ভালোবাসা বিনিময়,part_01
Nishi_khatun
আচ্ছা আপনার কাছে কি ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই?আপনি এভাবে নিজের ভালোবাসার মানুষের হাতটা ছেড়ে দিয়ে আমার হাতটা ধরলেন কি করে?
ভালোবাসা কোনো ক্রয়_বিক্রয়ের বস্তু নয়।
এটা মনের একটা গভীর অনুভূতি।এই অনুভূতি ইচ্ছা করলেও কোনো কিছুর বিনিময় বেচা-কেনা করা যায় না।আর আপনি তো সেখানে সম্পর্কটা কে বিনিময় করে গড়ে তুলছেন।আচ্ছা আপনার একটি বার ও মনে হলো না যখন আমি এই সম্পর্কটা থেকে বেড়িয়ে যাবো।তখন তো পারবেন না জোড় করে আমাকে বেঁধে রাখতে।তাহলে কেনো এভাবে নিজের সাথে আমার সম্পর্কটা বিনিময়ের মাপকাঠি তে মাপতে গেছেন?
বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্ক কখনো এভাবে গড়ে তুলতে নেই।আপনি অন্য কারো মন ভেঙ্গে তাকে সারাজীবনের জন্য কাঁদিয়ে আমাকে আমার ভালোবাসার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে কোন সাগরে ভাসাতে চাইছেন?একটি বার ও কি ভেবেছেন এই সম্পর্কের জন্য আমরা কেউ সুখী হবো না।
আর আপনি যে মেয়ের চোখের পানি ঝরালেন একদিক হয়তো সে নিজেকে বুঝিয়ে মানিয়ে নিবে কিন্তু আমাদের সুখ গুলো সব নোনাজলে পরিণত হয়ে যাবে।একটা সময় তার মনের ঘাঁ শুকিয়ে যাবে আর আমাদের মনের মাঝে নতুন করে ঘাঁ তৈরি হবে।
উঁহু আপনি কোনো কিছু না ভেবে তাকে ধোঁকা দিয়ে আামাকে আপন করে নিলেন।আমার মনের খবর একটিবার ও জানতে চাইলেন না আপনি।এতোটা স্বার্থপর কেনো আপনি?
এবার ছেলেটা শান্ত গলায় বলে,”তোমার অযথা বকবকানি শেষ হলে এবার চলো ঘুমাতে যাবে।
অনেক রাত হয়ে গেছে সারাদিন অনেক ধকল গেছে আমাদের উপর দিয়ে।এবার একটা লম্বা ঘুমের প্রয়োজন।আর হ্যাঁ শোনো এসব বিনিময় টিনিময়ের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ঘুমাতে আসো।”
নতুন বউ,”আপনি কেমন মানুষ।এমন নরমাল ভাবে কথা বলছেন মনে হচ্ছে কোনো কিছুই হয়নি।এসব ভাবতেই আমার শরীর গুলিয়ে আসছে।”
বর বলে,”শরীর গুলিয়ে আসছে!তাহলে যাও বাথরুমে গিয়ে বমি করে আসো।আমার রুমটা কে অযথা নষ্ট করার দরকার নেই।এতো রাতে আর কোনো নাটক দেখতে বা করতে চাইছি না আমি।এখন অনেকটা ক্লান্ত আমার দেহ আর মন।”
মেয়েটা বিরক্তিকর ভাবে বলে,”আল্লাহ হয়তো আপনাকে তৈরি করার সময় অনুভূতি নামক বস্তুটা দেয় নি।যে অনুভূতি অন্যের খারাপ ভালো বুঝতে সাহায্যদান করে।”
ছেলেটা কিছু না বলে মেয়েটার হাত ধরে বাথরুমের দরজা খুলে ঠেলে ভেতরে পাঠিয়ে দেয়।তারপর ব্যাগ থেকে একটা ড্রেস বাহির করে বাথরুমের দরজার সামনে দিয়ে বলে চেঞ্জড করে বেড়িয়ে আসো।
মেয়েটা ছেলেটা এমন ব্যবহারে হতবাক হয়ে যায়।সে এমন কিছুই আশা করে নাই।তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে ড্রেস চেঞ্জড করে বাহিরে এসে দেখে তার জামাই বিছানার একপাশে শুয়ে আছে।
মেয়েটা বলে,”আমার পক্ষে আপনার সাথে এক বিছানাতে ঘুমানো সম্ভব না।”
এবার ছেলেটা খাট থেকে নেমে এসে মেয়েটার হাতের কব্জিতে খুব শক্ত করে ধরে বলে,”এই সৈয়দ সাইয়ান খানের সামনে দাঁড়িয়ে অনেক কথা বলেছো এতো সময় ধরে।আমি সবটা নিরবে সহ্য করছি তার মানে এই নয় যে আমার মাথায় চড়ে বসবা।তোমাকে এতোটা অধিকার দেয়নি আমি।খারাপ ব্যবহার করছি না তার মানে এই নয় যে আমি তোমার প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে-পড়ে আছি।এমনটা কখনো ভাবতে যাবে না।তোমাকে আমি কেনো বিয়ে করেছি সবটা তুমি জানো। তাহলে এতো নাটকের কী আছে মিস উপস্ এখন থেকে তো মিসেস ঐশানী ইয়াসমিন?”
এবার ঐশানীর হাতে খুব ব্যাথা লাগছে।তার থেকে বেশি ভয় করছে।কারণ তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা
The famous Rj Saiyan khan এর পুরো চেহারা লাল হয়ে গেছে।সে ঐ ঐশানীর দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে।আর প্রচুর শক্ত পুরুষালী কন্ঠে কথা বলছে।যে আওয়াজ শুনে যে কোনো মানুষের আত্মা কেঁপে উঠবে।
{[(আসুন এবার এই নতুন দুই বর বউয়ের পরিচয় দেয়।এতো সময় যে ছেলেটা কথা বলছিল সে হচ্ছে The famous Rj সৈয়দ সাইয়ান খান।বাংলাদেশে নাম করা Rj. তার পিছনে হাজার হাজার মেয়েরা ঘুরছে।
সে হাজার হাজার মেয়ে হৃদয়ের সুপুরুষ।
সাইয়ানের বাবা একজন বড় বিজনেসম্যান।
তবে ছেলের কোনো আগ্রহ নেই বাবার ব্যবসায়।
তাই সে নিজের একটা পরিচয় তৈরি করেছে।
তবে মাঝেমধ্যে তাকে বাবার অফিসে হাজিরা দিতে হয়।
ঐশানী ইয়াসমিন হচ্ছে সাইয়ানের স্ত্রী। সে এবার অনার্স লাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট।তার বাবা একজন ছোট ব্যবসায়ী।বাকিটা না হয় গল্পের মাঝে জানতে পারবেন) ]}
ঐশানী সাইয়ানের এমন ভয়ার্ত চেহারা দেখে ওর মনের সব সাহস চুপসে যাওয়া বেলুনের মতো ফুস ফুস করে হারিয়ে যায়।
এবার ঐশানী ব্যাথা আর ভয়ে কান্না করতে শুরু করে দেয়।কারণ বাঘ খেপে গেছে।তাকে আর কিছু না বলাটা বুদ্ধি মানের কাজ।নিজের মাথা ঠাণ্ডা রেখে সামনে কথা বলতে হবে।
সাইয়ান ঐশানীর হাতটা ছেড়ে দিয়ে তাচ্ছিল্য নিয়ে বলে,”তুমি এই কান্নাকাটির নাটক আমার সামনে করো না।কারণ আমি জানি তুমি কতোটা ছলনাময়ী আর তোমার মতো মেয়েদের কলিজায় সাহসের কমতি নেই।”
ঐশানী কিছু বলতে যাবে তার আগে সাইয়ান ফুল দিয়ে সাজানো বাসর নষ্ট করে দেয়।তারপর বলে,”তোমার জন্য আজ আমার জীবন এতোটা এলোমেলো হয়ে গেছে।এই বাসরে অন্য কারো থাকার কথা ছিলো আর সেই সাজানো বাসরে তুমি।
তুমি জানো আমার হৃদয়ে কতোটা রক্তক্ষরণ হচ্ছে? জানবে না!কারণ তোমরা তো শুধু টাকা চেনো অন্যের অনুভূতির মূল্য কি বুঝবে?”
ঐশানী এতোটা অপমান সহ্য করতে পারছিল না।
তাই সে হিচকি তুলে বলতে থাকে,প্লিজ দয়া করে আপনার এই অপমান জনক কথা বলা বন্ধ করুণ।
আপনি আমার সম্পর্কে কিছুই জানেন না।অযথা কারো সম্পর্কে না জেনে বুঝে কমেন্ট করা উচিৎ নয়।
সাইয়ান ঐশানী এমন বক্তিতা শুনে আরো রেগে বিরক্ত হয়ে যায়।সে ঐশানী কে বিছানাতে ধাক্কা দিয়ে সামনে টেবিলের উপর থাকা কাচের ফুলদানি টা মেঝেতে ছুঁড়ে দেয়।ফুলদানী টা সাথো সাথে হাজারো টুকরো টুকরো হয়ে যায়।সাইয়ান বলে,”এই ফুলদানীর মতো আজ আমার হৃদয়টা টুকরোটুকরো হয়ে আছে।”
সাইয়ান এসব কথা বলে রুমের বাহিরে চলে যায়।
এদিকে বিছানার উপর হাটুতে মুখ গুঁজে ঐশানী কান্না করতে থাকে।
ঐশানী বলে,”আপনি একজন স্বার্থপর মানুষ মিস্টার সাইয়ান। আমি কোনোদিন ও আপনাকে মাফ করবো না।আপনার জন্য আমার জীবনটা পুরোপুরিভাবে নষ্ট হয়ে গেছে।আমি আজ কারো কাছে ধোঁকাবাজ হয়ে গেছি।আমার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ আপনি দেখলেন না।স্বার্থপরের মতো নিজের স্বার্থের জন্য আমাকে বিয়ে করেছেন।তাও যদি সারাজীবন সাথে থাকার ওয়াদা করতে।বিয়েটা করেছেন আমার জীবনটা নষ্ট করে দেওয়ার জন্য।আজ থেকে বিবাহিত মহিলাদের সীলমোহর লাগিয়ে দিলেন। আমাকেও বাধ্য করলেন এই বিয়েটা করতে।নিজেই নিজের জীবনের সাথে আমার জীবনটা নষ্ট করে দিলেন।আমি কোনোদিন ও আপনাকে মাফ করবো না!কোনো দিন ও না।এই কথা বলে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে।”
সাইয়ান সারারাত ছাদের দাঁড়িয়ে থাকে।সে এই নিকষকালো রাতের অন্ধকার থেকে পৃথীবি কে দিনের আলোতে আলোড়িত হতে দেখার অপেক্ষায়।
পুরুষ মানুষেরা কান্না করে না।কিন্তু আজ সাইয়ান কান্না করছে।সে জানে এই বিয়েটা সে তার পরিবারের জন্য করেছে আর নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থে।তবে তার জন্য যে আজ দুইটা মেয়ে চোখের পানি ফেলছে।
তার প্রেমিক আর একদিকে আজ কে বিয়ে করা তার নববিবাহিত বউ।সে কখনো চাইনি এমন কিছু করতে।কিন্তু সে বাধ্য হয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।কারণ অনেক আছে সে ভাবতে চাইছে না।তবে আজ সে বুঝে গেছে এ পৃথিবীটা বড়ো বেশি স্বার্থপর।এখানে কেউ নিজের মতো করে বাঁচতে পারে না।কেউ তাদের বাঁচতে দিবে না।কিন্তু সাইয়ান হেরে যাবে না।সে একদিন সব কিছু ঠিক করে দিবে এই আশাতে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছে।
এদিকে ভোরে ফজরের আজান কানে আসতেই সাইয়ান ছাদ থেকে রুমে এসে ঐশানীর দিকে না খেয়াল করে সে ফ্রেশ হয়ে নামাজের জন্য মসজিদে চলে যায়।কারণ নামাজের মাধ্যমে সে মনে শান্তি অনুভব করে।এখানে সে তার মনের সকল কথা তার স্রষ্টার কাছে বলে।এখানে সে নিয়মিত আসে নামাজের জন্য।সাইয়ান আর যাই করুক কখনো নামাজ কাযা দেয় না।
ঐশানীর কানে ফজরে আযান ভেসে আসতেই সেও তাড়াতাড়ি গোছল করে ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করে নেয়।
তারপর এলোমেলো রুমটা কে খুব সুন্দর করে আবার আগের মতো সাজিয়ে রাখে।কারণ ঐশানী চাইছে না তাদের দুজনের অশান্তিপূর্ণ সম্পর্কের জন্য পরিবারের মানুষদের মন খারাপ হোক।ওদের সম্পর্কের আঁচ অন্যদের কষ্ট দিক।
ঐশানী একটা কালো রঙের শাড়ি পড়ে বারান্দাতে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।সাইয়ানের রুমের বারান্দাটা কেমন জানি অদ্ভুত।বারান্দাতে শুধু ডোরবেল ঝুলিয়ে রাখা।এক কোণার সোফাসেট তার সামনে সেন্টার টেবিলের উপর এক জোড়া ময়না পাখি।
ঐশানী চুপচাপ দাঁড়িয়ে ময়নাপাখির জোড়া কে দেখতে থাকে।
চলব……?????