ভালোবাসি তাই #পর্বঃ১৬,১৭

0
2095

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ১৬,১৭
#Tanisha Sultana
পর্বঃ১৬

পিছাতে পিছাতে তানহা ওয়াশরুমের দরজায় গিয়ে ধাক্কা খায়। আর পেছানোর জায়গা নেই। অভি শাড়ি নিয়ে এগিয়ে আসে।
“এএকদম আমার কাছে ঘেসবেন না। বলে দিলাম
ভয় পেয়ে থেমে থেমে বলে তানহা।

” কেনো ঘেসবো না? ভ্রু কুচকে বলে অভি।
হাজবেন্ড আমি তোমার। একটু পরেই আমাদের ফুলসজ্জা।
পকেটে হাত গুজে বলে অভি।
“আপনি আমার কেউ না। আই হেট ইউ। কিসের বিয়ে এটা? এটাকে বিয়ে বলে?
রাগে গজগজ করতে করতে বলে তানহা।

“কখন বিয়ে হয়েছে আমি জানি না।
অনেক কষ্টে কান্না চেপে রেখেছে তানহা।

” এক মিনিট
অভি আলমারি থেকে রেজিস্ট্রি পেপার নিয়ে আসে। তানহার সামনে ধরে বলে
“এই যে তুমি সাইন করেছো
তানহা পেপারটা ধরে দেখতে চায়। অভি দেয় না। স্বযত্নে আবার আলমারিতে রেখে আসে।
” এবার বিশ্বাস হলো?
তানহার কাছে আসতে আসতে বলে অভি।
“মানি না আমি
” মানতে হবে না। জাস্ট থাকতে হবে আমার সাথে।

অভি তানহার খুব কাছে চলে আসে।
” প্লিজ দুরে যান। টাচ করবেন না আমায়
চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বলে তানহা।

“টাচ তো করি নি। ইনোসেন্ট ফেস করে বলে অভি।

তানহা চোখ খুলে দেখে সত্যিই টাচ করে নি। কিন্তু খুব কাছে চলে এসেছে।
” বদ লোক একটা
বিরবির করে বলে তানহা।
“দুরে যান না
বিরক্তি নিয়ে বলে তানহা।
” কেনো যাবো? তানহার মুখে ফু দিয়ে বলে।
“দেখুন। চোখ বন্ধ করে
ঠান্ডা গলায় বলে তানহা।
” একটু পরেই ভালো করে দেখবো
তানহার দিকে আরও একটু ঝুঁকে বলে অভি।

” তানহা
তানহার মা আর অভির মা তানহা বলে রুমে ঢুকে যায়।
“এখন কি রোমাঞ্চ করার সময়?
মুখ ঘুরিয়ে বলে অভির মা।
ছিটকে দুরে সরে যায় অভি। ইস কি লজ্জা জনক বেপার। ওনারা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। তানহা পেছন ঘুরে শ্বাস নেয়। কি ভাবলো ওনারা? লজ্জায় তানহার মাথা কাটা যাচ্ছে। দৌড়ে এখানে থেকে চলে যেতে মন চাইছে আর অভির মাথা ফাটাতে।

“তোমরা
অভি মাথা চুলকে বলে।
অভির মা অভির কান টেনে বলে
” খুব বড় হয়ে গেছো না? এতো করে বললাম বিয়ে করে নে করলি না আর এখানে এসে লুকিয়ে বিয়ে করে নিলি
অভিমানের সুরে বলে আনিকা (অভির মা)

অভি কান ছাড়িয়ে নেয়। কান ডলতে থাকে।
“আরে আম্মু জোর করে বিয়ে করে নিয়েছি। এই মেয়ে হলো চম্বুক। আবিরের পেছনে আঠার মতো পড়ে ছিলো। তাই এমনটা করলাম।
অভির কথায় তানহার রাগ আকাশে চড়ে যায়।

” অভি এভাবে কেনো বলছো? রাগী সুরে বলে আনিকা।
তানহা মায়ের দিকে তাকিয়ে রাগী সুরে বলে
“এখানে ড্রামা দেখতে এসেছো?

হেনা (তানহার মা) এক গাল হেসে বলে
” এমা ড্রামা দেখতে আসবো কেনো? মেয়ে জামাইকে দোয়া করতে এসেছি।

“মানি না আমি এ বিয়ে
কিছুটা চিৎকার করে বলে তানহা।
” তুমি মানো না বলে মহাভারত অসুদ্ধ হয়ে গেলো। কথার পিষ্টে বলে অভি।
“আপনাকে আমি পুলিশে দেবো। আঙুল তুলে বলে তানহা।
“অপরাধ? কপালে ভাজ ফেলে বলে অভি।
” আমায় জোর করে বিয়ে করেছেন। তারপর যখন তখন কাছে চলে আসেন। যেখানে সেখানে কিস করে বসেন
তানহার কথায় অভির কাশি উঠে যায়। হেনা আর আনিকা হাত দিয়ে কান চেপে ধরে।
তানহা আবার শুরু করে
“এখনই এই অবস্থা। যখন আমি একা বাড়ি থাকবো
আর কিছু বলার আগেই তানহা মা আর খালামনির দিকে নজর যায়। অভি দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে আছে।

তানহা অভির হাত থেকে জামাকাপড় ছো মেরে নিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়৷ কি বলে ফেললো ছি। দরজা বন্ধ করে দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়।

অভি কোনো দিকে না তাকিয়ে দৌড়ে বেড়িয়ে যায়। হেনা আর আনিকা হাসতে থাকে এদের কান্ড দেখে।

একটু পরেই তানহা শাড়িটা কোনোরকম পেচিয়ে ওয়াশরুমের দরজা খুলে উঁকি দেয়। কেউ আছে না কি? কেউ নেই মনে হচ্ছে। হাঁটতেই পারছে না। এমনিতে শাড়ি কখনো পড়ে নি। আজকেই প্রথম। রুমে এসে দেখে রুমটা অন্ধকার। একটু ভরকে যায় তানহা। বাইরে থেকে চেচামেচির শব্দ আসছে। অনেক মানুষ এসেছে তাই।

তানহা সুইস খুঁজছে। একেতে শাড়ি পড়তেই পারে না তারওপর অন্ধকার। সুইজ খুঁজে না পেয়ে হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।বেলকনির দরজা খুলে দেয়। পাশের ফ্লাট থেকে হালকা আলো এসে পড়ে। ওই আলোতেই তানহা শাড়ি পড়ার চেষ্টা করে।
চোখের সামনে চুল পড়ে যাচ্ছে, নাহলে আচল পড়ে যাচ্ছে, কুচি খুলে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে ভীষণ বিরক্ত লাগছে তানহার। এমনিতেই অভি তানহাকে বলছে না কি করে ওদের বিয়ে হলে তারওপর আবার খবরদারী করছে। জাস্ট ডিজগাস্টিং।

হঠাৎ এক জোড়া হাত এসে তানহার কুচি ধরে। চমকে ওঠে তানহা। চিৎকার দিতে যায়। অভি মুখ চেপে ধরে
“হুসসসসস আমি

তানহা তাকায় অভির দিকে। হালকা আলো থাকলেও অভির মুখটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। তানহার পুরো শাড়িটাই পড়ে গেছে।
অভি তানহাকে ছেড়ে দেয়। তানহা নিজের অবস্থা বুঝতে পেরে বেলকনির দরজা আটকে দেয়। এখন পুরো অন্ধকার হয়ে গেছে

” দরজা আটকে দিলে কেনো? এখন তো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। ওয়েট লাইট জ্বালাই

অভি যেতে নিলে তানহা হাত টেনে ধরে। অভি অন্ধকারেও তানহার দিকে তাকায়।

“আলোর দরকার নেই
আমতাআমতা করে বলে তানহা। অভির সন্দেহ হয়। নিজে ইচ্ছেই তানহার ওর হাত ধরেছে নিশ্চয় কিছু আছে। হাত বাড়িয়ে সুইচ অন করে দেয়। তানহা চমকে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। অভি তানহার দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে। চোখ বড় বড় করে ফেলে। তরতর করে ঘামছে অভি।
তানহা শাড়ি উঠিয়ে পেচানোর চেষ্টা করে। তারাহুরোর জন্য এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।শাড়ির আলই খুঁজে পাচ্ছে। অভি চোখ বন্ধ করে লাইট অফ করে দেয়। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।
তানহা হাফ ছেড়ে শাড়ি পড়ার চেষ্টা করে। অভি তানহার হাত থেকে শাড়ি নিয়ে নেয়।
” আআআমি পাড়বো
থেমে থেমে বলে তানহা।
“সাটআপ। ধমক দিয়ে বলে অভি। তানহা থেমে না থেকে আবার অভির হাত থেকে শাড়ি নিতে যায়
” তোমাকে থামানোর টেকনিক কিন্তু আমি জানি। তুমি যদি বলো তো….

তানহা শাড়ি ছেড়ে দেয়। অভি বাঁকা হেসে শাড়ি পড়িয়ে দিতে থাকে।
“বদের হাড্ডি, করলা, হনুমান, শা* তএই বউ পাবি না
মনে মনে অভিকে গালি দিতে থাকে তানহা।
” বউ আলরেডি পেয়ে গেছি
কুচি ঠিক করতে করতে বলে অভি। তানহা থমকে যায়। এই লোকটা মনের কথা কি করে শুনতে পায়।

“নাও গুঁজো

তানহা অভির কথা বুঝতে পারে না।
” কিহহহ
অভি উওর না দিয়ে গুঁজে দেয়। শিওরে ওঠে তানহা। ছিটকে দুরে সরে যায়। অভিও কারেন্টের শক খায়। অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।

“যখন তখন আমাকে টাচ করবেন না আপনি?
রাগী গলায় বলে তানহা। অভি সুইস অন করে দিয়ে পকেটে হাত গুজে বলে
” তাহলে কি তোমাকে টাচ করার সময় গুলো তুমি লিস্ট করে দেবে?
চোখ বড়বড় করে তাকায় তানহা অভির দিকে। অভি উওরের আশায় ভ্রু কুচকে আছে।
“ভালোবাসি না আপনাকে আমি।
ঝাঁঝালো গলায় বলে তানহা।
” আমিও তোমায় ভাললবাসি না। ইনফেক্ট তোমায় আমার সয্যও হয় না। কিন্তু কি করবো তবুও তোমার সাথে ফুলসজ্জা করতে হবে। সোজাসাপ্টা বলে দেয় অভি।

“লজ্জা করে না আপনার?
নাক মুখ কুঁচকে বলে তানহা।
” লজ্জা তো তোমার করা উচিৎ একটা বিবাহিত ছেলের সংসারে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছো নিজের স্বামী ছেড়ে।
“স্বামী মাই ফুট
” ঝগড়া করার ইচ্ছে নেই। এমনিতেই দশটা বেজে গেছে। এবার চলো ওরা আমাদের জন্য খাট সাজাচ্ছে।

চুল ঠিক করতে করতে বলে অভি।
“আসছি। একটু পরে দেখা হবে। রেডি থেকো
বলে অভি বেরিয়ে যায়। অভির মাথা ফাটাতে ইচ্ছে হচ্ছে তানহার। এতো
বেয়াদব ছেলে হয়।
অভি বেরিয়ে যেতেই দুটো মেয়ে রুমে ঢুকে। জোর করে তানহাকে সাজাতে থাকে।

বাসা থেকে বেরিয়ে অভি সিগারেট ধরায়। একটু বেশি বেশি হয়ে গেলো। কিন্তু এছাড়া উপায়ও নেই। মায়া বড্ড বেশি ভালোবাসে আবিরকে।অভির কাকাতো বোন মায়া। আপন বোনের মতোই ভালোবাসে মায়াকে। তাছাড়াও আবিরের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন আবিরের তানহাকে ভুলতে হবে।
অভিকে যে তানহাকে খুব ভালোবাসে তা না। নিজের বাবা মা আর তানহার বাবা মায়ের কথাই বিয়ে করে নিলো। তাছাড়া তানহার এখন একজন মানুষ প্রয়োজন যে ওকে আগলে রাখবে।

একটু আগেই তানহাকে সাজিয়ে গুছিয়ে ফুলসাজানো ঘরে রেখে গেছে দুটো মেয়ে। ভীষন বিরক্ত লাগছে তানহার। ওই বদ লোকটা না জানি কি করবে। এসব ভেবে পায়চারি করছে। হঠাৎ চোখ যায় ড্রেসিং টেবিলের ওপরের মোবাইলের দিকে। খুশিতে মনটা নেচে ওঠে তানহার। ফোনটা হাতে নিয়ে আবিরের নাম্বারে ডায়াল করে। দুইবার রিং হওয়ার পরে আবির ফোন তোলে। একটা নদীর ধারে বসে ছিলো আবির।

” হেলো আবির?
তানহার কন্ঠ শুনে আবির চমকে উঠে। মনের মধ্যে প্রশান্তির হওয়া বয়।
“কেমন আছো তানহা?
আহত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে আবির।
“ভালোই। তুমি? দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে তানহা।
” ভীষণ ভালো। তাচ্ছিল্য করে বলে আবির।
“একটা কথা বলি রাখবে?
” বলো
“মায়াকে মেনে নাও
আবির উওর না দিয়ে ফোন কেটে দেয়। তানহা ফোনটা ছুঁড়ে মারে।
অভির সাথে কিছুতেই এক রুমে থাকবে না তানহা। গহনা খুলে রেখে দেয়। বেলকনিতে গিয়ে দরজা বন্ধ করতে গিয়ে দেখে দরজা ভাঙা।
” এটাতো একটু আগেও ঠিক। ধুর
বেলকনির একটা টুক নিয়ে বসে পড়ে তানহা।
“ওই লোকটা এতো ইডিয়েট। লাইফ শেষ।

আশিক অভির পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
” কি রে বউকে রুমে বসিয়ে রেখে এখানে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিস?
আশিকের দিকে এক পলক তাকায় অভি। তারপর সিগারেটে টান দিয়ে ধোঁয়া আকাশে উড়িয়ে বলে
“কেমন যেনো লাগছে।
” কিচ্ছু হবে না রুমে যা। তানহা তোর বউ।
“বলছিস?
” হুমম বলছি
অভি আশিকের কাছে বাকি সিগারেট দিয়ে রুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ায়।
রুমে ঢুকে অভি দরজা বন্ধ করে দেয়। তানহা কাচুমাচু হয়ে বসে।

চলবে

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ১৭
#Tanisha Sultana

পুরো রুমে চোখ বুলায় অভি। নাহহ তানহা কোথাও নাই। গেলো কোথায়? ভাবছে অভি। ভাবতে ভাবতে খাটে গিয়ে বসে। বেলকনিতে তাকিয়ে দেখে তানহা নাই।
“যেখানে খুশি যাক। একটু শান্তিতে থাকি।
বিছানায় শুতে পড়ে। ভেজা ভেজা অনুভব করে। চট করে উঠে দেখে পুরো বিছানায় ছিপছিপ করছে পানি। অভি রেগে হাত মুঠ করে।
” তানহার বাচ্চা
কিছুটা চেচিয়ে বলে। তানহা আলমারির ওপরে চোরের মতো ঘাপটি মেরে বসে আছে। যাতে অভি না দেখতে পায়। অভি কোমরে হাত দিয়ে রাগে ফুসছে। এখন ঘুমবো কোথায়? রুমে একটা সোফা পর্যন্ত নাই।
“তোমাকে একবার খুঁজে পায় তানহা তারপর বোঝাবো কতো ধানে কত চাল
এদিকে তানহাকে মশায় কামড়াচ্ছে মারাক্তকভাবে। পারলে মশা তুলেই নিয়ে যেতো। তানহা দাঁতে দাঁত চেপে মশার কামড় সয্য করছিলো কিন্তু এখন সয্য করতে না পেরে আহহ করে ওঠে। অভি আলমারির ওপরে তাকায়। তানহাকে ওখানে দেখে অভির চোখ কপালে।
” হেই ইডিয়েট তুমি ওখানে কেনো?

অভির কন্ঠ শুনে তানহা ছিটকে ওঠে পড়ে যায়। একদম অভির ওপরে। দুইজনই আহহহ করে চিৎকার দিয়ে ওঠে।
অভি নিচে তানহা ওপরে পড়েছে। অভি বেশ ভালোই ব্যাথা পেয়েছে পায়ে আর কোমরে। তানহার মুখটা অভির বুকে। চোখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। মনে মনে বলেই যাচ্ছে আল্লাহ বাঁচাও।

“ওঠো
দাঁতে দাঁত চেপে বলে অভি। তানহা ধপ করে চোখ খুলে অভির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে
” এ্যা

“কমনসেন্সের অভাব তোমার? এরকম ইডিয়েট মানুষ কি করে হয়?
রাগে গজরে ওঠে বলে অভি। তানহা তারাহুরো করে অভির ওপর থেকে উঠে যায়। অভি কোনোরকম উঠে বসে। কোমরে ব্যাথা করছে। তানহা শাড়িতে হাত কচলাচ্ছে আর এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। এবার নির্ঘাত ভীষণ বকা খেতে হবে।
“হাত ধরো
অভি হাত এগিয়ে দিয়ে বলে। তানহা অন্য মনস্ক ছিলো তাই অভির কথা শুনতে পায় নি।
” হেই ইডিয়েট
অভি জোরে বলে তানহা আবার ধরফরিয়ে ওঠে
“হ্যাঁ
” হাত ধরতে বলছি
“আপনার হাত আমি কেনো ধরবো। একদম ধরবো না।
গাল ফুলিয়ে বলে তানহা।
” ধরবা না তো?
হাত নামিয়ে নিয়ে বলে অভি।
“একদম না
অভি তানহার হাত ধরে টান দেয় তানহা পড়ে যায়। এবার তানহা কোমরে ব্যাথা পায়। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে। কোমরটা মটমট করছে।
” এবার দেখো কেমন লাগে
ঠোঁট মেলে বলে অভি। তানহা কোমরে হাত দিয়ে আছে। অভি খাট ধরে আস্তে আস্তে ওঠে। ব্যাথাটা ভালোই লেগেছে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বিছানার তোষক ফেলে দেয়। আলমারি থেকে অন্য একটা বিছানা চাদর বের করে বিছানায় মেলে দেয়। তারপর বালিশ ঠিক করে শুয়ে পড়ে।

তানহা এখনো ওখানে বসে আছে।
“বদের হাড্ডি একটা। করলা, তুই বউ পাবি না। এভাবে কেউ ফেলে দেয়? মনুষ্যত্ব বোধ টুকুও নেই
মনে মনে বলতে বলতে উঠে পড়ে। হাঁটতে পারছে না।

” আমি কোথায় ঘুমবো
শক্ত গলায় জিজ্ঞেস করে তানহা।

“wish
খাটটা বেশ বড় চাইলে এখানে ঘুমতে পারো। আবার ফ্লোর ও আছে।
চোখ বন্ধ করে বলে অভি।
” একদম আমাকে টাচ করবেন না।
খাটের এক পাশে বসে বলে তানহা।
“করবোই
সোজাসাপ্টা বলে দেয় অভি।
তানহা অভির দিকে কটমট চোখে তাকায়।
” দেখুন
অভি লাফ দিয়ে আধসোয়া হয়। হাতের কনুইতে ভর দিয়ে হাতর তালুর ওপর মাথা রাখে।
“হুমম দেখাও কি দেখাবা। সেই বিকাল থেকে শুধু বলেই যাচ্ছেন দেখুন দেখুন। তো দেখাও। কোন রুপের বাহার দেখাবা। এমনিতেও তোমার সব দেখা
তানহা চোখ বড়বড় করে তাকায় অভির দিকে। অভি হাত নামিয়ে বালিশে মাথা রাখে।
” দেখে ফেলেছেন মানে কি?
কপাল কুচকে বলে তানহা।
অভি উওর না দিয়ে তানহাকে টেনে শুয়িয়ে দেয়। মাঝখানে কোলবালিশটা দিয়ে তানহার দিকে পেছন ফিরে শুয়ে পড়ে।

সকালবেলা
অভির আগেই তানহা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। রাতে ব্যাথাটা ভালোই বেড়েছে। অভির মা আর তানহার মা রান্না করছে। তানহা সেদিকে না গিয়ে সোজা নিজের বাসায় চলে যায়। মায়ের সাথে কথা বলবে না ঠিক করেছে।
??
একটু পরেই অভি আসে। অভিও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। আশিক রবিন শিফা (অভির ফ্রেন্ড) মলি ওরা গল্প করছিলো। সকাল সকাল চলে এসেছে অভির বউ দেখবে বলে।
“অভি ঘুম হয়েছে?
এক গাল হেসে বলে মলি।
” অভি ওদের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে
“ঘুম না হওয়ার কি আছে।
” হুমম তাই তো। (শিফা)
“ব্রো তোরা কি রাতে টি-টুয়ান্টি ম্যাচ খেলেছিস না কি? দুজনই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিস।
আশিকের কথায় সবাই মুখ টিপে হাসে। অভি কপালে ভাজ ফেলে তাকায় ওদের দিকে।
” ও মা আবার শার্টে লিপস্টিকের দাগও আছে।
অভির শার্ট ছুঁয়ে দিয়ে বলে রবিন।
“তোরা কি শুরু করেছিস বল তো? রাগী গলায় বলে অভি।
” কি শুরু করলাম? বাই দ্যা ওয়ে অভি তুই যে এতো রোমান্টিক আগে তো বুঝি নি। থাকিস তো মুখটা বাংলার পাচের মতো করে। চোখ টিপে বলে মলি।
“আরে বুঝিস না। আগে তো বউ ছিলো না
এদের এখানে থাকলে লেগপুল করেই যাবে তাই অভি উঠে চলে যায়। সবাই হো হো করে হেসে ওঠে।

??
একটু পরেই তানহা রাগে গজগজ করতে করতে এবাড়িতে চলে আসে।ওরা সবাই তখন খাচ্ছিলো। তানহাকে দেখে অভির মা বলে
” তানহা খেতে বস
তানহার খাবার প্লেট ঠিক করে দেয়। তানহা অভির সামনে এসে দাঁড়িয়ে। অভিকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অভি হাত টান দিয়ে বসিয়ে দেয় তানহাকে নিজের পাশে।
“খাওয়ার সময় ডিস্টার্ব করো না
তানহার মুখে খাবার ভরে দিয়ে বলে অভি। তানহার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। প্রচন্ড খিদেও পেয়েছে তাই বেশি কথা না বলে খেয়ে নেয়।
খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই চলে যায়। তানহার মা আর অভির মাও চলে যায়।
তানহা রুমে এতোখন রুমেই ছিলো। মায়ের সাথে একটা কথাও বলে নি। বলবেই বা কেনো অভির এরকম জঘন্য কাজকে সমর্থন করলো। পায়চারি করছে তানহা। আজ অভিকে ইচ্ছে মতো কথা শুনিয়ে দেবে।
দরজা খোলার শব্দে তানহা জোরে শ্বাস নেয়
” পবলেম কি আপনার? আমার সব জিনিসপত্র কোথায় সরিয়ে রেখেছেন? এতো জঘন্য কেনো আপনি? কি চান কি? আমি আপনার সাথে থাকবো না।
এক নাগারে কথাগুলো বলে তানহা দম নেয়। অভি ঘনঘন চোখের পলক ফেলে। তানহাকে এড়িয়ে কাবাড থেকে জামাকাপড় বের করে। তানহা চোখ ছোটছোট করে তাকায়।
“হেলো মিষ্টার আমি আপনাকে বলছি। আমি আবিরকপ ভালোবাসি। থাকতে চায় না আপনার সাথে। আপনি প্রচন্ড খারাপ মানুষ।
অভি ঠাস করে কাবাড বন্ধ করে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় তানহার দিকে।
” থাকতে বলেছে কে তোমাকে? চলে যাও
হেয়ালি না করে বলে দেয় অভি। তারপর শ্বাস নিয়ে বলে
“ওকে ফাইন আমি এগিয়ে দিচ্ছি
তানহার হাত ধরে বাইরে বের করে দিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। তানহা হা করে তাকিয়ে আছে।
তানহা ভীষণ রাগ হয়। চলে যাবে যেখানে খুশি। বেরিয়ে যায় ওখান থেকে।

আকাশে মেঘ ডাকছে যেকোনো সময় বৃষ্টি চলে আসবে। ঢাকার শহরের কিছুই চেনে না তানহা। আগে কখনো আসা হয় নি। পড়নে সুতি থ্রি পিছ। পায়ে জুতোটাও নেই। বাসায় জুতো খুলে রেখেছিলো আর ওভাবেই অভি বের করে দিয়েছে। রাস্তার পাশ দিয়ে হাটছে তানহা। যেদিকে দুচোখ যাবে সেখানেই চলে যাবে কিন্তু অভির বাসায় বা মানিকগঞ্জ আর ফিরবে না। অভির বাসা থেকে অনেকটাই দুরে চলে এসেছে তানহা।
ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। তানহা বৃষ্টির মধ্য দিয়েই হাঁটছে। রাস্তা পুরো ফাঁকা একটা কুকুরও রাস্তায় নেই। একটু একটু ভয় করছে তানহার। দাঁড়িয়ে যায়। রাস্তার পাশে থাকা ব্রেঞ্চে বসে পড়ে। পায়ে ভীষণ ব্যাথা করছে।কিছু কিছু পাথর লেগে আছে পায়ে। লাল হয়ে গেছে পায়ের পাতা। পায়ের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তানহা।

হঠাৎ তানহার সামনে কালো রংয়ের একটা গাড়ি থামে। গ্লাস নামিয়ে বলে
” হেই তানহা তুমি এখানে?
চেনা কন্ঠ শুনে তানহা মুখ তুলে তাকায়। রিক গাড়িতে। ইশারায় তানহা গাড়ির কাছে যেতে বলছে। তানহা যায়।
“গাড়িতে ওঠো
তানহা আমতাআমতা করছে।
” আরে ওঠো তো ভীজে যাচ্ছো
রিকের বারবার বলাতে তানহা গাড়িতে ওঠে। ভিজে বেড়াল হয়ে গেছে। ঠকঠক করে কাঁপছে। রিক তোয়ালে এগিয়ে দেয়
“হাত মুখ মুছে নাও
তানহা তোয়ালে নিয়ে হাত মুখ চুল মুছে তোয়ালেটা চাদরের মতো গায়ে জড়িয়ে নেয়।
” তুমি এখানে? এভাবে বৃষ্টিতে ভিজছিলে কেনো?
তানহাকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় রিক। তানহা আমতাআমতা করছে। আসলে রিককে ও বলতে চায় না।
“এনি পবলেম? সন্দেহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে রিক। তানহা মুখে হাসি টেনে বলে
” ততেমন কিছু না।
“তাহলে?
” এমনিতেই।
“ওহহহ
রিক চুপ করে যায়। বুঝতে পারে তানহা বলতে চায় না। কিছুখন নিরব থেকে রিক বলে
“বফ আছে তোমার?
তানহা বাইরের সৌন্দর্য দেখতে বিজি তাই রিকের কথা কান ওবদি পৌছায় না। রিকও আর দ্বিতীয় বার প্রশ্ন করে না।
বৃষ্টি থামার নামই নিচ্ছে না। শো শো করে বৃষ্টি পড়ছে। মাঝেমধ্যে প্রবল জোরে বাতাসও বইছে। আকাশে গুড়ুমগুড়ুম করছে। তানহার বেশ ভালোই ঠান্ডা লাগছে।
বাসার কাছে গাড়ি থামে।
” এসে গেছি
রিকের কথায় তানহা চার তালা ব্লিডিং এর দিকে তাকায়। রিকের গাড়ি থেকে বেরিয়ে একটু হেসে রিককে ধন্যবাদ দিয়ে গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। সিড়ি দিয়ে এক পা একপা করে উঠছে আর ভয় করছে। মনের মধ্যে হাজারো দ্বীধা থাকতেও অভির ফ্লাটের দিকে যাচ্ছে। এটাই এখন এক মাএ আশ্রয় তানহার।
দরজার কাছে গিয়ে দেখে হালকা চাপানো দরজাটা। তানহা দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে যায়। চোরের মতো এদিকে সেদিন তাকিয়ে দেখে।
অভি বেলকনিতে বসে গান প্যাক্টিজ করছিলো তখন তানহাকে রিকের গাড়ি থেকে নামতে দেখেছে। আর দরজা খুলে দিয়েছিলো।

“বলো আমায় কখনো ছেড়ে যাবে না
এই হাত দুটো আলাদা করে দেবে না।
না না না আমি কোনো কিছু চায় না
তুমি হলে আমার আর কিছু লাগে না
আমি তোমায় ছাড়া আর কিছু বুঝি না
আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারি না।

অভির বেলকনি থেকে গানের সুরটা ভেসে আসছে। তানহা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে গান শুনছিলো। হঠাৎ করে

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here