ভালোবাসা কারে কয়,৪৭,৪৮

0
134

ভালোবাসা কারে কয়,৪৭,৪৮
শবনম মারিয়া
পর্ব ৪৭

তূর্ণ রেহানার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার হাত কাঁপছে। তূর্ণ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তূর্ণ ঘেমে গিয়েছে। রেহানাও বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরশি হঠাৎ করে বলল,
“কি হয়েছে? তূর্ণ ইনি অফিসার রেহানা, আমার সব থেকে প্রিয় মানুষ। আমি যাকে নিজের আইডল মনে করি। আর ম্যাম এই হচ্ছে আমার সেই প্রিয় মানুষ।”
পরশির কথা শুনে দুজনেই পরশির দিক তাকালো। তূর্ণ আচমকা রেগে গেল। চিৎকার করে বলল,
“এই মহিলা এখানে কি করছে পরশি?”
পরশি অবাক হয়ে গেল তূর্ণর আচরণে। পরশি বলল,
“কি সব বলছো তূর্ণ!”
তূর্ণ আরও জোরে চিৎকার করে বলল,
“বলো এই মহিলা এখানে কি করে?”
পরশি বিরক্ত হয়ে বলল,
“তূর্ণ! চিন্তা ভাবনা করে কথা বলো। তুমি জানো তুমি কার সামনে কি সব বলছো?”
“হ্যাঁ আমি জানি। আমি এই মহিলাকে ভালো করে চিনি৷ এই মহিলাকে আমি সহ্য করতে পারি না। তুমি এই মহিলাকে নিজের আইডল ভাবো? ডু ইউ নো হার? এই মহিলা আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। আই জাস্ট হেইট হার।”
রেহানা চুপচাপ তূর্ণর দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখ শীতল হয়ে আছে। নিজের ছেলের মুখে এই কথাটা শুনতে শুনতে রেহানা ক্লান্ত। তার ভালো লাগে না৷ নিজের উপর ঘৃণা চলে আসে।
পরশি বলল,
“তূর্ণ প্লিজ শান্ত হও। তুমি ম্যামকে কিভাবে চিনো? ম্যামের সাথে তোমার কি সম্পর্ক। আর তুমি এতো ভালো একজন মানুষের উপর এভাবে রেগে আছো কেন?”
“পরশি তুমি এই মহিলাকে এখান থেকে চলে যেতে বলো। আমি তোমায় সব বলব। তুমি শুধু এই মহিলাকে বলো চলে যেতে। আমি তাকে সহ্য করতে পারছি না।”
রেহানার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। তিনি বলল,
“তাহরান! এতো বেশি ঘৃণা করিস?”
তাহরান নামটা শুনেই পরশি চমকে উঠলো। পরশি হিসেব মিলাতে পারছে না কোনোভাবে।
তূর্ণ বলল,
“হ্যাঁ। অনেক বেশি ঘৃণা করি আপনাকে মিস রেহানা। আপনি আমার চোখের সামনে থেকে চলে গেলে ভালো লাগবে। সবসময় আমার জীবনটা নষ্ট করে রেখেছেন। যেই একটু নতুনভাবে পরশির সাথে জীবন শুরু করতে চেয়েছি আপনি আবার চলে এসেছেন সব কিছু নষ্ট করতে। প্লিজ চলে যান। আমাকে একটু শান্তি দিন।”
তূর্ণর কথাগুলো শুনে পরশির রাগ হচ্ছে। পরশি রেগে বলল,
“তূর্ণ! তুমি কে হও ম্যাম কে এখান থেকে যেতে বলার?”
তূর্ণ অবাক হলো পরশির ব্যবহারে। তূর্ণ কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি তার সাথে পরশি এভাবে কথা বলবে। তূর্ণর আরো রাগ হচ্ছে। পরশি এই মহিলার জন্য তূর্ণর সাথে এভাবে কথা বলছে। একটা বারের জন্যও ওর কথা ভাবলো না? তৃতীয় ব্যক্তির জন্য ভালোবাসার মানুষের সাথে এমন ব্যবহার কেউ করতে পারে? তূর্ণ রেগে বলল,
“পরশি তুমি আমাকে এগুলো বলছো! তুমি জানো না ইনিই সেই ব্যক্তি যে সম্পর্কে আমার মা হয়। আর তুমি ভালো করেই জানো আমার সাথে তার সম্পর্ক খারাপ।”
পরশির রাগ হলেও সে নিজেকে সামলে পরিস্থিতিকে সামলে বলল,
“তূর্ণ দেখো, শান্তু হও। আমি জানি তোমার মাথা ঠিক নেই এখন। তাই তুমি এরকম করছো। তুমি বরং সময় নাও। তুমি রেহানা ম্যামের সাথে এরকম ব্যবহার করো না। আমার ভালো লাগছে না। আমি মেনে নিতে পারছি না। তুমি বরং আজ আসো। আমরা এই নিয়ে পরে কথা বলি। আই থিঙ্ক সেটা ভালো হবে।”
পরশির কথায় তূর্ণ আরও রেগে বলল,
“পরশি তুমি বলছো দেখে আমি যাচ্ছি। বাট আমি এনাকে মেনে নিতে পারব না।”
তূর্ণর ভালো লাগলো না ব্যাপারটা। কারণ তূর্ণ ভাবেনি পরশি তাকে এভাবে চলে যেতে বলবে তাও তার মায়ের জন্য। তূর্ণকে পরশি এভাবে কি করে বলল? তূর্ণ মেনে নিতে পারছে না।
পরশি রেগে বলল,
“তূর্ণ, প্লিজ আজ তোমার মাথা ঠিক নেই। আমি জানি তুমি শকড। আমিও বুঝিনি এমন কিছু হবে। আমরা এটা নিয়ে পরে কথা বলি। তুমি ম্যামের সাথে আমার সামনে মিস বিহেইভ করো না। আমি সেটা মানতে পারছি না। প্লিজ, তুমি একটু সময় নাও।”
তূর্ণর রাগ হচ্ছে। সে জানে এখানে পরশির দোষ নেই। কিন্তু পরশি তাকে এভাবে বলছে তার এগুলো মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। শুধু মাত্র তার মায়ের জন্যই তার আর পরশির মাঝে এমন হচ্ছে। তূর্ণ রেগে বলল,
“ওকে ফাইন। তুমি যখন কথা বলার উপযুক্ত সময় পাবে তখন কথা হবে। তবে আমি এই মহিলাকে মানতে পারব না।”
এই বলে তূর্ণ রাগে গজগজ করতে করতে পরশির বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল।
তূর্ণ নিজের বাসায় ঢুকে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। খুব জোরে দরজা লাগালো। তার দরজা লাগানোর শব্দে সকলে অবাক হয়ে গেল। কি হয়েছে তা তাদের জানা নেই। সবাই জানতো তূর্ণ পরশির বাসায় ডিনারের জন্য যাচ্ছে পরশির বসের সাথে। কিন্তু তূর্ণ এতো রেগে আছে কেন কেউ বুঝতে পারছে না। কি এমন হয়েছে তা তাদের জানা নেই। চন্দ্রা ভাইয়ের রাগ দেখে চিন্তিত হয়ে পড়ল। তার ভাইয়ের রাগ অনেক। তবে পরশির সাথে দেখে করে কখনো এভাবে রাগ হয়ে ফিরতে দেখেনি। চন্দ্রা কি করবে বুঝতে পারছে না। ওর কি তূর্ণর রুমে গিয়ে জিজ্ঞেস করা উচিত?

.
তূর্ণ চলে যাওয়ার পর রেহানা কান্না করে দিল। পরশির অনেক খারাপ লাগছে তূর্ণর কথাগুলোর জন্য। কিন্তু পরশি নিজেকে সামলে নিয়ে রেহানাকে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রেহানা কান্না শুরু করলেন। পরশি তাকে বসালো। তারপর পানি এগিয়ে দিয়ে বলল,
“ম্যাম, প্লিজ শান্ত হন। কান্না করবেন না এভাবে।”
রেহানা কান্না থামিয়ে সামান্য পানি পান করল। তারপর পরশি বলল,
“সরি ম্যাম। আমি কিছুই জানতাম না। আমার জন্য শুধু শুধু ঝামেলা হলো। আপনি কষ্ট পেলেন।”
“না, মা। তোমার কোনো দোষ নেই। দোষ আমার। আমার দোষের জন্যই এসব সহ্য করতে হচ্ছে।”
“এরকম বলছেন কেন ম্যাম? এটা সম্পূর্ণ কাকতালীয়। কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম না, তূর্ণ আপনার ছেলে! তূর্ণর সাথে এতোটা সময় কাটালাম। ওর বাবা মায়ের গল্প শুনলাম। কিন্তু বুঝতে পারিনি আপনি ওর মা। আবার আপনার কাছে এতোটা গল্প শুনলাম তাহরানের। কিন্তু একদমই বুঝিনি তূর্ণই তাহরান। আমি যতদূর জানি তূর্ণর নাম তূর্ণ আহমেদ। ওর নাম তাহরান কখনোই শুনিনি।”
“তূর্ণ নামটা ওর দাদার রাখা। আর তূর্ণের জন্মের আগে থেকেই আমি ভেবেছিলাম ওর নাম তাহরান দিবো। যদিও ও যখন আমার পেটে আসে আমি তখন মা হওয়ার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। কিন্তু ধীরে ধীরে মাতৃত্বের অনুভূতিও সৃষ্টি হয়েছিল আমার মাঝে। তখন তাহরানের বাবাকে বলেছিলাম ছেলের নাম তার নামের সাথে মিলিয়ে রাখব। ওর জন্মের পর ওর দাদা তূর্ণ নাম দিলেন। কিন্তু আমি সবসময়ই ওকে তাহরান ডাকি। ওর ভালো নাম তাহরান আহমেদ তূর্ণ দিয়েছিলাম। কিন্ত ডকুমেন্টসে তূর্ণ আহমেদ ব্যবহার করা হয়েছে। তাই তাহরান নামটা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।”
পরশি রেহানার কাঁধে হাত রেখে বলল,
“ম্যাম,কষ্ট পাবেন না।”
“কিভাবে? দেখলে না কেমন করল? কতটা ঘৃণা করে! আমি একজন ব্যর্থ মা। এসবই আমার প্রাপ্য।”
“একদমই না ম্যাম। আপনি তূর্ণকে অনেক ভালোবাসেন। কিন্তু তূর্ণ সেটা কখনো বুঝতে পারেনি। ও শুধু আপনাকে ভুল বুঝে এসেছে এতোকাল। এজন্য এরকম করে। তূর্ণ সম্পূর্ণ আলাদা একটা কাহিনি বলে ওর বাবা মাকে নিয়ে। যতদূর বুঝতে পারলাম এটা শুধুই ওর ভ্রান্ত ধারণা মাত্র। আংকেলের সাথেও এতো বছর ওর অনেক ঝামেলা ছিল। এখন কিছুটা ঠিক হয়েছে। দেখবেন আপনার সাথেও ঠিক হয়ে যাবে।”
“না, আমার সাথে হবে না। আমার ভুল ছিল আমি আমার ছেলের পিছনে সময় না দিয়ে আমার ক্যারিয়ারে সময় দিয়েছিলাম।সবসময় আমার থেকে দূরে রেখেছি। ছেলের বেড়ে ওটা দেখিনি। ছেলেকে ছেড়ে দূরে থেকেছি। এইজন্যই এতো ঘৃণা করে।”
“এসব বলবেন না ম্যাম। নিজেকে সামলে নিন। আমি তূর্ণকে বেঝাবো। আমি জানি ও বুঝবে।”
“না বুঝবে না।”
এই বলেই রেহানা নিজের ঘরে চলে গেলেন। পরশি বসে রইল নিজের জায়গায়। বসে বসে ভাবতে শুরু করলো,
তূর্ণ এরকম আচরণ কেন করল ওর সাথে? তূর্ণ কেন একটা বারের জন্যও ওর কথা ভাবলো না। পরশি জানে তূর্ণর সম্পর্কে। এটাও জানে তূর্ণর অনেক রাগ। কিন্তু সে কখনো পরশির সামনে এরকম রাগ দেখায় নি। পরশি তূর্ণর রাগের কথা শুনেছে তার দাদির কাছে আর চন্দ্রার কাছে। কিন্তু আজ দেখল। তূর্ণ পরশির সাথে এতো রাগ কেন দেখালো? তূর্ণ তো স্বাভাবিকভাবে সবটা বলতে পারতো। আর রেহানা ম্যামের সাথে এরকম ব্যবহার না করলেও পারতো। এতে পরশি কষ্ট পায় এই খেয়াল কি তূর্ণর মধ্যে আসেনি? এসব ভেবে পরশির রাগ হচ্ছে, অভিমান হচ্ছে।

.
তূর্ণর রুমে কিছু একটা শব্দ হলো। চন্দ্রা আর থাকতে পারল না৷ গিয়ে ভাইয়ের দরজায় নক করতে শুরু করল। তূর্ণ দরজা খুলল না। চন্দ্রা আরও কয়েকবার নক করল। তারপর তূর্ণ চিৎকার করে বলল,
“কি হয়েছে? কার কি সমস্যা?”
চন্দ্রা নরম স্বরে বলল,
“ভাইয়া প্লিজ দরজা খুলো। কি হয়েছে তোমার? এতো রেগে আছো কেন?”
“চন্দ্রা এখান থেকে যা। ডিস্টার্ব করিস না।”
“ভাইয়া দরজা খুলো। কথা আছে।”
“পারব না।”
“আমিও যাব না৷”
এই বলে চন্দ্রা দাড়িয়ে রইল। তূর্ণ দরজা খুলছেই না। চন্দ্রার মনে হলো প্রনয়ের সাথে কথা বলা উচিত। যদি সে তূর্ণর সাথে কথা বলে ওর রাগ কমাতে পারে। চন্দ্রা প্রণয়কে ফোনে সবটা বলল। প্রণয় শুনে বলল সে বাসায় এসে তূর্ণর সাথে কথা বলবে।
প্রণয় অনেকবার তূর্ণকে ফোন করেছে। তূর্ণ রিসিভ করেনি। উল্টা রাগের মাথায় অনেক জোরে ফোনটাও ছুড়ে মারল। ফোনটাও ভেঙে গেল। প্রণয় তাড়াতাড়ি বাসায় আসলো। তারপর তূর্ণর দরজায় নক করল। প্রণয় এসেছে দেখে তূর্ণ এবার দরজা খুলল। দরজা খুলতেই চন্দ্রা তাড়াতাড়ি করে তূর্ণর রুমে ডুকে পড়ল। দেখতে পেল মেঝেতে কাঁচের টুকরো ছড়িয়ে আছে। তূর্ণ রুমে এসে পানি খেতে যাচ্ছিল। পানি না পেয়ে মাথা আরও গরম হয়ে গিয়েছিল। তখন পানির গ্লাসটা ছুড়ে মেরেছে। চন্দ্রা আর প্রণয় তূর্ণর রুমে ঢুকে অবাক হয়ে গেল। প্রণয় বিরক্ত হয়ে তূর্ণর দিক তাকিয়ে বলল,
“কি হয়েছে তোর বল তো? আর ফোনটাও ফেলে ভেঙেছিস! সমস্যা কি তূর্ণ?”
তূর্ণ রেগে গিয়ে বলল,
“তোকে কে ডেকেছে? কেন এসেছিস?”
প্রণয় বলল,
“ওসব রাখ। আগে বল কি হয়েছে।”
তূর্ণ বলল,
“প্রণয় প্লিজ ভাই এখন একটু একা থাকতে দে। প্রচন্ড আকারের মেজাজ খারাপ।”

চন্দ্রার অসাবধানতার কারণে ফ্লোরে পড়ে তাকা এক টুকরো কাঁচ ওর পায়ে ঢুকে গেল। চন্দ্রা “আহ্!” বলে চিৎকার করে উঠলো। প্রণয় আর তূর্ণ চন্দ্রার দিক তাকালো। চন্দ্রার পা থেকে রক্ত বের হচ্ছে। এই দেখে তূর্ণ রেগে আরও চেঁচামেচি করে চন্দ্রাকে বলল,
“একটু শান্তিতে থাকতে দিবি না? এখানে তোকে কে আসতে বলেছে? আমি কি মরে গিয়েছি যে আমাকে দেখতে এসেছিস? যা এখান থেকে।”
তূর্ণ চন্দ্রাকে এভাবে বলে না রেগে থাকলেও। কিন্তু এরকম কথা শুনে ওরও রাগ উঠলো। ভাইয়ের কথায় রেগে চন্দ্রা হনহনিয়ে রুম থেকে চলে যাচ্ছিল। আবার কাঁচের টুকরো পায়ে ঢুকল।
প্রণয় এবার চন্দ্রার হাত ধরে ওকে তূর্ণর খাটে ওর পাশে বসিয়ে দিল।
চন্দ্রা উল্টা প্রণয়কে ঝারি দিয়ে বলল,
“হাত ছাড়ুন।”
প্রণয় ঝারি মেরে বলল,
“একদম চুপ।”
প্রণয়ের আচমকা ঝারি খেয়ে চন্দ্রা লাফিয়ে উঠলো। তারপর বিরক্ত নিয়ে তাকালো ওর দিক। তূর্ণ বিরক্ত হয়ে ওদের কাহিনি দেখছে।
প্রণয় দুই ভাইবোনকে ঝারি মেরে বলল,
“তোদের দুই ভাইবোনের রাগ দেখানো ছাড়া কোনো কাজ নেই? তুই কি শুরু করেছিস? এই পাগলকে ক্ষেপিয়ে দিলি। দেখ পায়ের কি অবস্থা করেছে।”
তূর্ণ প্রণয়কে বলল,
“ডেস্কের পাশের ড্রয়ারে ফার্স্ট এইড বক্স আছে নিয়ে আয়।”
প্রণয় গিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এলো। তূর্ণ চন্দ্রার পায়ের থেকে কাঁচ বের করতে চাইলে চন্দ্রা রাগ করে বলল,
“আমি পারব।”
তূর্ণরও মেজাজ খারাপ ছিল। ওর কিছু ভালো লাগছে না। ও রেখে দিল। কিন্তু চন্দ্রা পারছে না। পরে প্রণয় চন্দ্রাকে ঝারি দিয়ে বলল,
“বেশি পাকনামি করো তাই না? এতো রাগ নিয়ে কোথায় যাবা?”
এই বলে প্রণয় চন্দ্রার পায়ের থেকে কাঁচের টুকরা বের করে ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগল। চন্দ্রা প্রণয়ের দিক তাঁকিয়ে দেখছে। তূর্ণ কপালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।
প্রণয় মনে মনে ভাবছে,
“এতো রাগ কেন তোমার চন্দ্রমল্লিকা? রাগে প্রত্যেকবার নিজে ব্যথা পাও আর আমার কষ্ট হয়।”
চন্দ্রার খুব রাগ হচ্ছে। চন্দ্রা প্রণয়কে বলে উঠলো,
“আমাদের দুই ভাইবোনকে রাগ নিয়ে এতো জ্ঞান দিচ্ছেন কোন সাহসে? এমন ভাব যেন নিজের রাগ নেই। মাঝে মাঝে তো রাগের মাথায় প্রণয়িনীকে বকা দেন। প্রণয়িনী আমাকে বলেছে। হুহ্।”
প্রণয় চন্দ্রার কথায় হেসে দেয়। তূর্ণ এবার ওদের দিক তাকায়। তারপর প্রণয়কে বলে,
“ভাই ভুল হয়েছে আমাদের। এইটা তো প্রণয়িনীর থেকেও ছোট। ওর থেকে প্রণয়িনীর বুদ্ধি বেশি।”
চন্দ্রা আঁড়চোখে তূর্ণর দিকে তাকায়।
প্রণয় বলে,
“ভাই, আমি তোদের জন্য আসলাম এখানে। তূর্ণ এবার বল কি হয়েছে।”
তূর্ণ মন খারাপ করে বলল,
“সব শেষ হয়ে গিয়েছে।”

প্রণয় দেখল তূর্ণর পায়েও কাঁচ ঢুকেছে সামান্য। প্রণয়ের পায়ে কাঁচ ঢুকেনি কারণ তাড়াতাড়ি করে জুতো খুলতে ভুলে গিয়েছিল আর এভাবেই রুমে প্রবেশ করেছে। প্রণয় তূর্ণএ পায়ের থেকে কাঁচ বের করছিল আর সব শুনছিল। সবটা শুনে চন্দ্রা আর প্রণয় দুজনেই চুপ হয়ে গেল। ওদের কিছু বলার নেই। শুধু প্রণয় তূর্ণকে বলল,
“দেখ পরশির সাথে পারলে সব ঠিক করে নিস। তুই ওকে ভালোবাসিস। ভালোবাসা এতো সস্তা না যে এটুকু কাহিনিতেই ফুরিয়ে যাবে। পরশিকে বোঝানোর চেষ্টা কর তোর সাথে ভদ্র মহিলার সম্পর্ক স্বাভাবিক না।”
তূর্ণ কিছু বলল না। প্রণয় শুধু দুষ্টামি করে বলল,
“বুঝলে তো ভালোবাসা কি জিনিস? ভালোবাসার জন্য আমাদের তূর্ণর পায়ে এখন কাঁচের টুকরো ঢুকেছে। অথচ তার ব্যথা নেই।”
তূর্ণ আঁড়চোখে তাকালো প্রণয়ের দিক। তারপর রেগে বলল,
“কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা?”
প্রণয় হাসলো। চন্দ্রা তাঁকিয়ে রইল প্রণয়ের হাসির দিক। মনে মনে বলল,
“এইজন্যই প্রণয়িনীর হাসি এতো সুন্দর। বাবা মেয়ের এতো মিল!”

চলবে….

ভালোবাসা কারে কয়
শবনম মারিয়া
পর্ব ৪৮

পরের দিন তূর্ণ রাগ হয়ে আর পরশির সাথে কথা বলেনি। লাঞ্চ টাইমে পরশির সাথে গিয়ে দেখাও করেনি। ফোনও দেয়নি। পরশিও অভিমান করে তূর্ণকে ফোন করেনি। কিন্তু পরস্পরের সাথে কথা না হওয়াতে দুজনেরই ভালো লাগছে না। কিছুতে মন দিতে পারছে না। পরশির হাতে একটা কেস এসেছে। কিন্তু সে কেস রেখে ব্যস্ত তূর্ণর চিন্তায়। পরশি কাজে মন দিতেই পারছে না। বাসায় গিয়েও চুপচাপ থাকে। ব্যাপারগুলো রেহানা খেয়াল করেছে। তার খারাপ লাগছে। তিনি ইতোমধ্যে কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছেন, পরশির তূর্ণর সাথে কথা হয়েছে কি না৷ পরশি জানিয়েছে তাদের কোনো কথা হয় নাই।
পরশি বাসায় গিয়ে চুপচাপ বসে আছে। রেহানা আর সে রাতের খাবার খেতে বসেছে একসাথে। রেহানা খেয়াল করল পরশি প্লেটের ভাতগুলো শুধু নেড়ে যাচ্ছে। মুখে একটা দানাও তুলছে না। তিনি পরশিকে বলল,
“তাহরানের সাথে কথা হয়েছে?”
পরশি মন খারাপ করে বলল,
“না।”
“কথা বলার চেষ্টা করেছো এখন পর্যন্ত কেউ?”
“না। আজ দুজনে লিফটে একসাথে উঠেছিলাম। দুজনেই চুপচাপ ছিলাম। আমি ভেবেছিলাম তূর্ণ আমার সাথে কথা বলবে। কিন্তু তূর্ণ কিছু বলেনি। লিফটে ঢোকার সময় শুধুমাত্র একবার তাকিয়েছিল। তারপর দৃষ্টি মাটিতে রেখে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি দুইবার তাকিয়েছি। ভেবেছিলাম সে কথা বলবে। কিন্তু বলেনি। আমিও বলব না কথা। এতো রাগ নিয়ে থাকলে হয়? ও না আমাকে ভালোবাসে? তবে কিভাবে আমার সাথে কথা না বলে থাকে? ওর কি বোঝা উচিত ছিল না আমি ওর উপর রাগ করেছি। ও কেন আমার অভিমান ভাঙলো না? ও কথা না বললে আমি কথা বলব না।”
রেহানা বলল,
“আহা, পরশি! তাহরানের অনেক রাগ। তার উপর তুমি সেদিন আমার জন্য ওর সাথে কথা কাটাকাটি করেছো। আর যাইহোক এই ব্যাপারটা তাহরান সহজে মেনে নিতে পারছে না। ওর অনেক রাগ। অনেক বেশী জেদ। আমার এই রাগী ছেলের রাগ তো তোমাকেই ভাঙাতে হবে।”
“কেন? আমি কেন রাগ ভাঙবো? ও এসে আমার রাগ ভাঙবে।”
“দেখো মা, সম্পর্কে দুজনেই রাগ করে বসে থাকলে হয় না। কাউকে না কাউকে তো অভিমান ভাঙাতেই হবে। তুমি যেমন কষ্ট পেয়েছো তাহরানও কষ্ট পেয়েছে। ব্যাপারটা আমাকে নিয়ে না হলে তাহরান তোমার অভিমান ভাঙতো। কিন্তু আমার জন্য করবে না। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে একজনকে স্যাক্রিফাইস করতেই হয়। এবার না হয় তুমি ভাঙাও ওর অভিমান।”
পরশি চুপচাপ ভাবলো। আসলেই তূর্ণ এই ব্যাপারটা নিয়ে অনেক সিরিয়াস। সিরিয়াস হওয়ারই কথা। এটা তো পরশি আগে থেকেই জানতো যে তূর্ণ তার মা বাবাকে সহ্য করতে পারে না। কিন্তু বাবাকে এখন সহ্য করতে পারে। সবটা পরশির জন্যই হয়েছে। পরশি বললেই হয় তো তূর্ণ তার মায়ের সাথেও সম্পর্কটা ঠিক করবে। তূর্ণর সাথে পরশিরই আগে কথা বলা উচিত। বোঝানো উচিত।
রেহানা পরশিকে বলল,
“কি ভাবছো?”
“ভাবছি, ডাক্তার সাহেবের রাগ কিভাবে কমাবো। তিনি ভীষণ রাগী।”
রেহানা হেসে বলল,
“তা ঠিক। তবে তুমি পারবে। জানো তো তুমি আমার ছেলেকে বেছে নিয়েছো এটা জেনে আমি অনেক খুশি। আমার তাহরানের উপর আমার বিশ্বাস আছে। ও তোমাকে অনেক ভালোবাসবে। তোমাদের দুজনকে পারফেক্ট মানায়। অনেকদিনের আফসোস ছিল ছেলে তো আমার সাথে সম্পর্ক রাখে না। তার জন্য জীবনসাথী খোঁজার সুযোগ পাবো না। কিন্তু এখন দেখি আমার ছেলে আমার দেখা সব থেকে ভালো মেয়েটাকে বেছে নিয়েছে। এবার প্লিজ আমার ছেলের রাগ ভাঙাও।”
“হুম। তূর্ণর সব রাগ, অভিমান, অভিযোগ শেষ হয়ে যাবে দেখবেন।”
রেহানা বলল,
“পরশি।”
“জি, ম্যাম।”
“তূর্ণ আমাকে মেনে নিবে না। ও আমাকে ক্ষমা করবে না। ও ক্ষমা করলে আমাকে এতো বছরে অবশ্যই ক্ষমা করতো। তূর্ণ যদি আমাকে নিয়ে বেশি ঝামেলা করে তাহলে আমাকে বলো। তোমাদের মধ্যে যেন আমাকে নিয়ে কোনো ঝামেলা না হয়। আমি তোমার থেকে দূরে সরে যাব। তোমার সাথে সম্পর্ক রাখব না এই কথা তূর্ণকে বলো। আমি চাই তোমরা সুখী হও।”
“একদমই না ম্যাম। এসব আপনি কি বলছেন? আর তূর্ণর উপর আমার বিশ্বাস আছে। ও বুঝবে। ও আপনাকে ক্ষমা করবে। আপনার আর ওর সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে৷ আপনার আমার থেকে দূরে যেতে হবে না। বরং তূর্ণ আপনার কাছে আসবে। কথা দিচ্ছি।”
রেহানা সামান্য হাসলো। তারপর পরশির মাথায় হাত দিয়ে বলল,
“জীবনে সুখী হও পরশি। আমার ছেলেটাকে ভালো রাখো। আমি ওর বাবা ওকে সেভাবে ভালো রাখতে পারিনি। তুমি প্লিজ ওকে ভালো রেখো।”

.
তূর্ণ গত দুইদিন ধরে ভেবেছে কি করা যায়। তূর্ণর পক্ষে সম্ভব না ওর মাকে ক্ষমা করা। ওর মা ওকে ভালোবাসে না। ছোটবেলায় ওকে একা ফেলে গিয়েছে। এই ব্যাপারটা নিয়েই তূর্ণ ওর মাকে ঘৃণা করে। তূর্ণর পক্ষে সম্ভব না। ও পারবে না এসব মেনে নিতে। কিন্তু পরশি? ওর মা তো পরশির সাথে অনেক বেশি এটাচড। পরশিকে কি বলবে তূর্ণ। কিন্তু তূর্ণ ভালো থাকতে চায়। ওর মতো জীবন কাটাতে চায়। ওর ছোটবেলা যেমনই কাটুক। এখন ও সঙ্গী হিসেছে পরশিকে পেয়েছে। কিন্তু ও যাকে অপছন্দ করে তার সাথে পরশির যোগাযোগ, এতো ভালো সম্পর্ক মেনে নেওয়া কষ্টের। আর পরশিও ওই মানুষটাকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। তূর্ণকে প্রাধান্য দিচ্ছে না। পরশি সবটা জানার পরেও এমন করছে কি করে? পরশি কেন তূর্ণর সাথে কথা বলছে না? পরশি কেন বুঝতে পারছে না তূর্ণর অভিমান। তূর্ণ চায় পরশি এসে ওর সাথে কথা বলুক। আগের দিনে পরশির ব্যবহারে তূর্ণ কষ্ট পেয়েছে৷ এটা পরশির বোঝা উচিত। কিন্তু পরশি তো ঐ মানুষটাকে নিয়ে ব্যস্ত। দেখা হলেও কথা বলছে না। তাহলে কি পরশি আর চায় না তূ্র্ণর সাথে কথা বলতে? পরশির কাছে তার বস বড় হয়ে গেল তার ভালোবাসার মানুষটা থেকে? না, তূর্ণ এগুলো সইতে পারছে না। সে অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিল পরশির সাথে কথা বলবে এই নিয়ে। তূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর তার সম্পূর্ণ বিশ্বাস পরশি তাকে ছাড়া থাকতে পারবে না। আর তূর্ণও পারছে না পরশিকে ছাড়া থাকতে। পরশি এখন তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একজন। তূর্ণ রাতেরবেলা এই ব্যাপারে কথা বলল প্রণয়ের সাথে। প্রণয় তাকে বুঝিয়েছে যেন এসবের মধ্যে দিয়ে পরশিকে না হারায়।
পরেরদিন সকালে তূর্ণ হসপিটালে গেল। পরশি অফিসে গেল। দুপুর বেলা পরশি তূর্ণকে ফোন দিল। তূ্র্ণ ফোনটা রিসিভ করল। পরশি তূর্ণকে বলল অফিসের পর তার সাথে দেখা করতে। তূর্ণও জানালো তার কিছু কথা আছে। অফিস শেষে দুজনে একসাথে গিয়ে এক জায়গায় বসল। তূর্ণ পরশিকে বলল,
“কেমন আছো?”
পরশি অভিমান করে বলল,
“যেমন রেখেছো তেমন আছি। তূর্ণ এমনটা কেন করছো? তোমার অতীতের জন্য কেন আমাদের সুন্দর বর্তমান নষ্ট হচ্ছে? আমরা তো সুখী হতে চাই তাই না? তবে কেন তুমি কষ্ট পাচ্ছো আর আমাকেও কষ্ট দিচ্ছো?”
পরশির কথাগুলো তূর্ণর বুঁকে এসে লাগলো। সত্যিই তো তাদের মধ্যে এগুলো হওয়ার কথা ছিল না। তারা তো একসাথে সুখে থাকতে চেয়েছিল। তূর্ণ বলল,
“পরশি আমি একটা ডিসিশন নিয়েছি। আমি গত তিনদিন ধরে ভেবেছি। আমার মনে হয় এটাই বেটার হবে। প্লিজ পরশি আমাকে বোঝার চেষ্টা করো।”
“আমি তোমাকে বুঝতে চাই তূর্ণ। আমি তোমাকে ভালো রাখতে চাই।”
“পরশি তুমি প্লিজ তোমার ম্যামের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দাও। আমি চাই না তার সাথে তোমার কোনো যোগাযোগ থাকুক।”
কথাটা শুনে পরশি ধাক্কা খেল। পরশি কতক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে সামলে তূর্ণকে বুঝিয়ে বলল,
“তূর্ণ বুঝার চেষ্টা করো, আমি ম্যামের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে পারব না। উনি আমার মায়ের মতো। আমি উনাকে অনেক ভালেবাসি আর শ্রদ্ধা করি। তূর্ণ আমি জানি তোমাদের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক না। ম্যাম ছোটবেলা তোমার পিছনে সময় দেয়নি। তার ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু তোমারও বুঝা উচিত। তার বয়স অল্প ছিল। ঐ সময়ের সে মা হওয়ার জন্য তৈরি ছিল না। তার ভুলে এমনটা হয়েছে। সে তোমাকে ছেড়ে ক্যারিয়ারে সময় দিয়েছে। কিন্তু এর জন্য তার আজীবনের অনুশোচনা। ম্যাম তোমাকে অনেক ভালোবাসে। তোমার জন্য এই জীবনে অনেক কান্না করেছে। সে অপরাধবোধ করেন তোমাকে একা ফেলে আসার জন্য। তুমি তাকে বোঝার চেষ্টা কর। আংকেলের সাথেও তো ঝামেলা ছিল। ঠিক হয়েছে না বলো? ম্যামোর সাথে ঠিক কর। দুজন আস্তে আস্তে দুজনকে বুঝো। প্লিজ তূর্ণ ম্যামকে ক্ষমা করে দাও। সকলে সুখে থাকতে পারব তাহলে।”
পরশির কথাগুলো শুনে তূর্ণর রাগ হচ্ছে। তূর্ণ বলল,
“সরি পরশি। আমার পক্ষে সম্ভব না। তার অনুশোচনার কথা বলছো? এগুলো সব নাটক। এগুলো লোক দেখানো। উনার মধ্যে মাতৃত্ববোধের ছিটেফোঁটা থাকলে উনি ওরকম করতেন না। তিনি মানুষকে এগুলো গল্প শুনান। তুমিও তাই বিশ্বাস করে বসে আছো।”
কথাগুলো শুনে পরশির রাগ হচ্ছে। ও রেগে বলল,
“তূর্ণ, এসব বলবে না। তুমি কতটুকু জানো? না জেনে আজীবন ভুল বুঝে আসছো। তোমার বাবা মায়ের দোষ আছে এখানে। সম্পূর্ণ দোষ তাদের। কিন্তু তারা সেটা বুঝেছে। তারা এটার জন্য অনুতপ্ত। কষ্ট পাচ্ছে। আর তুমি তো এখন বাচ্চা নও। ছোটবেলার কাহিনি নিয়ে এই বয়সে এরকম বাচ্চাদের মতো করলে মানায় না।”
“আমি এতো কিছু শুনতে চাই না, বুঝতে চাই না পরশি। আমি শুধু তোমাকে চাই। আমাদের জীবনে শুধু আমি আর তুমি থাকবো।”
“তূর্ণ এটা কিভাবে সম্ভব? এখন যদি তুমি বলো তোমার সাথে থাকতে হলে আমি আমার পরিবারকে ছেড়ে দিব, তাদের সাথে যোগায়োগ রাখব না, তাহলে কি সেটা আমার পক্ষে মানা সম্ভব?”
“আমি তোমাকে পরিবার ছাড়তে বলিনি।”
“তূর্ণ, রেহানা ম্যাম আমার পরিবারের থেকে কম নয়।”
“পরশি আমি তোমার কাছে দুটো অপশন রাখব। তোমাকে একটাই বেছে নিতে হবে।”
“আচ্ছা! তোমার অপশনগুলো বলো।”
“হয় আমি না হয় তোমার রেহানা ম্যাম। যেকোনো একজনকে বেছে নিতে হবে তোমাকে। কারণ আমি আমার অতীত নিয়ে নতুন জীবন শুরু করতে চাই না।”
পরশি তূর্ণর কথা শুনে বিস্মিত। এসব কি বলছে তূর্ণ!
“তূর্ণ! তুমি আমাকে যে কেনো একজনকে বেছে নিতে বলছো?”
“হ্যাঁ। একজনকেই বেছে নিতে হবে।”
পরশি কিছুক্ষণ চুপ রইল। তারপর তূর্ণকে বুঝাতে চেষ্টা করল। কিন্তু সে তার সিদ্ধান্তেই অটল। ব্যাপারটা পরশির কাছে খুব খারাপ লাগলো। তূর্ণ এরকম কেন করছে? কেন বুঝতে পারছে না পরশিকে? পরশি ভবনায় ডুবে রইল। তূর্ণ আবার বলল,
“পরশি আমি তোমার থেকে উত্তর চাই।”
পরশি বলল,
“যদি আমি বলি আমি রেহানা ম্যামকে বেছে নিবো, তাহলে কি করবে?”
কথাটা শুনে তূর্ণ কষ্ট পেল। কিন্তু সে তার রাগ ধরে রেখে বলল,
“তোমাদের মাঝে থেকে সরে যাব।”
“তূর্ণ!”
“হ্যাঁ, পরশি। যা বলছি তাই সত্যি।”
পরশির চোখে পানি। তারপর পরশি বলল,
“কিভাবে পারবে? আমায় না ভালোবাসো?”
“জানি না কিভাবে পারব। তবে আমি মিস রেহানাকে মেনে নিতে পারব না। মেনে নিব, হয় তো আমার জন্য ভালোবাসা ছিল না। ভালোবাসা বলতে কিছু নেই।”
“সত্যিই ভালোবাসা বলতে কিছু নেই?”
“যদি থাকে তাহলে তুমি আমাকে বেছে নিবে।”
পরশি বলল,
“ঠিকাছে তূর্ণ। আমি একজনকেই বেছে নিবো। আমি রেহানা ম্যামকেই বেছে নিবো। যেই মানুষটা আমাকে তার মেয়ের মতো ভালেবাসে, আমাকে এতো যত্ন করে,আমার বিপদে পরিবারের মতো আমার পাশে থেকেছে, যে আমার জন্য এতোকিছু করেছে আমি তাকেই বেছে নিতে বাধ্য হবো।”
কথাটা শুনে তূর্ণ পরশির দিক তাকিয়ে রইল। তারপর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
“ভালোবাসা! জীবনের ভুল।”
পরশি রেগে বলল,
“তূর্ণ তুমি জীবনে যা কিছু হারিয়েছো সবই তোমার ইগোর জন্য। তূর্ণ আমি তোমাকে ভালেবাসি। তুমি যেদিন সবটা বুঝে আমার কাছে আসবে আমি তোমার হবো।”
“কোনো দরকার নেই পরশি। তোমার ম্যাম তোমার জন্য বেটার কাউকে খুঁজে আনবে।”
এটা বলেই তূর্ণ উঠে চলে গেল। তূর্ণর যাওয়ার দিক পরশি তাকিয়ে রইল। সবকিছু ঝাপসা হয়ে এলো। পরশি মনে মনে বলল,
“তুমি তো আমায় বুঝো তূর্ণ। তাহলে কেন এখন বুঝতে চাইছো না? এমন পাগলামি কেন করছো? আমি তোমায় ছাড়া কিভাবে থাকবো?”

তূর্ণ বাইরে রাস্তার ফুটপাতে দাঁড়িয়ে দেখছে গাড়িদের চলাচল। ট্রাফিক সিগনালে থেমে যাচ্ছে চলন্ত গাড়িগুলো। তূর্ণ একটা দোকান থেকে সিগারেট ধরিয়ে আবার দেখতে থাকলো আর ভাবতে থাকলো,
তার ভালোবাসাকেও ট্রাফিক সিগনাল দিয়ে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটু পর হয় তো গ্রিন লাইট জ্বললেই গাড়িগুলো আবার ছুটতে শুরু করবে। কিন্তু পরশি তো ছুটবে না তার জন্য। পরশি তো তাকে প্রাধান্য দিল না।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here