ভালোবাসি_প্রিয়তম,পর্ব_১৯,২০

0
1522

ভালোবাসি_প্রিয়তম,পর্ব_১৯,২০
তাসনিম_তামান্না
পর্ব_১৯

???

সকাল ১১.৩৬ বাজে হসপিটালের বেডে শুয়ে কুয়াশা, কুশ আর শান বকবক করছে। তুষার বসে ফোন টিপছে। মেঘ ঔষধের ডোজে ঘুমিয়ে আছে। মেঘা ঘুরঘুর করছে একবার এরুম তো একবার ওরুম বসতে বলেও বসছে না। সকালে একবার তুষার ১ ঘন্টার জন্য বাড়িতে গিয়েছিলো সাওয়ার নিয়ে আবার এসেছে এককথায় কুয়াশাকে একা ছাড়তে নারাজ।

আজ সকাল সকাল তুষারের ফেন্ডরা কুয়াশার ফেন্ডরা এসে দেখা করে গেছে। পাখি ওদের জন্য রান্না করে আনতে গেছে কুশ আর শানকেও নিয়ে যেতে চাইছিলো কিন্তু ওরা যায় নি। কুশান অফিসে জরুরি মিটিং থাকায় অনিচ্ছা থাকার পরও যেতে হলো।

-সোনা বাবাইরা কি কাল ভয় পাইছিলে (কুয়াশা)

-উহুম আমলা তো সাহসী (কুশ)

-তাই না (কুয়াশা)

-হ্যাঁ আমলা তোমাল মতো ভিভিভি (শান)

-ভীতু (তুষার)

-হ্যাঁ ওটা না (শান)

-ঠিক ঠিক (মেঘা)

-কি বললি আমি ভীতু দাঁড়া আজ তোদের (কুয়াশা)

কুয়াশা ওদের ধরতে গেলেই ওরা বেড থেকে উঠে মেঘার সাথে নিয়ে কেবিন থেকে কুয়াশা ব্যাথা পেয়ে ‘আহ’ করে মৃদু আওয়াজ করলো। তুষার সেটা দেখে বলল

-ব্যাথা পাইছো খুব ভালো হইছে (তুষার)

-কিহ? আমি ব্যাথা পাইছি বলে আপনি খুশি হচ্ছেন (কুয়াশা)

-তা না তো কি করতাম কান্না করতাম হাহ ঠেকা পড়ে নাই সারাদিন ক্যাঙ্গারুর মতো লাফাবা এটাই ঠিক আছে (তুষার)

-কিহ? আমি ক্যাঙ্গারু (কুয়াশা)

-গুড তাহলে তুমি শিকার করলে তুমি ক্যাঙ্গারু (তুষার)

কুয়াশা বোকা বনে গেলো তুষার ওকে কথার জালে ফাঁসিয়েছে বুঝতে পেরে বলল

-এটা মটেও ঠিক না (কুয়াশা)

আর কিছু বলার আগে কেবিনের দরজা ঠেলে ভিতরে আসলো তুতুলের মা (তিশা)। উনি হাসিমুখে এসে কুয়াশার পাশে দাঁড়ালো। তুষারের মুখের রংটা মুহুর্তেই পাল্টে গেলো

-কেমন আছো আন্টি (কুয়াশা)

-ভালো আছি তুমি কেমন আছো মামনি (তিশা)

-আমিও ভালো আছি আন্টি তুমি দাড়িয়ে আছো কেনো বসো আন্টি (কুয়াশা)

তিশা বসে বলল

-এখনো আমাকে আন্টি ডাকবি (তিশা)

কুয়াশা কিছু বুঝতে না পেরে বলল

-মানে আন্টি ছাড়া কি ডাক…(কুয়াশা)

কুয়াশাকে না বলতে দিয়ে তুষার বলল

-আপনি এখন আসতে পারেন কুয়াশার এখন রেস্টের প্রয়োজন (তুষার)

-না না আন্টি থাকুক আন্টির সাথে কতদিন পর দেখা হলো আমার রেস্টের দরকার নেই (কুয়াশা)

-জাস্ট সাট আপ। তোমার এতো কথা বলতে বলে কে? একদম চুপ থাকো একটা কথাও বলবা না আর আপনি এখন আসতে পারেন (তুষার)

তুষারের ধমকে কুয়াশা ভয় পেয়ে গেলো

-তুষার কুয়াশার সাথে এমন বিহেভ করছো কেনো ও বাচ্চা মেয়ে তুমি… (তিশা)

-আমি ওর সাথে কেমন বিহেভ করবো না করবো সেটা আমার ব্যাপার আমাদের পার্সোনাল মেটারে আপনি কথা না বললে খুশি হবো (তুষার)

-আপনি আন্টির সাথে এমন ভাবে কথা বলছেন কেনো (কুয়াশা)

-আমার এখন তোমার কাছ থেকে শিখতে হবে কার সাথে কেমন ভাবে কথা বলবো (তুষার)

-এখানে চিল্লাছ কেনো এটা হসপিটাল তোমার বাড়ি না আর আমার ওপরের রাগ ওর ওপরে ঝাড়ছো কেনো (তিশা)

ওদের চিল্লানিতে তুতুল,মেঘা,কুশ,শান আসলো

-কি হইছে (তুতুল)

-কিছু হইনি (তিশা)

-কিছু হইনি মানে এই তোর মাকে এখান থেকে নিয়ে যা জাস্ট নিতে পারছি না আমি (তুষার)

-আমার মা মানে তোর মা না? সম্মান দিয়ে কথা বল ভাইয়া (তুতুল)

-না উনি আমার মা না ইনফেক্ট কেউ-ই না (তুষার)

তিশা ছলছল চোখে তুষারের দিকে তাকালো। তুষার পিছন ফিরে দাঁড়ালো তুষারের চোখেরও পানি সবার থেকে আড়াল করে মুছে নিলো। তিশা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

-ভাইয়া তুই সবসময় এমন করিস কেনো? জানিস মম কতটা কষ্ট পাই? জানবি কি করে কখনো বোঝার চেষ্টাই করিস নি (তুতুল)

কথাটা বলে তুতুলও বেরিয়ে গেলো। এখন রুমটাতে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে মেঘা, কুয়াশা, কুশ, শান ওরা শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ওরা কিছুই বুঝলো না। কিছুক্ষণ ওভাবে দাঁড়িয়ে থেকে ওরা তিনজন চলে গেলো। কুয়াশা বলল

-উনি আপনার মা? (কুয়াশা)

তুষার কোনো উত্তর দিলো না।

-এমন করলেন কেনো উনি কতটা কষ্ট পেলো (কুয়াশা)

তুষার এবারও কিছু বললো না।

-আমার মাম্মা পাপা থাকলে আমি কখনোই এমন করতাম না আমার মাম্মা পাপা থাকলে কোথাও যেতে দিতাম না সবসময় জড়িয়ে ধরে থাকতাম যেনো কেউ না নিয়ে যেতে পারে। যার আছে সে অবহেলা করে আর যার নাই সে ফিরে পেতে চাই। ঔ যে কথায় আছে না ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্জাদা দেই না’ হারিয়ে গেলে কদর বোঝা যায় ঠিক অমন টাই। ইস যদি ফিরে পেতাম একবার জাস্ট একবার সব ভুল গুলো শুধরে নিয়ে নতুন করে শুরু করতাম (কুয়াশা)

কুয়াশা আনমনে বলতে বলতে চোখ দিয়ে টুপটাপ বৃষ্টির মতো পানি পড়ছে। তুষারেরও বুকের ভিতর ধাক্কা লাগলো কুয়াশার কথা গুলো। আবারও নিরবতা ঘিরে ধরে আছে ওদের মাঝে। তুষার কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর পাখি আসলো কুয়াশাকে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে বলল

-কি রে কি হইছে শরীর খারাপ করছে নাকি (পাখি)

-না ভাবিপু (মলিন হেসে বলল কুয়াশা)

-তাহলে মন খারাপ কেনো (পাখি)

-কই না তো আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও তো ঘুম পাচ্ছে (কুয়াশা)

-কিছু খাবি (পাখি)

-না ঘুম থেকে উঠে খাবো (কুয়াশা)

-আচ্ছা শুয়ে পর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি (পাখি)

কুয়াশা আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে গেলো। তুষার এসে দেখলো কুয়াশা ঘুমিয়ে গেছে।

-তুষার তোমরা কি ঝগড়া করছো (পাখি)

-কই না তো ভাবিপু কেনো হঠাৎ এ প্রশ্ন (তুষার)

-না আসলে আমি এসে দেখি ও মন খারাপ করে বসে আছে তাই শুনলাম আচ্ছা ওকে বেশি প্রেশার দিও না মাথায় ব্যাথা পাইছে একে তে (পাখি)

-হ্যাঁ বুঝতে পারছি (তুষার)

.

কুয়াশার ঘুম ভাঙ্গলো ৩.৪০শে। কেউ কুয়াশাকে ডিস্টার্ব করেনি। কুয়াশা চোখ খুলে দেখলো কুশান ওর পাশে বসে আছে। কুয়াশা হাসলো কুশান আদুরে স্বরে বলল

-কেমন আছিস বাবুইপাখিটা (কুশান)

-ভালো আছি ভাইয়া। ভাইয়া আমি ভাইয়াকে দেখবো জানো আমাকে কেউ যেতে দেই নি (কুয়াশা)

-আচ্ছা যাস কিছু তো খাস নাই খেয়ে নে তারপর নিয়ে যাবো (কুশান)

-হুম যা ফ্রেশ হয়ে নে আমি খাবার দিচ্ছি (পাখি)

-আচ্ছা (কুয়াশা)

কুয়াশা ফ্রেশ হতে গেলো তুষারকে কেবিনে না পেয়ে মন খারাপ লাগলো একটু ঘুমারও আগে চলে গেছে এখনো আসেনি ভেবে। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে মেঘের কেবিনে গেলো তুষারকে মেঘের কেবিনে দেখে কুয়াশার মুখে হাসি ফুটলো। মেঘ চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো দরজা খোলার শব্দে তাকালো কুয়াশাকে দেখে বলল

-বাহ বাহ এক রুগী আরেক রুগীকে দেখতে আসছে এই প্রথম দেখলাম দেখে ভালোই লাগলো (মেঘ)

-তুমি এই অবস্থায় ও মজা করছো (কুয়াশা)

-শুধু মজা না প্রেমটাও করছে (মেঘা)

-পাম কি? (শান)

শানের কথা শুনে হেসে দিলো সবাই।

-বড় হলে বুঝা আবার করবেও (মেঘ)

-তুই আমার ছেলেদের আবার উল্টো পাল্টা শিখাচ্ছিস (কুশান)

-এটা ভালো জিনিস ভাইয়া নট উল্টো পাল্টা (মেঘা)

একটা খুশি পরিবারের একজন ভালো না থাকলে কেউই আর তখন ভালো থাকতে পারে না। আবার এরা একটু সুখকে অনেক বড় করে দেখে। সবার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য নিজের কথা চিন্তা করতেই ভুলে যায় তারা। পরিবার জিনিস টাই এমন সুখ দুঃখ কষ্ট গুলো ভাগ করে নিয়ে একসাথে বাঁচতে শেখাই। খারাপ দুঃস্বপ্ন গুলো ভুলে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করে।

#চলবে
#Tasnim_Tamanna

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন।]

#তাসনিম_তামান্না
#ভালোবাসি_প্রিয়তম
#পর্ব_২০

???

দেখতে দেখতে ১টা মাস কেটে গেলো। কুয়াশা আর মেঘ অনেকটা সুস্থ হয়ে গেছে। এর মধ্যে তুষার অফিসে জয়েন্ট করছে। মাঝে মাঝে রাতে কুয়াশার কাছে থাকে আর যেদিন থাকে না সেদিন সারারাত ভিডিও কলে থাকে ওদের দুজনের সম্পর্ক আগের থেকে অনেক সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু সেদিনের পর তিশাকে নিয়ে কথা বলতে চাইলে তুষার এড়িয়ে গেছে বারং বার। কুয়াশা এই একমাস কলেজে যাই নি কিন্তু মেঘা গিয়েছে রিদ মেঘাকে অনেক চেষ্টা করেও মানাতে পারেনি। কিন্তু মেঘা মনে মনে রিদকে ভালোবেসে ফেলছে কিন্তু প্রকাশ করছে না। তন্নি মেঘকে ভালোবাসতে শুরু করছিলো তুতুল আর মেঘের রিলেশন আছে এ কথা শুনে একটু কষ্ট পাইছিলো কিন্তু এখন মানিয়ে নিয়েছে। বার বার নিজ মনেই বলছে সব ভালোবাসা পূর্ণতা পাই না আর যারা পাই তারা ভাগবতী আর যারা পাই না তাদের জন্য হয়তো বা অন্য ভালোবাসার মানুষ পাঠিয়ে দিবে

রাত ১১:১৫ বাজে তুষার ল্যাপটপে কাজ করছে কুয়াশা বেডে গালে হাত দিয়ে বসে ওর চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছে। তুষার কুয়াশা কোনো সারা শব্দ না পেয়ে কুয়াশার দিকে তাকিয়ে দেখলো কুয়াশা রোবটের মতো বসে আছে। তুষার ল্যাপটপ রেখে কুয়াশার মেডিসিন নিয়ে কুয়াশার সামনে ধরলো তাও কুয়াশার ধ্যান নে। তুষার চোখ ছোট ছোট করে কুয়াশার দিকে তাকিয়ে কুয়াশার সামনে হাত নাড়ালো কুয়াশা লাফিয়ে বেডের ওপর উঠে দাঁড়ালো

-আবার ক্যাঙ্গারুর মতো লাফাচ্ছ (তুষার)

-এই আপনি একদম আমাকে এসব বলে ডাকবেন না আর এভাবে মুখের সামনে হাত নাড়ালে যে কেউই ভয় পাবে (কুয়াশা)

-তুমি যে ভীতু সেটা সব সময় প্রমান করার কোনো দরকার নাই পাবলিক সেটা জানে (তুষার)

-আচ্ছা ওসব বাদ দেন আপনার কাছে একটা কথা শুনবো (কুয়াশা)

-না এই নাও মেডিসিন খেয়ে ঘুমিয়ে যাও (তুষার)

তুষার আবার ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো। কুয়াশা মুখ ফুলিয়ে ঔষধ টা খেয়ে নিলো। কুয়াশা আস্তে আস্তে তুষারের পাশে গিয়ে বসলো তুষার একবার আড় চোখে তাকিয়ে নিজের কাজে মন দিলো। তুষার জানে কুয়াশা এখন তিশা আর তুহিনের ব্যাপারে জানতে চাইবে। কিন্তু তুষার ওসব কথা বলে বা শুনতে চাই না বিরক্ত লাগে ওর তাই কুয়াশাকে বার বার এড়িয়ে যায়।

-বলেন প্লিজ (কুয়াশা)

-আমি তোমাকে ঘুমাইতে বলছি এসব বাদ দিয়ে ঘুমাও গিয়ে না হলে মাথা ব্যাথা করবে। (তুষার)

-আপনি এমন করেন কেনো সবসময় ভালো লাগে না একটু বললে কি হয় (কুয়াশা)

তুষার কিছু বললো না চুপচাপ বসে নিজের কাজ করছে। কুয়াশা কিছুক্ষণ বসে থেকে বলল

-সরি আপনার পার্সোনাল ম্যাটার নিয়ে জানতে চাওয়ার জন্য (কুয়াশা)

কথাটা মন খারাপ করে বলে গিয়ে বেডের একপাশে শুয়ে পড়লো। কুয়াশার হঠাৎ কান্না পেলো কোনো অজানা কারণ ছাড়ায় নিঃশব্দে কান্না করতে লাগলো। তুষার কুয়াশার কথা শুনে থামকে গেলো। কিছুক্ষণ ওভাবে বসে থেকে কুয়াশা যে দিকে মুখ করে শুয়ে আছে ঔ দিকে গিয়ে এক টানে কুয়াশাকে বসিয়ে দিলো। কুয়াশা চোখে পানি নিয়ে তুষারে দিয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। তুষার কুয়াশাকে নিয়ে বারান্দায় গেলো। তুষার বারান্দার সোফায় বসে কুয়াশাকে কোলে বসিয়ে কাধে থুতনি রেখে জড়িয়ে ধরলো। কুয়াশা উঠতে নিলেও পারলো না। তুষার গম্ভীর কণ্ঠে বলল

-একদম নড়াচড়া করবে না যা বলবো মন দিয়ে শুনবে (তুষার)

-না আমি কিছু শুনবো না আপনি আমাকে ছাড়েন এভাবে সাপের মতো পেচিয়ে ধরে রাখছেন কেনো (কুয়াশা)

তুষার নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল

-আমি সাপ তাই (তুষার)

কুয়াশা অবাক হয়ে বলল

-সত্যি (কুয়াশা)

তুষার দাঁত কটমট করে বলল

-আর একটা যদি কথা বলো তোমাকে বারান্দা থেকে ফেলে দিবো (তুষার)

কুয়াশা তুষারের হাত খামছে ধরলো। তুষার কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল

-জানো যখন আমার বয়স ১০ বছর আর তুতুলের বয়স ৬ বছর। বাবা-মা প্রায় ঝগড়া করতো প্রায় বলছি কেনো সবসময়ই ঝগড়া করতো! বাবা কেনো মাকে সময় দেই না? কেনো বাসায় থাকে না? কিসের এতো কাজ? সবসময় সন্দেহ করতো বাবা অন্য মেয়েকে পছন্দ করে কিনা সেটা নিয়েও অনেক ঝগড়া করছে। মাকে লুকিয়ে কাঁদতে দেখছি। একদিন বাবা রাত করে বাসায় আসে মা তাতে অনেক রেগে যায় কিন্তু কিছু বলে না চুপচাপ থাকে পরের দিন বাবার শার্টে লিপটিকের দাগ দেখে মা রেগে গিয়ে বাবাকে চড় মারে তুহিন অবাক হয়ে চেয়ে থাকে তিশার দিকে। তুষার আর তুতুল দূরে গুটিসুটি মেরে দাড়িয়ে আছে।

-তুমি আমাকে মারলে (তুহিন)

-তো তোকে নিয়ে নাচবো (তিশা)

-একদম উল্টো পাল্টা বলবা না আর তুই তোকারি করছো কেনো (তুহিন)

-আমি? আমি? আমি উল্টো পাল্টা বলছি তাহলে এটাকি? কার সাথে রং লিলা করছিস? আমাকে আর ভালো লাগে না তোর তাই না তুই দুটা সন্তানের বাপ হয়ে গেছিস এই বয়সে তুই বাইরে মেয়েদের নিয়ে ছিঃ (তিশা)

তুহিন শার্টার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ তারপর বলল

-তিশা তুমি ভুল বুঝছো এটা একটা এক্সিডেন… (তুহিন)

-তুই থাম আর নাটক করতে হবে না কাল রাতে দেরি করে ফিরছিস কিছু বলি নাই কিন্তু আজ বুঝতে পারছি কাল কেনো দেরি করে বাসায় আইছিস আগেই বলে দিতে পারতিস আমাকে আর ভালো লাগছে না তোর জীবনে অন্য কেউ চলে আসছে আমি চলে যেতাম এতো কষ্ট দেওয়ার কোনো মানে হয় না (তিশা কাঁদতে কাঁদতে বলল)

-তিশা তুমি ভু….(তুহিন)

তুহিন আর কিছু বলার আগে তিশা ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। তুহিন ভয় পেয়ে দরজা বারংবার ধাক্কাতে লাগলো কিছুক্ষণ পর তিশা দরজা খুলে বাহিরে এলো। তিশার হাতে ব্যাগ।

-তিশা তুমি ঠিক আছো তো দেখো তুমি ভুল বুঝছো আমার এমন কারোর সাথে কোনো রিলেশন নেই আমি অফিসের কাজে বিজি ছিলাম বাসায় সময় দিতে পারি নাই প্লিজ আমাকে ভুল বুঝো না এই তোমার হাতে ব্যাগ কেনো তুমি কোথায় যাচ্ছো দেখো আ্…..(তুহিন)

-স্টপ আর একটাও মিথ্যা কথা বলবেন না (তিশা)

তিশা আর কোনো কথা না বলে তুষার আর তুতুলকে নিয়ে যেতে নিলে তুহিন তিশাকে বাধা দিয়ে বলল

-ওদের কে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো তুমি? তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছো? একটা ছোট ব্যাপার নিয়ে এতো বড় কাহিনী করার কোনো মানে দেখছি না আমি (তুহিন)

-এটা ছোট ব্যাপার তোর শার্টে অন্য মেয়ের লিপস্টিক কেনো থাকবে? তুই বুঝতে পারছিস ব্যাপারটা কাল বিয়ে করে এনে বলবি এটা ছোট ব্যাপার! অন্য মেয়ের পেটে তোর বাচ্চা থাকবে সেটাও ছোট ব্যাপার তাই না মিস্টার তুহিন আবরার (তিশা)

তিশার কথা শেষ হতে না হতে তুহিন তিশার গালে ঠাস করে চড় মেরে বলল

-ব্যাস অনেক বলে ফেলছিস তুই যা কোথায় যাবি যা মোট কথা কি জানিস তুই আমার কাছে থাকতে চাইছিস না তাই প্রতিদিন নিত্যনতুন কাহিনী বানাছিস আমার ওপর দোষ দিয়ে চলে যেতে চাইছিস ওকে ফাইন যা কিন্তু আমার ছেলেমেয়েদের কোথাও নিয়ে যেতে পারবি না (তুহিন)

তুহিন তুষার আর তুতুলের হাত ধরে। তিশা ছলছল চোখে রাগি মুখে তুহিনের দিকে তাকিয়ে আছে। তিশা তুতুলকে তুহিনের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তুষারের দিকে মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে গেলো। তুষার সেদিন অনেক কেঁদে ছিলো তার মায়ের জন্য কিন্তু তার মা ফিরেনি। ভাবেনি তার কথা।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here