ভালোবাসা কারে কয়,৪৫,৪৬

0
142

ভালোবাসা কারে কয়,৪৫,৪৬
শবনম মারিয়া
পর্ব ৪৫

আজ প্রণয় অফিসে তাড়াতাড়ি এসেছে। চন্দ্রা প্রতিদিনই আগে আগে আসে। চন্দ্রা প্রণয়কে দেখে জিজ্ঞেস করল,
“স্যার, আজ এতো আগে আসলেন?”
“ঢাকার বাহিরে যেতে হবে আজ একটু। অফিসের কাজ শেষ করে তারপর যাব।”
“ওহ্।”
“তো তোমার কাজ কেমন চলছে? অফিসে কোনো রকম সমস্যা হচ্ছে না তো?”
“না। আমার কাজ ভালো চলছে, স্যার।”
“গুড।”
প্রণয় কফির কাপে চুমুক দিয়ে নিজের কেবিনের দিক যাচ্ছিল তখনি চন্দ্রা ডাক দিল,
“প্রণয় ভাইয়া?”
প্রণয় ফিরে তাকিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“হুম?”
“একটা কথা।”
“কোন বিষয়ে?”
চন্দ্রা এদিক-ওদিক তাকালো। প্রণয় ব্যাপারটা বুঝতে পারল। নিশ্চয়ই কিছু একটা হয়েছে। প্রণয় বলল,
“টেক্সট দিও। আই উইল চেক।”
“ধন্যবাদ।”
কাহিনিটার পর চার মাস কেটে গিয়েছে। কিন্ত চন্দ্রার প্রণয়কে জিজ্ঞেস করার কথা মনে নেই। প্রণয় ওকে কাজের কথা জিজ্ঞেস করল পরেই মনে পড়লো। এতোদিনে যদিও অফিসে নতুন ম্যানেজার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আগের জনের কথা চন্দ্রার হঠাৎ কেন যেন আজ মনে পড়লো। চন্দ্রা প্রণয়কে ম্যাসেজ দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“সেই ম্যানেজারের কোনো খোঁজ খবর করেছিল কেউ?”
প্রণয় চন্দ্রার ম্যাসেজের রিপ্লাই করে বলল,
“হ্যাঁ, ঐ লোকের পরিবার আর পুলিশ খোঁজ করেছিল। আমিও একটা রেজিগনেশন লেটার দেখিয়ে বলেছি যাওয়ার আগে চাকরি ছেড়ে গিয়েছে। আর ঝামেলা হয় নি। পুলিশ খুঁজেছে। হয় তো কোনো খোঁজ পায় নি।”
“ওহ্।”
চন্দ্রা রিপ্লাই দিল।
প্রণয় জিজ্ঞেস করল,
“হঠাৎ এতোদিন পরে এই কথা কেন চন্দ্রা? সত্যি করে বলো কিছু হয়েছে?”
“না। এমনি অফিসের সব কাজ ঠিক মতো করছি নাকি জিজ্ঞেস করেছিলেন। তখন মনে পড়লো। আসলে আমার প্রোফেশন হিসেবে আমি খু`ন করাটাকে বেশি প্রাধান্য দেই তো তাই। হা হা।”
“তুমি আর সুধরালে না। এখনও সুযোগ আছে চন্দ্রা। তুমি চাইলেই একটা সুন্দর জীবন কাটাতে পারবে। নিজেকে সুধরে নিতে পারবে। একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে পারবে।”
“আফজাল চৌধুরীকে এনে দিন। কথা দিচ্ছি ঐ শেষ খু`নটা করে সুধরে যাব।”
প্রণয় ম্যাসেজ সিন করে রেখে দিল। জবাব দেওয়ার ভাষা নেই। এই কথাটা শুনতে শুনতে প্রণয় বিরক্ত। মাঝে মাঝে মন চায় নিজেই আফজাল চৌধুরীকে খুঁজে খু`ন করে দিক চন্দ্রার জন্য। প্রণয় জানে চন্দ্রা পারবে না আফজাল চৌধুরীকে খু`ন করতে। কিন্তু তারপরেও মনে একইরকমের পাগলামি নিয়ে বসে আছে। কিন্তু চন্দ্রাকে ভরসাও করা যায়। মেয়েটা কি করবে কে জানে। প্রণয় শুধু চায় ঐ লোকটার ছায়া চন্দ্রার জীবনে আর কখনো না পড়ুক। চন্দ্রা লোকটাকে ভুলে যাক। নিজে স্বাভাবিক জীবনযাপন করুক। সুখী হোক।

.
প্রণয় ঢাকার বাইরে গিয়েছে। তূর্ণও ব্যস্ত। চন্দ্রা রাত বারোটায় বের হলো। মাঝে মাঝেই রাতের বেলা হাঁটতে বের হয় চন্দ্রা। সকলের চোখের আড়ালে। যদিও ব্যাপারটা তূর্ণ আর প্রণয়ের অজানা নয়। চন্দ্রা আজ গেল তূর্ণর হাসপাতালে। তূর্ণর সাথে দেখা করবে বলে। সে জানে তূর্ণ তাকে দেখেই বকাঝকা শুরু করবে এতো রাতে কেন সে একা একা বেড়িয়েছে। হসপিটালের সিড়ি দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। তখন দেখলো এলটা অল্প বয়সী মেয়ে কান্না করে একটা মধ্য বয়স্ক লোককে বলছে,
“প্লিজ, এমনটা করো না। আমার বাচ্চাটাকে মে`রো না। আমি কাউকে কিছু বলব না। আমি আমার বাচ্চা নিয়ে দূরে চলে যাব। তোমার স্ত্রী কিছু জানবে না।”
লোকটা আড়ালে মেয়েটার পিঠে হাত দিয়ে ওকে ব্যথা দিয়ে বলল,
“একদম চুপ।”
চন্দ্রা ঠিক ওদের পিছনেই ছিল। চন্দ্রার মন চাইলো এখানেই ছু`রিটা বের করে লোকটাকে মে`রে ফেলতে। কিন্তু এটা সম্ভব নয়। চন্দ্রা তূর্ণর কাছে না গিয়ে লোকটার পিছু নিল। তারপর যখন লোকটা মেয়েটাকে রুমে ঢুকিয়ে নিজে বাইরে দাঁড়িয়ে রইল। লোকটাকে চন্দ্রা একটা কাগজ দিয়ে বলল এই মেডিসিনটা দরকার পেশেন্টের তাড়াতাড়ি নিয়ে আসুন। লোকটা ওষুধ আনতে যাচ্ছিল। তখন যেখানে লোক নেই সেখানে সুযোগ করে ব্যাগ থেকে ইনজেকশন বের করে লোকটাকে অ`জ্ঞান করে নিল চন্দ্রা। চন্দ্রা ইচ্ছা করে লোকটাকে ওষুধের কথা বলে নিচ তলায় নামিয়েছে। নিচতলায় মর্গ। এই মর্গেও চন্দ্রা বেশ কয়েকটা খু`ন করেছে। এখানে তূর্ণর বিশ্বস্ত লোক আছে। তিনি এগুলোর খেয়াল রাখেন।
চন্দ্রা মর্গে ঢুকলো ঐ লোকের সাহায্যে। তারপর নির্মমভাবে শুরু করল খু`ন। মর্গে তখন কেউ নেই। লোকটা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে দরজায় লক দিয়ে। তারপর তূর্ণকে ফোন দিয়ে জানালো। তূর্ণ মাত্র সার্জারী শেষ করে বের হয়ে ফোনটা হাতে নিয়েছে। এই লোকের ফোন দেখেও তূর্ণ চিন্তিত হয়ে গেল। সবটা শুনেই ভয়ে তূর্ণর বুক কেঁপে উঠলো। কি করবে এই চন্দ্রাকে নিয়ে? আজকে এতোদিন পর হসপিটালে আবার এই কাজ করেছে। তাও তূর্নকে না জানিয়ে? প্রণয়ও তো মনে হয় নেই। একা একা এসব করে কিভাবে চন্দ্রা? ওর কি ভয় হয় না? তূর্ণ এখন কি করবে?
তূর্ণ দৌড়ে গেল মর্গের দিকে। এদিকে চন্দ্রা খু`ন করে বের হয়ে তূর্ণকে দেখে ভয় পেয়ে গেল। তূর্ণ রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চন্দ্রার দিকে। চন্দ্রা জানে তাকে এখন অনেক কথা শুনতে হবে ভাইয়ের কাছে। কিন্তু খু`নটা না করলে চন্দ্রা মানুষিক শান্তি পেতো না। তূর্ণ লোকটাকে সব কিছু সামলে নিতে বলল। তূর্ণ চন্দ্রার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। ঠিক এমন সময় প্রণয় ওদের সামনে বাঁধলো। প্রণয়কে দেখে চন্দ্রা আর তূর্ণ অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। প্রণয়ও অবাক হয়ে গেল। প্রণয়কে কেমন যেন লাগছে। তূর্ণ প্রণয়কে দেখে বলল,
“তুই সব জানিস? চন্দ্রার জন্য এসেছিস? আমাকে কিছু জানাস নি কেন?”
প্রণয় কিছু বুঝতে পারছে না তূর্ণ কি বলছে। তবে চন্দ্রাকে দেখে প্রণয়ের মনে প্রশ্ন জাগছে। চন্দ্রা কি আবার কিছু করে বসেছে?
চন্দ্রা প্রণয়কে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেল।।চন্দ্রা জানে আজ সন্ধ্যায় প্রণয়ের শহরের বাইরে যাওয়ার কথা। প্রণয় তাহলে এখানে কি করে? প্রণয় কেন ওকে বলেছে ও বাহিরে যাচ্ছে? চন্দ্রা জিজ্ঞেস করল,
“প্রণয় ভাইয়া, আপনি এখানে? আপনার না কাজে শহরের বাইরে যাওয়ার কথা?”
তূর্ণরও খেয়াল হলো। আসলেই তো। প্রণয় ওকে বলেছিল। এটাও বলেছিল চন্দ্রা যেন পাগলামি না করে। আর করলেও যেন তূর্ণ দেখে। প্রণয় থাকবে না। তাহলে প্রণয় এখন কি করছে?
প্রণয় বলল,
“যেতে পারিনি আমি। বাসা থেকে বের হচ্ছিলাম। যাওয়ার আগে প্রণয়িনীর কাছে গিয়েছিলাম। তখন দেখি আমার মেয়েটা অনেক অসুস্থ হয়ে গিয়েছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। অবস্থা খারাপ। এমনিও গত দুইদিনে অনেক ঠান্ডা লেগেছিল। অবস্থা এতো খারাপ হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি। হসপিটালে এডমিট করতে হয়েছে। ওকে নিয়েই বাসার সবাই এখন হসপিটালে। মেয়েটা অনেক অসুস্থ।”
কথাটা শুনেই চন্দ্রা অস্থির হয়ে গেল। প্রণয়িনী এতোটা অসুস্থ শুনেই চন্দ্রা পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছে। চন্দ্রা ঘাবড়ে গিয়ে বলল,
“প্রণয়িনীর এই অবস্থা কিভাবে হলো? কখন হলো? এখন কেমন আছে? আপনি আমাকে কেন জানালেন না। আমি প্রণয়িনীর কাছে যাব।”
চন্দ্রার কান্না কান্না অবস্থা। প্রণয় আর তূর্ণ দুজনেই চন্দ্রাকে দেখে অবাক। প্রণয় বলল,
“শান্ত হও চন্দ্রা। ঠিক হয়ে যাবে প্রণয়িনী।”
“আমি কিছু শুনতে চাই না। আমি আমার প্রণয়িনীর কাছ যাব।”
“আচ্ছা। ঠিকাছে চলো।”
চন্দ্রা, তূর্ণ আর প্রণয় তিনজনেই গেল প্রণয়িনীর কাছে। প্রণয়ের বাবা মা দুজনেই অনেক চিন্তিত হয়ে আছেন। চন্দ্রা প্রণয়িনীর পাশে গিয়ে বসে রইল। প্রণয়িনীর অবস্থা দেখে চন্দ্রার খুব খারাপ লাগছে। কান্না পাচ্ছে। না জানি কি কষ্টই না হচ্ছে বাচ্চাটার
এতোটুকু বাচ্চার হাতে ক্যানোলা, মুখে অক্সিজেন মাস্ক।
রাত গভীর হলো। এহসান সাহেব আর জাহানারা বেগম এতোক্ষণ ছিলেন। রাত হলে প্রণয় তাদের জোর করল বাসায় যাওয়ার জন্য। জাহানারা বেগম যেতেই চাচ্ছিলেন না। চন্দ্রা জাহানারা বেগমকে বলল,
“আন্টি আমি আছি প্রণয়িনীর কাছে। আপনি বাসায় গিয়ে রেস্ট নিন। নাহলে অসুস্থ হয়ে যাবেন।”
জাহানারা বেগম শেষ পর্যন্ত রাজি হলেন বাসায় যাওয়ার জন্য। চন্দ্রাকেও প্রণয় অনেক জোর করল তূর্ণর সাথে বাসায় নিয়ে যেতে। কিন্তু কোনোভাবে রাজি করাতে পারল না। প্রণয় বলল,
“আমার মেয়েকে আমি দেখে রাখতে পারব। তুমি যাও।”
চন্দ্রা রেগে গিয়ে বলল,
“এই আপনি দেখে রাখবেন? মেয়ের এতোটা বাজে অবস্থা কিভাবে হলো আপনি থাকতে? বাচ্চার যত্ন তো নিতে পারেন না।”
প্রণয় চুপ হয়ে গেল। আসলেই, প্রণয় খেয়াল রাখতে পারল না মেয়েটার।
তূর্ণ আর জোর করল না চন্দ্রাকে। তূর্ণ এটুকু বুঝেছে চন্দ্রা প্রণয়িনীর জন্য পাগল। ওকে রেখে যাবে না। তাই তূর্ণও জাহানারা বেগম আর এহসান সাহেবকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার পর আবার হসপিটালে আসলো। এই সময়ে প্রণয়ের পাশে থাকা উচিত তূর্ণর।
চন্দ্রা একভাবেই প্রণয়িনীর পাশে বসে রইল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। প্রণয় পাশে দাঁড়িয়ে আছে। প্রণয়েরও অনেক কষ্ট হচ্ছে মেয়ের এই অবস্থা দেখে। মেয়েকে এতো কষ্টে দেখতে প্রণয়ের ভালো লাগছে না। কেমন মেয়ের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রণয়কে দেখে চন্দ্রার কষ্ট হচ্ছে। কি অবস্থা হয়ে গিয়েছে লোকটার। চন্দ্রা নিজে বসা থেকে দাঁড়িয়ে প্রণয়কে বলল,
“বসুন। অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন।”
প্রণয় নরম স্বরে বলল,
“না। ঠিক আছি আমি। তুমি বসো।”
চন্দ্রা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“ঠিক আছে বললেই কি হলো? মেয়ের এই অবস্থা দেখে কোনো বাবা ঠিক থাকতে পারে?”
প্রণয় গিয়ে প্রণয়িনীর কপালে হাত রাখে। তারপর বলে,
“সত্যিই আমি ঠিক নেই। আমার এতটুকু মেয়ের এই অবস্থা আমি দেখতে পারছি না। কি পরিমাণ কথা বলে মেয়েটা। অথচ এখন চুপ হয়ে আছে। বাবাকে একদম ভয় পাইয়ে দিয়েছিস, মা।”
প্রণয়ের এর চোখ শীতল। চন্দ্রা লক্ষ্য করল এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো প্রণয়ের চোখ থেকে। চন্দ্রা প্রণয়ের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“এতোটুকেই এতো ভেঙে পড়লে হবে না কি? প্রণয়িনী সুস্থ হয়ে যাবে। বাচ্চাদের এমন একটু হয়।”
“হয় তো এটা অনেক সাধারণ। কিন্তু আমি অনেক বেশি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”
চন্দ্রা হঠাৎ করে বলল,
“শুনেছি পুরুষ মানুষ নাকি কাঁদে না। কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে কথাটা ভুল।”
প্রণয় হঠাৎ করে বলে উঠলো,
“হয়তো পুরুষ মানুষ কাঁদে না। কিন্তু বাবারা কাঁদে।”

কথাটা চন্দ্রার অন্তরে আঘাত করল। প্রণয়ের এই কথাটার জন্য চন্দ্রার কাছে প্রণয় শ্রেষ্ঠ পুরুষ হয়ে গেল। কারণ প্রণয় বাবা হিসেবে শেষ্ঠ। সব বাবারা হয় তো এরকম না। চন্দ্রা প্রণয়কে বলার মতো কিছু খুঁজে পেল না। শুধু বলল,
“দেখবেন প্রণয়িনী সুস্থ হয়ে যাবে।”
প্রণয় প্রণয়িনীর দিক তাকিয়ে বলল,
“হ্যাঁ, সুস্থ তে হবেই। তার চন্দ্রা আন্টি এসেছে তার কাছে।”
দুজনেই সামান্য হাসলো। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর চন্দ্রা বলল,
“কিভাবে যেন প্রণয়িনীর প্রতি অনেক দুর্বল হয়ে গিয়েছি। আমার জীবনে আমি ভালো সময়গুলো মনে হয় প্রণয়িনীর সাথেই কাটিয়েছি। ওর অসুস্থতার কথা শুনে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। ওকে এভাবে দেখতেও কষ্ট হচ্ছে। ওর জন্য মন কেমন করছে। অপেক্ষা করছি কখন সুস্থ হবে।”
“ধন্যবাদ চন্দ্রা, আমার প্রণয়িনীকে এতো ভালোবাসার জন্য।”
“ধন্যবাদ জানাবেন না। প্রণয়িনীকে ভালো না বেসে কেউ থাকতে পারবে না।”
প্রণয় সামান্য হাসলো। তূর্ণ ডাক্তারের সাথে কথা বলতে গিয়েছিল প্রণয়িনীকে নিয়ে। তারপর তূর্ণ আসলো। তূর্ণ আসার পর প্রণয় আর তূর্ণ রুমের বাহিরে বসে কথা বলতে শুরু করল। প্রণয়ের মন খারাপ তূর্ণ সেটা জানে। তাই তূর্ণ চন্দ্রার আজকের কাহিনি বলে নি। তবে তূর্ণর কাছে প্রণয় হঠাৎ নিজেই থেকেই প্রশ্ন করল,
“চন্দ্রা এখানে কি করছিল? আবার কোনো কিছু?”
প্রণয়কে সবটা খুলে বলল তূর্ণ। প্রণয়ের মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল। তবে ও একটু অবাকও হলো, চন্দ্রা এতো বেশি ভালোবাসে প্রণয়িনীকে যে প্রণয়িনীর অসুস্থতার কথা শুনে এগুলো সব ভুলে গিয়েছে! প্রণয় মনে মনে ভাবলো,
“আমি তোমার ভালোবাসা পাবো না, কিন্তু তুমি যে আমার মেয়েকে এতোটা ভালোবাসো এটাই আমাকে অনেক শান্তি দেয় চন্দ্রমল্লিকা।”

চলবে……

ভালোবাসা কারে কয়
শবনম মারিয়া
পর্ব ৪৬

সারা রাত চন্দ্রা প্রণয়িনীর কাছে রইল। দিনের বেলায়ও প্রণয়িনীর সাথে থেকেছে। প্রতিটা মুহুর্তে চন্দ্রা প্রণয়িনীর খেয়াল রাখছে। এমনকি প্রণয়কেও মাঝে মাঝে বলেছে আপনি গিয়ে রেস্ট নিন। কিছু একটা খেয়ে নিন। আমি প্রণয়িনীর কাছে আছি তো। এই ব্যাপারগুলো খেয়াল করলেন এহসান সাহেব আর জাহানারা বেগম। তারা প্রণয়িনীর প্রতি চন্দ্রার এরকম ভালোবাসা, মায়া-মমতা দেখে মুগ্ধ।
প্রণয়িনী সুস্থ হয়ে বাসায় যাওয়ার পরেও চন্দ্রা রোজ প্রণয়ের বাসায় গিয়ে প্রণয়িনীর সাথে দেখা করে এসেছে। প্রণয়িনীর খোঁজ নিয়েছে।
প্রণয়ের ভীষণ ভাল্লাগে চন্দ্রা প্রণয়িনীকে এতোটা ভালোবাসে বলে। প্রণয় জানে না কেন চন্দ্রা প্রণয়িনীকে এতো ভালোবাসে। প্রণয়িনীকে পেলে চন্দ্রা সব ভুলে যায়৷

.
তূর্ণ আর পরশি মিলে গল্প করছে। ঠিক এমন সময় পরশির ফোন বেজে উঠলো। পরশি ফোনটা রিসিভ করতে যাচ্ছিল তখন তূর্ণ পরশির হাতটা ধরে বসল। তারপর বলল,
“আজ বলেছিলে এই মুহুর্ত শুধু তোমার আর আমার। অন্যকিছু থাকবে না। দুজনের কোনো ব্যস্ততা থাকবে না। কেউ মাঝে থাকবে না। তাহলে এখন ফোন রিসিভ করছো কেন?”
পরশি এই কয়দিন অনেক ব্যস্ত ছিল। তার আগে কিছুদিন ব্যস্ত ছিল তূর্ণ। দুজনে সেভাবে সময় কাটাতে পারেনি। এটা নিয়ে দুজনেরই মন খারাপ ছিল। তূর্ণ বেশি মন খারাপ করেছিল। তাই পরশিও তাকে কথা দিয়েছিল একটা দিন শুধু তারা দুজনে কাটাবে। মাঝে কেউ থাকবে না। কোনো ব্যস্ততা থাকবে না৷ কেউ বিরক্ত করবে না। পরশি ফোনটা না ধরে বলল,
“আচ্ছা। ঠিকাছে।”
তূর্ণ পরশির হাত এগিয়ে নিয়ে চুমু খেল। তারপর তূর্ণর দুই হাতের মধ্যে পরশির হাত ধরে রাখলো। পরশি তূর্ণর বুঁকে মাথা রাখলো। দুজন এই সুন্দর সময় কাটানোতে মগ্ন। অন্যদিকে পরশির ফোনটা বেজেই চলছে। তূর্ণ এবার বিরক্ত হলেও পরশিকে বলল,
“ফোনটা রিসিভ কর।”
“না, থাক। আমাদের সময় নষ্ট হবে।”
“না, হবে না। তুমি ফোনটা রিসিভ কর। এমনও হতে পারে কলটা জরুরি। তোমার উচিত কলটা রিসিভ করা।”
পরশি ভাবলো তূর্ণ ঠিকই বলছে। পরশি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখতে পেল অফিসার রেহানা ফোন করেছেন। পরশি তূর্ণর দিক তাকিয়ে বলল,
“ঠিক বলেছো। কলটা আসলেই জরুরি। আমার প্রিয় একজন। আমার ম্যাম। তিনি ফোন করেছেন। তার আসার কথা আমার বাসায় দুই একদিনে। হয় তো কাল আসবেন। এজন্যই হয় তো ফোন করেছেন। আমি ম্যামের সাথে কথা বলে নেই।”
পরশি উঠে বারান্দায় গিয়ে রেহানার সাথে কথা বলল। রেহানা তাকে জানালো সে কাল আসবেন। পরশি শুনে ভীষণ খুশি হলো।
পরশি গিয়ে তূর্ণকে জানালো ব্যপারটা। পরশি ভীষণ খুশি। পরশিকে খুশি দেখে তূর্ণর ভালো লাগছে। পরশি অফিসার রেহানার সম্পর্কে এটা ওটা বলা শুরু করল।
তূর্ণ মনযোগ দিয়ে পরশির সব কথা শুনছে। তূর্ণ এটুকু বুঝতে পারছে পরশি তার ম্যামকে ভীষণ ভালোবাসে। মায়ের মতো শ্রদ্ধা করে। তূর্ণ পরশিকে বলল,
“যে আমার পরশির সাথে এতোটা এ্যটাচড, তার সাথে তো দেখা করতেই হচ্ছে। আমি ভীষণ এক্সাইটেড। বিশেষ করে এই যে তুমি বললে ম্যাম তোমাকে অনেক ভালো বুঝে, অনেক বেশি জানে, এইজন্য তার সাথে আমার সাক্ষাৎ এর প্রয়োজন। আমিও ভালো করে জানতে চাই আমার পরশিকে।”
এই বলে তূর্ণ পরশির ঘাড়ের কাছের চুলগুলোর দিকে নাক দিয়ে চুলের ঘ্রাণ নিতে লাগল। পরশি লজ্জা পেয়ে তূর্ণকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“আমাকে আর কি জানবে? তুমি তো আমাকে অনেক ভালো করে জানো। আমাকে না জানলে, আমাকে না বুঝতে পারলে আমি কিভাবে তোমার প্রেমে পাগল হলাম?”
“হুম। বুঝলাম। তবে আমার মনে হয় আমি তোমাকে সম্পূর্ণটা জানি না। তোমার কি পছন্দ, তোমার কি করতে ভালো লাগে, তুমি কিসে কমফোর্ট ফিল কর এসব তো আমার ভালো করে জানা নেই। তুমি সেভাবে বলোও না। তুমি কখনো বলোনি তোমার কি রঙের শাড়ি পছন্দ, কি খাবার পছন্দ। এগুলো তুমি আমাকে নির্দিষ্টভাবে বলোনি। আমি তোমার প্রতিটা পছন্দ জানতে চাই। তোমার ভালেলাগা জানতে চাই।”
“তূর্ণ আমার সেরকম কোনো পছন্দ নেই। সত্যি বলতে আমি আমার পছন্দগুলো বদলাতে চাই। আমি তোমার সাথে নতুন স্মৃতি তৈরি করতে চাই। আর কিছু কিছু জিনিস আছে যেগুলো আমি কখনো বলিনি যে আমার ভালো লাগে। কিন্তু তুমি সেগুলো নিজ থেকেই করেছো আমার জন্য। তুমি আমার জন্য যে সব করো তাই আমার ভালো লাগে। সেগুলোই আমার খুব পছন্দের হয়। আমি তোমার সঙ্গে থাকতে পছন্দ করি। তুমি আমার জন্য যা করবে আমার তাই ভাল্লাগে। মনে আছে তুমি আমাকে একটা শাড়ি গিফট করেছিলে নীল রঙের? ঐ রঙটা আমার পছন্দ হয়ে গিয়েছে। ঐ শাড়ীটা আমার সব থেকে প্রিয়। এক সময় লাল বেনারসীটা প্রিয় ছিল। কিন্তু ওটা আমি পুড়িয়ে ফেলেছি। কারণ এখন আমার সবথেকে প্রিয় শাড়ী তোমার দেওয়া শাড়ীটা। তোমার দেওয়া ওড়নাটা আমি যত্নে রেখেছি। তুমি রোজ যেই ফুল কিংবা ফুলের মালা দাও, আমি সেগুলো শুকিয়ে একটা কাঠের বাক্সে রেখে দেই। আমি চাই তুমি, তোমার দেওয়া প্রতিটা মুহুর্ত আর তোমার দেওয়া প্রতিটা জিনিস চিরকাল আমার হয়ে থাকুক। আমার সাথে থাকুক।”
তূ্র্ণ পরশির কপালে চুমু দিয়ে বলে,
“আমি চিরকাল তোমার হয়েই থাকবো।”
কিছুক্ষণ পর তূর্ণ দুষ্টুমি করে বলল,
“সব মানলাম। কিন্তু তোমার ম্যাম এসে আমার বিপদ করে দিয়েছে। এখন আর যখন তখন মন চাইলেই তোমার কাছে আসতে পারব না।”
পরশি হেসে বলল,
“একদম ঠিকাছে। তুমি অনেক দুষ্ট হয়ে গিয়েছো। যখন তখন দুষ্টুমি শুরু কর।”
দুজনেই হাসলো।

.
অফিসার রেহানা আসার খুশিতে পরশি অনেক সুন্দর করে ঘর সাজিয়েছে। সন্ধ্যা বেলায় তূর্ণর আসার কথা। তারপরে তিনজনে মিলে একসাথে ডিনার করবে। পরশি সবকিছু সুন্দর করে সাজিয়েছে। ডাইনিং টেবিলের মাঝে একটা ফুলদানিতে রেখেছে কতগুলো দোলনচাঁপা ফুল। পরশি যখন বাইরে গিয়েছিল তখন নিয়ে এসেছে। একটা জিনিসে অফিসার রেহানা আর তূর্ণর মধ্যে মিল আছে। দুজনেরই দোলনচাঁপা ফুল পছন্দ।
একদিন তূর্ণ পরশিকে ফুল কিনে দেওয়ার জন্য ফুলের দোকানে যায়। তখন তূর্ণর চোখে পড়ে দোলনচাঁপা। দোলনচাঁপা দেখেই তূর্ণ পরশিকে বলেছিল,
“আজ দোলনচাঁপা নিবে?”
পরশি হেসে বলল,
“তোমার যেটা ভালো লাগে।”
তূর্ণ বলল,
“তাহলে তো অবশ্যই দোলনচাঁপা। আমার পছন্দের একটা ফুল।”

অন্যদিকে অফিসার রেহানা প্রায়ই তার অফিসের টেবিলে দোলনচাঁপা রাখতে পছন্দ করেন। তার দোলনচাঁপা ফুলের ঘ্রাণ ভালো লাগে। নিজে কিনে নিয়ে নিজের ঘরে আর অফিসে রাখেন।

এইজন্য পরশি টেবিলের মাঝে দোলনচাঁপা ফুল রেখেছে। দুপুরের আগে পরশি সবটা এ্যারেঞ্জ করে রেখেছে। রেহানা আসলেন দুপুর বেলায়। তিনি আসার পর পরশি তাকে জড়িয়ে ধরল। দুপুরে দুজনে মিলে অনেক গল্প করল। এক সাথে সময় কাটালো। একসাথে লাঞ্চ করল। এরপর চা খেল। দুজনের মধ্যে অনেক গল্প হচ্ছে। অফিসার রেহানা বলল,
“তো পরশি তোমার সেই স্পেশাল মানুষের কি খবর?”
পরশি লজ্জা পেয়ে বলল,
“ভালো। আমার মধ্যে যতটা পরিবর্তন দেখছেন সবই ঐ মানুষটার জন্য। মানুষটা আমার জীবন বদলে দিয়েছে। নতুন করে ভালোবাসতে শিখিয়েছে। ওকে পেয়ে আমি আমার অতীতকে ভুলতে শিখেছি। নতুন জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি।”
“আমি অনেক খুশি তোমার জন্য পরশি। তুমি এতোটা বছর একদম ভেঙেচুরে ছিলে। আমার সেই পরশিকে ভালো লাগতো না। আজ এই প্রাণোচ্ছল পরশিকে দেখে আমার ভালো লাগছে।”
“দোয়া করবেন ম্যাম। ওকে যেন কখনো না হারাই।”
“অবশ্যই। কিন্তু তার সাথে আমাকে দেখা করাবে না?”
“অবশ্যই। আজ ডিনারে একসাথে থাকতে বলেছি। তখন দেখা করবেন। কথা বলবেন। ও নিজেও অনেক এক্সাইটেড আপমার সাথে দেখা করার জন্য। আমি ওর কাছে আপনার অনেক অনেক গল্প করেছি।”
“বাহ্।”
“ম্যাম, আপনার ছেলে তো ঢাকায়ই থাকে। তার সাথে যোগাযোগ করেছেন?”
রেহানা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“সে কি আর যোগাযোগ করার সুযোগ দিয়েছে? এর আগেও তো কতো ঢাকায় পোস্টিং ছিল। সে যোগাযোগ করেনি। এমনকি নিজের বাসার অ্যাড্রেসও দেয়নি কখনো। আগের বাসার অ্যাড্রেস জানলে তো চলে যেতাম। কিন্তু বড় হওয়ার পর নিজেই আগের এপার্টমেন্টে বিক্রি করে নতুন এপার্টমেন্ট নিল। আমাকে আর জানায় নি ঠিকানা। চায় না ও আমার সাথে দেখা করতে, কথা বলতে।”
“ম্যাম, তাহরানের কথা ভেবে মন খারাপ করবেন না।”
“মায়ের মন। সবসময় ছেলের কথা মনে পড়ে। সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে যখন অসুস্থ থাকি। নিজেই নিজের গুণাহের শাস্তি পাচ্ছি। অসুস্থ বাবা মায়েরা তার সন্তানকে কাছে পায়। তাদের সেবা যত্ন পায়। অথচ আমি কখন অসুস্থ থাকি, কেমন থাকি তা আমার ছেলে জানেও না।”
পরশি রেহানাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“আমি সবসময় আপনার পাশে আছি। আপনি চিন্তা করবেন না।”
“তুমি পাশে আছো বলেই তো আমি ভালো আছি। আমি একটা মেয়ে পেয়েছি যে আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমার অনেক যত্ন করে। আমার কথা চিন্তা করে। এই জীবনে আর কি লাগে?”
কথাগুলো বলে রেহানা পরশির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

তূর্ণ আজ সন্ধ্যা হতেই হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে যায়। পরশি তাকে সময়মত যেতে বলেছে। সেইজন্য তূর্ণ দেরি করতে চায় না। তূর্ণ যাওয়ার সময় ভাবে এভাবে খালি হাতে যাওয়াটা ঠিক হচ্ছে না। পরশির ম্যামের জন্য কিছু একটা গিফট নেওয়া দরকার। তূর্ণ বুঝলো না কি দিবে। শেষমেশ একটা বুকে নিয়েই চলে গেল।
তূর্ণ বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে পরশির বাসায় গেল। তূর্ণ বেল বাজাতেই পরশি দৌড়ে আসলো দরজা খুলতে। পরশিকে রেহানা জোর করে শাড়ী পরিয়েছে। পরশি বলেছিল,
“ম্যাম শাড়ী পরার কি দরকার? ও তো আমাকে শাড়ীতে দেখেছেই।”
“হ্যাঁ, তো শাড়ীতে দেখে কি বলেছে? তোমাকে শাড়ীতে বেশি সুন্দর লাগে এটা বলেনি?”
“হ্যাঁ। বলেছে।”
“তো এখন পরে নাও। সুন্দর লাগবে। আমি দুজনকে পাশাপাশি কেমন লাগে চোখ জুড়িয়ে দেখবো।”
রেহানার জোরাজুরিতে পরশি শাড়ী পরে। তারপর কপালে একটা কালো টিপ লাগায়। চোখে কাজল। এগুলো তূর্ণর পছন্দ। তূর্ণ একটু সাদামাটা বেশি পছন্দ করে।

দরজা খোলার পর তূর্ণ এক দৃষ্টিতে পরশির দিক তাকিয়ে আছে। পরশি বলল,
“কি হয়েছে ডাক্তার সাহেব? এভাবে কি দেখছেন? ভেতরে আসুন।”
তূর্ন বলল,
“দেখছি। অফিসার একদম তার ডাক্তার সাহেবের পছন্দ অনুযায়ী সেজেছেন। একটু দেখতে দাও।”
“ভিতরে আসো।”
তূর্ণ ভেতরে যায়। তারপর কাউকে না দেখে জিজ্ঞেস করল,
“ম্যাম কোথায়?”
“ফ্রেশ হতে গিয়েছেন। চলে আসবে তুমি বসো।”
এই বলে পরশি যেতে নিলেই তূর্ণ পরশির হাতটা টান দিয়ে পরশিকে নিজের কাছে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো। তারপর দুজন দুজনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তূর্ণ আস্তে করে পরশির চুলের কাটাটা টান দিয়ে চুল খুলে ফেলল। তারপর চুলে নাক ডুবিয়ে বলল,
“পারফেক্ট। কিন্তু আমাকে মেরে ফেলবে তোমার এই লুক।”
পরশি বলল,
“তাহলে দেখো না।”
“উহু, না দেখে তো থাকতেই পারব না।”
“ছাড়ো। ম্যাম আছেন বাসায়। কি ভাববেন?”
“কি আর ভাববে? আমার কথা বলোনি?”
“হ্যাঁ, বলেছি।”
“তাহলে সমস্যা কি? কি বলেছো? আমি তোমার কে হই?”
“যদি বলি সবকিছু?”
তূর্ণ নিজের মাথাটা আস্তে আস্তে এগিয়ে নিজের ঠোঁটটা পরশির ঠোঁট বরাবর নিতে যাচ্ছিল। এমন সময় রুমের দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে দুজন চমকে উঠে সরে গেল। তূর্ণর এতোক্ষণের ঘোর নিমিষেই কেটে গেল। মনে মনে নিজেকে গালাগাল শুরু করেছ। ভদ্রমহিলা ওদের এই অবস্থায় দেখলে কি সব ভাবতো!
তূর্ণ আর পরশি দুজনের দ্রুত স্বাভাবিক হলো। পরশি রেহানার দিকে এগিয়ে বলল,
“ম্যাম আসুন। তূর্ণ এসে পড়েছে।”
তূর্ণ নামটা শুনেই রেহানার বুঁকের মাঝে একটা বারি খেল। তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে গিয়ে বললেন,
“কি নাম বললে?”
“তূর্ণ। চলুন।”
রেহানা পরশির সাথে এগিয়ে গেল। লিভিং রুমে এসেই রেহানা অনেক বড় আকারের একটা ধাক্কা খেলেন। ঠিক একই ভাবে তূর্ণও বড় একটা ধাক্কা খেল। নামটা শুনে একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলেও রেহানা ভাবেনি এই তূর্ণই সেই তূর্ণ হতে পারে
শুধু নামের জন্যই তিনি অপ্রস্তুত হয়েছিলেন। কিন্তু এমনটা হবে তিনি ভাবেন নি। ভাবেনি তূর্ণও।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here