ভালোবাসা কারে কয়,৪১,৪২

0
146

ভালোবাসা কারে কয়,৪১,৪২
শবনম মারিয়া
পর্ব ৪১

সুস্মিতা একটা ফোন রিসিভ করতে বাহিরে এলো। ভিতরে কিছু শুনতে পারছে না। কনভেনশন হলের একদম বাইরে চলে এলো নেটওয়ার্কের জন্য। ঠিক এমন সময়ই সুস্মিতার মনে হলো পিছন দিকে কেউ একজন আছে। ও ঘুরতে গেল আর ঠিক এমন সময়ই ঘাড়ে ইনজেকশন পুশ করে দিল চন্দ্রা। সুম্মিতা কিছু বুঝে উঠার আগেই জ্ঞান হারালো। চন্দ্রা আগে থেকেই রফিকুলকে ফোন করে রেখেছিল। রফিকুল গাড়িতে করে সুস্মিতাকে উঠিয়ে নিয়ে গেল।
অন্যদিকে চন্দ্রা অনুষ্ঠানে ফিরে গেল। অনুষ্ঠান ভালোর ভালো চলছে। রিফান আর ইভাকে একসাথে খুব সুন্দর লাগছে। সকলে অনুষ্ঠানে মেতে আছে। পরশি দ্বিধায় আছে। সে বুঝতে পারছে না কি করবে? তূর্ণর সাথে কি তার কথা বলা উচিত? আজকে কথা বলেই ফেলবে। আর পারছে না পরশি অপেক্ষা করতে। আজ বাসায় যাওয়ার পর তূর্ণকে ছাদে ডাকবে পরশি তারপর সব বলে দিবে।
পরশির হঠাৎ খেয়াল হলো সুস্মিতার কথা। সে সুস্মিতাকে খুঁজতে শুরু করল। কিন্তু পাচ্ছে না। ফোন করল সুস্মিতাকে। তাও পেল না। কি করবে পরশি? রিফানকে জিজ্ঞেস করবে? সুস্মিতা তো সাধারণভাবেই নিচ্ছিল ব্যাপারগুলো। তাহলে মাঝ অনুষ্ঠানে এভাবে গায়েব হয়ে যাওয়ার মানে কি? তবে কি সুস্মিতার খারাপ লাগছিল বলে চলে গেল? খারাপ লাগাটা স্বাভাবিক। রিফানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলেও তার সাথে সংসার তো করতো। আর এখন সেই রিফানকে অন্য কারো সাথে দেখে খারাপ লাগতেই পারে। তাই হয় তো চলে গিয়েছে। এটুকু খারাপ লাগা দরকার আছে সুস্মিতার। ওর বুঝা উচিত রিফানের কতটা খারাপ লেগেছিল ওকে অন্য পুরুষের সাথে দেখে। কিন্তু সুস্মিতা পরশিকে অন্তত একবার বলে যেতে পারতো।
পরশি ভাবছে এই ব্যাপারে রিফানের সাথে কথা বলবে। কিন্তু এমন সময় তূর্ণ আসলো। তূর্ণ পরশির দিক এগিয়ে রিফান আর ইভার দিক তাকিয়ে বলল,
“দুজনকে একসাথে কত সুন্দর লাগছে তাই না?”
“হ্যাঁ।”
“ইভার জন্য আমি অনেক বেশি খুশি। মেয়েটা এই ক্ষুদ্র জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে। আমি চাই ওর জীবন সুখে ভরে যাক।”
পরশিও বলল,
“রিফান অনেক ভালো ছেলে৷ আমিও চাচ্ছিলাম যেন পারফেক্ট কাউকে পায় যে তাকে কখনো ঠকাবে না।”
“মানে?”
পরশি তূর্ণর দিক তাকিয়ে বলে,
“রিফান ডিভোর্সি জানতেন না?”
“না ইভা সেরকম স্পষ্টভাবে বলেনি।”
এরপর পরশি রিফান আর সুস্মিতার গল্প বলা শুরু করল। রিফানের সাথে সুস্মিতা কিভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তূর্ণও ইভার জীবনের গল্প বলল পরশিকে।
দুজনের মধ্যে অনেকক্ষণ কথা হলো। অনুষ্ঠান শেষে পরশি, তূর্ণ আর চন্দ্রা বাসায় চলে গেল। চন্দ্রার না গিয়ে উপায় ছিল না। তূর্ণ সব জেনে গেলে চন্দ্রা তার কাজ করতে পারবে না। চন্দ্রাকে আরও অপেক্ষা করতে হবে।
চন্দ্রা রফিকুলকে মানা করে দিয়েছে প্রণয়কে না জানাবার জন্য। কিন্তু রফিকুলকে নির্দেশ দিয়েছে প্রণয় যেন সে সব জানায় প্রণয়কে। তাই চন্দ্রার পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রণয়কে বলল রফিকুল। প্রণয় চন্দ্রাকে ফোন দিল।
প্রণয় চন্দ্রাকে ফোন করে বলল,
“তুমি কি করলে এটা! ঐ বিয়ে বাড়িতে গিয়েও!”
“কি করেছি আমি?”
“রফিকুল আমায় সব বলেছ চন্দ্রা। লুকিয়ে লাভ নেই।”
“ওহ্। জেনেছেন যেহেতু আবার জিজ্ঞেস করছেন কেন?”
“তুমি কি কোথাও গিয়ে চুপচাপ থাকতে পারো না?”
“না। ঐ মেয়েটা একটা বিশ্বাসঘাতক। ও ইভা আপুর বরকে ঠকিয়েছে। ওর বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।”
“চন্দ্রা! ওরা সবাই পুলিশ। ওদের এভাবে গায়েব হয়ে যাওয়াটা কোনো স্বাভাবিক ব্যাপার না। ওরা হারালে ওদের খোঁজা হবেই।”
“চিন্তা করবেন না। সেই ব্যবস্থাও করে রেখেছি। আপনি এসব বাদ দিয়ে বরং একটু নিতে আসতে পারবেন? অনেক রাত হয়েছে। এতো রাতে আমি রিকশা পাবো না।”
“চন্দ্রা মাথা ঠান্ডা কর।”
“মাথা ঠান্ডা করে কি হবে? ওকে ছেড়ে দিবেন? ওকে ছেড়ে দিলে আমি ছাড় পাবো? ওর মতো বিশ্বাসঘাতকের বেঁচে থাকা লাগবে না।”
প্রণয় কি বলবে বুঝতে পারছে না। আসলেই এখন মেয়েটাকে ছেড়েও দিতে পারবে না। ওকে মেরে ফেলা ছাড়া আর উপায় নেই। প্রণয় চন্দ্রাকে বলল,
“আমি আসছি।”
“আচ্ছা।”
প্রণয় ফোনটা রাখতে গেল তখন চন্দ্রা বলল,
“প্রণয় ভাইয়া!”
“বলো।”
“আপনি অনেক ভালো।”
এই বলে হাসে চন্দ্রা। প্রণয় কিছু বলে না। তার মুখটা মলিন হয়েই থাকে। এখন আবার তাকে তার প্রিয় মানুষকে অপ্রিয় কাজ করতে দেখতে হবে। প্রণয়ের ভালো লাগছে না।

চন্দ্রা বাসায় আগেই ঢুকে গেল। তূর্ণ পরশিকে বিদায় জানিয়ে বাসায় ঢুকতে যাচ্ছিল। পিছন থেকে পরশি তূর্ণকে ডাক দিল।
“তূর্ণ!”
তূর্ণ পিছে ঘুরে তাকিয়ে বলল,
“বলো কিছু বলবেন?”
“হ্যাঁ।”
“বলুন।”
“আপনি কি ফ্রি এখন? নাকি ব্যস্ত?”
“না৷ এখন ব্যস্ততা নেই।”
“ছাদে গিয়ে কথা বলতে অসুবিধা হবে?”
“না।”
“ঠিকাছে তবে চলুন।”
“আচ্ছা চলুন।”
“আপনি যান। আমি দুই মিনিটের মধ্যে আসছি। অনেক ঠান্ডা। একটু শাল নিয়ে আসতাম আর কি।”
“আচ্ছা।”
তূর্ণ চলে গেল ছাদে। অন্যদিকে পরশি বাসায় গেল অন্য কারণে। সে মোটেও শাল নিতে যায় নি। সে গিয়েছে ঐ ব্যাগটা নিতে। যেটায় বই ছিল আর গোলাপ ছিল। আর বইয়ের মধ্যে লেখা ছিল পরশির প্রতি তূর্ণর ক্ষুদ্র অনুভূতি।
পরশি সেগুলো নিয়ে উপরে গেল। গিয়ে দেখে তূর্ণ ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। পরশি তূর্ণকে গিয়ে বলল,
“আজকের চাঁদটা অনেক সুন্দর তাই না?”
তূর্ণ আকাশের দিক তাকিয়ে বলল,
“চাঁদ তো দেখাই যাচ্ছে না। ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে।”
“হ্যাঁ। কিন্তু কুয়াশার মধ্যে ঢাকা পড়লেও চাঁদ সুন্দর। ঠিক মানুষের অনুভূতির মতো। প্রত্যেকটা মানুষের কিছু সুন্দর অনুভূতি সে ঢেকে রাখে। কাউকে দেখতে দেয় না। বুঝতে দেয় না। অথচ অনুভূতিগুলো ভীষণ রকমের সুন্দর।”
তূর্ণ সামান্য পরিমাণ হাসে। পরশি বলল,
“এমন লাগছে কেন আপনাকে?”
“কেমন?”
“এই যে মনে হচ্ছে, মনের মাঝে লুকিয়ে আছে কত কথা। কিন্তু বলতে পারছেন না।”
“না তো।”
“কিছু কি বলতে চাচ্ছেন কিন্তু বলতে পারছেন না?”
তূর্ণ অবাক হয়ে পরশির দিক তাকালো। পরশি বলল,
“আচ্ছা ঠিকাছে। বাদ দিন। বলতে হবে না। তবে একটা কথা বলেন তো।”
“কি কথা?”
“আমাকে আজ কেমন লাগছে?”
“অপূর্ব!”
কথাটা তূর্ণ পরশির দিক না তাকিয়েই বলল। পরশি বলল,
“বাহ রে। না দেখেই বলছেন।”
“না দেখে বলছি না।”
“তবে জানলেন কিভাবে?”
“অনেক কিছুই দেখতে দেখতে মুখস্থ হয়ে যায়। না দেখেই নিমিষে বলা যায়। আর আমি না দেখে বলিনি। অনেকবার দেখে বলেছি।”
তূর্ণ কেমন যেন বেখেয়ালি হয়ে আছে। সে কি বলছে না বলছে তার নিজেরও খেয়াল নেই। কিন্তু পরশি তূর্ণর কথা বুঝতে পারছে। ভালো লাগায় পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে পরশির মন।
পরশি বলল,
“একটা গল্প শুনবেন?”
“কি গল্প?”
“বলি শুনেন।”
“হুম।”
“আমি একজনকে ভালোবাসি৷”
“জানি।”
“না, জানেন না।”
তূর্ণ তাকালো পরশির দিকে। পরশি বলল,
“আমি যাকে ভালোবাসি সে একদম আলাদা। এই মানুষটাকে কবে ভালোবেসেছি আমি নিজেও জানি না। আমি অন্যকারো বিরহে ছিলাম। ভেবেছিলাম তাকেই ভালোবেসেছি। সে আমাকে ভেঙেচুরে দিয়ে গেলেও তার জন্য আজীবন অশ্রু বর্ষণ করে যাব। জীবনে নতুন কাউকে ভালোবাসতে পারব না। নতুন কারো কথা ভাবতে পারব না। অথচ যখন সঠিক মানুষটা আসলো জীবনে, তখন উপলব্ধি করতে পারছি৷ মুহুর্তের মধ্যেই পুরোনো স্মৃতি ভুলে গিয়েছি। না, আজকাল আর জ্বালায় না আমাকে পুরোনো স্মৃতিরা। আমাকে কি জ্বালায় জানেন? যাকে ভালোবেসেছি তার থেকে দূরত্ব জ্বালায় আমাকে। তার কষ্টগুলো জ্বালায়। নতুন করে কেউ আমাকে ভালেবাসতে শেখাবে, নতুন অনুভূতি তৈরি হবে এগুলো আমি ভাবতেও পারিনি। তার ভাবনা ছাড়া দিন কাটাতে পারছি না। আবার মনে আকাশসম সংকোচ। যদি সে আমার অতীতের জন্য আমার থেকে দূরে থাকে। অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাকে অনুভূতিগুলো বলে দিবো। হঠাৎ করে জানতে পেরেছি সেও আমাকে ভালোবাসে। তবে তা গোপন করে রেখেছে। হয় তো মুখোমুখি বলার সাহস নেই। অথবা তার বলার স্টাইলই ছিল ওটা। এখন সে অপেক্ষা করছে আমি কখন আমার অনুভূতিগুলো তার কাছে প্রকাশ করব৷ তাই ভাবলাম সকল অনুভূতি বলে দিবো।”

পরশির কথাগুলো শুনে তূর্ণ থমকে গেল। তবে পরশিও কাউকে ভালোবেসেছে? অন্য কাউকে? তূর্ণর কি এখন এগুলোও সহ্য করতে হবে? পরশি তার সামনে অন্যকাউকে ভালোবাসবে, অন্যকারো সাথে সুখী হবে এগুলো তূর্ণর এখন সহ্য করতে হবে? তূর্ণ কি পারবে? তূর্ণর ভীষণ ভয় লাগছে। এই শীতের মধ্যেও ঘামের স্রোত বয়ে যাচ্ছে তূর্ণর গায়ে।

পরশি বলল,
“জানেন লোকটা কে? লোকটা ভালোবাসায় বিশ্বাস করতো না৷ লোকটা ছিল সাধারণ। লোকটা ভালোবাসার মানে জানতো না। কিন্তু আমায় পেয়ে লোকটা ভালোবাসতে শিখেছে৷ এই প্রথম সে ভালোবাসাকে অনুভব করেছে। লোকটা দুঃখী ছিল। আমিও দুঃখী ছিলাম। প্রতি মুহুর্তে লোকটা আমার মুখে হাসি ফুটিয়েছে। তার সুখগুলো ভাগ করে নিয়েছে আমার সাথে। হয় তো সে সুখী ব্যক্তি না। হয় তো আমিও সুখী না। তবে তার সাথে সুখী হতে চাই। আমার তাকে চাই।”
তূর্ণ কিছু বলে না। পরশি বলল,
“কিছু বলছেন না যে?”
“কি বলব?”
“কেন বইয়ের পাতায় তো কথাগুলো গুছিয়েই লিখেছিলেন। এখন পারবেন না সকল অনুভূতি গুছিয়ে বলতে?”
“মানে?”
তূর্ণ বুঝতে পারছে না কিছু। ওর সেই বইয়ের কথা মনে নেই।
পরশি এবার অভিমান করে বলল,
“আপনি কিছু বুঝতে পারছেন না?”
“না। কি বলছেন পরশি? কার কথা বলছেন? আর কিসের বই?”
পরশি এবার ছাদের দরজার পাশ থেকে বইটা এনে তূর্ণর হাতে দিল। দেখেই তূর্ণর মনে পড়ে গেল৷ ও সেদিন ভুলে ভুলে ওগুলো পরশির অফিসেই রেখে এসেছিল। তাহলে তার পরে কি পরশি লেখাগুলো পড়েছিল? পরশি সব জানে? আর পরশি এতোক্ষণ যার কথা বলল, যাকে ভালোবাসে বলল সে কি তবে তূর্ণ নিজেই?
তূর্ণ বিস্ময়ের সাথে বলল,
“পরশি এই বইটা!”
পরশি এবার অভিমান করে বলল,
“এবার প্রপোজটাও কি আমাকেই করতে হবে? যদি বলেন তাহলে এখনই হাঁটু গেড়ে বসে প্রোপোজ করছি ডাক্তার সাহেব।”
তূর্ণ পরশিকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর বলল,
“আই লাভ ইউ পরশি। আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি পরশি। তোমায় ছাড়া আমি একটা মুহূর্তও কাটাতে পারি না৷ পরশি তোমাকে পেয়ে বুঝতে পেরেছি ভালোবাসা কি! ভালোবাসা সুন্দর। অনেক সুন্দর।”
পরশিও তূর্ণকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আমিও তোমাকে ভালেবাসি তূর্ণ। অনেক ভালোবাসি।”

দুজন পাশাপাশি দাড়িয়ে আছে। তূর্ণ পরশির হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বলল,
“আমি অনেক আগেই তোমাকে কথাগুলো বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যেদিন আবিরের কথা শুনলাম। বুঝলাম তুমি আবিরকেই ভালোবাসতে। তাকে ভুলতে পারো নি। হয় তো পারবে না। সেখানে আমি কখনোই তোমার ভালোবাসা পাবো না। তোমার টেবিলে একদিন একটা নোটে লেখা দেখেছিলাম। ওটা মনে পড়ে আমার। হয় তো তুমি এই জীবনে আবিরকেই চাও আরেকবার৷ আমাকে চাও না। এই ভেবে আমি এতোদিন আমার অনুভূতিগুলো চেপে রেখেছি। তোমায় জানতে দেই নি। ভেবে রেখেছিলাম তুমি আমাকে ভালো না বাসলেও আমি তোমাকে ভালোবেসে যাবো। তোমার পাশে থাকবো।”
পরশি বলল,
“আমিও আমার অতীতে ডুবে ছিলাম। কোনোভাবে সব কিছু ভুলাতে পারছিলাম না। এতো বছরেও পারিনি। আমি আবিরকে ঠিক যতটা ভালোবাসি ঠিক তার থেকেও দ্বিগুণ ঘৃণা করি। বিয়ের দিন সকালবেলা আমার কাজিন আমায় ওদের কিছু ঘনিষ্ঠ ছবি আর ভিডিও দিয়েছিল। যেগুলো দেখার পর আমি নিজে আবিরের এক্সিডেন্ট করাই। এটা কেউ জানতো না একমাত্র পরশ ভাইয়া ছাড়া।”
একটু থেমে পরশি আবার বলতে শুরু করে,
“পরশ ভাইয়ার সাথে আমার যত রকমের ঝামেলাই হোক না কেন ভাইয়া কখনোই এই কথা কাউকে বলেনি৷ কারণ ভাইয়াও তখন চায় নি ওরকম একটা বিশ্বাসঘাতকের হাতে আমাকে তুলে দিতে। আমি মেন্টালি সিক হয়ে গিয়েছিলাম। একদিকে ভালোবাসা ভুলতে পারছিলাম না। অন্যদিকে ঘৃণাও হচ্ছিল। আবিরের ভালোবাসা আর ঠকানো আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। আমি কোনো মতেই কিছু ভুলতে পারছিলাম না। আবিরের স্মৃতিগুলো আঁকড়ে ধরে ছিলাম। মনে অনেক বড় একটা বোঝা ছিল। কাউকে বলতে পারিনি। শুধু তোমায় বলেছি তূর্ণ৷ তোমায় প্রথম যেদিন আবিরের কথা বললাম তার কিছুদিন পর রিয়েলাইজ করলাম আবির কিচ্ছু না৷ আবির শুধু আমার জীবনের ভয়াবহ অতীতমাত্র। এই অতীত আমার ছুড়ে ফেলে দিতে হবে। তারপর আমি আবিরের সব স্মৃতি নিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছি। পুড়িয়ে ফেলেছি আবিরের ছবি, পুড়িয়েছি সেই লাল টুকটুকে বেনারসী। যেগুলো ধরে কান্না করতাম।
তারপর আস্তে আস্তে রিয়েলাইজ করতে শুরু করলাম আমি আবিরকে ভুলতে পেরেছি তোমার কারণে। তুমি প্রতি মুহুর্তে আমার পাশে থাকো। বাবা যখন অসুস্থ ছিল, তুমি আমাকে কিভাবে সামলেছিলে! আমায় আগলে রেখেছিলে! আমি প্রতি মুহুর্তে ভালো থাকি তোমার সাথে থাকলে। তারপর তোমার সাথে সময় কাটাতে কাটাতে তোমায় ভালোবেসে ফেললাম৷ কিন্তু আমি কনফিউশানে ছিলাম আমার তোমাকে এগুলো বলা উচিত কি না৷ পরে যখন তোমার গিফটগুলো পেলাম, তখন শিওর হলাম তুমিও আমায় ভালোবাসো। আমারও তোমাকে সব বলা উচিত।”
তূর্ণ এতক্ষণ চুপচাপ পরশির কথা শুনছিল। তারপর পরশিকে নিজের বুঁকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“পরশি তুমি কাকে ঘৃণা করো, কাকে মনে রেখেছো, এসবে আমার কিছু যায় আসে না। তোমার অতীত নিয়ে আমার কিছু যায় আসে না৷ তুমি অপরাধীকে তার শাস্তি দিয়েছো। আমার কাছে ইম্পর্ট্যান্ট তুমি আমায় ভালোবাসো। আমি চাই তুমি সুখী থাকো। সারাজীবন আমার পাশে থাকো আমার হয়ে। দুজনে একসাথে সুখ ভাগ করে নিবো। দুজনে একসাথে ভালো থাকবো।”

দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে রইলো। ভালেবাসার সাক্ষী রইল রাতের আকাশ৷

চলবে…..

ভালোবাসা কারে কয়
শবনম মারিয়া
পর্ব ৪২

প্রণয় চন্দ্রাকে নিয়ে গেল। তারপর চন্দ্রা তার ইচ্ছামতো কাজ শুরু করল। সুস্মিতাকে বেঁধে রাখা হয়েছে। চন্দ্রা সুস্মিতার কাছে গেল। সুস্মিতা জিজ্ঞেস করল,
“আপনি?”
“হ্যাঁ।”
“আমাকে এখানে কেন এনেছেন? কি চান?”
“আপনার প্রাণ।”
“আমার প্রাণ মানে?”
চন্দ্রা হাসে। তারপর বলে,
“অনেক সরল সোজা মানুষগুলো এসব বুঝে না। কিন্তু এই সরল মানুষগুলোই মানুষকে ঠকায়। কি অদ্ভুত তাই না?”
“কি সব বলছেন আপনি?”
“আপনি আপনার প্রাক্তন স্বামীকে ঠকিয়েছেন তাই না?”
সুস্মিতা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চন্দ্রার দিকে। সে বুঝতে পারছে না চন্দ্রা এগুলো কি করছে। কিন্তু খানিকটা ঘাবড়েও গিয়েছে সুস্মিতা। চন্দ্রা অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“রিফান ভাইয়াকে ঠকাননি আপনি? রিফান ভাইয়ার সাথে কি কি করেছন সব জানা আছে।”
সুস্মিতা হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“এগুলো কি রিফান করছে? প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।”
“না। এগুলো তিনি করছেন না। তিনি ভালো লোক। তাই আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। দেখবেন, উনি ইভাপুর সাথে সুখে থাকবেন।”
“সত্যি করে বলেন কি হচ্ছে। এগুলো রিফান কিংবা তার হবু স্ত্রী ইভার কাজ? কিন্তু আমাকে আঁটকে রেখে ওদের কি লাভ? আমি তো ওদের কিছু করছি না। আমি রিফানের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। রিফান তো আর রেগে নেই আামর উপর। আর আমি ওদের জন্য খুশি। তারপরেও কেন এমন করছে? আর আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না আমার রিফান আমার সাথে এগুলো করতে পারে! না, আপনি রিফানের নাম করে এগুলো করছেন। সত্যি করে বলেন কি চাই আপনার। দেখেন আমি কিন্তু আপনার নামে কেইস করব।”
“উঁহু। রিফান ভাইয়া বা ইভাপু কিছু করেনি৷ তারা করবেও না। আর কি বললেন? আপনার রিফান? কিভাবে পারেন এরকম? যেই মানুষটা ভালোবাসতো তাকে ঠকিয়ে এখন আবার তাকে নিজের বলে দাবি করছেন? ছিহ্! শুনে রাখুন ভালো করে রিফান ভাইয়া শুধু ইভাপুর। ঠকানোর সময় মনে হয় নি আপনার রিফান অন্য কারো হয়ে যেতে পারে? আর আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন পুলিশের?”
চন্দ্রা হো হো করে হাসতে থাকে তার সেই খু`নের পিপাসার চেহারাখানা নিয়ে। তারপর চন্দ্রা বলে,
“এখান থেকে বেঁচে ফিরলে তো সব করবেন। এখানে একবার যে আসে সে বেঁচে ফিরে না। এখানে কারা আসে জানেন? ঠকবাজ মানুষগুলো আসে এখানে। কোনো ঠকবাজের অধিকার নেই বেঁ`চে থাকার। ওদের প্রাপ্য মৃ`ত্যু। ভয়াবহ মৃ`ত্যু।”
সুস্মিতা ভয়ার্ত চোখে দেখছে চন্দ্রাকে। তার এই জীবনে এমন ভয়াবহ নারী সে দেখেনি। চন্দ্রা কি আসলেই ওকে মে`রে ফেলবে? নাকি শুধু ভয় দেখাচ্ছে? সুস্মিতার কানে বেজে উঠছে চন্দ্রার হাসি। এই ঘরটা ভীষণ দুর্গন্ধযুক্ত। এখানে হয় তো মানুষই মা`রা হয়। কেমন যেন জায়গাটা। কোথায় এই জায়গা? এখান থেকে বের হওয়ার পথ কোথায়? সুস্মিতা কিভাবে বের হবে? সুস্মিতার সাথে ওর পরিবারের কারো সম্পর্ক নেই। সুস্মিতাকে শুধু রিফান চিনে। কিন্তু সুস্মিতা এখন রিফানের কিছু হয় না। আচ্ছা, রিফান কি ওকে খুঁজবে? ওর জন্য পাগল হয়ে যাবে? সুস্মিতা যদি ম`রে যায় তবে কি কাঁদবে? না, রিফানের কিছু যায় আসবে না। রিফান এখন অন্যকারো। অন্য কাউকে ভালোবাসে। সুস্মিতা তো ওকে ঠকিয়েছে। সুস্মিতার প্রতি একটা ঘৃণা রিফানের রয়ে গিয়েছে। এই ঘৃণার জন্য হয় তো রিফান বেশি কষ্ট পাবে না। হয় তো জানতেও পারবে না সুস্মিতা আর নেই। আজ এই মুহুর্তে কেন রিফানের কথা মনে আসছে শুধু? লোকটাকে ঠকিয়ে অনেক বড় ভুল করেছে। এই অপরাধবোধের জন্য হয়তো শুধু রিফানের ভাবনা আসছে। এমনটাই তো হয়। আমরা মানুষেরা সময় থাকতে নিজেদের ভুল বুঝতে পারি না। অনুতপ্ত হই না। কিন্তু যখন আর কিছু করার থাকে না, বিশেষ করে যখন জীবনাবসান ঘনিয়ে আসে তখন আমরা সবচেয়ে বেশি অনুতপ্ত হই। বারবার মন চায় পাপের ক্ষমা চাইতে পারলে ভালো হতো। তখন ক্ষমাটা আমাদের খুব প্রয়োজন হয়ে উঠে। কিন্তু আমরা কিছু করতে পারি না। সুস্মিতা আরেকবার ক্ষমা চাইতে চায় রিফানের কাছে। সুস্মিতা হঠাৎ করে কেঁদে ওঠে। তারপর চন্দ্রাকে বলে,
“একবার একটু রিফানের সাথে কথা বলতে চাই।”
চন্দ্রা বলে,
“পারবে না।”
“আমি আমার অপরাধের জন্য ক্ষমা চাবো।”
“কোনো দরকার নেই। এখানে তোমার পাপের প্রায়শ্চিত্তই হবে। আলাদা করে ক্ষমার দরকার নেই।”
সুস্মিতা কান্না করে। চন্দ্রা বলে,
“এই কান্না কি মৃ`ত্যুর ভয়ে নাকি অপরাধবোধের জন্য?”
“দুটোই। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দেন। আমি কাউকে কিছু বলব না। আমি ইভা আর রিফানেরও কোনো রকমের ক্ষতি করব না।”
চন্দ্রা হাসলো। তারপর হাতের ধা`রালো ছু`রিটা নিয়ে সুস্মিতার দিকে এগিয়ে গেল। তারপর সুস্মিতার হাতটা নিয়ে সেখানে ছুরি দিয়ে কেটে কেটে লিখলো “ধোঁকাবাজ।”
সুস্মিতার অনেক কষ্ট হচ্ছে। সে আর্তনাদ করছে। কিন্তু আর বলছে না তাকে ছেড়ে দিতে। কারণ সে জানে বলে কোনো লাভ হবে না। সে যেখানে এসেছে সেখান থেকে ফিরে যাওয়া যাবে না। মৃ`ত্যু নিশ্চিত।
চন্দ্রা একের পর একে নির্ম`মভাবে সুস্মিতাকে আ`ঘাত করতে থাকলো। আ`ঘাত করতে করতে একসময় মে`রে ফেলল। তারপর সুস্মিতার বডি কে`টে তার হৃৎপিণ্ডটা বের করে আনলো। তারপর হাতে নিয়ে বলল,
“এই হৃৎপিণ্ডে এক শুধু তোমার স্বামীর স্থান ছিল। কিন্তু তুমি এখানে তাকে স্থান দাওনি। বরং তার হৃৎপিণ্ডে আঘাত করেছো!”
এই বলে চন্দ্রা হৃৎপিণ্ডটা টু`করো টু`করো করল। সুস্মিতার দে`হের টু`করো টু`করো করল অনেকক্ষণ বসে বসে।
প্রণয় আর রফিকুল দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। প্রণয় কখনোই ভিতরে থাকে না যখন চন্দ্রা কোনো নারীর খু`ন করে। কারণ প্রণয় চায় না তার চোখ দিয়ে কোনো নারীকে ন*গ্ন*ভাবে দেখতে। শুধু এক নারীর এমন নির্মমভাবে খু`ন হওয়া দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতির সামাল দেওয়ার জন্য সেই নারীকে চন্দ্রা নির্মমভাবে মা`রতে পারেনি। তবুও মানসিক শান্তি পেয়েছে। একটা মিথ্যে সম্পর্কে জড়িয়ে থাকতে হয় নি। তাকে এই মানসিক শান্তি দিয়েছে তার প্রিয় চন্দ্রমল্লিকা।

.
সারাদিনের অনুষ্ঠানে ক্লান্ত রিফান। সারাদিনে ফোন ধরার সুযোগ পায় নি। ফোনটা ধরেই সুস্মিতার একটা ম্যাসেজ পেল। সুস্মিতার ম্যাসেজ দেখেই দ্রুত ঢুকলো ইনবক্সে। কারন অনুষ্ঠামের মাঝে হঠাৎ করে সুস্মিতা গায়েব হয়ে গেল। ওকে কিছু বললও না। এমনটা তো করার কথা না। ইনবক্সে ঢুকে থমকে গেল রিফান ম্যাসেজগুলো দেখে। সুস্মিতা লিখেছে,
‘রিফান, আমায় ক্ষমা করে দিও। আমি যা করেছি আমি তার জন্য দুঃখিত। আমি আমার অপরাধের জন্য অনুতপ্ত। আমি আমার দোষে আমার জীবন নষ্ট করেছি। তোমার মতো একজন মানুষকে হারিয়েছি। আমি আমার অপরাধের কারণে থাকতে পারছিলাম না। আমার অপরাধবোধ আমাকে ভেতরে ভেতরে খেয়ে যাচ্ছে। আমি চাই তুমি সুখে থাকো। তুমি ভালো থাকো। তোমার বিয়ে নিজের চোখের সামনে দেখতে পারছিলাম না৷ তাই চলে এলাম। আমাদের আর কোনোদিনও দেখা হবে না রিফান। আমাকে খুঁজো না। আমি অনেক দূরে যাচ্ছি। ইভাকে নিয়ে ভালো থেকো। ও ভালো মেয়ে। তোমাকে অনেক ভালো রাখবে। আমাকে পারলে ক্ষমা করে দিও। আমি তোমার থেকে দূরে গিয়ে প্রতি মুহুর্তে বুঝতে পেরেছি আমি কি ভুল করেছি। আমার ভুলগুলো ভুলে গিয়ে তুমি ভালো থেকো। আমাকেও ভুলে যেও। হ্যাপি ম্যারেড লাইফ।’

ম্যাসেজটা পেয়ে রিফান একটু অবাক হলো। সত্যিই সুস্মিতার এসব খারাপ লেগেছে? ও ওর ভুলগুলো বুঝতে পেরেছে? যদি সে তার ভুলগুলো আগে বুঝতে পারতো তাহলে হয় তো রিফান তাকে আরেকটা সুযোগ দিতো। কিন্তু এখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। রিফান কোনোভাবেই সুস্মিতাকে আর সুযোগ দিতে পারবে না। শুধু মনে মনে বলল,
“তুমি যেখানেই যাও না কেন সুস্মিতা ভালো থেকো। জীবনে আর এমন ভুল করো না যে এরকম কষ্ট আবার পাওয়া লাগে।”

.
তূর্ণ আর পরশি একসাথে সময় কাটাচ্ছিল ছাদে। এরপর পরশি বাসায় চলে গেল। তূর্ণও বাসায় গেল। তখন দেখল চন্দ্রাকে ঢুকতে। চন্দ্রাকে দেখেই তূর্ণ রেগে গেল। তূর্ণ চোয়াল শক্ত করে চন্দ্রাকে জিজ্ঞেস করল,
“কোথা থেকে আসা হচ্ছে।”
চন্দ্রা স্বাভাবিকভাবে বলল,
“শান্তির স্থান থেকে।”
“তোর শান্তির স্থান তো আমাদের অশান্তি ডেকে আনে।”
“কিন্তু আমার মনে শান্তি আনে ভাইয়া। অনেক শান্তি পাই আমি। অপরাধীদের শাস্তি দিতে শান্তি লাগে।”
তূর্ণ মনে আকাশসম দুঃখ নিয়ে বলল,
“জীবনের সবকিছু ঠিক করতে পারলেও তোকে হয় তো ঠিক করতে পারব না রে চন্দ্রা।”
চন্দ্রা কিছু বলল না৷ তূর্ণ তার রুমে চলে গেল। চন্দ্রাও গেল।

তূর্ণর অনেক কষ্ট হচ্ছে। ও ভেবেছিল হয় তো পরশিকে পেয়ে ওর জীবনের সব কষ্টের অবসান ঘটেছে। কিন্তু ও ভুলেই গিয়েছিল ওর বোনের কথা। নিজের বোনের এই অবস্থা হলে কষ্টের অবসান কিভাবে হবে? তূর্ণর আপন কোনো ভাই বোন নেই। চন্দ্রাই ওর আপন বোন। চন্দ্রাই ওর সব। চন্দ্রার জন্য ও নিজের জানও দিয়ে দিতে পারবে। চন্দ্রা যতদিন দুঃখী থাকবে, অস্বাভাবিক জীবনযাপন করবে তূর্ণ ততদিন কিভাবে ভালো থাকবে? চন্দ্রা সুখী না হলে তূর্ণ কিভাবে শান্তি পাবে? চন্দ্রাকে নিয়ে তূর্ণর চিন্তা কমে না। মাঝে মাঝে তূর্ণর খুব ইচ্ছা করে চন্দ্রা যেই শর্ত দিয়েছে তূর্ণ সেই শর্তটা পূরণ করুক। যদি চন্দ্রা থেমে যায়। কিন্তু কিভাবে করবে?
দাদা দাদিও চন্দ্রার বিয়ে দিতে চায়। চন্দ্রাকে নতুন জীবন দিতে চায়। কিন্তু তারা তো জানে না চন্দ্রার কি পরিস্থিতি। এই অবস্থায় চন্দ্রা কিভাবে অন্যের জীবনে যাবে? কিভাবে শুরু রকবে নিজের জীবন? চন্দ্রা হয় তো কখনো রাজিও হবে না। রাজি তো তূর্ণও ছিল না কাউকে ভালোবাসতে। কিন্তু ভালো না বেসে পারেনি। চন্দ্রাও কি এমন কাউকে পেয়ে ভালোবাসতে পারবে? কাউকে ভালেবাসলে কি নিজের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারবে ভালোবাসার মানুষটার জন্য? না, চন্দ্রা হয় তো কোনোদিন কাউকে ভালোবাসতেই পারবে না। এসব ও ঘৃণা করে। ও শুধু ভালোবাসে খু`ন করতে। অপরাধীদের খু`ন করতে ভালোবাসে। আচ্ছা, পরশিও তো তূর্ণর সাথে থাকলে জেনে যাবে চন্দ্রার কথা। তখন কি মেনে নিবে এগুলো? কি হবে? চন্দ্রাকে নিয়ে কি করবে জানে না তূর্ণ। এরকম পাগলামি চন্দ্রা চালিয়ে গেলে একদিন না একদিন ধরা পড়বেই এটা তূর্ণ ভালো করেই জানে। কিন্তু কিভাবে থামাবে এগুলো? চন্দ্রার কিছু হলে তো তূর্ণ মেনে নিতে পারবে না। এসব ভাবতে ভাবতে তূর্ণর অবস্থা পাগলের মতো হয়ে যায়। এমন সময় প্রণয় ওকে ফোন করে। ফোন করে সবটা বলে।
চন্দ্রা সুস্মিতাকে খু`ন করেছে শুনে আঁতকে উঠে তূর্ণ। সুস্মিতা পরশি আর রিফানের ফ্রেন্ড। সুস্মিতার এরকম হারিয়ে যাওয়া পরশিকেও উদ্বিগ্ন করবে। পরশি খুঁজবে। রিফান খুঁজবে। ওরা সত্যি জেনে যাবে না তো? কি করবে তূর্ণ?যদি এমন হয় ওকে ওর বোন আর ভালোবাসার মধ্যে কোনো একজনকে বেছে নিতে হয় তাহলে কি করবে?
তূর্ণর মাথা কাজ করছে না। তূর্ণ শুধু রিকুয়েষ্ট করে প্রণয়কে বলল,
“ভাই, প্লিজ কিছু কর। আমার বোনটার কিছু হলে আমি মেনে নিতে পারব না।”
প্রণয় বলে,
“তুই চিন্তা করিস না। কিচ্ছু হবে না চন্দ্রার।”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here