ভালোবাসি তোকে ❤পর্ব- ১১.
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
.
আদ্রিয়ানের হঠাৎ এই চেঞ্জ দেখে আমরা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ইফিজ ভাইয়া, আপি আর জাবিন এবার একসঙ্গে আমার দিকে তাকালো। তিনজনই ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো কী ব্যপার? আমিও কাধ সংকোচিত করে ঠোঁট বাঁকিয়ে বোঝালাম আমি কিছুই জানিনা। জাবিন আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে বলল,
— ” ভাবীমনি কী জাদু করেছ বলোতো? আমার ভাইয়াটা একদম আগের ফর্মে ফিরে গেলো?”
আপিও তাল মিলিয়ে বলল,
— ” হ্যাঁ সত্যিই কী করেছিস বলতো তুই?”
আমি বিরক্ত হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম,
— ” আরে আমিতো বলছি আমি কিছুই করিনি। তোমাদের ভাইয়ের কী হয়ে আমি কীকরে জানবো? আর তাছাড়াও তার মাথায় কখন কী চলে সেটা কী আমি জানি নাকি? আজব!”
ইফাজ ভাইয়া হেসে বললেন,
— ” তবে যাই হোক। আমাদের আদ্ররিয়ানটা যে আবার আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে গেছে এটাই অনেক।”
আপি আর জাবিন দুজনেই সন্তুষ্টির একটা হাসি দিলেন। আমিও হাসলাম। তখনি রুমে ওনার আগমন ঘটলো। উনি বাবার রুম থেকে একটা উপন্যাসের বই নিয়ে এসছেন। ওনাদের রুমে দেখে ভ্রু কুচকে বললেন,
— ” কী ব্যাপার তোরা এখনি যাসনি কেনো? বললাম তো আড্ডা পরে হবে এখন ওর পড়ার সময়।”
জাবিন মুখ ফুলিয়ে বলল,
— ” আরে বাবা যাচ্ছি তো। তোর বউকে নিয়ে যাবোনা আমরা তোর বউ তোরই থাকবে।”
আদ্রিয়ান জাবিনের মাথায় একটা টোকা দিয়ে বলল,
— ” সেটা তুই বললেও আমার থাকবে আর না বললেও আমারই থাকবে। এখন যা ফট।”
আমি আবারও অবাক দৃষ্টিতে দেখছি ওনাকে। সবাই আবাক হয়েই রুম ত্যাগ করল।
ওদের আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললেন,
— ” কী হলো তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো যাও পড়তে বসো।”
আমি কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ পড়তে বসলাম। আর উনিও আমায় পড়া দিয়ে দিয়ে বেডে হেলান দিয়ে এক হাতে কফি আরেক হাতে উপন্যাসের বইটা নিয়ে বসলেন।
দুপুরে মামনী, বড় আম্মু মিলে খাবার সাজাচ্ছে টেবিলে আপিও একটু হেল্প করছে। আর আমি গালে হাত দিয়ে দেখছি ওনাদের। আচ্ছা? আমিওতো এই বাড়ির বউ তাইনা? তাহলে আমাকেও একটু টুকিটাকি কাজ করতে দিলে কী হয়? আপিকেতো তাও কম হলেও একটু কাজ করতে দেয় আমাকে কেনো দেয়না? এরমধ্যেই সবাই আস্তে আস্তে চলে এলো খেতে। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ানও নামলেন। আজ অফ ডে তাই বাড়িতেই আছে সবাই। উনি এসে আমার পাশের চেয়ার টেনে বসলেন। খাবার সার্ভ করার সময় ইফাজ ভাইয়ার পাতে যেই মাছ দিতে যাবে তখনি আদ্রিয়ান বলে উঠল,
— ” খবরদার আম্মু। ওই পিছটা আমিই নেবো?”
মামনী হা করে তাকিয়ে আছেন বাকি সবাইও বেশ অবাক হয়েছেন। সবাই যেন শক থেকে বেড় হতে পালছেননা। আমরা সকালে ওনার পরিবর্তন টা কিছুটা দেখলেও এখন আরও অবাক হচ্ছি।
— ” কী হলো দাও।”
আদ্রিয়ানের কথায় হুস এলো আমার। মামনীর চোখজোড়া ছলছল করছে। বাকি সবাইও অনেকটা ইমোশনাল হয়ে গেছেন। আন্টি নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন,
— ” এই এতো হিংসুটে কেনো রে তুই? সবগুলোই তো একরকম।”
বলে ইফাজ ভাইয়ার পাতে মাছটা দিতে গেলেই আদ্রিয়ান মামনী হাত ধরে মাছটা নিজের পাতে নিয়ে নিলেন। ইফাজ ভাইয়া একটু রাগী গলায় বললেন,
— ” আরে এটা কী হলো? ছোট আম্মুতো এটা আমাকেই দিয়েছিলো তুই কেনো নিলি?”
আদ্রিয়ান ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে খাবার নাড়তে নাড়তে বললেন,
— ” কারণ আমি ছোট। আর লজিক্যালি ছোটদেরকেই বেশি করে দেওয়া উচিত। এটাও জানিস না গাধা।”
ইফাজ ভাইয়া তৃপ্তিময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। কেনোই বা তাকাবে না। খুব বেশিই অপেক্ষায় ছিলেন এই আদ্রিয়ানকে এভাবে দেখার জন্যে। তবুও রাগ করার ভান করে বলল,
— ” হ্যাঁ হ্যাঁ তোর ওসব লজিক তোর কাছেই রাখ। মানছি তুই ইঞ্জিনিয়ার কিন্তু আমিও তো ডক্টর নাকি? ডক্টর হতেও মাথা লাগে আর সেটা যদি হয় নিউরো সার্জন।”
আদ্রিয়ান কপাল কুচকে বললেন,
— ” হ্যাঁ জানি তুই কী। দিনে দশবার করে বলে বলে সবাইকে মনে করাতে হবেনা। যদিও তোকে দেখলে একজন সার্জন সার্জন মনে হয়না। তবুও চলে!”
ইফাজ ভাইয়াও একই ভঙ্গিতে ওনার দিকে তাকিয়ে বললেন,
— ” সেটাই তুই তো কপালে সিল লাগিয়ে ঘুরিস যে আমি ইঞ্জিনিয়ার।”
— ” আমার সিল লাগেনা এমনিতেই সবাই বুঝে যায়।”
আমরা সবাই খাচ্ছি আর মিটমিটিয়ে হাসতে হাসতে দুই ভাইয়ের ঝগড়া ইনজয় করছি। উনি খেয়ে উঠে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
— ” তাড়াতাড়ি খেয়ে ওপরে চলে এসো। নিচে বেশিক্ষণ থেকোনা।”
আমি ইতস্তত করে আশেপাশে সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে দেখি সবাই মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে। উফফ কী জ্বালারে ভাই। এভাবে বলার কী ছিলো? নিশ্চয়ই ওপরে নিয়ে বই খাতা নিয়ে বসিয়ে দেবে। কিন্তু সবাইতো ভাবছে যে উনি কী না কী জন্যে ডাকছেন। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লাম। উনি চলে গেলেন। উনি যেতেই সবাই আমার দিকে তাকালো। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। মামনী এসে আমায় আলতো করে জরিয়ে ধরে বললেন,
— ” এমন অসাধ্য সাধন কীকরে করলি মা?”
বড় আম্মুও বললেন,
— ” হ্যাঁ। এই চারমাসেও যেটা হয়নি সেটা আজ হলো।”
আমি বেশ অনেকটা অবাক হয়ে বললাম,
— ” কিন্তু আমিতো…”
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই বাবা বললেন,
— ” আমি জানতাম যদি কেউ পারে তাহলে একমাত্র ওই পারবে। দেখলে মিলল তো আমার কথা?”
সবাই আমার প্রশংসায় একেবারে পঞ্চমুখ হয়ে যাচ্ছে আর আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওনাদের দিকে। আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিচ্ছেনা কেউ। কিন্তু আমিতো কিছুই করিনি। ওনাদের ঐ হাফ পাগল ছেলে কীভাবে,কখন, কী করে সেটা বোঝার ক্ষমতা আমার এই ছোট্ট মাথাটার নেই। কিছু না করেই সব ক্রেডিট পেয়ে গেলাম? এভাবে যদি কিছু না পড়েই মেডিকেলে চান্সটা হয়ে যেতো কত্তো ভালো হতো তাইনা? কিন্তু সকাল থেকেই ওনার ব্যবহারে অদ্ভুত কিছু লক্ষ্য করছি। আচ্ছা উনি কী আমাকে নিজের ওয়াইফ হিসেবে মেনে নিতে শুরু করে দিয়েছেন? যদি তাই হয় তাহলে আমিও এতো সহজে সব মানবো না। বিয়ের রাতে তো খুব করে বলেছিলো “তোমাকে কোনোদিন বউ হিসেবে মানতে পারবোনা।” এখন দেখি এতো ভাব কোথায় যায়।
___________________
রাতে আমাকে গত লেকচারের পড়াটা কম্প্লিট করিয়ে দিয়ে উনি বললেন,
— ” আজকের টা ভালো ছিলো। জুওলজিতে যতোটা কনসেনট্রেট করো জিকে, ওরগ্যানিক কেমিস্ট্রি আর ফিজিক্সে এ এর অর্ধেক করলে আমার আর টেনশন থাকতোনা।”
আমি একটু বিরক্তি প্রকাশ করে বললাম,
— ” দূর। আমার ওইগুলো ভালোলাগেনা। ফিজিক্স যেমন তেমন কিন্তু জিকে আর ওরগ্যানিক ক্যামিস্ট্রি নাম শুনলেই মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়।”
উনি এবার বেশ রেগে ধমকে বললেন,
— ” মাথায় একটা চাটা মারলেই মাথা ব্যাথা পালিয়ে যাবে। এই দুটোই মেডিক্যাল এডমিশনের জন্যে কতো ইমপর্টেন্ট জানো? আর যাই হোক চান্স তো পেতে হবে তো?”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
— ” যদি না পাই?”
উনি শক্ত কন্ঠে বললেন,
— ” ঘর থেকে বেড় করে দেবো তাহলে।”
আমি মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হেসে দিলেন। তারপর বইগুলো গুছিয়ে টেবিলে রেখে একটা হেয়ার ব্যান্ড এনে আমার দিকে সামনে বসে বললেন,
— ” ঘোরো।”
আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। উনি নিজেই ধরে আমায় ঘুরিয়ে বসিয়ে হাত দিয়ে খোলা চুলগুলো সব একজায়গায় এনে বেঁধে দিলেন। আমি একটু অবাক হলাম ঠিকই কিন্তু কিছুই বললাম না। উনি বালিশ ঠিক করে বললেন,
— ” শুয়ে পরো। সকালে কোচিং এ যেতে হবে তো।”
আমিও চুপচাপ শুয়ে পরলেন। আমাকে চরম অবাক করে দিয়ে উনি আজ আর আমার সতীনকে আজ মাঝখানে না রেখেই শুয়ে পরলেন উনি। এবং আমার অনেকটা কাছে এসেই শুয়েছেন। আমি অবাক হয়ে তাকালাম ওনার দিকে তবে কী সত্যিই আমাকে উনি নিজের ওয়াইফ হিসেবে মেনে নিচ্ছেন? কিন্তু আমিতো এতো সহজে ছাড় দেবোনা, অনেক কষ্ট দিয়েছে আমাকে, অনেক জ্বালিয়েছে। এবার আমার পালা। আমি কোলবালিশটা আবার আমাদের মাঝখানে এনে রাখলাম। উনি ভ্রু কুচকে তাকালেন আমার দিকে। আমি এমন ভাব করলাম যেনো কিছুই হয়নি। এবার দেখো কেমন লাগে। উনি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কোলবালিশটা সরিয়ে দিলেন। আমি আবারও কোলবালিশটা মাঝখানে এনে রাখলাম। হা হা সবেতো শুরু খবিশরাম তোমাকে অনেক টাইট দেওয়া বাকি। উনি এবার কোলবালিশটা নিয়ে ছুড়ে ফ্লোরে ফেলে দিলেন। আমি চমকে গেলাম। উনি আমার হাত ধরে একটানে নিজের কাছে নিয়ে আমার দুই হাত বালিশে চেপে ধরে শক্ত চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমি একটা শুকনো ঢোক গিললাম। ওনাকে রাগাতে চেয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু এতোটা রেগে যাবেন ভাবিনি। আল্লাহ্ রক্ষা করো।
#চলবে…
( রিচেইক করতে পারিনি আর দ্রুত টাইপ করতে হয়েছে। তাই দয়াকরে টাইপিং মিস্টেকগুলো নিজ দায়িত্বে বুঝে নেবেন)