ভালোবাসা ২৪তম_পর্ব

0
641

ভালোবাসা
২৪তম_পর্ব
#মৌসুমি_চৌধুরী

বাড়ি ফিরে এসে বারবার আমার মনে পড়তে লাগলো আজকে রাতেই একটু আগে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনাটা। সুজন যাই বলুক না কেন আমার যেন বিশ্বাসই হচ্ছিলো না। গোটা রাত তাই ছটফট করতে করতে ভাবছিলাম কখন সকাল হবে। সুজনকে বলা প্রতিটি কথা আর তার প্রত্যুত্তর যেন খুব করে মনে পড়তে লাগলো।

তখন ওকে আমি কি ভেবে নিয়ে যেন অকস্মাৎ বলে ফেলেছিলাম যে, আমি দেখেছি তাকে…আমার অরুকে চিনতে কখনো ভুল হবেনা। কথাটা অনেকটা তো এমনই ছিলো বোধহয়, ঠিকঠাক কিছুই আর মনে করতে পারছেনা সে।

তোর অরু?…বলে সুজন রাগী চোখে অনেকক্ষন তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে।

ফের নিজের রাগ সামলে বললো, ওরা এখন বিলেতে… আর যদি ফিরে আসতোই তবে কি বাড়িতে এসে উঠতো না!!! দেখ তুই কি চাস না ওরা সুখে শান্তিতে সংসার করুক?

আমি চাই, কিন্তু এমন ও কি হতে পারে না যে অরু একা এসে ওর বাবার বাড়িতে উঠেছে। হয়তো তার বাবা-মা দুজনের কেউ অসুস্থ। আর নাহয় অন্য কোন জরুরি দরকার ছিলো…এক নিঃশ্বাসে যেন দৃঢ়তার সাথে বললো বিজু।

সুজন আমার চোখ বরাবর তাকিয়ে বেশ জোড়ালো কন্ঠেই বলে উঠলো, হয়তো সে প্রেগন্যান্ট আর নাহয় একা বাচ্চা সামলাতে পারবে না দেখে মা’র কাছে এসেছে…এমন কি হতে পারে না?

আমায় চুপ দেখে সে আচমকা বলে উঠলো, কি রে কথা বলছিস না যে!

আমি শুকনো হেসে বললাম, সে আশীর্বাদ তো তাকে বহু আগেই করে দিয়েছি রে…তার কোলে যেন তুলতুলে পুতুলের মতো দেবশিশু নেমে আসে। আর তাকে যখন ভালোবাসি তখন তার সন্তানকেও আমি ঠিকই ভালোবাসতে পারবো।

তা তো এমনিতেই পারার কথা…দাদার সন্তান তোর ভাইপো কিংবা ভাইঝি হবে। কিন্তু তোর চিন্তাভাবনা তো সব অরু কেন্দ্রিক তাই দাদার চেয়ে বেশি বৌদিতেই মজে আছিস।

ওদের সন্তান হলেও কি আমি দেখতে যেতে পারবো না!!! আচ্ছা অরুর কেয়ার করাটাও কি আমার অন্যায়?

সুজন আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ নিজের বাড়ির পথে হাঁটা ধরলো।

সকালে উঠেই বিজু মুখহাত ধুয়ে রাতের পোশাক পাল্টে নিয়ে ঘরে তালা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলো কালকের সেই জায়গায়। আশেপাশে তাকিয়ে লোকের ভিড়ের মাঝে অরুকে খুঁজে ফিরতে লাগলো তার চোখ। কিন্তু এত অপেক্ষার পর সে কোথাও যেন ওর দেখা না পেয়ে হতাশ হয়ে গেলো। ফিরতে নিতেই আচমকা সুজনের দেখা পেলো। সুজন তার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, আমি জানতাম তোকে এখানেই পাবো। নাস্তা করিসনি বোধহয়, চল আমার সাথে…বলে আমায় আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে চললো তাদের বাড়ির পথে।

ফের সকাল থেকে বিকেল অব্দি কাকিমা অনেক খাইয়ে দাইয়ে একেবারে যেন একদিনেই আমায় মোটাসোটা করে দিতে চাইলেন। ছাড়তে চাইছিলেন না কিছুতেই… সুজন বললো, এখানেই থেকে যা না তুই আমার সাথে।

আমি মৃদু হেসে বললাম, তোর সাথে তো রোজ দেখা হচ্ছেই আমার।

একা যেতে পারবি তো? তোকে নিয়ে আমার ভীষণ ভয় হচ্ছে…বললো সুজন।

ভয় পাবার কিছু নেই, আমি ঠিক আছি…বলে আর দেরি না করে বেরিয়ে পড়লাম।

সুজনকে না বললেও আমি অরুর খোঁজে ফের গিয়ে দাঁড়ালাম সেই চৌরাস্তার মোড়ে। পড়ন্ত বিকেল ঘনিয়ে ঠিক সন্ধ্যে হবে হবে এমন একটা সময়। খুব হাওয়া দিচ্ছে, মনে হয় ঝড় হবে। হঠাৎ এগিয়ে গিয়ে সামনে তাকাতেই মনে হলো অরুকেই দেখলাম। সেই অবয়ব যা দেখে পেছন থেকেই আমি যেন নিশ্চিত ছিলাম যে, এটা অরু ছাড়া আর কেউ হতেই পারে না। দ্রুত হেঁটে গিয়ে অরু বলে ডাকতেই তার পা যেন নিমিষেই থমকে গেলো।

সে ফিরে তাকাতেই আমি এক মূহুর্তে দৌড়ে গিয়ে হাপাতে লাগলাম। ছুটে যাবার কারণে সে একটু হেসে বললো, আমি তো এখানেই দাঁড়িয়ে আছি, দৌড়োতে গেলি কেন?

আমি সেটার জবাব না দিয়ে বললাম, কবে এলি?

সে আমায় পাল্টা প্রশ্ন করে বসলো, তুই এখানে হঠাৎ কি কারণে?

আমি বললাম, আজাদের বিয়েতে আসতে হলো। খুব করে ধরেছিলো তাই না করতে পারলাম না।

অরু বললো, আজাদ বিয়ে করেছে? বাহ ভালো তো।

আমি বললাম, সেসব ছাড় না…তুই এই অসময়ে এদিকে কি জন্যে বল তো?

সীমার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম, ওর বাবার বাড়ি এদিকেই।

আমার কেন জানি মনে হচ্ছিলো, অরু মিথ্যে বলছে আমায়। নইলে কাল সে এদিকে কি করছিলো আর কেনই বা মিথ্যে বললো!!!

আমি তার হাত টেনে নিয়ে বললাম, চল কোথাও বসে কথা বলি।

সে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে ফের বাড়ি ফেরার জন্যে ব্যস্ততা দেখাতে চাইলে পরে আমি বললাম, বাড়িতেই চল তাহলে…এখন তো আমি আছি।

প্রথমটায় আমার কথায় তার মুখ থমথম করলেও কিছুক্ষণ পর সে ধাতস্থ হয়ে নিয়ে জোড় করে যেন খানিকটা হাসি এনে বললো, বাড়িতেই উঠে ভালো করেছিস…কতদিন ঘরদোর খোলা পড়েনি, এখন একটু হলেও আলো-বাতাস ঢুকে ভালো থাকবে।

আমি বললাম, বাড়িটা তো তোর ও…চল নিজে দেখেশুনে একবার বুঝে নে সবকিছু।

সে তাড়া দেখিয়ে বললো, দেরি হয়ে যাচ্ছে রে বিজু আজ যাই।

আমি হেসে বললাম, আমাকে তোর এতই অবিশ্বাস যে আমার সাথে একা বাড়িতে ফিরতে চাইছিস না তাইনা?

সে নিশ্চুপ হয়ে গিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো খানিকক্ষণ তারপর আর কিছু না বলেই চলে গেলো।

পরদিন সকাল সকাল আমি অরুর বাবার বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। সেখানে যেয়ে সদর দরজার কড়া নাড়তেই অরুর মা দরজা খুলে দিয়ে আমায় দেখে বেশ অবাক হয়ে বললেন, কবে এলে বাবা?

আমি প্রণাম সেরে এদিক সেদিক তাকাতেই বললেন, মিরু গেছে কোচিং ক্লাসে আর তরু স্কুলে। অরুর কথা কিছু বললেন না দেখে আমি অবাক হলাম। কিন্তু কিছু বললে উনি দুশ্চিন্তায় পড়ে কি ভাববেন তাই আর জিজ্ঞেস করলাম না। বললাম, এলাম তাই ভাবলাম দেখা করেই যাই। সাথে আনা বেশ কিছু চকোলেট মিরু আর তরুর জন্যে দিয়ে চলে আসলাম।

সারা রাস্তায় যেন ভাবনারা আমায় ঘিরে ধরলো। দাদারা কি হোটেলে উঠেছে? তাহলে অরু সেটা বললো না কেন আমায়!!! অরুর বাবা-মা কি জানেনা যে তারা এখানে?

আজাদের কল পেয়ে আমি ফোনটা ধরতেই সে তাদের বাড়ি যেতে বললো আমায়। ফের আমি গিয়ে দেখি এলাহি কান্ড চলছে সেখানে…সদ্য স্নাত রুখসানা তার বান্ধবীদের নিয়ে যেন গল্পের আসর বসিয়েছে। আমার সেখানে কি কাজ বুঝলাম না। আজাদ আমায় তাদের মাঝে টেনে নিয়ে বসাতেই রুখসানা বলে উঠলো, বিজয়দা আমার বান্ধবীরা কিন্তু সবাই অবিবাহিতা।দেখতে শুনতেও খারাপ না, দেখো তো ওদের কারোকে পছন্দ হয় কিনা।

সবাই একসাথে হেসে উঠলো। এমনিতেই আমার মনটা বিক্ষিপ্ত ছিলো তার ওপর আবার এসব উপদ্রব। আমি কোনমতে কথা কাটিয়ে নিতে বললাম, পছন্দ হবার মতো যে তাকে তো আমরা আজাদকেই বিয়ে করিয়ে নিয়ে এলাম।

আজাদ হেসে বললো, ওসব চালবাজি কথায় কাজ
হবে না…আমরা সবাই যখন বাইরে খেতে যাচ্ছি, তখন তুইও চলবি।

তুই দুলাভাই হয়েছিস যখন তখন শ্যালিকাদের আবদার রক্ষা করে যে চলবি সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু আমায় কেন বলছিস বল তো!

রুখসানা চুপে চুপে এসে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে বললো, আমার বান্ধবী প্রীতিকার তোমায় ভালো লেগেছে…প্লিজ, চলো না বেচারির মন রাখতে।

এসব আমার একদমই পছন্দ হচ্ছিলো না, তাই আমি দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে নিতেই সুজন এসে হঠাৎ পথ আটকে বললো…আমি যখন যাচ্ছি তখন তুই ও যাচ্ছিস, নো হাংকি পাংকি।

#চলবে…

কপি করা নিষেধ, লেখা অন্যত্র ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষেধ নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here