ভালোবাসি তোকে ❤পর্ব- ৫২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
.
ব্যালকনির রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। আকাশটা একটুউ বেশিই অন্ধকার, চাঁদ আজ দেখা দেয়নি আকাশে। রাতের অন্ধকার কোনকালেই ভালোলাগে না কিন্তু আজ চোখ সরাতে ইচ্ছে করছেনা এই অন্ধকার থেকে মনের মধ্যেও অন্ধকার গ্রাস করছে। আমার সাথে মন আর মস্তিষ্কের লড়াই কতটা কঠিন হয় আজ বুঝতে পারছি। আমার মন বলছে যে রূপের সব কথাকে উড়িয়ে দেই। কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে একটাবার যাচাই করে দেখতে। আচ্ছা! আমিতো জানি আদ্রিয়ান এমন কিছুই করতে পারেনা, তাহলে একবার চেক করে দেখে নিতে সমস্যা কোথায়। এতো ভয় কেন করছে আমার? যদি সত্যিই রূপের কথাগুলো সত্যি হয় সেই ভয়ে? সবকিছু এত কম্প্লিকেটেড কেন হয়ে যাচ্ছে? সবটাই গুলিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ কেউ আমার মাথায় একটা টোকা মারল। আমি চমকে পেছনে তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান হেসে রেলিং এর সাথে উল্টোঘুরে হেলান দিয়ে বলল,
— ” তো ভাবনাকুমারী? আজও কী আমার ভাবনায় মগ্ন ছিলেন না কী?”
আমি স্হির দৃষ্টিতে আদ্রিয়ানকে দেখছি। রুম থেকে আসা লাইটের পুরো আলোটাই ওর ওপর এসে পরছে। কত সুন্দর লাগছে দেখতে। আচ্ছা? এই মানুষটার পক্ষে অতোটা ভয়ংকর হওয়া সম্ভব? আমি ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি ফুটিয়ে বললাম,
— “তোমার সেটাই মনে হয়?”
ও হাত বাড়িয়ে আমার কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিতে দিতে বলল,
— ” মনে হয় কী না জানিনা কিন্তু ইচ্ছে হয়।”
আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম, আদ্রিয়ানও চুপ করে রইল। কিছুক্ষণ পর আমি আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললাম,
— ” আচ্ছা তোমার ল্যাবে কেন সবাইকে যেতে দাওনা? স্পেশালি সেই সিকরেট রুমে?”
আদ্রিয়ানের ঠোঁটের কোণে ঝুলে থাকা হাসিটা মিলিয়ে গেল। ও একটু শক্ত কন্ঠে বলল,
— ” ওটা আমার অফিসিয়াল কাজের ব্যপার অনি। ডোন্ট ইউ থিংক তোমার এসবে নিয়ে মাথা না ঘামানোটাই বেটার?”
আমি ছোট্ট একটা শ্বাস নিয়ে মাথা নেড়ে বললাম,
— ” হুম, সরি।”
বলে রেলিং ধরে আবার আকাশ দেখায় মনোযোগ দিলাম। হঠাৎ ও আমায় পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
— ” রাগ করলে?”
— ” না, না রাগ কেন করতে যাবো? ঠিকই তো বলেছো।”
— ” সরি।”
— ” সরি কেন?”
— ” সময় এলে বলব?”
— ” হুম।”
আবারও বেশ অনেকটা সময় নিরবতায় কাটলো। নিরবতা ভেঙ্গে আমি আড়চোখে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললাম,
— ” ইশরাক ভাইয়াকে মিস করো না?”
আদ্রিয়ানও এবার ঘুরে আকাশের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,
— ” হঠাৎ এ প্রশ্ন করলে যে?”
আমিও চোখ সরিয়ে আবার অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশে তাকিয়ে বললাম,
— ” এটাই কী উত্তর ধরে নেব?”
— ” নিতেই পারো।”
আমি দীর্ঘশ্বাস নিলাম। কিন্তু কিছু বললাম না, বলার মত নেই ও আমার। আমায় নিজের দিকে ঘুরিয়ে কপালে গভীরভাবে কপালে চুমু দিয়ে বলল,
—- ” ভালোবাসি।”
আমি কিছুক্ষণ স্হির দৃষ্টিতে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে আমি ঠোঁটের কোণে একটু বাঁকানো হাসি ফুটিয়ে বললাম,
— ” হুমম।”
ওও আমার চোখে চোখ রেখে একই ভঙ্গিতে হাসলো। আমি ওকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,
— ” চলো? ঘুমাবেনা?”
— ” হ্যাঁ চলো।”
এরপর দুজন মিলেই ঘুমোতে চলে গেলাম। আদ্রিয়ান শুয়ে পরার পর আমি শুতে নেবো তখনই আদ্রিয়ান বলল,
— ” বুকে আসবে?”
আমি বেশ অবাক হলাম। রোজ তো নিজেই বুকে টেনে নেয়। আর আজ জিজ্ঞেস করছে? কেনো? ওর আবার কী হল? কিন্তু আমি কিছু না বলে ওর বুকে মাথা রাখলাম ও আমাকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো।
___________________
দেখতে দেখতে দুটো দিন কেটে গেল। এই দুইদিনে সব ঠিক চললেও আমি আদ্রিয়ানের সাথে আমার ব্যবহারে খুব সামান্য হলেও জড়তা এসছে। রূপের বলা ঐ কথা আর যুক্তিগুলো অনেক চেষ্টা করেও মন থেকে বাদ দিয়ে দিতে পারিনি। আর এগুলোই সারাক্ষণ আমার মাথায় চলছে। এমন না যে আমি আদ্রিয়ানকে অবিশ্বাস করছি ‘কিন্তু’ কোথাও একটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। রূপ যা বলছে সব না হয় মিথ্যে কিন্তু আমি নিজে যেটুকুর সাক্ষী? আমার মনে যেটুকু প্রশ্ন আছে? তার জন্যে তো অন্তত আমার সবটা জানা দরকার সবটা। কিন্তু অদ্ভুত ব্যপার হলো আমার আচরণের এই পরিবর্তনগুলো যেনো আদ্রিয়ান বুঝেও বুঝছে না। রূপ এরমাঝে দুবার আমার সাথে এবিষয়ে কথা বলেছে আমি শুনেও শুনিনি। ড্রয়িং রুমে বসে এসব ভাবতে ভাবতেই মামনী এসে বলল,
— ” অনি। হিয়ার জন্যে এই চালতার টকটা করেছি। এটা গিয়ে ওর রুমে একটু দিয়ে তো। মেয়েটা কাল থেকেই টক টক করছিল।”
আমি মুচকি হেসে মাথা নেড়ে উঠে গেলাম টকের বাটিটা নিয়ে। ঐ সমস্ত চিন্তাভাবনা মাথা থেকে বেড় করে নিয়ে গেলাম আপির রুমে। গিয়ে দেখি আপি বসে বসে ফোন দেখছে। আমি গিয়ে বসে গলা ঝাড়তেই আপি ফোন থেকে চোখ তুলে আমার দিকে তাকালো। আমি বাটিটা আপির দিকে এগিয়ে দিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললাম,
— ” কী ব্যপার? ফোনে ডুবে আছো যে? ভাইয়ার সাথে কথা বলছো?”
আপি লাজুক হেসে একটা মেসেজ সেন্ট করে ফোনটা পাশে রেখে টকের বাটিটা আমার থেকে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” তোর ইফাজ ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলাম।”
— ” ওও। আজকাল ভাইয়ার কেয়ার আর পেয়ার দুটোই খুব বেশিই বেড়ে গেছে হুমম?”
আপি কিছু বলল না কিন্তু মুখে লজ্জার আভা ঠিক ফুটে উঠল। আমিও দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে বললাম,
— ” হুমম। আগেতো ভাইয়া তোমাকে চোখে হারাতোই এখনতো বলতেই হবেনা, কী প্রেম।”
আপি চালতার একটু টুকরো মুখে পুরে নিয়ে চিবুতে চিবুতে বলল,
— ” তুই কথা বলিস না হ্যাঁ। আদ্রিয়ান এখনই তোর যতটা খেয়াল রাখে আর যত্ন নেয়, যখন তুই কন্সিভ করবি না জানি তখন কী করবে ঐ ছেলে কে জানে?”
আদ্রিয়ানের এর কথা শুনেই মন খারাপ হয়ে গেল। আবারও মনে সেই দ্বিধা আর দন্দ্বগুলো নাড়া দিয়ে উঠল। আমিও চুপ করে বসে রইলাম। আপি বলল,
— ” কী হয়েছে তোর বলতো? দুদিন যাবত দেখছি তুই কেমন মনমরা হয়ে রয়েছিস? কোন সমস্যা হয়েছে?”
আমি কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বললাম,
— ” আচ্ছা আপি তোমার মন আর মস্তিষ্ক যদি আলাদা আলাদা কথা বলে তাহলে তুমি কার কথা শুনবে?”
আপি ভ্রু কুচকে ফেলল। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” কী হয়েছে? হঠাৎ এই প্রশ্ন করলি?”
— ” বলোনা?”
আপি একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,
— “দুটোরই। কারণ মস্তিষ্ক সবসময় যুক্তি খোঁজে। তবে সবকিছুকে তো আর যুক্তি দিয়ে বিচার করা যায় না? কিন্তু কিছু কিছু যুক্তিকে ফেলেও দেওয়া যায় না। তাই আগে মস্তিষ্ক দিয়ে যুক্তিগুলো বুঝে এরপর মনকে জিজ্ঞেস করবি সে কী বলছে? তারপরেই যেকোন সিদ্ধান্ত নিবি।”
আমিও মাথা নাড়িয়ে বাটি থেকে এক টূকরো চালতা নিয়ে মুখে পুরে চিবুতে চিবুতে ভাবতে শুরু করলাম। আপি ঠিকই বলেছে। এবার আমাকে সেটাই করতে হবে যেটা ঠিক। আদ্রিয়ানকে অবিশ্বাস করতে পারিনা আমি কারণ তাহলে ওর প্রতি অন্যায় করা হবে। আবার ওকে অন্ধবিশ্বাসও করতে পারিনা আমি, তাহলে সবার প্রতি অন্যায় করা হবে। যেটা আমি করতে পারিনা।
__________________
সকালে আদ্রিয়ান ল্যাবে যাবে বলে হচ্ছে আর আমিও রেডি হয়েছি। আদ্রিয়ান জ্যাকেটটা পরে আমার দিকে ঘুরে বলল,
— ” চলো?”
আমি নিজের ভাবনাতে মগ্ন ছিলাম ওর ডাকে বাস্তবে ফিরে এলাম। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,
— ” আজকে মেডিকেল যেতে ইচ্ছে করছেনা, বাড়িতে থাকতেও ভালো লাগবেনা। তোমার ল্যাবে নিয়ে যাবে আমাকে?”
আমি ভেবেছিলাম আদ্রিয়ান অবাক হবে কিন্তু আমাকেই অবাক করে দিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বলল,
— ” ব্যাগটা রেখে যাও তাহলে।”
আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। পাল্টা একটা প্রশ্নও করল না? আদ্রিয়ান আমার দিকে ঝুঁকে বলল,
— ” এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? অবাক হচ্ছো? এতো অল্পতেই? জলে নামলে পা তো ভিজবেই তাইনা?”
— ” ম্ মানে?”
আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল,
— ” আরে অনেকদিন পর কিছু চাইলে তাই রাজি হয়ে গেলাম। এতে এতো ঘাবড়ানোর কী আছে।”
আমিও উত্তরে একটা জোড়পূর্বক হাসি দিলেও স্বস্তি পেলাম না। ও যে ওর কথা দিয়ে অন্যকিছু ইঙ্গিত করছে? অন্যকিছু বোঝাতে চাইছে? আমার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে আদ্রিয়ান বলল,
— ” কী হলো চলো?”
আমি মাথা নেড়ে ওর সাথে বেড়ায়ে গেলাম। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় রূপকে চোখে পরল। আমার সাথে ওর চোখাচোখি হলো। আদ্রিয়ান রূপকে দেখেও না দেখার ভান করে আমার হাত ধরে আমায় নিয়ে চলে গেল। কিন্তু মনে এক ভয়ংকর ভয় বাসা বাঁধছে। আমি যা করতে চলেছি রূপের ভাষায় সেটা আগুন নিয়ে খেলা। কিন্তু আমার বিশ্বাস আছে আমি এমন কিচ্ছু পাবোনা যেটাতে আমায় আদ্রিয়ানকে দোষী মনে হয়।
আমি চুপচাপ ল্যাবে আদ্রিয়ানের কেবিনে বসে আছি। আদ্রিয়ান আর আদিব ভাইয়া একমনে দুজন দুটো ল্যাপটপে কাজ করে যাচ্ছে। আমি টেবিলে বসে গালে হাত দিয়ে ভাবছি কী করা যায়? ওরা না সরে গেলে তো আমি আমার কাজটাও করতে পারবোনা। সকাল থেকে ওয়েট করছি কখন ওরা কখন এদিক ওদিক যাবে আর আমি সিকরেট রুমে ঢুকবো। আচ্ছা আদ্রিয়ান আমায় একা না ছাড়লেতো আমি কিছু করতেও পারবোনা। আদিব ভাইয়া উঠে বলল,
— ” তোরা থাক হ্যাঁ আমি এখন উঠি।”
আদ্রিয়ান ল্যাপটপে কাজ করতে করতেই বলল,
— ” রাইমা কল করেছে বুঝি?”
আদিব ভাইয়া সব গোছাতে গোছাতে বলল,
— ” হ্যাঁ ওই আরকি। তুই তো বিয়ে করে বউ নিয়ে হ্যাপি লাইফ লিড করে নিচ্ছিস। কিন্তু আমার তো এখনও হয়নি ভাই। একটাই গার্লফ্রেন্ড আমার যদি কোনভাবে চটে যায়। আমার কপাল থেকে বিয়ে শব্দটা উঠে যাবে।”
আমি ফিক করে হেসে ফেললাম। আদ্রিয়ানও ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই বাঁকা হাসলো। কাজ করতে করতেই বলল,
— ” হ্যাঁ সেই। কাজ পরেও করা যাবে কিন্তু গার্লফ্রেন্ড চটে গেলে মহা মুসকিল। বউ সামলানোটাই যতটা প্রেশারের গার্লফ্রেন্ডের কথাতো বলতেই হবেনা।”
বলে আমার দিকে তাকালো, আমি একটা মুখ ভেংচি দিলাম । আদিব ভাইয়া ব্যাগটা কাধে নিয়ে বলল,
— ” হয়েছে থাম। এখন আবার তোদের মধ্যে ঝগড়া শুরু করিস না। আমি আসছি।”
আদ্রিয়ান এবারও ল্যাপটপে তাকিয়েই হাত উঁচু করে বিদায় দিল। আদিব ভাইয়া আমাকেও বাই বলে চলে গেল। আমিও এবার চুপচাপ বসে ভাবছি কী করা যায়। এই ছেলে তো একমনে কাজ করেই যাচ্ছে। প্রায় ঘন্টাখানেক পর হঠাৎ ও বলে উঠল,
— ” তুমি একটু বসো হ্যাঁ আমার ফিরতে এক ঘন্টার মত লাগবে। তুমি থাকতে পারবেনা একা?”
আমি যেন হাতে চাঁদ পেয়ে গেলাম। এতক্ষণ তো এটাই চাইছিলাম আমি। সাথেসাথেই একটা মেকি হাসি দিয়ে বললাম,
— ” হ্যাঁ হ্যাঁ আমি পারবো একা থাকতে। তুমি যাও যেখানে যাবে।”
আদ্রিয়ান একটু অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে। আমি একটু তুতলে বললাম,
— ” ন্ না মানে কাজ থাকলে তো যেতে হবে তোমাকে।”
— ” হুম। বোর হলে ল্যাবটা ঘুরে দেখতে পারো। আসছি হ্যাঁ?”
আমি হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লাম। আদ্রিয়ান চলে গেল। আদ্রিয়ানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। সেদিন তো ও আমাকে এক মিনিটের জন্যেও একা ছাড়ে নি। বরং চোখে চোখে রেখেছে, একজায়গায় বসিয়ে রেখেছে। কিন্তু আজ কী হল? মাথায় কিছু ঢুকছেনা আমার। ও চলে যাওয়ার দশ মিনিট পর আমি উঠে দাঁড়ালাম। আমাকে এখন ঐ সিকরেট রুমে যেতে হবে। দেখতেই হবে যে ওখানে এমন কী আছে। ঐ রুমের সামনে গিয়ে আরও অবাক হলাম কারণ দরজাটা লক করা না,এটা কীকরে সম্ভব? এই রুমটা সবসময় করা সিকিউরিটিতে থাকে। সবকিছু এরকম অদ্ভুত কেন হচ্ছে? সবটাই অস্বাভাবিক, এবনরমাল। ভেতরে ভেতরে ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে, মনের ভেতরে অজানা আশঙ্কা বাসা বাধছে। কিন্তু না আমায় ভয় পেলে চলবে না। যেকরেই হোক আমার প্রশ্নের উত্তর আমায় পেতেই হবে। আমি নিজেকে শক্ত করে দরজাটা খুললাম। ভেতরে গিয়ে দেখি গোটা রুমটাই অন্ধকার। ফোনের টর্চ অন করে রুমের লাইট অন করলাম। চারপাশে তাকিয়ে চরম অবাক হলাম আমি। অদ্ভুত সব তার আর কিছু যন্ত্রপাতি চোখে পরল আমার। একটু ভালো করেই চারপাশে তাকাতেই দেখতে দুটো কম্পিউটার দেখতে পেলাম। বা পাশের দেয়ালটায় তাকাতেই ডিফিউজ করার কিছু যন্ত্র, পোশাক দেখতে পেলাম। এসব এখানে কেন? এগুলো তো এখানে থাকার কথাই না। ওখানে বড় একটা টেবিলও আছে আর সেখানে আমি তাড়াতাড়ি সেই টেবিলের ওপরের ড্রয়ারটা সবার আগে খুললাম। একটা বন্দুক, আর কিছু কাগজ, হ্যান্ড গ্লাভস আছে। বন্দুক দেখে আমার ভেতরে ধাক্কা লাগলো। তারমানে কী সত্যিই ও কোন অন্যায় কিছু করছে? আমি সবগুলো কাগজ এক এক করে দেখতে শুরু করলাম। কাগজ গুলোর আগামাথা কিছু না বুঝলেও কিছু কঠিন কঠিন ফর্মুলা আছে। কিছু কিছু আমার খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। কোথাও একটা দেখেছি আগে। আমি ড্রয়ারটা বন্ধ করে নিচের ড্রয়ার খুলে রোল করে রাখা কিছু বড় কাগজ পেলাম। একটা একটা করে খুলে দেখলাম কিছু ডিজাইন করা আছে। সবগুলোই অদ্ভুত রকমের। এখন রাগ হচ্ছে, মেডিকেল না পড়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াটাই ভালো ছিল, কিছুতো মাথায় ঢুকতো? কিন্তু বোম ডিফিউজার, পোশাক, গান এগুলো এখানে থাকা নরমাল না একদমি না। ও এসবই সবার আড়ালে লুকিয়ে রাখতে চাইত। তাহলে ঘুরেফিরে মানেতো একটাই দাঁড়ায় যে…। কপাল বেয়ে চিকন একফোটা ঘাম গড়িয়ে পরলো আমার। রূপের বলা ঐ কথাটাই মনে পরল যে “আদ্রিয়ান একজন টেরোরিস্ট।” জিব দিয়ে শুকনো ঠোঁটটা একবার ভিজিয়ে নিলাম আমি। কিছুই বুঝতে বা ভাবতে পারছিনা। কী হচ্ছে এসব। হঠাৎ মনে হলো আদ্রিয়ানের আসার সময় হয়ে গেছে। আমাকে এখান থেকে। সবকিছু যথাসম্ভব ঠিকঠাক করে রেখে লাইট অফ করে বেড়িয়ে গেলাম ওখান থেকে। কিছুক্ষণ পরেই আদ্রিয়ান চলে এলো। আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিল উত্তরে আমিও হাসার চেষ্টা করলাম। আদ্রিয়ান চেয়ারে বসে বলল,
— ” কী বুঝলে?”
আমি বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসু কন্ঠে বললাম,
— ” কী বিষয়ে?”
আদ্রিয়ান ল্যাপটপ অন করতে করতে বলল,
— ” এইযে ল্যাবে এসে কী বুঝলে? তোমার হাজবেন্ড খুব ব্যস্ত মানুষ তাইনা?”
আমি দুইহাত টেবিলের ওপর রেখে থুতনিতে হাত রেখে বললাম,
— ” হ্যাঁ সেটাই দেখলাম।”
আদ্রিয়ান কিছু না বলে কাজে মনোযোগ দিলো। আর আমিও যেটা দেখেছি সেটা নিয়ে ভাবনায় মগ্ন হয়ে গেলাম।
__________________
দেখতে দেখতে আরও একটা দিন চলে গেল। কাল থেকে আমি শুধু এসব নিয়েই ভেবেছি।কয়েকবার চেষ্টা করেও ওর ল্যাপটপের কাছে যাওয়ার সুযোগ হয়নি আমার। আমায় আরও বেশি ভাবাচ্ছে আমার এত সহজে সবকিছু হাতে পেয়ে যাওয়াটা। এমন মনে হচ্ছে যেনো সবকিছু আমার দেখার জন্যেই খুলে রেখে দেওয়া হয়েছিল। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ ডাকতেই তাকিয়ে দেখি রূপ দাঁড়িয়ে আছে। আমি পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই বলল,
— ” ল্যাবে কী কী পেলে?”
আমি ওনার দিকে না তাকিয়েই বললাম,
— ” আমি ল্যাবে কিছু খুঁজিনি।”
— ” মিথ্যে বলছো।”
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম 0,
— ” যদি খুঁজে থাকি, আর পেয়েও থাকি আপনি ভাবলেন কীকরে আমি আপনাকে কিছু বলব? স্বামী হন উনি আমার। আমার অর্ধেক অংশ। আমার অর্ধেক অস্তিত্ব। আর ওনার দোষ, গুন, ভালো, খারাপ সবকিছুরই অর্ধেক ভাগ আমার। তাই আমার কাছ থেকে এরকম কিছু আশা করবেন না।”
আমি চলে যেতে নিলেই রূপ বলল,
— ” তাই বলে ওর সব অন্যায়কেও চুপচাপ মেনে নেবে? মার্ডারের মত এরকম জঘন্যতম কাজকে?”
— ” ঐযে বললাম? ওনার সবকিছুর অর্ধেক ভাগিদার আমি। তাই সে কোন অন্যায় করলে তার বদলে আমায় কী করতে হবে আমি বুঝে নেব। তার কোন জবাবদিহিতা আমি আপনাকে করবোনা।”
আমি আবার চলে যেতে নিলে ও আমার হাত ধরে বলল,
— ” তোমার মনে হচ্ছেনা একটু ইমোশনালি ভাবছো?”
— ” যেখানে আবেগ থাকেনা যেখানে কেবল জন্তু আর যন্ত্র থাকে। আমি দুটোর কোনটাই নই।”
বলে রূপের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চলে এলাম ওখান থেকে।
________________
গভীর রাত। রুমের টেবিল ল্যাম্প জ্বলছে শুধু। আদ্রিয়ান একটু আগেই রুম থেকে বেড়িয়ে গেছে। আজ ডায়েরি লিখতে বসেও হাত কেঁপে কেঁপে উঠছে। চোখের পানিতে ফোটায় ফোটায় পরছে ডায়েরির ওপর। আজ সারাদিন যা যা হয়েছে তা কাগজে লিখতে গিয়েও বুক কেঁপে উঠছে আমার। নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিনা আমি। আমার জন্যে শুধুমাত্র আমার জন্যে আজ এসব হয়েছে। দুজন মানুষের কাছে চিরকালের মত অপরাধী হয়ে গেলাম আমি। কোনোদিনও ওদের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারবোনা, কোনদিন না। সব দোষ তোমার আদ্রিয়ান। তোমার উচিত হয়নি এটা করা। অন্যায় করেছো তুমি। ক্ষমা করবোনা আমি তোমাকে,কক্ষণো না।
#চলবে…
#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৫৩
.
নিজের কাছে নিজে অপরাধী হয়ে থাকার যন্ত্রণা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছি আজ। আমার জন্য দু-দুটো জীবন নষ্ট হয়ে গেছে ভাবলেই নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। কীকরে করলাম এটা আমি। কিছুক্ষণ আগের কথা মনে পরলে শুধু বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে।
বিকেলে রূপের কথা শুনে মনটা এমনিতেই খারাপ ছিল। মনটা ভালো করার জন্যে আপি আর জাবিনের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে রাতে নিজের রুমে এসে বেডে বসে বসে ভাবছি আদ্রিয়ানকে নিয়ে। কী করা উচিত এখন আমার। রূপকে তো এত বড় বড় কথা বলে এলাম কিন্তু আদ্রিয়ান কী সত্যিই কোন অন্যায় করে নি? কিন্তু তাহলে ঐ ল্যাবে যা যা দেখেছিলাম ওসব কী ছিল? সব কেমন জানি জটলা পাকিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একটা কিনারায় তো আমায় পৌছতেই হবে। এরকম দ্বিধার মধ্যে থাকতে পারছিনা আমি। হঠাৎ টি-টেবিলটার দিকে চোখ গেল অামার, আদ্রিয়ানের ল্যাপটপটা রাখা আছে ওখানে। আমি অবাক হলাম। আদ্রিয়ান এসে গেছে? কিন্তু কোথায়? রুমে নেই কেন? হঠাৎ আমার মাথায় নাড়া দিয়ে উঠল যে ল্যাপটপটা যখন পেয়েছি তখন একবার খুলে দেখতেই হবে ভেতরে কী আছে? আমি তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে ল্যাপটপটা বেডের ওপর রেখে তাড়াতাড়ি অন করলাম। কিন্তু ল্যাপটপে পাসওয়ার্ড দেওয়া আছে। বেডের ওপর একটা পাঞ্চ মারলাম। এতোবড় একটা সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে যাবে? আদ্রিয়ান ওর ল্যাপটপে কী পাসওয়ার্ড দিয়েছে আমি কীকরে জানবো? কী দিতে পারে? ওর নাম দেবেনা! তাহলে ডেট অফ বার্থ? আমি তাড়াতাড়ি ওর ডেট অফ বার্থ তিনরকমভাবে ঘুরিয়ে দিলাম, কিন্তু কোন লাভ হলো না। তাহলে কী হতে পারে? আমার নাম? হতেই পারে, কারণ আমি জানি ওর সবকিছুতেই আমিই থাকি। আমিং আমার নাম লিখলাম। ‘অনি’ বা ‘অনিমা’ কোনটাতেই কাজ হচ্ছে না। তাহলে কী? ও তো আমায় ‘জানপাখি’ বলে ডাকে? জানপাখি লিখে দেখব? সেটাও লিখলাম কিন্তু এবারেও ইরোর দেখালো। দূর ভালোলাগেনা। কী ছাতার মাথা দিয়ে রেখেছে? হঠাৎ মাথায় এলো ওর ‘মায়াবিনী’ ডাকটা। এই নামে ও আমায় মাঝমাঝে ডাকে। যখন আশেপাশে কেউ থাকেনা, তখন খুব আদুরে কন্ঠে এই নামে ডাকে ও আমায়। এটা হতে পারে? কাঁপাকাঁপা হাতে সেটা ‘MAYABINI’ লিখে ইন্টার করার সাথেসাথেই আনলক হয়ে গেল। আমি বেশ অবাক হলাম। চোখের কোণে না চাইতেও জল জমা হলো। একটা মেয়েকে যে এতটা ভালোবাসতে পারে সে কখনও কোন অন্যায় করতে পারে? নিজের চোখের জ্বলটা মুছে নিলাম। কিন্তু ওর সব ইনফরমেশন তো ওর পেনড্রাইভে থাকে সেটা কোথায় পাবো? কিছুক্ষণ খোঁজার পর ওর টেবিলের মাঝের ড্রয়ারে পেলাম। ওটা নিয়ে তাড়াতাড়ি ল্যাপটপে দিয়ে চেক করে বেশ কয়েকটা ফাইল পেলাম। একটা ফোল্ডারের নাম MTG। ওটাতে ঢুকে দেখলাম প্রত্যেকটা ফাইলই লক করা। কোনটা ওপেন করব? উফ! এই ছেলের সবকিছুতে এত প্যাঁচ কেন। নাকের নিচে জমা ঘামটুকু মুছে ভালোকরে সবগুলো ফাইলের নাম পরে দেখলাম সবগুলো ফাইলের নাম নরমালভাবে লেখা থাকলেও একটা ফাইলের নাম কোড করে লেখা। তারমানে এটা স্পেশাল, আর আলাদা করে থাকতে পারে। এটাও একই পাসওয়ার্ড দিয়ে ওপেন হলো। আর যেই পেইজগুলো মনিটরে আসার সাথেসাথেই আমি চমকে উঠলাম। এই সবগুলো পেইজ আমার ভীষণ চেনা। আমি দেখেছি এই পেইজগুলো। দু-বছর আগে আমি যেই ফাইলটা চুরি করে পালাচ্ছিলাম সেই ফাইলের ভেতরের পেইজগুলো ঐ তাবুর ভেতরে বসে দেখেছিলাম আমি। হুবহু একই পেইজ। শুধু ওগুলো হার্ডকপি ছিল আর এটা সফ্ট কপি। এটা কীকরে সম্ভব? তারমানে সত্যিই আদ্রিয়ান..? আমি আর কিচ্ছু ভাবতে পারছিলাম না। কপাল, গলা সব ঘেমে আছে আমার, গলা শুকিয়ে আসছে। একটা শুকনো ঢোক গিললাম। হাত-পা রীতিমত কাঁপছে আমার। হঠাৎ কাধে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলাম। আদ্রিয়ান? শিট! আমিতো এক্সাইটমেন্টে দরজাটাই লক করতে ভুলে গেছিলাম। সেদিন শুধু ল্যাপটপে হাত দিয়েছিলাম বলে কীরকম ব্যবহার করেছে, আজ যদি দেখে যে আমি এসব করেছি তাহলে তো আমাকে… আমি ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকালাম। আদ্রিয়ান দুই হাত ভাজ করে বলল,
— ” কী করছিলে?”
আমি ভীত দৃষ্টিতে একবার ল্যাপটপটার দিকে তাকিয়ে তাকালাম ওর দিকে। ও এবার ধমকের স্বরে বলল,
— ” কিছু জিজ্ঞেস করছি আমি।”
ওর ধমকে হালকা কেঁপে উঠে মাথা নিচু করে ফেললাম। ও ল্যাপটপের দিকে একবার তাকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” ল্যাপটপ ধরেছো কেন? কী দেখছিলে?”
আমি এবার অনেক সাহস করে ওর দিকে তাকালাম। আদ্রিয়ান চোখমুখ একদম স্বাভাবিক আছে। আমি নিজেকে কোনমতে সামলে আঙ্গুলের ইশারায় ল্যাপটপের স্ক্রিনে দিকে আঙ্গুলের ইশারায় দেখিয়ে বললাম,
— ” ক-কী এসব?”
আদ্রিয়ান ঘাড় বাঁকিয়ে একবার ল্যাপটপের দিকে তাকালো। তারপর বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
— ” কিছু চিনতে পারলে?”
আমি আবারও একবার স্ক্রিনে তাকিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
— ” এ-এগুলো আপনার কাছে ক-কীকরে এলো?”
আদ্রিয়ান এবার পকেটে হাত ঢুকিয়ে দু-কদম এগিয়ে লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বলল,
— ” তার আগে এটা বলো, তুমি এগুলো কীকরে চেনো?”
আমি কিছু না বলে চোখ সরিয়ে নিলাম ওর থেকে।
আদ্রিয়ান এবার পকেটে হাত রেখেই আমার পাশ দিয়ে ধীর পায়ে হাটতে হাটতে বলল,
— ” আমি বলি?”
আমি বিষ্ফোরিত চোখে তাকালাম ওর দিকে। ও বলবে মানে কী? ও কীকরে বলবে? দু-বছর আগের ঐ জঙ্গলের ঘটনা পুরোপুরি শুধুমাত্র আমি আর আপি জানে। আর জানে ঐ টেরোরিস্টরা। তারমানে সত্যিই কী আদ্রিয়ানও ঐ টেরোরিস্টদের মধ্যকার একজন? আমি হাত দিয়ে নাকের নিচের ঘামটা মুছে একটা ঢোক গিলে তাকালাম ওর দিকে। ও আবারও বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
— ” এখন তুমি নিশ্চয়ই এটা ভাবছ যে আমি কীকরে জানি?”
আমি শুধু ভীত আর কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। কিছু বলার মত সাহস করে উঠতে পারছিনা। এখন শুধু এটাই ভাবছি যে এরপর ও যা বলবে সেটা সহ্য করার মত মানসিক ক্ষমতা আমার আদোও আছে কী না? এসব ভাবতে ভাবতেই ও আমার হাত ধরল। আমার হাত ধরে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিল। আমি শুধু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আর বোঝার চেষ্টা করছি যে কী করতে চাইছে এই ছেলে? আদ্রিয়ান আমার পাশে বসে সোফায় হেলান দিয়ে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” চল আজ একটা গল্প শোনাই তোমাকে।আজ থেকে দু-বছরের বেশি প্রায় আড়াই বছর আগে ‘২ আগস্ট ‘ সুন্দরবনের টুর এ গিয়ে একটা মেয়ে ছবি তুলতে তুলতে এপারেরই একটা ঘন জঙ্গলে ঢুকে পরে। ছবি তোলার নেশায় সে এতোই মত্ত থাকে যে বুঝতেই পারেনা জঙ্গলের কতটা গভীরে চলে গেছে। আর সেই ঘন জঙ্গলের মধ্যেই একটা টেরোরিস্ট ক্যাম্প ছিল আর মেয়েটা না চাইতেও ওদের চোখে পরে যায়। কিন্তু মেয়েটাও কম না? ওকে যখন ক্যাম্পের তাবুর মধ্যে আটকে রাখা হয় তখন সে ওদেরই একটা ফাইল নিয়ে ওদেরই পাহাড়া ক্রস করে ওখান থেকে বেড়িয়ে যায়। যদিও টেরোরিস্টরা মেয়েটাকে পেছন থেকে শুট করেছিল। কিন্তু কোন এক কারণে ফাইলটাও টেরোরিস্টদের হাত ছাড়া হয়ে যায়। আর সব কিছুর জন্য দায়ী থাকে ঐ মেয়েটা।”
আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আদ্রিয়ানের দিকে, চোখ দিয়ে ধীর গতিতে জল পরছে। ও এগুলো কীকরে জানলো? তারমানে কী রূপ সেদিন যা যা বলেছে সব সত্যি? আমি বেশ অনেকটা ভয় পেয়ে উঠে দাঁড়ালাম। ও বসে থেকেই হেসে দিয়ে বলল,
— ” আরে! এত ভয় পাচ্ছো কেন? আমিতো নরমালি কথা বলছি।”
আদ্রিয়ান টি-টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে ইশারায় খেয়ে বলল। আমি কিছু না ভেবেই ওর হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে খেয়ে নিলাম। ও আবার বলতে শুরু করল,
— ” শুধুমাত্র একটা বাচ্চা মেয়ের জন্যে এতো বিশাল একটা গ্যাং এর কয়েক বছরের প্লান ফুল ফ্লপ হয়ে গেছিল। মেয়েটাকে পেলেই ওপরে পাঠাবে এটাই ছিল প্লান। রাগ ছিলো খুব। থাকারই কথা! এতো কষ্টের ফল ছিল। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, ফাইলটা না সেই মেয়েটার কাছে আছে, না পুলিশের কাছে, আর না সেই টেরোরিস্টদের কাছে। এখন প্রশ্ন হলো তাহলে ফাইলটা কোথায়? আর তার আগের প্রশ্ন সেই মেয়েটা কে?”
আমি জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস নিলাম। আদ্রিয়ান একই ভঙ্গিতে হেসে বলল,
— ” আচ্ছা! তুমিতো আমায় বলবেনা আমি না হয় বলে দিচ্ছি? সেই মেয়েটা আমার সামনেই আছে। তুমি নিজে। এম আই রাইট? ওর এম আই রাইট।”
আমি এবার খুব বেশি অবাক হইনি কারণ এতক্ষণ ওর সব কথা শুনে বুজে গেছি ও সবটাই জানে। তাই নিজেকে শক্ত করে স্হির গলায় বললাম,
— ” আর দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর?”
আদ্রিয়ান এবারও হাসলো। আমার হাত ধরে আমায় নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
— ” এই মুহূর্তে তোমার মত একটা মেয়ের কাছে এই প্রশ্নটা এসপেক্টেড না। দেখতেই তো পেলে ওই ফাইলের সফটকপি আমার ল্যাপটপে আছে। তাহলে কী দাঁড়াল? ফাইলটা আমার কাছেই আছে!”
আমি কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে আছি আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ানকে বলল,
— ” তো মিস ‘গোয়েন্দা গিন্নি’? রূপের ইনট্রাকশন অনুযায়ী সব তদন্তের শেষ? নাকি আমার কোন হেল্প লাগবে?”
আমি স্লো ভয়েজে বললাম,
— ” আমি রূপের কথায় কিচ্ছু করিনি। শুধু নিজের মনের ভেতরে জাগা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলাম।”
আদ্রিয়ান গম্ভীর কন্ঠে বলল,
— ” পেয়ে গেছো উত্তর?”
আমি আদ্রিয়ানের চোখে চোখ রেখেই ধীর কন্ঠেই বললাম,
— ” পুরোপুরি না। আমি সবটা শুনতে চাই।”
আদ্রিয়ান নিজের আঙুল দিয়ে নাকে স্লাইড করে বলল,
— ” ঠিক কী শুনতে চাইছো?”
আমি আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বললাম,
— ” ল্যাবে, তোমার ল্যাপটপে আমি যা পেয়েছি যা দেখেছি, ওগুলো কী ছিল? আর রূপ? রূপের বলা ওসব কথাগুলো? কেন বলল ও ওগুলো?”
আদ্রিয়ান কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইল। এরপর বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে বলল,
— ” ল্যাবে, ল্যাপটপে যা দেখেছ সব সত্যি। আর যদি বলি রূপ তোমাকে যা যা বলেছে সব সত্যি?”
আমি চমকে তাকালাম আদ্রিয়ানের দিকে। আমি এবারেও কাঁপানো কন্ঠে বললাম,
— ” ও ক-কিন্তু বলেছে তুমি ই-ইশরাক ভাইয়াকে মার্ডার করেছো। আর অ-আমাকেও ফেলে দিয়েছিলে।”
আদ্রিয়ান শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” আমি জানি ও কী কী বলেছে। আমি সবটার কথাই বলছি। সো নাও?”
আদ্রিয়ানের ডাক শুনে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলাম আমি। পেছনে তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে আমায়। আমি কিছুক্ষণ ওর দিকে ছলছলে দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলাম। ও আমায় ধরতে এলেই আমি ওর হাত ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বললাম,
— ” একদম ছোবেনা তুমি আমাকে। তুমি এটা এটা ঠিক করোনি আদ্রিয়ান একদম না।”
আদ্রিয়ান করুণ কন্ঠে বলল,
— ” আমার কথাটা শোন। আমি…”
— ” আমার ঘুম পাচ্ছে।”
আদ্রিয়ান কিছু না বললে একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,
— ” হুম চলো।”
আমি চোখ মুছে বললাম,
— ” একদম আমার ধারেকাছে আসবে না তুমি।”
ও আমায় কোলে তুলে নিয়ে বলল,
— ” সেটা আমি ডিসাইড করব।”
বলে আমায় বেডে শুইয়ে দিয়ে আমার পাশে শুয়ে আমায় জড়িয়ে ধরতেই আমি শক্ত গলায় বললাম,
— ” আদ্রিয়ান ছাড়ো আমায়, সহ্য হচ্ছেনা তোমাকে আমার।”
— ” হুম হয়েছে এবার চুপচাপ ঘুমিয়ে পরো। পরশু আমরা চট্টগ্রাম যাচ্ছি। মেন্টালি প্রিপার্ড থাকো। তোমাকে আর এখানে রাখা যাবেনা।”
— ” আমি যদি না যাই?”
— ” জিজ্ঞেস করিনি আমি তোমাকে।”
— ” তা কেন করবে? সবসময় তো সেটাই করো না যেটা তোমার মনে চায়। স্বার্থপর লোক একটা।”
— ” আমায় বকা শেষ? এবার ঘুমোন ম্যাডাম।”
— ” আমি কিন্তু..”
আমি কথাটা শেষ করার আগেই ও আমার ঠোঁটে চুমু দিয়ে আমায় থামিয়ে দিলো। আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,
— ” আদ্রিয়ান..”
এবারও কথাটা শেষ করার আগেই আদ্রিয়ান একই কাজ করল। আমি অবাক চোখে দেখছি ওকে। ও মুচকি হেসে বলল,
— ” এখন কথা বললেই আমি এটা করব। যতবার কথা বলবে ততবার। এখন তোমার যদি এটা খুব বেশি ভালো লেগে থাকে, তাহলে ফাইন। কথা বলো?”
আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম ওর থেকে। আসলেই এই লোকটা অসহ্য। একটু বেশিই অসহ্য। ও আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরে আমার চোখের ওপর হাত দিয়ে বলল,
— ” আপাতত আর মাথায় চাপ না নিয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে পরো।”
আমিও ওকে কিছু বললাম না। ওকে কিছু বলে লাভ নেই। ও সেটাই করবে যেটা ওর ভালো মনে হবে আর আমাকে দিয়েও করিয়ে ছাড়বে। হুহ।
__________________
ছাদে দাঁড়িয়ে আছি আর বারবার ঘড়ি দেখছি। আমি জানিনা যা করতে চলেছি সেটা ঠিক হচ্ছে কী না। কিন্তু এটা আমাকে করতেই হবে। সবার ভালো জন্যে। কিন্তু উনি আসছেন না কেন। ঘড়ি দেখতে দেখতে পায়চারী করছি। কারো ডাক শুনে আমি পেছনে তাকিয়ে দেখলাম রূপ চলে এসছে। এতক্ষণ রূপের জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম আমি। রূপ এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
— ” আমি জানতাম তুমি নিজেই আমার সাথে কথা বলতে চাইবে। কী ভাবলে?”
আমি একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বললাম,
— ” আপনি ঠিকই বলেছিলেন আদ্রিয়ান সম্পর্কে। আর ও কাল রাতে সবটা স্বীকারও করেছে। যদিও আমি ওকে তেমন কিছুই বলিনি চুপ ছিলাম। কারণ তখন কিছু বলে কোন লাভ হতোনা। তাই সেই ভুলটা করিনি। কিন্তু ও যেই কাজটা করেছে আর সেটা অন্যায় ভয়ংকর অন্যায়। তাই ওকে শাস্তি পেতে হবে। আপনি বলুন আমি কী করতে পারি। কী করতে হবে আমায়?”
রূপ যেন এই কথাটার জন্যেই অপেক্ষা করছিল। ও তাড়াতাড়ি বলল,
— ” আমাদের একটা টিম আছে। আমরা গোপনেই করছি কাজটা। আমরা পুলিশের সাথে কন্টাক করব কিন্তু তার আগে আমাদের সলিড প্রমাণ লাগবে। সেগুলো তোমাকে আমায় কালেক্ট করে দিতে হবে।”
— ” কী প্রমাণ?”
— ” আদ্রিয়ান জানে তুমি সব সব জেনে গেছো। তাই ও নিশ্চয়ই তোমাকে এখানে রাখবেনা।”
আমি ভাবতে ভাবতে বললাম,
— ” হ্যাঁ কালকে চট্টগ্রাম নিয়ে যাবে ও আমায়। আর বেড়োতেও দেয়নি আজ।”
রূপ কিছু একটা ভেবে বলল,
— ” আচ্ছা শোনো। ওর ল্যাপটপের সেই ফাইলগুলো আমায় মেইল করে দিতে পারবে সুযোগ বুঝে?”
আমি হাত ভাজ করে বললাম,
— ” শুধু সেটা নয়। ওর ল্যাব থেকে আমি সেই কাগজ, আর ডিসাইনগুলোও নিয়ে এসছি।”
রূপের মুখটা মনে হয় চকচক করে উঠল। ও উৎসাহি কন্ঠে বলল,
— ” গ্রেট! আছে তোমার কাছে?”
আমি পাশে রেখে দেওয়া একটা প্যাকেট ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম,
— ” এখানে আছে আর কিছু।”
রূপ অস্হির কন্ঠে বলল,
— ” আপাতত না। বাকিটা আমি তোমাকে হোয়াটস অ্যাপে জানিয়ে দেব। আর হ্যাঁ চিন্তা করোনা আমরাও যাবো চট্টগ্রাম।”
আমিও ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে রেলিং এ হাত রেখে ছোট্ট একটা শ্বাস নিলাম।
রাতে খাওয়ার টেবিলে সবাই মিলে ডিনার করছে তখন আদ্রিয়ান বলল,
— ” বাবা, বড় আব্বু আমার চিটাগং যেতে হবে কয়েদিনের জন্যে একটু কাজ আছে। অনিকেও সাথে নিয়ে যাবো। কাল সকালে বেড়োচ্ছি আমরা।”
বাবা খেতে খেতে বলল,
— ” তা হঠাৎ চট্টগ্রাম? দরকারি কোন কাজ?”
আদ্রিয়ান বলল,
— ” হ্যাঁ একটু দরকারি। আমার বাংলোতেই থাকব। ডোন্ট ওয়ারি।”
ওনার আর আপত্তি করেননি। জাবিন একটু খোঁচা মেরে আস্তে করে আমায় বলল,
— ” কাজ না ছাই। নিশ্চয়ই সেকেন্ড টাইম হানিমুনের প্লান করছো?”
আমিও হেসে দিয়ে বললাম,
— ” উমহুম। তোমার জন্যে বড় খুঁজতে যাচ্ছি।”
জাবিন একটা ভেংচি কাটলো আমি এখন হাসলেও মনে মনে চিন্তা ঠিকই হচ্ছে যে এরপর কী হবে?
__________________
পরের দিন সকালে আমরা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরলাম। আদ্রিয়ান ড্রাইভ করছে আর আমি পাশে বসে আছি। ওর সাথে তেমন কোন কথা বলছিনা আমি। ইচ্ছেটাই নেই। মনটা ভীষণরকম খারাপ হয়ে আছে। ওখানে ঠিক কী হতে চলেছে ভাবতে পারছিনা আমি। সন্ধ্যার অনেকটা পরে আমরা চট্টগ্রামের সেই বাংলোতে গিয়ে পৌছলাম। বাড়িতে এতো গার্ডস কেন? এই প্রশ্নটা মনে জাগলেও ওঈএ করলাম না। ওর সাথে কোন কথা বলবনা, এটাই ওর শাস্তি। গাড়ি পার্ক করে আমি আর আদ্রিয়ান একসাথে ভেতরে ঢুকে দেখলাম সোফায় একটা ছেলে বসে আছে। আমাদের দেখেই হাসি মুখে উঠে এগিয়ে এলো। দেখতে ভালোই, লম্বায় প্রায় আদ্রিয়ান ছুঁইছুঁই হবে। ওভার অল পার্ফেক্ট একটা ছেলে। সবচেয়ে মিষ্টি হল হাসিটা। সে হাসি মুখে এসেই আদ্রিয়ানকে বলল,
— ” স্যার ভালো আছেন?”
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল,
— ” ধরিবাজ হয়ে যাচ্ছো আজকাল। দরকার ছাড়া তো খবরই নাও না। আবার বড় ভাইও বল!”
ছেলেটা মাথা চুলকে বলল,
— ” আসলে..”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দিলো। ছেলেটা এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরল ওকে। ছেলেটা এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” ম্যাম আপনি ভালো আছেন?”
আমি মুচকি হেসে বললাম ‘জি’ । কিন্তু আমার চেয়ে এত বড় একটা ছেলে আমায় ম্যাম ডাকবে?.ছেলেটা বলল,
— ” আপনার দু-জন ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি ডিনার কতদূর হলো দেখছি।”
আমি আর আদ্রিয়ান গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলাম। এসে দেখি ডিনারের সব এরেঞ্জমেন্ট হয়ে গেছে। খেতে খেতে ছেলেটার চঞ্চলতা বেশ ভালো করে লক্ষ্য করলাম। কথায় কথায় জানলাম ওর নাম অভ্র। আদ্রিয়ানের পিএ, ওর চেয়ে খুব বেশি ছোট নয়। তবে ভীষন মজার মানুষ আর মিশুকও। আর আদ্রিয়ানকেও ভীষণ ভালোবাসে।
রাতে আয়নায় দেখে দেখে চুল আঁচরাচ্ছি। হঠাৎ পেছন থেকে আদ্রিয়ান জড়িয়ে ধরল আমাকে। আমি কিছু বললাম না। ও আমার ঘাড়ে মুখ গুজে দিয়ে বলল,
— ” আর কতক্ষণ চলবে এসব।”
— ” তুমি যা করেছো! তোমার মনে হয়না এরচেয়েও বাজে ব্যবহার ডিসার্ব কর।”
— ” আচ্ছা..”
— ” চুপ। একটাও কথা না। ছাড়ো।”
বলে ওকে ছাড়িয়ে বেডে বসতেই হোয়াইট অ্যাপে ম্যাসেজ এলো। চেক করে দেখি রূপের ম্যাসেজ। আমি একবার আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে খুলে দেখলাম মেসেজটা।
#চলবে…
[ গত পার্টে অনেকের রিঅ্যাকশন দেখে আমি বেশ মজা পেয়েছি। এতো আদ্রিয়ান প্রেমি কেন চারপাশে। আমিতো বলেছি ইনফিনিট লাভে যা হয়েছে সেটাই হবে তা ভাবার কারণ নেই। তবুও একই হুমকি দেয়। বাচ্চা মানুষ, ভয় পাই তো।? যাই হোক, আগামী দুই/তিন পার্টেই সবটা পানির মত পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমি আগেই বলেছি রহস্য সমাধান শেষের দিকেই হবে। সো তাই করছি। হ্যাপি রিডিং।]