ভালোবাসি,পর্বঃ৮,৯

0
4600

ভালোবাসি,পর্বঃ৮,৯
Tanisha Sultana (Writer)
পর্বঃ৮

হেই স্যার

রিক তুলির কাছে আসে।
“আমাকে পাগল করে দিতে চাও না কি?

” কি যে বলেন না স্যার।

“ঠিকই তো বললাম। হেই তুলির ভাইয়া হাউ আর ইউ

হাসি মুখে বলে রিক। সায়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলে

“ফাইন

” স্যার এটা আমার হবু ভাবি। ভাইয়ের গফ। তো আমরা ওদিকটাই যায় ওনারা কথা বলুক

“ইয়াহ শিওর

” তুলি

“সায়ান ভাইয়া আমি ওদিকটাই থাকবো। হারাবো না। আপনাদের দেখাদেখি শেষ হলে ডেকে নিয়েন।

তুলি আর রিক চলে যায়।

” সায়ান তুলির সাথে রিককে খুব মানায় বলো সায়ান (মায়া)

“তুলিকে শুধু ওর স্বামীর সাথে মানায়।

দাঁতে দাঁত চেপে বলে চলে যায় সায়ান।

তুলি আর রিক পাশাপাশি হাটছে

” তুলি সায়ান কি শুধুই তোমার ভাইয়া।

“নাহহহ। আমার স্বামী

” কিহহহহহ। মজা করছো

“আমার জীবনটাই মজার।

” তোমার আর ওনার বয়সের দিক

“বাদ দেন না প্লিজ। আমার এখন আর এসব ভালো লাগে না

” সায়ান তোমার গায়ে হাত তুলে তাই না

তুলি থেমে যায়। রিকের দিকে তাকায়

“আজ তুমি কান্না করছিলে, তারপর তোমার কপালে চোট, সব মিলিয়ে আমি বুঝতে পেরেছি সায়ান তোমাকে পছন্দ করে না।

“হুমম। আমি আর একটু বড় হলে ওনাকে মুক্তি দিয়ে দেবো।

” তখন আমাকে একসেপ্ট করবে?

“আমি আপনার সাথে ফ্রেন্ড +স্যার হিসেবে কথা বলি। তো আপনি যদি অন্য কিছু বলেন তো আমাদের সম্পর্ক এখানেই শেষ।

” আমি তোমার ফ্রেন্ড হয়েই থাকতে চাই।

তুলি একটু মুচকি হাসে।

রিক তুলির অনেক ছবি তুলে দেয়।

সবাই এক সাথে খেতে বসে। মায়া সায়ানের পাশে বসেছে। আর তুলি রিক সায়ানের সামনে।

“তুলি

পেছনে তাকিয়ে দেখে তুলির বাবা। তুলির হাসিখুশি মুখটা কালো হয়ে যায়।

” কাকায় তুমি এখানে

সায়ান তুহিনকে জড়িয়ে ধরে।

“কেমন আছিস বাবা

” ভালো। তুমি

“খুব ভালো।

তুলি খাওয়া ছেড়ে ওঠে।

” তুলি একটু কথা বলো না আমার সাথে

“‌কি কথা বলবো আপনার সাথে? আর কেনো বারবার আমার সামনে আসছেন? কি চায়?

” তুলি আমি তোমার বাবা

“আমার বাবা মারা গেছে। আমি এতিম

তুলি আর এক পা না দাঁড়িয়ে চলে যায়। রিক তুলির পেছনে যায়।

” সায়ান

“কাকায় আমি তুলির সাথে কথা বলবো

সায়ান ও চলে যায়।
তুলি নিরিবিলি জায়গায় একা দাঁড়িয়ে আছে। রিক পাশে দাঁড়ায়।

“তুলি ছোট ছোট বিষয় নিয়ে ভেঙে পরা বা কান্না করাটা দুর্বলদের কাজ। জাস্ট ইগনোর করো। তোমার পিছুটান তো একদিন তোমার সামনে আসবেই তাই বলে ভেঙে পরবে। ইটস নট ফেয়ার তুলি

” আমি ভেঙে পরি নি। খুন্ব স্ট্রয় আমি

“ভেরি গুড

রিক তুলির মাথায় একটা চাটি মারে। তুলি হেসে ফেলে। সায়ান দেখে ফেলে। সায়ান রিকের সামনে থেকে তুলির হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। পাগলের মতো ডাইভ করে

” ভাইয়া প্লিজ আস্তে চালাও আমার ভয় করছে

সায়ান স্পিড আরও বাড়িয়ে দেয়। তুলি সিট বেল্ট বাধে নি। চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে তুলি। এই বুঝি এক্সিডেন্ট করলো।

সারা রাস্তা ভালোই আসে। কিন্তু বাড়ির সামনে আসতেই সামনে থাকা আরেকটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খায়। তুলি গাড়ির দরজা খুলে নিচে পরে যায়। সায়ান মাথায় একটু হালকা চোট পায়। পাশে তাকিয়ে দেখে তুলি নেয়। তুলি নিচে পরে গেছে।

সায়ান তুলিকে ওঠায়। হাসপাতালে নিয়ে যায়।
হাসপাতালের করিডোরে চোখ বন্ধ করে বসে আছে সায়ান। তুলি পায়ে ব্যথা পেয়েছে। আর কপালের কাটা যায়গা থেকে রক্ত বের হয়েছে।

“আপনি এবার আপনার বোনকে নিয়ে বাসায় যেতে পারেন

নার্সের কথা শুনে বিরক্তির সাথে নার্সের দিকে তাকায় সায়ান

” বোন

“হুম। উনি তো বললো আপনি ওনার ভাই হোন

সায়ান রাগে ফুসতে ফুসতে তুলির কেবিনে ঢোকে।
তুলি মুখ বাঁকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে

” আমি তোর ভাই লাগি

“আপনি আমার জোম লাগেন। সব সময় আমাকে মারার প্লান করেন কেন? আমি মরলে আপনি বেঁচে যান মানলাম তাই বলে নিজের হাতে খুন করবেন। আপনার কি একটুও মায়া দায়া নাই

তুলি আর কিছু বলতে পারে না। কারন তার আগেই সায়ান তুলির ঠোঁটে টুপ করে একটা চুমু দেয়। তুলির কথা গুলো আটকে যায়।

” কি হলো চুপ কেন? আরও কি কি বলবি বল

“আপনার ক্যারেকটার এতো খারাপ। ছি কথায় কথায় ঘেসাঘেসি করেন চুমু দেন। এরপর যদি আবার চুমু দিতে আসেন না তাহলে ঠোঁট সিলাই করে দেবো বলে দিলাম

” চুপ করবি

“আমি বাসায় যাবো

” তো যা না

“আমার পা টা যে আপনি ভেঙে দিছেন

” ঠিক হইছে এবার আমিও দেখবো তুই কি করে রিকের সাথে নিকনিক করিস

“আমি তো আর রিককে বাসায় নিতে পারবো না কজ ভাড়া থাকি যে। কি আর করার কিছু দিন আপনার আর আপনার মায়ার রংঢং দেখতে হবে

” তাতে তোর কি

“সেম টু ইউ

” তুই আমার বউ

“আপনিও আমার বর

” এতো কথা কেনো বলিস তুই

“সেটা তো আমারও কোশ্চেন

” আমি তোকে একটুও হেল্প করবো না। দেখি কি করে বাড়ি যাস

“আকাশ বা রিককে ফোন করতে হবে।

সায়ান তুলিকে কোলে তুলে নেয়।

নিজের রুমে বসে বই পরছে তুলি। পা টা আগের থেকে বেশি ব্যাথা হয়ে গেছে। নারাতেও পারছে না। এদিকে ভিষণ খিদে পেয়েছে। বাইরে থেকে সায়ান আর মায়ার কথার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।

” আজ আর কিছু খাওয়া হবে না। সায়ান আমার কথা ভুলে গেছে। না খেয়েই ঘুমিয়ে পরি

তুলি ওভাবেই ঘুমিয়ে পরে। কিছুখন পরে সায়ান খাবার নিয়ে এসে দেখে তুলি ঘুমিয়ে গেছে। সায়ানও নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরে।

সকালে অনেক বেলা করে তুলির ঘুম ভাঙে। পায়ের ব্যাথাটা অনেক কমেছে। একটু একটু হাটতে পারছে তুলি। ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে চলে যায়।

“আমি তোর জন্য রান্না করেছি

” আপনার রান্না খাবো না

“কেনো?

” বলা তো যায় না খাবারে বিশ টিশ মিশিয়ে দিতে পারেন

“তোকে আমার রান্নায় খেতে হবে।
তখন কলিং বেল বেজে ওঠে। সায়ান দরজা খুলে দেখে মায়া। মায়া ভেতরে আসে

” মায়া আপু ভালো সময়ই এসেছো

“কেনো?

” সায়ান ভাইয়া তোমার জন্য রান্না করেছে

“সত্যি

” হুম ১০০% সত্যি

মায়া খেতে বসে যায়। সায়ান অগ্নি দৃষ্টিতে তুলির দিকে তাকিয়ে আছে। মায়া খেতে খেতে বলে

“জানো তুলি। আগে না সায়ান প্রতিদিন আমার জন্য নতুন নতুন ডিশ রান্না করতো। কিন্তু তুমি ওর লাইফে আসার পরে আমাদের মধ্যে দুরত্ব বেরে গেছে

” সব কিছুর জন্য তুমি দায়ী মায়া (সায়ান)

“আই প্রমিজ আমি আবার সব ঠিক করে দেবো।

” বেশি পাকনামি করবি না তুই

সায়ান রাগী সুরে বলে

“আপনার মুখে হাসি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য যদি একটু পাকনামি করি তাহলে হ্মতি কি?

তুলি রান্নাঘরে চলে যায়। সায়ান তুলির দিকে তাকিয়ে থাকে। মায়া খাচ্ছে।

আজ আর সায়ান অফিসে যায় নি। তুলি সোফায় বসে খাচ্ছে আর ফোন দেখছে। মায়া চলে গেছে। মায়ার বাসাটা পাশেই হওয়ায় একটু পরপরই আসে।

” তাহলে তুই আমার রান্না করা খাবার খাবি না

তুলি পায়ের ওপর পা তুলে বলে

“প্রশ্নই ওঠে না

” খুব বার বেরেছে তোর

“হুমমম

“চুলা আমার। টাকা আমার

” টাকাটা দাদুর। চুলা নিয়ে খোটা দিচ্ছেন তো। আমি তো কয়েক মাস পরে চলে যাবো। তাই আর এই কয়মাসের জন্য চুলা কিনবো না।

“তুলি তুই

” কিচ্ছু বলার দরকান নেই। আপনি রান্না করবেন মায়া আপু খাবে ব্যাস

“আমার রান্না তুই খাবি

” যাতে আমাকে মারতে আপনার সুবিধা হয়

“আমি কেনো মারবো তোকে

” তাহলে পা টা ভাঙলো কি করে

“তোর বোকামির জন্য

” আপনার সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই

“রিকের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয়

” হুম হয় তো

সায়ান তুলির হাত শক্ত করে ধরে বলে

“আমার সাথে তোর কথা বলতে হবে। ইচ্ছে না থাকলেও। আর রিকের বেবস্থা তো আমি করবোই।

চলবে

ভালোবাসি
পর্বঃ৯
Tanisha Sultana (Writer)

আজ তুলির এসএসসি পরিহ্মা। এই এক বছরে সব কিছু পাল্টে গেছে। শুধু পাল্টায়নি তুলি আর সায়ানের সম্পর্কটা। তুলি আর সায়ান দুজন দুই পান্তে।
তুলি খাচ্ছে আর বই পরছে। সায়ান খাচ্ছে আর আরচোখে তুলিকে দেখছে। খাওয়া শেষে তুলি স্কুল ড্রেস পরছে আর আয়না দেখছে

“ইশ মোটা হয়ে গেছি। সবাই পড়ার চাপে রোগা হয় আর আমি মোটা হই।

” আয়না দেখা শেষ হলে চল

সায়ানের কথায় তুলি আয়না ছেড়ে সায়ানের দিকে তাকায়

“সরি বুঝতে পারলাম না

” কালা না কি তুই? তোকে আজ আমি নিয়ে যাবো

“সূর্য মেবি আজ ওঠে নি তাই না

” এমন কেনো মনে হচ্ছে তোর

“না মানে এতোদিন তো কত বলতাম আপনি আমাকে ধমক দিয়ে বলতেন নিজের কাজ নিজে করতে শেখ। তো আজ এই পরিবর্তন কেনো?? ওহহহ বুঝতে পেরেছি এক্সাম শেষে তো আমি চলে যাবো তাই এখন নিয়ে যেতে চাইছো

” তুই এতো কথা বলিস কেনো? একটু চুপ থাকতে পারিস না

“আল্লাহ মুখ দিছে কথা বলার জন্য চুপ থাকবো কেন?

” অলরেডি নয়টা বারো বাজে। দশটায় তোর এক্সাম

“ওহহহ আমার হয়ে গেছে

ফাইলটা হাতে নিয়ে তুলি দৌড়ে বেরিয়ে যায়।
সায়ান তুলির হাত ধরে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। সায়ানের বিহেব তুলির অবাক লাগছে। আজ এতো কেয়ার কেনো করছে।

সায়ান তুলিকে পরিহ্মার হলে পৌঁছে দিয়ে চলে যায়। এক্সাম শুরুর আগে রিক তুলির সাথে দেখা করে গেছে।

রিক আর সায়ান পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে

” ভাইয়া,কিছু বলবেন

“তুমি তুলিকে ভালোবাসো

” কেনো বলেন তো

“বলো না। সত্যি বলবে

” হুম বাসি

“আর তুলি

” ও বাসে না। আমাকে জাস্ট ফ্রেন্ড ভাবে

“বিয়ে করবে তুলিকে

” তুলি তো আপনার বউ

“হুম শুধু নামে। আমি কখনো তুলিকে ছুঁয়েও দেখি নি।

” আমি জানি

“আমর থেকে তুলি অনেক ছোট। আমার সাথে ওর যায় না। কিন্তু তোমার সাথে তুলিকে খুব মানাবে। তুমি আর তুলি পারফেক্ট জুটি।

” কিন্তু ভাইয়া

“ডিভোর্স পেপার রেডি করা আছে। তুলিকে দিয়ে সাইন করিয়ে নেবো

” আর আপনি

“আমি মায়াকে বিয়ে করে নেবো।

রিক সায়ানকে জড়িয়ে ধরে।

” ধনী ভাই। আমি তুলিকে ভীষণ ভালোবাসি

এক্সাম শেষে তুলি সায়ানের খোঁজে এদিকে এসেছিলো তাই ওদের সব কথা তুলি শুনে ফেলে। খুব কান্না পাচ্ছে তুলির। দৌড়ে বাড়ি চলে যায়।

সায়ান তুলিকে স্কুলে খুঁজে না পেয়ে বাড়ি ফিরে যায়। তুলির ঘরের দরজা বন্ধ। সায়ান কিছুখন ডাকাডাকি করে কিন্তু তুলি দরজা খোলে না। তুলির কোনো শারা না পেয়ে সায়ান চলে যায়

“আমাকে সায়ান ডিভোর্স দিয়ে দেবে এতে আমার এতো কান্না পাচ্ছে কেনো? দিক না ডিভোর্স তাতে আমার কি? উনি মায়া আপুকে বিয়ে করবে বলে আমাকে রিকের সাথে বিয়ে দিয়ে দেবে। আমি রিক কে বিয়ে করবো না। আমি চলে যাবো।

তুলির কান্নার বেগ বাড়িয়ে দেয়। মানুষ এতো স্বার্থপর কেনো হয়? সব সময় নিজের ভালোটা দেখে। চারপাশের মানুষদের নিয়ে ভাবার সময়ই নেই।

তুলি পরতে বসে। এক্সাম শেষ হলেই তুলি চলে যাবে। এই কয়দিন আর সায়ানের মুখোমুখি হতে চায় না তুলি।

রাত বারোটা সায়ান বেলকনিতে বসে সিগারেট খাচ্ছে। সিগারেটটা শেষ হলেই তুলির রুমে যাবে। প্রতিদিনই সায়ান তুলির রুমে যায়। তুলির ঘুমন্ত চেহারাটা দেখা সায়ানের অব্ভাস হয়ে গেছে। তুলি দরজা বন্ধ করে শুয়েছে তাই সায়ান বেলকনি দিয়ে তুলির রুমে যায়। চেয়ার টেনে তুলির পাশে বসে। কেনো বসে আছে সায়ান নিজেও জানে না।

ফোন বেজে ওঠে সায়ানের। ফোনের স্কিনে মায়া নামটা লেখা। ফোন হাতে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে সায়ান

” বলো

“কি করছো

” কিছু না

“শোনো না আমি তোমার বাসায় আসি

” এতো রাতে কেনো?

“বাবা,মা বাড়িতে নেয়। একা প্লিজ আসি না

” মায়া তুলি কি ভাববে

“পিচ্চি একটা,মেয়ে। ও কি ভাববে? আমি তুলিকে বুঝিয়ে বলবো

কলিং বেল বাজায় সায়ান দরজা খুলতে যায়। তুলি পানি খেতে উঠছিলো এতো রাতে কে এসেছে এটা জানতে উঁকি দেয়। দেখে মায়া এসেছে। সায়ান আর মায়া কথা বলছে। তুলি আবার দরজা আটকে ফেলে। কষ্টে তুলির বুকটা ফেটে যাচ্ছে।

আজ এক্সাম শেষ। সায়ান অফিসে গেছে। এই সুযোগে তুলি জামাকাপড় গুছিয়ে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার আগে পুরো বাড়িটা একবার ভালো করে দেখে নেয়।
বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে তুলি। হাতে দুটো ব্যাগ। কোন বাসটা মানিকগঞ্জ যাবে এটাই বুঝতে পারছে না তুলি। এদিকে ওদিকে তাকিয়ে খুঁজছে।অবশেষে একটা বাস পায় মানিকগঞ্জ টু ঢাকার।

তুলি এক দৌড়ে বাসে ওঠে। এই প্রথম একা একা এতোটা রাস্তা যাবে তুলি। একটু একটু ভয় করছে। তুলি একদম পেছনের ছিটের আগের ছিটে বসেছে। পেছনের ছিটে কে বসেছে দেখার জন্য উঁকি দেয় তুলি। দেখে তুলির বাবা বসে আছে আর তার সাথে তুলির থেকে বয়সে ছোট একটা ছেলে আর একজন মহিলা। তুলি সামনে তাকায়। তুলির বাবা তুলিকে দেখে নি।

বাড়িতে এসে কলিং বেল বাজাতেই সায়ানের মা দরজা খুলে দেয়।

” তুলি তুই

সায়ানের মা একটু জোরেই বলে। তুলির মা সায়ানের বাবা সায়ানের বোন রুহি আর দাদু চলে আসে। তুলি সায়ানের মা কে ঠেলে ভেতরে ঢুকে সোফায় বসে পরে। তুলির মা তুলির পাশে বসে। আরেকপাশে তুলির দাদু বসে। তুলির দাদু বলে

“তুমি একা কেনো? সায়ান কোথায়?

” জানি না

“জানিস না মানে কি তুলি?

” জানি না মানে জানি। তোমরা আমাকে কি পেয়েছো বলোতো সবাই মিলে সায়ান ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিয়ে দিলে। সায়ান ভাইয়া আবার অন্য একটা ছেলে ঠিক করেছে আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য। আবার আমার বাবা মানে তোমার ছেলে সে আবার বউ বাচ্চা নিয়ে সব সময় আমার সামনে দিয়ে ঘুর ঘুর করবে।
কি ভাবো বলোতো আমাকে তোমরা? আমি ছোট বলে যা খুশি করবে। আমি সায়ানের সাথে ফিরবো না ইনফেক্ট সায়ান ভাইয়া কে আমার চোখের সামনেও দেখতে চায় না

চিৎকার করে কথা গুলো বলে তুলি নিজের রুমে চলে যায়। উপস্থিত সবাই তুলির কথা শুনে চুপ হয়ে গেছে

আজ সায়ানের বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে যায়। ইমপটেন্ট একটা মিটিং ছিলো। বাড়িতে ঢুকে সায়ানের কেমন জানি ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। কারণ প্রতিদিন এই সময় বাড়ি ফিরে দেখে তুলি কার্টুন দেখছে আর খাচ্ছে। কিন্তু আজ তুলি নেই। সায়ান তুলির রুমে গিয়ে দেখে তুলি তো দুরের কথা তুলির একটা জামাও নেই।

সায়ান দৌড়ে গেটের কাছে এসে দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করে

“চাচা তুলিকে দেখেছেন

” হহ তুলি আফামনি তে দুপুরেই ব্যাগপএ নিয়ে চলে গেছে

চলে গেছে শুনে সায়ানের বুকের ভেতর মোচর দিয়ে ওঠে। রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয় সায়ান। সিগারেট ধরায়। তুলি চলে গেছে শুনে তো খুশি হওয়ার কথা কিন্তু আমার এতো খারাপ লাগছে কেনো? কম তো কষ্ট দেই নি পিচ্চি টাকে।

নিজের মনে কথাগুলো ভাবছে সায়ান।

ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসে

“মা খেতে দাও

সাওনের মা তুলির জন্য খাবার নিয়ে আসে। তুলির সামনে রাখতেই তুলি খাওয়া শুরু করে

” সায়ান তোকে ভালোবাসে

তুলি খাওয়া থামিয়ে বলে

“নাহহ। মায়া আপু ফিরে এসেছে এখন আমাকে ডিভোর্স দিয়ে তাকে বিয়ে করবে

” কিহহহ

“হুম। তোমার ছেলে খুব খারাপ

ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে তুলি। সায়ানের মা তুলিকে জড়িয়ে ধরে

“কাঁদিস না সোনা

” জানো আমাকে মেরেছে। একদিন পার্টিতে নিয়ে গিয়ে ফেলে এসেছিলো।

“তোকে আর সায়ানের সাথে থাকতে হবে না। ও চাইছে তো ডিভোর্স দিতে। ঠিক আছে আমি তোকে রাজপুত্রের মতো ছেলের সাথে বিয়ে দেবো

বিয়ে কথাটা শুনে তুলি সায়ানের মাকে ছেড়ে দেয়

” আমি কখনো বিয়ে করবো না

না খেয়েই উঠে পরে তুলি।

নিজের রুমে এসে দেখে দাদু বসে আছে

“দাদু তুমি

” এক্সাম কেমন হয়েছে

“ভালো

” তোমার বাবা তোমার সাথে কথা বলেছে

“ওনার বিষয়ে কিছু শুনতে চায় না

” ঠিক আছে

দাদু চলে যায়। তুলি দরজা আটকে দেয়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here