ভালোবাসি ২,পর্ব-৩
Tanisha Sultana (Writer)
তুলি গলা ঝেড়ে রুমে ঢুকে। সায়ান সিঙ্গেল সোফায় বসে ল্যাপটবে কাজ করছে। সায়ান কাজে এতোটায় বিজি যে তুলি রুমে এসেছে তবুও একবার তাকায় না। তুলি সায়ানের পাশে দাঁড়িয়ে কাশি দেয় তবুও সায়ান তাকায় না।
“আপনার কফি
কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে বলে তুলি।
” রেখে দে
কাজে মন রেখেই বলে সায়ান।
“ঠান্ডা হয়ে যাবে তো
” গেলে যাবে
“ঠান্ডা হয়ে গেলে ভালো লাগবে না
সায়ান তুলির দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়
” আপনার যখন খুশি তখনই খাইয়েন।
তুলি সায়ানের পাশের টেবিলে কফির মগ রাখে। সায়ান কাজের ফাঁকে ফাঁকে এক চুমুক করে কফি খাচ্ছে। তুলি ওখানেই দাঁড়িয়ে হা করে দেখছে।
সায়ানের কফি শেষ হয়ে যায়। ল্যাপটপ সোফায় রেখে উঠে দাঁড়ায় আর তুলির সাথে ধাক্কা খায়। তুলি হকচকিয়ে যায়। সায়ান চোখ ছোটছোট করে তাকায় তুলির দিকে
“ইয়ে মানে আসলে আমমমি কাপটা নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম
বলেই কাফটা হাতে নেয় তুলি
” যাচ্ছি
বলে চলে যায়। তুলি চলে যাওয়ার পরে সায়ান একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
_________
তুলি সায়ানের রুম থেকে বেরিয়ে হাঁটছে আর ভাবছে
কি হলো বেপারটা আমাকে ইগনোর করলো? কিন্তু কেনো? সকাল পর্যন্ত তো কেমন কেমন করলো এখন এতো চেঞ্জ। ঘটনা কি?
তুলি এসব ভাবতে ভাবতে হাঁটছে। সিঁড়ির কাছে চলে এসেছে কিন্তু খেয়াল করেনি। আর এক পা বাড়ালেই ঠাস করে পরে যাবে। তখন তোহা এসে ধরে
“কি রে আর একটু হলেই তো পরে যেতিস
তুলি একবার নিচের দিকে তাকিয়ে বলে
” থ্যাংক্স বোনু।
“কি ভাবছিলি বল তো
ভ্রু কুচকে বলে তোহা।
তুলি গালে হাত দিয়ে বলে
“ভাবছিলাম সায়ান ভাইয়া আমাকে ইগনোর করলো।
” উনি আবার তোকে এটেনশন দিলো কবে?
তুলি রাগী দৃষ্টিতে তাকায় তোহার দিকে
“একদম তুই আর আমার সাথে কথা বলতে আসবি না। তুই তো আমার জমচ বোন। তবুও আমার সাথে শক্রদের মতো বিহেব করিস। কথা বলবি না আর আমার সাথে।
তুলি রেগেমেগে চলে যায়।
” যাহহ বাবা আমি আবার কি করলাম
ব্রেকফাস্ট রেডি করে মামি ডাকে তুলি আর তোহাকে। তোহা চেয়ার টেনে বসে। তুলি তোহার উল্টো দিকে মুখ বাঁকিয়ে বসে। নানু এসে তোহার পাশে বসে। মামি ওদের খেতে দেয়। তুলি রুটি ছিঁড়ে মুখে পুরতে যাবে তখন সায়ান শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে আসে। তুলি বড়সড় একটা টাসকি খায়।
কালো শার্ট কালো জিন্স শার্টের দুইটা বোতাম খোলা। হাতা ফন্ট করে কনুই পর্যন্ত গোটানো। সিল্ক চুলগুলো কপালে লেপ্টে পরে আছে।
তুলির হাত থেকে রুটি পরে যায়।
সায়ান তুলির সামনের চেয়ারে বসে। তুলির দিকে একবার তাকায়।
“মামনি তাড়াতাড়ি দাও
মামি ওনার প্লেটে রুটি আর ডিম দেয়। রুটি ছিড়ে তাতে ডিম দিয়ে মুখে পুরছে আর ফোন দেখছে। এ যেনো এক হিরো।
” তুলি তারাতাড়ি খা। স্কুলে যাবি না
তুলির ধ্যান ভাঙ্গে। সায়ানের থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়। খাবার মুখে দিয়ে বলে
“কি মামনি দুদিনের জন্য বেড়াতে এসেছি তাও স্কুল স্কুল করছো। ভাল্লাগে না
” এখন স্কুল মিছ দিলে তো এসএসসিতে ফেল করবি।
“এমনিতেও ফেল করবে মামনি।
সায়ান খাওয়ায় মনোযোগ দিয়ে বলে। তুলির রাগ হয়
” মোটেও ফেল করবো না। আমি খুব ভালো স্টুডেন্ট
একটু ভাব দেখিয়ে বলে তুলি।
“দেখা যাক
হঠাৎ তুলির পায়ের ওপর সায়ান পা রাখে। তুলি চমকে ওঠে। নিচে তাকিয়ে দেখে সায়ান পা দিয়ে আছে। তুলি পা সরানোর চেষ্টা করে কিন্তু লাভ হয় না। এভাবে তুলি খেতেও পারছে না। আর সায়ান শান্তিতে খেয়ে যাচ্ছে। তুলি মুচকি হেসে খায়।
তোহা খুব করে কিছু বলতে চাইছে। কিন্তু বললেই তুলি আটও রাগ করবে তাই চুপ করে আছে। খাওয়া শেষে সায়ান হাত ধুয়ে চলে যেতে যেতে বলে
” তোহা রেডি হয়ে নে ঘুরতে নিয়ে যাবো
তুলি খাওয়া বাদ দিয়ে দৌড়ে সায়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে
“আমাকে নিবেন না
” নিতে পারি যদি তুই যা অনুভব করছিলি তা আমাকেও অনুভব করাস
তুলির কানের কাছে ফিসফিস করে বলে। তুলি চমকে ওঠে।
“কিন্তু
” কিন্তু টিন্তু বাদ।।যদি করাস তো নিবো। আমি আজ তোহাকে নতুন একটা জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাবো। ভেবে দেখ
বলেই সায়ান বাঁকা হেসে রুমে চলে যায়।
তোহার খুশি আর দেখে কে। রুমে ঢুকে জামা পরে সাজুগুজু করছে আর গুনগুন করে গান গাইছে। তুলি খাটের মাঝে গোল হয়ে বসে আছে। রাগ লাগছে
” তুই আমাকে রেখে যেতে পারবি?
তোহাকে প্রশ্ন করে তুলি।
“তোর সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে। তো এখন যেতেই পারি।
তোহা ভাব দেখিয়ে শার্টটা ঠিক করতে করতে বেরিয়ে যায়।
তুলির এবার কান্না পাচ্ছে। কালো জিন্স আর লং শার্ট পরে চুল গুলো ঝুটি করে তুলি যায় সায়ানের রুমে। সায়ান শার্টের বুতাম লাগাচ্ছে আর সিস বাজাচ্ছে।
তুলি ভেতরে ঢুকে কাশি দেয়। সায়ান একবার তুলির দিকে তাকিয়ে আবার কাজে মন দেয়।
” বলছিলাম কি আমাকে নিয়ে গেলে কি হবে?
“না করেছি না কি?
” হ্যাঁ ও তো বলেন নাই
সায়ান পকেটে হাত গুজে বলে
“তুই রেডি
” হুমমম
“এই ড্রেসে তোকে নিবো না
” তাহলে
“গাউন বা থ্রি পিছ টাইপের কিছু পরে আয়।
” থ্রি পিছ তো আমার নাই
“তাহলে গাউন
” আচ্ছা
তুলি যেতে নেয়
“শোন
তুলি দাঁড়িয়ে যায়
” কালো পরিস
“কেনো?
” এতো প্রশ্ন করলে নিবো না
“আচ্ছা
তুলি দৌড়ে চলে যায় চেঞ্জ করতে। সায়ান মুচকি হাসে।
তুলি অনেক বেছে কালো আর ক্রিম কালারের একটা গাউন পায়।জলদি ওটা পরে নেয়। মুখে হালকা পাউডার চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা একটু লিপস্টিক। ব্যাস তুলির সাজ কম্পিলিট।
তোহা আর জিসান গাড়ির পেছনের ছিটে বসে ওদের বিশ্ব বিখ্যাত ঝগড়া করছে। সায়ান গাড়ির দরজা আধখোলা করে বসে আছে তুলির অপেক্ষায়।
তুলি দুই হাতে দুইটা জুতো আর গলায় পার্স ঝুলিয়ে দৌড়ে আসছে। তুলির দিকে সায়ানের চোখ দুটো আটকে যায়। এই মেয়েটা একটু বেশিই কিউট। কিন্তু এই মুহূর্তে তুলির দিকে হাবলার মতো তাকিয়ে থাকলে চলবে না তাই সায়ান চোখ ফিরিয়ে নেয়। তুলি হাঁপাতে হাঁপাতে গাড়িতে ওঠে।
সায়ান দরজা আটকে গাড়ি স্টাট দেয়।
” কি রে তুই যাচ্ছিস?
তোহা বলে পেছন থেকে
“তো কি তুই একাই যেতে চাইছিলি?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে তুই
” এভাবে দাঁত কটমট করলে তোর দাঁত তো ভেঙে যাবে। পরে তোকে বিয়ে দেওয়া যাবে না
তোহার কথা শুনে সায়ান আর জিসান হালকা হাসে। তুলির তো ভীষণ রাগ হচ্ছে
“আমার বিয়ে নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। তুই তোরটা ভাব
তোহা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সায়ান বলে
” এখন এদের ঝগড়া শুনতে শুনতে কান পঁচে গেছে। এবার তোমাদের ঝগড়া শুনতে পারবো না। যদি খুব ঝগড়া করার ইচ্ছে হয় তো আমি গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যাচ্ছি তোমরা ঝগড়া করো
সায়ানের কথা শুনে তুলি গাল ফুলিয়ে বাইরের দিকে তাকায়। তোহা চুপ হয়ে যায়। সায়ান গাড়ি থামিয়ে দেয়
“কি হলো আমরা তো ঝগড়া করছি না
তোহা বলে।
তুলি এখনও বাইরে তাকিয়ে আছে।
সায়ান এগিয়ে তুলির কাছে এসে তুলির পা পাশে হাত দিয়ে ছিটবেল্ট নেওয়ার সময় তুলির পেটে হালকা ছোঁয়া লাগে। তুলি হকচকিয়ে সায়ানের দিকে তাকায়। সায়ান তুলির একটু বেশিই কাছে। তুলি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। সায়ান বেল্ট নিয়ে বেঁধে দিয়ে তুলির মাথায় একটা গাট্টা মেরে নিজের ছিটে গিয়ে বসে।
তুলি চোখ খুলে সায়ানকে নিজের ছিটে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
তোহা আর জিসান ওদের মতো গল্প করছে আর একটু পরপর ঝগড়া। সায়ান তুলির দিকে তাকিয়ে বলে
” এতো ভয় পাস কেনো বলতো?
“আপনি হুটহাট যেভাবে এট্যাক করেন ভয় না পেয়ে উপায় আছে।
” এটুকুতেই এতো ভয়?
“বাচ্চা মেয়ে তো
ঠোঁট উল্টে বলে তুলি।
” হুমমম। কবে যে বড় হবি
“বড় হলে কি করবেন?
সায়ান তুলির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে।
” বলবো
“না না থাক বলতে হবে না
সায়ান ফিক করে হেসে ফেলে।
” শয়তান একটা। সকালে ভাবছিলাম গুড বয় হয়ে গেছে এখন দেখি আগের মতোই। তবে দেখতে বেশ ভালো। প্রেম করলে মন্দ হয় না।
তুলি মনে মনে বলে।
চলবে