ভালোবাসি_প্রিয়তম,পর্ব_১৭
তাসনিম_তামান্না
???
হসপিটালের করিডরে বসে আছে তুষার, পাখি,কুশান,তুতুল, তুতুলের মা তিশা। কুশ আর শানকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে পাখি ওরা দুজন অনেক ভয় পেয়ে আছে এইটুকু বয়সে ওদের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেলো। কি থেকে কি হয়ে গেলো। তুষার আর কুশান পাথর হয়ে গেছে। পাখি পাগলের মতো কান্না করছে ওদেরকে জড়িয়ে ধরে। মেঘা বার বার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। তুতুল চুপচাপ বসে চোখের পানি ফেলছে। অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কুয়াশাকে। মেঘ আইসিইউতে চিকিৎসারত অবস্থায় আছে। সবার ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে কে কাকে সামলাবে কাছের প্রিয় মানুষ গুলো যে মৃত্যুর সাথে লড়াই করলে চলেছে প্রতিটা মুহুর্ত।
#ফ্ল্যাসব্যাক
সব কিছু ঠিকঠাকই ছিলো। মেঘ একটা কেস স্লভ করতে ছিলো। রিজু ছেলেটা ৭টা মেয়েদের ধর্ষণ করে মেরে ফেলছে। রিজু ছেলেটার বাবা রিজভি সাহেব বড় ব্যবসায়ী তিনি ছেলের কুকর্ম ঢাকতে, নিজের মান সম্মান বাচাতে মেঘকে ঘুষ দিতে চেয়ে ছিলো কিন্তু মেঘ রাজি না হওয়ায় বাসায় আসার সময় মেঘকে আটক করে। মেঘ তুতুলের সাথে ফোনে কথা বলছিলো হঠাৎ গাড়ির সামনে কয়েকটা ছেলেকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে মেঘ গাড়ি থেকে নেমে বলল
-কি সমস্যা ভাই রাস্তা বন্ধ করে দাড়িয়ে আছেন কেনো (মেঘ)
ছেলেগুলো কোনো কথা না বলে মেঘকে এসে মারতে থাকে মেঘ হঠাৎ আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিলো না। বুঝে ওঠার আগে ওরা মেঘের অবস্থা খারাপ করে দেই আর ও একা এতো গুলো ছেলের সাথে পেড়ে উঠতে পারে নি। মেঘ মার খেতে খেতে আদমরা হয়ে যায়। ফোনের ওপাশে তুতুল চিৎকার করে কান্না করে যাচ্ছে। মেঘের চোখ আস্তে আস্তে বন্ধ হওয়ার আগে একটা কালো কোট পড়া লোক পিস্তল হাতে ওর দিকে এগিয়ে এসে বিকট হাসি দিয়ে বলল
-আমার মান সম্মানের জন্য আমি সব কিছু করতে পারি তোকে মারতেও পারি (রিজভি সাহেব)
মেঘ ব্যাথায় কথা বলতে পারছে না। রিজভি সাহেব বন্ধুক দিয়ে দুবার বুকে গুলি করেন। রাতের বেলা রাস্তা ফাঁকা কেউ না থাকায় মেঘের করুন দসা কেউই দেখতে পেলো না কিন্তু ফোনে ওপাশের মানবী বুক ভরা ভালোবাসা নিয়ে কান্না করতে করতে ডাকতেই আছে কিন্তু কারোর কোনো সারাশব্দ নেই। তুতুল কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারায়।
মেঘের পাশ দিয়ে কয়েকটা ছেলে যাচ্ছিলো। তাদের মধ্যে একটা ছেলে মেঘকে চিনে মেঘ অনেক ভাবে তাকে সাহায্য করেছে। মেঘের এমন অবস্থা দেখে ছেলে গুলো মেঘকে হসপিটাল নিয়ে যায়। মেঘের বাড়িতে ফোন দিয়ে জানায়। বাসায় মেঘের এমন অবস্থা শুনে সবার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। কুশান নিজেকে শক্ত রেখে সবাই মিলে হসপিটালে যায়। তখন মেঘ অপারেশন থিয়েটারে ছিলো। মেঘের প্রচুর রক্ত বের হওয়ায় রক্ত লেগেছে তিন ব্যাগ। দুব্যাগ ব্লাড ব্যাক থেকে নিয়েছে আর ব্লাড ব্যাকে আর রক্ত না থাকায় কুয়াশা রক্ত দিয়েছে। মেঘ আর কুয়াশার বি- তাই আর সমস্যা হয়নি। দীর্ঘ চার ঘন্টা অপারেশনের পর। ডক্টর বের হয়।
-ডক্টর আমার ভাই মে মেঘ কেমন আছে ও এখন? (কুশান)
-দেখুন আমরা আমাদের সবটা দিয়ে চেষ্টা করেছি গুলি টা বের করেছি ৪৮ ঘন্টা মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে আমরা কিছু বলতে পারছি না। আল্লাহকে ডাকুন (ডক্টর)
ওরা সবাই কান্না করছে। হসপিটালের অনেক তাদের পরিবারের বন্ধন দেখে মুগ্ধ হয়ে আছে। অনেকে তো বলছে এমন পরিবারও হয়?
জ্ঞান ফিরতেই তুতুল মেঘকে ফোন দেই কিন্তু ফোন ধরে না, না পেরে মেঘের বাড়িতে ফোন দেই একজন মেড ফোন ধরে সব বলে হসপিটালের ঠিকানা দেই। তুতুল তখনি হসপিটালের উদ্দেশ্য রওয়া হয় সাথে ওর মা (তিশা)। হসপিটালে এসে মেঘের অবস্থা জেনে আরো ভেঙে পড়ে।
নির্ঘুম একটা রাত কাটে সবার সারারাত কেউই চোখের পাতা এক করতে পারেনি কুশ আর শান ঘুমের মধ্যে ফুপিয়ে কেঁদে উঠছে।ওরা ছোট হলেও ওদের বাবাইকে ভালো বাসে বুঝতে পারছে তাদের বাবাই অসুস্থ তাই আর কিছু বলছে না নিঃশব্দে কান্না করছে।
সকালে কুশান ওদেরকে বাসায় পাঠাতে চাইলে কেউই যেতে চাই না কিন্তু কুশানের কাছে হার মেনে মেঘা,কুয়াশা,কুশ আর শানকে বাসায় যেতে হয় কিন্তু পাখি হার মানে নি ও যাবে না মানে যাবেই না।
বাসায় এসে কুশ আর শানকে ফ্রেশ করিয়ে একটু খাইয়ে দেই। কুয়াশা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে কুশ আর শান এলো মেলো হয়ে শুয়ে আছে। ওদের ঠিক করে শুয়িয়ে দিয়ে ওর রুমে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই নিচ থেকে শব্দ হতেই হুরমুরিয়ে ওঠে কুয়াশা ভয় পেয়ে নিচে গিয়ে কালো কালারের পোশাক পড়া লোক দেখে ঘাবড়ে যায় মেঘা তখন শাওয়ার নিচ্ছিলো। কুয়াশা বলল
-কারা আপনারা এখানে কি করছে (কুয়াশা)
লোকগুলো কিছু না বলে বাসার জিনিস পত্র ভাঙতে থাকে। ভাঙার শব্দে কুশ আর শানের ঘুম ভেঙে যায়। ওরা রুম থেকে বের হতেই দুটো লোক ওদের কোলে নিয়ে বাহিরের দিয়ে হাটা দেই। কুশ আর শান ভয় পেয়ে কান্না করে দেই। কুয়াশা বাঁধা দিয়ে বলল
-এই কে আপনারা ওদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ওদেরকে দিন বলছি (কুয়াশা)
-এই এটাকে কেউ ধর। নাকি এটাকেও বস নিতে বলছে (ওদের মধ্যে একটা ছেলে কথাটি কুয়াশার উদ্দেশ্য করে বলল)
-না না বস তো শুধু দুইটা ছোট ছেলেকে নিতে বলছে (অন্য ছেলেটি)
-কি সব বলছে আপনারা প্লিজ ওদেরকে ছেড়ে দিন (কুয়াশা)
-এই মেয়ে সামনে থেকে সরো আমাদেরকে যেতে দাও
-ওদের কে কোথাও নিয়ে যাবেন না প্লিজ ওদের আমার কাছে দিন প্লিজ (কান্না করতে করতে বলল কুয়াশা)
লোকগুলো কুশ আর শানকে দিবে না তো দিবে না কুয়াশা ও কম না কুশ আর শান কে ওদের সাথে যেতে দিবে না। একপর্যায়ে ধস্তাধস্তি লেগে যায় ওদের মধ্যে মেঘাও এর মধ্যে এসে গিয়েছে। একটা লোক শানের গলায় ছুরি ধরে বলল
-আমাদেরকে যেতে দাও না হলে এই ছেলেকে এখানেই মেরে দিবো
কুয়াশা ঘাবড়ে গিয়ে কি করবে বুঝতে না পেড়ে ধারালো ছুরি হাত দিয়ে টান দিয়ে নিয়ে নেই তাতে হাত কেটে গেলেও ওর সে দিকে খেয়াল নাই। মেঘার রক্তে ফবিয়া থাকায় রক্ত দেখে ওর মাথা চক্কর দিতে লাগলো। কুয়াশার কাজে ছেলেগুলো ক্ষেপে যায় এবার জোর করে বের হতে গেলেই কুয়াশা হাতে থাকা ছুরিটা একটা লোকের পিঠে ডুকিয়ে দেই।
-ওদেরকে ছেড়ে দে না হলে তোদের সব কইটাকে খুন করবো (কুয়াশার পাগলের মতো অবস্থা)
লোকগুলো ভয় পাই ছোট পুটি একটা মেয়েকে ওরা ভয় পাচ্ছে। ওরা কুশ আর শান কে কোল থেকে নামিয়ে দেই ওরা মেঘার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। মেঘার জড়িয়ে ধরে। হঠাৎই পিছন থেকে একটা লোক এসে কুয়াশার মাথায় বারি মারলো কুয়াশার শরীর এমনি তেই কাল রক্ত দেওয়ায় দূর্বল তার ওপর মাথায় বারি সব সয্য করতে না পেরে দপ করে পড়ে গেলো মাঠিতে মেঘা,কুশ,শান চিৎকার করে উঠলো। ওরা চারজন আর লোকগুলো ছাড়া বাসায় আর কেউ নেই দারওয়ান আর বাড়ির মেড গুলোকে আগেই সরিয়ে দিয়েছে।
তুষার এসে কুয়াশার মাথায় বারি মারা দেখে ওর পৃথিবী থমকে গেছে। পা যেনো তার চলছে না। লোকগুলোর দিকে রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকাই লোকগুলো তুষারের চোখ দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়। তুষার ওদিকে খেয়াল না করে কুয়াশার কাছে যায়।
-এই এই কুয়াশা চোখ খুলো এই দেখো আমি এসেছি এই কুয়াশা দেখো আমি তোমার কিছু হতে দিবো না কিছু না (তুষার)
তুষার কুয়াশাকে কোলে করে গাড়িতে ওঠায় পিছন পিছন মেঘা, কুশ,শান ও আসে। মেঘা পিছনে কুয়াশার মাথা কোলে নিয়ে বসে আছে।
-ভা ইয়া………এ ই হস পিটালে নিয়ে চলুন ওখানে সবাই আছে (মেঘা)
কুশ আর শান ফ্রন সিটে বসে আছে। ওরা ঠোঁট ফুলিয়ে নিঃশব্দে কান্না করছে। তুষার ওদেরকে কাছে টেনে কাঁপা গলায় বলল
-কাঁ দে ন না সোনা (তুষার)
মেঘা কুয়াশার রক্ত দেখে সেন্সলেস হয়ে যায় গাড়িতেই।
তুষার কুয়াশাকে গাড়ি থেকে কোলে নিয়ে নামিয়ে মেঘাকে ডাকলো কিন্তু মেঘা অজ্ঞান কি করবে ভেবে পাচ্ছে না তুষার। দূরে কুশানকে দেখ পেয়ে ডাক দেই।
-কুশান ভাইয়া (তুষার)
কুশান ঔষধ নিতে আসছিলো। তুষারের ডাক শুনে তাকাতেই কুশানের বুক কেঁপে উঠল কুয়াশার অবস্থা দেখে একপ্রকার দৌড়ে এসে উতেজিত হয়ে বলল
-ককি হ য়েছে ও ওর মাথায় রক্ত (কুশান)
-ভাইয়া আপনি ওদেরকে নিয়ে আসুন কুয়াশাকে নিয়ে যাচ্ছি।
#বর্তমান
ডক্টরকে দেখে তুষার কুশান এগিয়ে গেলো।
-ডক্টর আমার বোন (কুশান)
-সি ইজ আউট ওফ ডেঞ্জার (ডক্টর)
-আলহামদুলিল্লাহ (তুষার)
চলবে