ভালোবাসি ২,পর্ব-১

0
6861

ভালোবাসি ২,পর্ব-১
Tanisha Sultana (Writer)

মাঝরাতে মুখে কারো গরম নিশ্বাসে ঘুম ভেঙে যায় তুলির। সামনের লোকটা ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। আর নিশ্বাসের গরম বাতাসটা তুলির চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে। লোকটা তুলির অনেকটা বেশি কাছে চলে এসেছে। তুলি চোখ বন্ধ করেও অনুভব করছে লোকটাট নাক আর তুলির নাক একদম ছুঁই ছুঁই। তুলি নিশ্বদে একটু নরাচরা করার চেষ্টা করে কিন্তু না এটা অসম্ভব। মনে হচ্ছে দুশো কেজি ওজনের কিছু একটা তুলির ওপরে আছে।

তুলি ভেবেছিলো চুপচাপ থাকবে। কি করবে দেখবে। কিন্তু তা আর হয়ে উঠলো না। কারণ খুব অস্বস্তি হচ্ছে তুলি।
চোখটা খুলো ফেলে। ডিম লাইটের হালকা আলোতে তুলি একটা ছেলেকে দেখতে পায়। যে তুলির পেটের ওপর বালিশ দিয়ে সেই বালিশের ওপর লোকটা ভর দিয়ে আছে।
লোকটা হয়ত খেয়াল করেনি তুলি তাকিয়ে গেছে তাই ছেলেটা আলতো করে তুলির ঠোঁটে একটা চুমু দেয়। আর সাথে সাথে তুলি ছিটকে উঠে যায়। চিৎকার দেবে তার আগেই ছেলেটা লাইট জ্বালিয়ে দেয়। তুলি বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।

“সসায়ান ভাইয়া আপনি?

সায়ান একটু ভাব নিয়ে বলে
” মামনি বলছিলো বাসায় গেস্ট এসেছে। তাই দেখতে এসেছিলাম।

তুলি ভ্রু কুচকে তাকায়। সায়ান তুলির তাকানো দেখে আমতাআমতা করে বলে
“এভাবে তাকানোর কিছু নেই। অন্ধকারে মুখটা বোঝা যাচ্ছিলো না তাই

” তাই এরকম আছড়ে পড়ে দেখছিলেন?
অবাক হয়ে বলে তুলি।

“জাস্ট সাট আপ। এটা আমার বাড়ি আমি যখন যেখানে খুশি যেতে পারি।

” তাই বলে কিস

“হোয়াট? এবার নিশ্চয় বলবি আমি তোকে কিস করেছি। কান অন তুলি এরকম আজেবাজে স্বপ্ন আমাকে নিয়ে দেখিস না।

” আমার খেয়েদেয়ে কাজ নাই আপনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবো
বিরবির করে বলে তুলি।

” আমি সত্যিই ফিল করেছি
সিরিয়াস হয়ে বলে তুলি।

সায়ান তুলির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বল
“কি ফিল করেছিস?

তুলি কিছুটা ভরকে যায়।তুতলিয়ে বলে

” না মানে

“না মানে কি? স্পষ্ট করে বল কি ফিল করেছিস আমিও শুনতে চায়। আমি ভীষণ এক্সাইটেড বল
তুলি মুখটা নিচু করে ফেলে। সায়ান ফু দেয় তুলির মুখে। তুলি হালকা পাতলা কেঁপে ওঠে। চোখ বন্ধ করে চোখ মুখ খিঁচে ফেলে

” বল না কি ফিল করেছিস?

তুলি হালকা একটু চোখ খুলে। সায়ান তুলির মুখের খুব কাছে। অধিক আগ্রহে তুলির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। উওরের অপেক্ষায়।

তুলি একদম খাটের কর্নারে চলে এসেছে। আর একটু পিছলেই ঠাস করে পরে যাবে।
” আমি ফিল করেছি আমার পাশে তোহা ছিলো ও এখন নেই
তুলি চোখ বন্ধ করে বলে।
“কিন্তু একটু আগে তো অন্য কথা বললি।
কিছুটা নেশালো কন্ঠে তুলির কানের কাছে গিয়ে বলে সায়ান। তুলি কানে হাত দেয়

” উরে বাবারে
এভাবে বলবেন না প্লিজ
চোখ মুখ খিঁচে বলে তুলি। সায়ান তুলির কান থেকে তুলির হাতটা নামিয়ে দেয়। তারপর বলে

“কেনো বলবো না?

তুলি কিছুই বলছে না। চুপচাপ চোখ মুখ বন্ধ করে বসে আছে। মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না। তাকানোর সাহসটাও পাচ্ছে না। তুলি বুঝতেই পারছে না এই লোকটা এমন কেনো করছে।

সায়ান মুখ বাঁকিয়ে খাট থেকে নেমে যায়।
চুলে হাত চালাতে চালাতে বলে
“আর একটু পিছলেই তুমি ঠাস করে নিচে পড়ে যাবি। তারপর তোর কোমরে ব্যাথা পাবি। চিল্লাবি কান্না কাটি করবি।

তুলি এগিয়ে এসে খাটের মাঝখানে বসে বুকে থু থু নেয়। জোরে জোরে শ্বাস নেয়। এতোখন দম বন্ধ করে রাখার মতো ছিলো। বুক কাঁপছে।
সায়ান আবার বলে
” আমি চাইলেই তোকে ধরতে পারতাম। কিন্তু ধরলাম না কজ আমি তোকে এখনও টাচই করি নি তাই তুই বলছিস যে আমি তোকে কিস করেছি এটা তুই ফিল করেছিস। আর যদি একটু টাচ করতাম তাহলে না জানি আর কি কি ফিল করতি।
শয়তানির হাসি দিয়ে বলে সায়ান।

“আসলে আমি ভুল করে বলে ফেলেছি। আমি কিছুই ফিল করি নি। পাক্কা

” ইটস নট ফেয়ার তুলি। নিজের মনের ভেতরের কথা একবার বলে দিলে সেটা ফেরত নেওয়ার যায় না।

তুলির কিছুটা রাগ হচ্ছে নিজের ওপর। ফিল করেছি তো করেছি ওনাকে বলার কি আছে? এবার সব সময় এই কথা নিয়েই আমাকে খোটা দেবে। ইচ্ছে করছে এর মাথায় একটা বাড়ি দিয়ে স্মৃতি শক্তি মুছে দেই। কিন্তু বাড়ি দিলে যদি স্মৃতি না হারায় তাহলে আরেক বিপদ হবে।

নিধি ভেংচি কাটে তাও আবার গোপনে।

“যাইহোক আমাদের বাড়িতে এসেছিস ভদ্র ভাবে থাকবি। তোর বাপি তোকে সোজা করার দায়িত্বটা আমাকে দিয়েছে।

” আমি কি বাঁকা না কি?

“তোর বাপি বললো মারাত্মক বাঁকা তুই। যাকে বলে নোবেল প্রাপ্ত।

” আমার জল্লাদ বাপির আমার গুন গুলো কখনো চোখে পরে না।

“তোর আবার গুন আছে না কি?

” নাহহহ নেই

“হুমমম। ভালোই তো বড় হয়ে গেছিস।
পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে বলে সায়ান

“আপনিও বিশাল বড়।

সায়ান ভ্রু বাঁকিয়ে তাকায়। তুলি আমতাআমতা করে বলে
” না মানে হাইটে

“এনিওয়ে গুড নাইট

” এখন আর নাইট নেই মর্নিং হয়ে গেছে।

“বড্ড বেশি বকিস তুই।যেটা আমার পছন্দ না

” ওহহ

“ওহহ কিহহ? আমি যখন যেটা বলবো সেটাই হবে।

তুলি কিছুই বলে না।

সায়ান তুলির রুম থেকে চলে যায়। তুলি বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নেয়। এতোখন মনে হয় শ্বাস আটকে ছিলো। জল্লাদ বাপির হাত থেকে বেরিয়ে এখন জল্লাদ মামাতো ভাই। ভাবা যায়

তুলি আবার সুয়ে পরে। কাঁচা ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলো। এবার তুলির চোখ বন্ধ করতেও ভয় করছে যদি আবার অন্য কিছু ফিল করে? তুলি মনে মনে ভেবে নেয় এবার ফিল করলে আর সায়ানকে বলবে না।

” ইসস বলে কি না যা বলবে সেটাই হবে। মামা বাড়ির আবদার। কিন্তু আমি তো স্পষ্ট ফিল করলাম উনি আমার ঠোঁটে
ধুর কিসব ভাবছি। উনি মেবি সিগারেট খায় আমার মুখে গন্ধ লেগে আছে।

এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরে তুলি।

সকাল বেলা জিসান আর তোহা আসে তুলিকে ডাকতে। তুলি মরার মতো পাশবালিশ জড়িয়ে ঘুমচ্ছে।

“ওই তুলি ওঠ না
তোহা তুলিকে ধাক্কা দিয়ে বলে। তুলি নরেচরে আরও ভালো করে শয়।

” তুলি নয়টা বাজে সায়ান ভাইয়া ডাকছে তোকে?

তুলি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বলে
“সায়ানকে এখানে আসতে বলে। যা বলার বলে চলে যাবে। আমার ঘুমের ডিস্টার্ব করিস না

বলেই আবার নাক ডাকা শুরু করে দেয়।

” এর আত্মায় কি ডর ভয় নেই না কি?
জিসান বলে।

অনেক ডাকাডাকি করেও তুলিকে ওরা উঠাতে পারে না। অধয্য হয়ে সায়ান চলে আসে রুমে।

“উঠলো

জিসান আর তোহা একটু হাসার চেষ্টা করে।

” এইতো ভাইয়া এখুনি উঠে যাবে।
তুলির দিকে তাকিয়ে
“ওই তুলির বাচ্চা উঠ না

” তোরা বাইরে যা আমি দেখছি
শান্ত গলায় বলে সায়ান।

“এ্যাঁ
জিসান বলে

সায়ান হাত নারাতে থাকে

” যাচ্ছি তো

তোহা আর জিসান চলে যায়। সায়ান তুলিকে কোলে তুলে নিয়ে বাথরুমে যায়। তুলিকে সাওয়ারে নিচে নিয়ে সাওয়ার অন করে দেয়।
গায়ে ঝর্ণার মতো পানি পড়ায় তুলি লাফিয়ে উঠে। সায়ানের কোলে ছিলো। সায়ান তুলির এই লাফানোতে তাক সামলাতে পারে না তুলিকে নিয়ে ঠাস করে পরে যায়। সায়ান একদিকে পরে আর তুলি আরেকদিকে। তুলি চোখ খুলে চারদিক ভালো করে দেখে ও বুঝতে পারে ও বাথরুমে সাওয়ারের নিচে আছে। পাশে তাকিয়ে দেখে সায়ান অগ্নী দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ফ্লোরে বসে আছে। পরনের থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর হালকা গোলাপি শার্টটা ভিজে গেছে।

তুলি বুঝতেই পারছে না এখানে এক্সজেকলি কি হয়েছে। তবে বোঝার চেষ্টা করছে।

“আআপনি এখানে কি করেছেন?
থেমে থেমে বলে তুলি।

” কেনো দেখতে পাচ্ছিস না নাগিনী ডান্স করছি

সায়ানের কথায় তুলির হেঁচকি উঠে যায়।
হেঁচকি তুলতে তুলতে বলে

“নাগিনী ডান্স তো মেয়েরা করে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here