ভালোবাসি,পর্বঃ১৮
Tanisha Sultana (Writer)
মায়া সেই চোর মহিলা আর লোকটিকে দেখে সায়ান অবাক হয়।
“মায়া এদের সাথে কি করছে? এরা তো ক্রিমিনাল। তাহলে কি এরাই মায়ার বাবা মা?
সায়ান পুলিশদের ডাকে। তারপর পুরোপুরি দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে। মায়া সায়ানকে দেখে চমকে যায়।
” তততততুমি এএএখানে?
তুতলিয়ে বলে মায়া।
“তোমার বাবা মায়ের সাথে মিট করতে আসলাম
স্বাভাবিক ভাবেই উওর দেয় সায়ান।
” এরা আমার বাবা মা তোমাকে কে বললো?
“আমি তোমাদের কথা শুনেছি।
মায়া ভয় পেয়ে চুপসে যায়। সায়ান পুলিশদের ভেতরে আসতে বলে
” সায়ান তুমি পুলিশ নিয়ে এসেছো?
“হ্যাঁ
” কাজটা ঠিক করলে না সায়ান
পুলিশ মায়ার মা বাবাকে গাড়িতে বসায়।
রিক পুলিশ দেখে ঘাবড়ে যায়। তুলিকে টেনে ছাঁদে নিয়ে যায়। ছাঁদে একটা মই আছে সেই মই দিয়ে পালাবে। সায়ান তুলিকে খুঁজছে। তুলিকে যে রুমে রাখা হয়ে ছিলো সেই রুম পর্যন্ত চলে যায়। কিন্তু তুলিকে নিয়ে রিক আগেই বেরিয়ে যায়।
তুলি জানে না সায়ান এসেছে। রিক তুলির হাত ছেড়ে মই ঠিক করছিলো তখন তুলি চারতলা বিল্ডিং এর ওপর থেকে ঝাপ দেয়।
আআআআআআচআআআআ
চিৎকার শুনে সায়ান দাঁড়িয়ে পরে।
“তুলির গলা। কিন্তু তুলি এতো জোরে চিৎকার করলো কেনো? আমার তুলি ঠিক আছে তো
??
চোখ খুলে তুলি নিজেকে হাসপাতালের বেডে পায়। হাত পা নাড়াতে পারছে না। আশেপাশে তাকাতে পারছে না। কাউকে ডাকবে সেটাও পারছে না। শুধু তাকাতে পারছে।
একজন নার্স তুলির কেবিনে ঢুকে দেখে তুলি চোখ খুলেছে। তাই সে দৌড়ে যায় সবাইকে খবর দিতে। সায়ান একটু আগেই তুলির কেবিন থেকে বেরিয়েছিলো। নার্সের কথায় দৌড়ে তুলির কেবিনে ঢোকে।
তুলির পাশে চেয়ার টেনে বসে তুলির মাথায় হাত বুলায়। সায়ানকে দেখে তুলির চোখে পানি চলে আসে। চুলগুলো উসকো খুশকো মুখটা শুকিয়ে গেছে চোখের নিচে কালি পরে গেছে।
সায়ান তুলির চোখের পানি মুছিয়ে দেয়। তুলি সায়ানকে কিছু বলতে যায় কিছু পারছে না
“তুমি বলতে চাইছো আমার এই অবস্থা কেনো তাই তো
তুলি চোখ দিয়ে বুঝায় হ্যাঁ
” আমার জানটা আজ তিনদিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে আমি কি করে ভালো থাকবো বলো। রিককে সাজা দিয়েছি। ও আর আমাদের মাঝে আসবে না।
তখন ডাক্তার ঢোকে
“মিস্টার খান আপনি বাইরে যান আমরা আপনার মিসেস কে চেক আপ করবো।
” আমি এখন যায়। একটু পরে আবার আসবো
সায়ান তুলির কপালে চুমু দিয়ে বাইরে চলে যায়। ডাক্তার চেক আপ করে বের হয়।
“তুলি কথা বলছে না কেনো
” একটু পরেই কথা বলতে পারবে৷ তবে হ্যাঁ বেশি কথা বলাবেন না ওনাকে দিয়ে।
“ঠিক আছে
সায়ান ডাক্তারের সাথে কথা বলে তুলির কেবিনে যায়। তুলি মা দাদু সায়ানের মা বাবা রুহি সবাই বসে আছে তুলির কাছে। এটা সেটা বলছে। সায়ান দুরে দাঁড়িয়ে আছে। তুলি সায়ানকে না দেখে অস্পষ্ট সরে বলে
” সায়ান কোথায়?
“সায়ান আছে সোনা। হয়ত একটু বাইরে গেছে
তুলির মা তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
সায়ান সামনে আসে। সবাই চলে যায়। শুধু সায়ান বসে আছে তুলির পাশে। তুলি সায়ানের হা ধরে
” খেয়েছেন কিছু?
সায়ান কিছু বলে না
“আমার খিদে পেয়েছে
” আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
সায়ান যেতে নেয় তুলি হাত ধরে আটকায়
“কাউকে বলুন না খাবার দিয়ে যেতে আপনি আমার কাছেই থাকুন
সায়ান রুহিকে কল করে খাবার দিয়ে যেতে বলে। রুহি তুলির জন্য সুপ আর সায়ানের জন্য ভাত দিয়ে যায়। সায়ান তুলির মুখের সামনে খাবার ধরে
” আগে আপনি খান
“তুই খা আমি খাচ্ছি
” উহু আগে আপনি
সায়ান খায় তারপর তুলিকে খাইয়ে দেয়।
এভাবেই ভালোবাসায় কেটে যায় ছয় মাস। তুলি এখন পুরোপুরি সুস্থ। সায়ান আর তুলি এখন পরিবারের সাথেই থাকে। খুব সুখেই কাটছে ওদের দিন।
পরিবারের সবাই এক সাথে খেতে বসেছে। তুলি দুরে দাঁড়িয়ে আছে। তুলির কেমন জানি মাথা ঘুরছে। সকাল থেকে দুইবার বমি করেছে। কাউকে কিছু বলতেও পারছে না।
“তুলি তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
সায়ানের ডাকে তুলি এগিয়ে যায়।
” কি হয়েছে সোনা এমন দেখাচ্ছে কেনো তোকে
সায়ানের মা জিজ্ঞেস করে
“আমি তোমাদের কিছু বলতে চায়
” হুম বলো
“আমি প্রেগন্যান্ট
তুলির কথা শুনে সবার মুখে হাসি ফুটে ওঠে কিন্তু সায়ান খাবার ছেড়ে উঠে চলে যায়। সায়ানের এমন ব্যবহারে তুলির চোখে পানি চলে আসে।
” মা সায়ান চলে গেলো
“কিচ্ছু হয় নি তুলি। কান্না করছিস কেনো? সায়ান হয়ত অন্য কারনে চলে গেছে
” আমি জানি মা ও খুশি হয় নি
তুলি কান্না করে বলে। সায়ানের মাও কিছু বলে না।
সায়ানের বাবা আর দাদু মিলে পুরো পারা মিষ্টি বিলি করছে। খান বাড়িতে নতুন অতিথি আসছে যে। বাড়ির আসবাবপত্র সব নতুন করে বানাচ্ছে আরমান খান। সবাই প্রচুর খুশি।
সায়ানে বেলকানিতে বসে আছে। মুখটা ফ্যাকাশে করে। তুলি কাচুমাচু হয়ে সায়ানের পাশে বসে
“আমি কি কোনো ভুল করেছি
” নাহহ আমি ভুল করেছি
“তুমি যদি খুশি না থাকো তাহলে আমি বেবিটা নষ্ট করে ফেলবো
সায়ান তুলিকে জড়িয়ে কান্না করে ফেলে
” তুই এখনও ছোট সবে সতেরো বছর। ছোট বয়সে মা হওয়ার অনেক রিক্স তুলি। যদি তোর কিছু হয়ে যায়
কান্না করতে করতে বলে সায়ান। তুলি সায়ানের পিঠে হাত রেখে বলে
“কিচ্ছু হবে না। তুমি আছো তো
” আমার খুব ভয় করছে
“আল্লাহর ওপর ভরসা রাখো।
তুলি সায়ানের চোখের পানি মুছে দেয়। তুলির ভেতরেও ভয় ঢুকে গেছে। যদি কিছু হয়ে যায়।
চলবে