ভালোবাসি_প্রিয়তম,পর্ব_১৩,১৪
তাসনিম_তামান্না
পর্ব_১৩
???
স্তভদ্ধ হয়ে বসে আছে কুয়াশা কয়েক মুহুর্তে কি থেকে কি হয়ে গেলো ওর সাথে। ঘরটাতে পিনপতন নীরবতা কারোর মুখে কোনো কথা নাই। কুয়াশাকে মেঘ আর মেঘা ধরে আছে শান্ত হয়ে বসে আছে কুয়াশা ওর চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পরছে দেখে মনে হচ্ছে ওর দেখে প্রাণ নায়। তুষারেরও চুপ করে বসে আছে কি বলবে কি করবে কিছু বুঝতেছে না। কুয়াশার চোখে শুধু কিছুক্ষণ আগের কথা ভাসছে।
ফ্ল্যাসব্যাক
মেঘা তখন ওখানে বসে কান্না করতে থাকে। ওর জ্ঞান হতে দৌড়ে কলেজের দিকে আসে তখন তুষাররা কলেজ থেকে বের হচ্ছিল। মেঘাকে কান্নারত অবস্থায় দেখে ওরা থেমে যায়। মেঘা ওদের সামনে এসে বার বার কিছু বলতে চাইছে কিন্তু সব কথা ওর গলায় আটকে আসছে।
-কি হইছে এমন করে কান্না করছো কেনো (রুকাইয়া)
-ক কু কুয়া শা কে ও রা নি য়ে গেছে। পি প্লিজ ও কে বাঁচান (মেঘা)
মেঘার কথা শুনে ওরা ঘাবড়ে গেলো। তুষারের বুকটা কেঁপে উঠল মেঘার কথা শুনে তুষার ততক্ষণে হন্তদন্ত হয়ে বলল
-নিয়ে গেছে মানে কে নিয়ে গেছে? কোথায় নিয়ে গেছে? (তুষার)
-জা নি না ও দের কে আ মি দে খি নাই ওদের মুখে মাস্ক পড়া ছিলো কুয়াশাকে তুলে নিয়ে গেছে পি প্লিজ কু কুয়াশাকে নি য়ে আসুন (মেঘা)
তুষারের মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে গেছে। চোখে বাদ্ধ ভাঙা পানি আসতে চাইছে। অজানা ভয়ে ওর বুকের ভিতরে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলো। নিজেকে সামলিয়ে হাসানকে বলল
-হাসান লোকেশন ট্র্যাক কর আমাকে বলবি কোথায় নিয়ে গেছে (তুষার বাইক নিয়ে কুয়াশাকে যে দিয়ে নিয়ে গেছে সেদিকে গেলো)
হাসান তুষারকে বলে দিচ্ছে কোন দিকে যেতে হবে তুষারও সে দিকে যাচ্ছে। মিনিট পাঁচেক পর মেঘ বাহিরে গিয়ে মেঘাকে কান্নারত অবস্থায় দেখে ব্যস্থ হয়ে যায়। সবটাশুনে ওর হাত-পা কাপতে থাকে।
.
কুয়াশার চোখে পানির ছিটে পড়ায় ও পিটপিট করে তাকায় আলোর ঝলকানিতে আবার চোখ বন্ধ করে খোলে। সামনে রাজের সাথে আরো কয়েকটা ছেলে দাড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। ঘরের চারিপাশ দেখলো টিনের আর ও বিজলির ওপরে শুয়ে আছে ও উঠে বসে। কুয়াশা ভয়ে ভয়ে বলল
-কে? ককি চাই? (কুয়াশা)
-তোমাকে সোনা (ওদের মধ্যে একটা ছেলে কথাটি বলে বিশ্রি হাসি দিলো)
কুয়াশা ঘাবড়ে গিয়ে বলল
-ক ক কি বল ছেন এ সসব? আ মি বা ড়ি যা বো প্লিজ আ আ মাকে যে তে দিন (কুয়াশা)
-আমাদের কাজ হয়ে গেলেই তোমাকে যেতে দিবো সোনা বাবু
-তোরা বাইরে যা আমার কাজ সেরে নি তারপর তোরা যা ইচ্ছে করিস (রাজ)
-ওকে বস (বলে চলে গেলো ছেলে গুলো)
কুয়াশার ভয়ে চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পরছে বার বার আল্লাহকে ডেকে যাচ্ছে। রাজকে ওর দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ওর বুক ফেটে কান্না আসতে লাগলো তাহলেকি ওর গায়ে ধর্ষিতার টেগ লেগে যাবে সবাই ওর দিকে ঘৃণার চোখে তাকিয়ে দেখবে।
– না না কাছে আসবে না প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন, প্লিজ আমাকে যেতে দিন, আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি আপনি এমন করছেন কেনো (কুয়াশা কান্না করতে করতে বলল)
-তোর জন্য তুষারের কাছে সেদিন রাস্তায় সবার সামনে মার খেয়েছি তোর জন্য আমি আমার বাবা-মায়ের কাছে কথা শুনেছি এরপরও তোকে কেমন করে ছেড়ে দি বল? আমার মান সম্মানের নাড়া দিয়েছিস তুই! তোক কি করে মান সম্মান নিয়ে থাকতে দি বল? আমি তো মহান না। তাই তোকে জাগিয়েছি তোর সর্বনাশ তোকে দেখাবো বলে (রাজ)
রাজ এগিয়ে আসতে লাগলো কুয়াশা পিছাতে পিছাতে দেওয়ালের সাথে লেগে গেলো। কাঁদতে কাঁদতে বলল
-আমি আপনার বোনের মতো প্লিজ এমন করবেন না প্লিজ ছেড়ে দিন আমাকে আমি বাড়ি যাবো প্লিজ (কুয়াশা)
রাজ কুয়াশার কাঁধের জামা টান দিলো কুয়াশা ভয়ে জোরে কান্না করে দিলো। তখনি দরজা জোরে খুলে গেলো। রাজ কুয়াশা সে দিকে তাকালো তুষার রক্তবর্ণ চক্ষু নিয়ে দাড়িয়ে আছে। কুয়াশা যেনো আশার আলো ফিরে পেলো ছুটে গিয়ে তুষারকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো তুষারও কুয়াশাকে জড়িয়ে নিলো।
-তুই? তুই আবারও এখানে? এই তোরা কে কেথায় আছিস একে ধর (রাজ)
কিন্তু কারোর কোনো শব্দ নেই। তখন হাসান ভিতরে ডুকলো।
-তোদের এখানে ডুকতে দিলো কে? এই তোরা কই? (রাজ)
-তোর চেলারা পালিয়েছে (হাসান)
এবার রাজের মনে ভয় জমলো। এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো পালানোর পথ খুজতে লাগলো কারোর কিছু বোঝার আগে রাজ বাইরে দিকে দৌড় দিলো হাসানও ওর পিছনে গেলো।
-এই তুতুমি কাঁদছ কেনো? কিছু হইনি তো আমি আছি তো তোমার কিছু হতে দেবো না (তুষার)
কুয়াশা তুষারে “আমি আছি তো তোমার কিছু হতে দেবো না” কথাটা শুনে ভরসা পেলো। তাও তুষারকে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো। তখনি রুমে কয়েক জন ডুকলো ওদেরকে এমন অবস্থায় দেখে খারাপ ভাবলো ভাবারি কথা কুয়াশার কাঁধের কাছে জামা ছিঁড়া আর ওনারা বয়স্ক আগেদের দিনের মানুষ।
-বলছিলাম না এখানে ফস্টিনস্টি চলতাছে আমার কথা তো কেউ বিশ্বাস করতেছিলেন না দেখেন এবার নিজের চোখেই দেখেন
কুয়াশা আর তুষার ওদের কথা শুনে ঘাবড়ে গেলো। কিছু বুঝতে না পেড়ে তুষার বলল
-কি বলছেন আপনারা (তুষার)
-বুঝো না এহন, এহন তো বুঝবা,না, না বুঝার ভান ধরবা, বলবা আমরা ভুল বুঝতাছি এমন কত দেখলাম এর লেইগাইতো তোমরা আকাম-কুকাম কইরা পার পেয়ে যাও
-এসব কি বলছেন আপনারা ভুল বুঝছেন (তুষার)
-আমরা কোনো ভুল বুঝতাছি না এই কাজি ডাকো আকাম কুকাম করবে বিয়ে করবে না তা হতে দিবো না
কুয়াশা ভয়ে গুটিসুটি মেরে আছে তুষার ওদের বুঝানোর অনেক ট্রাই করলো অনেক ধমক দিলো কিন্তু কাজ হলো না ওদের বিয়েটা জোর করে দিয়ে দিলো।
হাসান রাজের পিছনে নেওয়ার সময় হাসানের ফোনে রুকাইয়া ফোন দিয়ে জায়গার নাম শুনে ওরাও আসে হাসানও ওদের সঙ্গে আসে। ওরা এসে এতো লোক দেখে হতভম্ব হয়ে যায় ওদের কাছে খারাপ কথা শুনে মেঘ রেগে গিয়ে বলল
-জাস্ট সাট আপ! আপনা কি মানুষ? আগে কোথায় ছিলেন যখন একটা মেয়েকে তুলে আনছিলো। তুষার কুয়াশাকে বাচিয়েছে কোনো ক্ষতি করেনি। আর আপনারা প্রথম থেকে কিছু না শুনে একটু দেখে বিচার করে নিলেন না জেনে না শুনে এতো বড় একটা ডিসিশন নিয়ে নিলেন ফাইজলামি পাইছেন (মেঘ)
সবার মুখটা চুপসে গেলো।
-ক্ষমা কইরেন ভাই আগেও অনেকে এমন করছে তাই আমরাও ভাবছি….
-ক্ষমা করলে কি সব ঠিক হয়ে যাবে আপনা ওদের পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে দিয়ে দিলেন? বিয়ে দিয়ে মহান কাজ করছে এখন ওদের কি হবে বিয়ে কি ছেলে খেলা হয়ে গেছে এখন (মেঘ)
ওরা আর কিছু বলার সাহস পেলো না আস্তে আস্তে বেরিয়ে গেলো। তখন থেকে কুয়াশা চুপচাপ বসে আছে আর চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পরছে।ওর মনে শুধু একটা কথায় আসছে “ভাইয়া ভাবিপু আমাকে ভুল বুঝবে না তো কষ্ট পাবে না তো আমাকে দূরে ঠেলে দিবে না তো ” এমন নানানভাবনা ওরমনে উঁকি দিচ্ছে। নিরবতা ভেঙে রুকাইয়া বলল
-মেঘ আব আমার মনে হয় ফ্যামেলিতে জানানো উচিত এতোবড় সত্যিটা লুকানো উচিত নয় (রুকাইয়া)
-হ্যাঁ আমিও সেটা ভাবছি (মেঘ)
ওদের কথায় কুয়াশার ভাবনায় ছেদ পড়লো।
– না না আমি ভাইয়া ভাবিপুকে কষ্ট দিতে পারবো না ওরা আমাকে ভুল বুঝবে এই দুটো মানুষকে আমি কখনোই কষ্ট দিতে পারবো না মরে গেলোও না কখনো তুমি বলবে না ভাইয়াকে ভাইয়ার আশা তুমি একথা বলে ভেঙে দিবে না আর কিসের বিয়ে হ্যাঁ আমি এ বিয়ে মানি না (কুয়াশা কথাটা বলে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো)
তুষার স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কুয়াশার দিকে “আমি এ বিয়ে মানি না” কথাটা শুনে ওর খুব কষ্ট হচ্ছে।
-তুই পাগলামি করছিস কেনো ওরা ভুল বুঝবে না তুই এসব কেনো ভাবছিস (মেঘ)
-না না তুমি বলবে না সেদিন দেখনি আন্টিকে মাথা উঁচু করে কথা বলছিলো এসব কেউ জানলে ভাইয়ার মাথা নিচু হয়ে যাবে আমি কখনোই সেটা হতে দিবো না তুমি বলবে না ভাইয়াকে কেউ বলবে না (কুয়াশা)
-তুই…আচ্ছা ঠিক আছে বলবো না তুই ঠান্ডা হ চল বাসায় চল (মেঘ)
#চলবে
#tasnim_tamanna
[ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন]
#তাসনিম_তামান্না
#ভালোবাসি_প্রিয়তম
#পর্ব_১৪
???
সেদিনের পর থেকে কুয়াশা কেমন যেনো হয়ে গেছে। সারাদিন রুমের দরজা বন্ধ করে থাকে। আগের মতো হাসে না খেলে না ফাজলামি করে না ঠিক মতো খাই না। কুশান, পাখি এগুলো খেয়াল করে অনেক বার ওদের জিজ্ঞেসা করেছে কিছু হইছে কি না কিন্তু বার বার ওরা কথাটা এরিয়ে গিয়েছে।
-দেখ আমার মন কিন্তু মানছে না কুয়াশার কিছু হইছে তুমি কিছু কর প্লিজ কুয়াশাকে এভাবে মানায় না আমার আগের কুয়াশাকে ফিরিয়ে দাও (পাখি)
কুশান সন্ধ্যায় লেপটপে কাজ করছিলো তখন পাখি কথা গুলো বলতে বলতে কেঁদে দিলো। কুশান একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলল
-আমি জানি না কি হইছে আমারও কুয়াশা শুকনো মুখ, আগের মতো স্বাভাবিক দৃষ্টি দেই না ও ওর দৃষ্টিতে থাকে ভয় (কুশান)
-ও ও ওর সা থে খা রা প কিছু হইনি তো (পাখি)
পাখির কথা শুনে কুশানের বুকটা ধক করে উঠলো
-ককি বলছো তুতুমি এমন কিছুই হইনি (কুশান)
-আমার মন বলছে,মেঘ, মেঘা ওরা জানে কুয়াশার কি হইছে কিন্তু লুকাছে (পাখি)
-হ্যাঁ আমারও তাই মনে হয় মেঘ বাসায় আসলে মেঘ আর মেঘাকে রুমে আসতে বলো কুয়াশা যেনো না জানে (কুশান)
-আচ্ছা (পাখি)
.
-সত্যি করে বল তো কি হইছে কুয়াশার তোদের আজ কাল কেমন অচেনা লাগছে তোদেরকে এমন ভালো লাগছে না (কুশান)
মেঘ আর মেঘা রুমে আসতেই কুশান কথাটা শুনলো। মেঘ আমতা আমতা করে বলল
-কি সব বলছো ভাইয়া কাজের চাপ বেশি তাই আর কি (মেঘ)
-একদম মিথ্যা বলবি না সত্যি টা শুনতে চাইছি আমি। কি হইছে সেটা বল সবসময় উদাসীন থাকিস কেনো তোরা কোনো প্রবলেম হলে বল আমাকে আমি স্লভ করবো (কুশান)
-আমার মন বলছে তোরা কিছু লুকাছিস বল না কি লুকাছিস (পাখি)
পাখির কাতর কন্ঠে বলল। মেঘা ওদের এমন প্রশ্নে বেশ অনেকটাই ঘাবড়ে গেছে কিছু বলছে না। মেঘ একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল
-আমরা কি লুকাবো আমরা কিছু লুকাছি না (মেঘ)
-আমি সত্যিটা শুনতে চাইছি মেঘ আমাকে রাগাস না (কুশান)
মেঘ জানে শান্ত মানুষ রেগে গেলে তার মাথার ঠিক থাকে না কুশানও ঠিক তেমনই। মেঘ কুশানের হাত মুঠি করে ধরে কপালে ঠেকিয়ে একটা শ্বাস নিয়ে বলল
-ভাইয়া আমি এখন যেটা বলবো সেটা সম্পূর্ণ শুনবি তার আগে কোনো কথা বলবি না আমি জানি এটাতে তুই কষ্ট পাবি কিন্তু এটাতে আমাদের কোনো হাত নেই আমরা পরিস্থিতির শিকার প্লিজ ভাইয়া ক্ষমা করে দিস (মেঘ)
মেঘের কথা শুনে কুশান আর পাখির মনে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। কুশান নিজেকে সামলিয়ে বলল
-কি কথা বল (কুশান)
-ভাইয়া কুয়াশা….(কলেজের ফাস্টদিন থেকে সব ঘটনা বলল মেঘ)
সব কথা শুনে কুশান আর পাখি পিচলেস হয়ে গেছে কি থেকে কি হয়ে গেছে। কুশান আর পাখির চোখে পানি চিকচিক করছে মেয়েটার ওপর দিয়ে কত কি গিয়েছে আর ওদের কে কিছু বুঝতে দিলো না সেটা ভেবে।
-ভাইয়া আমি ছেলেটার খোঁজ নিয়ে যতদূর জেনেছি ভালো। আমার সাথেই একই কলেজে পড়ে ফ্যামিলির কথা জানি না আমি খোঁজ লাগিয়েছি (মেঘ)
-বিয়ে যেহেতু ওদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয়েছে তাই এ বিয়ের কোনো মানে হয় না (কুশান)
-মানে এসব কি উল্টো পাল্টা বকছো তুমি মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে তোমার (পাখি)
-এখানে খারাপ কি বললাম আমি (কুশান)
-জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে এগুলো আল্লাহর হুকুমে হয় এর মধ্যে তুমি এসব কি বলছো ছেলেটাকে দেখো শুনো ওর ফ্যামিলির সাথে কথা বল (পাখি)
-ছেলেটা যদি আমার খারাপ হয়, বোনকে কষ্ট দেই না না… (কুশান)
-ভাইয়া ছেলেটা খারাপ না ছেলেটা ভালো আমি খোঁজ নিয়েছি (মেঘ)
-ছেলেটার নম্বর আছে তোদের কাছে (পাখি)
-হ্যাঁ আছে সেদিন আসার সময় নিয়ে ছিলাম (মেঘ)
-মানে তুমি ঔ ছেলের নম্বর নিয়ে কি করবা (কুশান)
-আচ্ছা তুই ছেলেটাকে ফোন দিয়ে কাল আমাদের বাড়িতে আসতে বল (পাখি)
-কি বলছো এসব (কুশান)
-তোরা যা আমি তোদের ভাইয়ার সাথে কথা বলবো (পাখি)
মেঘ আর মেঘা চলে গেলো।
-শোনো মাথা ঠান্ডা করো আমার কথা শুনো দেখো তুমি যেটা ভাবছো সেটা নাও হতে পারে ছেলেটা তো ভালোও হতে পারে আর মেঘ তো খবর নিয়েছেই। বিয়ে টা তো হয়ে গেছে এখন আমাদের কিছু করার নাই ইসলামি শরিয়তের বিয়ে হয়েছে ওদের একটু মাথা ঠান্ডা করে বোঝার চেষ্টা করো। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। ছেলেটা কাল আসলে তার সাথে কথা বলে দেখো ভালো কি খারাপ তারপর ডিসিশন নিও কি করবা। কুয়াশার দিকটাও তো দেখতে হবে কতটা কষ্ট পাচ্ছে ও কতটা ভালোবাসে ও আমাদেরকে (পাখি)
কুশান মন দিয়ে পাখির কথা গুলো শুনলো তারপর কিছু একটা ভেবে উঠে গেলো। পাখিও একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে কুশানের পিছনে পিছনে গেলো। কুশান গিয়ে কুয়াশা দরজা ধাক্কা দেই। কুয়াশা ডুলুডুলু পায়ে এসে দরজা খুলে দিয়ে কুশানকে দেখে ভয়,অপরাধ বোধ, হচ্ছে ওর। মাথা নিচু করে বলল
-কিকিছু বলবে ভাইয়া? (কুয়াশা)
-হ্যাঁ ভিতরে চল (কুশান)
কুশানের গম্ভীর কণ্ঠ শুনে আরো ভয় হতে লাগলো কুয়াশার। কুশান কুয়াশার বেডে গিয়ে বসে কুয়াশাও কুশানের পাশে বসে।
-আমি কি তোর কেউ না? (কুশান)
কুশান গম্ভীর কণ্ঠে অভিমান নিয়ে বলল কথাটা। কুয়াশা থমকালো কথাটা শুনে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল।
-এসব কি বলছো ভাইয়া তুমি? তুমি জানো না তোমাকে আমি কত ভালোবাসি (কথাটা বলে জড়িয়ে ধরলো কুয়াশা কুশানকে)
কুশানের গম্ভীর কণ্ঠে অভিমান নিয়ে কথা কুয়াশা স্পষ্ট বোঝতে পারছে তার ভাইকে ও চিনে। ভাইয়ের গম্ভীর কণ্ঠে, রাগী চোখে তাকিয়ে কথা বললে কুয়াশা কেঁদে দেই। প্রিয়জন দের থেকে একটু কিছু পাওয়া সেটা সুখ,দুঃখ হক বা অন্য কিছু অনেক বড় হয় সেটা।
-তাহলে আমার কাছ থেকে লুকালি কেন ভাইয়া কি এতোই খারাপ? ভাইয়ার সাথে কি একটুও কিছু সেয়ার করা যায় না? (কুশান)
কুয়াশা ছলছল চোখে তাকালো কুশানের দিকে কুয়াশার আর বুঝতে বাকি রইলো না তার ভাই জেনে গেছে আর তার কাছ থেকে লুকানোয় কষ্ট পেয়েছে।
-ভাইয়া বিশ্বাস করো আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নি প্লিজ কষ্ট পেওনা তাহলে আমারও কষ্ট হয় (কুয়াশা)
-এই পাগলী কাঁদছিস কেনো আমি আছি তো সব ঠিক করে দিবো এখানে তো তোর কোনো দোষ নাই তাহলে কাঁদছিস কেনো (কুশান)
-ভাইয়া তুমি কষ্ট পাইছো। (কুয়াশা)
-না কান্না থামা কি অবস্থা করেছিস দেখেছিস তুই পেত্নী লাগছে তোকে (কুশান)
পাখি কুশানকে কুয়াশার রুমে আসতে দেখে খাবার আনতে গেছিলো কুয়াশার জন্য রুমে ডুকতে ডুকতে বলল
-থাক কান্না কাটি অনেক হইছে এখন এসব বাদ দিয়ে খেয়ে নাও (পাখি)
-সরি ভাবিপু (কুয়াশা)
-এই এভাবে মাথা নিচু করে আছিস কেনো কোনো ভুল হইনি তোর (পাখি)
কুয়াশা কিছু বললো না কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো চোখ দিয়ে। পাখি ভাত মাখিয়ে একলকমা কুয়শার মুখের সামনে ধরলো। কুয়াশা পাখির দিকে তাকাতেই পাখি খেতে ইশারা করলো। কুয়াশাও ছোট বাচ্চাদের মতো করে খেতে লাগলো। খাওয়া শেষে কুশান কুয়াশার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।
☆☆☆
সেদিনের পর তুষার কলেজে গিয়েছে ঠিকই কিন্তু মন বসাতে পারেনি কোনো কাজেই। কাজ করতে গেলেই কুয়াশার মুখটা বার বার ভেসে উঠছে, বার বার কুয়াশার কথাগুলো কানে বাজছে। তুষার বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট খাচ্ছে। তখনই সাদাফ, হাসান, রিদ আসলো।
-কি রে ব্যাটা বউয়ের দুঃখের দেবদাস হয়ে গেলি নাকি (রিদ)
তুষার রিদের দিকে রাগি চোখে তাকালো রিদ ও বুঝতে পাওলো কি বলে ফেলেছে।
-তোরা এখন এখানে কেনো (তুষার)
-ভাবলাম অনেকদিন হলো রাতে চারজন মিলে আড্ডা দেওয়া হয় না তাই আসলাম (সাদাফ)
-ওহ (তুষার ছোট করে উত্তর দিলো)
-মন খারাপ তোর (হাসান)
-আরে না (তুষার)
-কুয়াশাকে ভালোবাসিস? (রিদ)
রিদের প্রশ্নে তুষার থমকে গেলো,নিশ্বাস আটকে গেলো ওর বুকে ধুকপুক করছে ওর। নিজেকে সামলিয়ে কৃত্রিম রাগ নিয়ে বলল
-কি যাতা বলছিস তুই (তুষার)
-রিদ তো ঠিকই বলছে ভুল কি বলল ও এবার এন্সার দে (হাসান)
তুষার কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না ওর কেমন অস্থির অস্থির লাগছে।
-কি হলো বল? (সাদাফ)
-চুপ করে আছিস কেনো বল?(রিদ)
-জানি না জানি না আমি ওকে না দেখলে কেমন খালি খালি লাগছে বুকে শুন্যতা অনুভব হয়, ওসামনে থাকলে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, ওর চোখে পানি দেখলে আমার কষ্ট হয় আবার এক মুগ্ধতা ছেয়ে যায় ওর মুখটাই, ওর বাচ্চামো মুখটা নিঃপাপ লাগে ওর বাচ্চাদের মতো কথা বলা খিলখিল করে হাসা সব সব কিছু যেনো খুব ভালো লাগে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয় (তুষার)
বলতে বলতে তুষার কুয়াশার মধ্যে যেনো ডুবে গেলো। ওদের তিনজনের মুখে বিজয়ের হাসি ফুটলো। তুষারের কাঁধে চাপড় মারলো আর বলল
-মামা তুই তো ফেঁসে গেছিস (রিদ)
ওদের কথায় তুষারের ধেন ভাঙলো কি বলে ফেলেছে ওর নিজের অজান্তেই।
-মানে (তুষার)
-তুই ভালোবেসে ফেলেছিস কুয়াশাকে (সাদাফ)
-না না এটা কখনোই পসিবল না আমি কখনো কাউকে ভালোবাসবো না ভালোবাসলে সবাই ছেড়ে চলে যায় (তুষার)
-কে বলল ছেড়ে চলে যায় ভালোবাসা একটা ভালো দিক আছে সবাই ছেড়ে যায় না যারা ছেড়ে যায় তারা কখনোই ভালোবাসেনি। ভালোবাসা মানুষকে নতুন ভাবে বাঁচতে শেখায় ভালোবাসা এমন একটা অনুভূতি যা সবার প্রতি আসে না। (সাদাফ)
-তার চেয়ে বড় কথা, তুই কুয়াশাকে ভালোবেসে ফেলেছিস ভালোবাসা মানুষের সব কিছুই ভালো লাগে (রিদ)
-একদমই তাই নিজের ফিলিংস গুলো বুঝতে শেখ তুষার এভাবে অবুজ হয়ে থাকিস না হারিয়ে গেলে কিন্তু পাবি না। আগলে রাখ (হাসান)
তুষার ওদের কথাগুলো শুনে নিজের ধরণাগুলো মিলাতে লাগলো। কিছু একটা ভেবে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটলো। তখনি তুষারের ফোনে ফোন আসলো।তুষার ফোন নিয়ে দেখলো আননোনম্বর রিসিভ করে হ্যালো বলল
-কেমন আছো (মেঘ)
-ভালো আপনি কে (তুষার)
-মেঘ এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে আমাকে (মেঘ)
-ওহ তুমি আসলে আমি জানতাম না এটা তোমার নম্বর (তুষার)
-হ্যাঁ বুঝতে পারছি। একটা কথা বলার ছিলো (মেঘ)
-হ্যাঁ বলো (তুষার)
-তুমি কি কাল ফ্রি আছো? (মেঘ)
-হ্যাঁ কেনো (তুষার)
-আমাদের বাসায় আসো তাহলে ভাইয়া তোমার সাথে কথা বলতে চাইছে (মেঘ)
-এ্যাঁ (তুষার)
-ভয় পেলে নাকি (মেঘ)
-আব না ওনি কিছু বলেন নি (তুষার)
-না কি বলবে। তুমি কি তাহলে আসছো কাল (মেঘ)
-আব হ্যাঁ (তুষার)
-আচ্ছা তাহলে এসএমএসে এড্রেস পাঠিয়ে দিচ্ছি (মেঘ)
-আচ্ছা (তুষার)
-রাখি কাল দেখা হচ্ছে (মেঘ)
-হ্যাঁ (তুষার)
ফোন কেটে দিয়ে অবাক+খুশি হলো কুয়াশাকে দেখতে পাবে ভেবে।
-কিরে কে ফোন দিছিলো (রিদ)
-মেঘ (তুষার)
-কি বললো (হাসান)
-কাল ওদের বাসায় যেতে বলছে (তুষার)
কিহহহহহ!! খুশিতে ওরা চিল্লিয়ে উঠলো।
-এভাবে চিৎকার করছিস কেনো (তুষার)
-মেনে নিয়েছে মনে হয় ওদের বাড়ি থেকে (সাদাফ)
-জানি না কাল গেলে বুঝতে পারবো (তুষার)
চলবে