ভালোবাসি ২,৫
Tanisha Sultana (Writer)
তুলি রুমে গিয়ে লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে। সায়নের স্পর্শের কথা মনে পড়তেই তুলি লজ্জায় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে। কয়েকদিনেই সায়ান কেমন আপন হয়ে উঠেছে তুলির। ওর স্পর্শ কথা সব কিছুই ভালো লাগে। মারাত্মক ভালো লাগে। এই ছেলেটা আমারই।
তুলি বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। বাগানে তোহা আর জিসান ঝগড়া করছে। সায়ানও কারো সাথে কথা বলতে বলতে বেলকানিতে আসে। কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।
তুলি গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে এক মনে সায়ানকে দেখে যাচ্ছে।
আচ্ছা এটা কি ভালোবাসা না কি ভালো লাগা? তুলি কনফিউজড। যদিও ওর বয়সটা প্রেম করার বয়স না। তারপরও ভালো লাগা তো আর বয়স মেনে হয় না।
“সায়ান ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে সেটা আমি শিওর। কিন্তু আমিও কি ওনাকে ভালোবাসি? না কি এটা আমার এড্রাকশন? কি করে বুঝবো?
তুলি এসব ভাবছে। সায়ান কথা শেষ করে তুলির বেলকনির দিকে তাকিয়ে দেখে তুলি হা করে তাকিয়ে আছে। সায়ান একটু এগিয়ে আসে
” তুলি
সায়ানের ডাকে তুলি চমকে ওঠে।
“এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?
সায়ান ভ্রু কুচকে বলে।
” দেখছিলাম
তুলি ভাবালেশ ভাবে বলে
“কি দেখছিলিস?
” কিছু না
তুলি অন্য দিকে তাকিয়ে বলে।
“কিছু না হলেই ভালো।
সায়ান রুমে চলে যায়। তুলি এখনো ওইখানেই দাঁড়িয়ে আছে সায়ানের রুমের দিকে তাকিয়ে।
একটু ভেবে তুলি সায়ানের রুমে চলে যায়।
সায়ান উপুড় হয়ে শুয়ে ফোন দেখছিলো। কারো আসার আওয়াজ পেয়ে তাকায়।
” তুই
তুলি সায়ানের পাশে বসে। সায়ানও উঠে বসে।
“এমনিতেই আসলাম
” তুই আজকাল একটু বেশিই মিশিশ আমার সাথে। আমাকে ভয় পাস না। আমি ছুঁলেও কিছু বলিস না। কেনো বল তো?
“আমি নিজেও জানি না।
আকাশ গুরুম করে ওঠে।।ঠান্ডা বাতাশ বইছে। যখন তখন বৃষ্টি হবে। বিদ্যুৎ চমৎকাচ্ছে।
” চলো না ছাঁদে যায়
“বৃষ্টি আসবে
” প্লিজ প্লিজ প্লিজ
তুলি সায়ানের হাত ধরে ছাদে চলে যায়। ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া। ঘুটঘুটে অন্ধকার। মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ চমৎকানোর জন্য সব কিছু আলোকিত হয়ে যাচ্ছে আবার অন্ধকার। ছাঁদে ফুল গাছ গুলো অনোবরত দুলে যাচ্ছে। পাশের বাড়ি গুলোতেও আলো নিভে যায়। হয়ত কারেন্ট চলে গেছে। কারেন্টের এই একটা দোষ। মেঘ সাজলেও চলে যাবে।
তুলি আর সায়ান ছাঁদে শেষ প্রান্তে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে পরে। সায়ানের দৃষ্টি আকাশের দিকে আর তুলির দৃষ্টি সায়ানের দিকে। ইদানীং সায়ান আশেপাশে থাকলে তুলির আর কিছুর প্রয়োজন হয় না। সারাক্ষণ সায়ানের কথাই ভাবতে থাকে। ঘুমের ঘোরেও সায়ানকেই অনুভব করে। হয়ত এটা প্রেম নয়ত এড্রাকশন। যেটাই হোক। তুলি এই মুহূর্তে এসব ভাবতে চায় না।
মাঝে মধ্যে হালকা আলোতে সায়ানকে অপূর্ব লাগছে।
“পরিবেশটা খুব সুন্দর তাই না?
সায়ান আকাশের দিকে তাকিয়েই বলে।
তুলি সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে
” হয়ত
সায়ান তুলির দিকে তাকায়। এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তুলি সায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।
“চল বসি
তুলি আর সায়ান ছাঁদের দোলনায় বসে।
সায়ান নিজের দুই হাতের মধ্যে তুলির হাতটা নেয়।
” দেখ আমার হাত দুটো তোর হাতটাকে ঢেকে ফেলেছে।
তুলি সায়ানের কাঁধে মাথা রেখে বলে
“হুমমম
“জীবনে কখনোই ভেঙে পরা উচিৎ না। কষ্ট ডিপ্রেশন এগুলো আসবেই। তখন বুদ্ধি করে হাসি মুখে চলতে হয়। বুঝলি
” আমার লাইফে কখনোই দুঃখ বা ডিপ্রেশন আসবে না
“আর ইউ শিওর
” ইয়াহহ
ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়তে শুরু করে।
“তুলি চল যায় ভীজে যাবো তো
কে শোনে কার কথা। তুলি সায়ানের পাশ থেকে উঠে দুই হাত মেলে দাঁড়িয়ে পরে বৃষ্টিতে। সবাই বলে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে মনের কথা বললে না কি পূরণ হয়। তাই তুলি আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে
” আমি না সায়ান ভাইয়াকে ভালোবেসে ফেলেছি। যদি এটা লাভ না হয়ে এড্রাকশন হয় তবুও আমার সায়ান ভাইয়াকেই চায়। বিয়ে করতে চায় ওনাকে। আমার এই ইচ্ছে পূরন করে দিও
সায়ান এতোখন হাত দিয়ে বৃষ্টি আড়াল করার চেষ্টা করছিলো। তুলির দিকে চোখ আটকে যায় সায়ানের। মিষ্টি কালার টিশার্ট টা শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে। চুল গুলো ভিজে গেছে। গোলাপি ঠোঁটে ফোঁটা ফোঁটা পানি জমে আবার পরে যাচ্ছে। সায়ান উঠে এসে তুলির পেছনে দাঁড়ায়। তুলির কোমর জড়িয়ে চুলে মুখ ডোবায়। তুলি কেঁপে ওঠে। নরাচরা শুরু করে দেয়।
“ডোন্ট ডিস্টার্ব
সায়ানের মাতাল করা ভয়েজে তুলি স্টং হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। সায়ান তুলিকে নিজের দিকে ঘুরায়। তুলি চোখ বন্ধ করে আছে। সায়ান তুলির চোখের পাতায়,ঠোঁট ছোঁয়ায়। তুলি সায়ানের শার্ট খামচে ধরে। মুখের ওপর লেপ্টে থাকা এলোমেলো চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে দেয়।
” তাকা আমার দিকে
চোখ খোলার সাহস পাচ্ছে না তুলি।
“কি হলো তাকা না
তুলি চোখ খুলে। সায়ান তুলির কপালে কপাল ঠেকিয়ে আছে।
” তুলি
“তোকে আমি কিস করতে চায়?
” নাহহহ
“প্লিজ
” ননননননননাা
“প্লিজ
“তুমি আমাকে বি
সায়ান তুলির ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়। একটু পরেই ছেড়ে দুরে গিয়ে দাঁড়ায়। তুলি ঠোঁট মুছে নেয়।
অন্য দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়। একটু আগে কি হলো সেটা ভাবতেই কেমন কেমন লাগছে। হাত পা কাঁপছে।
” তুলি আমি
তুলি না শুনেই মুচকি হেসে দৌড়ে রুমে চলে যায়। সায়ান বোকা বনে যায়। এটা হওয়ার পরে এই মেয়ের মুচকি হাসি গেলো না।
তুলি রুমে এসে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। জিসান তোহা তুলির এই তুফানের গতিতে এসে ঝড়ের বেগে দরজা বন্ধ করা হা করে দেখছিলো।
“কি বেপার বল তো তোর বোনের?
” আমিও সেটাই ভাবছি। মনটা কেমন উরুউরু।
“জান তো
” ও আমার সাথে কথা বলে না
“কেনো?
” তখন ঝগড়া লাগছে
“তুই তো ঝগড়ুটে ঝগড়া তো লাগবেই
” কি বললি তুই আমারে?
“রিনা খানের মতো ফুলবি না। আমি ডরায়
” তুই আমারে রিনা খানের সাথে তুলনা করলি
“সর তো ঝগড়া করার মুড নাই
” তুই সব আমারও ঝগড়া করার মুড নাই
“হুররর
” কাল তো চলে যাবো তারপর দেখবো কার সাথে ঝগড়া করিস
চলে যাবো শুনে জিসান চুপ হয়ে যায়।
তুলি সাওয়ার অন করে হেসেই যাচ্ছে। সায়ানের ছোঁয়ার কথা মনে পরছে। ইসসস এটা কি হলো?
সায়ান রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নেয়। মা খেতে ডাকছে। সায়ান খেতে যায়। তুলিও আসে। তুলি এসে সায়ানের পাশে বসে। সায়নকে দেখেই তুলির কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে। তোহা আর জিসান গভীর মনোযোগ দিয়ে তুলিকে পর্যবেক্ষণ করছে। নানু এতো এতো কথা বলছে তার কিছুই তুলির কানে ঢুকছে না ওর মনোযোগ সায়ানের দিকে।
খাওয়ার শেষে নানু বলে
“কি বলেছি শুনেছিস তুলি?
” কি বলেছো?
“তোর বাপি ফোন দিছিলো তোদের কাল যেতে বলছে।
তুলি প্লেট রেখে উঠে দাঁড়ায়
” আমি আরও কিছুদিন থাকবো।
“কিন্তু
” থাকবো মানে থাকবো
তুলি রুমে চলে যায়। সায়ান মুচকি হাসে। পাগল একটা।
তোহা জিসান নানু আর মামি একটা ভুতের মুভি দেখছে ড্রয়িং রুমে টিভিতে। তুলি রুমে শুয়ে আছে। বৃষ্টিতে ভেজার ফলে ঠান্ডা লাগছে। ঘুম আসছে না আবার ওদের সাথে মুভি দেখতেও ইচ্ছে করছে না। ফোনটা হাতে নিলো তাতেও ভালো লাগছে না।
“এতো অল্প সময়ে কাউকে এতোটা ভালোবাসা যায়? হয়ত যায় না। আমি যদি এখন বাড়ি ফিরে যায় তাহলে সায়ানকে কি ভুলে যাবো? আমি ওনাকে ভুলতে চায় না। লাভ এট ফাস্ট সাইড। আমি ওনাকে কাল বলে দেবো ভালোবাসি। বলবোই। কাল আমাদের জীবনটা বদলে যাবে।
তুলি মনে মনে বলে। সায়ান তুলির রুমে আসে
” পাগল হইলি না কি একা একা হাসছিস?
সায়ান তুলির পাশে বসতে বসতে বলে। তুলি মাথাটা সায়ানের কোলে দেয়।
“মাথায় হাত বুলিয়ে দেন
” মামা বাড়ির আবদার
“হুমমম
সায়ান তুলির মাথায় হাত বুলায়। তুলি ঘুমিয়ে পরে।
চলবে