ভালোবাসি ২,পর্ব-৭অন্তিম পর্ব

0
5118

ভালোবাসি ২,পর্ব-৭অন্তিম পর্ব
Tanisha Sultana (Writer)

সায়ানদের বাসার ড্রয়িং রুমে বসে আছে তুলির বাবা সায়নের বাবা নানু মামনি জিসান তোহা। তুলি আর সায়ান অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে।
তুলির বাবা তুলি আর তোহাকে নিতে এসেছিলো তখন দেখতে পায় সায়ান আর তুলি একেঅপরের সাথে লেপ্টে আছে

এসব কি সায়ান?
সায়ানের মা কিছুটা রাগী কন্ঠে বলে

ভালোবাসি আমি তুলিকে
সোজাসাপ্টা উওর দেয় তুলি।

“কবে থেকে চলছে এসব? আমি কয়েকদিন বাড়িতে নেই তার মধ্যেই এতোকিছু
শান্ত গলায় বলে সায়ানের বাবা

অনেক আগে থেকেই তুলিকে আমি ভালোবাসি কিছুদিন আগে তুলি আমাকে এক্সেপ্ট করেছে।

তুলির বাবা সায়নের দিকে তাকায়। সায়ান মাথা নিচু করে আছে। তুলির বাবা সায়নের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
তুমি খুব বুদ্ধি মান। ছেলে হিসেবে তুমি পারফেক্ট। কিন্তু তোমাদের বয়সটা পারফেক্ট না।

” প্রতিষ্ঠিত হয়ে তবেই আমি তুলিকে বিয়ে করবো। এতোদিন আমরা অপেক্ষা করবো

“গুডড। আমি তোমাদের সম্পর্কটাকে রেসপেক্ট করি। আর আমি জানি সাকসেস তুমি হবেই।
সায়ানের পিঠ চাপকে বলে।

সায়ানের বাবা উঠে বলে
” তোমরা প্রাপ্ত বয়স্ক হলে আমরা ধুমধাম করে তোমাদের বিয়ে দেবো। কিন্তু আমি চায় না তোমরা এখন দেখা করো বা ঘোরাঘুরি করি।

তুলির মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়।

“মামা বলছিলাম
সায়ান তুলিকে থামিয়ে বলে
” ঠিক আছে বাবা। আমি তুলির সাথে কোনো যোগাযোগ করবো না

সায়ান রুমে চলে যায়। তুলিও পেছন পেছন যায়

“তুমি কেনো এটা বললে? তোমাকে না দেখে আমি দুইটা মিনিট থাকতে পারি না

সায়ান তুলির দিকে এক নজর তাকিয়ে বলে
“কাছে আসার জন্য মাঝে মাঝে দুরে যেতে হয় তুলি।

” ঠিক আছে তুমি পারলে আমিও পারবো

তুলি বেরিয়ে যায়। সায়ান জোরে একটা শ্বাস নেয়। তুলি আর তোহা নিজেদের জামাকাপড় গুছিয়ে বাবার সাথে চলে যায়। যাওয়ার আগে একবার পুরো বাড়িটার দিকে চোখ বুলাই তুলি।

কেটে যায় তিনটা বছর। এই তিন বছরে সব কিছু পাল্টে গেছে। তুলিও বড় হয়েছে। HSC এক্সাম দিয়েছে। এই তিন বছরে তুলি কোনো ভাবে সায়ানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে নি৷ শুধু সায়ানের একটা কথাই মাথায় রাখতো “অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়”
তোহা আর জিসানের সম্পর্ক আগের মতোই। এই ভালো তো এই খারাপ। এই ঝগড়া তো এই ভালোবাসা। জিসান দুইদিন পরপরই আসে তোহাদের বাড়িতে।

আজ তুলির বিয়ে সায়ানের সাথে। দীর্ঘ তিনটা বছর পরে আজ তুলি আর সায়ান দুজন দুজনকে দেখবে। অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করছে তুলির। আবার ভয়ও করছে। সায়ান এখন দেখতে কেমন হয়েছে? আগের মতোই আছে না কি পাল্টে গেছে? মোটা হয়েছে না কি চিকন?
তুলি নিজে নিজেই হেসে ফেলে। কিসব উল্টাপাল্টা ভাবছে।
একটু আগেই পার্লারের মেয়েরা তুলিকে সাজাতে এসেছে। সায়ান পছন্দ করে সব কিনেছে তুলির জন্য। তোহা সাথে গেছিলো সায়ানের। বিউটিশেয়ানরা তুলিকে সাজিয়ে চলে যায়। তুলি একা বসে আছে। তোহা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে জিসানের সাথে কন্টিনিউ ঝগড়া করে যাচ্ছে।

তুলি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় সায়ানের সাথে আজ খুব ঝগড়া করবে। এতোদিনে একবারও একটা ফোনও দিলো না। ফেসবুক আইটা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। তুলি কতো ছটফট করতো একটু দেখার জন্য কিন্তু দেখা মিলতো না। কতো কষ্ট হতো ওর। আজ সব কিছু সুধে আসলে মিটিয়ে নেবে।

“বর এসে গেছে

কথাটা শুনে তোহা দৌড়ে বেরিয়ে যায় গেট আটকাবে বলে। তুলির মনের মধ্যে টিপটিপ করছে। এতোদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটবে আজ। আজ ভালোবাসা পূর্নতা পাবে। তুলি উঠে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে উঁকি দেয় যদি সায়ানকে একনজর দেখা যায় তার আশায়। কিন্তু এতো এতো মানুষের ভীরে সায়ানের দেখা মেলে না। তাই তুলি মুখ গোমড়া করে আবার আগের জায়গায় বসে।

খুব ভালো ভাবে বিয়েটা সম্পূর্ণ হয় তুলি সায়ানের। বাবা মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে শশুড় বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্য রওনা হয়। জিসান আর তোহা বাইকে আসছে। এটা তোহার ইচ্ছে। জিসানের সাথে বাইকে যাবে।

তুলি গাল ফুলিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। সায়ান তুলির দিকে একটু পরপর তাকাচ্ছে কিন্তু কিছু বলছে না। সায়ান বুঝতে পারছে মহারানী ভীষণ রেগে আছে। কিন্তু ওকে তো বুঝতে হবে অনেকদিন দুরে থেকে কাছে আসার অনুভূতিই আলাদা।

সায়ানদের বাড়িতে বরন সেরে সব নিয়ম কারুন শেষ করে। তোহা জিসান আর কয়েকজন মেয়ে তুলিকে সায়ানের রুমে দিয়ে যায়। রুমটা খুব সুন্দর করে গোলাপ আর গাঁধা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। তুলি ঘুরে ঘুরে পুরো রুমটা একবার দেখে। তিন বছর ছয় মাস পনেরো দিন পরে আবার এই রুমে আসলো। তুলি খাটের মধ্যে গোল হয়ে বসে।

একটু পরে সায়ান দরজা আটকে ভেতরে আসে। তুলির মুখের সামনে দাঁড়িয়ে কান ধরে উঠবস করে। তুলি ফিক করে হেসে ফেলে। সায়ান মুচকি হেসে তুলির পাশে বসে।
” ভেরি সরি জান। জানো এই তিনটা বছর প্রতি সেকেন্ডে এই দিনটার জন্য আমি অপেক্ষা করতাম। আজ এসে গেলো। অদ্ভুত এক ফিলিং হচ্ছে। তোমারও হয়ত হচ্ছে।

“তাই বলে কি একটু কথা বলা যেতো না
অভিমানির সুরে বলে তুলি।

” তিনটা বছরই তো কথা বলি নি। এর পর পুরো জীবনটা তোমার সাথে কথা বলবো। তুমি চাইলে সব সময় বলবো

“ভীষণ মিছ করেছি আপনাকে

” মি টু। বাট আমি ইচ্ছে করেই তোমার সাথে কন্টাক্ট করি নি। সরি

“ইটস ওকে

সায়ান তুলিকে জড়িয়ে ধরে বলে
” #ভালোবাসি

“আমিও খুব।

” চলো এক সাথে চাঁদ দেখবো

সায়ান তুলি বেলকনিতে যায়। সায়ান বেলকনিতে দোলনা বসিয়েছে। তুলি দোলনায় বসে সায়ানের কাঁধে মাথা রাখে। সায়ান তুলির হাত ধরে আছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে

“আজকের রাতটা খুব সুন্দর তাই না।

” হুমমম। ঠিক তিন বছর আগে আমাদের শেষ রাতটা যেমন ছিলো। কুকুর ডাকছে, ঝিঁঝি পোকারা ঝিঁ ঝিঁ করছে। রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই। চাঁদটাও থালার মতো হয়ে উঠেছে। আজ কিন্তু আমরা এখানেই ঘুমবো

“কিন্তু

” কোনো কথা নয়

“ওকে বউ

” ভালোবাসি

আমিও ভালোবাসি

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here