ভালোবাসি_প্রিয়তম,পর্ব_২১
তাসনিম_তামান্না
???
তারা ভরা আকাশে আজ চাঁদ নাই। চারিদিকে কৃত্রিম আলোই ভরপুর। মৃদু বাতাস বইছে বারান্দা বসে আছে দুই মানব-মানবী, দু’জনের চোখেই পানি।
-জানো আমার খুব কষ্ট হতো যখন আমি স্কুলে পড়ি তখন দেখতাম অন্যর বাবা-মা এসে স্কুলে দিয়ে যেতো কপালে আদর দিয়ে যেতো আর আমি ড্রাইভারের সাথে যেতেম আবার ড্রাইভারের সাথে আসতাম যে সময়টা বাবা-মাকে আমার প্রয়োজন ছিলো সেসময় ওরা যে যার কাজে ব্যাস্ত আর আমি নিঃসঙ্গ একা ঔ সময়টা কাটিয়েছি। আমি খুব করে চাইতাম বাবা-মা এক হয়ে যাক কিন্তু ওরা হয়নি। যেসময় টা আমার হেসেখেলে বেড়ানোর বয়স সে সময়টা আমি বাবা-মা বিচ্ছেদের কারণে ডিপ্রেশনে থাকতাম। (তুষার)
-আন্টি আপনাকে নিতে আসেনি কখনো (কুয়াশা)
-হ্যাঁ আসছিলো কিন্তু বাবা যেতে দেই নি বাবা ভাবছি আমার জন্য হলেও মা ফিরে আসবে কিন্তু আসে নি আমার কথা কেউ ভাবেনি (তুষার)
-তাহলে আপুর সাথে ওমন করেন কেনো আপুর তো কোনো দোষ নাই (কুয়াশা)
-ওর সাথে আমি ছোট থেকেই ফেন্ডলি মার সাথে কথা না বলেও ওর সাথে বলি কিন্তু ও যে মেঘকে ভালোবাসে এটা কখনো আমাকে বলেনি তাই খুব কষ্ট আর অভিমানে বাজে বিহেব করে ফেলছি। (তুষার)
-ওহ আমি আঙ্কেল আন্টি আর তুতুল আপুকে দেখছি আর ওনারা আসতেন বাবা সেই থেকে আপু আর ভাইয়া আস্তে আস্তে দুজন দুজনকে ভালোবাসে ফেলে কিন্তু আপনাকে কখনো দেখি নাি নাম শুনছিলাম ভাইয়া আঙ্কেলকে অনেক বার আপনাকে আনার কথা বলছে আপনি নাকি আসতে চাইতেন না তাই আর জোর করতেন না (কুয়াশা)
-হ্যাঁ যখন থেকে বুঝতে শিখছি একা একা থাকছি বাবার সাথেও আস্তে আস্তে দূরত্ব বাড়ছে কথাও বলা হতো না (তুষার)
-ওহ তাহলে ডিভোর্স হয়ে গেছে (কুয়াশা)
-নাহ মা ডিভোর্স দিতে চেয়ে ছিলো কিন্তু বাবা তা হতে দেই নি সাইন করে নি (তুষার)
-কিহ? সত্যি? (লাফিয়ে উঠে তুষারে সামনে ফ্লোরে বসে বলল তুষার ভ্রু কুচকে কুয়শার দিকে তাকালো) আচ্ছা আঙ্কেল আন্টির লাভ ম্যারেজ্ঞ নাকি এরেন্জ ম্যারেন্জ (কুয়াশা)
-কেনো? এভাবে লাফালে কেনো (তুষার)
-আরে আপনি বলেন ওনাদের কিভাবে বিয়ে হইছিলো (কুশার)
-বাসা থেকে বিয়ে ঠিক হইছিলো কিন্তু বাবা মাকে অনেক ভালোবাসতো (তুষার)
তুষারের কথা শুনে কুয়াশা গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলো। তুষার কুয়াশার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর তুষার কুয়াশার মুখ দু’হাতে ধরে বলল
-তুমি আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না তো জানো আমি ভালোবাসায় বিশ্বাসী ছিলাম না ভাবতাম ভালোবাসলে হইতো সে ছেড়ে চলে যায় কিন্তু তোমাকে দেখে ওমন মনে হয়নি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না তো? (তুষার)
কুয়াশা তুষারের চোখে দিকে তাকালো তুষারের চোখের দৃষ্টি গভীর। কুয়াশা তুষারের চোখের দিকে তাকিয়ে বাচ্চাদের মতো মুখ করে মাথা দু’দিকে নাড়ালো। তুষার কুয়াশার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে জড়িয়ে ধরে বসে রইলো দুই মানব মানবী। কুয়াশা তুষারের বুকের ডিবডিব শব্দ শুনছে। হঠাৎ তুষার বলে উঠলো
-#ভালোবাসি_প্রিয়তম♥ (তুষার)
-আমিও #ভালোবাসি_প্রিয়♥ (কুয়াশা)
তুষার চট করে কুয়াশাকে তুলে কুয়াশার দিকে তাকালো। কুয়াশা দাঁত দিয়ে জ্বী কাটলো। তুষার বলল
-সত্যি (তুষার)
-আব কি সত্যি কিসের কথা বলছেন আপনি (কুয়াশা)
-কুয়াশা একদম মিথ্যা বলবে না (তুষার)
-আমি বলতে চাইনি মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসছে (কুয়াশা)
-পাগলী বউ আমার (তুষার)
কুয়াশা লজ্জা পেয়ে তুষারের বুকে মুখ লুকালো। কিছুক্ষণ পর কুয়াশা বলল
-জানেন আজ ভাইয়া আঙ্কেল আর আন্টিকে বাসায় আসতে বলছিলো মেঘ ভাইয়া আর তুতুল আপুর বিয়ের কথা বলার জন্য তো আঙ্কেল আর আন্টি দুজন দুজনের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলো ওরা এখনো দুজন দুজনকে ভালোবাসে কিন্তু ইগোর জন্য মনে হয় একহতে পারছে না আমি ভাবছি ওদেরকে এক করবো (কুয়াশা)
-মানে পাগল নাকি তুমি যারা নিজেরা এক হতে চাই না তাদেরকে তুমি এক করবে (তুষার)
-হ্যাঁ সমস্যা কি তাতে আচ্ছা একটা কথা শুনেন আমি যদি এখন একটা ছেলের সাথে প্রেম করি আপনার রাগ হবে না? (কুয়াশা)
-কিহ? তুই কার সাথে প্রেম করবি একদম মেরে দিবো (তুষার কুয়াশার মুখ চেপে ধরে বলল)
কুয়াশা তুষারের হাত জোরে ছাড়িয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে মুখে হাত দিয়ে বলল
-বাবা গো দাঁত ভেঙ্গে দিলো গো ওমাগো কি ব্যথা মুখে শালা গন্ডার (কুয়াশা)
-কুয়াশা আমাকে রাগিয় না (তুষার)
-হুর ব্যাটা আমি কি কইছি (কুয়াশা)
-কুয়াশা ল্যাংগুয়েজ ঠিক করো প্রেম করলে কি আমি তোমাকে প্রেম করতে দিবো নাকি এসব দিকে যাবা তো ঠ্যাং ভেঙ্গে রেখে দিবো (তুষার)
-ওহ আল্লাহ আমি কি বলছি আপনি কি সেটা ভালো করে শুনছে? (কুয়াশা)
তুষার কিছু বললো না মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো।
-আরে বাবা আমি কথার কথা বলছি আমি প্রেম করলে আপনার রাগ হবে না? হবে তো তাই না? মুখ দিয়ে শুধু বলছি করলে কি করতেন আল্লাহই জানে যাই হোক তেমনই আন্টির রাগ হয়ে গেছে মেয়েরা সব ছাড়তে রাজি কিন্তু স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে রাজী না তেমনি আন্টিরও খারাপ লাগছে। আর আঙ্কেল ঔ দিন আন্টিকে সত্যি কথায়ই বলছিলো (কুয়াশা)
তুষার কুয়াশার পুরো কথাটা শুনলো শেষের কথাটা শুনে বলল
-তুমি কেমন করে বুজলে (তুষার)
-এতে না বুঝার কি আছে আঙ্কেল যদি অন্য কাউকে ভালোবাসতো বা অন্য নারীর প্রতি আর্কষণ থাকতো তাহলে এতোদিন তিনি আন্টির জন্য অপেক্ষা না করে বিয়ে করে নিতেন কিন্তু তিনি তেমন কিছুই করেন এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে আঙ্কেল আন্টিকে এখনো ভালোবাসে (কুয়াশা)
তুষার কুয়াশার পুরো কথাটা মন দিয়ে শুনে বলল
-হুম আমার বউটা দেখছি হেব্বি বিরিলিয়াট আগে জানতাম বোকা, হাদা, ভীতু (তুষার)
-আপনি আমাকে এভাবে অপমান করতে পারলেন (কুয়াশা)
-আরে অপমান করলাম কোথায় বেশি বুঝো দেখছি তুমি (তুষার)
-একদম উল্টো পাল্টা কথা বলবেন না (কুয়াশা)
-আচ্ছা আর কোনো কথা না অনেক রাত হয়েছে ঘুমাবে চলো (তুষার)
-কিন্তু আঙ্কেল আন্টির….. (কুয়াশা)
-ওগুলো পরে ভাবা যাবে (তুষার)
-তার মানে আপনিও চান ওরা এক হোক (কুয়াশা)
তুষার হেসে বলল
-ওরা যত যায়ই করুক আমি এখনো চাই ওরা এক হোক। ঘৃণা করি না কিন্তু প্রকাশ করি আমি তাদের ঘৃণা করি তাদের কর্মকাণ্ডে আমাকে কষ্ট দিয়েছে ঠিকি কিন্তু ভালোবাসতে ভুলিনি! তাদের শত কোটি কষ্ট দেওয়ার পর আমি তাদের ভালোবাসি। কিন্তু প্রকাশ করি না (তুষার)
-আপনার কথাগুলো ভালো লাগছে (কুয়াশা)
-ফাইজলামি করতেছো আমার সাথে (তুষার)
-আপনি কি আমার বিয়াইন লাগেন যে আপনার সাথে আমি ফাইজলামি করবো (কুয়াশা)
-কুয়াশা তুমি কি জানো তুমি আজ কাল বেশি পটরপটর করছো (তুষার)
-আমার মুখ আমার ইচ্ছা আমি যা ই……উম উম (কুয়াশা)
তুষার কুয়াশার মুখ চেপে ধরে রুমে বেডে শুয়িয়ে দিয়ে কুয়াশাকে জড়িয়ে ধরে তুষারও শুয়ে পরলো।
-এটা কি হলো (কুয়াশা)
-তোমার মাথা (তুষার)
-আর আপনার মুন্ডু (কুয়াশা)
-কুয়াশা আর একটা কথা বলো তোমাকে আছাড় দিবো আমি (তুষার)
-কুয়াশা আর একটা কথা বলো তোমাকে আছাড় দিবো আমি (কুয়াশা)
-কুয়াশা এগুলো বেশি বেশি করছো তুমি (তুষার)
-কুয়াশা এগুলো বেশি বেশি করছো তুমি (কুয়াশা)
-কুয়াশা আমাকে রাগিও না (তুষার)
-কুয়াশা আমাকে রাগ……(কুয়াশা)
তুষার কুয়াশার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো কুয়াশার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো অন্ধকারে সবুজ ডিমলাইটে সাহায্যে তুষারের দিকে তাকিয়ে আছে। কুয়াশা ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর তুষার কুয়াশাকে ছেড়ে দিলো দুজনেই জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো।
-আর আমার কথার অবাদ্ধ হবা (তুষার)
কুয়াশা কাঁদো কাঁদো মুখে ঠোঁট ফুলিয়ে দুদিকে মাথা নাড়ালো।
-গুড এবার ঘুমিয়ে পড়ো (তুষার)
কুয়াশাও আর কিছু না বলে দুজনে ঘুমিয়ে গেলো।
★★★
সকালে ঘুম থেকে উঠে বেকফাস্ট টেবিলে বসে। কুয়াশা বলল
-আজ আমি কলেজে যাবো (কুয়াশা)
-আর কই দিন পর থেকে যা এখনো তো ভালো ভাবে সুস্থ হসনি (কুশান)
-না ভাইয়া আমি একদম ফিট (কুয়াশা)
-আচ্ছা তাহলে তোর ইচ্ছা (কুশান)
.
বেকফাস্ট করে রুমে এসে কুয়াশা তুষারকে বলল
-আপনি কলেজে যাবেন নাকি অফিসে যাবেন (কুয়াশা)
-অবশ্যই কলেজে আমার বউ যেখানে আমি সেখানে (তুষার)
-ঢপবাজ (কুয়াশা)
-হুম রেডি হয়ে আসো আমি গাড়িতে আছি (তুষার)
-আচ্ছা (কুয়াশা)
তুষার চলে যেতেই কুয়াশা রেডি হয়ে মেঘার রুমে গেলো দেখলো রুম ফাঁকা মেঘা নিচে ভেবে চলে আসছিলো তখন মেঘার ফোনে মেসেজ টোন বেজে ওঠে। কুয়াশা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো মেঘার ফোন বেডের ওপরে। ফোনের স্কিনে জ্বলা এসএমএসটা দেখে কুয়াশার চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম!!
চলবে