ভালোবাসা কারে কয়,৪৩,৪৪
শবনম মারিয়া
পর্ব ৪৩
পরশি আর তূর্ণ সারাদিন একে অপরের সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করে। পরশি যত দ্রুত সম্ভব অফিস থেকে ফিরে। আর তূর্ণও এখন আর হসপিটাল থেকে রাত করে ফিরে না। ব্রেক টাইমেও চলে যায় পরশির অফিসে। দুজনে বের হয়ে এক সাথে লাঞ্চ করে। একটু ঘুরাফিরা করে। তূর্ণ রোজ পরশির জন্য একটা করে ফুল নিয়ে যায়। পরশি ফুল পছন্দ করে। পরশির সমস্ত পছন্দ অপছন্দের খেয়াল রাখে তূর্ণ। পরশি ঘুরতে পছন্দ করে বলে সুযোগ পেলেই তূর্ণ পরশিকে নিয়ে ঘুরতে যায়। পরশি রিকশায় ঘুরতে ভালোবাসে বলে তূর্ণ সবসময় রিকশায় করে ঘুরে পরশির সাথে। দুজনে যখন একসাথে লাঞ্চ করে তখন তূর্ণ সবসময় পরশির পছন্দের খাবারগুলো ওর্ডার করে। পরশি এইজন্য নিজের পছন্দের খাবারগুলো ওর্ডার না দিয়ে তূর্ণর জন্য তার পছন্দের খাবার ওর্ডার করে। তারপর আবার যে যে যার যার কাজে ফিরে যায়। আবার পরশির অফিস আগে শেষ হয় বলে পরশি চলে যায় তূর্ণর হসপিটালে। সেখানে গিয়ে তূর্ণর জন্য অপেক্ষা করে। তূর্ণও রোগী দেখা শেষে পরশির সাথে একটু সময় কাটায়। দুজনে মিলে একটু ঘুরে বেড়ায়। একটু হাঁটাহাঁটি করে একসাথে। গল্প করে। পরশি যখন হাসে তূর্ণ ল্যাম্পপোস্টের আলোতে পরশির সেই সুন্দর হাসি উপভোগ করে। উপভোগ করে পরশির দুষ্টুমি।
যেদিন থেকে তূর্ণ আর পরশি একে অপরকে ভালোবাসার প্রকাশ করেছে ঐদিনের পর পরশি আর কাঁদেনি। শুধু হেসেছে। তূর্ণ যেন পরশির জীবনে হাসি হয়ে এসেছে। তূর্ণর অবশ্য মাঝে মাঝে মেজাজটা খারাপ হয়ে যায় ওর বাবার জন্য। রিটায়ার করেছেন তূর্ণর বাবা। এখন তিনি বাসায়ই থাকেন। বাবা ছেলের মধ্যে একটু কথা কাটাকাটি হয়। এই নিয়ে তূর্ণ রেগে থাকে। তূর্ণর রাগ দূর করে পরশি। পরশিকে কাছে পেলে তূর্ণর সমস্ত বিরক্তি দূর হয়ে যায়। তূর্ণর জীবনের ভালো থাকার মাধ্যম এখন পরশি।
তূর্ণর দাদা দাদি আর চন্দ্রা পরশিকে অনেক বেশিই পছন্দ করে। চন্দ্রা তো প্রায়ই পরশিকে ভাবি বলে ডাকে মজা করে। পরশি ভীষণ লজ্জা পেয়ে চন্দ্রাকে শাসন করে। দুজনের মধ্যে ভালোই সম্পর্ক হয়েছে। তোহরাব সাহেব পরশিকে বেশি একটা পছন্দ করতেন না। কারণ তূর্ণ পরশির সাথে বেশি এটাচড। এটা তার ভালো লাগতো না। তিনি তো ইভাকে ভীষণ পছন্দ করতেন। ইভার বিয়ের পর ছেলের জন্য মেয়ে খুঁজতে লাগলেন আবার। ছেলে বিয়ে করবে না জানেন৷ তারপরেও তিনি চেষ্টা করেন। এই নিয়ে রোকেয়া আর মিরাজের সাথে কথা বললে তারা জানান পরশি আর তূর্ণ একে অপরকে পছন্দ করে। এটা জানার পর তোহরাব সাহেবের খারাপ লাগলো না। বরং ভালোই লাগলো। তার ছেলের অন্তত কাউকে পছন্দ হয়েছে। আর পরশি মেয়ে খারাপ না। কিন্তু সমস্যা একটাই মেয়ে পুলিশ অফিসার। আর তোহরাব সাহেবের ধারণা পুলিশরা সংসারে মনযোগী না। এরা চাকরির প্রতি বেশি আগ্রহী। পরিবারের থেকেও চাকরিকে বেশি প্রাধান্য দেয়। এইসব ভেবেই তোহরাব সাহেবের পরশিকে নিজের পুত্রবধূ বানানোর ইচ্ছে করে না। ছেলের বৈবাহিক জীবনেও নিজের বৈবাহিক জীবনের মতো ঝামেলা হোক তা তিনি চান না। তাই তূর্ণর জন্য তিনি সাংসারিক কাউকে চান। যে তূর্ণর রাগ সহ্য করেও, তূর্ণকে সামলে, পরিবারকে সামলে সংসার করবে। সব দায়িত্ব পালন করবে। এইসবের জন্যই পরশির প্রতি তিনি উদাসীন। কিন্তু আজকের কাহিনিটায় তোহরাব সাহেব অনেক খুশি হয়েছেন৷ তার সত্যিই মনে হচ্ছে পরশি অনেক দায়িত্বশীল। আর তার ছেলের জন্য ও পরিবারের জন্য সঠিক কেউ। আজ তোহারাব সাহেবের জন্মদিন ছিল। তার জন্মদিন কারো খেয়ালে থাকে না। শুধু চন্দ্রা মনে রেখে তার মামাকে শুভেচ্ছা জানায়। কিছু একটা দেয়৷ এতেই তোহারাব সাহেব অনেক খুশি হন। তবে আজ ভিন্ন কিছু হয়েছে। আর সবটা পরশির জন্যই। কয়েকদিন আগে চন্দ্রা শপিংয়ে গিয়েছিল পরশি সাথে। তখন চন্দ্রা তার মামার জন্য গিফট কিনেছে। তখন পরশি জানতে পেরেছে তোহরাব সাহেবের জন্মদিনের কথা। তখন থেকেই পরশি ভেবে রেখেছিল এবার তোহরাব সাহেবের জন্য কিছু করবে। অন্তত তার ছেলে আর তার মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক করার সামান্য চেষ্টা করবে। পরশি এতোদিনে বুঝেছে তূর্ণ ওর বাবার উপর রাগ হলেও তাকে কম ভালোবাসে না৷ একটু অসুস্থ হলেই অস্থির হয়ে পড়ে। তার খাওয়া-দাওয়া আর স্বাস্থ্যের খোঁজ রাখে সবসময়। পরশির ভালো লাগে ব্যাপারটা। পরশির ইচ্ছা আছে তোহরাব সাহেবের সাথে তূর্ণর সম্পর্কটা স্বাভাবিক করার। চন্দ্রার কাছ থেকে শোনার পর পরশি গল্পে গল্পে তূর্ণকে বলেছে,
“আংকেলের বার্থডে আসছে?”
“কোন আংকেল?”
“তোহরাব আংকেল।”
“ওহ্। তো আমি কি করব?”
“তূর্ণ! তুমি কি করবে মানে কি? তোমার বাবার জন্মদিন। তুমি কিছু করবে না?”
“না। আমার সময় নেই।”
“তাই বুঝি? তাহলে আমার পিছে এতো সময় কিভাবে নষ্ট করেন ডাক্তার সাহেব?”
“তোমার সাথে সময় কাটানো মানে সময় নষ্ট করা না। এটা আমার জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।”
“ওহ্ আচ্ছা।”
“হুম।”
“আংকেলের জন্য আমরা কিছু করলে তো তোমার সাথে আমিও থাকবো। একসাথে মিলে সব করব। তো আমার সাথে সময় কাটানোই তো হলো তাই না?”
“পরশি বোঝার চেষ্টা কর।”
“কেন তূর্ণ? তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করলে কি হয়?”
তূর্ণ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
“ছোটবেলায় কোনোদিনও আমার জন্মদিনে এদের আমি পাশে পাই নি। আমিই আবার তাদের জন্মদিন পালন করব?”
কথাটা শুনে পরশির ভীষণ খারাপ লাগে। পরশি তূর্ণর কাঁধে হাত রেখে বলল,
“দেখো তূর্ণ সব মানুষই জীবনে একবার ভুল করে। না, একবার না। অনেকবার। তারপরেও একটা সময় তারা বুঝতে পারে তাদের ভুল। তারা অনুতপ্ত হয়। তখন তারা অনেক একাকিত্ববোধ করে। আংকেলও ভুল করেছেন। কিন্তু এখন ঠিকই উনি উনার ভুল বুঝেন। উনি তোমাকে অনেক ভালোবাসেন। উনিও তোমাকে খুশি দেখতে চান। উনার তো অনেক বয়স হয়েছে। কি হবে যদি উনাকে ক্ষমা করে দাও? উনাকে একটু খুশি করলে কি কোনো ক্ষতি আছে? তারা হয় তো তাদের দায়িত্ব পালন করেননি। কিন্তু তাই বলে তুমি তোমার দায়িত্ব থেকে পিছনে সরে যেতে পারো না। তারা ভুল করেছে তাই বলে তুমিও ভুল করবে? এক সময় তোমার জীবনেও এমন সময় আসবে যখন তুমি ব্যাপারগুলো রিয়েলাইজ করবে। কিন্তু কিছু করতে পারবে না৷ তখন কষ্ট পাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। সময় থাকতে ভুলগুলো সুধরে নাও তূর্ণ। অন্যকেও সুযোগ দাও তাদের ভুলগুলো সুধরানোর।”
তূর্ণ কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। তারপর পরশির দিক তাকালো। পরশির গালে নিজের হাত দুটো দিয়ে স্পর্শ করে বলল,
“তুমি যদি এতে খুশি হও তবে ঠিকাছে। তবে উনি যদি ব্যাপারগুলো স্বাভাবিকভাবে না নেয় তাহলে কিন্তু ভালো হবে না।”
“আগে একবার চেষ্টা করো।”
“আচ্ছা।”
.
পরশি তূর্ণকে নিয়ে শপিং মলে গেল। দুজনে তোহরাব সাহেবের জন্য গিফট কিনতে গিয়েছে। তূর্ণকে পরশি বলেছে নিজে যেন কিছু পছন্দ করে কিনে। তূর্ণ বলল সে পারবে না। পরশির যা ভালো লাগবে তাই নিয়ে নিবে। পরশি অনেক খুঁজাখুঁজি করছে। কি দিবে ভেবে পাচ্ছে না। অনেকক্ষণ ঘুরার পর তূর্ণ একটা ঘড়ির শো-রুমের কাছে এসে বলল,
“তোমার আংকেলের কিন্তু ঘড়ি অনেক পছন্দ। আর সে সবসময় ব্র্যান্ডের ঘড়ি পরতেই পছন্দ করে। চাইলে ঘড়ি দিতে পারো।”
পরশি বলল,
“তবে চলো ঘড়ি দেখি।”
পরশি ইচ্ছে করেই একটার পর একটা ঘড়ি বের করিয়ে দেখছে। এমন ভাব করছে যেন ও বুঝতে পারছে না কোনটা নিবে। তারপর তূর্ণ একটা ঘড়ি পছন্দ করে বলল,
“এই টাইপের ঘড়ি পছন্দ করেন তিনি।”
“কিন্তু এটা তো অনেক এক্সপেন্সিভ হয়ে যাবে। তোমার বাজেটের বাইরে।”
“নিয়ে নাও। অসুবিধা নেই।”
এই বলে তূর্ণ পকেট থেকে ফোনটা বের করে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। পরশি মনে মনে ভীষণ খুশি। তূর্ণ নিজে থেকে পছন্দ করে তার বাবার জন্য ঘড়ি নিয়েছে। এর থেকে বেশি আর কি হতে পারে?
.
তারপর পরশি চন্দ্রাকে নিয়ে নিজে থেকে কেক বানালো। কেকের উপর লিখেছে, ‘হ্যাপি বার্থডে বাবা।’
চন্দ্রা দেখে দুষ্টুমি করে বলল,
“বাহ্! বিয়ের আগেই বাবা!”
পরশি কপাল কুঁচকে বলল,
“মানে?”
“মানে আংকেল থেকে ডাইরেক্ট বাবায় চলে গেলেন ভাবি? বিয়েটা তো এখনও হয় নি। অবশ্য হয়ে যাবে।”
পরশি চন্দ্রার কান ধরে বলল,
“এতো দুষ্ট হয়েছো না চন্দ্রা। এটা তূর্ণর হয়ে লিখেছি।”
“আচ্ছা বাবা, সরি।”
এই বলে হাসলো চন্দ্রা। পরশি খেয়াল করেছে চন্দ্রার মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসছে দিন দিন। মেয়েটা আর গম্ভীর হয়ে থাকে না। একা থাকে না। মানুষের সাথে মিশছে। কথা বলছে। হাসছে। দেখেই ভালো লাগে পরশির।
সন্ধ্যাবেলা চন্দ্রা তোহরাব সাহেবকে ডেকে আনলো লিভিং রুমে। তূর্ণকেও বুঝিয়ে নিয়ে আসলো পরশি। তোহরাব সাহবে রুমে প্রবেশ করতে সকলেই তাকে একসাথে শুভেচ্ছা জানালো। তিনি অনেক অবাক হয়ে গেলেন। সব চেয়ে অবাক হলেন তূর্ণকে দেখে। তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানালেন। পরশি তূর্ণকে ধাক্কা মেরে বলল,
“যাও।”
তূর্ণ তোহরাব সাহেবের কাছে গিয়ে বলল,
“হ্যাপি বার্থডে বাবা।”
তোহরাব সাহেব অবাক হয়ে গেলেন। তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না। তূর্ণ তারপর তার হাতে গিফটটা দিল। তারপর বলল,
“ছোট্ট একটা গিফট। আপনার পছন্দের জিনিস। আশা করছি ভালো লাগবে।”
তোহরাব সাহেব গিফটটা হাতে নিলেন। তিনি খুলে দেখলেন তার পছন্দের ব্র্যান্ডের ঘড়ি। তিনি তূর্ণকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন। তারপর বলল,
“থ্যাংকিউ বাবা। তুমি আমার পছন্দ অপছন্দও জানো জেনে খুব ভালো লাগছে। আমি তোমাকে ভালোবাসি বাবা। কিন্তু কখনো তোমার জন্য কিছু করতে পারিনি। আমি এইজন্য অনুতপ্ত। তুমি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে পারিনি৷ আই এ্যাম সরি। বাট আই এ্যাম প্রাউড অফ ইউ মাই সান।”
তূর্ণর চোখ ভিজে আসলো। তার বাবা কখনো তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেনি। তার সাথে এভাবে কথা বলেনি। তূ্র্ণর ইচ্ছে করছে বাবাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু পারছে না। এতোদিনে কিছুটা দূরত্ব দুজনের মাঝে রয়ে গিয়েছে। তূর্ণ একবারেই সকল দূরত্ব মিটিয়ে দিতে পারছে না। তবে তূর্ণ বলল,
“সরি, বাবা। আমার তোমার সাথে এরকম ব্যবহার করা উচিত হয় নি৷ পারলে ক্ষমা করে দিও।”
তোহরাব সাহেব বললেন সরি বলো না। সরি আমার বলা উচিত।
তারপর বাবা ছেলে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। রোকেয়া আর মিরাজ সাহেব অনেক বেশি খুশি। তাদের এতো বছরের ইচ্ছা আজ পূরণ হয়েছে।
সবকিছু শেষে যখন পরশি চলে যাচ্ছিল। তখন তোহরাব সাহেব পরশিকে ডাকলেন। পরশি এগিয়ে বলল,
“জি, আংকেল। কিছু বলবেন?”
“হ্যাঁ, মা। তোমাকে ধন্যবাদ বলব।”
“কি বলছেন!”
“হ্যাঁ, মা। তুমি আমার আর আমার ছেলের মাঝের দূরত্ব কমিয়ে এনেছো। আমার ছেলের মধ্যে পরিবর্তন এনেছো। আমার ছেলে আমায় এতো বছরে ক্ষমা করতে পারেনি। আজ কত বছর পরে বাবা বলে ডেকেছে। জড়িয়ে ধরেছে! আমি তোমার কাছে চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবো।”
“আংকেল, এসব বলবেন না। তূর্ণ খুশি হলে আমি খুশি। ও আপনাদের নিয়ে অনেক আপসেট থাকে। তাই ভাবলাম ওকে কি করে খুশি করা যায়।”
“ধন্যবাদ মা। সবসময় সুখে থাকো। আমার ছেলেকে সুখী করে রেখো এভাবে।”
পরশি বলল,
“দোয়া করবেন আংকেল। আজ তাহলে আসি।”
এই বলে পরশি চলে এলো।
.
কিছুক্ষণ রাত পার হওয়ার পর তূর্ণ পরশিকে ফোন করল। প্রতিদিনই রাতে ফোনে কথা বলে ওরা। মাঝে মাঝে ছাদে গিয়ে একসাথে বসে গল্প করে। আজ পরশি একটু ক্লান্ত ছিল। ওর চোখটা লেগে এসেছিল। তূর্ণর ফোন পেয়ে উঠে পড়ল। তূর্ণ ফোন রিসিভ হওয়ার পর বলল,
“হ্যালো, অফিসার। কি অবস্থা।”
ওরশি ঘুমু ঘুমু গলায় বলল,
“এইতো ডাক্তার সাহেব। আপনার কি খবর?”
তূর্ণ ওর কন্ঠ শুনে বলল,
“এই তুমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলে নাকি?”
“হ্যাঁ।”
“ভেঙে দিলাম তো ঘুমটা। কি যে করি না।”
“আরে না। অসুবিধা নেই।”
“তো আমি কি বলেছি নাকি অসুবিধা। আমার তো উল্টা সুবিধা। ভাগ্যিস এখন ফোনটা দিয়েছিলাম। তোমার এই সুন্দর ঘুমু ঘুমু কন্ঠ শুনতে পারছি।”
“ওহ্, তাই বুঝি?”
“হ্যাঁ।”
“কিন্তু আমার যে এখন মাথা ব্যথা করছে। ঘুমাতে পারছি না।”
“এখন তোমার ডাক্তার প্রয়োজন। মাথা ব্যথার ওষুধ দিতে হবে তো। আর চাইলে ঘুম পাড়িয়েও দিতে পারি ঘুমের ওষুধ দিয়ে।”
“হুম। দাও।”
“সত্যি?”
“না, মিথ্যা।”
তূর্ণ চুপিচুপি বাসার বাইরে চলে গেল। তারপর পরশির দরজার সামনে গিয়ে কলিং বেল দিল আর ফোনে বলল,
“দরজা খুলো। ওষুধ নিয়ে চলে এসেছি।”
পরশি অবাক হয়ে বলল,
“তুমি কি পাগল নাকি? সত্যিই ওষুধ নিয়ে এসেছো নাকি?”
“হ্যাঁ, সত্যি সত্যি।”
“লাগবে না। যাও।”
“তোমার না হয় লাগবে না। আমার তো লাগবে। আমার ঘুমের ওষুধ দরকার। দরজা খুলো। তোমায় দেখে তারপর ঘুমাতে যাব।”
“তূর্ণ!”
“প্লিজ, পরশি!”
“আচ্ছা। দাঁড়াও।”
চলবে…….
ভালেবাসা কারে কয়
শবনম মারিয়া
পর্ব ৪৪
পরশি উঠে দরজা খুলবে কিন্তু তার আগে ভাবলো একটু আয়নায় দেখুক। নিজেকে নিশ্চয়ই পাগলের মতো দেখা যাচ্ছে। ঘুমিয়ে ছিল নিশ্চয়ই খুব অদ্ভুত দেখা যাচ্ছে ওকে। পরশি আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে দেখলো। সত্যিই ভালো দেখা যাচ্ছে না। কেমন যেন লাগছে। ক্লান্ত চেহারাটা। চুলগুলো এলোমেলো। এখন কি করবে? তূর্ণ ফোনের ওপাশ থেকে দ্রুত দরজা খুলতে বলছে। কি করবে পরশি? হঠাৎ মনে পড়ল সেদিনের কথা। পরশি অফিস থেকে তূর্ণর হসপিটালে গিয়েছিল। দুজনে এরপর একসাথে ঘুরছিল। পরশি বসে ছিল। তূর্ণ অপলক দৃষ্টিতে পরশির দিক তাকিয়ে ছিল। পরশি বলল,
“কি দেখা হচ্ছে এভাবে?”
তূর্ণ বলল,
“দেখছি কেমন সুন্দর লাগছে তোমায়।”
“কি বলছো? আমাকে সুন্দর লাগছে? সারাদিনের ক্লান্ত চেহারা। এলোমেলো চুল। না জানি কি বিশ্রী দেখা যাচ্ছে!”
তূর্ণ তখন বলল,
“একদম এগুলো বলবে না। তুমি কখনো নিজেকে আমার চোখ দিয়ে দেখলে বুঝতে পারতে ঠিক কতো সুন্দর দেখা যাচ্ছে তোমাকে।”
“তাই বুঝি?”
“অবশ্যই। আমার তো তোমাকে এভাবেই ভালো লাগে। এই ক্লান্ত চেহারায় কি সুন্দর হাসি! এই এলোমেলো চুলগুলো নিয়ে মন চায় খেলা করি। এই সাধারণ পরশিকে আমি অনেক ভালোবাসি। অনেক বেশি।”
পরশির কথাগুলো ভেবে ওভাবেই চলে গেলো দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই তূর্ণ ভিতরে চলে আসলো। পরশিকে দেখার জন্য তূর্ণ কাতর হয়ে উঠেছিল। পরশির দিক তাকিয়ে আছে তূর্ণ। তারপর নেশালো কন্ঠে বলল,
“তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল। তোমাকে না দেখে ঘুমাতে পারছিলাম না৷”
পরশি বলল,
“দেখা হয়েছে তো? এবার যাও ঘুমাও।”
তূর্ণ খেয়াল করল পরশির চোখে ঘুম। পরশিকে কেমন যেন অন্যরকম লাগছে। তূর্ণ বলল,
“না দেখা শেষ হয় নি।”
“তা কখন শেষ হবে?”
“এই জীবনে হবে না।”
“ঘুম আসছে তূর্ণ। বাসায় যাও। ঘুমাও।”
“না যাব না।”
এই বলে তূর্ণ পরশিকে জড়িয়ে ধরলো। পরশি বলল,
“এতো পাগল হয়ে গেলে কি করে?”
“তোমাকে কাছে পেয়ে।”
“আচ্ছা বুঝি? ঠিাকছে দূরে যাও। ঠিক হয়ে যাবে।”
পরশির ওষ্ঠে আঙ্গুল দিয়ে বলল,
“একদম চুপ। দূরে যেতে আসি নি।”
“কেন এসেছো?”
“তোমাকে আদর করতে।”
পরশি লজ্জা পেয়ে বলল,
“এই তুমি যাও তো।”
তূর্ণ পরশিকে আরও কাছে টেনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
“তুমি বললেই তো হচ্ছে না।”
এই বলে তূর্ণ পরশির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে নিল। পরশির কেমন যেন লাগছে। এই অনুভূতি ভালো লাগার। লজ্জার। তূর্ণ যেন নিজের ধ্যান-জ্ঞান হারিয়েছে। পরশির ঠোঁট থেকে নিজের ঠোঁটদুটো সরাতে পারছে না। পরশিও তো আপত্তি করছে না।
কিছুক্ষণ পর দুজনেই নিজেদের মধ্যে ফিরে এলো। পরশি ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে। তূর্ণ বলল,
“ভালোবাসি পরশি। তোমাকে পেয়ে পাগল হয়ে যাই।”
পরশি দুষ্টমি করে বলল,
“সঠিক বয়সে বিয়ে করলে এরকম হতো না।”
তূর্ণ বলল,
“মানে?”
“মানে তুমি যা শুরু করেছো তা অল্প বয়সের প্রেমিকেরা করে। ঠিক বয়সে বিয়ে করলে এরকম দুষ্টুমি করতে না এখন।”
“তুমি কি বলতে চাচ্ছো আমার বিয়ের বয়স নেই? ভালোবাসতে বয়স লাগে নাকি?”
“তা ঠিক। ভালোবাসতে বয়স লাগে না। সব বয়সেই ভালোবাসার মানুষটাকে ভালোবাসা যায়।”
“চলো না বিয়ে করি।”
“এখন?”
এই বলে পরশি হেসে দিল। তূর্ণও হেসে বলল,
“পারলে এখনি করতাম। কিন্তু এখন সম্ভব না। এখন বিয়ে করে ফেললে সকালে উঠে দাদা দাদি অনেক আফসোস করবে। তাদের উপস্থিতিতে বিয়ে করা প্রয়োজন। আর বাবারও ইচ্ছে অনেক আমার বিয়ে দেওয়ার। এদের তো এখন ঘুম থেকে ডেকে তুলে তারপর বিয়ে করা সম্ভব না। তারপর তোমার পরিবারও তো আছে।”
পরশি হেসে বলে,
“তোমাকে ভেবেছিলাম তুমি অনেক ম্যাচিউর। কিন্তু তুমি একদম বাচ্চাদের মতোই করো।”
“প্রেমে পড়লে ম্যাচিউরিটি থাকে না।”
পরশি বলল,
“কিন্তু তূর্ণ তুমি তো বলেছিলে বিয়ে করবে না। কাউকে ভালোবাসবে না। তবে?”
তূর্ণ হেসে বলল,
“কারণ তখন ভালোবাসার স্বাদ পাইনি আমি। তখন তোমাকে পাই নি।”
পরশি তূর্ণর দিক তাকিয়ে থাকলো। তারপর তূর্ণ বলল,
“আচ্ছা, আমি এখন যাই। তুমি ঘুমাও।”
পরশি বলল,
“ঘুম চলে গিয়েছে। চলো না গল্প করি।”
“আচ্ছা।”
“তুমি বসো। আমি চা নিয়ে আসি।”
“আচ্ছা।”
পরশি চা বানাতে রান্না ঘরে গেল। তূর্ণও পরশির পিছে পিছে গেল। পরশি তার কাজ করছে। আর তূর্ণ পরশিকে দেখছে। কখনো পরশির চুলগুলো ধরে কপালের সামনে থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। আবার কখনো পিছন থেকে পরশিকে জড়িয়ে ধরছে। পরশি বিরক্ত হচ্ছে না। বরং ভালো লাগছে। তূর্ণর এসব পাগলামি ভালো লাগে।
দুজনে চা নিয়ে গেল বারান্দায়। বাহিরে বাতাস বইছে। দুজনে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে আর গল্প করছে। তূর্ণ পরশিকে বলল,
“আচ্ছা তুমি মাঝেমাঝে হালকা পাতলা লিখো তাই না? আমি খেয়াল করেছি।”
“আরে না। এমনি ছোটবেলায় একটু একটু লিখতাম। এখন আর হয় না।”
“জানো তো প্রণয় এক সময় অনেক ভালো কবিতা লিখতো। কলেজে থাকতে। সেই প্রণয় এখন হারিয়ে গিয়েছে।”
“কেন?”
“সময়ের সাথে মানুষের মাঝে পরিবর্তন আসে।”
“হুম।”
তূর্ণ প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলল,
“আমাকে নিয়ে লিখবে না?”
পরশি বলল,
“তোমাকে নিয়ে লিখতে চাই না। কারণ সেই লেখা কখনো শেষ হবে না জানি।”
“পরশি তুমি আমাকে এতো বিশ্বাস করো কিভাবে?”
“জানি না। কিন্তু কোনোভাবে অবিশ্বাস করতে পারি না।”
তূর্ণ পরশিকে কাছে টেনে নিল। পরশি তূর্ণর বুকে মাথা রেখে বসে রইল। অনেকক্ষণ দুজনে একসাথে আকাশের চাঁদ দেখার পর তূর্ণ বলল,
“রাত হয়েছে। আমার এখন যাওয়া উচিত।”
“আচ্ছা। শুনো কাল তো অফিস ছুটি। চলো একটু ঘুরাঘুরি করি।”
“আচ্ছা।”
তূর্ণ পরশিকে বলল,
“আমি ঘুম ভেঙেছিলাম না?”
পরশি বলল,
“হ্যাঁ, এখন ঘুম পাড়িয়ে দাও।”
পরশিকে তূর্ণ পাঁজকোলা করে রুমে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। তারপর বসে বসে পরশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। পরশি হঠাৎ করে উঠে বসে বলল,
“এসেছিলে তো ঘুমের ওষুধ নিতে। এখন উল্টা আমাকে ঘুম পাড়াতে হচ্ছে।”
তূর্ণ বলল,
“তোমার সাথে এতোটা সময় কাটাতে পেরেছি এটাই আমার ঘুমের ওষুধ।”
পরশি বলল,
“আচ্ছা। এখন তবে যাও।”
তূর্ণ পরশির কপালে চুমু খেয়ে চলে গেল।
.
পরেরদিন তূর্ণ আর পরশি বের হলো একসাথে সময় কাটাতে। পরশি আজকে শাড়ী পরেছে। চুলগুলো খোঁপা করেছে। গাঢ় করে কাজল দিয়েছে। সাদা রঙের শাড়ির সাথে মিলিয়ে সাদা রঙের কাঁচের চুরি পরেছে। পরশি যখন বাসা থেকে বের হলো তূর্ণ পরশির দিকে স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তারপর তূর্ণ হেসে বলল,
“এই যে অফিসার, মেরে ফেলার ইচ্ছে আছে নাকি?”
পরশি অবাক হয়ে বলল,
“কেন?”
“মরে যাব আমি৷ তোমার সৌন্দর্যে।”
পরশি বলল,
“তাহলে তো আমারও বলতে হচ্ছে তুমি মেরে ফেলতে চাচ্ছো আমাকে।”
“আমি আবার কিভাবে মারতে পারি?”
“এই যে তোমার হাসি। আবার কি সুন্দর একটা টোল পড়ে। পুরুষ মানুষ হাসলে যদি টোল পড়ে তবে কতটা সুন্দর লাগে তা তোমার জানা নেই।”
তূর্ণ বলল,
“এই কথা আগে বলবে না? তাহলে এতোদিন যে কত নারীর সামনে হেসেছি এরা আমার উপর নজর দিয়েছে?”
“হ্যাঁ। এরপর থেকে আর অন্য নারীর সামনে এতো সুন্দর করে হাসবে না। আমি শিওর ইভা তোমার হাসি দেখতে দেখতেই পাগল হয়েছিল।”
তূর্ণ এবার দুষ্টুমি করে বলল,
“জেলাস?”
“আমি কেন জেলাস হবো? আমার ভালোবাসার মানুষকে তো আমিই জয় করেছি।”
তূর্ণ বলল,
“আজকে দেখো মানুষজন আমার দিক তাকিয়ে জেলাস ফিল করবে আর ভাববে এতো সুন্দর নারী এই লোকের কপালে জুটলো কিভাবে?”
“ওহ্ আচ্ছা। এবার কথা না বাড়িয়ে চলেন ডাক্তার সাহেব।”
দুজনে বের হলো। ঢাকা থেকে কিছুটা দূরত্বে একটা রিসোর্টে গেল। সেখানে দুজনে ঘুরে ফিরে সারাটাদিন কাটালো। তূর্ণ পরশিকে বেলীফুলের মালা কিনে দিতে ভুলনি। খোঁপায় গুঁজে দিয়েছে একটা আরেকটা পরশি হাতে পেঁচিয়ে নিয়েছে। গোধূলি লগ্নে দুজন পাশাপাশি বসে আছে। তূর্ণ পরশির হাতটা নিজের হাত দিয়ে ধরে আছে। পরশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছে আর আপন মনে গুনগুন করে গান গাইছে। তূর্ণ পরিষ্কার ভাবে শুনতে পাচ্ছে না। সে পরশিকে বলল,
“কি গান গাচ্ছো?”
পরশি হেসে বলল,
“কিছু না। এমনি। আমার যখন ভালো লাগে তখন একটু একটু এমন করি।”
“হ্যাঁ, আগেও খেয়াল করেছি।”
“তুমি কি বিরক্ত হও?”
“একদমই না। কখনো শুনেছো প্রিয় মানুষের কোনো কিছু নিয়ে কেউ বিরক্ত হয়েছে?”
পরশি তূর্ণর হাতটা জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে মাথা রেখে বলল,
“গান তো গাইতে পারি না সেভাবে। কিন্তু তোমার জন্য বিশেষ কিছু বলতে পারি। হতে পারে তা এক লাইন।”
“অবশ্যই।”
পরশি তূর্ণর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
❝তুমি আমার স্বপ্ন ছিলে,
জানি না কিভাবেে বাস্তবতা হলে।
জানো কি? তোমায় পেলে,
ভুলে যাই নিঃসঙ্গতা কাকে বলে৷❞
কথাটা শেষে পরশি তূর্ণর গালে পরশির ঠোঁটের স্পর্শ অনুভব করল। তূর্ণ স্তব্ধ হয়ে গেল। ও এটার জন্য প্রস্তুত ছিল না৷ প্রস্তুত ছিল না পরশির বলা কথাগুলো শোনার জন্যও। তূর্ণ নীরবতা বিরাজ করেই পরশির দিক তাকিয়ে রইল। তারপর পরশির কপালে চুমু খেয়ে ওকে বুঁকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। তারপর নরম স্বরে বলল,
“আমাকে এতোটা ভালেবাসো?”
পরশি তূর্ণর দিক তাকিয়ে কপালে ভাজ ফেলে বলল,
“কোনো সন্দেহ আছে বুঝি?”
তূর্ণ হেসে দিল।তারপর বলল,
“না, কোনো সন্দেহ নেই।”
পরশি আবার তাকিয়ে থাকলো তূর্ণর সেই টোল পড়া হাসির দিকে। তূর্ণ হাসলে ওর চাপদাড়িতে ঢাকা আবছা টোলটা দেখা যায় যেটা পরশিকে পাগল করে ফেলে। পরশি তূর্ণর গাল ছুঁয়ে দিল। তূর্ণ পরশির হাতটা নিজের গালে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে রাখলো।
পরশি বলল,
“চোখ বন্ধ করে রেখেছো কেন?”
“তোমাকে অনুভব করছি। তোমার স্পর্শ ভালো লাগে। সম্পূর্ণটা শুষে নিতে চাই।”
.
চন্দ্রা আর প্রণয়িনী ঘুরতে বের হয়েছে। তারা দুজন ঘুরছে। চন্দ্রা আজ শাড়ী পরেছে। গাঢ় নীল রঙের শাড়ী। আজকে মূলত অফিসে একটা প্রোগ্রাম ছিল। তাই প্রণয় আর চন্দ্রা সেখানে ব্যস্ত ছিল। প্রণয় চন্দ্রাকে দেখে দেখেই সময় পার করেছে। আজকের চন্দ্রা একটু ভিন্নভাবে সেজেছে। তাকে অবশ্য পরশি সাজিয়ে দিয়েছে। চন্দ্রার ঠোঁটে গাঢ় লাল রঙের লিপস্টিক। চন্দ্রা যখন হাসে, প্রণয় তখন তার দিকেই মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে ছিল।
অফিসের অনুষ্ঠান শেষে চন্দ্রা প্রণয়ের সাথে ওদের বাসায় গেল। কারণ আগের দিন প্রণয়িনী তাকে বলেছিল আজ যেন তার সাথে চন্দ্রা দেখা করে। তাই চন্দ্রা প্রণয়ের বাসায়ই যাচ্ছে।
প্রণয় চন্দ্রাকে বলল গাড়িয়ে গিয়ে বসতে। প্রণয় একটু কথা বলে আসছে। চন্দ্রা গিয়ে গাড়ির কাছে দাঁড়ালো। হঠাৎ তার চোখ গেল প্রণয়ের দিকে। প্রণয় দাঁড়িয়ে একজনের সাথে কথা বলছে হেসে হেসে। প্রণয়কে সুদর্শন দেখা যাচ্ছে সাদা পাঞ্জাবিতে। বাতাসে মাথার চুলগুলো সামান্য উড়ছে। চন্দ্রার প্রণয়ের দিক তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে।
প্রণয় কথা শেষে যখন চন্দ্রার দিক আসছিল তখন সে খেয়াল করল চন্দ্রার ঠোঁটের কোণে কেমন যেন একটা মিষ্টি হাসি। কেন তা প্রণয়ের জানা নেই। কিন্তু চন্দ্রাকে অসম্ভব সুন্দরী লাগছে।
প্রণয় কাছে এগিয়ে গেল। তারপর চন্দ্রার কোমরের পাশ দিয়ে হাত এগিয়ে দিল। চন্দ্রা ভয় পাচ্ছিল। পরক্ষণেই খেয়াল করল প্রণয় গাড়ির দরজা খুলছে। তারপর প্রণয় বলল,
“সরে দাড়াও না। গাড়ির দরজা খুলতে পারছি না।”
চন্দ্রা তাড়াতাড়ি সরে গেল।
এরপর বাসায় গিয়ে প্রণয়িনীকে নিয়ে দুজনে বের হলো। প্রণয়িনী প্রথমে চন্দ্রাকে দেখে চিৎকার করে উঠেছিল। তারপর বলল,
“আন্তি তুমি আজকে অনেক সুন্দর হয়ে গিয়েচো।”
প্রণয় প্রণয়িনীর কথা ধরে বলল,
“তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।”
চন্দ্রার ভালো লাগলো। কিন্তু পরক্ষণেই প্রণয় প্রণয়িনীকে বলল,
“কথাটা এরকম হবে বাবা। ঠিক করে বল।”
“আচ্চা বাবা। কিন্তু আন্তিকে আজ অনেক সুন্দর লাগচে কিন্তু।”
“হ্যাঁ, সত্যিই। তোমার আন্টিকে অনেক সুন্দর লাগছে।”
চন্দ্রা এবার লজ্জা পেয়ে বলল,
“ধন্যবাদ।”
প্রণয় মনে মনে বলল,
“থ্যাংকিউ বাবার কন্যা। তুই আজ এভাবে না বললে মনের কথাটা বলতে পারতাম না চন্দ্রাকে।”
তিনজন মিলে ঘুরাফিরা করল। তারপর প্রণয় প্রণয়িনীকে বেলুন কিনে দিল। আর চন্দ্রাকে গোলাপ ফুল কিনে দিল। তারপর বলল,
“চন্দ্রমল্লিকার জন্য আজ চন্দ্রমল্লিকা পেলাম না। এখন চন্দ্রমল্লিকা ফুটে না। তাই গোলাপ।”
চন্দ্রা ধন্যবাদ জানিয়ে ফুলটা নিল।
প্রণয় একটু অবাক হলো। প্রণয় অনেকক্ষণ ধরেই ফুল দিতে চাচ্ছিল। কিন্তু ভয় পাচ্ছিল। ভেবেছিল চন্দ্রা বিরক্ত হবে। তাই এতোক্ষণ ফুল দিতে সংকোচ করেছে। কিন্তু চন্দ্রা একটুও বিরক্ত হলো না। বরং ফুলটা হাসিমুখেই গ্রহণ করল।
চলবে…..