ভালোবাসি_প্রিয়তম,পর্ব_৯,১০

0
1762

ভালোবাসি_প্রিয়তম,পর্ব_৯,১০
তাসনিম_তামান্না
পর্ব_৯

???

কুয়াশা, মেঘা আর অনু আজ একি রকম সেজেছে অনুর শাড়িটা আলাদা কিন্তু সাজ একি। নীল শাড়ি,চোখে কাজল,ঠোঁটে নুড কালরের লিপস্টিক, কানে ছোট ছোট ইয়ার রিং,গলায় লাভ সেডের লকেট,চুলগুলো খোঁপা করে বেলি ফুল লাগানো।পাখি সুন্দর করে অনেক গুলা পিন দিয়ে শাড়িটা ভালো করে পড়িয়ে দিয়েছে যাতে খুলে না যায় ওরাও কুচি উঁচু করে হাটছে। ঈশান আর রাহুল হলুদ পাঞ্জাবি,সাদা প্যান্ট। ওরা পাঁচজন গল্প করতে করতে আসছিলো। তুষার গেটের সামনে দাড়িয়ে ছিলো। কুয়াশাকে দেখে থমকে গেলো। ওর চোখ যেনো আর সরছেই না। কুয়াশা গল্পের মাঝে তুষারের দিকে চোখ যেতে একপলক তাকিয়ে সাথে সাথে অন্য দিকে তাকালো। তুষার হলুদ পাঞ্জাবি, কালো প্যান্ট, ফর্সা হাতে কালো ঘড়িটা চোখে পড়ছে। কুয়াশারা ভিতরে চলে গেলো তাও তুষার হা করে সে দিকেই তাকিয়ে আছে।

-কি রে ওদিকে ওভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেনো মশা ডুকে যাবে তো(রিদ)

রিদের কথায় তুষারের ঘোর কাটলো। জোরে জোরে বার কয়েক শ্বাস নিলো।

-ঔ হাপানি রোগীর মতো হাপাছিস কেনো? কেসটা কি বলতো?(রিদ)

তুষার রাগী চোখে তাকিয়ে বলল

-তুই কিন্তু আজ কাল বেশি পটরপটর করছি এতো পটর পটর করলে পটল তুলবি কবে তুই নিজেও জানিস না(তুষার)

কথাটা বলে রিদের হাত থেকে কোকের বোতলটা নিয়ে খেতে খেতে চলে গেলো ভিতরে। রিদ কিছুক্ষন বোকার মতো চেয়ে। যখন বুঝতে পারলো তুষার ওকে বোকা বানিয়ে কোকের বোতল নিয়ে চলে গেছে তখন ও, ও তুষারের পিছনে ছুটলো।

★★★

কুয়াশারা হলরুমের দিকে যাচ্ছিল তখন কোথা থেকে রাজ এসে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল

-ওহ ওয়াও কুয়াশা ইউ আর লুকিং সো বিউটিফুল (রাজ)

কুয়াশা অসস্তি নিয়ে বলল

-থ্যাংকস ভাইয়া(কুয়াশা)

-আরে আমার নাম রাজ। রাজ বলে ডাকো।ভাইয়া টাইয়া এখন চলে না(রাজ)

বলে কুয়াশার হাত ধরলো

-কুয়াশা তোমার সব কিছুই এতো কিউট কেনো(রাজ)

কুয়াশা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। ওদের আর বুঝতে বাকি হইলো না রাজ একটু গাইয়ে পড়া ছেলে। তুষার পিছনে রাগী চোখে তাকিয়ে ওদের কাছে এসে কোনো কথা না বলে কুয়াশার হাত একঝটকাই ছাড়িয়ে নিয়ে কুয়াশার হাত ধরে হল রুমে এসে ছেড়ে দিয়ে বলল

-রাজের আশেপাশে জেনো তোমাকে না দেখি মাইন্ড ইট (তুষার)

কথাটি বলে কুয়াশাকে কোনো কথা বলতে না দিয়ে চলে গেলো। পিছনে পিছনে কুয়াশার ফেন্ডরাও আসলো।

-ঠিক সময় ভাইয়া এসেছিলো না হলে কি হতো কে জানে(মেঘা)

-হু চল গিয়ে বসি(ঈশান)

বসার আগে তুষারের ফেন্ডদের সাথে একটু কথা বললো। তুষারের ফেন্ডদের সাথে এখন ওরা অনেকটা ফ্রী হয়ে গেছে।

রিমা নীল কালারের পাতলা শাড়ি আর ভারি মেকাপ করেছে। রিমাকে দেখে ভালো ছেলেগুলো চোখ নামিয়ে নিচ্ছে। আর বাজে ছেলেগুলো তাকিয়ে আছে।
.

অনেক বসে থেকে কুয়াশার মাঝা ব্যাথা করছে তাই ও অনুষ্ঠান রেখে একটু বাইরে এসে হাঁটাচলা করে। বাইরে কেউ নেই বলে চলে মাঝে মাঝে দুই একজন চলাচল করছে। কুয়াশা রেলিং ধরে আকাশে দিকে তাকালো সূর্য আর মেঘেরা লুকোচুরি খেলছে। কুয়াশা সেটা মনোযোগ সহকারে দেখছে। পাশে শব্দ হতে সেদিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলো। তুষার রাজের হাত মুচড়ে ধরে আছে। রাজ চোখমুখ কুচকে বলল

-আহ তুষার হাত ছাড়(রাজ)

-তোর হাত ঠিক থাকলে তো হাতে লাগতো না(তুষার)

তুষার আর রাজের সাপ আর নেউলের মতো সম্পর্ক কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না সুযোগ পেলে দু’জন দু’জনকে দুঘা লাগিয়ে দেই। রাজ কলেজের মেয়েদের বিভিন্ন ভাবে ডিস্টার্ব করে। সেটা তুষার সহ্য করতে পারে না তাই তো এতো দিন হসপিটালে ছিলো সুস্থ হয়ে আবার শুরু করে দিয়েছে।

তুষার হাত ছেড়ে দিয়ে রাজের নাকে একটা ঘুসি মারলো। রাজ পড়ে গিয়ে নাকে হাত দিয়ে দেখলো রক্ত। রক্ত মুছে উঠে দাড়িয়ে বলল

-তোকে তো আমি পরে দেখে নিবো(রাজ)

বলে চলে গেলো। তুষার রেগে কুয়াশাকে একটা ফাঁকা ক্লাস রুমের এনে বলল

-তুমি শাড়ি পড়তে জানো না তো শাড়ি পড়ছো কেনো?নিজের শরীর দেখতে ভালো লাগে তাই না? তোমাকে আমি এতোটাও খারাপ ভাবিনি!! যতটা তুমি পদে পদে প্রুফ করছো।তোমার বাবা-মা তোমাকে এই শিক্ষা দিয়েছে।(তুষার)

কুয়াশাও আর সহ্য করতে পারলো না রেগে বলল

-কি যাতা বলছেন আপনি। যা মুখে আসছে তাই বলে যাচ্ছেন আমি কিছু বলি না বলে আপনি পাড় পেয়ে যাচ্ছেন আমার বাবা-মা কেও ছাড় দিলেন না। আপনার সাহস কি করে হয় আমার বাবা-মাকে নিয়ে বাজে কথা বলার। আমার ফ্যামেলিকে নিয়ে বাজে কথা আমি টলারেট করবো না। আপনি কোন অধিকারে আমাকে যা নয় তাই বলেন?আপনার কোনো রাইট নাই আমার ব্যাপারে কথা বলার, আমি যা ইচ্ছে তাই করবো, আপনি কোন অধিকারে আমাকে আটকান। আপনার সাথে তো আমি কথা বলতে যায় না বা আপনার ব্যাপারে আমি কোনো কথা বলি না তাহলে কেনো আপনি আমার ব্যাপারে এতো কথা বলেন। আমি মানছি অসাবধানতার জন্য আপনার সাথে ধাক্কা লাগছে সেজন্য তো আমি সরি বলছি। তাও আপনি সেটা কে নিয়ে খারাপ ভাবলেন? যা ইচ্ছে তাই ভাবুন আমার কিছু যায় আসে না(কুয়াশা)

কথাটা বলে কুয়াশা চলে গেলো। তুষার রাগের মাথায় কি যাতা বলেছে ও নিজেও জানে না। কিন্তু কুয়াশাকে এভাবে কথা বলতে দেখে অবাক হয়ে শুধু শুনছিলো। তুষার জানে কুয়াশার প্রতিটা কথায় ঠিক! ওর কোনো অধিকারে কুয়াশাকে যাতা বলে? কুয়াশা তো ওর ব্যাপারে কিছু বলে না তাহলে?কেনো তাহলে ও কুয়াশাকে নিয়ে এতো কথা ভাবে কেনো বার বার চোখ বন্ধ করলে কুয়াশার মুখ ভেসে ওঠে?কেনো? কেনো?এই কেনো এর উত্তর নাই কেনো?

তুষার রেগে দেওয়ালে ঘুসি মারলো দুবার তারপর হনহনিয়ে চলে গেলো।

কুয়াশা তখন ক্লাস রুম থেকে হলরুমে গিয়ে ফেন্ডদের সাথে মাথা ব্যাথার নাম করে বাসায় চলে যায়। বাসায় যেতেই পাখি বলল

-কি রে তেরা এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলি যে শরীর টরীল ঠিক আছে তো?(পাখি)

-হ্যাঁ তুমি টেনশন নিও না এমনি মাথা ব্যাথা করছিলো ওতো শব্দে তাই চলে আসলাম(কুয়াশা)

-আচ্ছা যা ফ্রেশ হয়ে নে তোরা আমি তোদের জন্য গরম দুধ নিয়ে যাচ্ছি(পাখি)

ওরা দুজনই চোখ মুখ কুচকে বলল

-ওটা খেতে ভালো লাগে না কফি দাও(মেঘা)

-মারবো টেনে একচড় যা ফ্রেশ হয়ে নে পাটকাঠির মতো শরীর নিয়ে কফি খাবি দাড়া নিয়ে আসছি(পাখি)

কুয়াশা আর মেঘা কিছু বললো না কাঁদো কাঁদো মুখে রুমে চলে গেলো

.

কিছু বুঝলেন না তো কেনো তুষার তখন রাজকে মারলো আসলে তখন কুয়াশার পেট থেকে শাড়ি সরে গিয়েছিলো। আর রাজ সেটা দেখে সেদিকে হাত বাড়ায় তখনি তুষার একটা কাজে এদিক দিয়ে যাচ্ছিলো কুয়াশার পিছনে রাজকে দেখে ওদের কাছে আসতে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে রাজের হাত মুচড়ে ধরে। তারপর তো জানেনই।

.

রিমা কুয়াশাকে দেখে রাগে ফুসছে। তুষারের সাথে কুয়াশাকে সহ্য করতে পারছে না। রিমা ওদের দু’জনকে একসাথে দেখেছে কিন্তু কিছু বলছে না রাগ পুসে রাখছে। হিংসা, রাগ, অহংকার মানুষকে নিঃশেষ করে দেয়। মানুষকে ভুল পথে ধাবিত করে। তখন সে ভালো খারাপের পার্থক্য ভুলে যায়। নিজের ক্ষতি করতেও দু’বার ভাবে না।

#চলবে
#tasnim_tamanna

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবে]

#তাসনিম_তামান্না
#ভালোবাসি_প্রিয়তম
#পর্ব_১০

???

কুয়াশা আবার আগের মতো লাইফ রিড করছে।সকালে উঠে রেডি হয়ে কলেজে যাওয়া, কলেজে মন দিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া,কলেজে থেকে ফিরে সবার সবার সাথে দুষ্টমি করা।তুষারের ফেন্ডদের সাথে ও কথা বললে তুষারের সাথে কথা বলে না। সবকিছুই নিয়মমাফিক ভালো ভাবেই চলছে। শুধু এখন আর আগের মতো তুষারের দিকে মাঝেমধ্যে তাকিয়ে থাকলেও এখন তুষারকে ফুল দমে ইগনোর করে। তুষারেও খারাপ লাগে সেদিন ওভাবে কথাগুলো বলে নিজের মধ্যে অপরাধ বোধ কাজ করছে ওর কুয়াসার সাথে কথা বলার সুযোগ খুঁজেছে অনেক কিন্তু পাই নি।মুলত কুয়াশায় সুযোগ দেই নি। সেদিনের পর আর রাজকে কলেজে দেখা যায় নি।রিমা আগের মতোই তুষারের সাথে ছেঁড়ার মতো এটে থাকে।

আজ কুয়াশারা কেউ কলেজে যায় নি। আজ কুয়াশার বাবা-মা, চাচা-চাচির মৃত্যুবার্ষীকি তাই ওরা বৃদ্ধাশ্রমে,আশ্রমে বাচ্চাদের নিজে হাতে খাওয়াবে। এইদিনটাতে ওদের যার যতোই কাজ থাকুক না কেনো সব ফেলে বাবা-মায়ের কবরের পাশে থাকার চেষ্টা করে। আর ওরা যে যখন সময় পাই তখন ওরা এখানে আসে। কিন্তু এই দিনটাতে ওরা একসাথে আসে।

কুয়াশা একা কবরের পাশে বসে আছে। আর নানা কথা বলে কান্না করছে।

.

-আজ মেঘা, কুয়াশা ওরা তো কলেজে আসলো না(রিদ)

কলেজে ব্রেকটাইমে বসেছিলো ওরা সবাই তখন রিদ সবার উদ্দেশে বলল কথাটা

-হ্যাঁ ওদের আবার শরীর খারাপ হলো নাকি (তন্নি)

-হতেও পারে (মুন)

-দাঁড়া ওদের ফোন নম্বর নিয়েছিলাম সেদিন ফোন দিয়ে দেখি (রিদ)

-গুড আইডিয়া লাউডস্পিকারে দে (রুকাইয়া)

-তোরা কি কোথাও দেখছিস সিনিয়রা জুনিয়রদের নিয়ে তোদের মতো এমন নাচানাচি করছে(তুষার জুস খেতে খেতে বলল)

-একদম ঠিক বলছো তুষার। তোমরা একটু বেশি বেশি করছো ঐ মেয়েকে নিয়ে (রিমা)

-বুঝলাম না এতো সমস্যাই যখন হচ্ছে তাহলে এখানে বসে আসো কেনো বলতো তোমরা দুজন চলে গেলেই পারো আমরা তো তোমাদেরকে আটকে রাখি নি (রুকাইয়া)

-এই তোরা থাম কথা বলবি না চুপ যা (সাদাফ)

-রাইট তোরা চুপ করলে আমিও ফোনটা দিতে পারি(রিদ)

রিমা একটা মুখ ভেঙ্গছি দিয়ে বসে রইলো। তুষারও আর কিছু বললো না চুপচাপ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে খেতে লাগলো। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিলেও ও জানতে চাই কুয়াশার কেনো আসলো না? কি হইছে ওর এসব ওর মনে বার বার হানা দিচ্ছে প্রশ্নপাখিরা!! ও যতই কুয়াশাকে নিয়ে ভাবতে চাই না ততই কুয়াশার কথা ওর মনে পড়ে।

রিদ মেঘার কাছে ফোন ৩-৪ বার কিন্তু মেঘা ফোন ধরলো না মেঘার ফোন সাইলেন্ট করা।

-ফোন ধরে না তো (রিদ)

-কার কাছে ফোন দিসিলি? (হাসান)

-মেঘা (রিদ)

-এবার কুয়াশার কাছে দে (হাসান)

-যদি না ধরে আমি তো কুয়াশাকে কখনো ফোন দি নাই (রিদ)

-আচ্ছা দিয়ে দেখ কি হয় (রুকাইয়া)

মেঘ কুয়াশা কাছে ফোন দিলো। কুয়াশা তখন শান্ত হয়ে বসে চোখের পানি ফেলছিলো। ফোনের শব্দে ওর ধেন ভাঙ্গলো। নম্বরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ফোন কেটে গেলো। দ্বিতীয় বার ফোন দিতেই ফোন ধরলো ওপাশ থেকে কিছু বলার আগে কুয়াশা ভাঙা গলায় ‘হ্যালো’ বলল। ফোনের ওপাশে থাকা সবাই অবাক হলো। কি হলো আবার এ মেয়ের এভাবে কাঁদছে কেনো? রিমা বিরবির করে বলল

-ঢং যতো সব (রিমা)

কেউ শুনতে না পেলেও তুষার পাশে বসে থাকাই ঠিকি শুনতে পেলো। রিমার এমন কথায় তুষারের রাগ হলেও চুপচাপ হজম করলো। কয়েক সেকেন্ড পর নিজেই অবাক হয় ওকেনো এতো রাগ হচ্ছে কুয়াশাকে রিমা এসব বলায়? এবার ওর নিজেও ওপরেই রাগ হচ্ছে।

রিদ কিছু বলতে নিবে তার আগে ওপাশ থেকে কুশ বলল

-পিপি তুমি কান্না কলছো কেনো? (কুশ)

রুকাইয়া ওদের কথা বলতে ইশারায় বারণ করলো ওরাও আর কোনো কথা বললো না। কুয়াশা ওপর পাশ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে ফোন না দেখেই পাশে রেখে বলল

-কিছু হইনি সোনা (কুয়াশা)

-তোমলা সবাই কাঁদছো কেনো আমাল খুব কতো (কষ্ট) হচে (কুশ)

কুয়াশা কুশকে কোলে নিয়ে বসে কুশও কুয়াশার কোলে গুটিসুটি মেরে বসে থাকে বলল

-তোমাল মুকে ভ্যাঁ লেগে আছে (কুশ)

কুশ মুছতে গেলে কুয়াশা বলল

-মুছো না সোনা বাবাই এটা তোমার দাদুমনির থেকে নিয়েছি (কুয়াশা)

-দাদুমনি? (কুয়াশা)

-হুম (কুয়াশা)

-কিন্তু মাম্মা পাপা যে বলে দাদুমনি, দাদুলা তালা হয়ে গেছে তাহলে কি ওলা আবাল ফিলে এসেছে (কুশ)

-এই যে দেখছো ওরা সবাই এখানে শুয়ে আছে (কুয়াশা)

-কিন্তু কই ওলা আমি তো দেখতে পাচি না (কুশ)

-এই যে মাটির তলায় এটাকে কবর বলে এটাতে আছে (কুয়াশা)

-ওটাতে ওদেল কষ্ট হচ্ছে তো ওদেলকে ওখান থেকে নিয়ে আসো (কুশ)

-নিয়ে আসা যাবে না তো সোনা (কুয়াশা)

কুয়াশা প্রতিটা কথা ভাঙা গলায় শান্ত হয়ে বসে বলল। কিন্তু চোখ থেকে পানি পড়া বন্ধ হচ্ছে না। প্রতিরাতে কুয়াশা তার বাবা-মায়ের সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো ভেবে কখনো হাসে আবার কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যায়। কুশান এসে কুয়াশাকে জড়িয়ে ধরে বলল

-বাবুইপাখি তুই কাঁদছিস কেনো? (কুশান)

-ভাইয়া মাম্মা পাপা কেনো চলে গেলো আমার খুব কষ্ট হয়। কেনো চলে গেলো মাম্মা পাপা কেনো? মাম্মা, পাপা, মামনি, বাবাইকে এনে দাও প্লিজ। আমি খুব মিস করি ওদের (কুয়াশা)

-বাবুইপাখি দেখ এমন ভাবে কান্না করতে নাই প্রতিরাতে তুই কাঁদিস কি ভেবেছিস আমি জানি না আমি জানি তো আমার পরিটা কাঁদে (কুশান)

-মিস করি তো (কুয়াশা)

-আমি আছি তো,তোর ভাবিপু আছে, মেঘ, মেঘা,কুশ,শান সবাই আছে দেখ আমরা সবাই আছি কেনো এভাবে কাঁদিস তোরা আমি কি নিয়ে বাচ্চবো বলতো (কুশান)

-আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ভাইয়া (কুয়াশা)

-কান্না থাকা শরীর খারাপ করবে তো (কুশান)

-ভাইয়া!! (মেঘ)

কুশান কুয়াশাকে ছেড়ে পিছনে ফিরে দেখলো মেঘ দাড়িয়ে আছে। মেঘের চোখজোড়া রক্তি হয়ে আছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেকক্ষন কান্না করছে।

-তুই ও (কুশান)

মেঘ কুশানকে জড়িয়ে ধরে বলল

-ভাইয়া তুই আর ভাবিপু না থাকলে আমাদের কি হতো বলতো (মেঘ)

-ওফ কান্না থামা তো তোরা আমার ছেলে দুইটাকেও শিখাছিস (কুশান)

ওরা কান্নার মাঝেও হেসে দিলো। তখন মেঘা এসে বলল

-বাহ বাহ আমাকে কেউ ভালোবাসে না থাকবো না এখানে চলে যাবো হুহ (মেঘা)

মেঘ মেঘার কান টেনে ধরে বলল

-সবসময় হিংসা করিস কেন (মেঘ)

-আহ (মেঘা)

-কি হচ্ছেটা কি ছাড় ওকে আমার বোনকে মারার এতো বড় সাহস দিলো কে? (কুশান)

কুশান মেঘা মেঘের কাছ থেকে ছাড়িয়ে ওকেও জড়িয়ে নিয়ে বলল। মেঘাও নালিস করলো মেঘের নামে। মুহুর্তের মধ্যে সব স্বাভাবিক হয়ে গেলো।

পাখি আর শান এসে দেখলো ওরা সবাই এখানে। ও ও এসে বলল

-আমাদের ভুলে গেলা থাক চল শান আমরা চলে যায় (পাখি)

-না আমি ওতানে (ওখানে) যাবো (শান)

ওদের কান্ড দেখে হাসতে লাগলো সবাই।পাখি রেগে বলল

-তুই ও তোর বাপের মতো ছেচড়া (পাখি)

শান কিছু বুঝতে না পেরে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে কুশের পাশে গিয়ে দাড়ায়। কুশান এসে পাখিকে জড়িয়ে ধরে বলল

-আমার বউটার আদর লাগবে (কুশান)

-কি হচ্ছে টা কি এখানে সবাই আছে (পাখি)

কুশান পাখিকে ছেড়ে দিয়ে বলল – গাইস তোমরা কি কিছু দেখছো

ওরাদের চোখে হাত দেওয়া ছিলো। ওদের দেখে কুশ আর শানও চোখে হাত দিয়ে ছিলো। কুশান শুনতেই ওরা মাথা নাড়িয়ে বলল ‘না’।

-ভাইয়া আমরা কিছু দেখি নি তোরা চালিয়ে যা (মেঘ)

পাখি সবার সামনে লজ্জা পেলো।

– মেঘের বাচ্চা আমি তোর বড় ভাই হই সম্মান দিয়ে কথা বল (কুশান)

-যা বাবাহ আমি তোকে কখন অসম্মান করলাম আর তোর কবে সম্মান ছিলো আমার মনে পড়ছে না (মেঘা)

-আমি কিন্তু আর চোখ বন্ধ করে রাখতে পারছি না হাত ব্যাথা করছে তোমাদের কাজ শেষ (কুয়াশা)

-আমারও (মেঘা)

-কত বড় ফাজিল তোরা চল (কুশান)

পাখি তো পারেলে মাটিতে ডুকে পরতো। চল বললার সাথে সাথে পাখি দৌড়ে ওখান থেকে চলে আসলো।

রিদ সাবধানে ফোনটা কেটে দিলো। ওরা এতোক্ষণ ফোনেই ছিলো সব শুনছে ওরা ওদের সবার চোখেই পানি আর মুখে হাসি এমনকি তুষার রিমার চোখেও। তুষারে এবার অপরাধ বোধটা যেনো বেড়ে গেলো। যারা নাই তাদেরকে নিয়ে ও কি কথাই না বলল!!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here