ভালোবাসি তোকে ❤পর্ব- ২৭
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
.
কয়েকদিন যাবত আদ্রিয়ান বেশ ব্যস্ত আছেন। আসলে এতোদিন আমার এডমিশন, তারপর আমাকে মামা বাড়ি থেকে আনতে গিয়ে তিনটে দিন থাকতে হয়েছে। এতে করে ওনার কাজে নাকি অনেক গ্যাপ পরেছে। এখন বেশি বেশি কাজ করে পুশিয়ে নিচ্ছেন। আজকে সকালেও খুব তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে গেছেন উনি। আমি রুমে একা একা বসে বোর হচ্ছি। এতোদিন তো তবুও আদ্রিয়ানের দিয়ে যাওয়া পড়াগুলো কম্প্লিট করে করে টাইম পাস করতাম। এখন তেমন কোনো কাজও নেই। সবে এডমিশন নিয়েছি ক্লাস শুরু হয়নি। যদিও আদ্রিয়ান একটা ফোন কিনে দিয়েছেন টাইম পাসের জন্যে। ভাবলাম এখন নিশ্চয়ই আপি নিচে থেকে চলে এসছে আপির সাথে গল্প করে আসি সেটাই ভালো। বেড থেকে নামবো তখনই দরজা থেকে কেউ বলল,
— ” হ্যালো ম্যম? আসবো?”
আমি তাকিয়ে দেখলাম আপি দুই হাতে দুটো ধোয়া ওঠা কফির মগ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
— ” তুমি আবার কবে থেকে আমার রুমে পারমিশন নিয়ে ঢুকতে শুরু করলে।”
আমি হেসে দিয়ে ভেতরে আসতে অাসতে বলল,
— ” না মানে এখন তো আর তুমি আমার সেই অনি নেই। এখন তোমার বিয়ে হয়েছে। এখন রুমও তোমার একার নয় আমার দেবরেরও। তাই আর কী?”
বলে বেডে এসে বসল। আমিও হেসে দিয়ে বললাম,
— ” তোমার দেবরের কী রুমে থাকার সময় আছে? বলো? সে তো ল্যাব টু বাড়ি টু ল্যাব এটাই করছে এখন।”
আপি বেডে আসম করে বসে বলল,
— ” ওর কী দোষ বল? বেচারা বেশ অনেকটা দিন সময় দিয়েছে তোকে কিন্তু ওর ও তো কাজ আছে? সব রিকভার হয়ে এলে ঠিক আবার সময় দেবে।”
আমি ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে আপির হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে বললাম,
— ” হুমম। ইফাজ ভাইয়া কী হসপিটালে গেছেন।”
— ” হ্যাঁ অনেক আগেই।”
আমি আর কিছু বললাম না আপিও আর কিছু বলল না। একটু পরেই দরজায় নক করে গলা ঝেড়ে কেউ বলল,
— ” আসতে পারি?”
আপি আর আমি দুজনেই তাকিয়ে দেখলাম যে ওটা জাবিন কফির মগ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম,
— ” তোমাদের ব্যপারটা কী বলবে? আমি আবার কবে থেকে এতো সম্মানীয় ব্যাক্তি হয়ে গেলাম যে তোমরা সবাই নক করে করে রুমে ঢুকছো।”
জাবিন একটু অবাক মুখভঙ্গি করে বলল,
— ” কী বলছো কী ভাবীমনি ? এটা দি গ্রেট আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের এর রুম। আর তুমি তার একমাত্র বউ। আমাদের কী সেটা ভুলে গেলে চলবে না কী?”
বলে বেডে এসে বসল। আমি অবাক হয়ে বললাম,
— ” বউ আবার কয়মাত্র হয়?”
জাবিন হেসে দিয়ে বলল,
— ” বাহ রে এখন যদি ভাইয়া আবার একটা বিয়ে করে তখন তো তুমি দুইমাত্র বউ হয়ে যাবে না?”
আমি কফিতে চুমুক দিতে গিয়েও থেমে গেলাম। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,
— ” আবার বিয়ে করবে মানে কী হ্যাঁ?”
জাবিন মুখটা সিরিয়াস করে বলল,
— ” নাহ মানে করতেই পারে যদি ভাইয়ার কাউকে পছন্দ হয়ে যায় তো? কী বলো বউমনি হতেই তো পারে তাইনা?”
আপিও সম্মতি দিয়ে বলল,
— ” হ্যাঁ তাইতো। বিয়েটা যেভাবে হলো তাই অন্যকাউকে পছন্দ হয়ে যাওয়াটা খুব বেশি অস্বাভাবিক কিছু না।”
আমি কাঁদোকাঁদো মুখ করে একবার আপির একবার জাবিনের দিকে তাকালাম। তারপর অসহায় গলায় বললাম,
— ” উনি এমন কিচ্ছু করবেনা। উনিতো বলেছেন আমায় আর কোনোভাবে কষ্ট দেবেননা।”
আপি কফির মগটা রেখে বলল,
— ” হ্যাঁ দেবে নাই তো। কষ্ট কেনো দেবে? আর ও আরেকটা বিয়ে করলে তুমি কেনো কষ্ট পাবে?”
জাবিনও নিজের মুখভঙ্গি দিয়ে একই প্রশ্ন করল। আমি আপির দিকে বিরক্তির দৃষ্টি দিয়ে বললাম,
— ” কষ্ট পাবো না কেনো হ্যাঁ? ইফাজ ভাইয়া যদি আরেকটা বিয়ে করলে তুমি কষ্ট পাবেনা?”
আপি একটু ভাব নিয়ে বলল,
— ” জ্বী না। কারণ তোর ভাইয়া আমায় ভালোবাসে। তাই সেই চান্স নেই। কিন্তু আদ্রিয়ান কী তোকে ভালোবাসে?”
জাবিনও তাল মিলিয়ে বলল,
— ” হ্যাঁ ভাবিমনি। বলো! বলো! ভালোবাসে?”
আমি কিছু না বলে কফি খাওয়ায় কনসিনট্রেট করলাম। কিচ্ছু ভালো লাগছেনা। আচ্ছা উনি আমাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছেন ঠিকি কিন্তু উনি কী আমায় ভালোবাসেন? ওনার আচরণেও তো ঠিকভাবে কিছুই বুঝতে পারছিনা। মুখ গোমড়া করে এসব ভাবছি। হঠাত করেই আপি আর জাবিন একসাথে শব্দ করে হেসে দিলো। আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওদের দিকে। আপি হাসতে হাসতে বলল,
— ” আরে পাগলি মজা করছিলাম আমরা। আদ্রিয়ান তোকে যথেষ্ট ভালোবাসে। মন থেকে ভালো না বাসলে কেউ এতো কিছু করেনা।”
জাবিনও হাসি থামিয়ে বলল,
— ” এক্সাক্টলি, ভাইয়া সত্যিই তোমাকে খুব ভালোবাসে।”
আমি একটু মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম,
— ” কচু। সেরকম কিছু হলে নিশ্চয়ই বলে দিতো।”
আপি আমার মাথায় একটা চাটা মেরে বলল,
— ” এতো অধৈর্য হচ্ছিস কেনো? সময় কী চলে যাচ্ছে না কী? ঠিক বলে দেবে।”
আমি কিছু না বলে কফি খাওয়াতেই মনোযোগ দিলাম। এরপর আপি আর জাবিনের সাথে বসে বসে আড্ডা দিলাম। সারাদিনে আদ্রিয়ান বাড়ি আসেন নি তাই বাড়ির সবার সাথে আড্ডা দিয়ে, দাদির সাথে দুষ্টুমি করে আর বাকি সময়টা মোবাইলে গেমস খেলে কাটিয়ে দিলাম।
____________________
প্রতিদিনের তুলনায় আজ আদ্রিয়ান একটু বেশিই লেইট করছেন ফিরতে। উনি রোজ দশটার মধ্যে ফিরে আসেন কিন্তু আজকে সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে এখনও এলোনা। আমাকে ফোন করে বলে দিয়েছেন আমি যাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পরি। কিন্তু আমার কেনো জানিনা সেটা করতে ইচ্ছা করলো না। তাই এখনও বসে বসে ঝিমছি। হঠাৎ করেই দরজা খোলার আওয়াজে তাকিয়ে দেখি উনি চলে এসছেন। আমি একটা হাই তুলে ওনার দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব ক্লান্ত। চুল এলোমেলো হয়ে গেছে, শার্টের ওপরের তিনটা বোতাম খোলা, হালকা ঘেমে আছেন। এই ক্লান্ত এলোমেলো রুপেও কতটা সুন্দর লাগছে দেখতে। উনি ভ্রু কুচকে ব্যাগটা রাখতে রাখতে বললেন,
— ” কী ব্যাপার? তোমাকে না বললাম খেয়ে শুয়ে পরো?”
আমি পিটপিটে চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— ” আপনি টায়ার্ড হয়ে এসছেন তো। নিচ থেকে খাবার ওপরে নিয়ে এসে খেতে ইচ্ছে করতোনা। শেষে না খেয়েই ঘুমিয়ে পরতেন।”
উনি শার্ট খুলতে খুলতে মুচকি হেসে বললেন,
— ” বাহ। একয়েকদিনেই খুব ভালো চিনেছোতো আমায়। বাট তাই বলে এতো রাত জাগতে হবে?”
আমি আরেকটা হাই তুলে বললাম,
— ” আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার নিয়ে আসছি।”
উনি মাথা নেড়ে ওয়াসরুমে চলে গেলেন আর আমিও নিচে গেলাম খাবার আনতে। ট্রে তে করে দুজনের খাবার নিয়ে ওপরে এসে দেখি উনি ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে গেছেন। একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর টিশার্ট পরে বেড়িয়েছেন।এতো ফাস্ট কেনো এই ছেলেটা? আমি খাবারটা টি-টেবিলে রাখলাম। উনি চুল আচড়ে বেডে এসে আসাম করে বসলেন। আমি ওনাকে ওনার প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে নিজের নিয়ে বসলাম। উনি চুপচাপ খাচ্ছেন আর আমিও। দুজনেই কোনো কথা বলেই খাওয়া শেষ করলাম। খাওয়া দাওয়া শেষে সব গুছিয়ে এসে দেখি উনি শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমাকে দেখে বললেন,
— ” দাঁড়িয়ে আছো কেনো? অনেক রাত হয়েছে তো? শুয়ে পরো?”
আমি কিছু না বলে শুয়ে পরলাম। কিন্তু আমার তো আপি আর জাবিনের বলা কথাগুলোই মনে খচখচ করছে। তাই কিছু একটা ভেবে বললাম,
— ” আচ্ছা আপনি যদি আপনার পছন্দের কাউকে পান তাহলে আবার বিয়ে করবেন?”
উনি একটু জোরেই বললেন,
— ” হোয়াট?”
আমি একটু হকচকিয়ে গেলাম। তারপর কোনরকম তুতলিয়ে বললাম,
— ” ন্ না মানে করতেই পারেন।”
উনি কুনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে আমার দিকে আধশোয়া হয়ে বলল,
— ” হঠাৎ এসব চিন্তা মাথায় ঢুকলো কেনো?”
আমি একটু ইতস্তত করে বললাম,
— ” না মানে আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না। তাই করতেই পারেন আরেকটা বিয়ে। তাই না?”
উনি একটু চিন্তিত ফেস করে বললেন,
— ” তাইতো? এটা তো এতোদিন ভাবিনি? বেস্ট আইডিয়া। শুধু শুধুই এতদিন সেন্টি হচ্ছিলাম।”
আমি মুখ ফুলিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— ” সত্যিই বিয়ে করবেন আপনি?”
— ” কেনো না? তেমন কাউকে পেলে অবশ্যই করবো।”
— ” যা খুশি করুন।”
বলে উল্টো দিকে ফিরে শুয়ে রইলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান পেছন থেকে আমার পেট জড়িয়ে ধরলেন। আমি ছাড়াতে নিলে উনি আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন,
— ” কাবার্ডে একটা প্যাকেট আছে। প্যাকেটে যা আছে কাল বিকেলে পরে রেডি হয়ে থেকো। বেড়োবো তোমাকে নিয়ে।”
আমি একটু অভিমানী গলায় বললাম,
— ” কেনো? আপনার জন্যে নতুন বউ খুজতে?”
— ” সেটা কালকেই দেখতে পাবে।”
আমি কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। বললেই হলো নাকি যে বিয়ে করবো? এতো সহজ? মেয়ে ঠিক করে দেখাক না এমন ভাঙ্চি দেবো যে সাত জন্মেও আর বিয়ে হবেনা। এসব নানারকম কথা ভাবতে ভাবতে আর ওনার গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে ঘুমিয়ে পরলাম।
____________________
আদ্রিয়ানের দেওয়া ড্রেসটা পরে আয়ানায় নিজেকে দেখছি। উনি একটু আগেই মেসেজ করেছেন যে আধঘন্টার মধ্যে আসবেন আমায় নিতে। ওনার কথামতো কাবার্ড খুলে দেখি একটা প্যাকেট। প্যাকেটটা নিয়ে বেডে বসে খুলে বের করে দেখি একটা কালো লং গ্রাউন, তারসাথে গ্রে একটা ওড়না। জামাটার ওপর গ্রে স্টোনের হালকা কাজ আছে, গলাটাও রাউন্ড গলা, ফুল হাতা। একটা বক্সও পেয়েছি বক্সটা খুলে দেখলাম একটা গ্রে স্টোনের মিডিয়াম সাইজের কানের দুল। আপিদের বলেছিলাম আজ বিকেলে আদ্রিয়ানের সাথে বেড়োবো। তাই ওরা দুপুর থেকেই এক্সাইটেড হয়ে আছে। আমি ড্রেসটা পরে বেড়িয়েই দেখি ওরা সাজানোর জিনিস বেডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে। আয়নায় নিজেকে দেখে নিয়ে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,
— ” এগুলো কী করছো তোমরা?”
জাবিন হেসে দিয়ে বলল,
— ” আরে ভাবিমনি কী বলছ? ভাইয়ার সাথে আজ প্রথম ডেট এ যাচ্ছো। একটু সাজগোজ তো করবেই না?”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
— ” তাই বলে এতো?”
আপি মেকাপ গোছাতে গোছাতে বলল,
— “আরে একটুই সাজাবো টেনশন করিস না। আয় তাড়াতাড়ি আয়।”
ওরা আমাকে ধরে বসিয়ে অনেকটা জোর করেই একটু সাজিয়ে দিল। চোখে আইলাইনার, একটু কাজল, ঠোঁটে হালকা করে নুড কালার লিপস্টিক, মুখে হালকা ফেসপাউডার পাফ করে দিলো। ওড়নাটা সাইডে মেলে দিয়ে নিয়েছি। আর চুলগুলো খুলে দিয়েছি। আপি এয়ারিং পরিয়ে দিয়ে বলল,
— ” কী ব্যাপার? আদ্রিয়ান ইয়ারিং দিলো অথচ কোনো পেন্ডেন্ট বা লকেট দিলো না কেনো?”
জাবিন কিছু বলবে তার আগেই আমার ফোন বেজে উঠল। তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান ফোন করেছেন। অামি আপিকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
— ” এই দেখো উনি ফোন করে ফেলেছেন। আমি যাই হ্যাঁ?”
বলে ফোনটা হাতে নিয়ে দৌড়ে দরজার কাছে যেতেই আপি ডাকলো। আমি পেছনে তাকাতেই আপি আর জাবিন একসাথে বলে উঠল,
— ” অল দা বেস্ট।”
বলেই ওনারা হেসে দিলেন। আমি হেসে দিয়ে চলে এলাম। নিচে যেতে যেতে হাতের রিংটা দেখতে লাগলাম যেটা উনি আমাকে এনগেইজমেন্টের দিন পড়িয়ে দিয়েছিলেন। নিচে গিয়ে দেখলাম উনি গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ওনার পরনে গ্রে কালার একটা ফুল হাতা গেঞ্জি, আর কালো জিন্স পরে আছে, পায়ে হোয়াইট কেডস্। সকালে তো এগুলো পরে বেড়োন নি? আমার জানা মতে ওনার এমন কোনো পোশাকও নেই তাহলে? নতুন কিনেছেন? এসব ভাবতে ভাবতে ওনার দিকে এগিয়ে গেলাম। উনি ফোন দেখছিলেন। আমি ওনার সামনে দাঁড়িয়ে গলা ঝাড়লাম। আমার গলার আওয়াজ পেয়ে উনি আমার দিকে তাকালো। তাকানোর সাথে সাথেই ওনার দৃষ্টি স্হির হয়ে গেলো। আমার দিকে তাকিয়ে থেকেই ফোনটা পকেটে রাখলেন। উনি আমার পা থেকে মাথা অবধি স্কান করে ঠোঁটে হালকা হাসি ঝুলিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বললেন,
— “ওঠো।”
আমি কোনো কথা না বলে চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসলাম। উনিও গাড়িতে বসে আমার সিটবেল্ট বেধে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলেন। কিছক্ষণ দুজনেই চুপ ছিলাম। কিছুক্ষণ পর আমি বললাম,
— ” কোথায় যাচ্ছি আমরা?”
আদ্রিয়ান ড্রাইভ করতে করতে বললেন,
— ” গেলেই দেখতে পাবে।”
আমি বিরক্ত হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— ” এমন কেনো আপনি? সবসময় থ্রিল থ্রিল ভাব রাখেন সবসময়। সবসময় মনের মধ্যে চলতে থাকে এরপর কী হবে? এরপর কী হবে?”
আমার কথায় উনি শব্দ করে হেসে দিয়ে বললেন,
— ” মাঝে ভাবা ভালো। মস্তিষ্কচর্চা হয়।”
আমি মুখ ভেংচি কেটে বাইরে তাকিয়ে রইলাম। প্রায় ঘন্টারও বেশি সময় ধরে গাড়ি চলল। আমি ওনাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করিনি কারণ জানি কিছুই বলবেন না। হঠাৎ একটা জায়গায় গাড়ি এসে থামলো। আমি দেখলাম একটা বাড়ির সামনেই গেইটেই গাড়িটা থেমেছে হয়তো ফার্মহাউজ। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকাতেই উনি পকেট থেকে একটা রুমাল বার করে আমার চোখ বেধে দিলেন। আমি অবাক হয়ে বললাম,
— ” ক্ কী করছেন কী? এমন একটা নির্জন জায়গায় নিয়ে এসছেন। মেরে গুম করে দেবেন নাকি? যাতে নতুন বউ আনতে সুবিধা হয়? ”
আদ্রিয়ান আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বললেন,
— ” বাহবা তোমার মাথায় এতো বুদ্ধি জানতাম না তো? ঝট করে বুঝে গেলাম।”
আমি হাসলাম না দেখেই বুঝতে পারলাম উনিও হাসছেন। অনেকক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেও উনি হেটেই যাচ্ছেন। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
— ” এতক্ষণ ধরে কোথায় যাচ্ছেন বলুন তো? হাটছেন তো হাটছেনই।”
— ” আসলে পেছনে একটা নদী আছে। মেরে সেখানেই ফেলবো তোমাকে।”
আমি ঠোঁট চেঁপে হেসে বললাম,
— ” ওহ আচ্ছা।”
কিছুক্ষণ মধ্যেই উনি আমায় একটা জায়গায় দাঁড় করালেন। আমার দুইকাধে হাত রেখে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললেন,
— ” আর ইউ রেডি টু ডাই?”
আমি ঠোঁটে হাসি রেখেই বললাম,
— ” কমপ্লিটলি।”
উনি আলতো করে আমার চোখের বাঁধন খুলে দিলেন। আমি হেসে সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। আবছা লালচে অন্ধকারে সামনে বয়ে চলা নদীটা খুব বেশি সুন্দর লাগছে। নদীর পারটা ফুল, রঙ বেরঙ এর মোটবাতি, আর ছোট ছোট কালারফুল লাইটস দিয়ে সাজানো। চারপাশটা এতোটা সুন্দর করে সাজানো যে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে আমার। আমার সরাসরি সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। কারণ সামনে একটা বড় বোর্ডে গোলাপ ফুল দিয়ে মোটা করে ইংলিশে লেখা আই লাভ ইউ। আমি সাথেসাথেই শক্ত হয়ে গেলাম। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিনা। সবকিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে। উনি আমার দুই বাহু ধরে নিজের ধরে ঘুরিয়ে নিলেন। আমি স্হির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে। উনি মুখে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে বললেন,
— ” ইয়েস আই লাভ ইউ। আজ থেকে নয় এখন থেকেও নয় শুরু থেকেই ভালোবাসি। নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসি। আমি নিজেও জানিনা কেনো, কীভাবে ভালোবেসেছি তোমাকে। শুধু এটুকু জানিযে ভালোবাসি। তোমার হাসি, বাচ্চামো, হঠাৎ কেদে দেওয়া, মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে থাকা, ভ্রু কুচকানো এইসবকিছু তোমার প্রতি আমার ভালোবাসাটা আরও গভীর করেছে। অন্যদের মতো উইল ইউ ম্যারি মি বলতে পারবোনা কারণ বিয়ে হয়ে গেছে। হাটু ভেঙ্গে বসে আই লাভ ইউ বলবোনা কারণ আমি শুধু তোমায় আমার ভালোবাসার কথা জানাচ্ছি। আমাকে তুমি ভালো সেদিনই বাসবে যেদিন তোমার মন চাইবে।”
আমি কাঁপা গলায় বললাম,
— ” আ্ আপনি..”
উনি আমার দুই কানের ওপর হাত রেখে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললেন,
— ” হ্যাঁ ভালোবাসি তোকে। এতোটা ভালোবাসি যে সেই ভালোবাসার মাপটাও করা সম্ভব নয় আমার কাছে। করতে চাইও না। আর না এই ভালোবাসার কোনো সঙ্গা চাই আর না মানে। শুধু এটুকু জানি ভালোবাসি, ভালোবাসি শুধুই ভালোবাসি।”
#চলবে…