাসা।ভুলতে পারেনি আবিরের বিশ্বাসঘাতকতা ও। পরশি আজও আবিরের জন্য কান্না করে। আবিরের জন্য কষ্ট পায়। বিয়ের সেই লাল বেনারসী, গহনা আর আবিরের আরো কিছু স্মৃতি আজও পরশি সামলে রেখে দিয়েছে। মাঝে মাঝে ঐদিনের ঐ কথা মনে পড়লে মনে হয় আবির ওকে ঠকিয়েছে বলে শাস্তি পেয়েছে। আবিরকে তার ভুলে যাওয়া উচিত। ঐ সব জিনিস পত্র ফেলে দেওয়া উচিত। কিন্তু আবিরের ভালোবাসার কথা মনে পড়লে পরশি ভাবে আবির তাকে সত্যিই ভালোবাসতো। আবির ওরকম করতেই পারে না৷ আবিরের দেওয়া জিনিসগুলো পরশি জড়িয়ে ধরে কাঁদে তখন৷ অভিমান করে বলে, কেনো ছেড়ে গেলে আমায়?
পরশি নিজের সবটা দিয়ে আবিরকে অনেক ভালোবেসেছিল। সে আর কাউকে ভালোবাসতে পারবে না৷
আজ সেই দিন যেই দিন আবির মারা গিয়েছিল। এই ডিসেম্বর আসলেই পরশির মন খারাপ হয়ে যায়। আর এই দিনটায় সব মনে পড়ে সে একেবারে ভেঙে পড়ে। সে চায় একা থাকতে। চায় নিজেকে গুটিয়ে রাখতে। কিন্তু পারে না।
ঐদিন আবিরকে হারানোর পর থেকে পরশি অনেক ভেঙে পড়ে। সব কিছু সামলে উঠতে তার সময় লাগে। সে জীবনের কাছে হার মানতে চেয়েও পারে না। একসময় লেখাপড়া শেষ করে ক্যারিয়ারে মনোযোগ দিয়ে জীবনে এগিয়ে যায়। সফলতা লাভ করে। কিন্তু আবিরকে তাও পুরোপুরি ভুলতে পারে না৷ পরিবার থেকে অনেক চাপ দিয়েছে বিয়ের জন্য। পরশি বিয়ে করেনি। পরশি একবার যাকে ভালোবেছিল তাকে ভুলে অন্য কাউকে ভালেবাসতে পারবে না৷ পরশির বিয়ে না করার কারণেই তাকে তার আত্মীয় স্বজন আর পরিবারের লোকজন অনেক কথা শুনায়। তবুও সে মানে না৷ যারা তার ভালো চায় তারাও তাকে বুঝিয়েছে আবিরকে ভুলে, অতীতকে ভুলে নতুন জীবন শুরু করতে। কিন্তু পরশি পারে নি৷ পারবেও না। পরশি চেষ্টা করেছিল৷ কিন্তু পারে নি। এভাবে পরশি সব সহ্য করে বেঁচে আছে। তবুও মানুষের সামনে চেষ্টা করে সুখী হয়ে থাকতে।

তূর্ণ সবটা শুনলো। তূর্ণ বিস্মিত। সে আজ পরশিকে কি বলতে এসেছিল আর পরশির কাছে তাকে কি শুনতে হলো? তবে সবটাই তূর্ণর ভুল ছিল? না, তূর্ণর নিজেকে সামলাতে হবে। নিজেকে সামলে পরশির একজন ভালো বন্ধু হিসেবে পরশির পাশে দাঁড়াতে হবে। পরশির আজ মন খারাপ। পরশি ভেঙে পড়েছে। তূর্ণর ওর পাশে থাকা উচিত। ভালো বন্ধু হিসেবে। তূর্ণ কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর বলল,
“কিন্তু আর কত কষ্ট পাবেন পরশি? এভাবে প্রতি বছর এই দিনে এতো কান্না করবেন? দুঃখ কি কমতে পারে না?”
“বললাম তো। চেষ্টা করেছি। পারিনি।”
“একা থেকে চেষ্টা করেছিলেন। আপনি হয় তো কথাগুলো আগে বললে আজ আমি আপনাকে একা থাকতে দিতাম না। এক সাথে ঘুরলে ফিরলে এই কথাগুলো আপনার মনেও পড়তো না।”
“মনে পড়ে। ভুলে তো থাকতে পারি না৷ তাই কারো সাথে কথা বলি না।”
তূর্ণ তারপর অনেকক্ষণ কথা বলল। অনেক কাহিনি শুনলো। পরশিকে বুঝালো। তারপর জোর করে পরশিকে ঘুমের ওষুুধ দিয়ে দিল।পরশি ঘুমিয়ে গেলে তূর্ণ নিজের বাসা চলে আসলো।
তূর্ণ আসলে নিজেই ভেঙে পড়েছে। এই প্রথম যাকে তার ভালো লেগেছিল সে অন্যকারো জন্য কাঁদে। অন্যকারো ভাবনায় ডুবে থাকে। ব্যাপারটা মেনে নেওয়ার কষ্ট হলেও তূর্ণ মনে করলো দোষটা ওরই। ওর উচিত হয় নি পরশিকে ভালেবাসা। কিন্তু ভালোবাসা তো জেনে শুনে হয় নি। হঠাৎ করেই হয়েছে!
তূর্ণর হঠাৎ মনে পড়লো ঐ দিনটার কথা। সে পরশির টেবিলে দেখেছিল একজনের ছবি৷ ঐটাই নিশ্চয়ই আবির। আর একটা কাগজে যেই লাইনগুলো লেখা ছিল সেটাও আবিরের জন্য লিখেছিল। তূর্ণর মাথায় আবছা হয়ে লাইন গুলো আসলো,
❝পুরোনো কষ্টগুলো ফিরে আসে বারংবার,
শুধু ফিরে না হারিয়ে যাওয়া মানুষটা আরেকবার।❞

পরশি তাহলে চায় আবিরকে আরেকবার ফিরে পেতে? চাইবে না কেন? সে তো তাকে অনেক ভালোবাসে!

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here