ভালোবাসা_বিনিময়,part_12,13

0
1247

ভালোবাসা_বিনিময়,part_12,13
Nishi_khatun
part_12

সাইয়ান ভাবছে, আমি তো কখনো চাইনি ঐশানী কে কোনোভাবে কষ্ট দিতে। তাহলে আজকে কেনো মেয়েটাকে এতোটা কষ্ট দিলাম? শুধু মাএ নিজের ভালোবাসার মানুষ টাকে পবিত্র সম্পর্কের জালে জড়ানোর জন্য? নিজের এতো বছরের ভালোবাসাকে আজ আপন করে নেওয়ার পর ও কোথায় একটা খারাপ লাগা কাজ করছে। ঐশানী কে বিয়ের কথা বলার সময় তার কোনো কথা না শুনে নিজের সব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছিলাম। তবে আমার বলা সেদিনের কথা গুলো শুনে মেয়েটা প্রচুর কান্না করেছিল। কিন্তু তখনো জানতে চাইনি মেয়েটার মনের কথা। তবে আজ কেনো ঐশানীর জন্য আমি সানাই কে আপন করে নিতে পারছি না? কোথাও একটা অপরাধ বোধ কাজ করছে আমার মাঝে। আমি তো কাউকে কষ্ট দিতে চাইনি তবে কেনো সবাই কষ্ট পাচ্ছে?

এদিকে আরোভির কোলে মাথা রেখে ঐশানী ঘুমিয়ে যায়। আরোভিও কিছু না বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসেই ভাবতে থাকে,নিজের স্বামী যদি আপন না হয়! সে মেয়ের জীবনটা তো কোনো জীবন না। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মতো পবিত্র সম্পর্ক সারা দুনিয়াতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে আফসোস কয় জনের ভাগ্যে জোটে সঠিক ভালোবাসা। আর স্বামীর মনের ঘরে যদি অন্য কোনো মেয়ের বসবাস থাকে তাই তো কোনো স্ত্রী মেনে নিতে পারে না। সেখানে ঐশানী তো নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অনুভূতি গুলোর কবর খুঁড়েছে। জানি না এদের জীবনের গল্পটা কেমন হবে। এসব ভাবতে ভাবতে আরোভি ঘুমিয়ে যায়।

ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে চুপচাপ রুমের এক কোণায় ঐশানী বসে থাকে।

আরোভি এসে বলে,”ভাবী নিচে চলেন সকালের নাস্তা খাবেন। ”

ঐশানী তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,”তোমার মনে হয় ঐ খাবার গুলো আমার গলার নিচে নামবে? আর যদিও বেহায়ার মতো নেমে যায় তাহলে হজম হবে তো?”

আরোভি কি বলবে জানে না। তবে সে হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী না। সে জোর করে ঐশানী কে নিজে নিয়ে যায়।

ঐশানী নিচে এসে দেখে সবাই খাবার টেবিলে বসে নাস্তা করছে।তবে সাইয়ান আর সানাই নেই এখানে।
তা দেখে সে রান্নাঘরে গিয়ে ওদের জন্য নাস্তা রেডি করে ট্রে তে সাজিয়ে কাজের মানুষের হাতে ওদের রুমে পাঠিয়ে দেয়।
ঐশানী ইচ্ছা করলে সাইয়ানের রুমে নিজে গিয়ে দিয়ে আসতে পারতো।তবে সে সাইয়ান কে ঐ রুমে অন্য আরেকটা মেয়ের সাথে ঠিক মেনে নিতে পারবে না। কী দরকার আগ বাড়িয়ে কলিজায় আগুন জ্বালানোর?

সাইয়ান কাজের মানুষের হাত থেকে খাবার ট্রে নেওয়ার সময় প্রশ্ন করে,”কে পাঠিয়েছে খাবার গুলো?”

কাজের লোকটা বলে,”ঐশানী ভাবী নিজে সব কিছু রেড়ি করে দিয়েছে।”

সাইয়ান ওহ খাবার নিয়ে এসে সানাই কে খাওয়াই দিতে থাকে।
সানাই খাবার সময় বলে,”সাইয়ান তুমি ঐশানী কে সময় দাও।আমি তো দু দিনের মেহমান। আমি চলে গেলেও ঐশানী পারবে তোমাকে নতুন জীবন উপহার দিতে। আমার বিরহ ব্যাথা ভুলতে তুমি ওকে সাথে পাবে।তাহলে কেনো অযথা মেয়েটাকে অবহেলা করছো? কী দরকার এতো অবহেলার? তুমি জানো আমি এই আছি এই নেই। তাহলে আমার এই দু মিনিটের অস্তিত্বের জন্য একটা জীবন্ত মানুষের অনুভূতি তুমি নষ্ট করে দিতে পারো না।”

সাইয়ান কোনে কথার জবাব না দিয়ে চুপচাপ সানাই কে খাবার খাওয়াই রুম থেকে নিচে চলে আসে।
নিচে এসে দেখে খাবার টেবিল ঐশানী চুপচাপ বসে আসে। তার সামনে খাবার কিন্তু সে না খেয়ে কোনো খেয়ালে হারিয়ে গেছে।

সাইয়ান ঐশানীর পাশে বসে ওর মুখে খাবার তুলে দেয়।হঠাৎ ওর মুখে খাবার কে দিলো দেখতে পাশে তাকিয়ে দেখে সাইয়ান।

ঐশানী কিছু বলবে তার আগে সাইয়ান বলে,”জানি কাল থেকে এখনো কোনো কিছুই খাওনি। অযথা না খেয়ে থাকার কোনো মানে হয় না। তোমার জন্য আমিও না খেয়ে বসে আছি। এখন চুপচাপ খেয়ে নাও। নয়তো আমি একসাথে দুইটা অসুস্থ বউয়ের সেবা করতে পারবো না।”

ঐশানী বলে,”আপনি আমাকে বউ বলে মানেন?”

সাইয়ান খাওয়াই দিচ্ছে আর বলছে,”আজব মেয়ে তো বউ না মানলে বিয়ে করছি কেনো? হ্যাঁ আমাদের মাঝে স্বামী-স্ত্রীর কোনো শারীরিক সম্পর্ক নেই। তার মানে কি এই সম্পর্কের কোনো দাম নেই। উঁহু তেমন কিছুই না।
আর কাল নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আমার বিয়ে দিলে প্রথম বউয়ের অধিকার নিয়ে। যদি বউ না মানি তাহলে কোন অধিকারে আমার বিয়ে দিলে তুমি? আচ্ছা তোমার খারাপ লাগছিল না নিজের স্বামীর বিয়ে দিতে? কেমন মেয়ে তুমি আমার বিয়ে দিয়ে দিলে?”

ঐশানী রেগে বলে,”আমি বিয়ে দিলাম আর আপনিও তো ঝোপ বুঝে বিয়ে করে নিলেন। ”

সাইয়ান বলে,”আজব মেয়ে তো তুমি? কেউ যদি এমন সুযোগ পায় যে সে দুই বউ পাবে একসাথে।পাগলেও নিজের ভালো বোঝে আমি কেন বুঝবো না।”

ঐশানী বলে,”আপনি একজন স্বার্থপর মানুষ।”

সাইয়ান বলে,”হ্যাঁ আমি স্বার্থপর মানুষ।তুমি বিয়ের অনুমিত দিয়েছো আমি করছি। এতে সানাই যখন মারা যাবে তখন নামাজের শেষে মোনাজাতে আমি ওর জন্য দোয়া করতে পারবো। যদি বিয়ে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ না হইতাম তাহলে তো কোনোদিন ও মোনাজাতের দোয়া করতর পারতাম না।
আর কোনো কুমারী মেয়ের এমন একটা প্রেমিক থাকার পর ও বিয়ে পবিত্র সম্পর্কে আবদ্ধ না হয়ে মৃত্যু বরণ করলে কী বেপারটা ভালো দেখাই। তাই সুযোগ বুঝে সানাই কে বিয়ে করে সুন্নতটা পালন করে নিলাম। আহা কি মজা আমার দুই বৌ।”

ঐশানী রাগী দৃষ্টিতে সাইয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।

সাইয়ান বলে,”এভাবে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। শোনো ঐশানী আমি তোমাকে ভালোবাসি না সে কথা সত্যি। তবে কালকের এই কাহিনীর পর থেকে আমি তোমাকে প্রচুর সম্মান করছি। আর হ্যাঁ যেখানে মন থেকে কাউকে সম্মান করা হয় সেখানে ভালোবাসাটা একাই সৃষ্টি হয়।”

ঐশানী বলে,”বাব্বাহ্ এখন দেখছি আপনার গলা দিয়ে বেশ ভালোই কথা বাহির হচ্ছে। সানাই আপু মরার পরে যে আমাকে বলবেন না তৃতীয় বিয়ের কথা তার কী গ্যারান্টি আছে?”

সাইয়ান বলে,”একটা এতিম মেয়েকে ভালোবেসে যদি তাকে বউয়ের মর্যাদা দিতে না পারি তাহলে জীবনের মানেটা কী বলো? যে কাজ আমার করার কথা ছিলো সে কাজ তুমি করেছো। তাই কখনো তোমাকে ধোঁকা দেওয়ার কথা চিন্তা করবো না।হ্যাঁ তুমি যদি চাও তাহলে আমি তোমাকে মুক্ত করে দিবো। তারপর তুমি না হয় নিজের ভালোবাসার মানুষ কে নিয়ে সুখে সংসার করিও।”

ঐশানী বলে,”আমার ভালোবাসার মানুষটা কে আপনি জানেন? বা আমি যে কাউকে ভালোবাসি এর কোনো প্রমাণ আছে?”

সাইয়ান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,”তুমি যে সুন্দরি তাতে সানাই এর আগে তোমার সাথে আমার দেখা হলে আমার প্রথম ভালোবাসা তুমি হতে। সেখানে তোমার মতো সুন্দরি মেয়ের যে কোনো প্রেমিক নেই তা মানা যায় না।”

ঐশানী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,”সৌন্দর্যের পূজারী সবাই হয়। তাই বলে যে সবাই কে ভালোবেসে গ্রহণ করতে হবে এর কোনো মানে নেই। তেমন আমার জীবনের গল্পটা না জেনে কোনো কমেন্ট না করলে খুশি হবো।”

বলে খাবার শেষ করে উঠে চলে যেতেই সামনে আবরাজের সাথে ধাক্কা খায়।

আবরাজ বলে,”অতিরিক্ত সুন্দর মানুষেরা আশেপাশে ভালো ভাবে না দেখে শুনে চলাফেরা করে তাই তো তারা ভুল পথের পথিক হয়।”

ঐশানী বলে,”হ্যাঁ সুন্দরিদের পেছনে তো ভুল মানুষেরা মাছির মতো ভনভন করে।”

আবরাজ কিছু বলবে তার আগে সাইয়ান ঐশানীর হাত ধরে উপরে নিয়ে যায়।

আরোভি ঐশানীর বলে যাওয়া কথা গুলো শুনে হাসতে থাকে। তা দেখে আবরাজ আরো রেগে যায়।

:

:
চলবে……

#ভালোবাসা_বিনিময়
#Nishi_khatun
#part_13

হঠাৎ একদিন রাতে ঐশানী আরোভি এসে জিজ্ঞাস করে আচ্ছা আরোভি আবরাজ তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে কেনো?

আরোভি একটু ভয়ে পেয়ে যায় ঐশানীর এমন প্রশ্ন শুনে। আরোভি আমতা-আমতা করে বলে,”কই উনি তো ভালো ব্যবহার করেন আমার সাথে।”

ঐশানী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,”সবার চোখ কে ফাঁকি দিলেও আমার চোখকে ফাঁকি দিতে পারবে না। অযথা মিথ্যা কথা না বলে সত্যি কথাটা বলে দাও আমাকে।”

আরোভি বলে,”এখানে কোনো সত্যি নেই যা আমি আপনাকে বলবো!”

ঐশানী বলে,”আচ্ছা বুঝলাম এখানে কোনো সত্যি নেই! তাহলে এবার এটা বলো তুমি কাকে পছন্দ করো?”

আরোভি বলে,”আমি যাকে পছন্দ করতাম সে আমাকে পছন্দ করে না। আর যে আমাকে ভালোবাসে তাকে আমি নিজেই অনেকটা দূরে ঠেলে দিয়েছি। তাইতো আজও তার পিছনে পাগলের মতো ছুটেছি তবু তার ভাঙ্গা মনে আর নিজের স্থান করে নিতে পারছি না। আমি নিজের মনের অবুঝ ভালোবাসা আর ভালোলাগার মধ্যে পার্থক্য করতে পারি নাই।”

ঐশানী বলে,”মানে কি বলতে চাইছো? একটু ক্লিয়ার করে বলবে?”

আরোভি বলে,”ভাবী সব সময় সব কথা জানতে নেই।থাকনা কিছু কথা অজানাতে।”

ঐশানী আরো কিছু জানতে চাইছিল কিন্তু কারো অতীত জানার জন্য তাকে কষ্ট দিতে চাইছে না।

ঐশানী ছাদের এক কোণায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশে তারার মেলা দেখতে থাকে তখন ওর পাশে এসো সাইয়ান দাঁড়ায়।

ঐশানী সাইয়ানের উপস্থিতি বুঝতে পেরে বলে,”কোনো দরকার আছে আমার কাছে?”

সাইয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,”তোমার কাছে কি আমি দরকার ছাড়া আসতে পারবো না? তুমি কি আমাকে এতোটা ঘৃণা করো?”

ঐশানী নরম কন্ঠে বলে,”আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন বলে কি সানাই আপু আপনাকে ঘৃণা করতে পেরেছিল? ”

সাইয়ান বলে,”দেখো তোমাকে বিয়ে আমি জোর করে করেছি। তাই বলে তোমার কোনোরকম অপমান করি নাই। হ্যাঁ তোমাকে বলেছি আমার দায়িত্ব পূরণ হয়ে গেলে তুমি নিজের দুনিয়াতে ফিরে যেতে পারো।”

ঐশানী এবার সাইয়ানের দিকে ফিরে বলে,”আপনার স্বার্থ পূরণ হয়ে গেলে আমাকে আপনার জীবন থেকে নোংরা মনে করে ডাস্টবিনের ফেলে দিবেন? আচ্ছা আমি কি এতোটা খারাপ? যে আমাকে নিয়ে একটু ভাবা যায় না?”

সাইয়ান অবাক চাহনিতে ঐশানীর দিকে তাকিয়ে থাকে।

ঐশানী আবারো বলে,”আমি আপনার কাছে কোনো দয়া চাইছি না। তবে যে সম্পর্কের বাঁধনে বাধা পড়েছি সেই সম্পর্কের সম্মান চাইছি। দিতে হবে না ভালোবাসা,লাগবে না আমার স্ত্রীর অধিকার শুধু সারাজীবন আপনার সাথে থাকার অনুমিত দিলেই চলবে। কখনো আমার ভালোবাসার বিনিময়ে আপনার ভালোবাসাকে ভুলতে বলবো না। শুধু আমার ভালোবাসার বিনিময়ে আপনার হৃদয়ের বা-পাজরে একটু স্থান দিয়েন।”

ঐশানীর মুখে এমন ভালোবাসার কথা শুনে সাইয়ানের মনের মধ্যে এক অজানা ঝড় তুফান শুরু হয়ে যায়।

সাইয়ান কিছু বলবে তার আগেই নিচে থেকে ডাকাডাকি শুরু হয়ে যায় ওদের দুজনের।

ঐশানী গটগট করে স্থান ত্যাগ করে নিচে চলে যায়।

সাইয়ান নিজের রুমে ফিরে এসে দেখে সানাই চুপচাপ শুয়ে আছে। মেয়েটার শরীরটা আজকাল বড্ড বেশি খারাপ থাকে। সাইয়ান সানাই এর হাত দুটো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে তাতে চুমো দেয়।

সানাই একটু মলিন হাসি দিয়ে বলে,”একটা সময় দুজন দুজনকে নিয়ে কতো স্বপ্ন দেখেছি আমরা। তবে আফসোস সে স্বপ্ন গুলো আমার জন্য তুমি পূরণ করতে পারবো না। তবে আমাদের দেখা স্বপ্ন গুলো তুমি ঐশানীর সাথে পূরণ করতে পারবে। জানি তুমি আমাকে খুব বেশি ভালোবাসো। তবে তোমার সাথে ঐশানীর যে পবিত্র সম্পর্ক আছে সে সম্পর্ক থেকে তুমি পালাতে পারবে না। বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্কের মাঝে আল্লাহ নিজে মায়া,ভালোলাগো,ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেয়। সে সব থেকে তুমি পালাবে কি করে?”

সাইয়ান চুপচাপ নিরব দৃষ্টিতে সানাই এর দিকে তাকিয়ে থাকে।

সানাই আবারো বলে,”সাইয়ান আমি ঐশানীর চোখে তোমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি।”

সাইয়ান বলে,”ঐশানীর জীবনে অন্য কেউ আছে।”

সানাই তাচ্ছিল্য নিয়ে বলে,”ঐশানীর চোখে শুধু তোমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি। সেখানে অন্য কারো কোনো স্থান নেই। যারা সত্যি ভালোবাসতে জানে তারাই শুধু কুরবানি দিতে জানে। যদি তোমাকে ভালো নাই বা বাসে তাহলে আমার জন্য তুমি যে কষ্ট পাচ্ছিলে তা থেকে কেনো তোমাকে মুক্তি দিবে? সে যে তোমার কষ্ট সহ্য করতে পারে না। তাই তো নিজের ভালোবাসার মানুষের সুখের জন্য নিজের ভালোবাসা বিনিময় করেছে।”

সাইয়ান বলে,”হয়তো আমাকে সম্মান করে সেই জন্য।”

সানাই বলে,”বুঝলাম তোমাকে সম্মান করে। কিন্তু আমাকে কি সে সম্মান করে? আর যদি করে কেনো করে? নিজের স্থান কোনো মেয়ে ছেড়ে দিতে পারে না। আর সেখানে নিজের স্বামীর অধিকার তো কখনো না।তুমি যখন থাকো না তখন যে ঐশানী এসে আমার দেখাশোনা করে।গোসল করারো,খাবার খাওয়ানো ঘুমপাড়িয়ে দেওয়া এসব কিসের জন্য করে? ঐশানীর তো কোনো স্বার্থ নেই। হ্যাঁ কাউকে কেউ নিঃস্বার্থ ভাবে সাহায্য করলে আমরা তাকে সন্দের চোখে দেখি। এটা আমাদের দৃষ্ট ভঙ্গির সমস্যা। তবে আমি তোমাকে একটা কথায় বলবো বলে থেমে যায়।”

সাইয়ান বলে,”কী কথা বলবে?”

সানাই একটু দম নিয়ে বলে,”সন্তান বড় হবার পর যখন বিয়ের উপযুক্ত হয় তখন তাকে বিয়ে দিয়ে দিতে হয়।আর তাদের বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বাবা মা বা পরিবারের কারো অধিকার থাকে না।তোমার কর্তব্য তখন দ্বিগু হয়ে যায়।স্ত্রীর সাথে সাথে পরিবারের দায়িত্ব তোমার কাধে এসে পড়ে।এর মানে এই নয় যে তুমি পরিবারের দায়িত্ব পালনের জন্য বউ কে এনেছ। তুমি বিয়ে করেছো তোমার নিজের জন্য।তোমার স্ত্রী তোমার অর্ধেক অংশ। তাহলে সেই অংশ কে তুমি কি করে পরিবারের দায়িত্বের দোহাই দিয়ে দূরে ঠেলে দিবে? এটা তুমি অন্যায় করবে নিজের সাথে এবং তোমার স্ত্রীর সাথেও। যার উপর তোমার অধিকার, তোমার উপর তার ও সমান অধিকার আছে।তাহলে তুমি কেনো দুজনের অধিকার নষ্ট করবে?”

সাইয়ান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দূরে সরে যায়।

এমন সময় সানাই এর অবস্থা খুব খারাপ হতে শুরু করে।সাইয়ান সানাইের পাশে বসে জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকে।
ঐশানী দ্রুত গতিতে সে রুমে ছুটে চলে আসে।

সানাই এর পাশে এসে বসতেই ঐশানীর হাত জোড়া নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে,”আমার সময় শেষ হয়ে এসেছে।আমাকে এই এপৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে নিজের আপন ঠিকানাতে যেতে হবে।ঐশানী সেদিন তুমি তোমার স্বামী অধিকার আমাকে দিয়েছিলে।তাই বলে সাইয়ান আর ঐশানীর হাত একসাথে করে বলে,”আজ থেকে তোমার সে অধিকার আমি তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে যাচ্ছি। আমি সাইয়ান কে বড্ড বেশি ভালোবাসি সেও আমাকে ভালোবাসে। আমি চলে যাবার পর তুমি তোমার সব ভালোবাসা উজার করে দিতে দ্বিধা বোধ করো না। জানি একদিন তুমি থাকবে সাইয়ানের সবটা জুড়ে।সেদিন শুধু আমার #ভালোবাসার_বিনিময় তোমাদের হৃদয়ের মাঝে আামাকে একটু স্থান দিও।”

ঐশানী অশ্রুসিক্ত নয়নে বলে,”আপু এমন কথা বলবেন না।আপনার কিছু হবে না।আপনি সাইয়ানের সাথে সংসার করবেন। যে স্বপ্ন গুলো দেখেছেন আপনারা। ”

সানাই বলে,”আমার স্বপ্ন গুলো তো পূরণ হলো না। তবে তুমি কিন্তু তোমার স্বপ্ন গুলো পূরণ করবে।আর হ্যাঁ সাইয়ান অনেক ভালো প্লিজ সারাজীবন ওকে আগলে রেখো। মনের কষ্ট কখনো মুখে বলবে না।প্লিজ ওর চোখের ভাষাতে তা বুঝে নিও।”

বাড়ির সবাই সেখান এসে উপস্থিত হয়ে যায়।
সাইয়ানের বাবা মা,পরিবারের সবাই সানাইয়ের কাছে মাফ চাইতে থাকে।

সানাই সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলে,”প্লিজ আপনার আমাকে মাফ করে দিয়ে।আপনাদে প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই।আমার নসীবে যতোটা খুশি লেখা ছিলো আমি ততোটুকু পেয়ে আলহামদুলিল্লাহ্‌ তাতে আমি খুশি।”

সানাই এর অবস্থা দেখে সবাই বুঝতে পারে সে আর বাঁচবে না। সেখানে উপস্থিত সবাই দোয়া-দরুদ পাঠ করতে থাকে।

সাইয়ান সানাই কে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।একটা সময় সানাই এর চোখ গুলো আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে আসে।পুরো চেহার রং বদলে যায়।তারপর শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়।
সাইয়ান বুঝতে পারে সানই আর নেই।

সে ঘরের মাঝে সবাই নিরবতা পালন করে।কিন্তু সাইয়ান সানাই কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।ঐশানী কান্না করছে।

একটা রাত যে এতোটা কালো হতে পারে কেউ ভাবে নাই। সাইয়ানের বাবা সকালে সানাই এর দাফনের ব্যবস্থা করতে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

সানই এর তো কোনো আপনজন নেই যে তাদের জন্য অপেক্ষা করবে।ঐশানী নিজের বাবার বাড়িতে খবর দেয়।তারা ভোরে চলে আসে। সাইয়ানের বন্ধু জাহিন তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে চলে আসে।আবরাজের বাবা মা সকালে চলে আসে।

ঐশানীর বাবা মা এসে নিজের মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলে,”প্রথমে তোর কাজে আমরা খুব কষ্ট পেয়েছিলাম তবে আজকের কাহিনী দেখে তোকে নিয়ে গর্ব হচ্ছে।তোর জন্য এতিম মেয়েটা পরিবার পেয়েছে।মরার সময় স্বামীকে কাছে পেয়েছে।নিজে একটু কষ্ট পেয়ে অন্যকে একটু সুখের ভাগিদার করা যায় তোর থেকে শিখলাম।

তারপর যথাযথ সময় সবাই মিলে সানাইের দাফনের কাজ সম্পন্ন করে।
দাফনের কাজ করে এসে সাইয়ান সোজা নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে।
ঐশানী যায় নি সাইয়ানের পেছনে।সে চাইছে কিছু সময় সে একা থাক।
সাইয়ানদের বাড়ির রুপটা কেমন বদলে গেছে।পুরোবাড়িতে পিনপতন নিরবতায় ছেয়ে গেছে।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here