ভালোবাসি তাই part:12

0
4041

ভালোবাসি তাই
part:12
Writer:Afifa Jannat Maysha

?

“তারাহুড়া ” জিনিসটাই যেকোনো কাজ ভেস্তে যাওয়ার মূল কারণ হতে পারে। যে কাজে যত বেশি তারাহুড়া করা হয় সে কাজ শেষ করতে তত বেশি দেরি হয়ে যায়। যেমনটা এখন আমার সাথে হচ্ছে। তারাহুড়া করতে গিয়ে গোছানো জিনিসগুলোও অগোছালো করে ফেলছি আমি।

ভারসিটি থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে বাস ছাড়বে সাতটা ত্রিশে। এখন বাজে সাতটা। আমাদের বাসা থেকে ভারসিটি যেতে সময় লাগে প্রায় আধা ঘণ্টা। আর আমি এখনো বাসা থেকেই বের হতে পারিনি। রাগে মাথাটা ফেটে যাচ্ছে আমার। ইচ্ছে করছে ভাইয়াকে সিলিং ফ্যানের সাথে উল্টোকরে ঝুলিয়ে রাখি। সেই সকাল ছয়টা থেকেই তাকে ডেকে চলেছি আমি। আর সে “আর ৫ মিনিট “,” আর ২ মিনিট ” করতে করতেই এক ঘন্টা কাটিয়ে দিয়েছে।

অনেক যুদ্ধ করে শেষমেশ ভাইয়াকে ঘুম থেকে তুলতে সফল হয়েছি আমি। এখন সে তৈরি হতে ব্যাস্ত। যাচ্ছে আমায় ভারসিটি ড্রপ করে দিতে কিন্তু ভাব দেখে মনে হচ্ছে প্রথমবারের মতো শশুড়বাড়ি যাচ্ছে সে। জাস্ট অসহ্য।

অবশেষে সবাইকে বিদায় জানিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে এলাম আমি আর ভাইয়া। ভাইয়া ফুল স্পিডে বাইক চালাচ্ছে আর আমি পেছনে বসে দোয়া – দুরুদ পড়ে চলেছি। আমার বিশ্বাস আর কক্সবাজার যাওয়া হবে না আমার। মনে হচ্ছে যেকোনো সময় টুস করে এক্সিডেন্ট হবে আর আমি টপ করে উপরে চলে যাবো । কিন্তু আমার বিশ্বাসকে ভুল প্রমাণিত করে ভারসিটির সামনে বাইক থামালো ভাইয়া। এতক্ষণে সস্তির নিঃশ্বাস ফেললেম আমি। তাড়াতাড়ি করে বাইক থেকে নেমে ভাইয়াকে বিদায় জানিয়ে চলে এলাম ভারসিটির ভেতর।

হাতঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম সাতটা তেইশ বেজে গেছে। আর একটু পরই বাস ছেড়ে দেবে। তাই সবাই বাসে উঠে পরেছে। পাঁচটা বাস দাঁড়িয়ে আছে ভারসিটির মাঠে৷ আমার এখন কোনটাতে উঠা উচিৎ সেটাই বুঝতে পারছি না আমি। এই সারাটাকেও চোখে পরছে না কোথাও। কোন বাসে আছে কে জানে।

সবগুলো বাসই প্রায় ভরে গেছে বোধহয়। সবার শেষের বাসের কাছে যেতেই সারাকে দেখতে পেলাম। চুপচাপ বাসের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। দেখে মনে হচ্ছে কারো জন্য অপেক্ষা করছে। এই কেউটা যে আমি সেটা বুঝতে বেশি সময় লাগলো না আমার। তারাতাড়ি করে তার কাছে গেলাম আমি। আমাকে দেখেই রেগে গেলো সারা। রাগী গলায়ই বললো

– এতো তারাতাড়ি চলে এলি যে? আরো ঘন্টাখানিক পরে আসতে পারতি?

সারার কথার স্টাইলই বলে দিচ্ছে কতটা রেগে গেছে সে। কিন্তু তাতে আমার কি? আমি কোনোকালেই ওর রাগের পরোয়া করি না। তাই প্রতিবারের মতো এবারেও মুখভঙ্গি স্বাভাবিক রেখে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম

– আমিও সেটাই ভাবছিলাম। কিন্তু পরে ভাবলাম আজকে নাহয় একটু আগেই চলে যাই।

আমার উত্তরে রাগ আরো বেড়ে গেলেও তা দমন করলো সারা। ওর অবস্থা দেখে মাঝেমাঝে খুব হাসি পায় আমার। দুজনেই চুপচাপ উঠে গেলাম বাসে। যা ভাবছিলাম তাই। বাস পুরো ভরে গেছে। তিনটা সিট খালি আছে মাত্র। ভালোভাবে চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম এই বাসের প্রায় বেশিরভাগই আমাদের সিনিয়র। কয়েকজন শুধু আমাদের ক্লাসমেট। হয়তো তারাও দেরি করে আসায় এই বাসেই জায়গা পেয়েছে। নয়তো কেউ কখনো সখ করে সিনিয়রদের সাথে বসতে আসবে না। সিনিয়ররা পাশে থাকলে মজা করা যায় নাকি।

হঠাৎই চোখ গেলো মাঝামাঝির একটা সিটে। চোখ বন্ধ করে মাথা হেলান দিয়ে বসে আছেন সায়ন ভাইয়া। মনে হচ্ছে কিছু একটা নিয়ে প্রচুর বিরক্ত উনি। হয়তো বাস এখনো ছাড়ছে না বলে। সায়ন ভাইয়ার পাশেই বসে আছেন রাহুল ভাইয়া। তাদের সামনের সিটেই আছেন সাদাব ভাইয়া আর ফাহাদ ভাইয়া। মজার বিষয় হলো উনারা চারজনের গেটাপই কালো। আশ্চর্য! সবাই মিলে কালোই কেনো পরলেন? ইশ! এখন আফসোস হচ্ছে আমার। আমিও যদি ঐ কালো ড্রেসটা পরে আসতাম!

এক বালতি আফসোস নিয়েই খালি সিটটার দিকে এগিয়ে গেলাম আমি আর সারা। যখনই বসতে যাবো তখনই বাধলো আরেক ঝামেলা। আমাদের দুজনেরই জানালার পাশের সিট চাই। খালিই আছে মাত্র তিনটা সিট তারমধ্যে একটা হলো জানালার পাশে । সারা কিছুতেই জানালার পাশ ছাড়া বসবে না। আমি তাকে কতকরে বলছি কিন্তু সে আমার কথা শুনতে নারাজ। আমি ওকে শেষবারের মতো বললাম

– সারা, বাবু। আমি না তোর বেস্টু। বেস্টুর জন্য তো একটু সেক্রিফাইজ করতেই হয়। তাই না?

– হ্যাঁ, একদম ঠিক কথা বলেছিস। বেস্টুর জন্য একটু সেক্রিফাইজ করতে হয়।

– এই তো বুঝেছিস। আমি জানতাম তুই বুঝবি। এজন্যই তো তোকে এতো ভালোবাসি আমি। এখন সর তো আমি এখানে বসবো।

– তোকে এখানে বসতে বলেছে কে?

– কেনো তুই-ই তো বললি।

– আমি তোকে এখানে বসতে বলিনি। বলেছি বেস্টুর জন্য সেক্রিফাইজ করতে হয়। আর আমিও যেহেতু তোর বেস্টু তাই তোর তোর উচিৎ আমার জন্য এটুকু সেক্রিফাইজ করা। ঠিক বললাম না মাইশা, বেবি?

কি ভয়ানক! আমার কথার জালে আমাকেই ফাঁসিয়ে দিয়েছে এই মেয়ে। কিন্তু এখন কি আর করার। ফেঁসেই যখন গেছি তখন তো ওর কথাই মানতে হবে আমায়। তাই চুপচাপ গিয়ে বসে পরলাম নিজের জায়গায়। সারা আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাঁসছে। আমাকে হারাতে পেরে সে যতটা খুশি হয়েছে ততটা খুশি বোধ হয় পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেও হয়নি।

– দাঁত কেলানো বন্ধ করবি প্লিজ? তোর দাঁতগুলো যে সুন্দর সেটা সবাইকে জানাতে হবে না।

আমার কথায় সারার হাঁসি না থেমে আরো বেড়ে গেলো। আমি সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। ওর দিকে তাকালেই রাগ বেরে যাবে আমার। কিন্তু সেটা আমি এমুহূর্তে কিছুতেই চাইছি না।

আমরা সায়ন ভাইয়াদের পাশের সিটেই বসেছি। আমি আর রাহুল ভাইয়া পাশাপাশি। আজকেও প্রথম থেকেই রাহুল ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। বুঝলাম না, আমি কি পৃথিবীর অষ্টমাশ্চর্য হয়ে গেছি? নাহলে রাহুল ভাইয়া এভাবে তাকিয়ে থাকেন কেনো? উনি কি বুঝতে পারেন না এতে আমার অস্বস্তি হয়?

?

দুপুর প্রায় দুইটা। এখনো বাসেই বসে আছি আমরা। কক্সবাজার পৌঁছাতে আরো অনেক দেরী। এতক্ষণ ধরে এই একই জায়গায় বসে থাকতে থাকতে বোরিং লাগছে আমার। অথচ সবাই কতো মজা করছে। প্রথমে ভেবেছিলাম সিনিয়ররা সাথে থাকায় এতোটাও হৈ-হুল্লোড় হবে না আমাদের বাসে। কিন্তু আমার ভাবনাকে ভুল প্রমাণিত করে সিনিয়র- জুনিয়র সবাই একসাথে মজা করছে। সাউন্ড বক্সে তো মিউজিক বাজছেই সেই সাথে সবাই গলা মেলাচ্ছে। সবাই যে খুব ভালো গাইছে তেমনটাও নয়। কারো কারো গলা শুনে মনে হচ্ছে কাক চিৎকার করে গান গাইছে। তবু্ও তাদের থামার নাম নেই। দেখে মনে হচ্ছে বেসুরো গলায় গান গেয়েই প্রচন্ড আনন্দিত তারা।

সবাই আনন্দ করায় ব্যাস্ত থাকলেও আমার কিছুই ভালো লাগছে না। সবকিছুই অসহ্য লাগছে।উরে উরে কক্সবাজার চলে যেতে ইচ্ছে করছে আমার। ইশ! আমার যদি ডোরেমনের মতো একটা এনিহয়ার ডোর থাকতো তাহলে কখনো এখানে বসে থাকতাম না আমি। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব নয়। তাই না চাইতেও এখানে বসে থাকতে হচ্ছে আমায়।

সারাদিনে আমার সাথে একটা কথাও বলেননি সায়ন ভাইয়া। এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু তবুও মন বলছে একটাবার কি কথা বলা যায় না আমার সাথে? খালাতো বোন হিসেবেই নাহয় একটু কথা বলুক তাহলেও চলবে। মনের ইচ্ছাকে প্রাধান্য না দিয়ে মনকে বুঝালাম যে আমি এমন কিছু চাইতে পারি না। এটা ঠিক না। আর আমি নিজেই তো সায়ন ভাইয়ার থেকে দুরে থাকতে চাইছি। তাহলে এখন কেনো উনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে আমার?

হঠাৎ বাস থেমে যাওয়ায় ভাবনার সুতো ছিড়লো আমার। বাস থেমে যাওয়ার কারণটা বুঝতে চেষ্টা করছি আমি। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি একটা রেস্তোরাঁর সামনে দাঁড়িয়েছে আমাদের বাস। ঘরির দিকে তাকিয়ে বুঝলাম দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য বাস দাঁড় করানো হয়েছে।

একে একে সবাই নামতে শুরু করলো। সারাও নেমে গেছে। আমিও উঠে দাঁড়ালাম নেমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। অনেক্ষন যাবৎ বসে থাকায় ভালো করে হাঁটতে পারছি না আমি। ধীরে ধীরে নেমে এলাম বাস থেকে। এখন অনেকটাই ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে বন্ধ খাঁচা থেকে মুক্তি মিলেছে আমার।

রেস্তোরাঁয় এসে সবাই মুখ -হাত ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। এখন আর কোনোকিছুতে বিরক্তি লাগছে না আমার। টেবিলে বসতে গিয়েও দেখি বসার জায়গা নেই। আজকে মনে হচ্ছে “দেরি “শব্দটা আমার জন্যই তৈরী হয়েছিলো। সবক্ষেত্রেই আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে আজ।

একবস্তা বিরক্তি নিয়ে পেছনের দিকের টেবিলে বসার জন্য পা বারাতেই রাহুল ভাইয়ার ডাক শুনতে পেলাম। উনাদের টেবিলে একটা চেয়ার খালি আছে। আমি রাহুল ভাইয়ার কাছে যেতেই উনি বললেন

– এখানে বসে পরো, মাইশা। পেছনে ফ্যানের বাতাস পাবে না।

রাহুল ভাইয়ার কথাটা একদম ঠিক। রেস্তোরাঁর অবস্থা এতোটাও ভালো না। মাথার উপরে ফ্যানগুলো ঝুলছে ঠিকই কিন্তু তারমধ্যে প্রায় সবগুলোই অকেজো। রেস্তোরাঁর মালিক বোধহয় ফ্যানগুলোকেই শো-পিস হিসেবে ব্যাবহার করছেন।

– কি হলো, বসে পরো?

রাহুল ভাইয়ার কথায় কি করবো বুঝতে পারছি না আমি। এই গরমে পিছনে বসে খাওয়াটাও সম্ভব নয়। আবার রাহুল ভাইয়াদের সাথে বসতেও কেমন লাগছে আমার। যদিও সায়ন ভাইয়া এখানে আছেন। কিন্তু তাতে কি? উনি নিজেও তো একজন ছেলে। চারজন ছেলের মাঝে একা একটা মেয়ে ব্যাপারটা কেমন যেনো।

অনেক কল্পনা জল্পনা করে শেষমেশ বসেই পরলাম রাহুল ভাইয়ার পাশে। ঠিক আমার সামনে চোখ-মুখ শক্ত করে বসে আছেন সায়ন ভাইয়া। উনাকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো কারণে রেগে আছেন উনি। আমি এখানে বসেছি বলে রেগে গেলেন নাতো? এই কথাটা মাথায় আসতে ঠিক করলাম এখান থেকে উঠে যাবো। আমার জন্য সায়ন ভাইয়া রেগে যাক সেটা আমি চাইনা। উনি রেগে গেলে মাথা ঠিক থাকে না উনার। যেখানে সেখানে সিনক্রিয়েট করে বসেন। এখন এমন কিছু হলে লজ্জায় পরতে হবে আমায়।

সিদ্ধান্তমতে চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়ালাম আমি। রাহুল ভাইয়া জিজ্ঞেস করলেন

– উঠে পরলে কেনো?

– আমি পেছনেই ঠিক আছি ভাইয়া। সমস্যা নেই।

আমি চলে আসতে নিলেই আমার হাত টেনে ধরলো রাহুল ভাইয়া। উনার কাজে আজকেও অবাক হয়েছে সবাই। উনি আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বললেন

– কোনো কথা হবে না আর। এখানেই বসবে তুমি।

আমি রাহুল ভাইয়াকে কিছু না বলে সায়ন ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। আচমকাই চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলেন সায়ন ভাইয়া। ফাহাদ ভাইয়া উনাকে জিজ্ঞেস করলেন

– তোর আবার কি হলো? দাঁড়িয়ে পরলি কেনো?

উনার ঠাসঠাস জবাব

– ভালো লাগছে না আমার। খাবো না আমি। তোরা খাওয়া শেষ করে বাসে চলে আয়। আমি গেলাম।

কারো আর কোনো কথা না শুনেই বাসে উঠে পরলেন সায়ন ভাইয়া। এখন মনে হচ্ছে আমারই ভুল। প্রথমেই এখানে বসা উচিৎ হয় নি আমার। আমার জন্য এখন সায়ন ভাইয়া না খেয়ে চলে গেলেন।

রাহুল ভাইয়া জোর করে উনার পাশে বসালেন আমায়। আমার সামনেই রয়েছে একগাদা খাবার। এতক্ষণ ক্ষুধা লাগলেও এখন খেতে ইচ্ছে করছে না মোটেও। সায়ন ভাইয়া না খেয়ে থাকবেন আর আমি কিনা পেট ভরে খাবো। খাবার সামনে নিয়ে চুপ করে বসে থাকায় রাহুল ভাইয়া বললেন

– কি হলো খাচ্ছো না কেনো?

– ভাইয়া, আমার না খেতে ইচ্ছে করছে না। আমি খাবো না ভাইয়া।

আমার উত্তরে ধমকে উঠলেন রাহুল ভাইয়া

– খেতে ইচ্ছে করছে না মানে কি? সায়ন আর তোমার কি হয়েছে বলোতো। দুজনেরই খেতে ইচ্ছে করছে না। নো মোর সিঙ্গেল ওয়ার্ড। চুপচাপ খাবারটা ফিনিস করবে তুমি। নাও শুরু করো।

রাহুল ভাইয়ার ধমকে কোনো কথা না বলে খেতে শুরু করলাম আমি। চুপচাপ খাচ্ছি আর ভাবছি রাহুল ভাইয়া এভাবে কেনো কথা বলছেন আমার সাথে? উনার কথায় আমার প্রতি অধিকারবোধ স্পষ্ট। কিসের এতো অধিকারবোধ উনার?কই, আমি তো উনাকে এতো অধিকার দিই নি?

চলবে……

[ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here