ভালোবাসি তোকে ❤পর্ব- ৩৭
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
.
আমি ড্যাবড্যাবে চোখে তাকিয়ে আছি। মানুষ যে এভাবেও ডুবে ডুবে জ্বল খেতে পারে সেটা ভাবতেও পারিনি। সজীব ভাইয়া খুব সুন্দরী একটা মেয়ের সাথে খুব ক্লোজ হয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। মেয়েটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর ভাইয়া মেয়েটার এক পাশ দিয়ে গাছের ওপর এক হাত রেখে দাঁড়িয়েছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে দুজনের মধ্যে ভালোই প্রেমালাপ চলছে। আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই ও আমার দিকে তাকিয়ে হাত ভাজ করে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
— ” তোমার ভাইতো ভালোই তলেতলে ট্যাম্পু চালাচ্ছে। মেয়েটাকে চেনো?”
আমি একটু ভালো করে দেখলাম। তারপর মনে পড়লো ভাইয়ার ফোনে একবার দেখেছিলাম আপুটার ছবি। কী জেনো নাম? হ্যাঁ সৃষ্টি।আমি ওদের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললাম,
— ” আরে হ্যাঁ! এটাতো সৃষ্টি আপু। ভাইয়ার বান্ধবী বলেই জানতাম এতোদিন। কিন্তু এখনতো অন্যকিছু মনে হচ্ছে। কতবড় ধপবাজ দেখেছেন?”
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল,
— ” তোমার মনে হচ্ছে? আমিতো হান্ড্রেট পার্সেন্ট শিউর।”
আমিও ঠোঁট চেপে চোখ দিয়ে ইশারা করলাম ওদের কাছে যাওয়ার। এরপর দুজনেই আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম ওদের দিকে। কিন্তু ওদের দুজনের সেদিকে কোনরকম কোনো খেয়াল নেই। ওরা ওদের কাজে ব্যস্ত। ওদের কাছ অবধি গিয়ে আমি হালকা করে কাশি দিলাম। দুজনেই চমকে গেলো। সজীব ভাইয়া অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আমি দাঁত কেলিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললাম,
— ” গুরুত্বপূর্ণ কাজে এসছো?”
আদ্রিয়ান একটু এগিয়ে গিয়ে বলল,
— ” হ্যাঁ হ্যাঁ। ভাইয়া আমাদের ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ কাজে এসছে। তাইনা ভাইয়া?”
সজীব ভাইয়া বেশ কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এতো তাড়াতাড়ি ধরা পরে যাবেন সেটা হয়তো উনি ভাবতেও পারেননি। সৃষ্টি আপুও একবার আমাদের দিকে একবার সজীব ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেলল। সজীব ভাইয়া ইতস্তত গলায় বলল,
— ” ইয়ে আসলে..”
আদ্রিয়ান শব্দ করে হেসে দিল। আদ্রিয়ানের হাসি দেখে আমিও হেসে দিলাম। সজীব ভাইয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইল আমাদের দিকে আর সৃষ্টি আপু বোকার মত দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান হাসি থামিয়ে বলল,
— ” কাম অন ভাই। এমন করছো জেনো বড়দের কাছে ধরা পরে গেছ। বড় ভাই হও তুমি আমাদের। তাই আমাদের বিশেষ কিছু বলার নেই। ”
আমি চোখ ছোট ছোট করে কোমরে হাত রেখে বললাম,
— ” বলার নেই মানে কী হ্যাঁ? অফকোর্স বলার মতো অনেক কিছু আছে। এটা কোন ধরণের চিটিং। তলে তলে এতো কিছু করে বেড়াচ্ছে অথচ আমাদের জানালো অবধি না? কতদিন ধরে চলছে হ্যাঁ?”
সজীব ভাইয়া চোখ রাঙিয়ে বলল,
— ” মারবো টেনে এক থাপ্পড়। বড় ভাই হই আমি তোর। শাসন দেখাচ্ছিস?”
আমি মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। সৃষ্টি আপু এগিয়ে আমার কাধে হাত রেখে সজীব ভাইয়ার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
— ” আমার ননদিনী কে বোকছো কেন? আজব! কত মিষ্টি মেয়েটা।”
আদ্রিয়ান একটু ভাব নিয়ে বলল,
— ” আমার বউ বলে কথা মিষ্টি তো হতেই হবে।”
সৃষ্টি আপু আদ্রিয়ানের সাথে পরিচিত হল, আমাকে আগেই নাকি চিনতো, কিন্তু এখন সামনাসামনি আরো ভালোভাবে পরিচিত হয়ে নিল। এরপর ওদের নিয়ে বাকিদের কাছে গেলাম। পুরোটা শুনে সবাই আমাদের মতই শকড। সজীব ভাইয়ার পক্ষেও যে এরকম করা পসিবল সেটা কেউ ভাবতেই পারেনি। সবাই প্রথমে অবাক হলেও পরে বেশ মজা নিলো ব্যপারটায়। সৃষ্টি আপু মেয়েটাও খুবই মিশুক সবার সাথে খুবই সহজে ভালোভাবেই মিশে গেছে। এরপর সবাই মিলে বেশ অনেকটা সময় ঘোরাঘুরি করে রাতের ডিনারটা পুরোটা কম্প্লিট করে তারপর বাড়ি ফিরলাম।
_________________
রাতে ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে এসে দেখি আদ্রিয়ান বেডে হেলান দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে। চোখে একটা চিকন ফ্রেমের চশমা। আসলে ও অন্ধকারে বা বেশ অনেকটা সময় যদি ফোন বা ল্যাপটপ ইউস করে তখন গ্লাস পরে নেয় চোখের সেইফটির জন্যে। মানুষটা একটু বেশিই গোছালো। বাইরে দিয়ে ভেতর দিয়ে সব দিক দিয়েই পার্ফেক্ট একজন ব্যক্তিত্ব। কিন্তু এতো পার্ফেক্ট মনে মানুষ কীকরে হতে পারে সেটা নিয়েও আমি ভাবি। কিছুক্ষণ নিজের মনে এসব ভেবে। ওনার পাশে গিয়ে বসে বললাম,
— ” ঘুমাবে না?”
উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুখে মুচকি এক হাসি ফুটিয়ে বলল,
— ” হ্যাঁ। এইতো হাতের কাজটা সেড়ে নেই। তুমি শুয়ে পরো।”
বলে আবার নিজের কাছে মন দিলো। কিন্তু বেশ অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পরেও আমাকে শুয়ে পরতে না দেখে ও ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” কী ব্যপার? শুয়ে পরো?”
আমি অসহায় গলায় বললাম,
— ” ঘুমাতে ইচ্ছা করছেনা এখন। ঘুম পাচ্ছেনা এখন।”
আমার কথা শুনে আদ্রিয়ান একটু হাসলো। তারপর ল্যাপটপটা বন্ধ করে সাইডে রেখে নিজের চশমা খুলে টি-টেবিলের ওপর রাখলো।তারপর আমার দিকে ঘুরে আমার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে গেলো। তারপর একহাতে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে বলল,
— ” ঘুমাতে ইচ্ছা করছেনা? রিয়েলি? তোমার মতলব কী বলোতো? অন্যকিছুর প্লানিং এ আছো নাকি?”
আমি কিছু বুঝতে না পেরে বললাম,
— ” অন্যকিছু মানে?”
উনি আমার চুলগুলো কানে পিঠে গুজতে গুজতে বলল,
— ” হয়তো আমার বউয়ের রোমান্স করার শখ হয়েছে। আই থিংক এই মুহূর্তে তোমার আমার আদর পেতে খুব ইচ্ছে করছে?”
আমি বিরক্ত হয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললাম,
— ” ধ্যাত! সবসময় তোমার এসব ফাল্তু কথা।”
বলে ছাড়িয়ে উঠতে নিলেই ও আমাকে ঘুরিয়ে বেডে শুইয়ে কম্বল টেনে একসাথে দুজনকেই জড়িয়ে নিয়ে আমার ওপর আধশোয়া হলো। আমি একটু বোকার মত তাকিয়ে আছি ওর দিকে। ওনা এসব হুটহাট আক্রমণে বরাবরই আমার বেচারা বাচ্চা হার্টটা এতোটাই ঘাবড়ে যায় যে প্রচন্ড জোরে লাফালাফি করে বেড়ায়। এখনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বাইরে থেকেও আমি সেই বিট শুনতে পাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে। আদ্রিয়ান আলতো করে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে আমার গলায় মুখ গুজে দিলো। সাথে সাথেই কেঁপে উঠলাম আমি। পুরো শক্ত হয়ে রইলাম না চাইতেও। নিজের অজান্তেই পুরো শরীর জমে গেল আমার। জোরে জোরে ভারী নিশ্বাসগুলো ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে লাগল। কিছুক্ষণ পর ও ওভাবে থেকেই অস্ফুট স্বরে বলল,
— ” এভাঁবে শক্ত হয়ে আছো কেনো?”
আমি ব্যপারটা সামলাতে তাড়াতাড়ি কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,
— ” অব্ আমার ঘুম প্ পাচ্ছে।”
ও ওর স্পর্শ আরও গভীর করে দিয়ে এবারে আরো অস্পষ্ট স্বরে বলল
— ” ঘুঁমোও কেঁ বাঁরণ কঁরেছে?”
— ” এভাবে থাকলে ঘুমাবো কীকরে?”
ও আমার থেকে মুখ তুলে বিরক্তি নিয়ে বলল,
— ” ঘুমানোর জন্যে চোখ বন্ধ করে রাখা লাগে আমি তো তোমাকে চোখ খোলা রাখতে বলিনি। তুমি ঘুমাও!”
বলে আবার গলার ওপর সাইডে মুখ গুজে দিল। এই লোকটাকে কিছু বলাই বেকার। আমি খুব ভালো করেই জানি আমি যতই বলি এই পাগল এখন আমাকে ছাড়বেনা। মাঝেমাঝেই এমন করে। আর আমাকে ওর এই পাগলামো গুলো সহ্য করতে করতেই ঘুমিয়ে পরতে হয়। কারণ ঘুমানোর আগ পর্যন্ত ছাড়েই না। বেশ অনেক সময় পর ও আবারও অস্ফুট স্বরে বলল,
— ” লাভ ইউ জানপাখি। আই রিয়েলি লাভ ইউ। সবসময় এভাবেই আমার কাছে থাকবে। খুব কাছে। এতোটাই কাছে যে চাইলেও তুমি দূরে যেতে পারবেনা। আমি পারবোনা তোমাকে যেতে দিতে। নেভার। কবে বলবে যে ভালোবাসো? তোমার ভালোবাসি কথাটা শোনার জন্যে মন কতটা তৃষ্ণার্ত তুমি জানো? সবটাই যে শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে আছে। কিন্তু তুমিতো বুঝতেই পারোনা। এতো ছোট হতে কে বলেছিল হ্যাঁ? আর একটু বড় হতে পারলেনা? একটু বেশিই অবুঝ তুমি। কবে পুরোপুরি বুঝতে পারবে আমায়? তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাও মায়াবিনী। তোমার মায়াজালে এভাবে আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলে তুমি মুখ ঘুরিয়ে রাখতে পারোনা। কষ্ট হয় আমার। খুব কষ্ট হয়। বুকের ভেতর ভীষণ ব্যথা হয়। কাউকে বলতে পারিনা, হালকা করতে পারিনা নিজেকে। খুব অদ্ভুত আর ভয়ংকর যন্ত্রণাদায়ক কষ্ট এটা জানো? দম আটকে আসতে চায়। মনে হয় আমি মরেই যাবো। আমাকে মরতে দিওনা। আই নিড ইউ ইয়ার। আই নিড ইউ ব্যাডলি। ”
এরপর একদম চুপ হয়ে গেল ও। জানি ও এখন ঘুমিয়ে পরেছে। আর এ কথাগুলোও অর্ধঘুমেই বলেছে। এটা নতুন না প্রায়ই বলে এরকম।আমি আস্তে করে ওর পিঠ আকড়ে ধরলাম। আর ওও ঘুমের ঘোরেই শক্ত করে জড়িয়ে নিলো আমাকে নিজের সাথে। বুকের ভেতরটা অদ্ভুতভাবে ভার হয়ে আসতে। নিশ্বাসও ভারী হচ্ছে। এতক্ষণ টলমল করা চোখ থেকে সেই টলমলে জলটুকু গড়িয়ে পরল চোখের কার্নিশ বেয়ে। আমি সত্যিই বুঝিনা ওনাকে, ওনার কথার মানেগুলোকে, ওনার কাজগুলোকে। এরজন্যে কে দায়ী আমি নাকি আমার বয়স? সেটাও জানিনা। শুধু এটুকুই বুঝতে পারছি যে এই ছেলেটা আমার জন্যেই এতো কষ্ট পায়। আমি ওকে কষ্ট দেই। জেনে না জেনে বারবার আঘাত করে ফেলি। কেনো? কেনো হয় এরকম । আল্লাহ্ কেন আমায় ওকে বোঝার ক্ষমতা দেয়নি। কেন পারিনা আমি ওর সব কষ্ট দূর করে দিয়ে। এতোটা অক্ষম, ডাফার, ইউসলেস কেন আমি? হোয়াই?”
#চলবে…
(ছোট বলে লজ্জা দেবেন না প্লিজ। যেটুকু লিখতে পেরেছিলাম অবসরে সেটুকুই দিয়েছি। সরি ?)