ভালোবাসি_প্রিয়তম,পর্ব_২২ শেষ পর্ব
তাসনিম_তামান্না
???
তুষার তিশাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। উপস্থিত সকলের চোখে পানি। কাল রাতে তিশা স্টোক করছে। একটু আগে তিশার জ্ঞান ফিরছে। তখন থেকেই তুষার তিশাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কান্না করছে।
-তোমার এতো কিসের টেনশন হ্যাঁ কে বলেছে তোমাকে এতো টেনশন করতে তোমার কিছু হয়ে গেলে কি হতো আমার (তুষার)
-কি আবার হতো তুই বেঁচে যেতি (তিশা)
-স্টাপ মম একদম উল্টো পাল্টা কথা বলবা না (তুষার)
তুতুল তুষারকে ধাক্কা দিয়ে বলল
-আইছে দরত দেখাইতে (তুতুল)
-তুতুল তুই কিন্তু আমার কাছে মার খাবি (তুষার)
-হাট! মম তুমি ঠিক আছো তো (তুতুল)
-হ্যাঁ রে বাবা তোরা এমন ভাবে কান্না করতেছিস মনে হচ্ছে আমি মরে গেছি (তিশা)
-মম (তুষার+তুতুল)
-মম একদম মরার কথা বলবে না (তুতুল)
-আচ্ছা বাবা কান্না থামা তো বুড় ছাগলটাও কান্নতেছে দেখ (তিশা)
-একদম ঠিক বলছো আন্টি সে আবার যে সে ছাগল না ধারি ছাগল (কুয়াশা)
কুয়াশা কথা শুনে সবাই হেসে দিলো। তুষার দাত কটমট করে তাকিয়ে বলল
-কুয়াশা (তুষার)
কুয়াশা একটা মুখ ভেঙ্গছি কাটলো। তখন তুহিন ডক্টরের সাথে কথা বলতে বলতে ভিতরে আসলো।
-ডক্টর মম ঠিক আছে তো কোনো সমস্যা নাই তো (তুষার)
-না ওনাকে টেনশন করতে বারণ করবেন আর সবসময় হাসি খুশি থাকবেন আর আমি মেডিসিন দিয়েছি সেগুলো ঠিক মতো খাওয়াবেন (ডক্টর)
-ওকে ডক্টর মমকে কি আজ বাসায় নিয়ে যেতে পারবো (তুষার)
-হ্যাঁ (ডক্টর)
ডক্টর তিশাকে চেকাপ করে চলে যেতে নিলেই তুহিনও ডক্টরের সাথে যাচ্ছিল তিশা হঠাৎ বলে উঠলো
-তুহিন (তিশা)
তুহিন তিশার মুখে নিজের নাম শুনে থমকে দাঁড়ালো কিন্তু ঘুরলো না। উপস্থিত সবাই একে ওপরের দিকে তাকা তাকি করতে লাগলো। তিশা আবার বলে উঠলো
-তুহিন তোমার সাথে আমার কথা আছে আমার পাশে এসে একটু বসবে (তিশা)
তুহিন কিছুক্ষণ নিরব থেকে তিশার পাশে গিয়ে বসলো আর সবাই বেরিয়ে যেতে নিলে তিশা বলল
-তোমরা কোথায় যাচ্ছো তোমাদের তো আমি কোথাও যেতে বলিনি চুপচাপ দাড়িয়ে থাকো সবাই (তিশা)
তিশা একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলো
-তুহিন আ’ম সরি। আমি জানি আমি অনেক বড় ভুল করেছি এতোগুলা বছর তোমাকে ভুল বুঝে দূরে থেকে আমি আজ তোমার কাছে আর তোমার ছেলেমেয়ের কাছে অপরাধী তোমাদেরকে অনেক কষ্ট দিয়েছি তুষারের ছোট বেলা কেড়ে নিয়েছি। আমি জানি আমার ভুলে ক্ষমা হয় না আমি চাইলেই পারতাম সব ভুলে তোমার সাথে সংসার করতে আমার জন্য তোমার সাথে তোমার ছেলে মেয়ে দের মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে আমি নিজেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না অপরাধ গুলো প্রতিনিয়ত কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। কুয়াশা যদি সেদিন আমার ভুল না ভাঙাতো তাহলে হইতো আমি সারাজীবন তোমাকে ভুল বুঝে যেতাম পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও (তিশা কথা গুলো বলে হু হু করে কেঁদে দিলো)
-এসব কি বলছো তিশা আমি তোমাকে অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি কেদো না প্লিজ শরীর খারাপ তোমার (তুহিন)
-তুমি আমাকে মন থেকে ক্ষমা করছো তো (তিশা)
-হ্যাঁ এবার কান্না থামাও প্লিজ (তুহিন)
তুষার কুয়াশার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কুয়াশা সেটা দেখে ইশারাই জিজ্ঞেসা কি তুষার মুচকি হেসে মাথা দুদিকে নাড়ালো।
তুতুল তুহিনকে জড়িয়ে ধরে বলল
-দেখছো পাপা আমি তোমাকে বলছিলাম না সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন দেখলে তো (তুতুল)
-আর সব ক্রেডিটটাই কুয়াশা মার (তুহিন)
-রাইট পাপা এই পিচ্চি টার মাথায় এতো বুদ্ধি আসলো কবে থেকে আমরা কেউ টেরই পেলাম না (তুতুল)
-আপু (কুয়াশা)
তিশা তুষারকে ইশারা করতেই তুষার গিয়ে তুহিনকে জড়িয়ে ধরে বলল
-সরি পাপা (তুষার)
-আচ্ছা হইচ্ছে (তুহিন)
-সব ঠিকঠাক তাহলে তিন জোড়া বিয়ে টা কি ফাইলান করা হবে (পাখি)
-তিনজোড়া মানে (তুহিন)
-মানে হলো তুষার+কুয়াশা, তুতুল+মেঘ, আর মেঘা+রিদ (পাখি)
-মানে আমি এখন বিয়ে করবো না আ…(মেঘা)
-একদম চুপ যা প্রেম করার সময় মনে ছিলো না (মেঘ)
মেঘা আর কিছু বললো না কুয়াশার দিকে রাগী চোখে তাকাতেই কুয়াশা চোখ টিপ দিলো। সেদিন কুয়াশা মেঘার ফোনে রিদের লাভীং মেসেজ দেখে ফেলছিলো। আর মেঘা ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে এসে কুয়াশার হাতে নিজের ফোন দেখে ঘাবড়ে যায়। কুয়াশা মেঘার কাছে এসম্পর্কে জানতে চাইলে মেঘা ভয়ের চটে গরগর করে সব বলে দেই। কুয়াশা সব শুনে ভাইদের বললে রিদের এবং রিদের বাসার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে ভালো জেনে আর দ্বীমত করে নি।
কুয়াশা সেদিন কলেজে যাওয়ার পর রিমা সেদিন কুয়াশার কাছে ক্ষমা চাই ওর সকল কাজের জন্য কুয়াশাও ক্ষমা করে দেই। মেঘ রাজে লকাপে নিয়েছিলে ওর বাজে কাজের জন্য। রিজু আর রিজভিকেও ওদের কৃতকর্মের শাস্তি দিয়েছে।
পাঁচ বছর পর…….
রাতে কুয়াশা হীমকে খাওয়ানোর জন্য ওর পিছনে ছুটছে। হীম হলো কুয়াশা আর তুষারের ছেলে, বয়স ২ বছর।
-হিম দাড়া আমি কিন্তু তোকে পিটাবো (কুয়াশা)
-না না মাম আমাকে ধলতে পালে না (হিম)
-তোকে শুধু একবার ধরতে পারি না তোকে আছত রাখবো না (কুয়াশা)
হিম ছুটে গিয়ে তুষারের পা জড়িয়ে ধরে তুষার হীমকে কোলে নিয়ে বলল
-কি হচ্ছে বাবাই (তুষার)
-পাপাই মাম আমাকে ধলতে পালে না (হিম)
-ও বাবা তাই নাকি তাহলে তো দেখছি হিম সোনা বড় হয়ে গেছে (তুষার)
-হুম আমি এতো এতো এতো বলো হয়ে গেচি (হিম)
-হ্যাঁ তো আরো বড় হতে হলে খেতে হবে তাহলে যাও মাম (তুষার)
-না পতা খাবাল খেতে ভাওলো লাগে না চকেট খাবো (হিম)
-হ্যাঁ ঔই গেল সারাদিন এবার ভাত চাস দেখিস (কুয়াশা)
-কুয়াশা এভাবে কথা বলছো কেনো ও ছোট অবুজ বোঝে না বলে ওমন করছে তাই বলে তুমিও ওমন করবে। (তুষার)
-থাক তোর ছেলে নিয়ে আমাকে তো ভালোবাসিস না কেউ শুধু শুধু থেকে কি করবো থাক তোরা (কুয়াশা)
বলে কুয়াশা চলে গেলো। তুষার আর হিম ঠোঁট উল্টালো। তুষার হিমকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে বারান্দায় এসে কুয়াশাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। কুয়াশা কোনো কিছু বলছে না চুপ চাপ দাড়িয়ে আছে। তুষার কুয়াশা কানের কাছে ফিসফিস করে বলল
-আমার বোকাপাখিটার কি অভিমান হয়েছে (তুষার)
কুয়াশা কিছু বললো না। তুষার কুয়াশার ঘাড়ে ফুঁ দিয়ে ঠোঁট বুলালো কুয়াশা কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে নিলো কিছুক্ষন পর তুষার কুয়াশা ঘাড়ে কামড় দিলো। কুয়াশা ব্যাথায় ছিটকে দূরে সরে গেলো।
-শয়তান একদম কাছে আসবি না (কুয়াশা)
তুষার হেসে বলল
-তুমি না বললে তোমাকে কেউ ভালোবাসে না তার প্রুভ দিলাম (তুষার)
কুয়াশা ছলছল চোখে তুষারের দিকে তাকালো। তুষার সেটা দেখে কুয়াশার পাশে এসে বলল
-বউ তোমার কি খুব লাগছে আমি তো আস্তে দিয়ে ছিলাম দেখি কোথায় লাগছে আমাকে দেখাও (তুষার)
-সরেন (কুয়াশা)
-সরি বউ ভালোবাসি তো (তুষার)
-সত্যি (কুয়াশা)
-হুম ভালোবাসি_প্রিয়তম (তুষার)
-আমিও ভালোবাসি_প্রিয় (কুয়াশা)
_______________সমাপ্ত_______________