ভালোবাসা বিনিময়,part_20,part_21 last part

0
1955

ভালোবাসা বিনিময়,part_20,part_21 last part
Nishi_khatun
part_20,part_21 last part

ঐশানী কিছু সময় চুপচাপ চোখেরজল ফেলবার পর একটা কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়।
স্বপ্ন হোক আর বাস্তবতা সাইয়ান আমার কাছে থেকে মুক্তি চাই। জোর করে কারে রুমে থাকা সম্ভব তবে জোর করে মনের মাঝে জায়গা করা সম্ভব না।
এটা সত্যি কি মিথ্যা আমি তা জানতে চাই না। হয়তো আমার কল্পনা নয়তো বাস্তবতা। সে যাই হোক আমি আর সাইয়ানের জীবনে ফিরে যাবো না। আমি আমার ভালোবাসার বিনিময় তার কাছে কিছু চাই না। শুধু এতোটুকু চাই সে আমার থেকে দূরে যেনো ভাল থাকে।

ঐশানী নিজের হাতে থাকা সুইটা কে এক টানে হাত থেকে খুঁলে ফেলে। এভাবে সুঁই খোঁলার ফলে ঐশানীর হাত থেকে গলগল করে রক্ত ঝরে পড়ে থাকে। সাদা চাদরে লাল টকটকে রক্তের দাগ স্পষ্ট ফুটে আছে। ঘরের মেঝেতে অনেকটা রক্তে মেখে গেছে। ঐশানীর সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। সে চুপচাপ নিরবে হসপিটালের বাহিরে চলে আসে। ভাগ্যিস ওর কেবিনের টেবিলের উপর ফোনটা ছিলো। হসপিটালের সামনে একটা বিকাশের দোকান থেকে টাকা ক্যাশ আউট করে নিজের গন্তব্যে রওনা দেয়।

ঐশানী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আর কোনোদিন ও নিজের বাবা-মা’র বাড়িতে ফিরে যাবে না। যে বউয়ের স্বামী মনে জায়গা হলো না! তার বাবার বাড়িতে ফিরে যাওয়ার ও কোনো অধিকার নেই।

এদিকে ঐশানী চলে যাবার কিছু সময় পর আবরাজ ঐশানী কে দেখতে ওর কেবিনে আসে। এখানে এসে দেখে রুমটা ফাঁকা। ঐশানী নেই! তবে বিছানা আর মেঝেতে রক্ত দেখে আবরাজ ভয় পেয়ে যায়। পুরো হসপিটালে ঐশানী কে খোঁজে তবে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি। এবার আবরাজ একটু ভয় পেয়ে যায়। আল্লাহ মেয়েটার কিছু হলো না তো এভাবে কোথায় চলে গেছে।

আরোভি রুমের ভেতরে প্রবেশ করে দেখে আবরাজ কেমন করছে। আরোভি কে দেখার সাথে সাথে ওর দু কাধে হাত রেখে জোড়ে জোড়ে বলে ওঠে,”আরোভি ঐশানী নেই। কোথাও চলে গেছে।”

আরোভি শান্ত কন্ঠে বলে,”তার সাথে এতো কিছু ঘটে যাবার পরেও সে কোন কারণে এখানে থাকবে বলতে পারেন?”

আবরাজ বলে,”কি বলতে চাইছো তুমি?”

আরোভি এবার নিরব দৃষ্টিতে আবরাজের চোখে দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি আপনার ভালবাসা বুঝতে পারি নাই। ধোঁকা আমি দিয়েছি আপনাকে কিন্তু এসবের জন্য আপনি আমাকে না শাস্তি দিয়ে ঐশানী কে মানুষিক ভাবে কষ্ট দিয়েছেন। অবাক হবার কিছুই নেই। জানি অফিসের সবার সামনে যে মেয়েকে প্রপোজ করেছিলেন সে মেয়েটা ঐশানী আপু ছিলো।
আচ্ছা আমার বয়স কতো একবার ও খেয়াল করে দেখছেন? এবার তো মাত্র আঠারো প্লাস হয়েছে। একটা পনেরো ষোল বছরের মেয়েরা ভুল করতেই পারে। তাদের এ সময় ভুল মানুষকে পছন্দ হয়। এটা বয়সের দোষ। আমারো ভুল হয়েছে। স্কুলে থাকাকালীন আমারো কাউকে প্রচণ্ড পরিমাণে ভাল লাগতো। তাকে নিয়ে পাগলামি করতাম। আপনি না কি আমাকে ভালোবাসতেন। তাহলে কেনো একটি বার ও আমাকে নিজের ভালোবাসা বোঝাতে আসেন নাই। কেনো আপনার অনুভূতি গুলো আমাকে অনুভব করান নি? আপনি তো আমার মতো ইনম্যাচুর ছিলেন না। নিজে তো একজন বুঝদার মানুষ। তবে কিসের জন্য আমার বয়সের দোষটাকে আমার জীবনের সব থেকে বড় দোষ মনে করলেন।”

আবরাজ চুপচাপ আরোভির কথা শুনছে।কারণ আরোভি এভাবে সহজে তার সামনে কখনো দাঁড়ায় না। যতোটা সম্ভব দূরত্ব রেখে কথা বলে।

আরোভি আবারো বলে,”আমি ছোট থেকে আপনাকে ভয় করি। কারণ আমার সব কাজে আপনি বাধা দিতেন। নিজের সম্পত্তি মনে করতেন আমাকে। কখনো ভালোবেসে একটিবারের জন্য আমাকে বোঝাতে আসেনি যে আরোভি এসব ভুল কাজ তোমাকে করতে হবে না। আপনার স্নেহ, মায়া ভালবাসা গুলো আপনার রাগের জন্য আমার কাছে বিরক্তিকর লাগতো। তবে পছন্দের মানুষের কাছে রিজেক্ট হবার পর আমার আশেপাশে আপনি ছিলেন। কিন্তু তখন আপনি আমার সাথে কি করলেন কিছুদিন সহানুভূতি দেখাইলেন। আগলা ভালবাসা দিলেন। যখন বুঝতে পারলাম ছোট থেকে আপনার শাসন গুলো আমার জন্য ভালোবাসা ছিলো। ভালোবাসা আর ভালোলাগার পার্থক্য শিখলাম। আপনাকে নিজের দুনিয়া মনে করতে শুরু করলাম তখন আপনি আমাকে ধোঁকা দিলেন। কেনো? আমি আগে কেনো আপনার ভালবাসা বুঝতে পারি নাই। অন্য কারো জন্য কেনো পাগল ছিলাম? আরে যে ভালবাসতে জানে সে অপেক্ষা করতে পারে। তবে আপনি অপেক্ষা না করে আমাকে কষ্ট দিতে আরেকটা মেয়ের জীবনে প্রবেশ করলেন। সবকিছু করেছেন আমার সামনে। আপনার সব কাজ গুলো দূরে থেকে দেখেছি আর সহ্য করেছি। যখন আর সহ্য করতে পারছিলাম না। তখন বাবা আমার কষ্টের কাহিনী বুঝতে পেরে সাইয়ান ভাইকে বাধ্য করে ঐশানী আপুকে বিয়ে করতে। তবে ঐশানী আপুর সাথে ভাইয়ার বিয়েটা বাবা নিজের স্বার্থের জন্য দিয়েছিল। কারণ সে সানাই আপুকে কখনো তার বাড়ির বউ মানতে পারবে না। দেখুন কি আফসোসের কথা আমার ভাইটা আজ পর্যন্ত জানতে পারলো না তার স্ত্রী আর বোনের সাথে কতো কাহিনী ঘটে গেছে। বাবা তো এমন ভাবে সব কিছু করেছে” যাতে সাপ ও না মরে লাঠিও না ভাঙ্গে।”
দেখুন এতো কিছু করার পরেও কেউ সুখি না। তবে আজ ভাবী যেমন আমাদের জীবন থেকে চলে গেছে ঠিক তেমন আমিও আপনার জীবন থেকে বহুদূর চলে যাবো। তখন থাকবেন আপনি একা একা। কারো উপর আর প্রতিশোধ নিতে হবে না।”

আবরাজ কে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে কেবিনের বাহিরে চলে আসে।

আবরাজ সেখানে পাথরের মতো জমে গেছে। যে মেয়ে কম কথা বলতো আজ সে মেয়ে তাকে তার চোখে আঙ্গুল দিয়ে ভুল গুলো দেখিয়ে দিয়ে গেছে। আসলে আমি হয়তো মানুষিক সমস্যা ভুগছি। নয়তো যাকে ছোট থেকে নিজের মনে করি তার বয়সের দোষটাকে মানতে পারি নাই। আরোভি তার মনের সব কথা আবরাজ কে বলছিল এটাই কি ওর দোষ? সত্যি বলাটা যদি দোষের হয় তাহলে ধোঁকা দেওয়াটা কে কি বলবো? এখন তো মনে হচ্ছে আমি নিজেই উন্মদ পাগল। যে নিজের জিদের জন্য দুটো মেয়েকে কষ্ট দিয়েছি। যে ভালবাসে তাকে অপমান আর যে সম্মান করে তাকে অসম্মান। আমার তো এখন কোনো মুখ নেই তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর।

এদিকে হসপিটালের সব কাজ সম্পন্ন করে বাড়িতে ফিরে এসে সবার উদ্দেশ্যে আরোভি বলে,”ভাবী হসপিটাল থেকে কোথাও একটা চলে গেছে। তার বাবার বাড়িতে খোঁজ নিয়েছি সেখানে ভাবী যায় নি।”

আরোভি আর কোনো কথা না বলে নিজের রুমে চলে যায়।

বাড়ির সকল মানুষেরা তো একদম চুপচাপ। এসব কি হচ্ছে তাদের সাথে?

সাইয়ানের বাবা এবার বিলাপের সুরে বলতে থাকে এসব কিছু আমার জন্য হচ্ছে। আমি যদি আগেই সানাই আর সাইয়ান কে মেনে নিতাম তাহলে আজ কাহিনী এতো দূরে যেতো না।

সাইয়ানের দাদা-দাদী তার বাবার পাশে বসে বলে,”একদম এসব নিয়ে অযথা কষ্ট পেয়ে লাভ নেই। যা হবার হয়ে গেছে। এখন সব কিছু কিভাবে ঠিক করা যায় সে চিন্তা করো সবাই।”

চলবে…..

ভালোবাসা বিনিময়
Nishi_khatun
part_21(last part)

আজ প্রায় একমাসের বেশি হয়ে গেছে। এই একমাসে সবকিছু বদলে গেছে। ঐশানীর কোনো খোঁজ খবর নেই।

সাইয়ান একমাসে বুঝতে পেরেছে কারো জন্য অনুভূতি তৈরি হতে সারাবছর লাগে না। কয়েক মূহুত্ব যথেষ্ট। তবে সে আজকাল প্রচুর পরিমাণে ঐশানী কে মিস করে। আসলে সময়ের খেল বোঝা বড় দায়। সময় আর ভাগ্য চেয়েছিল বলে তাদের জীবনে এতো কাহীনি ঘটেছে। সেই যে হসপিটালের রুমে শেষ দেখা হয়েছিল। তারপর মেয়েটা যে কোথায় গেলো তার বিরহবেদনা আর সাইয়ানের সহ্য হচ্ছে না। সে নানাভাবে ঐশানী কে খোঁজার চেষ্টা করেছে। তবে তার সব চেষ্টা বৃথা গেছে। যে নিজে আড়ালে থাকতে চাই তাকে খোঁজা বড় কষ্টের কাজ। ঐশানী সবার থেকে আড়ালে চলে গেছে। এখন সে নিজে সবার সামনে না আসলে তাকে খুঁজে পাওয়াটা কষ্টকর। এদিকে ঐশানীর জন্য বাড়ির সবার মন খারাপ। বিয়ের পর থেকে মেয়েটা একটু সুখের দেখা পায়নি। যদিও সাইয়ান কখনো অপমান করে নাই। তার যথেষ্ট খেয়াল রাখতে চেষ্টা করেছে। তবে ঐ যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে বন্ধনটাই তো গড়তে পারে নাই।

এদিকে আরোভি আবরাজ কে ছেড়ে বহুদূরে চলে গেছে। সাইয়ান হসপিটাল থেকে বাড়িতে আসার পর তার অসুস্থতার খবর শুনে ছোট ভাই এক সপ্তাহের জন্য দেশে আসে। সে যাবার সময় আরোভি কে তার সাথে করে নিয়ে গেছে। আরোভি নিজের বাকিটা লেখাপড়া বিদেশে কমপ্লিট করবে।
আবরাজ আরোভির কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়েছিল।
আরোভি তাকে ক্ষমা করে দেয় তবে তার জীবনে ফিরে আসবে সে চুক্তিতে নয়।
আরোভি আবরাজ কে বলে,”আপনি যখন আমার অনুভূতি আর ভালবাসার সম্মান রাখতে পারেন নাই। তখন দ্বিতীয় বার আমি আপনাকে সে সুযোগ দিতে পারবো না। আমি নিজের জন্য বাঁচতে চাই। যদি আমাকে সত্যি ভালোবাসতে পারেন তাহলে অপেক্ষায় থাকবেন। যদি সম্ভব হয় তাহলে হয়তো সব কিছু নতুন ভাবে শুরু করতে ফিরে আসবে নয়তো না। তবে হ্যাঁ সেসব পরের কথা। এখন আপনার থেকে দূরে যাবার সিদ্ধন্ত যখন নিয়েছি তখন তা আর বদলাতে পারবো না।”

আবরাজ সেদিন প্রচুর কেঁদেছিল। তবে তার কান্নায় আরোভি নিজেকে শক্ত করেছে। নিজেকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে যেতে দেয় নি। ভালবাসার বিনিময়ে সে যা ফেরত পেয়েছিল তা হজম করতে সময় লাগবে। তার সব কিছু গুছিয়ে নিতেও সময়ের দরকার।

আরোভি অনেক আগেই তার মেজ ভাইয়ার সাথে যোগাযোগ করে। সর বিদেশে গিয়ে লেখাপড়া করতে চাই। তাই তার ভাই কাউকে কিছু না বলে চুপচাপ আরোভি কে নিয়ে যাবার সব ব্যবস্থা কমপ্লিট করে।
আর সাইয়ান কে দেখতে এসে আরোভি কে সাথে করে নিয়ে যায়।

সাইয়ানের বাড়ির কেউ কিছুই বলে না। আরোভি যদি সেখানে গিয়ে সুখে থাকে তাহলে তাদের কোনো সমস্যা নেই। আর নিজের ভাইয়ের দায়িত্বে তো থাকবে।

সাইয়ানের ছোট ভাই যাবার সময় প্রচুর আফসোস করে। সে বলে, “ভাই তোর দুইটা বউয়ের একটা বউ কে দেখতে পাইলাম না। এমন আফসোস কোথায় রাখি। একজন না হয় মৃত্যু অন্যজনের খবর তুই স্বামী হয়ে জানিস না। এমন স্বামীর কি বা মূল্য আছে? যে তার বিয়ে করা স্ত্রীর প্রতি দায়িত্বপালনে ব্যর্থ। থাক ভাই তোর কাটা ঘাঁয়ে নুনেরছিটে দিতে চাইনা।'”

সাইয়ান তাচ্ছিল্যের সাথে বলে, “নুনেরছিটে দিয়ে বলছিস দিতে চাই না! সমস্যা নেই আমি যা করেছি তার জন্য এসব কথা সামান্য বেপার।”

এরপরে তারা চলে যায়। আরোভি আর ঐশানী বাড়িতে নেই বলে বাড়িটা একদম ফাঁকাফাঁকা লাগে।

আবরাজ ও তার বাড়িতে ফিরে গেছে। নিজের কাজের জন্য সে অনুতপ্ত। তবে নিজেকে সামলে নিয়েছে। সে আগের মতো নিজেকে কাজের মাঝে ব্যস্ত রাখতে শুরু করেছে।

এদিকে হঠাৎ করে সাইয়ানের মনে পড়ে সানাই এর সেই শান্তির নীড়ের কথা। যেখানে সানাই বড় হয়েছে।
তবে সাইয়ান কখনো সেখানে যায়নি। তার যাবার সময় হয়ে ওঠে নাই কখনো। সানাই এর মুখে শুনেছে সেখানে গেলে না কি মনের শান্তির খোঁজ পাওয়া যায়। ওখানে বড় হওয়া প্রতিটা বাচ্চার কাছ থেকে নতুন করে বাঁচার মানে শেখা যায়।
সানাই অনেকবার তাকে সেখানে যেতে বলে। আজকাল মন এতো খারাপ থাকে তাই সাইয়ান ভাবে সেখানে থেকে একবার ঘুড়ে আশার দরকার।

তাই সাইয়ান সেখানের বাচ্চাদের প্রয়োজনমত সব কিছু কিনে নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে রওনা দেয়।

শান্তি নীড় শহর থেকে অনেকটা দূরে গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে। সাইয়ানের গাড়িটা গ্রামের মেঠো পথে আস্তে আস্তে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। অবশেষে একটক বড় নীল রং এর গেটের সামনে এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে বাহিরে এসে দেখে গেটের উপর সুন্দর করে লেখা আছে “শান্তির নীড়।”

সাইয়ান রাস্তার আশেপাশের পরিবেশটা একটু ভাল করে দেখে বলে সত্যি এটা শান্তি নীড়।চারিপাশে গাছপালা দিয়ে ঘেরা। রাস্তার একপাশে খালের মতো।এখন ভেতরে প্রবেশ করার পালা।

গেট টা হালকা খোঁলা ছিলো। সাইয়ান ভেতরে প্রবেশ করতেই ওর কানে অনেকের হাসির আওয়াজ ভেসে আসতে থাকে। সেদিকে একটু এগিয়ে গিয়ে দেখে অনেক গুলো মেয়েরা একসাথে কানামাছি খেলা করছে। তাদের মাঝে একটা বড় মেয়ে আছে তার চোখে কাপড় বাধা। মেয়েটার চেহারা দেখা যাচ্ছে না শুধু পেছনের লম্বা চুল গুলো কোমর ছাড়িয়ে ঝুলে আছে। বাতাসের তালে তালে সে চুল গুলো দোল খাচ্ছে।

হঠাৎ করে শান্তির নীড়ের একজন কর্মচারী সাইয়ানের কাছে আসে। সাইয়ান কে আপনি একটু আগে আমাদের ফোন করেছিলেন?

সাইয়ান তার সাথে কথা বলতে শান্তির নীড়ের অফিসের দিকে চলে যায়। সাইয়ান তার গাড়ি থেকে সব কিছু শান্তি নীরের দায়িত্বে থাকা মানুষদের বুঝিয়ে দেয়।

এরপর সাইয়ান কে সেখানে কেয়ারটেকার সব কিছু ঘুড়িয়ে দেখাতে থাকে। সবাই কোথায় থাকে,কোথায় রান্নাকরা হয়,কোথায় সবাই লেখাপড়া করে এসব কিছু দেখাতে থাকে।

হঠাৎ সাইয়ান বলে ওঠে এখানে সানাই থাকতো? তার রুম কোনটা?

সাইয়ান কে সাথে করে তারা সানাই এর রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। কেয়ারটেকার বলে,”সানাই এর রুমে এখন আরেকজন মেয়ে থাকে।”

সাইয়ান রুমের ভেতরে প্রবেশ করে সব কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে।

সাইয়ান ভাবে এই ছোট রুমটা না কি সানাই এর পুরো দুনিয়া ছিলো। এসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

এমন সময় বাহিরে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ আসতে শুরু করে। সাইয়ান কেয়ারটেকারের সাথে দ্রুত সেদিকে এগিয়ে যায়।

সব মেয়েরা যেখান কানামাছি খেলা করছিল তার পাশে একটা বড় পুকুর আছে। সে পুকুরে একজন পড়ে গেছে। সে না কি সাতার জানে না।

সাইয়ান দ্রুম সেখানে এগিয়ে গিয়ে সোজা পুকুরে ঝাঁপ দেয়।দ্রুত মেয়েটাকে পুকুরথেকে পাড়ে তুলে আনে।চুল দিয়ে পুরো মুখ ঢেকে আছে। দ্রুত চুল গুলো মুখ থেকে সরাতেই সাইয়ান চমকে ওঠে।মুখ থেকে বেড়িয়ে আসে ঐশানী। ”

কয়েকজন মহিলারা দ্রুত এগিয়ে এসে ঐশানীর পেট থেকে পানি বাহির করার ব্যবস্থা করে। তারপর তারা ঐশানী কে ধরে রুমের ভেতরে নিয়ে যায়।

সাইয়ান তো পুরো শকড।এটা কি হলো যাকে এতোদিন ধরে পাগলের মতো খুঁজছি সে এখানে এসে মনের সুখে আছে।

কিছুসময় পর একজন মহিলা এসে সবাই কে বলে ইয়াসমিন এখন ভালো আছে।

সাইয়ান আর কোনে কিছু ভাবতে পারছে না। সে সোজা ঐশানীর রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

ঐশানী একটা কালো থ্রিপিস পড়ে রুমের জানালা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ভেজা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে।
হঠাৎ রুমে কে প্রবেশ করছে তা দেখতে পেছনে ফিরতেই সে চমকে ওঠে।

সাইয়ান ঐশানীকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো করতে থাকে।
সাইয়ান ঐশানীর কপালের সাথে নিজের কপাল রেখে বলতে থাকে।তোমার এতো সাহস আসে কোথায় থেকে? সাইয়ানের বউ হয়ে বিনা অনুমিত তে আমার থেকে দূরে আসার। জানো তোমাকে এতোদিন পাগলের মতো খুঁজতেছি। কোথায় পাচ্ছিলাম না।
আচ্ছা রাগ আমার উপরে করেছো তাই বলে আমাকে শাস্তি দিতে এতো দূরে চলে আসবে।জানো আমি তোমাকে নিয়ে কতোটা দুষ্চিন্তা করতাম। এই বুঝি সানাই এর মতো তোমাকে হারিয়ে ফেলবো।”

ঐশানী সাইয়ান কে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে ঠেলে দিয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে অবাক,, এই ছেলে তার জন্য কান্না করছে?

ঐশানী অভিমানের সুরে বলে,”কেউ একজন আমার থেকে দূরে যেতে চেয়েছিল তাই তাকে একা থাকতে দিয়ে চলে আসছি। আমি চাইনা আমার জন্য কেউ কষ্ট পায়।”

সাইয়ান ঐশানীর সামনে কান ধরে বলে,”আচ্ছা আমাকে মাফ করে দাও। আর কোনোদিন ও এমন কাজ করবো না। প্লিজ আমার সাথে ফিরে চলো।”

ঐশানী বলে,”ফিরে যাবার জন্য তো দূরে আসি নাই।”

সাইয়ান এবার একটু রেগে অধিকারের সুরে বলে,”বিবাহিত মেয়ে তুমি। স্বামীর সাথে রাগারাগি করে থাকলে তোমার গুনাহ হবে। আচ্ছা অনেক শাস্তি দিয়েছো এবার মাফ করে দাও। চলো না আমরা আবার নতুন করে আমাদের গল্পটা শুরু করি?”

ঐশানী মনে মনে ভাবে,”জীবনটা তো অনেক ছোট।যে সময় টুকু আমাদের হাতে আছে তা অযথা এতো রাগারাগি করে দূরে থেকে নষ্ট করার মানে হয় না। তার সাথে, তার আশেপাশে থেকেও তো সবটা ঠিকঠাক করা যায়। কি দরকার নিজেও কষ্ট পাবো আরেকজন ও কষ্টে থাকবে। সব সময় সব কিছু ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিতে হয় না। কিছু সময় নিজেদের চেষ্টা করতে হয় সমস্যা সমাধানের জন্য।”

এরপরে শয়তানি করে ঐশানী বলে,”কয়েকটা দিন আমার পিছুনে ঘুরাঘুরি করেন তারপর না হয় আপনার কথা চিন্তা করে দেখবো।”

সাইয়ান ও ঐশানীর কথা মতো রাজী হয়ে যায়। সেও কিছুদিন শান্তির নীড়ে থেকে যায়। ঐশানীর আগে ফিরে একটু ঘুরাঘুরি করে। ঐশানী তো আগেই সবটা মেনে নেয়। এই নাটক তো শুধু সাইয়ান কে জব্দ করার জন্য।

এরপর সাইয়ান কে মাফ করে দিয়ে তার সাথে যাবার জন্য রাজী হয় তবে সাইয়ান কে একটা শর্ত দেয়।

ঐশানী বলে,”আমি আপনার সাথে যেতে রাজী আছি তবে আমার একটা শর্ত আছে। তা হচ্ছে আমি আমার ভালোবাসার বিনিময় চাইছি। আমি অসুস্থ হলে আমার পাশে থাকতে হবে সবসময়। আমার কান্নার জল ছুঁয়ে দেখতে হবে। আমার প্রতি যত্নশীল হতে হবে।আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে দিতে হবে। আর আমাকে ভাল না বাসলেও চলবে শুধু সারাজীবন বন্ধুর মতো পাশে থাকবেন। ”

সাইয়ান ঐশানী কে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে ভালবাসার পরশ দিয়ে বলে,”আমি সারাজীবন তোমার
ভালোবাসার বিনিময় দিতে রাজী আছি। বিনিময় যদি এমন কিছু হয় সেখানে না করার কেনো অপশন নেই।”

তারপর তারা শান্তির নীড়ের সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দেয় নিজেদের নতুন জীবনের উদ্দেশ্যে।

সবাই যে জীবনে সব কিছু একসাথে পাবে এর কোনো মানে নেই। কিছু সময় নিজের একটু আত্মত্যাগের জন্য নিজেও ভাল থাকা যায় আবার সামনের মানুষদের ও ভালো রাখা যায়।

কেউ সুখের সংসার সাজাতে ব্যস্ত তো কেউ অনুতাপের আগুনে নিজেকে পুড়িয়ে নিখাদ করতে ব্যস্ত। ভালোবাসার বিনিময় তো এমনি হওয়া উচিৎ যেখানে দুজনের সাথে আশেপাশের সবাই সুখে থাকবে।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here