ভালোবাসা কারে কয়,৫৩,৫৪
শবনম মারিয়া
পর্ব ৫৩
মিরাজ সাহেব এহসান সাহেবের সাথে কথা বলেছেন।যেহেতু প্রণয় আর চন্দ্রা দুজনেই বিয়েতে মত দিয়েছে তাই তারা কথা পাকা করতে চান। জাহানারা অনেক খুশি। এতোদিনে তার ছেলে যাকে ভালোবেসেছে তাকে পাবে। তার ছেলেও সুখী হবে। প্রণয়িনীও তার সবচেয়ে পছন্দের মানুষটাকে তার মা হিসেবে পাবে। এটাই তো চাইতেন তিনি।
চন্দ্রা আর প্রণয়ের বিয়ের কথা চলছে। এর মাঝেই একদিন রেহানা বাসায় আসলেন। তিনি তোহরাব সাহেবের সাথে তূর্ণ আর পরশির বিয়ের কথা বললেন। তিনি দেরি করতে চাচ্ছেন না ওদের বিয়ে দিতে। তোহরাব অনেক ভাবনা চিন্তা করে তূর্ণ আর মিরাজ সাহেবের সাথে কথা বললেন। তিনি প্রস্তাব রাখলেন পরশি আর তূর্ণর বিয়েও চন্দ্রা আর প্রণয়ের বিয়ের সাথেই দিয়ে দিতে চান। তূর্ণ যদিও আপত্তি জানালো। তূর্ণর কথা তার একমাত্র বোনের বিয়ে। এই সময় সে কিভাবে বিয়ে করে। কিন্তু মিরাজ আর তোহরাব সাহেব বললেন এটাই ভালো হয়। তূর্ণ ভাই হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করল অসুবিধা নেই। কেউই চাচ্ছে না তূর্ণ আর পরশির বিয়েতে দেরী হোক। শেষমেশ তূর্ণ রাজি হলো। তারপর মিরাজ সাহেব পরশির বাবা মায়ের সাথে কথা বললেন। তারা জানালেন তাদের কোনো অসুবিধা নেই৷ পরশির পরিবারের সবাই ভীষণ খুশি। তূ্র্ণর মতো একটা জীবনসাথী পেয়ে পরশি সুখে থাকবে।
সবাই বিয়ের তারিখ ঠিক করে বিয়ের প্রস্তুতি শুরু করল। প্রতিদিন কেনাকাটা লেগেই আছে। তূর্ণ আর পরশিই বেশি দৌড়াদৌড়ি করছে। তারা নিজেদের বিয়ের চেয়ে বেশি চন্দ্রা আর প্রণয়ের জন্য বেশি করছে। তূর্ণ চায় তার একমাত্র আদরের বোনের বিয়েতে যেন কোনো কমতি না থাকে। আজ জাহানারা প্রণয়কে বললেন সে যেন চন্দ্রাকে নিয়ে শপিংয়ে গিয়ে চন্দ্রার জন্য বিয়ের শাড়ি কিনে নেয়। মায়ের কথা মতো প্রণয় রাজি হলো।
প্রণয় চন্দ্রাকে ফোন করে জানালো তার মা আদেশ দিয়েছেন তাদের শপিংয়ে যেতে হবে। চন্দ্রা প্রণয়ের সামনে যেতে লজ্জা পায়। শুধু লুকিয়ে লুকিয়ে থাকে। আজ প্রণয় সুযোগ পেয়েছে চন্দ্রার সাথে কথা বলার৷
চন্দ্রাকে প্রণয় বাসার সামনে থেকে এগিয়ে নিয়ে যায়। চন্দ্রা গাড়িতে উঠার পর চুপচাপ বসে আছে। প্রণয় চন্দ্রার একদম কাছে এসে ঝুঁকে গেল। চন্দ্রা শিউরে উঠলো। তারপর দেখে প্রণয় সীট বেল্ট লাগিয়ে দিচ্ছে। চন্দ্রা হাফ ছেড়ে বাঁচলো। প্রণয় ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বেশ মজা পেল। প্রণয় সানগ্লাস পড়া দেখে চন্দ্রা তার চোখ দেখতে পারছে না। প্রণয় ড্রাইভ করার ফাঁকে ফাঁকে মিরর দিয়ে চন্দ্রাকে দেখছে।আর চন্দ্রা সেই অনেকক্ষণ ধরে মিরর দিয়ে প্রণয়ের দিকেই তাকিয়ে আছে। সে ভাবছে প্রণয় দেখতে পাচ্ছে না। তার মনোযোগ ড্রাইভিং-এ। কিন্তু প্রণয় ঠিকই একটু পর পর তাকাচ্ছে। আর চন্দ্রাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হাসছে। প্রণয় জিজ্ঞেস করল,
“কি দেখছো?”
চন্দ্রা ঘাবড়ে গিয়ে বলল,
“কি? কই কিছুই তো না। এমনিই ভাবছিলাম।”
“কি ভাবছিলে?”
“ভাবছিলাম আজকের আবহাওয়াটা সুন্দর।”
“তাই? আজকে তো প্রচুর গরম। এই আবহাওয়া সুন্দর কিভাবে?”
চন্দ্রা বিব্রতবোধ করছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। প্রণয় এই সুযোগ হাতছাড়া করছে না। প্রণয় বলল,
“সেদিন প্রণয়িনীর বাবাকে ভালোবাসো বলে যে একটা দৌড় দিলে, এরপর আর সামনে আসলে না। এতো লজ্জা নিয়ে বিয়ে করবে কি করে?”
চন্দ্রা আরও লজ্জা পেল। সে কিছু বলল না৷ বাহিরে জানালার দিক তাকালো। তারপর প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল,
“প্রণয়িনী আসেনি কেন?”
“কারণ সে তার বাবা আর চন্দ্রা আন্টিকে সময় কাটাতে দিতে চায়।”
“আপনি আনেননি তাই না?”
“মা আসতে দেয় নি।”
চন্দ্রা কথা বলল না। প্রণয় প্রথমে তাকে নিয়ে গহনার দোকানে ঢুকলো। তারপর বলল,
“যেটা পছন্দ নিয়ে নাও। মা বলেছে নিতে।”
চন্দ্রা বুঝতে পারছে না কি করবে। তার এসব বিষয়ে ধারণা নেই। আগ্রহ নেই। তাকে একটার পর একটা গহনা দেখানো হচ্ছে। কিন্তু সে কিছু বুঝতে পারছে না। তারপর প্রণয়কে বলল,
“আপনি প্লিজ হেল্প করুন। আমি এগুলো পছন্দ করতে পারছি না। আপনি প্লিজ কিছু একটা নিয়ে নিন। আপনার যেটা ভালো লাগে।”
“ঠিকাছে।”
প্রণয় খুঁজে খুঁজে জিনিসগুলো পছন্দ করে কিনে নিল। তারপর গেল বিয়ের শাড়ি কিনতে। চন্দ্রা চুপচাপ আছে এখানেও। তার মনে ঘুরছে অন্যকিছু। প্রণয় শুধু দোকানের পর দোকান ঘুরে যাচ্ছে। সে ভাবছে চন্দ্রার পছন্দ হচ্ছে না। দোকান থেকে বের হওয়ার পর চন্দ্রা প্রণয়কে বলল,
“একটা রিকুয়েষ্ট ছিল। রাখবেন?”
প্রণয় চন্দ্রার দিক তাকালো। তারপর ওর গালে হাত দিয়ে বলল,
“চন্দ্রমল্লিকা কখনো এভাবে বলবে না। তোমার যা মন চাইবে বলবে। আমি আমার চন্দ্রমল্লিকার জন্য সব করব।”
চন্দ্রা একটু সংকোচ করলেও প্রণয়ের এই কথাটা তাকে সাহস দিয়েছে। তারপর সে প্রণয়কে বলল,
“কেউ রাজি হবে না। কিন্তু আমার একটা ইচ্ছে আছে। আমার মায়ের একটা সুন্দর খয়েরী রংয়ের জামদানী শাড়ি আছে আমার কাছে। ওটাই মায়ের এক মাত্র স্মৃতি আমার কাছে আছে। আমি চাই আমাদের বিয়েতে আমি মায়ের ঐ শাড়ীটা পরি। প্লিজ, আপনি যদি সবাইকে বুঝান। আন্টিকে একটু বুঝান। আমি নতুন জীবনে আমার মাকে সাথে নিয়ে শুরু করতে চাই।”
প্রণয় চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে চন্দ্রার দিকে। চন্দ্রার মাথায় হাত রেখে বলল,
“তুমি না কেমন যেন চন্দ্রমল্লিকা। তোমার মধ্যে কি আছে? তুমি কেন আমাকে প্রতি মুহুর্তে মুগ্ধ করো? তোমার এই সরল জিনিসগুলো আমাকে মুগ্ধ করে। তুমি তোমার মায়ের শাড়ীই পরবে আমাদের বিয়েতে। তূর্ণ একটু রাগ হতে পারে। কিন্তু আমি সামলে নিবো।”
চন্দ্রার চোখে পানি চলে এলো৷ সে প্রণয়কে ধন্যবাদ জানালো। প্রণয় বলল,
“আচ্ছা তাহলে তো আমাদের শপিং শেষ তাই না?”
“কিভাবে? প্রণয়িনীর জন্য তো শপিং শুরুই করিনি। আসল শপিং তো প্রণয়িনীর।”
প্রণয় হাসলো। তারপর বলল,
“ঠিকাছে চলো।”
প্রণয় আর চন্দ্রা প্রণয়িনীর জন্য জামা কিনতে গেল
চন্দ্রা অনেক দেখে বেছে পছন্দ করে প্রণয়িনীর জন্য জামা কিনছে। প্রণয় খেয়াল করছে, কি অদ্ভুত! একটু আগেও মেয়েটা নিজের জন্য কিছু কিনতে পারছিল না। কিন্তু যেই প্রণয়িনীর জন্য কেনাকাটা করছে সব নিজে থেকেই কিনছে।
প্রণয় মনে মনে বলল,
“প্রণয়িনী, বাবা তোর জন্য পারফেক্ট মা ঠিক করেছে। তোকে অনেক ভালোবাসে তোর চন্দ্রা আন্টি। দেখিস তোকে সারাজীবন আগলে রাখবে।”
কেনাকাটা শেষে চন্দ্রাকে প্রণয় বাসায় পৌঁছে দিতে গেল। ওরা পৌঁছে যখন গাড়ি থেকে নামলো তখন পরশি আর তূর্ণ বের হচ্ছিল। পরশি ওদের দেখে বলল,
“কি ব্যাপার এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলে যে তোমরা?”
“হ্যাঁ, আপু। শপিং শেষ।”
পরশি দুষ্টুমি করে বলল,
“কেনাকাটা শেষেই চলে আসতে হবে নাকি? একটু ঘুরাফিরা করো বিয়ের আগে। এতেও মজা আছে।”
চন্দ্রা বলল,
“হ্যাঁ, এখন যেমন ভাইয়ার সাথে আপনি ঘুরতে যাচ্ছেন তাই না?”
পরশি লজ্জা পেল। তূর্ণ বলল,
“বেশি কথা বলিস। তোদের ঘুরতে কেউ মানা করেছে? হ্যাঁ, এটা ঠিক প্রণয় এসব বুঝে না।”
প্রণয় এবার তূর্ণর উপর ক্ষেপে গিয়ে বলল,
“ওহ্, আচ্ছা৷ সব তো তুই বুঝিস!”
সবাই মিলে হেসে দিল।
দিনগুলো কেটে গেল। কাল প্রণয়-চন্দ্রা আর পরশি-তূর্ণর বিয়ে। এই দিনটার জন্য কত অপেক্ষা ছিল সবার। আজ সেই দিন। ভালোবাসার মানুষগুলো এক হওয়ার দিনটা চলে এসেছে। পরশি সেজেগুজে আয়নার সামনে বসে আছে। নিজেকে দেখে ভাবছে, কয়েক বছর আগে এই সাজে পরশি সেজেছিল।সেদিন স্বপ্ন পূরণ হয় নি। কিন্তু আজ স্বপ্ন পূরণ হবে। কারণ পরশির এবারের ভালোবাসার মানুষটা তাকে ঠকায়নি। সে পরশিকে ভালোবাসে। অনেক বেশি ভালোবাসে।
অন্যদিকে তূর্ণ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখেছে ভাবছে, এটা কি সে কোনোদিনও ভাবতে পেরেছিল? সে বিয়ে করবে। তার জীবনেও ভালোবাসা আসবে। একটা মানুষ আসবে যে তাকে অনেক ভালোবাসে।
অন্যদিকে চন্দ্রা তার মায়ের শাড়ীটা পরেছে। সে কখনো ভাবেনি সে বিয়ে করবে। কাউকে ভালোবাসবে। তার জীবনে এমন একটা বিশেষ দিন আসবে আর এই বিশেষ দিনে সে তার মায়ের শাড়ীটা পরবে। এর আগে এই মায়ের শাড়ীটা ধরে কত কষ্ট পেয়েছে। এমনকি নিজের শরীরে কত ক্ষত হয়েছে। শুধু কষ্টে এগুলো করেছে। কোথায় গেল চন্দ্রার এই কষ্টগুলো? প্রণয়কে পেয়ে কি সকল কষ্টরা দূর হয়ে গিয়েছে? হঠাৎ করে চন্দ্রার চোখ গড়িয়ে পানি পড়লো। পরক্ষণেই ভাবলো সে কান্না করবে না। সে নিজেকে পাল্টানোর চেষ্টা করবে। প্রণয়ের জন্য। প্রণয়িনীর জন্য।
প্রণয়ের কাছে প্রণয়িনী দৌড়ে আসলো। প্রণয় প্রণয়িনীকে কোলে তুলে নিল। প্রণয়িনী প্রণয়ের গালে চুমু দিয়ে বলল,
“বাবা তোমাকে বর সেজে সুন্দর হয়েছো।”
প্রণয় হেসে দিয়ে বলল,
“আবার কথা উল্টে ফেলছো!”
“সরি বাবা।”
প্রণয় মেয়েকে আদর করল। তারপর মেয়েকে কোলে নিয়ে ভাবতে শুরু করল,
সে তার এই জীবনে এতোকিছু আশা করেনি। সে যাকে এতো ভালোবাসতো সেই মানুষটা আজ তার হবে। যাকে নিজের করে পাবে না বলে প্রণয় এতো কষ্ট পেতো, সে আজ তার হবে। আজ তার চন্দ্রমল্লিকা তার হয়ে যাবে। এইদিনটার কথা প্রণয় স্বপ্নেও ভাবেনি। এতোদিন রাতের বেলা যার ছবি দেখে ঘুমিয়েছে আজ থেকে তাকে দেখে ঘুমাবে। ঘুম থেকে উঠেও তার চন্দ্রমল্লিকাকে দেখবে। প্রণয়িনী বাবা-মা দুজনের ভালোবাসা পাবে।
যখন প্রণয়ের সামনে চন্দ্রা গেল, প্রণয় স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল চন্দ্রার দিকে। সে চোখ ফেরাতে পারছে না। তার চন্দ্রমল্লিকা বউ সেজেছে!
অন্যদিকে তূর্ণও পরশিকে দেখে পাগল হয়ে যাচ্ছে। পরশির থেকে আর দূরত্বে থাকতে হবে না তাকে। সে পরশিকে এখন থেকে সবসময় কাছে পাবে।
বিয়ে শেষ হলো। সারাদিনে অনেল ধকল গিয়েছে। পরশি আর তূর্ণ নিজেদের রুমে রেষ্ট নিচ্ছে। পরশি তূর্ণকে বলল,
“আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি আমি তেমার রুমে বসে আছি।”
“পরশি আজ জীবনকে অনেক সুন্দর মনে হচ্ছে। তুমি আমার হয়ে গিয়েছো। সবকিছুই স্বপ্নের মডো লাগছে। কিন্তু আসলে সবই বাস্তব। আমরা বাস্তব। আমাদের ভালোবাসা বাস্তব।”
তূর্ণ পরশির হাত ধরে বলল,
“ধন্যবাদ পরশি, আমার জীবনে আসার জন্য। আমার জীবনকে এতো সুন্দর করে তোলার জন্য। তুমি না আসলে আমার জীবন এতো সুন্দর হতো না। সারাজীবন কষ্টে কেটে যেত। ভুলগুলো সুধরে নিতে পারতাম না। পরশি আমার জীবনে তুমিও একজন অনেক জরুরি মানুষ। প্লিজ সব সময় আমার পাশে থেকো।”
“অবশ্যই তূর্ণ। হাত যেহেতু একবার ধরেছি তা আর ছাড়বো না। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তেমার পাশে থাকবো, তোমার হয়ে থাকবো।”
পরশি তূর্ণর কাঁধে মাথা রাখলো। তূর্ণ পরশিকে জড়িয়ে ধরলো। দুজনে গল্প করল অনেকক্ষণ। তাদের প্রথম দেখা, প্রথম কথা, একে অপরের প্রতি ভালোলাগার শুরু হওয়া। দুজনের গল্পে রাত ঘনিয়ে আসলো। শেষ রাতে তূর্ণ পরশিকে নিজের খুব কাছে টেনে নিল। তাদের মধ্যে আর একটুও দূরত্ব অবশিষ্ট নেই। দুজন যেন একে অপরের সাথে মিশে যাচ্ছে। এতোদিন ধরে যেন ভালোবাসার মানুষদুটো একে অপরের নিকটেই আসতে চাইছিল। দু’জন মগ্ন হয়ে গেল তীব্র ভালোবাসায়।
চলবে…..
ভালোবাসা কারে কয়
শবনম মারিয়া
পর্ব ৫৪
বাসায় আসার পর থেকে প্রণয়িনী চন্দ্রার পিছু ছাড়ছে না। একদম চন্দ্রার সাথেই আছে। দুজনে মিলে বসে গল্প করছে। প্রণয় দুইজনকে সময় দিয়েছে। সে ভাবলো ওদের বিরক্ত করবে না। আর চন্দ্রা মেয়েটাও খুব লজ্জা পায়। ওকে একটু ফ্রি হওয়ার সময় দেওয়া দরকার। তাই সে বারান্দায় গিয়ে বসে আছে। সে শুধু আজকের দিনটার কথা ভাবছে। আজ তার চন্দ্রমল্লিকা তার।
চন্দ্রা আর প্রণয়িনী কথা বলছে। প্রণয়িনী বলল,
“আন্তি বাবা কি করচে?”
চন্দ্রা নিজেও জানে না। সেও প্রণয়কে খুঁজছে মনে মনে। বারান্দায় যে গেল আর আসলো না। কি করছে সে? প্রণয়িনী বলল,
“আমি বাবাকে ডেকে আচি?”
“আচ্ছা যাও।”
প্রণয়িনী তার বাবাকে বলল,
“বাবা এখানে কি করো? আচো আন্তি আর আমি তোমাকে খুঁজেচি।”
“তাই? তোমার আন্টিও খুঁজছে?”
“হ্যাঁ।”
প্রণয় প্রণয়িনীকে কোলে তুলে রুমে গেল। চন্দ্রা চুপচাপ বসে আছে। কি সুন্দর লাগছে চন্দ্রাকে। ওর গায়ের ফর্সা রঙের সাথে গাঢ় খয়েরী রঙটা একদম মিশে আছে। কি যে সুন্দর লাগছে। প্রণয় চন্দ্রার গলার কাছে তাকালো। এতক্ষণে গলাটা গহনায় আবৃত ছিল। কিন্তু এখন চন্দ্রা গহনা খুলে রেখেছে। চন্দ্রার ফর্সা গলাটা প্রণয়কে আকৃষ্ট করছে। প্রণয় দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নিল। প্রণয় চন্দ্রাকে বলল,
“টায়ার্ড লাগছ তোমাকে। চেঞ্জ করে এসে রেস্ট নাও।”
চন্দ্রা বলল,
“প্রণয়িনীর ঘুমানোর সময় হয়ে যাচ্ছে। ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিই। তারপর ফ্রেশ হয়ে নিবো।”
“তুমি রেস্ট নাও। প্রণয়িনী ঘুমিয়ে যাবে অসুবিধা নেই।”
“ও বলল আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে।”
এর মাঝেই প্রণয়িনী আসলো। সে বলল,
“আন্তি আন্তি আমি তোমার সাথে ঘুমাবো। দাদুর সাথে না।”
পিছে পিছে জাহানারা আসলেন। তিনি বললেন,
“প্রণয়িনী, আজ থেকে তোমার চন্দ্রা আন্টিকে আর আন্তি ডাকবে না। মা ডাকবে।”
প্রণয়িনী কি যেন ভাবলো। তারপর খুশি হয়ে বলল,
“টিকাচে।”
প্রণয়িনী চন্দ্রার কাছে গিয়ে চন্দ্রার গালে চুমু দিয়ে বলল,
“তুমি আমার মা?”
চন্দ্রা হেসে দিয়ে প্রণয়িনীকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“হ্যাঁ, আর তুমি আমার মেয়ে।”
প্রণয়িনী চন্দ্রার গলা জড়িয়ে ধরলো। এটা দেখে জাহানারার চোখ ভিজে উঠলো। প্রণয়ও প্রণয়িনী আর চন্দ্রাকে এতো খুশি দেখে শান্তি পাচ্ছে।
জাহানারা বললেন,
“প্রণয়িনী দাদু তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেই। মাকে বিরক্ত করার দরকার নেই।”
চন্দ্রা বলল,
“অসুবিধা নেই আন্টি প্রণয়িনীকে আমিই ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি।”
জাহানারা বললেন,
“মেয়ের মতো মাও এখন আন্টি আন্টি লাগিয়ে রেখেছো। আমিও তোমার মা হই। আন্টি না। আমাকে মা ডাকবে।”
চন্দ্রা চুপ হয়ে জাহানারার দিক তাকিয়ে রইল। প্রণয় ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ভয় পেয়ে গেল। চন্দ্রার মা নেই। জাহানারা তাকে মা ডাকার জন্য বলাতে কি চন্দ্রা রেগে গিয়ে রিঅ্যাক্ট করবে? প্রণয় পরিস্থিতিকে সামাল দিতে বলল,
“মা, চন্দ্রার যা খুশি তাই ডাকবে তোমাকে। এটা নিয়ে এতো কাহিনি করার তো দরকার নেই।”
জাহানারা অবাক হয়ে তাকালো প্রণয়ের দিকে। কিন্তু চন্দ্রা উল্টো প্রনয়কে অবাক করে বলল,
“সরি মা। এখন থেকে আপনাকে মা ডাকবো।”
এই বলে চন্দ্রা উঠে জাহানারাকে বলল,
“মা, আমি আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরি?”
জাহানারা বললেন,
“অবশ্যই।”
জাহানারা চন্দ্রাকে বুঁকে টেনে নিল। চন্দ্রা জাহানারাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল। চন্দ্রার কেমন যেন মনে হলো এই দীর্ঘদিনের চাপা কষ্টটা কিছুটা হাল্কা হচ্ছে। চন্দ্রা কান্না করতে করতে বলল,
“আমি কখনো ভাবতে পারিনি, এই জীবনে আর মা ডাকার সুযোগ হবে।”
জাহানারা চন্দ্রাকে সামলে বলল,
“চন্দ্রা, আমি তোমার দ্বিতীয় মা৷ তুমি আমার কাছে মেয়ের মতোই। জানি তুমি মায়ের ভালোবাসা পাওনি সেরকম৷ আমি তোমাকে পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। চন্দ্রা, আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ আমার ছেলের জীবনে আসার জন্য।”
প্রণয়কে এই জিনিসগুলো অবাক করে দিচ্ছে। প্রণয় ভেবেছিল চন্দ্রা রেগে যাবে। কিন্তু চন্দ্রা রাগে নি। বরং সে জাহানারাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল! প্রণয়ের জিনিসটা ভালো লাগছে। কিন্তু কষ্ট হচ্ছে চন্দ্রার কষ্ট দেখে। মেয়েটার মধ্যে কি পরিমাণ কষ্ট।
.
জাহানারা চলে গিয়েছেন। প্রণয়িনী সাধারণত তার বাবার কোলে ঘুমায়। কিন্তু আজ বাবাকে কাছে পেয়েও সে তার মায়ের কাছে আবদার করলো ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। প্রণয়িনীকে শুইয়ে দিয়ে তাকে গল্প শুনালো আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। প্রণয়িনী ঘুমিয়ে পড়েছে। চন্দ্রা প্রণয়িনীর দিক তাকিয়ে আছে। ঘুমন্ত বাচ্চাটাকে দেখতে কি ভালো লাগছে চন্দ্রার। কেমন একটা মায়া মাখা চেহারা।
প্রণয় এসে প্রণয়িনীর মাথায় হাত দিল। তারপর আস্তে করে প্রণয়িনীর কপালে চুমু দিল। চন্দ্রা এখন প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রণয় চন্দ্রার তাকিয়ে বলল,
“এটা আমার প্রতিদিনের কাজ। তারপর একটু আগে যে তুমি প্রণয়িনীর দিক তাকিয়ে ছিলে অপলক দৃষ্টিতে, আমিও প্রতিদিন অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকি। ভালো লাগে। তবে আজ খুব হিংসে হচ্ছে। আমার মেয়ে আমার কোলে এসে ঘুমাতো। কিন্তু আজ তোমাকে পেয়ে এই আবদার পাল্টে গেল।”
চন্দ্রা সামান্য হাসলো। তারপর বলল,
“অনেক ভালোবাসেন তাই না?”
প্রণয় চন্দ্রার দিক তাকিয়ে বলল,
“আমি প্রণয়িনী আর তোমাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না। তোমরা দুইজন আমার কাছে সবকিছু। আমি কখনো ভাবতেও পারিনি তোমাকে আর প্রণয়িনীকে আমি একসাথে পাবো। আজ আমার নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান পুরুষ মনে হচ্ছে।”
“অথচ এক সময় আপনি প্রণয়িনীকেও মেনে নিচ্ছিলেন না। কারণ আপনার সন্দেহ ছিল প্রণয়িনী আপনার মেয়ে নাকি!”
প্রণয় নরম স্বরে বলল,
“চন্দ্রা আমার তখনকারন অবস্থা কেমন যেন হয়ে গিয়েছিল। আমি আমার মধ্যে ছিলাম না। আনিকা যখন আট মাসের প্রেগন্যান্ট, তখন একদিন শুনলাম আনিকার অন্য কারো সাথে সম্পর্ক আছে। আর সে প্ল্যান করছে বাচ্চাটাকে আমার দায়িত্বে রেখে দিয়ে চলে যাবে। এটা শোনার পর আমি আর আমার মধ্যে ছিলাম না। তারপর ওর ডেলিভারি পর্যন্ত আমাদের মধ্যে ডেইলি এই নিয়ে ঝগড়া হতো। ওকে ওর বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম। আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। তূর্ণ আমার পাশে ছিল। ও না থাকলে হয় তো আমি কোনো ভুল পদক্ষেপ নিতাম। তখন তূর্ণর সাথে তোমাদের বাসায় ছিলাম। তখন তুমিও আমাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দিলে। আমি রেগে বলেছিলাম আমি আনিকাকে খু`ন করব। তখন তুমি বললে, তোমার কাজ কেন আমি করব? এরপর তুমি আমাকে বুঝালে। তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলে, আনিকার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার আছে কি না। আমি বলেছিলাম নেই। তারপর তুমি বললে তাহলে ও বাঁচবে না৷ কারণ ও আমাকে ঠকিয়েছে। প্রণয়িনীর জন্মের পর তুমি আনিকাকে নিশ্বাস আটকিয়ে মে`রে ফেললে। ব্যাপারটা সামলে নিল তূর্ণ। আনিকার প্রেগন্যান্সিতে এমনি অনেক কমপ্লিকেশনস ছিল৷ সেটাই আমাদের সাহায্য করল। আনিকার মৃ`ত্যুটা সকলের কাছে স্বাভাবিক ভাবেই উপস্থাপন করা হলো।
তারপরেও বুঝতে পারছিলাম না প্রণয়িনীর কি করব। প্রণয়িনীকে দেখার পর থেকে মন থেকে চাইছিলাম মেয়েটা যেন আমার হয়। তাহলে আমি বেঁচে থাকার একটা উপায় পাবো। তারপর তূর্ণ যখন দুইদিন পর ডিএনএ রিপোর্টস পেয়ে কনফার্ম করল যে প্রণয়িনী আমার মেয়ে, সত্যি তখন মনে হয়েছিল আমি আমার জীবন ফিরে পেয়েছি।”
চন্দ্রা বলল,
“আচ্ছা, প্রণয়িনী যদি কখনো জানতে পারে আমি নিজ হাতে ওর মাকে খু`ন করেছি, তাহলে কি ও আমাকে ঘৃণা করবে?”
“প্রণয়িনী কেন, কেউ জানবে না। এটা নিয়ে তুমি আর ভেবো না চন্দ্রা। এসব ভুলে যাও। এই নিয়ে আর কথা বলবে না চন্দ্রা।”
চন্দ্রা বলল,
“আচ্ছা, আরেকটা প্রশ্ন।”
“কি?”
“আপনি তো প্রণয়িনীর মাকে ভালোবেসেছিলেন৷ তারপর আমায় কিভাবে ভালোবাসলেন? এভাবে কি আমাকে রেখেও অন্য কাউকে ভালোবাসবেন?”
“ওকে যতটা না ভালোবেসেছিলাম, তার থেকেও বেশি ঘৃণা চলে এসেছিল ওর জন্য। তারপরে কি অন্যকারো প্রতি ভালোবাসা তৈরি হওয়াটা অন্যায়? আর তোমার কথা বলছো তো? মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোমায় ভালোবেসে যাবো।”
চন্দ্রা প্রণয়ের একটু কাছে এগিয়ে বলল,
“আমাকে তো ভালোবাসতেই হবে। জানেনই তো যারা ঠকায় তাদের আমি কি করি।”
প্রণয় বলল,
“চিন্তা নেই। আমি ঠকাবো না। যে ভালোবাসে সে কখনো ঠকায় না চন্দ্রমল্লিকা।”
“একটা কাজ করব। জানি আপনি কষ্ট পাবেন৷ কিন্তু আমি শান্তি পাবো। প্লিজ করি?”
প্রণয় কপালে ভাজ ফেলে জিজ্ঞেস করল,
“কি করবে তুমি?”
চন্দ্রা ওর ব্যাগ থেকে একটা ব্লেড বের করল। তারপর প্রণয়ের কাছে এগিয়ে গেল। প্রণয় আতঙ্কিত হয়ে উঠলো। চন্দ্রা কি করবে? নিজেকে আঘাত করবে? এই মেয়েকে দিয়ে ভরসা নেই। কখন মাথায় কি আসে আর কি করে বসে সে নিজেও জানে না।
চন্দ্রা আস্তে আস্তে প্রণয়ের খুব কাছে এগিয়ে গেল। তাপর প্রণয়ের কানে ফিসফিস করে বলল,
“আমি যদি এখন আপনার শরীরের ক্ষত করি তাহলে কি আপনি আপত্তি করবেন?”
প্রণয় অবাক হয়ে যাচ্ছে চন্দ্রার আচরণে। সে চন্দ্রাকে একটু দূরে সরিয়ে বলল,
“চন্দ্রা এসব কি বলছো তুমি? কি করতে চাইছো কি?”
“প্লিজ, যদি ভালোবেসে থাকেন তবে, যা করছি করতে দিন।”
প্রণয় বিরক্ত হয়ে বলল,
“কি করবে? আমায় খু`ন করবে?”
“না, এগুলো বলবেন না। আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমি ম`রে গেলেও আপনাকে খু`ন করতে পারব না। আর আপনি তো জানেন আমি ভালো মানুষদের খু`ন করি না।”
চন্দ্রা কেমন যেন করছে। প্রণয় চিন্তিত হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে কি হলো মেয়েটার? এরকম পাগলামি চন্দ্রা কিছু একটা ঘটলেই করে। কিন্তু এখন তো কিছু হয় নি। একটু আগেও শান্ত ছিল মেয়েটা।
প্রণয়ও দেখতে চায় চন্দ্রা কি করতে চায়। প্রণয় বলল,
“ঠিকাছে, যা করবে করো।”
চন্দ্রা প্রণয়ের চোখে চোখ রাখল। প্রণয়ও তাকিয়ে আছে চন্দ্রার দিক। চন্দ্রা প্রণয়ের দিক তাকিয়েই ওর পাঞ্জাবির বোতামগুলো খুলল। প্রণয় কিছু বলল না। এরপর চন্দ্রা প্রণয়ের পাঞ্জাবিটা খুলল। প্রণয় জানে না চন্দ্রা কি করবে। কিন্তু তার কোনো ভয় লাগছে না। সে এক দৃষ্টিতে চন্দ্রাকে দেখছে। চন্দ্রা প্রণয়ের পাঞ্জাবি খুলে ওর বুঁকে ব্লে`ডটা ধরল। তারপর ব্লে`ড দিয়ে কে`টে প্রণয়ের বুঁকের বামপাশে ছোট্ট করে চন্দ্রার নাম লিখে দিল। প্রণয় ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো। “আহ্!” বলে আর্তনাদ করে উঠল। তবুও চন্দ্রাকে আটকালো না।
প্রণয়ের আর্তনাদ শুনেও চন্দ্রা থামেনি। তার নামটা লিখে নিয়েছে। তারপর চন্দ্রা প্রণয়ের ক্ষত স্থানে চুমু খেল। এটা দেখে প্রণয় আরও বিস্মিত হলো। এই মেয়ের মাথা ঠিক থাকে না তা প্রণয় জানে। কিন্তু এগুলো কি করছে তা প্রণয় বুঝতে পারছে না। চন্দ্রা বলল,
“অনেক ব্যথা দিয়েছি তাই না? আমার উপর প্লিজ রাগ হবেন না।”
চন্দ্রা তারপর অস্থির হয়ে বলল, “ফার্স্ট এইড বক্স আছে আপনার রুমে?”
প্রণয় বলল,
“আছে।”
চন্দ্রা কোথায় রাখা সেটা জেনে ফার্স্টএইড বক্স নিয়ে আসলো। তারপর প্রণয়ের ক্ষত স্থানে ওষুধ লাগিয়ে দিল। প্রণয় খেয়াল করল প্রণয়ের ব্যথার জন্য চন্দ্রা বেশি কষ্ট পাচ্ছে। তবে এটা কেন করল? চন্দ্রা উঠে যেতে চাইল। প্রণয় বলল,
“দাঁড়াও চন্দ্রা।”
চন্দ্রা দাঁড়ালো। প্রণয় বলল,
“আমাকে ভালোবাসো না?”
চন্দ্রা বলল,
“ভালো না বাসলে কেন বিয়ে করেছি?”
“তাহলে আমাকে বিশ্বাস করো না কেন? এই মাত্র তুমি যা করলে তা কেবলই তোমার মনের সংশয়ের জন্য যে আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো। ভালোবাসলে বিশ্বাস করতে কি অসুবিধা চন্দ্রা? এতটুকু বিশ্বাস কি আমার প্রাপ্য নয়?”
চন্দ্রার চোখ শীতল। সে প্রণয়কে কাঁপা কন্ঠে বলল,
“না, আপনি ভুল বুঝছেন। এটা আমি আপনাকে অবিশ্বাস করে করিনি। আমি আপনাকে বিশ্বাস করি। কিন্তু আমার ভয় হয়, আপনাকে হারিয়ে ফেলার ভয়। আমি সবসময় আপনার সাথে থাকতে চাই। তাই এটা করেছি। আপনিই বলুন, কাউকে ভালোবাসলে তো তাকে হারানোর ভয়ও হয় তাই না? আপনাকে অনেক ভালোবাসি। আমি আপনাকে হারাতে চাই না৷”
কথাগুলো বলে চন্দ্রা কান্না করে দিল। প্রণয় চন্দ্রাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“চন্দ্রমল্লিকা, হয়তো তোমার ভালোবাসা ধরণ ভিন্ন। তবে তুমি আমায় এতোটা ভালোবাসো এটাই আমার জন্য অনেক। তুমি ভালোবেসে আমায় হাজারটা ক্ষত দিলেও আমার কষ্ট হবে না।”
চন্দ্রা প্রণয়কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কিছুক্ষণ পর প্রনয় চন্দ্রাকে পাঁজকোলে নিয়ে খাটে শুইয়ে দিল। তারপর কতক্ষণ চেয়ে রইলো দুজনের দুজনের দিকে। হঠাৎ প্রণয় চন্দ্রার ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ মিলিয়ে দিল। দুজনে ডুবে গেল ভালোবাসার অনুভবে।
প্রণয় দেখতে পেল চন্দ্রার শরীরে অসংখ্য ক্ষতের চিন্হ। এগুলো চন্দ্রা এতো বছর নিজেই করেছে। নিজেকে নিজেই কষ্ট দিয়েছে। এগুলো দেখে প্রণয়ের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। প্রণয় মলিন কন্ঠে বলল,
“নিজেকে এতোটা কষ্ট কেন দিয়েছো চন্দ্রমল্লিকা?”
চন্দ্রা বলল,
“আমার খুব কষ্ট হয়। আমি নিজেকে সামলাতে পারি না।”
“এখন থেকে পারবে। এখন থেকে আমি আর তোমাকে কষ্ট পেতে দিবো না। আর কষ্ট পাবে না আমার চন্দ্রমল্লিকা। আর কষ্ট পাবে না আমার প্রণয়িনীর মা।”
চলবে…..