#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ৪,৫
#Tanisha Sultana
পর্বঃ৪
“ভেরি সরি। আর হবে না
চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বলে তানহা। অভি তানহাকে অবাক করে দিয়ে তানহাকে জড়িয়ে ধরে তানহার কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নেয়। তানহা সরার জন্য ছটফট করে।
” ডোন্ট ডিস্টার্ব ঘুমতে দাও
তানহা একটা ঢোক গিলে। এ আবার কোন বিপদ?
“আমাকে ছেড়ে ঘুমান না
করুনার সুরে বলে তানহা
অভি ঘুমঘুম চোখে হালকা তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে।
” বউ ঘুমতে দাও
বউ শব্দটা শুনে তানহার মুখ আপনাআপনি হা হয়ে যায়। আমি ওনার বউ হলাম কবে? নিশ্চয় গন্ডগোল আছে। লুকিয়ে বিয়ে করেছে। এখন বউ মনে করে আমাকেই জড়িয়ে ধরেছে। চান্দু ভেবেছে কেউ জানতে পারবে না। কিন্তু এখন আমি জেনে গেলাম আর সবাই কে জানিয়ে দেবো। আমাকে ধমক দেওয়া সুধে আসলে মিটিয়ে নেবো হুমমমম
শয়তানির হাসি দিয়ে মনে মনে বলে তানহা। অবভি আরও একটু টাইট করে ধরে। তানহা ছটফট করা বন্ধ করে। হাত বাড়িয়ে অভির ফোনটা নেয়। নক বাটনে চাপ দিতেই তানহার হাসি মুখটা ভেসে ওঠে। তানহার চোখ বড়বড় হয়ে যায়। ওনার ফোনে আমার পিক। আগ্রহ নিয়ে লক খুলতে যায়। ফেসলক দেওয়া। অতি চেষ্টা করেও তানহা খুলতে পারে না। কয়েকবার অভির মুখের সামনে ফোন ধরে তাও খুলে না। নিশ্চয় বত্রিশটা দাঁত বের করে লক দিয়েছে।
“বউ দরজা লক করেছো
অভির ঘুমঘুম কন্ঠে এই কথাটা শুনে তানহা কেঁপে ওঠে । তানহার ঘাড়ে অভির নিশ্বাস পড়ছে। পেটের ওপর এক হাত আর পিঠের নিচে আরেক হাত রেখে ঘুমচ্ছে। দারুণ অস্বস্তির মুহুর্ত। বুকের ভেতর টিপটিপ করছে। অভি এবার ভালো ভাবে চোখ খুলে। তানহাকে ছেড়ে দেয়। তানহা অভির পাশে বসে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। হার্টবিট দ্রুত উঠানামা করছে। অভিও বসে পড়ে
” এখানে কি করছো?
ঠান্ডা গলায় বলে অভি। তানহা কি বলবে ভাবছে। যদি বলে ফোনের ওয়ালপেপার দেখতে এসেছিলো তাহলে ধমক একটাও মাটিতে পড়বে না
“আপনাকে ডাকতে এসেছিলাম। সোজাসাপ্টা মিথ্যা কথা বলে দেয় তানহা। অভি সন্দেহ নিয়ে তাকায়
” রিয়েলি? ভ্রু কুচকে বলে অভি।
“হুমমম। মাথা নুয়ে বলে তানহা।
” তো আমাকে ডাকার এই মূল্যবান দায়িত্বটা তোমাকে কে দিয়েছে?
তানহা এবার হাত কচলাচ্ছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। অভির কন্ঠ স্বাভাবিক শোনালেও ও যে ভীষণ রেগে যাচ্ছে তা তানহা বুঝতে পারছে।
“আপনার ওয়ালপেপারে আমার পিক কেনো? কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে বলে তানহা। অভি ছো মেরে তানহার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়। ওয়ালপেপার চেক করে চোখ মুখ শক্ত করে ফেলে
” ইডিয়েট আমার ওয়ালপেপারে তোমার পিক কেনো দিয়েছো? তোমার ফোন নেই? এই পিকটা আমি তুলছিলাম তোমার বার্থডের দিন ডিলিট করতে ভুলে গেছি আর তুমি এই সুযোগে তোমার পিকটা ওয়ালপেপার দিয়ে দিলে?
তানহা রীতিমতো হা হয়ে গেছে। মুখের ভাসা হারিয়ে ফেলছে। কি বলছে লোকটা?
“হা করে তাকিয়ে আছো কেনো? ছেলে দেখো নি জীবনে? বেরিয়ে যাও। অতিরিক্ত বিরক্তি নিয়ে বলে অভি। তানহা এখনো হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
” কথা কানে যাচ্ছে না। আউট
কিছুটা জোরে বলে অভি। তানহা ছিটকে উঠে একটা দৌড় দেয়। দরজা কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পেছন ঘুরে বলে
“আপনি যে বিয়ে করেছেন এটা আমি সবাইকে বলে দিবো
বলেই দৌড় দেয়। অভি তানহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে
” ইডিয়েট একটা।
রুমে এসে তানহার খুব আবিরের কথা মনে পড়ে। প্রতিদিন সকালে আবির ফোন দিয়ে তানহার ঘুম ভাঙাতো। যেদিন ফোনের শব্দে তানহার ঘুম ভাঙতো না সেদিন রুমে গিয়ে ডেকে তুলতো তানহাকে। কালকেও আবির এটাই করেছে। কিন্তু আজ অন্য কাউকে ঘুম থেকে তুলবে। পরিস্থিতি মানুষকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে আসে।
বেলকনির রেলিং ধরে দাঁড়ায় তানহা। অভির বেলকনি থেকে ম ম করে ফুলের গন্ধ আসছে। একটা সাদা গোলাপ ও ফুঁটেছে। সাদা গোলাপ তানহার বড়াবড়ই খুব পছন্দের। প্রতিদিন আবির তানহাকে একটা করে সাদা গোলাপ দিতো। পূর্ব আকাশটা লাল হয়ে গেছে। এখনই সূর্য উঠবে৷ তানহা এক মনে তাকিয়ে আছে। চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পড়ছে। ছুঁটে যেতে মন চাইছে আবিরের কাছে কিন্তু মন বাঁধা দিচ্ছে। এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে পুরোনো কথা মনে পড়বে তাই তানহা রুমে ফিরে আসে।
ফ্রেশ হয়ে কিচেনে যায় খালামনি সবার জন্য ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে। তানহা গিয়ে খালামনির পাশে দাঁড়ায়।
“হেল্প করবো? মিষ্টি হেসে বলে তানহা।
” সত্যি হেল্প করবি? চা কাপে ঢালতে ঢালতে বলে খালামনি
“হুমমম
” তাহলে অনির আর অভিকে চা টা দিয়ে আয়। ট্রে তে চা সাজিয়ে বলে
তানহার মাথায় শয়তানি বুদ্ধি চাপে। চা দিতে গিয়ে যদি কোনো প্রমাণ আনা যায়। প্রমাণ ছাড়া তো কেউ বিশ্বাস করবে না অভি বিয়ে করেছে। দাঁত কেলিয়ে চায়ের ট্রে টা হাতে নেয় তানহা। তারপর আগে অনিকের রুমে যায়। অনিক তানহার চেয়ে বছর তিনের বড়। তবুও ওরা তুই তুই করে কথা বলে। অনিক গার্লফ্রেন্ডের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে উপুড় হয়ে শুয়ে। তানহা টেবিলের ওপর চায়ের কাপ রেখে বলে
“অনিক বাবু চা টা খেয়ে নাও
নেকা সুরে বলে তানহা। অনিকের গার্লফ্রেন্ড তো রেগে রনোচন্ডি।
” তানহা বাবু বলোস কেন? আসহায় ফেস করে বলে অনিক
তানহা অনিকের পাশে বসে গালে হাত বুলিয়ে বলে
“বাবু বফকে তো বাবুই বলে তাই না টিয়া পাখি। আমার জানটা। আমি নিজে হাতে তোমার জন্য চা করেছি
বলেই তানহা দৌড়। অনিক গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া শুরু করে দেয়। তানহার চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে অনিকের।
অভির রুমের সামনে এসে জোরে জোরে দুই তিনটা শ্বাস নিয়ে রুমে ঢুকে যায় তানহা।
অভি জগিং সুট পরে জুতোর ফিতা লাগাচ্ছিলো আর ফোনে কারো সাথে কথা বলছিলো। তানহা ভাবে অভিও হয়ত ওর গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে। তাই নেকা সরে বলে
” অভি জান তোমার জন্য চা এসেছি নিজে হাতে বানিয়ে প্লিজ খেয়ে বলো কেমন হয়েছে? আমার জানটা
অভি তানহার দিকে তাকিয়ে বলে
“খালামনি আপনার লেজ ছাড়া বাঁদর মেয়ে হাজির হয়েছে।
তানহার চোখ বড়বড় হয়ে যায়
এটা মা ছিলো এবার আমার মাদার ইন্ডিয়া এই করোলার সাথে আমার বিয়ে দিয়েই ছাড়বে। কি করবো?
” পরে কথা বলছি
বলেই অভি ফোন রেখে দেয়। তানহা টেবিলে চায়ের কাপ নামিয়ে দৌড় দিতে যায়। অভি হাত ধরে ফেলে।
“কি বলছিলে? ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে অভি। তানহা এদিক ওদিকে তাকিয়ে বলে
” সরি রং নাম্বার
“তুমি কলে নাই লাইভে আছো।
” ইয়ে মানে হয়েছে কি ভাইয়া আপনি ভুল শুনেছেন।
অভি তানহাকে টান দিয়ে সামনে দাঁড় করিয়ে বলে
“ওহহহ আচ্ছা আমি ভুল শুনেছি। ঠিক আছে ঠিকটা তুমি বলে দাও
তানহা এবার কেঁদে দেবে এমন অবস্থা।
” কিছুখনের মধ্যে তোমার ডিসকু মা চলে আসবে সাথে আবার উকিল নিয়ে। এতোখনে হয়ত আমার চোদ্দ গুষ্টিকেও জানিয়ে দিয়েছে। এবার বলে কি করবো? সব সময় স্টুপিটের মতো কাজ না করলে তোমার চলে না তাই না। সব সময় প্রুভ করতে চাও আমিই এক পিছ আছি লেজ ছাড়া বাঁদর।
এক নাগারে কথা গুলো বলে অভি। তানহা চুপ করে আছে।
“বাই দা ওয়ে তোমাকে না বলেছিলাম আমার রুমে আসবে না।
তানহা এবার মুখ খুলে
” আপনি তো কাজ করতেও বলেছিলেন
অভি ফোনটা পকেটে ভরে বলে
“তোমার সাথে ফালতু কথা বলার সময় আমার নাই
” কিন্তু আমি তো তোমার সাথেই যাবো করলা। তুমি নিশ্চয় বউয়ের সাথে দেখা করতে যাবে আর আমি তার ছবি তুলে সবাই কে দেখাবো।
দাঁত কেলিয়ে মনে মনে বলে তানহা।
“বাঁদরের মতো হাসছো কেনো?
তানহা ভালো করে দাঁত কেলিয়ে বলে
” ক্লোজ আপ দিয়ে ব্রাশ করেছি। তাই কাছে আসো কাছে আসো কাছে আসো না গানটা মনে মনে গাইছি আর হাসছি। যদি কেউ কাছে এসে যায়
সুর টেনে বলে বেরিয়ে যায় তানহা।
“লেজ ছাড়া বাঁদর
চলবে
#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ৫
#Tanisha Sultana
তানহা এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়। ফটাফট লাগেজ থেকে কালো জিন্স আর লং শার্ট বের করে। পাশেই জগ ছিলো তারাহুরোতে পুরো জগটা লাগেজের মধ্যে পড়ে যায়। সেদিকে তানহা খেয়াল করে না। ড্রেস চেঞ্জ করে খালামনির কাছে যায়। খালামনি রুটি বানাচ্ছে।
“খালামনি তারাতাড়ি পাঁচশ টাকা দাও
তারাহুরো করে বলে তানহা।
” তোর খালুর কাছ থেকে নে। আর এতো সকালে কই যাবি?
“গোয়েন্দা গিরি করতে
বলেই দৌড় খালুর কাছে চলে যায়। খালু এখনো ঘুমে। তানহা হাত ঝাঁকিয়ে বলে
” খালুআব্বু তাড়াতাড়ি পাঁচশো টাকা দাও
খালু একটু নরেচরে ওঠে।
“তারাতাড়ি
তারা দিয়ে বলে তানহা। উনি ফোনটা হাতে নিয়ে ফোনের ব্যাক কবার থেকে টাকা বের করে দেয়। কয় টাকা দিলো সেদিকে ওনার খেয়াল নেই। তানহা পাঁচশো টাকা নিয়ে বাকি গুলো ব্যাক কবারে রেখে দৌড়ে চলে যায়।
” আম্মু আমার ফিরতে লেট হবে
বলেই ফোন দেখতে দেখতে বেরিয়ে যায় অভি। তানহা ওর পেছনে চুপিচুপি বেরিয়ে যায়। অভি দৌড়াচ্ছে। তানহা একটা রিকশা দেখে রিকসা ওয়ালাকে বলে অভিকে ফলো করতে দুইশো টাকা দেবো। উনি রাজি হয়ে যায়। অভি দৌড়ে একটা কফিশপে আসে।
“ঠিক ধরেছিলাম উনি বউয়ের সাথে দেখা করতে এসেছে। এবার আমি হাতে নাতে প্রমাণ নিয়ে সবাইকে দেখিয়ে দেবো?
তানহা মনে মনে বলে।
অভি কফিশপে ঢুকে যায়। তানহা ভাড়া মিটিয়ে নিজেও যায়। অভি এক কনারে বসে ফোন দেখছে। তানহা অভির থেকে কিছুটা দুরে বসে। একটু পরে অভির সামনে কেউ একজন বসে। তানহা শুধু তার চুল দেখতে পাচ্ছে। ইয়া বড়বড় চুল কোমর ওবদি। অভির লোকটার সাথে কথা বলছে। তানহা দেরি না করে ফটাফট কয়েকটা পিক তুলে নেয় যাতে অভির মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আর ওই লোকটার জাস্ট চুল। খুশিতে আটখানা হয়ে তানহা বেরিয়ে যেতে নেয়্ ওয়েটার আটকে দেয়
” আমাকে যেতে দিচ্ছেন না কেন?
কোমরে হাত দিয়ে রাগী কন্ঠে বলে তানহা।
“আমাদের এখানে আসলে কিছু না খেয়ে বেরোতে দেয় না আমরা। কিছু খেতে হবে।
” ইহহহহহহ আইছে। কিচ্ছু খাবো না আমি। টাকা নাই। যদি ফ্রীতে খাওয়ান তো খেতে পারি।
চুল ঠিক করতে করতে বলে তানহা।
“টাকা না থাকলে এখানে আসছেন কেনো?
ছেলেটা ভনিতা না করে বলে দেয়।
তানহা কটমট চোখে তাকায়।
” যত বড় মুখ নয় ততোবড় কথা। আমার টাকা আছে কিন্তু এখন নাই।
” আসলে আমি দেখতে আসছিলাম এটা কফিশপ না কি ছিনেমা হল। যেভাবে সারি সারি কাপল ঢুকতে দেখলাম। বাই দা ওয়ে আপনার কি আমাকে ছোটলোক মনে হয়? না কি কিপ্টা? আমি কিন্তু কিপটা না। টাকা থাকলে দুই টাকা বেশি দিয়ে কফি খেয়ে যেতাম। ঠিক আছে নেক্সট টাইম যখন আসবো দুকাপ খেয়ে যাবো। এখন যেতে দে না রে ভাই।
“তা তো দেখতেই পাচ্ছি
বিরবির করে বলে ছেলেটা।
” এই কি বললেন আপনি? আবার বলেন তো? আল্লাহ আপনি এতো কথা বলেন। কানের পোকা খেয়ে ফেললেন। এখন যেতে দিন টাকা হলে এসে একটু কফি চেখে দেখে যাবো। আমি কিন্তু আপনাদের নামে মামলা করবো। আপনি কিউট ইনোসেন্ট একটা মেয়েকে জোর করে কফি খাওয়াতে চাইছেন। যদি টাকা ছাড়া হতো তো চলতো কিন্তু টাকা দিতে হবে।
বলে তানহা যেতে নেয়। ছেলেটা পথ আটকে বলে
“সরি ম্যাম
” আচ্ছা মুসকিল তো। একটু জোরেই বলে তানহা। অভি শুনতে পায়। এগিয়ে আসে তানহার দিকে
“কি হচ্ছে এখানে?
অভির নজর তানহার দিকে পড়তেই অভি ভ্রু কুচকে ফেলে। তানহা হাত দিয়ে মুখ ঢাকার বৃথা চেষ্টা করছে।
” তুমি এখানে?
চোখ মুখ শক্ত করে বলে অভি
“না মানে জগিং করতে এসেছিলাম তো কফি টেষ্টা পেয়ে গেছিলো তাই আর কি? কিন্তু আপনি এখানে? কার সাথে এসেছেন? জগিংয়ের নাম করে বউয়ের সাথে মিট করতে
অবাক হওয়ার ভান করে বলে তানহা।
” স্যার ম্যাম মিথ্যা বলছে। উনি এখানে কফি খেতে আসে নি।
ওয়েটার বলে। তানহা কটমট চোখে ওয়েটারের দিকে তাকায়
“ততুমি কি জানো? বেশি কথা বলো কেনো? জানো না বেশি কথা বললে লোকে বাচাল বলেে। তখন থেকে বকবক করে আমার মাথা খেয়ে নিচ্ছে।
এক নাগারে কথা গুলো বলে ঢোক গিলে তানহা। ভয়ে হাত পা কাঁপছে। না জানি এখন কি হবে? এদিক ওদিকে তাকাচ্ছে। দৌড় দেওয়ার মতো জায়গা দেখছে না।
“হু ইজ হি অভি?
একটা পুরুষের কন্ঠ শুনে তানহা তাকায়। তাকাতেই মুখটা হা হয়ে যায়। সেই লম্বা চুলওয়ালি। কিন্তু এটা মেয়ে না ছেলে। তানহা লোকটার কাছে যায়। পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলায়। দেখতে বিদেশিদের মতো।
” ওয়াও কাকু আপনি এতো কিউট দেখেই গাল টেনে দিতে মন চায়। কিন্তু সরি হ্যাঁ আমি আপনাকে মেয়ে মনে করছিলাম। এতোগুলা সরি। এখন প্লিজ এই ছেলেটাকে বলুন আমাকে যেতে দিত।
লোকটার হাত ধরে বলে তানহা। অভি টান দিয়ে তানহাকে সরিয়ে আনে।
“বাসায় চলো তোমার লেজ লাগিয়ে দেবো
দাঁতে দাঁত চেপে বিরবির করে বলে অভি। তানহা শুকনো ঢোক গিলে।
লোকটা হা হয়ে তাকিয়ে আছে। উনি আসলে বুঝতেই পারছে না তানহা কি বললো। অভির দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই অভি পাগল বলে সামাল দিলো। তানহার রাগ হলো কিন্তু কিছু বললো না।
অভি তানহাকে আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই তানহা ওয়েটারকে ধাক্কা মেরে এক দৌড় দেয়। এখানে থাকলে নির্ঘাত পেসটিজের হালুয়া বানিয়ে দেবো। স্টুপিট ননসেন্স বলে। অভি ওনাদেরকে বলে তানহা পাগল।
তানহা দৌড়ে বাইরে এসে দেখে প্রচন্ড বৃষ্টি পড়ছে। পেছনে তাকিয়ে দেখে অভি আসছে তাই বৃষ্টির মধ্যেই দৌড় দেয়। অভিও হাজার বার বারণ করছে তানহাকে না যেতে কিন্তু কে শোনে কার কথা। দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ তানহা কারো সাথে ধাক্কা খায়। সামনে তাকিয়ে দেখে আবির দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে গেছে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। তানহার বুকের ভেতর ধক করে ওঠে। আবির শক্ত করে তানহাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে।
“আমি পারছি না তানহা। কতো ফোন দিছি তোমায়। ফোন বন্ধ। খুব সকালে চলে এসেছি এখানে দেখলাম তুমি অভির পেছনে যাচ্ছো।
তানহা আবিরকে ছাড়িয়ে দেয়। তানহাও কাঁদছে।
” প্লিজ আবির চলে যাও। এসো না আমার সামনে।
“আমার কি দোষ
তানহার হাত ধরে করুন সুরে বলে আবির। তানহা আবিরের হাতের ওপর হাত দিয়ে বলে
” দোষ আমাদের কপালের। তুমি আর এখন আমার নেই। আমরা বিয়ে করবো সংসার হবে আমাদের এই স্বপ্নটা আর নেই। তোমাকে দেখলে তোমার স্মৃতি মনে পড়লে পাগল হয়ে যায় আমি। নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে। একটু বেশিই ভালোবাসি তোমায়। তাই সব সময় কথা বলি হাসি। প্লিজ আমাকে এভাবে থাকতে দাও। এসো না আমার সামনে। কষ্ট সয্য হয় না আমার।
কাঁদতে কাঁদতে তানহা আবিরকে জড়িয়ে ধরে। তারপর ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে চলে যায়। অভি রিকশা নিয়ে এসে তানহার সামনে দাঁড়ায়। তানহা কোনো কিছু না বলে রিকসায় উঠে পড়ে। আবির ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির মধ্যে তানহা আর অভি রিকসায়। দুজনই ভিজে গেছে। বাড়ির সামনে রিকশা থামতেই ভেতরে চলে যায় তানহা। কেউ বাড়িতে নেই। সবাই তানহাদের বাড়িতে গেছে বৌভাত খেতে। তানহা রুমে গিয়ে লাগেজ থেকে জামাকাপড় নিতে গিয়ে দেখে জগটা লাগেজের ওপরে পড়ে আছে। আর ওর সব জামাকাপড় ভিজে গেছে।
“হায় আল্লাহ এখন আমি পড়বো কি?
(তানিশা সুলতানা)
তানহা পা টিপে অভির রুমে চলে যায়। অভি রুমে নেই। রুমে থাকলেও তানহা কথা বলতো না। মন ভালো নেই তানহার। কান্না পাচ্ছে। তাছাড়া পড়বে কি? অভির কাবাড থেকে নীল একটা শার্ট আর টাওজার নিয়ে রুমে চলে আসে। নিজের জামা পাল্টে পড়ে ফেলে। এখন রুমের দরজা বন্ধ করে কাঁদবে। অভি দেখলে আবার রহ্মে নেই।
অভি বেলকনিতে বসে গিটারের টুংটাং শব্দ করছে। তানহা একটা টুল নিচে গিয়ে নিজের বেলকানিতে বসে। অভির গান শুনবে।
আমার আগুনের ছাই
জমে জমে
কতো পাহাড় হয়ে যায়,
আমার ফাগুনেরা দিন
গোনে গোনে
আর উধাও হয়ে যায়,
যতো পথেরি বাধা
সবি তো কালো সাদা
কবে ঠিকানা পেয়ে হবে রঙিন,
চেনা নামেরই ডাকে
আমি কি পাবো তাকে
কবে রে ফিরবে সে রোদেলা দিন,
তোরি তো কাছে চায়
পুরোনো কথা টাই
শুনতে নতুন করে,
এমনও যদি হয়
মনেরা নদী হয়
ভাসাবো অনেক দুরে
(বাকি টুকু পারি না?)
তানহা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে গানটা মন দিয়ে শুনছিলো। গানটার প্রতিটি সুরে আবিরের হাসি মুখটা ভেসে ওঠে। তানহা এসব মনে করতে চায় না। তাই উঠে অভিকে জ্বালাতে যায়। এই লোকটার পিছনে লাগতে ভাললই লাগে তানহার।
অভি গিটার রেখে পেছনে তাকিয়ে তানহার গায়ে নিজের শার্ট দেখে চোখ বড়বড় করে তাকায়।
” তুমি আমার প্রিয় টিশার্ট পড়েছো।
দাঁত কটমট করে বলে অভি। তানহা কলার পেছনে দিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলে
“কি কিউট লাগছে আমায় তাই না?
” তোমাকে তো আমি
চলবে