ভালোবাসি তাই #পর্বঃ২৮,২৯

0
2249

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ২৮,২৯
#Tanisha Sultana
পর্বঃ২৮

অভি জুতো ক্যাচ ধরে ফেলে।
“তুমি আমাকে জুতো ছুঁড়ে মারলে? রাগে গিজগিজ করে বলে অভি।
” হুমমম মারলাম। হাতের কাছে আরও কিছু থাকলে তাও ছুঁড়ে মারতাম। আপনার সিমপ্যাথির কোনো প্রয়োজন নেই আমার।
নাক টেনে বলে তানহা।
“তোমাকে সিমপ্যাথি দেখাতে আমার বইয়েই গেছে।
” করলা কোথাকার
অভি জানালা দিয়ে জুতো ফেলে দেয়।
“আপনি আমার জুতো ফেলে দিলেন কেনো? চোখ বড়বড় করে বলে তানহা।
” আমাকে ছুঁড়ে মারলে তাই। দায় ছাড়া ভাব নিয়ে বলে অভি।
তানহা মুখ ঘুরিয়ে বসে। চোখ দিয়ে আপনাআপনি পানি পড়ছে। সাথে সাথে মুছে ফেলছে তো আবার গড়িয়ে পড়ছে।
“আশিক ভিষণ বোকা। যেখানে এতোগুলো দিন একসাথে এক বেডে থেকেও তোমার মনে বা আমার মনে বিন্দু মাএ ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া গেলো না সেখানে এইরকম একটা রুমে কিছু খন থেকে ভালোবাসা হয়ে যাবে। বড্ড বোকা ওরা
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে অভি। তানহা মাথা তুলে তাকাই অভির দিকে এখন হয়ত তানহার কিছু বলা উচিৎ কিন্তু কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না। তাই চুপচাপ তাকিয়ে আছে।

” আসছে না কেনো ওরা? বিরক্তি নিয়ে ফোন করতে করতে বিরবির করে বলে।
আশিক আবারও ফোন রিসিভ করছে না। অভি খানিক পায়চারি করে আবার চৌকিতে এসে বসে। তানহার দিকে আড়চোখে তাকায়। তানহা অভির দিকেই তাকিয়ে আছে।
“চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছো কেনো?
ফোনের দিকে নজর দিয়ে বলে অভি। তানহা হকচকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।
” কককই। থেমে থেমে বলে।
“তুমি নিশ্চয় ট্যারা না? ট্যারা হলে ভাবতাম অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলে
” আপনি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন কেনো?
“রুপ উপচে উপচে পড়ছে তো তাই দেখছিলাম। টিটকেরি মেরে বলে অভি।
” আমার তো রুপই নেই। সব রুপতো পায়েলের আছে।
“সব সময় উল্টো বোঝাটা তোমার স্বভাব।
” আপনারও। বলি ঢাকা আর বোঝেন মানিকগঞ্জ।
“আর যাই হোক তোমার মনটা ঠিক বুঝতে পারি।
” ওহহহ তাই। শুনি কি বুঝে
“এটাই যে তুমি ডিভোর্স চাও। কিন্তু তুমি কি জানো আমি তোমাকে ডিভোর্স দেবো না। জাস্ট দুটো বছর সময় দিলাম নিজেকে বদলে নেওয়ার জন্য।
অভির কথা শুনে তানহার মনের মধ্যে হাজারটা ভালো লাগা কাজ করছে।
” কেনো ডিভোর্স দেবেন না? ভালো বেসে ফেলছেন না কি?
ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে তানহা।
“তোমার মতো ইডিয়েটকে ভালোবাসা যায় না কি? কি বিচ্ছিরি দেখতে তুমি। ইয়াক
” যান না পায়েলের কাছে। দেখেন ও কতো কিউট।
“অবশ্যই যাবো। ওকে তো ভালোবাসি
এতোখন মনের মধ্যে যেটুকু ভালোলাগা ছিলো এখন সেটা বিশিয়ে যায়।

তানহা চুপ করে যায়। অভিও আর কিছু বলে না। খানিকক্ষণ নিরবতা পালন করে তানহা আমতাআমতা করে বলে
” বলছি বিদেশে না গেলে হয় না।
অভি চট করে তানহার দিকে তাকায়।
“কেনো?
” না মানে আপনি চলে গেলে সবাই ভাববে আমার জন্য চলে গেছেন। দোষি হয়ে যাবো সবার চোখে।
অভি তাচ্ছিল্য হাসে।
“সবাই জানে আমি তোমার জন্য যাচ্ছি না। আমি ক্যারিয়ার গড়তে যাচ্ছি। তুমি একটুও দোষি হবে না।

তানহা আর কথা বলে না। অভি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।

আশিক আর নিশি দরজা খুলে দেয়। অভি রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আশিক দাঁত কেলিয়ে বলে
” আরে বাস সত্যিই ফুলসজ্জা হয়ে গেছে? আর দেখি লাভ ব্রাইট ও আছে।
অভি বোনা বনে যায়। ছোট ছোট চোখ করে তাকায় আশিকের দিকে।
“তা তোর শার্ট কই? আশেপাশে খুঁজে বলে আশিক।
” খেয়ে ফেলছি। দাঁতে দাঁত চেপে বলে অভি।

তানহা শার্ট খুলে নি। শার্টের ওপরে শাড়িটা ভালো করে জড়িয়ে নেয়। আশিক আর নিশি তানহাকে দেখে খিলখিল করে হাসে। ওদের হাসিতে তানহার বেশ লজ্জা লাগছে। অভির বিরক্ত লাগছে।
“ভালোবাসার জন্য তোদের এরকম জায়গা পছন্দ তো আগে বললেই পারতিস।
” আর একটা কথা বললে তোকে এখানে বন্ধ করে রেখে যাবো। ধমক দিয়ে বলে অভি। আশিক চুপ হয়ে যায়।
“যাওয়া যাক।

আশিক আর নিশি আগে আগে হাঁটছে একটা ছাতার নিচে। তানহা আর অভিকে একটা ছাতা দিয়েছে। তানহা একটা জুতো হাতে করে হাঁটছে। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। মাটির রাস্তা হওয়াতে পুরো রাস্তা পিছচ্ছিল হয়ে গেছে। তানহা আঙুলে ভর দিয়ে হাঁটছে। এই বুঝি পড়ে যাবে।
” একটা জুতো নিয়ে যাচ্ছো কেনো?
অভি প্রশ্ন করে।
“জানেন কতো টাকা দিয়ে কিনেছিলাম জুতো জোড়া? বারোশো টাকা দিয়ে। মাএ দুই দিন পড়লাম। ছয়শত টাকা আপনি ফেলে দিলেন। এবার এই একটাই আমি তুলে রাখবো। আবার এইরকম জুতোই কিনবো। তখন একটা ছিঁড়ে গেলে এটা পড়বো।
” এই বুদ্ধির জন্য একদিন তোমার হাতে থাকা নোবেলের বাড়ি খাবা।
তানহা হাতের দিকে তাকায়। অভি জুতোকে নোবেল বলেছে এটা বুঝতে দুই সেকেন্ড লাগে।
“কি বললেন আপনি? রেগে বলে তানহা।
” কি বললাম? পাল্টা প্রশ্ন করে অভি।
“আপনাকে তো
আর কিছু বলতে পারে না তানহা। তার আগেই ঠাস করে পড়ে যায়। কিছু পড়ার শব্দে অভি সেদিকে তাকিয়ে দেখে তানহা চার হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে। মুখটা কাঁদো কাঁদো হয়ে গেছে।
” এমা পড়লে কি করে? অভি হাসি চেপে রেখে জিজ্ঞেস করে।
“দেখবেন?
দাঁত কিড়মিড় করে বলে তানহা।
” হ্যাঁ
অভির হাত ধরে টান দিয়ে অভিকেও ফেলে দেয় তানহা।
তারপর খিলখিল করে হেসে বলে
“এইভাবে
অভি রাগী দৃষ্টিতে তাকায় তানহার দিকে।
আশিক আর নিশি কিছু পড়ার শব্দে পেছনে তাকিয়ে দেখে তানহা আর অভি কাঁদায় বসে আছে। ওরাও এগিয়ে যায়।
” এমা তোরা পড়লি কি করে?
আশিক জিজ্ঞেস করে
অভি আশিকের হাত ধরে আর তানহা নিশির হাত ধরে টান দিয়ে ফেলে দিয়ে এক সাথে বলে
“এভাবে

চারজনই কাঁদায় মাখামাখি হয়ে গেছে। তানহা কোমরে বেশ ব্যাথা পেয়েছে। এরই মধ্যে আবার জোরে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়।
” ফেলে না দিলে এতোখন বাসায় পৌঁছে যেতাম
রাগী কন্ঠে বলে অভি।
“তুই আমাকে কেনো ফেললি? আশিক তেঁতে উঠে বলে।
” তুই হে হে কেনো করলি?
“তুই পরে গেলি তাই।
” পরে গেলেই দাঁত দেখাতে হবে?

আশিক আর অভির তুমুল ঝগড়া বেঁধে যায়। এই ফাঁকে নিশি আর তানহা কোনো রকমে উঠে দৌড় দেয়।
আশিক নিশি নিশি বলে ডাকতে ডাকতে পেছনপেছন যায়। ছাতা টা রইয়েই যায়।
অভি উঠে হাঁটা শুরু করে। এলোমেলোতে তানহার শাড়িতে একদম খুলে গেছে। এখন শুধু অভির শার্ট পড়া।
এবার শাড়ির জন্য হাঁটতে পারছে না।
“যে মেয়ে শাড়ি সামলাতে পারে না সে কি করে বফকে আটকে রাখবে? অভি এদিক সেদিক চোখ ঘুরিয়ে বলে।
তানহার রাগ এবার মাথায় চড়ে যায়।
” আপনার কি? আমার বেপারে আপনাকে নাক কে গলাতে বলেছে। করলা একটা
তেঁতো গলায় বলে তানহা।
“আমার কিছুই না। বাড়িতে থাকো তো একটা রেসপন্সিবিলিটি আছে। সেই জনই বলছিলাম।
“ঢং দেখে বাঁচি না
ভেংচি কেটে বলে তানহা। আবার কোনোরকমে শাড়ি পেচিয়ে হাঁটা শুরু করে।
” সব হয়েছে ওই বাঁদর দুটোর জন্য।
মনে মনে হাজারটা গালি দেয় তানহা নিশি আর আশিককে।

মেইন রোডে চলে এসেছে ওরা। রাস্তায় একটা কুকুরও নেই। পিচ ঢালা রাস্তায় ঝিমঝিম বৃষ্টিতে তানহা অভি পাশাপাশি হাঁটছে। অভি একটু আগে তানহা একটুখানি পেছনে। অভি এখনও খালি গায়ে। চুল বেয়ে পানি গুলো অভির শরীর ভিজিয়ে দিচ্ছে। ফর্সা গায়ে বৃষ্টির পানি গুলো মুক্তোর মতো লাগছে। তানহা অভির দিকে তাকিয়ে হাঁটছে। অভি ভুলেও তাকাচ্ছে না তানহার দিকে।

হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকে ওঠে। তানহা বিদ্যুৎ চমকানো ভয় পায় না তাও আজকে একটু নেকামি করে দৌড়ে গিয়ে অভির হাত ধরে।
“ভভয় করছে
ঢোক গিলে বলে।
অভি তানহার দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার হাঁটা শুরু করে। তানহা হাতটা ছাড়ে না।

” যখন মায়া বড়িয়ে লাভ হয় না তখন মায়া কাটাতে হয়”
অভির কথার আগামাথা কিছুই বোঝে না তানহা। তবুও পাল্টা প্রশ্ন করে না। যদি আবার ঝগড়া লেগে যায়। অভি হাতটা ছাড়িয়ে নেয়।

বেশ খানিকটা হাঁটার পরে বাড়িতে পৌঁছে যায়। কলিং বেল বাজাতে যাবে তার আগেই কিছু একটা চোখে পড়ে অভির। আপনাআপনি ভ্রু কুচকে যায়। তানহা বড়বড় চোখ করে অভির দিকে তাকায়।

“কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না।
অভি বলে ওঠে।
” আমি কিচ্ছু জানি না। বিশ্বাস করুন
ইনোসেন্ট ফেস করে বলে তানহা।
“এজ ইউআর উইস

বলেই গটগট করে অভি চলে যায়।
” হে খোদা কি হচ্ছে আমার সাথে এসব? কে করছে এমনটা? আর কেনো?

চলবে

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ২৯
#Tanisha Sultana

পড়ন্ত বিকেলে বাড়ির পাশে ছোট একটা পুকুর পাড়ে বসে আছে তানহা। শুধু বসে নেই হাতে বই। একবার বইতে চোখ বুলাচ্ছে তো আবার গালে হাত দিয়ে গভীর হয়ে কিছু ভাবছে। তানহার মাঝে এসেছে বিশাল পরিবর্তন। চুলগুলো কোমর ছাড়িয়েছে। এমনিতেও ফর্সা ছিলো কিন্তু এখন আরও বেশি ফর্সা হয়েছে। চিমটি দিলেই রক্ত বের হবে এমন অবস্থা। একটু মোটাও হয়েছে।

কেটে গেছে দুটো বছর। এই দুই বছরে অভির সাথে একবারও কথা হয় নি। মাঝেমধ্যে যখন মা কথা বলতো তখন তানহা গিয়ে মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে অভির ভয়েস শুনতো। মাঝেমধ্যে মা বলতো তানহার সাথে কথা বলতে অভি ইনিয়েবিনিয়ে মানা করে দিতো।

সেইদিন আবারও গিফটের প্যাকেট দেখেছিলো। কিন্তু সেই গিফটের প্যাকেটের ওপরে তানহার সাথে একটা ছেলের ছবি ছিলো। ছেলেটার মুখ বোঝা যাচ্ছিলো না কিন্তু তানহার মুখটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো।
রুমে এসে অভি ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। তানহা ওয়াশরুমের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে ভেজা কাপড়েই।
পাক্কা আধ ঘন্টা পরে অভি বেড়িয়ে আসে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে।
“এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? ভ্রু কুচকে বলে অভি।
” বিশ্বাস করুন আমি এ বিষয়ে কিচ্ছু জানি না। কে এসব করছে তাও জানি না। ছবিটা ইডি করা। অনুনয়ের সুরে বলে তানহা।
“ইটস ওকে। আমি ছোটখাটো বিষয়ে মুড অফ করি না। বা কাউকে ভুলও বুঝি না। আসলে আমাদের মধ্যে তেমন কিছু ঠিকই নেই। তাহলে ভুল বোঝার প্রশ্ন আসবে কোথা থেকে?
বলেই অভি বেলকনিতে চলে যায়।
তানহা বরাবরের মতো এবারও অভিকে বোঝাতে পারে না।
অভির পেছন পেছন তানহাও বেলকনিতে আসে।
” আমার সাথে কে এসব করছে আপনার জানতে ইচ্ছে করে না?
“আমি এসব জানার চেষ্টা করলে তুমি বলতেও তো পারো কেনো আমি এসব করছি? কেউ হই না আমি আপনার? তখন তো খারাপ লাগবে আমার।
দুই হাত ভাজ করে তানহার দিকে ফিরে বলে অভি।
” মানুষের মন বোঝার মতো মনমানসিকতা আপনার নেই। আপনি শুধু জোর খাটাতে পারেন আর কিছুই না।
“খাটাবো না জোর আর। থাকো তুমি তোমার মতো।
” দম শেষ?
“বলতে পারো।
” আপনি আমার সাথে এটা ঠিক করছেন না?
“কিছুই তো করলাম না।
” আমি যাবেন না
“কেনো যাবো না? একটা রিজন দেখাও?
তানহার দিকে একটু ঝুঁকে বলে অভি। তানহা হকচকিয়ে যায়।
” বলো? ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে অভি।
“আমাকে ছেড়ে থাকতে কষ্ট হবে বুঝি? মিস করবা?
তানহা অভিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে
” মোটেও না। আপনার মতো করলাকে মিস করতে বইয়েই গেছে আমার। আই হেট ইউ।
“তা মিস করবা কেনো? একটা নাগর চলে গেছে তো আরেকটা নাগর জুটিয়ে নিয়েছো। সে প্রতিদিন এতো এতো গিফট দিচ্ছে তুমি চাইলে তোমাকে ভালোবাসাও দিয়ে যাবে। আমাকে মিস করার প্রশ্নই ওঠে না।
রাগে তানহার শরীর গিনগিন করছে। এই মানুষটা সত্যি ই ভীষণ বাজে।
” আপনার সাথে কথা বলতেই আমার গা গিনগিন করে।
“সেই জন্যই মুক্তি দিচ্ছি।
তানহা চলে যায়।
অভি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
” জোর করে পাগলামি করে শুধু পাগল উপাধি টাই পাওয়ার যায়
কারো ভালোবাসা না।

সেই থেকে অভি তানহার সাথে কথা বলে না। যাওয়ার সময়ও একবার তানহার দিকে তাকায় নি। তানহা অনেক ডেকেছিলো। পেছন পেছন চলে গেছিলো। প্রচন্ড জ্বর ছিলো তানহার। বেহুশ হয়ে পড়ে ছিলো। যখন ঘুম ভাঙে জানতে পারে অভি বেড়িয়ে গেছে। তানহা পিছু নিয়ে এয়ারপোর্টে চলে যায় অভিকে শুধুমাএ বেস্ট অফ লাক বলার জন্য। তানহা গাড়ি থেকে নেমে দেখে অভি এয়ারপোর্টের ভেতরে ঢুকছে। তানহা যাওয়ার জন্য দৌড় দেয় কিন্তু পুলিশ আটকে দেয়। পাগল পাগল অবস্থা হয়ে গেছিলো তানহার। প্রচন্ড কেঁদেছিলো তানহা সেদিন। সেইদিন বুঝতে পেরেছিলো অভি ঠিক কতোটা জায়গা জুড়ে আছে তানহার। অনিক এসে তানহাকে নিয়ে যায়। তানহার অবস্থা দেখে অনিকও কেঁদে ফেলেছিলো। দুইদিন অচেতন অবস্থায় পড়েছিলো তানহা হাসপাতালের বেডে। তারপর আস্তে আস্তে সুস্থ হতে থাকে।

অভি চলে যাওয়ার পাঁচদিন পরেই তুহিন তানহাকে নিয়ে বাড়ি চলে যায় হাসপাতাল থেকেই। আর বলে আসে কখনোই আর ওই বাড়িতে উনি ওনার মেয়েকে যেতে দেবে না। অভির মাও কম যায় না উনিও বলেছেন অভি এসে ওনাকে বেঁধে রেখে তানহাকে নিয়ে আসবে।
প্রতিদিনই অভির মায়ের সাথে কথা হয়। আনিক মাঝেমধ্যে এসে তানহার সাথে গল্প করে। সময় কাটায়।
আবিররা এক বছর আগেই তানহাদের বাড়ি থেকে চলে গেছে। অনেক বড় বিজনেসম্যান হয়েছে আবির। বিশাল বড়লোক। আবিরের ফুটফুটে একটা ছেলে হয়েছে তাতান। তানহা দেখতে গেছিলো ছেলেকে। আবির ছেলের নামটা তানহার নামের সাথে মিলিয়ে রেখেছে।

অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে তানহা। অভি চলে যাওয়ার পরে পুরো মনোযোগ টা পড়ালেখার ওপরে দিয়েছিলো। যার ফলে ভার্সিটির বেস্ট গার্ল নামটা পেয়েছে। পুকুর পাড়ে ঘাসের ওপর বসে তানহা এটাই ভাবছিলো অভিকে কি করে মনের কথা বলবে? কিভাবে প্রপোজ করবে? অভির সামনে কি করে যাবে? নিশ্চয় আরও বেশি স্মার্ট হয়ে গেছে? আচ্ছা তানহাকে প্রথম দেখাই কি চিনতে পারবে? তানহার সাথে ঠিক ভাবে কথা বলবে তো? না কি এখনো ত্যাড়ামি করবে? ত্যাড়ামি করলে অবশ্য তানহা ভীষণ বকবে। ছেলে মানুষ এতো ভাব নিয়ে কেনো চলবে?
এসব ভেবে অনমনে হেসে ফেলে তানহা। কতোগুলো দিন পরে হাসছে। অভি চলে যাওয়ার পরে তো হাসাই ভুলে গেছিলো। প্রতিটা নিশ্বাসে অভিকে ফিল করতো। মনে হতো রক্তে মিশে গেছে অভি। কে বলে প্রেম জীবনে এক বারই আসে? মনটা একজনকেই দেওয়া যায়?
তানহার মনে এখন ছিটে ফোঁটাও আবির নেই। অভি যখন ছিলো তখনও একবারও আবিরের কথা মনে হতো না।

পাশে রাখা ফোনটা বেজে ওঠে। তানহা ফোনের দিকে তাকিয়ে ফোনটা রিসিভ করে।
“হ্যালো তানহা
” হ্যাঁ খালামনি বলো
“অভি আসছে আজ। খুশিতে গদগদ হয়ে বলে অভির মা।
” কখন? তানহাও ভীষণ খুশি হয় কিন্তু খুশিটাকে চাপা রেখে বলে।
“মাএ কল করেছিলো।প্লেনে উঠবে। তুই চলে আয়।
” বাবা যেতে দেবে না। মন খারাপ করে বলে তানহা।
“ওকে কোনো বেপার না। আমার অভি এসে তোকে নিয়ে আসবে। কেমন?
” হুমমম
“রাখছি এখন। করলা রান্না করতে হবে।
তানহা ফিক করে হেসে ফেলে

সন্ধা নেমে আসছে। পশ্চিম আকাশের এক কোন লাল হয়ে গেছে। সূর্য ডুববে বলে। এটাকেই হয়ত গোধুলি বলে।
” এমন একটা গোধূলি বিকেলে আপনার সাথে হাতে হাত রেখে হাঁটতে ইচ্ছে করে। জোছনা রাতে আপনার কাঁধে মাথা রেখে জোছনা চাঁদ দেখতে ইচ্ছে করে। পাক্কা দুই বছর তিন মাস আমি একা একা ফিল করে গেছি আমি কতোটা ভালোবাসি আপনাকে। কিন্তু আপনি আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছেন। খুব কাঁদিয়েছেন। একটা বার কথাও বলেন নাই আমার সাথে। সব কিছুরই হিসেব নেবো আমি। চুল ছিঁড়ে টাক বানিয়ে দেবো বলে দিলাম। একবার আসুন তো আমার সামনে।

তানহা বই বন্ধ করে ফোনটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। জামা ঝেড়ে বাড়ির দিকে রওনা দেয়।

রুমে গিয়ে দেখে বাবা মা ঝগড়া করছে। তানহা বুঝে যায় অভিকে নিয়েই ঝগড়া করছে। প্রায় প্রতিদিনই অভিকে নিয়ে ঝগড়া করে এরা। বাবা কিছুতেই অভিকে মানতে নারাজ। সে মেয়েকে সারাজীবন বিয়ে দেবেন না তাও ভালো কিন্তু অভির সাথে বিয়ে দেবে না।
তানহা আস্তে করে বইটা রেখে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
ছাঁদে গিয়ে অভি চৌধুরী অফিশিয়াল পেইজ টিতে ঢুকে। তানহা প্রতিদিনই এই পেইজে ঢুকে অভির পিক দেখে আর গান শুনে। পেইজের ফলোয়ার এই দুইবছরে দ্বীগুন বেড়েছে। এক নামে সবাই চিনে অভিকে।

পেইজে ঢুকে দেখে বিশ মিনিট আগে একটা গান ছেড়েছে। বিশ মিনিটে 5k লাইক হয়ে গেছে। তানহা গানটা শোনে

“কতোদিন হলো তোমার সাথে কোনো দেখা নেই
অল্পতেই দুচোখ ভিজে যায় তোমাকে ভাবতেই

এভাবে এতো পর হয়ে যাবে কখনো ভাবতে পারি নি

আমি ভালোবাসতে জানি ভুলে যেতে শিখি নি

গানটা অসম্ভব সুন্দর করে গেয়েছে। তানহার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে। অবশ্য অভির সব গুলো গানই সুন্দর।
কতোখন এখানে বসে ছিলো জানা নেই। বাবার ডাকে তানহা তারাহুরো করে রুমে যায়।
বাবার সাথে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকাল বেলা চেচামেচিতে ঘুম ভেঙে যায় তানহা। অভি পরিচিত একটা কন্ঠে ভেসে আসছে। তানহার হাত পা কাঁপছে খুশিতে। কি করে যাবে তার সামনে? নরার শক্তিও পাচ্ছে না।
” ও এসেছে

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here