ভালোবাসা বিনিময়,part_06,07
Nishi_khatun
part_06
সাইয়ান বারান্দা থেকে রুমে এসে দেখে রুমের দরজা পুরো খোলা।ঐশানী রুমের মধ্যে নেই।বাথরুম চেক করে দেখে সেখানেও নেই।তাড়াতাড়ি চুপচাপ পুরো বাড়ি খুঁজেও ঐশানীর খোঁজ না পেয়ে সাইয়ান একটু ঘাবড়ে যায়।
হঠাৎ ছাদের কথা মনে হতেই সে ছাদের দিকে দ্রুত গতিতে যায়।
ছাদের লাইট জ্বালিয়ে সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখে ঐশানী সেখানে বসে আছে।
সাইয়ান ঐশানীর পেছন থেকে বলে,”আপনার মতো বেহায়া মেয়ে কখনো দেখি নাই।নিজের বউভাতের রাতে নতুন বউ একা একা ছাদে চলে আসছে।আরে আসবি ভালো কথা আমাকে তো বলে আসতে পারতেন। কমনসেন্স বলে তো কথা আছে কেউ রুমের দরজা ওভাবে খুঁলে রেখে আসে?মানছি এই বিয়েটা সত্যি তবে আমরা তো জানি আমাদের দুজনের কারো কাছে সম্পর্কের কোনো মূল্য নেই।তাই বলে সে কথা যে চার দেওয়ালের বাহিরে আনতে হবে এর তো মানে নেই।”
ঐশানী এবার সাইয়ানের দিকে ফিরে তাকাতেই সাইয়ান চমকে ওঠে।
দ্রুত ঐশানীর পাশে বসে পড়ে,দেখে ঐশানীর হাতের কনুই একটু কেটে গেছে।কপালে একপাশে একটু হালকা কেটে গেছে।
ঐশানী প্রচুর কান্না করার জন্য মেয়েটার চোখ দুটো প্রচুর পরিমাণে লাল হয়ে ফুলে আছে।
সাইয়ান কে হুট করে জড়িয়ে ধরে ঐশানী খুব জোড়ে কান্নাকাটি করতে শুরু করে দেয়।
সাইয়ান কোনো কিছুই বুঝতে পারছে না।আসলে মেয়েটার কি হলো। তার মাঝে কিসের যেনো পিছুটান কাজ করছিল।সে ইচ্ছা থাকলেও ঐশানীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে পারছে না,” ঐশানী এভাবে কান্না করো না,আমি তো আছি,কোনো সমস্যা নেই তোমার।”
এদিকে আবরাজ রুমে এসে রুমের সব জিনিশ পত্র এলোমেলো করে ফেলে।রাগে গজ গজ করতে থাকে।আমাকে ধোঁকা দেওয়া!এই আবরাজ কে ধোঁকা দেওয়া?আমার ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই ওর কাছে?আমার ভালোবাসার এই প্রতিদান দিলো সে?আমাকে অপেক্ষা করিয়ে সে আমার ভাইয়ের বউ হয়ে চলে আসছে এটা কেমন যুক্তি? আমার ভালোবাসার বিনিময় সে ধোঁকা উপহার দিলো?ঐশানী দেখো না তোমার কী হাল করি আমি।সুখে সংসার করার সাধ আমি মিটিয়ে দিবো।
উফফচ্ শুধু থাক্কা দিয়ে কি হয়।চারপাঁচ থাপ্পড় দিলে মনে শান্তি হতো।আচ্ছা এখনো হয়তো ছাদেই আছে।কয়টা থাপ্পড় দিয়ে আসি।”
আবরাজ এতোটা পরিমাণ রেগে আছে যে নিজের হিতাহিত জ্ঞান সে হারিয়ে ফেলেছে।
আবরাজ রুমের দরজা খুঁলতেই আরোভির সাথে ধাক্কা খেয়ে দুজনে পড়ে যায়।
আবরাজ রেগে আরোভি কে বলে,”এই তুই চোখে দেখিস না?না কি ছেলে মানুষ দেখলে তার সাথে ধাক্কা খেতে ইচ্ছা করে।মানে পুরুষের স্পর্শ বুঝি খুব বেশি ভালো লাগে?”
আরোভি উঠে বলে,”ছিঃ আবরাজ ভাইয়া! এসব কোন ধরণের কথা? এমন ভদ্র ঘরের ছেলেরােও দেখছি রাস্তার ছেলেদের মতো কথা বলছেন। জানি না আামাকে নিয়ে আপনার কি সমস্যা। সেই ছোট থেকে সুযোগ পেলেই আমাকে সবার আড়ালে অপমান করতে ছাড়েন না।সবার সামনে একদম ভদ্র। আমাকে নিয়ে আপনার সমস্যা কী?”
আবরাজ বলে,”মুখে মুখে যদি বেশি তর্ক করিশ তো থাপ্পড় দিয়ে তোর গাল ফাটিয়ে লাল করে দিবো।”
এবার আরোভি বলে,”হ্যা তাই করেন।তাতে তো আপনার স্পর্শ পাবো।আমি তো ছেলেদের স্পর্শ পাওয়া জন্য পাগল আপনার ভাষ্যমতে।”
আবরাজ আরোভির চুল ধরে ওর মুখটা নিজের মুখের খুব কাছে এনে বলে,”তোকে কতবার বলছি তোর ছায়াটাও আমার আশেপাশে না দেখি তাহলে আমার রুমে কেনো আসছিস?”
আরোভি অশ্রুসিক্ত নয়নে আবরাজের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছল্যের হাসি দিয়ে বলে,”খালামনির শ্বাসকষ্ট বেড়েছে। তার মেডিসিন আপনার কাছে আছে।
সেই মেডিসিন নিতে আমাকে খালুজান পাঠিয়েছে।”
আবরাজ আরোভি কে ছেড়ে দিয়ে দ্রুত মেডিসিন নিয়ে নিজের মায়ের কাছে চলে যায়।
আরোভি সেখান থেকে মন খারাপ করে ছাদে চলে যায়। ছাদে এসে দেখে ঐশানী সাইয়ান কে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।
আরোভি দ্রুত তাদের কাছে গিয়ে বলে,”ভাইয়া ভাবীর কী হয়েছে?”
সাইয়ান নিজেই জানে না কি হয়ছে সে আরোভি কে কি বলবে?
আরোভি ভাবী কে উদ্দেশ্য করে বলে,”ভাবী তোমাকে ভাইয়া কি বকা দিয়েছে?”
ঐশানী সাইয়ান কে ছেড়ে দিয়ে আরোভির দিকে তাকিয়ে চোখের জল মুছে ভেজা কন্ঠে বলে,”নাহ রুমে ভালো লাগছিল না তাই তোমার ভাইয়াকে না বলে একাই ছাদে এসেছিলাম।কিন্তু ছাদে অন্ধকারের পা পিছলে হঠাৎ করে পড়ে গিয়েছি বলে মাথা নিচু করে বসে থাকে।”
আরোভি বলে,”ভাবী আমাকে ডাক দিতে পারতেন। আর আমাদের ছাদে তো আলোর ব্যবস্থা আছে।রাতে তো মাঝেমধ্যে সবাই ছাদে আড্ডা দেয়।”
সাইয়ান বলে,”আরোভি তুই বোকাবোকা কথা বলছিস কেনো?ঐশানী এবাড়িতে নতুন! এখানে কোনোকিছু চেনে না।বাড়ির কোথায় কি আছে তাই জানে না।ছাদের খবর জানবে কি করে?”
আরোভি নিজেই নিজের মাথায় বাড়ি দিয়ে বলে সত্যি আমি অনেক বোকা।
এরপর সাইয়ান ঐশানী কে নিয়ে রুমে চলে আসে। ঐশানীর কেটে যাওয়া স্থানে ফার্স্ট এইড বক্স থেকে মেডিসিন নিয়ে পরম যত্নে লাগিয়ে দেয়।কপালে একটা ওয়ানটাইম ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেয়।তারপর তাদের পারিবারিক ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে মেডিসিন এনে খাওয়াই দেয়।
ঐশানী আর কোনো কথা না বলে বিছানার একপাশে ঘুমিয়ে পড়ে।
এদিকে সাইয়ানের মনের মধ্যে কেনো জানি খচখচ করতে থাকে।সে দ্রুত আরোভির রুমের দিকে এগিয়ে যায়।আরোভির রুমে গিয়ে দেখে আরোভি সেখানে নেই।সাইয়ানের বুঝে সমস্যা হয়নি আরোভি কোথায় আছে!
সাইয়ান ছাদের এসে দেখে আরোভি ঐ দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে চুপচাপ।
সাইয়ান আরোভির পাশে দাঁড়াতেই আরোভি বলে,”আচ্ছা ভাইয়া আমার যখন বিয়ে হবে আমিও কি তখন তোমাদের সবাই কে ছেড়ে চলে যাবো?”
সাইয়ান বলে,”হ্যাঁ! এটাই তো দুনিয়ার নিয়ম।”
আরোভি বলে,”ভাইয়া তুমি কি সুখে আছো?”
সাইয়ান আরোভি কে বলে,”হঠাৎ এমন প্রশ্ন করছিস।কেনো?”
আরোভি বলে,”ভাইয়ের জন্য কি চিন্তা করাটা স্বাভাবিক নয়?আর যেখানে তুমি তোমার এতোবছরের সম্পর্কটা ভেঙ্গে দিলে!”
সাইয়ান বলে,”আমি সম্পর্ক ভাঙ্গি নাই।তবে সেই সম্পর্কের কোনো পরিণাম দিতে পারি নাই এটাই আমার ব্যর্থতা। ”
আরোভি কান্না করে নিজের ভাইকে জড়িয়ে ধরে।
সাইয়ান বলে,”আরো তোর কি মন খারাপ? কেউ কিছু বলছে?”
ভাইয়ের বুকে মাথা রেখে আরোভি বলে,”আমার ভাইয়ার মনের মধ্যে যে ঝড় তুফান যাচ্ছে তা যদি বোন হয়ে না বুঝতে পারি তাহলে কেমন বোন আমি?আমার মন সত্যি খুব খারাপ ভাইয়া।”
সাইয়ান উদ্বিগ্ন হয়ে বলে,”কি হয়েছে তোর?”
আরোভি বলে,”বাবার এমন অবস্থা তোমার এমন অবস্থা। এবাড়িতে কেউ ভালো নেই।সবার জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে।এসব কিছু কবে ঠিক হবে ভাইয়া?”
সাইয়ান বলে,”আমাকে নিয়ে যতো সমস্যা ছিলো।আমি তো সব সমাধান করে দিয়েছি। ইনশাআল্লাহ বাবা সুস্থ হয়ে উঠলে বাড়ির পরিবেশটাও আগের মতো সুন্দর হয়ে যাবে।”
সাইয়ান আরোভির কপালে চুমা দিয়ে বলে,”যা তোকে এতো বেশি চিন্তা করতে হবে না।বেশি চিন্তা করলে রাতে ঘুমাতে পারবি না। সকালে মুখটা দেখতে পেত্নীর মতো লাগবে।”
আরোভি কোনো কিছু না বলে চুপচাপ নিজের রুমে চলে যায়।
সাইয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চুপচাপ নিজের রুমে এসে বিছানাতে শুয়ে ঘুমিয়ে যায়।
প্রতিদিনের মতো ফজরে নামাজের জন্য মসজিদে চলে যায় সাইয়ান। মসজিদে গেলে তার দাদাভাই এর সাথে দেখা হয়।তবে দাদাভাই আগের মতো এতো বেশি কথা বলে না।
সকালে বাড়িতে ফিরে এসে দেখে আজ বাবা ছাড়া বাড়ির সবাই নিচে ড্রয়িংরুমে বসে কথা বলছে।মধ্যরাত থেকে বাবার শরীরটা অনেকটা ভালো সে নিজেই তার স্ত্রী কে বলেছে।
সাইয়ানের দাদী মা আজ অনেকদিন পর নিজের রুমের বাহিরে এসেছেন।
সাইয়ান দাদীমা’র পাশে বসে গল্প করতে থাকে।
এদিকে ঐশানী ঘুম থেকে উঠে দেখে অনেকটা দেড়ি হয়ে গেছে আজ।তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে সে একটা সুতির লাল জামদানি শাড়ি পড়ে নিচে যাবার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বেড়িয়ে পড়ে।
চলবে……
#ভালোবাসা_বিনিময়
#Nishi_khatun
#part_07
ঐশানী এক হাতে শাড়ির কুচি ধরে আছে অন্য হাতে সিঁড়ির রেলিং ধরে আস্তে আস্তে নামতে থাকে। লাস্ট সিঁড়ি থেকে নামতে ঐশানী সামনে হুড়মুর করে পড়ে যেতে লাগে। ঠিক সে সময় আরোভি উপর যাচ্ছিল ভাবীকে ডাকতে কিন্তু ভাগ্যটা ভালো যে ঐশানী কে আরোভি পরে যাবার আগেই ধরে ফেলে।
সাইয়ান তাড়াতাড়ি ড্রয়িংরুম রুম থেকে ছুটে চলে আসে।ঐশানী কে বলে,”তুমি ঠিক আছো তো তোমার কোথাও লাগে নাই তো?”
ঐশানী একবার সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সিঁড়ির সাইডে আবরাজ দাঁড়িয়ে আছে। ঐশানী আবরাজ কে দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়। তারপর সাইয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,”আসলে শাড়ি পরার অভ্যাস নেই তো!তাই শাড়িতে পা বেঁধে পড়ে যাচ্ছিলাম।”
তখন সাইয়ানের দাদী মা এসে বলে,”নাত বৌ তুমি যে নতুন বউ তাই তোমাকে শাড়ি পরতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই এবাড়িতে।”
ঐশানী এমন কথা শুনে হা করে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আয়েশা বেগম ঐশানীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,”মা তোমাাকে এটা বোঝাতে চাইছে যে, তুমি যে ড্রেসআপে নিজেকে সুরক্ষিত মনে করো সেই ড্রেস পরতে পারো।শাড়ি না হয় শখের বসে পরবে যখন ইচ্ছা হয়।”
ঐশানী এবার তার দাদী শাশুড়ির দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে উনি গোলগাল আলখাল্লা টাইপের জামা পড়া।মাথায় সুন্দর করে ওড়না দিয়ে ঢেকে রাখা।
এবাড়িতে প্রতিটা মহিলাদের মাথায় সুন্দর করে কাপড় দিয়ে রাখা।
এবার আয়েশা বেগম একটু উদ্বিগ্ন হয়ে সাইয়ানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,”বউমার কপালের এখানে কি হয়েছে?”
সাইয়ান ভ্রু কুঁচকে ঐশানীর দিকে তাকিয়ে থাকে।
ঐশানী তখন বলে,”আসলে আম্মা কাল রাতে ছাদে পড়ে গিয়েছিলাম।তখন একটু ব্যাথা পেয়েছি। এটা তেমন কিছু নয়।উনি মেডিসিন দিয়েছে আমার কোনো ব্যাথা নেই ভালো আছি।”
সবাই তো এবার সাইয়ান কে বকা দিতে যাবে ঠিক তখন ঐশানী আবারো বলে,”প্লিজ কেউ উনাকে কিছু বলবেন না।ওনার কোনো দোষ নেই।আমি তাকে না বলে একলা গিয়েছিলাম।”
তখন আবরাজ পেছন থেকে এসে বলে,”বাব্বাহ্ ভাইয় তোমাদের দুজনের প্রেম দেখে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। ”
সাইয়ান ভ্রু নাচিয়ে বলে,”মানে কী বলতে চাইছিস তুই?”
আবরাজ বলে,”দু দিন বিয়ে না হতেই তোমার বউ যে ভাবে তোমার দিওয়ান হয়ে গেছে কি আর বলবো।মনিমার একটা প্রশ্ন শুনে তোমাকে যে ভাবে বাঁচানোর চেষ্টা করছে তাতে বোঝায় যায় সে তোমাকে কতোটা ভালো বাসে।”
আরোভি তখন ঐশানী কে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমার ভাবী আমার ভাইকে ভালো না বেসে কি আপনাকে ভালোবাসতে যাবে? স্বামীর পাশে সব সময় ছায়ার মতো থাকা স্ত্রীর উচিৎ। আমার ভাবী সেই কাজ করছে তাই না ভাবী।”
ঐশানী শুধু একটু সৌজনমূলক হাসি দেয়!
এরপর আয়েশা বেগম ঐশানী সাথে করে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে দেয়।তারপর সবার সাথে খবার খেয়ে নিচে কিছু সময় গল্প করতে থাকে বাড়ির সকলে।
এমন সময় সাইয়ানের পিএ জিহান সেখান চলে আসে।
জিহান কে দেখে সাইয়ান বলে,”আরে তুই আরো চারপাঁচ দিন পর আসতিস। আজ কেনো আসছিস? ”
জিহান রেগেমেগে বলে,”নিজে হুট করে বিয়ে করে আরামে ঘরে বসে আছে। তার আরামের ব্যবস্থা করার জন্য আমি যে কয়দিন পাগলের মতো কাজ করছি তা স্যারের চোখে পড়ে না?”
সাইয়ান বলে,”দেখ সব ঠিক আছে তবে স্যার বলে ডাকবি না!”
ঐশানী মনে মনে এটা ভেবে অবাক হয়।সাইয়ান তার পিএর সাথে এতোটা ফ্রেন্ডলি কথা বলছে কি করে?একজন পিএ তার স্যারের সাথে এমন রাগারাগি করে কথা বলতে পারে না।
তখন দাদী মা বলেন,”আরে জিহান দাদু ভাই! তোমরা এভাবে বাচ্চাদের মতো রাগারাগি করছো কেনো?”
জিহান বলে,”দাদী মা আপনার নাতিছেলে তো হিরো হয়ে বসে আছে।তার পারসোনাল সেক্রেটারির দায়িত্ব আমার।তার ব্যবসা দেখার দায়িত্ব আমার।কেন আমি কি মানুষ না।এখন সে বিয়ে করছে তার দায়িত্ব সব তাকে বুঝে নিতে বলেন। আমাকে আমার দায়িত্ব থেকে মুক্তি দিন।”
আয়েশা বেগম বলে,”আচ্ছা মুক্তি পাবে সমস্যা নেই।তোমার আর আবরাজের বিয়ের পর দুজনের সব দায়িত্ব থেকে মুক্তি দিবো।”
আবরাজ বলে,”থাক মনি মা আমার বিয়ে করার ইচ্ছা মরে গেছে।আমি বিয়ের পিঁড়িতে আর বসতে চাইছি না।”
আরোভি আবরাজের কথা শুনে মুখ ফসকে বলে ফেলে,”কেনো আবরাজ ভাই কোনো সুন্দরি আপনাকে ছ্যাঁকা দিয়ে বাঁকা করে দিয়েছে না কি?যে ছেলে দুদিন আগেও বিয়ে বিয়ে করতো আজ সে বিয়ের করবে না বলছে।”
আবরাজের মা বলে,”আরোভি তুমি চুপ থাকো।আমার ছেলে অতি ভদ্র তাই নিজের বিয়ের কথা সবার সামনে বলতে পারছে না।”
সেখানে উপস্থিত সবাই এমন কথা শুনে হাসতে শুরু করে।
আবরাজ তো আরোভির দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।আবরাজের সেই দৃষ্টি আর কারো চোখে না পরলে একজনের চোখে ঠিকি ধরার পড়ে।
আরোভি আবরাজের চোখে চোখ পড়তেই মাথা নিচু করে রাখে।আজ কপালে খুব খারাপ কিছু আছে সে বুঝতে পারছে।
সাইয়ান জিহান কে ঐশানীর সামনে এনে বলে,”ঐশানী এ হচ্ছে আমার বন্ধু প্লাস বেস্ট ফ্রেড। আমার সুখ-দুখের দিনের বন্ধু।”
আয়েশা বেগম বলে,”এ হচ্ছে আমার আরেক ছেলে।”
ঐশানী বলে,”আচ্ছা আরোভি যে বলেছিল তার আরেটা ভাই আছে সে কোথায়? তাকে তো দেখলাম না?”
আয়েশা বেগম বলে,”সে দেশের বাহিরে থেকে লেখাপড়া কমপ্লিট করছে। সে এখানে থাকতে পছন্দ করে না। তাই আমরা তাকে এখানে আশার জন্য জোর করি না।”
জিহান সাইয়ানের বাবার সাথে দেখা করে তারপর সাইয়ানের সাথে ছাদে বসে আড্ডা দেয়।
জিহান সাইয়ান কে বলে,”বিয়ে তো করেছিস ভালো কথা তবে তুই ওর জন্য কি কিছু ভেবেছিস?যে তোর জন্য এতো গুলো বছর অপেক্ষা করেছে তাকে এমন মাঝপথে একা ছাড়া কি উচিৎ হয়েছে?”
সাইয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,”তুই আমার সবটা জানিস।তারপর ও আমার কাছে কোনো উওর কি ভাবে আশা করছিস? আমি সত্যি জানি না আমার কি করা উচিৎ। এখন সবাইকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমার।”
জিহান বলে,”তুই কি ঐশানী কে সুখি করতে পারবি?তুই যেখানে নিজে সুখি না। সেখানে অযথা মেয়েটাকে বিয়ে করে এমন দোটানাতে না ফেললেই পারতিস। ”
সাইয়ান বলে,”ঐশানী স্থানে অন্য যে কোনো মেয়ে থাকতো। তবে আমি যাকে ভালোবাসি তার স্থান নেই কেনো আমার জীবনে বলতে পারিস। ”
এমন সময় ঐশানী ছাদে ওদের জন্য নাস্তা নিয়ে যায়।
ঐশানী কে দেখে দু জন চুপ হয়ে যায়।সাইয়ান বলে,”বাড়ি আর কেউ ছিলো না যে।তোমাকে আসতে হয়েছে!”
ঐশানী বলে,”আসলে সবাই ব্যস্ত। আর আপনি আমার স্বামী। তাই স্বামীর সেবা করার জন্য সবাই আমাকে ঠেলে আপনার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে বার বার।”
সাইয়ান আর কোনো কথা বলে না।ঐশানী এতে অবমানিত বোধ করে সোজা নিজের ঘরে চলে আসে।
এদিকে রাতে বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পরার পর আবরাজ আরোভির রুমে যায়।আরোভি এতো রাতে আবরাজ কে দেখে ওর পিলে চমকে ওঠে।
আবরাজ আরোভির গালে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে বলে,”তোকে কতোবার বলছি আমার কোনো বেপারে নাক গলাবি না।তারপর ও বাড়ির সবার সামনে কেনো আসিস কথা বলতে?জানিস না কেনো আমি তোকে সহ্য করতে পারি না?”
আরোভি কান্না করতে করতে বলে,”না জানি না!কেনো আপনি আমাকে অপছন্দ করেন!কী সমস্যা আপনার।আমাকে বলতে সমস্যা কোথায় আপনার!”
আবরাজ আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে বলে,”আর কখনো যদি তর্ক করতে আশিস তাহলে তোকে জীবন্ত কবর দিয়ে দিবো আমি।”
আবরাজ চলে যাবে তখন আবরাজের হাত ধরে আরোভি বলে,”আমার ভাই যদি জানতে পারে আপনি আমার সাথে এমন খারাপ ব্যবহার করেন তাহলে সে আপনাকে জীবন্ত রাখবে তো?”
আবরাজ হাত ঝাড়া দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”তুই জীবনেও আমার নামে বিচার দিতে যাবি না তোর ভাইয়ের কাছে তা খুব ভালো করে জানি।তুই যদি বিচার দিতে জানতিস তাহলে ছোট বেলা থেকে দিতিস। ”
আবরাজ চলে যায়।আরোভি দরজা বন্ধ করে হাটুর ভাজে মুখ গুঁজে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। সম্পর্ক কে সম্মান করার মানে এই নয় যে তার সব অপমান সহ্য করতে হবে।
এইভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায়। সাইয়ানের বাবা এখন মোটামুটি অনেকটা সুস্থ। ডাক্তার বলেছে সে কিছুদিন পর থেকে অফিসে যেতে পারবে।
ঐশানীর এই বাড়ির সবার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে শুধু মাত্র সাইয়ানের সাথে ছাড়া।
সেদিনের পর থেকে ঐশানী আর সাইয়ানের মাঝে দূরত্ব বেড়েছে। যেখানে দূরত্ব কম হবার কথা সেখান দূরত্ব বাড়াটা কি উচিৎ?
‘
‘
:
চলবে……