ভালোবাসি প্রিয়তম,সূচনা_পর্ব
তাসনিম_তামান্না
???
-তোর মতো থ্রাডক্লাস মেয়ের সাহস কেমন করে হয় আমার তুষারের সাথে ধাক্কা খাওয়ার বড় লোকের ছেলে দেখলেই গায়ে পড়তে মন চাই তাই না ছোটলোকের বাচ্চা রুপ দেখিয়ে তুষারকে ভুলাতে পারবি না তোর মতো মেয়েদের আমার চেনা আছে আর যদি তুষারের আশেপাশে দেখি তোকে যে কি করবো তুই নিজেও জানিস না(বলে গটগট করে চলে গেলো রিমা)
মাথা নিচু করে ক্লাসে সবার সামনে দাড়িয়ে আছে কুয়াশা চোখ দিয়ে টুপটাপ পানি পড়ছে। তার সামনে একটা মেয়ে কুয়াশাকে যাচ্ছে তাই বলে চলে গেলো কিন্তু কুয়াশা কিছু বলতে পারলো না ভয়ে।কুয়াশার সাথে কেউ কখনো এভাবে কথা বলে নি, চড় তো দূরের ফুলের টোকা ও দেইনি। কলেজে প্রথম দিন এমন হবে ও কখনই ভাবতে পাড়েনি।এখানে কুয়াশা কাউকে চিনেও না।ভয়ে কিছু বলতেও পারছে না শুধু মাথা নিচু করে চোখের পানি বিসর্জন দিচ্ছে আর ভাবছে।
#ফ্ল্যাসব্যাক
আজ কলেজের প্রথম দিন কুয়াশা এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে হাঁটছে কোথায় যাচ্ছে ও নিজেও জানে না মূলত ও, ওর ক্লাস রুম খুঁজছে কিন্তু কার কাছে শুনবে ওর ক্লাস রুম কোনটা এই টুকু শুনতেই ভয় করছে ওর।প্রায় সবাই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে কুয়াশার দিকে কিন্তু এটাতে কুয়াশার অসস্তি লাগে না এটা ওর সাথে প্রতিদিনই হয়। এদিকে ফেন্ডদের সাথে ও কালরাতে ঝগড়া করছে ওরা রাগ করে বলছে কেউ কলেজ আসবে না কিন্তু কুয়াশা জানে যতই ঝগড়া হোক না কেনো কলেজের ফাস্ট দিন মিস দিবে না কলেজের ফাস্ট দিন নিয়ে ওদের অনেক প্ল্যান তাই ক্লাস রুমের সাথে ফেন্ডগুলোও খুঁজছে। কুয়াশা কলেজে আসার সময় ওর ভাইয়া(কুশান) বলে দিয়েছে সিনিয়রা রেগ দেই, ক্লাসে যেন মন দিয়ে করি,ঠিক মতো যেনো খাবার খাই,কোনো সমস্যা হলে যেনো ভাইকে ফোন দি, আরও কত কি!!একমাত্র বোন কি না সবসময় বোনকে নিয়ে চিন্তায় থাকে!!এসব ভাবতে ভাবতে এগিয়ে যাচ্ছিলো কুয়াশা। তখনি হঠাৎ কারোর সাথে ধাক্কা লাগলো। ধাক্কা খেয়ে দু’কদম পিছিয়ে গেলো কুয়াশা ভয়াত চোখে তাকিয়ে আছে সামনের মানুষগুলার দিকে।
-এই মেয়ে দেখে চলে হাটতে পারো না কানা নাকি(রিক)
কুয়াশা ভয়ার্ত চোখে সামনের ছেলে-মেয়ে গুলোকে দেখে মাথা নিচু করে নিলো। কথা মুখ দিয়ে বের করতেও ভয় পাচ্ছে।
-এই মেয়ে কথা বলতে পারো না(তন্নি)
কুয়াশা তাও চুপ ভয়ে কান্না পাচ্ছে ওর।
-এই তোরা এভাবে মেয়েটাকে ধমক দিয়ে কথা বলছিস কেনো মেয়েটা ভয় পাচ্ছে তো(রুকাইয়া)
-ওমা এতো বড় মেয়ে ভয় পাই নাকি ওমা এতো দেখি কান্না করে দিবে আর একটু হলে(হাসান)
বলে সবাই একসাথে হেসেতে লাগলো। কুয়াশার চোখ দিয়ে টুপ করে কয়েক ফোঁটা পানি পড়লো। তুষার হাত উঠিয়ে সবাইকে থামতে বলল।
-বাচ্চা মেয়েটাকে ছেড়ে দে এভাবে কাঁদাছিস কেনো(সাদাফ)
-একদমই তাই(রুকাইয়া)
কুয়াশা মাথা উঠিয়ে পানিতে টইটম্বুর চোখ নিয়ে কাঁপা গলায় বলল -‘আমি সরি!! খুব সরি আমি বুঝতে পারি নি ভাইয়া সরি’ বলে আবার মাথা নিচু করে নিলো
সবাই কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো কুয়াশার দিকে এতোক্ষণ কেউই কুয়াশাকে ভালো করে দেখেনি কুয়াশার পুরা বাচ্চা বাচ্চা ফেস,কয়েক মুহুতের কান্নায় মেয়েটার ধবধবে ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে, ঠোঁটের নিচে লাল তিল,চোখগুলো বাদামি রঙের, এমনিতেই কুয়াশা অনেক ভীতু প্রকৃতির মেয়ে এটা কুয়াশাকে একবার দেখলেই যে কেউই বলে দিতে পারবে।কুয়াশার বাইরের পৃথিবী নিয়ে কমই ধারণা ভাই সব সময় কুয়াশাকে আগলে আগলে রাখে খারাপ কিছু যাতে কুয়াশাকে ছুঁতে না পাড়ে।
তুষারের মুখ থেকে এতোক্ষণ একটা কথাও বের হয়নি কিন্তু হঠাৎ কুয়াশাকে দেখে মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসলো
-মাসআল্লাহ(তুষার)
-ওমাইগট এটা তো একটা কিউটের ডিব্বা(রুকাইয়া)
রুকাইয়া কথায় তুষারের ঘোর কাটে সবার দিকে একপলক তাকিয়ে দেখলো সবাই কুয়াশার দিকে তাকিয়ে আছে। তুষারের রাগ লাগলো ধমকে বলল
-এখানে দাড়িয়ে থাকবি তোরা(তুষার)
তুষারের ধমকে কেঁপে ফুপিয়ে উঠল কুয়াশা। সবাই আরও অবাক হয়।
-এই মেয়ে তুমি কাঁদছ কেনো(রিদ)
-এই তুই চুপ কর সবাইকে ও ভয় পাচ্ছে (মিতা)
-ভয়ের কি আছে সেটাই তো বুজতে পারছি না আমরা বাঘ না ভাল্লুক(মুন)
রুকাইয়া কুয়াশা পাশে গিয়ে দাড়িয়ে বলল-তুমি কাঁদছ কেনো?আমাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নাই।তোমার নাম কি?
কুয়াশা কাঁপা গলায় বলল -‘কুয়াশা জাহান’
-বাহ সুন্দর নাম তুমি কি নিউ?(তন্নি)
কুয়াশা ওপর নিচ মাথা নাড়ালো যার অর্থ হ্যাঁ
-ওহ তাহলে তুমি তোমার ক্লাসে যাও(রুকাইয়া)
কুয়াশা মাথা নাড়িয়ে ক্লাসে চলে আসে
-দোস্ত এই মেয়েটা এতো কিউট কেমনে? হাউ?(হাসান)
-আরে আমি মেয়ে হয়ে মেয়ের ওপর এই প্রথম ক্রাস খেলাম(তন্নি)
-আমি তো ভাবছি এটারে গফ বানামু(রিদ)
-সাট আপ ঔ মেয়েকে নিয়ে আর একটাও কথা হবে না এখানেই চ্যাপ্টার ক্লোজ(তুষার) বলে রেগে চলে গেলো
সবাই তুষারের ব্যবহারে অবাক হয়ে গেলো তুষারের হটাৎ কি হলো? কেনোই বা এতো রেগে গেলো?কেউ বুঝতে পারলো। সবাই জানে তুষার রাগী হুটহাট করে রেগে যায় তাই কেউ এটা নিয়ে আর মাথা ঘামালো না সবাই তুষারের পিছনে পিছনে গেলো।
এদিকে
কুয়াশা ক্লাসে এসে বসলো ওর মনটা খারাপ সত্যি ওর ফেন্ড গুলো আজ আসেনি ওরা যতোই ঝগড়া করুক না কেনো কুয়াশার বিশ্বাস ওরা আসবে কিন্তু এখনো কেনো আসলো না?তাহলে কি ও-ই তাড়াতাড়ি চলে আসছে তাই হবে হইতো!!ওরা যদি না আসে তাহলে ও একা কি করবে ওদেরকে ছাড়া তো ওর ভালো লাগে না। এসবই ভাবছিলো তখন কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে কুয়াশাকে হেঁচকা টানে দাড় করিয়ে দিয়ে ঠাসঠাস করে দুইটা থাপ্পড় মারলো। ঘটনা টা এতো তাড়াতাড়ি ঘটলো কুয়াশা কিছু বুঝে উঠার আগে মেয়েটা থাপ্পড় মেরে দিলো কুয়াশা।
-তোর মতো থ্রাডক্লাস মেয়ে সাহস কেমন করে হয় আমার তুষারের সাথে ধাক্কা খাওয়ার বড় লোকের ছেলে দেখলেই গায়ে পড়তে মন চাই তাই না ছোটলোকের বাচ্চা রুপ দেখিয়ে তুষারকে ভুলাতে পারবি না তোর মতো মেয়েদের আমার ভালো করে চিনা আছে আর যদি তুষারের আশেপাশে দেখি তোর অবস্থা কি করবো তুই নিজেও জানিস না (বলে গটগট করে চলে গেলো)
#বর্তমান
কুয়াশা মাথা নিচু করে নিঃশব্দে কান্না করছে থাপ্পড় টা এতো জোরেই ছিলো যে কুয়াশার ঠোঁট কেটে রক্ত বের হয়ে গেছে। ক্লাসের কেউ কেউ হা হয়ে তাকিয়ে আছে, আবার কেউ ফিসফাস করছে, কেউ কেউ তো জোরেই বলছে।
মেঘ,মেঘা,অনু,ঈশান, রাহুল ক্লাসে এসে কুয়াশাকে দেখে দৌড়ে গেলো কুয়াশার কাছে। কুয়াশা কাছে মানুষ গুলোকে দেখে কান্নাটা হু হু করে বেড়ে গেলো। মেঘাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।
-কি হইছে বোনু বল আমাকে এভাবে কান্না করছিস কেনো(মেঘ)
-কেউ কিছু বলেছে……এই কথা বল…. কান্না থামা(অনু)
ওরা প্রশ্ন করছে কিন্তু কুয়াশা কান্নার কারণে কিছুই বলতে পারছে না।তাই মেঘ একটা মেয়ের কাছে শুনলো কি হয়েছে এখানে মেয়েটা সবটা বলল।সবটা শুনে মেঘ রেগে গেলো। কুয়াশার মুখেও মারের দাগ স্পষ্ট আবার ঠোঁট কেটে রক্ত ও বের হচ্ছে । মেঘের রাগে ফোঁস ফোঁস করছে কুশান ভাইয়া মেঘ আর মেঘাকে তাড়াতাড়ি কলেজে আসতে বলছিলো কুয়াশা একা সেটা জেনে ওরা তাড়াতাড়ি আশার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাও দেড়ি হয়ে গেছে। কুয়াশার এ অবস্থার কথা শুনলে কুশান যে কি করবে মেঘ সেটা ভালো করেই জানে।মেঘের নিজের ওপরেও রাগ হচ্ছে ওর বোনের সাথে কেউ কখনো ফুলের টোকা ও দেই নি আজ একটা বাইরের মেয়ে এসে থাপ্পড় মারলো।মেঘ সেই মেয়েটাকে বলল কে কুয়াশাকে মারছে তাকে দেখিয়ে দিতে।
-তোরা কুয়াশাকে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বস আমি আসছি(মেঘ)
কথাটি বলে মেঘ মেয়েটার সাথে করে নিয়ে গেলো কে মেরেছে দেখিয়ে দিলো মেয়েটি মেঘকে। মেঘ রিমার কাছে গিয়ে পরপর চারটা থাপ্পড় মারলো শেষের থাপ্পড়টা এতোই জোরে মারলো যে রিমা মুখ থুবড়ে পড়লো। কলেজের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মেঘ আর রিমার দিকে।
চলবে