ভালোবাসি তাই #পর্বঃ৩২,৩৩

0
1991

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ৩২,৩৩
#Tanisha Sultana
পর্বঃ৩২

তানহা জোরে শ্বাস নিয়ে বলতে যাবে তার আগেই দরজায় টোকা পরে। তানহা চমকে ওঠে। অভি নরমালই আছে যেনো ও আহে থেকেই জানতো এমনটই হবে।
“তানহা দরজা খোলো
তুহিন বলে ওঠে দরজার ওপাশ থেকে।
তানহা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে যায়। এবার বাবাকে কি বলবে? আবার দরজা খুললেও তো অভিকে দেখতে পাবে। কি করবো?
আঙুল দিয়ে নখ কাটতে কাঁটতে ভাবে তানহা। ভয়ে কপাল কুচকে গেছে।
” ওই এসে গেছে আমার একমাত্র অর্ধেক শশুর মশাই। নাহলে আমি যতগুলো খারাপ কাজ করি সব উনি দেখে ফেলে তাই বলে পার্সোনাল মুহুর্তে এসেও ঘ্যানঘ্যান করবে। যতসব
বিরক্ত হয়ে বিরবির করে বলে খাটে বসে।
“এবার কি হবে?
তানহা অসহায় ফেস করে জিজ্ঞেস করে।
” কি আর হবে রাত দুপুরে তোমার বাবা কেলানি খেতে হবে।
দায়সারা ভাবে বলে অভি।
তানহা সারা রুম জুড়ে পায়চারি করে ভাবতে থাকে। একটা বুদ্ধি মাথায় আসে। অভিকে ঠেলে ঠুলে আলমারিতে ঢুকিয়ে দেয়। এদিকে বাবা ঠকঠক করেই যাচ্ছে। অভিকে আলমারিতে ঢুকিয়ে দিয়ে চুল ঠিক করে করলার নুডলসের প্লেট সরিয়ে রেখে জোরে শ্বাস নিয়ে দরজা খুলে দেয়। বাবা হুরমুর করে রুমে ঢুকে। পেছন পেছন মাও
“ককি হয়েছে তোমরা এইসময়ে আমার রুমে?
থেমে থেমে প্রশ্ন করে তানহা। বাবা খাটের তলা ওয়াশরুম বেলকানি সব দেখে তানহার সামনে এসে দাঁড়ায়।
” যে কোনে মুহুর্তে অভি চলে আসবে। ওকে কিছুতেই রুমে ঢুকতে দেবে না।
“অঅঅঅভি কে?
তুতলিয়ে বলে তানহা।
বাবা মা হা করে তাকায় তানহার দিকে।
” তুই অভিকে চিনিস না? তোর একমাত্র বর। ভুলে গেছি না কি ঢপ দিচ্ছিস?
মা সন্দেহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।
“ঢঢঢপ কেনো দেবো। অভি এখানে কেনো আসবে? আমাকে ঘুমতে দাও
তানহা কথা এড়িয়ে খাটে গিয়ে বসে পড়ে।
” একটু আগে আমার রুমে ঢিল ছুড়ে দিয়েছিলো তাতে লেখা শশুড় মশাই এসে গেছি। হতছাড়াটা এবাড়িতেই আছে।
এপাশ ওপাশ চোখ ঘুরিয়ে বলে তুহিন
“তোমার ওর ওপর এতো রাগ কিসের বলবা?
রাগ দেখিয়ে বলে তানহার মা।
” রাগ থাকবে না? ছোট থেকে ওকেদেখে আসছি। আজ কি করেছে জানো? বাপের বয়সী একজন মানুষকে বেঁধে ইচ্ছে মতো মেরে তার মেয়েকে তুলে এনেছে। এটা কি ভালো ছেলেটা করে বলো?
আঙুল তুলে বলে।
তানহা রাগে দাঁত কটমট করে। ওর চুল ছিঁড়বে আমি আজকে।
“তুমি কি দেখতে কি দেখেছো? তানহার মা বলে।
” আমি ঠিক দেখেছি। এই বেহায়া ছেলেটাকে আমি চাপকে সোজা করবো।
“তা করো এবার যাও তো আমি ঘুমবো।

দরজা দেখিয়ে বলে তানহা।
তানহার বাবা আরেকবার বেলকনি দেখে চলে যায়।
” তোর বাবার কথা বিশ্বাস করবি না। অভি আসলে ওকে আদর যত্ন করবি বুঝলি।
মা ফিসফিস করে বলে যায় তানহার কানে কানে।

মা বাবা বের হতেই তানহা দরজা বন্ধ করে দেয়। আলমারি খুলে অভিকে বের করে। বেরিয়েই অভি জোরে জোরে শ্বাস নেয়।
“আর একটু হলে মরেই যেতাম
বুকে হাত দিয়ে বলে অভি।
তানহা খাটের এক পাশে গিয়ে বলে। অভিও তানহার পাশে গিয়ে বসে।
” আজ যেতে হবে আমাকে। কাল পায়েলের হলুদ সন্ধা তুমি সহ দাওয়াত দিয়েছে। যাবে আমার সাথে।
তানহা বড়বড় চোখ করে তাকায় অভির দিকে। তারমানে ও হুদাই লাফাইলো। অভির সাথে পায়েলের রিলেশন নেই।
“কি হলো যাবে?
তানহার দু গালে হাত দিয়ে বলে অভি।
তানহা মুচকি হেসে বলে
” হুমম যাবো কিন্তু বাবা।
“আমি মেনেজ করবো।
” বাবা বলছিলো
“বাদ দাও না।
কি যেনো বলতে চাইছিলাম
সোজা হয়ে বসে বলে অভি।
” আরেকদিন বলবো। মুচকি হেসে বলে তানহা।
“আসি তাহলে। উঠে দাঁড়ায় অভি। তানহা অভির হাত টান দিয়ে বলে
” থেকে যান না।
অভি বাঁকা হাসে। তানহার দিকে একটু ঝুঁকে বলে
“থাকলে কিন্তু…
তানহা ধাক্কা দেয় অভিকে। লজ্জায় মুখ কান লাল হয়ে গেছে।
” বিয়ে হয় নি আমাদের। মাথা নিচু করে লজ্জা মাখা মুখে বলে তানহা।
“হুমম খুব তাড়াতাড়ি করে ফেলতে হবে।
তানহার পাশে বসে বলে অভি।
তানহা আবারও লজ্জা পায়।
” বুঝলাম না এই রাগ তো এই হাসি। এই ঘৃণা তো এই লজ্জা। সাধে কি আর মানুষ বলে একটা নারীর দশটা রুপ। তোমাকে না দেখলে বুঝতাম ই না।
“বুঝবেন ও না।
” কেনো
“ইডিয়েট যে আপনি।
মুচকি হেসো বলে অভির পাশ ঘেসে শুয়ে পড়ে তানহা। অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে। অভি মাঝখানে অনেকখানি জায়গা রেখে এককোনে শুয়ে পড়ে।
” তানহা শুনছো? মাথার ওপরে ভো ভো করে ঘোরা সেলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে বলে অভি।
“হুমমম। তানহা আগের মতো থেকেই বলে।
” এই দুই বছর তিন মাসে তেমার কথা ৫০০০০ বার মনে পড়েছে।
তানহা ফট করে ঘুরে যায় অভির দিকে। অভি কাত হয়ে তানহার দিকে তাকায়।
“গুনে রেখেছেন?
” উহু খাতায় লিখে রেখেছি। যখনই মনে পড়তো লিখে রাখতাম।
“কেনো?
” সত্যি বলতে জানি।
তৃপ্তির হাসি হাসে তানহা।
“তোমার আমার কথা একবারও মনে পড়ে নি আমি জানি। তবে তুমি স্বাভাবিক হয়ে গেছো এতেই আমি খুশি। আসলে আমাদের জুটিটা না ওপরওয়ালাই ঠিক করে দেন। কার সাথে কাকে মেলাবে এটা উনি ছাড়া কেউ বলতে পারবে না।
আবিরের কপালে তুমি ছিলে না এই সহজ কথাটা তুমি আগে থেকেই মেনে নিলে আজকে এই বাজে ছেলেটার সাথে তোমার নামটা জড়িয়ে থাকতো না। আমাকে সয্য করতে হতো না তোমায়।
তানহার রাগ হয় কিসের মধ্যে কি। তানহা নিজের মাথাটা এনে অভির বুকে রাখে।
” মাথায় হাত বুলিয়ে দিন।
অভি একটু ঘাবড়ে যায়।
“কি হলো
কপাল কুচকে বলে তানহা।
অভি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
” আমার কপালে আপনি ছিলেন তাই আমরা এক সাথে।
অভির বুকের ওপর একটা হাত রেখে বলে তানহা।
“এক সপ্তাহের মধ্যে আমাকে বিয়ে করতে পারবেন? কালিমা পড়ে তিন কবুল বলে ধর্ম মনে? যে বিয়ের পরে আমাদের মধ্যে কেনো দুরত্ব থাকবে না।
অভি হাত নামিয়ে নেয় তানহার মাথা থেকে। তানহা মাথা উঁচু করে অভির মুখের দিকে তাকায়।
” কি হলো? কপাল কুচকে বলে
“তোমার বাবা
” সেটা জানি না আমি। আপনি মেনেজ করবেন।
মুখটা অভির গলার কাছে নিয়ে বলে তানহা।
“চেষ্টা করবো।
” চেষ্টা না করতেই হবে। আদেশের সুরে বলে তানহা।
“মেডামের কি আমায় ছাড়া থাকতে কষ্ট হয়? দুষ্টুমি করে বলে অভি। তানহা অভি শার্ট খাঁমচে ধরে মুচকি হেসে বলে
” জানি না

“তাহলে জানো কি?
” এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে করতে হবে।
“তাহলে কিন্তু তিন মাসের মধ্যে বমি করতে হবে। রাজি?
তানহা চোখ বড়বড় করে অভির দিকে তাকায়। অভি কি বললো বুঝতে দশ সেকেন্ড সময় লাগে। যখন বুঝতে পারে অভি বুকে কিল দেয়
” শয়তান ছেলে। অভি দুই হাতে আগলে নেয় তানহাকে।
অভি মুচকি হেসে আবার মুখটা মলিন করে ফেলে।

তানহার পেটের ওপর হাত রেখে অভি ঘুমিয়ে আছে। তানহার ঘুম আসছে না খুশিতে। কতোদিন পরে মানুষটার বুকে মাথা রেখেছে। কি সুন্দর বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। অদ্ভুত বাসনা জানে তানহার মনে। অভি কপালে একটু ঠোঁট ছোঁয়াতে ইচ্ছে হচ্ছে। জেগে গেলে লজ্জায় পড়তে হবে। কিন্তু নাক ডাকা দেখে বোঝা যাচ্ছে সহজে জাগবে না। তাই অভির হাতটা সরিয়ে আস্তে আস্তে মুখটা অভির কপালের কাছে নিয়ে গভীর ভাবে ঠোঁট ছোঁয়ায় অভির কপালে। ঘুমের মধ্যেও নরেচরে ওঠে অভি। তারপর আবার অভির বুকে মাথা রাখে।
“আপনাকে ছাড়া আমার চলবে না। আমি ভাবতাম মন তো একটাই। তাই কখনো আপনাকে ভালোবাসতে পারবো না। কিন্তু এখন বুঝতে পারি আমি আপনাকে আবিরের থেকে নয় নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি। কখনোই ছাড়বো না আপনাকে।
মনে মনে বলে তানহা।

সকালে পর্দা ভেদ করে এক ফালি রোদ্দুর এসে পড়ে তানহার গালে। রোদের আচে ঘুম ভেঙে যায়। পাশে হাত রেখে দেখে জায়গাটা ফাঁকা। ফট করে চোখ খুলে তানহা। পাশে অভি নেই। কোথায় গেলো? হুরমুর করে উঠে বসে।
” আমাকে না বলেই চলে গেলো।
মন খারাপ হয়ে যায় তানহার। পাশেই একটা সাদা চিরকুট দেখতে পায়। তারাহুরো করে খুলে সেটা।

“ডেয়ার হাফ বউ
তোমার বাবা আমায় দেখলে রাম ধোলাই দেবে তাই সকাল সকাল চলে আসলাম। তুমি ঘুমচ্ছিলে তাই জাগালাম না। সন্ধায় আটাময়দা মেখে রেডি থেকো। শাড়ি পইড়ো না। আমি পড়িয়ে দেবো। কেমন?

ইতি
তোমার হাফ বর

চিরকুট পড়ে হেসে ফেলে তানহা।
” পাগল একটা

চলবে

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ৩৩
#Tanisha Sultana

“ভালোবাসো অভিকে?
বাবার প্রশ্নে থমকে যায় তানহা। রুটি গালে দিয়ে যাচ্ছিলো হাত থেকে রুটির টুকরো পড়ে যায়। এদিক সেদিক চোখ ঘোরায়।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে একটু খানি পড়াশোনা করে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে খেতে বসেছিলো বাবার সাথে।
তানহার মা খাবার বেড়ে দিচ্ছিলো উনিও প্রশ্নটাতে বেশ অবাক হয়।
” হঠাৎ এই প্রশ্ন?
বাবার পাতে রুটি দিতে দিতে জিজ্ঞেস করে মা।
“এমনি জিজ্ঞেস করলাম। অভি ছেলেটা বেশ ধরিবাজ, বদমাইশ। কাল একটা লোকে বেশ পিটিয়েছে। এটা নতুন না আগেও যখন বাড়িতে ছিলো এমনটা করতো। রাগ ভালো না। এমন ছেলে তোমার সাথে যায় না।
বলেই মুখে রুটি দেয়।
তানহার রাগ হয়। কিন্তু কিছু বলে না।
” মারামারি করে তার কোনো প্রমাণ আছে তোমার কাছে? তাছাড়া রাজনীতি করে মারামারি হতেই পারে তাই বলে বিবাহিত মেয়েকে
“সাট আপ
তুহিন ধমক দিয়ে বলে।
” তানহা একবার তোমার ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেই নি। তার ফলাফল তোমার সামনেই। তোমার আর আবিরের বিয়ে হলে তোমরা কখনোই সুখী হতে পারতে না। টাকা না থাকলে দুনিয়া অন্ধকার। এখন আবিরের দিকে তাকাও। সে সাকসেসফুল।কতো উন্নতি করেছে। নিজের বাড়ি আছে গাড়ি আছে। পুরো পৃথিবীটাই এখন ওর।
আমি কখনোই তোমার বা আবিরের হ্মতি চায় নি। আমি শুধু বলছি তুমি ভেবে দেখবা। তোমার ক্যারিয়ার নষ্ট করবা না। তুমি যাচাই করে নাও অভিকে। দেখো আমি ঠিক বলছি কি না?

তানহা কিছু না বলে খাওয়া শুরু করে। দেখায় এসবে ওর কোনো ইন্টারেস্ট নেই। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ভাবাচ্ছে কথা গুলো। অভি সত্যিই যদি এমন হতো তাহলে আমিও দেখতাম।

খাওয়া শেষে বাবা মাকে বাই বলে বেড়িয়ে পড়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। ইমপটেন্ট ক্লাস আছে তাই পা চালিয়ে তারাতাড়ি হাঁটছে। ক্লাস মিস করা তানহার পছন্দ না। প্রতি দিনই গেটের কাছে নিশি দাঁড়িয়ে থাকে। আজও তাই। তানহা আর নিশি কথা বলতে বলতে ক্লাসে চলে যায়। তানহা জানালা দিয়ে একবার মেহগনি গাছের দিকে তাকিয়েছে ওখানে অভি আছে কি না?
কিন্তু আজ অভি ওখানে নেই। নিশ্চয় ঘুমাচ্ছে। আজ আসে নি। মুচকি হাসে তানহা। ছেলেটা পুরো পাগল বানিয়ে দিয়েছে তানহাকে।
“এই হাসসিস কেনো?
নিশি ধাক্কা মেরে জিজ্ঞেস করে।
তানহা মুখটা কালো করে সোজা হয়ে বসে বলে
” ককই হাসছি
“তখন দেখলাম। চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে বলে নিশি।
” তুই ভুল দেখেছিস।
“একদম না। বল না
” কিছু না
“তুই বলবি না
” কাল অভি এসেছিলো। লাজুক হেসে বলে তানহা।
“তারপর তারপর? উৎসাহ নিয়ে ঠিক হয়ে বসে বলে নিশি।
” তারপর করলার নুডলস খাইয়েছি
“করলা দিয়ে নুডলস রান্না করা যায়?
” হুমম যায় তো।
“তারপর?
ভালোবাসি বলেছিস?
” নাহহহ আজ পায়েল আপুর হলুদ অনুষ্ঠানে নিয়ে যাবে।
“ওহহহ মাই গড
তাহলে তো আজ আমাদের তানহা রানী খুব এনজয় করবে
” ধ্যাত
তারমধ্যে স্যার চলে আসে। ুজনই চুপুহয়ে বইয়ে মনোযোগ দেয়।

তিন বেল শেষে ভার্সিটি ছুটি হয়ে যায়। দুইটায় হিসাববিজ্ঞান প্রাইভেট আছে তাই নিশি আর তানহা ভার্সিটির পাশেই একটা ফুসকাস্টলে ফুসকা খেতে যায়। দুজন এটা সেটা নিয়ে কথা বলছে আর ফুসকার জন্য অপেক্ষা করছে। হঠাৎ করে তানহার পাশে একটা ছেলে বসে পড়ে। তানহা বেশ খানিকটা চমকে যায়। পরে ভাবে বসতেই পারে।
“মামা ভালো করে একপ্লেট ফুসকা দাও তো।
চেয়ারে পা তুলে বলে ছেলেটা।
” অসব্ভ্য মেনার্স জানে না।
বিরবির করে বলে তানহা।
ফুসকা ওয়ালা সবার আগে ছেলেটাকে ফুসকা দেয়। তারপর তানহাদের।
“ও আমাদের থেকে পরে আসলো আর ওকেই আগে ফুসকা দিলো।
নিশি বলে ওঠে।
” থাক না।
তানহা থামতে বলাতে থেমে যায় নিশি৷ দুজনেই খুব মজা করে ফুসকা খায়।
ওই ছেলেটা তানহার দিকে তাকিয়ে ছিলো। একটা ফুসকা মুখে পুরেই ফুসকার প্লেট ছুঁড়ে ফেলে দেয়। তানহা সহ সবাই চমকে তাকায় ছেলেটার দিকে। ফুসকাওয়ালা কাঁপছে ভয়ে।
“এটা ফুসকা হলো? ভীষণ বাজে।
রেগে বলে ছেলেটা।
” মাপ করে দেবেন রকি ভাইজান। আমি বুঝবার পারি নি এইটা খাওন যাইবো না
ভয়ে জরোসরো হয়ে বলে লোকটা।
“ঠিক আছে ঠিক আছে।
কোমরে হাত দিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বলে ছেলেটা।
” মামা আপনার ফুসকা খুব ভালো খেতে হয়েছে। আমি কিন্তু প্রতিদিন এখানেই ফুসকা খেতে আসবো
মুচকি হেসে বলে তানহা।
মামাও শুকনো হাসে।
টাকা দিয়ে তানহা আর নিশি চলে যায় ওখান থেকে। রকি নামের ছেলেটা বাঁকা হাসে।
“এজীবনে যারে চেয়েছি
আজ আমি তারে পেয়েছি
উচ্চ স্বরে গান ধরে রকি।

বাসায় গিয়ে তানহা ভালো করে শ্যাম্পু করে গোছল করে তানহা। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চুল শুকায়। স্টিক দিয়ে চুল গুলো সোজা করে। মুখেও ফেসপ্যাক লাগায়। আজ একটু বেশিই সুন্দর দেখাতে হবে। ভালোবাসার মানুষটির সাথে ভালোবেসে প্রথম দিন কোথাও যাওয়া। গর্জিয়াস তো দেখাতেই হবে।
সন্ধার আজান দিতে আর বিশ মিনিট বাঁকি। তানহার কেমন তর সইছে না। হাসফাস করছে। বারবার বেলকনিতে গিয়ে দেখছে কোনো গাড়ি বা বাইক আসে কিনা। আবার ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে অভি ফোন দিয়েছে কি না।
মুখে ভালো করে ফেসপাউডার লাগিয়ে নেয়। বাকিটা অভি আসলে করবে।
হঠাৎ কলেং বেল বেজে ওঠে। তানহা খুশি হয়ে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখে বাবা এসেছে। মুখটা মলিন করে আবার রুমে চলে আসে।
” প্রেমে পড়লে মানুষের ঘুম হারাম হয়ে যায়
আর অপেক্ষায় প্রহর কখনো শেষ হয় না”
যে এই কথা বলেছে সে একদম ঠিক বলেছে। একেকটা মিনিট তানহার কাছে ঘন্টার থেকেও বেশি মনে হচ্ছে।

“আমার মেয়ে তোমার সাথে যাবে না
এই কথাটা কানে আসতেই তানহা বুঝতে পারে অভি এসেছে। মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। আবার মুখটা মলিন হয়ে যায়। বাবা যদি ওর সাথে যেতে না দেয়। গুটিগুটি পায়ে তানহা ড্রয়িং রুমে যায়৷ অভির দিকে তাকায়। নীল পানজাবি পড়েছে। দারুন লাগছে।
” আরে শশুড় মশাই আপনার মেয়ে আমার বউ তাই ওকে আমি নিয়ে যেতেই পারি ।
“একদম পারো না। তেঁতে উঠে বলেন উনি।
” আপনি আর আপনার মেয়ে সেম ত্যাড়া। আপনাদের মুখে বলে কাজ হয় না করে দেখাতে হয়। মাথা চুলকে বলে অভি।
“তুমি জোর করে নিয়ে যাও। তানহার মা উৎসাহ দিয়ে বলে।
” এই না হলো আমার শাশুড়ী মা। হাতে তালি দিয়ে বলে অভি।
“একদম একমটা করবা না। আমার মেয়েকে আমি বদমাইশের সাথে যেতে দেবো না।
” আবার এক কথা বলে। ঠিক আছে যেতে দিয়েন না।

অভি এসে সোজা তানহার হাত ধরে। তানহাকে টেনে রুমে এনে দরজা লক করে দেয়।
“বেহায়া ছেলে। রাগে গর্জে উঠে বলে তুহিন।
তানহার মা খিলখিল করে হেসে ওঠে।

দরজা বন্ধ করে জোরে শ্বাস নেয় অভি। তানহা লজ্জায় লাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছি ছি বাবার সামনে থেকে এভাবে নিয়ে আসলো। বাবা কি না কি ভাবলো।

” তারাতাড়ি রেডি হতে হবে।
প্যাকেট থেকে শাড়ি বের করতে করতে বলে অভি।
“বাবার সামনে এমনটা না করলে চলছিলো না।
ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বলে তানহা।
অভি তানহাুকাছে এসে তানহার থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে।
” নাহহ চলছিলো না। তোমার বাবা তো সেই লেভেলের ত্যাড়া। ঠিক তোমার মতো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here