Story: ভালোবাসি_প্রিয়
Part: 13+14
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
সকালে ঘুম থেকে উঠেই গুছগাছ শুরু করলো নাফিসা। তার সমস্ত শাড়ি ব্যাগে রাখলো। মামিকে শাড়ি পড়তে দেখে আগে থেকেই ইচ্ছে ছিলো বিয়ের পর সেও শাড়ি পড়বে। মামির কাছ থেকেই শাড়ি পড়া শিখেছে। মাঝে মাঝে ফ্রেন্ডদের সাথে শাড়ি পড়ে ঘুরতেও যেতো আবার বিভিন্ন প্রোগ্রামে শাড়ি পড়ে এটেন্ড করতো। ছয়টা শাড়ি আছে তার কাছে। সবগুলোই ব্যাগে রাখলো। কিন্তু এখন যাবে কি পড়ে! থ্রিপিস নাকি শাড়ি! প্রথম শশুর বাড়ি যাবে, শাড়ি পড়েই যাওয়া যাক। ব্যাগ থেকে শাড়ি গুলো বের করে এবার দেখতে লাগলো কোনটা পড়বে! দিনার গায়ে হলুদে মেহেদী বলেছিলো, “কাল লাল শাড়ি পড়ে বউ সাজবে কি?”
নাফিসা কথাটা মনে করে লাল দুইটা শাড়ির মধ্য হতে জর্জেট লাল শাড়িটা হাতে নিলো। এটাই পড়বে। মেয়েরা বিয়ের দিন তো লাল শাড়ি পড়েই স্বামীর বাড়ি যায়! সেও যাবে। বাকি শাড়িগুলো ব্যাগে রেখে দিলো। সাথে কিছু টাকাও নিলো। আর তার প্রয়োজনীয় যা যা আছে সব গুছিয়ে নিলো। বড়সর লাগেজটা ফুলফিল। নেওয়ার মতো আরো অনেক কিছু বাকি আছে, কিন্তু এতোসব নিয়ে যাওয়া যাবে না। বাড়িতে তার ঠাই হয় কিনা, সেটাই তো তার জানা নেই! আবার এতো কিছু!
নাফিসা গোসল করে নাস্তা করতে এলে মামা বললো, তিনি এগিয়ে দিয়ে আসবেন। কিন্তু নাফিসা মামাকে নিষেধ করলো। আর নাফিসা যাওয়ার পর যেন মামামামী কোন খোঁজ নিতে না যায়, সেটাও বলে দিলো। মামা বারবার এমন পদক্ষেপ নিতে নাফিসাকে ভাবতে বলেছেন। নাফিসা বারবার একই কথা বলছে সে যাবে। আর তাকে যেন বাধা না দেয়। নাস্তা শেষ করে রুমে এসে লাল শাড়িটা পড়ে নিলো সাথে মেহেদীর দেওয়া চুড়ি জোড়াও। ফোনটা সাথে নিয়ে নিলো। মামামামী আর অহনার কাছে বিদায় নিয়ে মেহেদীর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। বুকের ভেতর উথাল-পাথাল করছে। আল্লাহ জানে কি হয়। নাফিসাকে দেখার পর মেহেদী কি রিয়েকশন করবে! সে কি তাকে বউ হিসেবে মেনে নিবে! নাকি দেখা হতেই কি গলা চেপে মেরে ফেলবে! আজই কি তার শেষ দিন নাকি! সিএনজিতে বসে নানান কথা নাফিসার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে! একদিকে ভয় অন্যদিকে আনন্দও হচ্ছে তার। লাল শাড়ি পড়ে প্রথম শশুর বাড়ি যাচ্ছে একা একা। না আছে সাথে কনেপক্ষ! আর না আছে সাথে বরপক্ষ! এমনকি বরটাও নেই সাথে!
সিএনজিতে থেকে হঠাৎ রাস্তায় মেহেদীকে দেখলো নাফিসা। দূর থেকে দেখেই বুকের ভেতর মোচড় দিলো! এই কয়দিনে কি অবস্থা হয়ে গেছে ছেলেটার। সব কিছুর জন্য সে দায়ী। মেহেদী কারো সাথে কথা বলতে বলতে সামনের দিকে আস্তে আস্তে হেটে যাচ্ছে। পাশের লোকটাকেও তেমন ভালো দেখাচ্ছে না।
দিনার দেয়া এড্রেস অনুযায়ী নাফিসা সোজা মেহেদীর বাড়িতে চলে এলো। আট-দশ বছরের একটা পিচ্চির কাছে জিজ্ঞেস করে জেনে নিলো মেহেদীর বাড়ি কোনটা। নাফিসা সেখানে এলো। রাস্তা থেকে বেশি দূরে না। রাস্তার কাছেই বাড়িটা। সামনে ছোট একটা উঠুন আছে। লাগেজ টেনে ছোট ছোট কদমে নাফিসা ঘরের দিকে এলো। দরজায় তালা দেওয়া। এখন ভেতরে প্রবেশ করবে কিভাবে! মেহেদী তো এদিক থেকে একটু আগে চলে গেলো। বাড়িতে কখন আসবে কে জানে! নাফিসা দরজার সামনে লাগেজ রেখে বাড়ির চারদিক হেটে দেখতে লাগলো। ঘরের দেয়াল ইটের কিন্তু চালা টিনের। ভেতরে দুইটা রুম হবে হয়তো। সামনের দিকটা টিন দিয়ে ঘেরা বারান্দা। চারিদিকে বেড়া দিয়ে ছোট রুমই বানিয়ে রাখা হয়েছে। বারান্দার মাঝামাঝিতেই মেইন দরজা, যেটায় তালা ঝুলছে। আশেপাশে তাকিয়ে কোন রান্নাঘর, বাথরুম কিছুই পেল না। ঘরের ভেতরেই হয়তো এটাচড করা। বারান্দার বাইরে একপাশে গিয়ে পানির পাইপ, গ্যাসের পাইপ দেখতে পেল। তাহলে ঘরের ভেতরেই সব। বাড়িতে কয়েকটা গাছ লাগানো আছে। আমগাছ, মেহগনি ও আকাশি। পরিবেশটা মুটামুটি ঠান্ডাই। নাফিসা গাছের দিকটায় একটা কাগজের উপর বসে রইলো অনেক্ক্ষণ। দুপুর হয়ে গেছে। মেহেদী বাসায় আসছে না এখনো। আসবেই বা কার জন্য! বাসায় যে কেউ নেই! কিন্তু নাফিসাই আর কতোক্ষন বসে থাকবে! ফোনের স্ক্রিনটা জ্বালিয়ে দেখলো প্রায় দুইটা বাজতে চলেছে। এবার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে নাফিসা হাতে একটা ইট নিলো। ইট দিয়ে দরজার তালা ভাঙতে লাগলো। জোরে জোরে পাচ ছয়টা মারতেই তালা ভেঙে গেলো। নাফিসা হাপিয়ে গেছে। শশুর বাড়িতে প্রথম এসেই ভেতরে প্রবেশ করার জন্য তালা ভাঙছে। ভাবতেই ক্লান্ত মুখে হাসি ফুটে উঠলো নাফিসার। লাগেজটা নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে ঘরে পা রাখলো নাফিসা। বাইরে থেকে ছোট দেখালেও ভেতরে বারান্দাটা বড় দেখাচ্ছে। একপাশে দুইটা দরজা। উকি দিয়ে দেখলো একটা ছোট রান্নাঘর অন্যটা বাথরুম। আর বাকি বারান্দা সম্পূর্ণটা ফাকা। চালের ড্রাম আছে একটা। বারান্দায় ছোট একটা জানালা। বারান্দা দেখে রুমের দিকে তাকিয়ে দেখলো পাশাপাশি স্টিলের দুইটা দরজা। তার ধারণাই ঠিক। দুইটা রুম। একটা তালা লাগানো আর একটা এমনিতেই আটকানো। নাফিসা আর তালা ভাঙাভাঙি না করে তালা ছাড়া রুমটার দরজা খুলে প্রবেশ করলো। অন্ধকার রুম, দরজা খোলায় আবছা আলো ঢুকছে ভেতরে। নাফিসা সুইচ খুজে লাইট অন করলো। এলোমেলো হয়ে আছে রুমটা। মেঝেতে ছড়িয়েছিটিয়ে আছে ছোট ছোট আসবাবপত্র। কাপড়চোপড় এখানে সেখানে ছিটিয়ে আছে। মেহেদীর গিটারটা ভেঙে চুরমাচুর হয়ে খাটের পাশে পড়ে আছে। কাছে এসে ভাঙা গিটার হাতে নিলো। ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে নাফিসার। চোখ দিয়ে টুপটাপ পানি পড়ছে। খাটের কোনে রেখে চোখের পানি মুছে দাড়ালো নাফিসা। জানালার পাশে এসে জানালা খুলে দিলো। এবার সূর্যের আলোতে পুরো রুম আলোকিত হয়ে গেল। শাড়ির আঁচলটা কোমড়ে গুজে মেহেদীর কাপড়চোপড় ভাজ করে ওয়ারড্রবে রাখলো। এলোমেলো বইখাতা মেঝে থেকে তুলে টেবিলে রাখলো। ভাঙা গিটারটা ওয়ারড্ররের উপর তুল বাকি ভাঙাচোরা আসবাবপত্র বাড়ির পেছনের দিকে ময়লার স্তুপে ফেলে দিলো। সবকিছু ঠিকঠাক গুছিয়ে ঝাড়ু খোঁজে বারান্দাসহ সম্পূর্ণ রুম ঝেড়ে পরিস্কার করলো। রান্নাঘরে ঢুকে এলোমেলো থালাবাটি ধুয়ে সবকিছু গুছিয়ে রাখলো। চারিপাশে তাকিয়ে সবটা একবার দেখে নিলো। এবার মনে হচ্ছে এটা বসবাসযোগ্য একটা ঘর। কিন্তু যেটা তালা দেয়া সেটা আর খুলেনি। মায়ের রুম হবে হয়তো। এমনিতেই এক তালা ভেঙেছে, এখন আরেকটা ভাঙলে তার কপালে কি আছে কে জানে! সেই ভয়ে আর খুলতে গেলো না। মেহেদীর মেঝেতে পড়ে থাকা ময়লা কাপড় নাফিসা ধুয়ে উঠোনে টানানো দড়িতে শুকাতে দিলো। এসব করতে করতে বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
কাজ করতে করতে ক্ষুধা লেগে গেছে। সকাল নয়টার দিকে খেয়েছে আর খাওয়া হয়নি। কিন্তু খাবে কি! রান্নাও যে করেনি! এমনি ফোনটা বেজে উঠে। মামা কল করেছে।
– হ্যাঁ মামা বলো।
– কোথায় আছো?
– মেহেদীর বাসায়।
– নাফিসা সব ঠিক আছে?
– হ্যাঁ।
– মেহেদী তোমাকে এতো সহজে মেনে নিলো।
– একটু বুঝিয়েছি। এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। তবে আস্তে আস্তে হয়ে যাবে আশা করি।
– মেহেদীর কাছে দাও, আমি কথা বলি।
– আমার উপরই তো রেগে আছে, এখন কি তোমার সাথে কথা বলবে! আগে সবটা স্বাভাবিক হোক, পড়ে তোমার সাথে কথা বলিয়ে দিবো।
– আচ্ছা, ভালো থেকো। যেকোনো প্রয়োজনে আমাকে জানাবা।
– ওকে।
মামার সাথে কথা বলে মামির সাথে কথা বললো। মামি জিজ্ঞেস করলো লাগেজে খাবার রেখেছে তা খেয়েছে কিনা! সে তো খাবারের কথা জানেই না! কল কেটে নাফিসা বললো,
– মিথ্যে বলেছি আমি তোমাদের। মাফ করে দিও। মেহেদীর তো দেখাই পেলাম না আমি!
হাতমুখ ধুয়ে এসে নাফিসা খাটে বসে লাগেজ খুললো। লাগেজ খুলে খাবারের বক্স হাতে নিলো। নষ্ট হয়নি এখনো!
মাগরিবের আযান পড়লে লাগেজ থেকে ওড়না নিয়ে মেঝেতে বিছিয়ে নামাজ পড়ে নিলো। ফজরেরটা পড়েছিলো আর পড়া হয়নি। নামাজে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে মেহেদী ও তার মায়ের জন্য সহ সবার জন্য দোয়া করলো। নামাজ শেষে কিছু খাবার সে নিজে খেয়ে বাকিটা মেহেদীর রুমে রাখা ছোট ফ্রিজে রেখে দিলো মেহেদীর জন্য। এখন পেটে শান্তি লাগছে। মেহেদী এখনো আসছে না। বারান্দার দরজাটা ধাক্কা দিয়ে চাপিয়ে রেখেছে। মেহেদী এসে যদি আবার ভাঙচুর শুরু করে সেই ভয়ে। মেহেদীর রুমের দরজাটা আটকিয়ে সে বাথরুমে গেলো।
মেহেদী বাসায় ফিরতেই দেখলো তার শার্ট বাইরে দরিতে! এটা এখানে কিভাবে এলো! সকালে কি সে ই রেখে গেছে! এটা এখনো ভেজা কেন! দরজার সামনে আসতেই দেখলো ভাঙা তালা ঝুলছে! বাসায় চোর এসেছে নাকি! দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে ভেতরে এলো। বারান্দায় লাইট জ্বালানো! সে তার রুমের দরজা খুলে ভেতরে এলো। তার রুমেও লাইট জ্বালানো! সম্পূর্ণ রুম গোছানো! কে করলো এসব! সবসময় তো মা গুছিয়ে রাখে! মা কি ফিরে এসেছে! তার বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠলো! সে মা বলে ডাকতে লাগলো। রান্নাঘরে উকি দিয়ে মায়ের দেখা পেল না। মায়ের রুমের দিকে যেতে নিলে দেখলো সেখানে তালা লাগানোই আছে। মা তো নেই! কে এসেছে তার ঘরে! কি হচ্ছে এসব তার সাথে! এমনি বাথরুম থেকে নাফিসা বেরিয়ে এলো। মেহেদী তাকে দেখে থমকে দাড়ালো। নাফিসাও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এবার খুব কাছ থেকে দেখছে ছেলেটার অবস্থা। চোখে অশ্রু ভীড় জমাতে শুরু করেছে। এ কি সেই মেহেদী! সে তো খুব স্মার্ট ছিলো। দেখতে খুব সুন্দর ছিলো। আজ তার এই অবস্থা করে ফেলেছে!
– তু..তুই এখানে কেন?
নাফিসা চোখের পানি মুছে কোমড় থেকে আঁচলটা খুলে মেহেদীর রুমে প্রবেশ করতে করতে বললো,
– কেন! অন্য কারো আসার কথা ছিলো নাকি!
নাফিসা কথা বলে রুমে এসে জানালা বন্ধ করতে লাগলো। মেহেদী পিছু পিছু দ্রুত তার রুমে প্রবেশ করে নাফিসার হাতে জোরে টান দিয়ে পেছনে ঘুরালো।
– এখানে কারো আসার কথা ছিলো না। তুই এসেছিস কেন?
নাফিসা চোখে চোখ রেখে বললো,
– আমার স্বামীর বাড়ি, আর আমি আসবো না!
– স্বামীর বাড়ি মানে! কে তোর স্বামী?
– তুমি আমার স্বামী।
– হুহ্! তোর মতো মেয়েকে কে বিয়ে করবে রে!
– আর কাউকে করতে হবে না। মেহেদী নামের ছেলেটা তো আমাকে আগেই বিয়ে করে বউ বানিয়ে ফেলেছে।
– কিসের বিয়ে! ওটা বিয়ে ছিলো না। ওটা জুলুম ছিলো। আর আজ ওই লোকগুলো তোর সম্পর্কে জানলে হয়তো নিজেদের কপাল চাপড়াতো। যে তোর মতো মেয়েকে তারা জীবিত রেখেছে। এই, রিসাদও কি তোকে ত্যাগ করেছে!
– রিসাদকে তো গ্রহণ করার সুযোগই দেইনি, ত্যাগ করবে কিভাবে! আমি তাকে জানিয়ে দিয়েছি আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে আর তুমিই আমার স্বামী।
– দেখ, এখন কিন্তু আর আমার কাছে কিছু নেই, যা রিসাদ আর তোর দরকার পড়বে। সব শেষ হয়ে গেছে আমার, সব শেষ। এসব ড্রামা বন্ধ কর। আর চুপচাপ বেরিয়ে যা। না হলে আমার হাতে তোর মরণও হতে পারে।
– মরণ হলেও যে আমি যাচ্ছি না। সবকিছু ছেড়ে আমি তোমার কাছে চলে এসেছি স্ত্রীর অধিকার আদায় করতে।
– সর, ছুবি না আমাকে এই হাতে। তোর মতো মেয়েকে কোন পাগলও স্ত্রী মানবে না। তুই আমার মায়ের খুনি। আজ আমার মা থাকলে তুই তোর অধিকার পেয়ে যেতি।
হঠাৎ নাফিসার গলা চেপে ধরে চেচিয়ে বলতে লাগলো,
– স্ত্রীর অধিকার পেতে চাস? দে। আমার মাকে ফিরিয়ে দে। সব দিবো আমি তোকে।
নাফিসা ছুটার জন্য ছটফট করছে। একটু পর খুব জোরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো নাফিসাকে।
– এক মিনিট সময় দিলাম এখান থেকে বের হওয়ার জন্য। অন্তত আমাকে দিয়ে কোন খুন করতে বাধ্য করিস না।
মেহেদী দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো। নাফিসা মেঝে থেকে উঠে দাড়ালো। ওয়ারড্রবের কোনায় লেগে কপাল একটু কেটে গেছে।
– যাওয়ার জন্য আসিনি। খুন হয়ে গেলেও যাবো না আমি মেহেদী।
খাটে বসে কপালের রক্ত মুছে নিলো। একটুপর বাইরে থেকে মেহেদীর শার্ট আনার জন্য বারান্দায় যেতেই মেহেদী দরজা দিয়ে ভেতরে চলে এলো। বারান্দার দরজাটা লাগিয়ে নাফিসার হাত ধরে টেনে তার রুমে নিয়ে এলো। রুমের দরজাও ভেতর থেকে বন্ধ করে নাফিসার দিকে তাকিয়ে বললো,
– হাতের কাছে পেয়ে তোকে এভাবে যেতে দেই কিভাবে! অপহরণের মামলা দিয়েছিলি না আমার নামে! আজ বুঝবি অপহরণ কি জিনিস। এরপরের মামলায় আমার ফাসি হলেও কষ্ট লাগবে না আমার। এক বিন্দুও কষ্ট লাগবে না।
মেহেদী শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে নাফিসার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নাফিসা পিছিয়ে যেতে যেতে ধপাস করে খাটে বসে পড়লো।
– ক..কি করতে চাচ্ছো তুমি!
– কিছু না করেই যেটার অগ্রিম শাস্তি পেয়েছি, আজ সেটাই করবো!
Story: #ভালোবাসি_প্রিয়
Part: 14
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
মেহেদী শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে নাফিসার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নাফিসা পিছিয়ে যেতে যেতে ধপাস করে খাটে বসে পড়লো।
– ক..কি করতে চাচ্ছো তুমি!
– কিছু না করেই যেটার অগ্রিম শাস্তি পেয়েছি, আজ সেটাই করবো!
– ত..তুমি সারাদিন খেয়েছো কিছু? তুমি বসো, আমি খাবার গরম করে আনছি।
নাফিসা মেহেদীকে হালকা ধাক্কা দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই মেহেদী শাড়ির আঁচল ধরে এক হেচকা টান দিয়ে খাটে ফেলে দিলো। সাথে সাথে ঝাপিয়ে পড়লো নাফিসার উপর।
মাঝ রাতে জানালার পাশে দাড়িয়ে একের পর এক সিগারেট জ্বালিয়ে চলেছে মেহেদী। আর এদিকে বিছানায় ছটফট করছে নাফিসা। মানুষের দাতের আঘাত এতোটা বিষাক্ত হয় তা এই প্রথম অনুভব করলো সে। সর্বাঙ্গে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে! হিংস্র পশুর মতো ঝাপিয়ে পড়েছে মেহেদী কিন্তু নাফিসা একটুও বাধা দেয়নি। ব্যাথা লাগছে ঠিকই কিন্তু একটুও কষ্ট হচ্ছে না। সে মেনে নিয়েছে, এটাই তার ভাগ্য এটাই তার প্রাপ্য। আর বারবার মনে মনে একটা কথাই বলছিলো, ” তুমি যা ই বলো আর যেভাবেই কাছে আসো, আমি তোমাকে মন থেকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছি মেহেদী। আল্লাহ আমাকে ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা দাও।”
জানালার দিকে তাকিয়ে দেখলো মেহেদী সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে! সে সিগারেট খায়! আগে তো এমন ছিলো না! লাইফটাকে এভাবে নষ্ট করছে কেন! নাফিসা কিছু বলার শক্তিটুকুও পাচ্ছে না মুখে! বললেই কি শুনবে নাকি! চোখে ক্লান্তি নেমে এসেছে। চোখের পাতা এক করে ফেললো।
হঠাৎ মুখে ছিটকে পানি এসে পড়লে নাফিসা চোখ খুলে তাকালো। মেহেদী গ্লাস হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। গোসল করেছে মনে হয় মাত্র। তার চুল ভেজা ভেজা দেখাচ্ছে। বুকের লোমগুলোও ভেজা। সকাল হয়ে গেছে।
– ওই, ওঠ। এটা তোর মামুর বাড়ি না, যে আরাম করে শুয়ে থাকবি।
হয়েছে আর আরামে শোয়া! গাধা একটা! আমাকে ভেজাতে গিয়ে কাথা বালিশও ভিজিয়ে ফেলেছে! মনে মনে বকতে বকতে লাগেজ থেকে একটা সুতি শাড়ি বের করে আস্তে আস্তে হেটে বাথরুমে চলে গেলো নাফিসা। গোসল সেরে এসে দেখলো মেহেদী ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করছে। নাফিসাও চুল মুছতে মুছতে রুমে প্রবেশ করলো। নাফিসাকে আসতে দেখে মেহেদী প্যান্টের পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে পাচশত টাকার একটা নোট নাফিসার মুখে ছুড়ে মারলো। নাফিসা ব্রু কুচকে মেহেদীর দিকে তাকিয়ে রইলো। মেহেদী শার্ট নিয়ে পড়তে পড়তে বললো,
– এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? খুশি হসনি এতে? খুশি না হলেও কিছু করার নেই। এর চেয়ে বেশি আমার কাছে নেই। বেশি লাগলে রিসাদের মতো ছেলেদের কাছে যা।
– কি বলছো তুমি এসব? টাকা কেন দিছো?
– কেন আবার! কাল রাতে আমাকে সময় দেয়ার জন্য।
– আমাকে কি রাস্তার পতিতা মনে হয়?
– তার চেয়েও খারাপ তুই। তারা তো টাকার জন্য প্রকাশ্যে মানুষের ধারে ঘুরে, কিন্তু তুই তো আরো বেশি ভয়ংকর! কার পেছনে কি উদ্দেশ্যে ঘুরে বেড়াস, বুঝাই যায় না!
কথাটা অন্তরে আঘাত করলো নাফিসার। এতো বড় অপবাদ দিয়ে তার দিকে আজ আঙুল তুলছে! সত্যিই কি এতোটাই খারাপ সে! চোখ বন্ধ করে বড় একটা নিশ্বাস ছাড়লো।
– টাকা আর তোর আসবাব নিয়ে দ্রুত বের হয়ে যা ঘর থেকে। আর এই হাটুভাঙা মামলা না দিয়ে কড়াভাবে দিস। আজ তো রিসাদ নেই সাক্ষী দেয়ার জন্য। আমি নিজেই সাক্ষী দিবো তোর পক্ষে। যা…
– আমি চলে যাওয়ার জন্য আসিনি, তোমার কাছে থাকার জন্য এসেছি।
– আমার কাছে শুধু শুধু থাকবি কেন! কিছুই পাবি না এখানে। দূর হয়ে যা, তোর এই মুখ আমাকে দ্বিতীয়বার দেখাবি না।
– যাবো না আমি। বিয়ে হয়েছে আমাদের। আমি এখানেই থাকবো।
– মানি না আমি এই বিয়ে টিয়ে। আর কি প্রমাণ আছে, আমাদের বিয়ে হয়েছে?
– আমার কোন প্রমাণের প্রয়োজন নেই। তুমি না মানলেও আমি মন থেকে মেনে নিয়েছি।
মেহেদী শার্ট পড়ে নাফিসার লাগেজ তুলে নিয়ে বাইরে ঢিল মেরে ফেলে দিলো। তারপর নাফিসাকেও টেনে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলো।
– মেহেদী, এমনটা করো না। আমি কোনো স্বার্থে আসিনি। তোমার সঙ্গ দিতে এসেছি। প্লিজ এমন করো না।
– চলে যা। এ বাড়ির আশেপাশেও যেন তোকে না দেখি। খবরদার দ্বিতীয়বার তালা ভাঙার চেষ্টাও করবি না।
মেহেদী ঘরে তালা লাগিয়ে বেরিয়ে গেলো। নাফিসা লাগেজ তুলে সোজা করে গাছে হেলান দিয়ে রাখলো। সে ও গাছের নিচে বসে রইলো। বাড়ির চারিদিকে ছোট ছোট গাছগুলো ঝোপঝাড় হয়ে আছে। বাউন্ডারির মতো দেখাচ্ছে যার ফলে বাইরের কেউ দেখবে না। ইচ্ছে করেই রেখেছে হয়তো এগুলো। সামনের দিকটা আবার গেইটের মতো ফাকা। যতই বলুক যাবে না সে এখান থেকে। এদিকে শরীর এখনো ব্যাথা করছেই! কাটাছেঁড়া জায়গাগুলো জ্বলছে খুব। ক্ষুধাও লেগেছে। ঘরে তো খাবার রেখেছিলো মেহেদীর জন্য। এই ছেলে তো খেলোই না। তালা খোলা থাকলে নাফিসাই খেয়ে নিতো। না, আজ তালা ভাঙবে না। অপেক্ষা করবে মেহেদী না আসা পর্যন্ত। শরীরে একটু জ্বর জ্বর ভাব আসছে। ওফ্ফ! ওষুধ না খেলে রক্ষা নেই। টাকা তো আছে, কিন্তু আশেপাশে কি ডাক্তারের দোকান পাওয়া যাবে! নাহ, বসে থাকা যাবে না। খুঁজে দেখা প্রয়োজন। নাফিসা শাড়ির আঁচলে মাথাসহ সুন্দরভাবে ঢেকে নিলো যাতে শরীরের কোন স্পট না দেখা যায়। একটা বোরকা থাকলে ভালো হতো। মোবাইলটা বের করে চেহারাটা দেখে নিলো। চেহারায় কোন দাগ নেই। থুতনির দিকটায় একটু আছে, সেটা এতোটা বুঝা যায় না। এভাবেই যাবে সে। কিন্তু এই লাগেজ কোথায় রাখবে! এখানে রেখে গেলে তো চুরিও হতে পারে! তাই লাগেজ সাথে নিয়েই বের হলো। রাস্তায় একজন লোকের কাছে জিজ্ঞেস করে ডাক্তারের দোকানে গেলো। মেহেদীর বাড়ি থেকে বেশি দূরে না। সেখান থেকে জ্বরের ওষুধ ও কাটাছেঁড়ার মলম কিনে নিলো। আবার বাসার দিকে ফিরতেই লক্ষ্য করলো একজন মহিলা তার পিছু পিছু আসছে। তাকে ফলো করে যাচ্ছে নাকি! নাফিসা একটু আস্তে আস্তে হাটতে লাগলো। মহিলাটি তার কাছে এসে বারবার তার দিকে তাকাচ্ছে আর হাটছে।
– আন্টি, আপনি কিছু বলবেন?
– কে তুমি? কোথায় যাও?
– আমাকে চিনবেন না। আমি এদিকেই যাচ্ছি। আমার হাসব্যান্ড এর বাসায়।
– এদিকে তোমার হাসব্যান্ড এর বাসা? কে তোমার হাসব্যান্ড?
– আপনি কি এখানকার স্থানীয়?
– হ্যাঁ। আমার বাসা এখানেই। ওই যে গোলাপি রঙের বিল্ডিংটা দেখছো ওটাই আমার বাসা।
নাফিসা লক্ষ্য করলো মেহেদীর ঘরের পেছনের দিকেই ঘরটা। তাই বললো,
– ওহ, আচ্ছা। এই যে এটাই আমার হাসব্যান্ড এর বাসা।
– কি বলছো এসব! ভুল পথে আসোনি তো?
– না। সঠিক পথেই এসেছি।
– মেহেদী কি তোমার হাসব্যান্ড?
– জ্বি আন্টি।
– আমি তো মেহেদীর চাচি হই। আপন না, প্রতিবেশী আরকি।
– অহ আচ্ছা।
– তোমাদের বিয়ে হলো কবে?
– অনেক দিন আগেই।
– কিছুই তো জানলাম না। পালিয়ে বিয়ে করছো?
– না আন্টি, আসলে পড়াশোনার জন্য গোপনে বিয়েটা পড়ানো হয়েছে। পড়ে প্রোগ্রাম করার কথা ছিলো। এখন তো মা…
– ও বুঝতে পারছি। মেহেদী সম্পর্কে জানো কিছু?
– কি জানার কথা বলছেন?
– ছেলেটা অনেক ভালো ছিলো। কে জানে এমন কুকাজ করে বসবো। তারপর পুলিশ ধরে নিছে, সেই শোকেই তো মা স্ট্রোক করছে। আবার এদিকে ছাড়াও পেয়ে গেছে। এসব জানো না কিছু?
– আন্টি এটা আসলে একটা ভুল ছিলো। আমাদের বিয়ের কারণে এক মেয়ে আমার সাথে শত্রুতা করে তার নামে মিথ্যে মামলা দিছে। সে জন্যই এতো কিছু ঘটেছে। এখন তা মিথ্যে প্রমাণ হয়ে মেয়েটা নিজেই শাস্তি পাচ্ছে। আর এজন্যই পুলিশ মেহেদীকে ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু আশেপাশে যে দুর্নাম ছড়িয়েছে, তা তো আর সরানো যাবে না!
– এই কথা তাহলে! এজন্যই তো বলি, ছেলেটা তো এমন না। তোমাকে দেখে তো ধনী পরিবারের মেয়ে মনে হচ্ছে। মেহেদীকে হঠাৎ পছন্দ হয়ে গেল কি করে!
– অর্থ দেখেই কি মানুষের সাথে সম্পর্ক হয়! সব কিছুর মালিক আল্লাহ।
– তা ঠিক বলছো। মাশাল্লাহ, খুব সুন্দরী বউ পেয়েছে মেহেদী। অবশ্য মেহেদীও কিন্তু যথেষ্ট সুন্দর, স্মার্ট। তার মা মারা যাওয়ার পর কেমন যেন হয়ে গেছে। এখন তুমি এসেছো, আবার আগের মতো হয়ে যাবে।
– ইনাশাল্লাহ। দোয়া করবেন।
– হ্যাঁ, কিন্তু তুমি একা এলে কেন! মেহেদী নিজেও তো নিয়ে আসতে পারতো।
– সেই ঘটনার পর আমার সাথেও তেমন যোগাযোগ রাখেনি। বলেছে তাকে ভুলে যেতে। তার নিজের জীবনের কোনো অস্তিত্ব নেই। বললেই কি সব ভুলা যায়! আপনিই বলুন আন্টি। তাই আমি নিজেই চলে এসেছি।
– না এটা ঠিক করেনি। এখানে তুমিই ঠিক করেছো। মেহেদী তো মনে হচ্ছে বাসায় নেই। ঘর তালা দেওয়া দেখা যাচ্ছে। ফোন কর।
– ফোন করেছি, রিসিভ করে না।
– এখন দাঁড়িয়ে থাকবা! আমার সাথ আমাদের বাসায় চলো। মেহেদী এলে বাসায় এসো।
– না, আন্টি। আপনি যান। আমি এখানেই ওয়েট করবো। যদি আবার কিছুক্ষণের মধ্যে এসে পড়ে।
– তা ও ঠিক।
নাফিসা মনে মনে বললো, এমনিতেই যেই ঘাটাঘাটি শুরু করছেন! আপনার সাথে গেলে চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়বেন! হঠাৎ একটা লোক এদিকে রাস্তার দিকে যেতে নিলে আন্টি বললো,
– কই যাও?
– বাজারের দিকে। কেন?
– মেহেদীকে দেখলে বইলো তো তার বউ বাড়িতে এসে ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তারাতাড়ি যেন ফিরে। ঘরে তালা লাগানো।
– মেহেদীর বউ?
– হ্যাঁ।
– আচ্ছা দেখা হলে বলবো।
লোকটি চলে গেলো। আন্টির হাসব্যান্ড হবে হয়তো। নাফিসা মনে মনে একটু খুশি হলো। আন্টি একটা কাজের কাজ করেছে। মেহেদী এবার তারাতাড়ি বাসায় ফিরবে। আন্টি চলে গেলে নাফিসা ঘরের কাছের মেহগনি গাছের নিচে বসে কেকটা খেয়ে জ্বরের ও ব্যাথার ওষুধ খেয়ে নিলো। আচল সরিয়ে হাতের দাগগুলোতে মলম লাগালো। বাকিটা পরে দেয়া যাবে।
প্রায় বিশ মিনিট পর মেহেদী বাসায় হাজির। রেগে হনহন করে বাসায় ঢুকেছে। নাফিসা বসে বসে কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছে। ওই লোক বলেছে হয়তো! মনে মনে খুশি লাগছে কিন্তু খুশিটা বাইরে প্রকাশ করছে না। মেহেদী তার সামনে এসে দাড়ালো।
– এখনো বাড়ি ছেড়ে যাসনি কেন? তোকে না বলেছি বাড়ির আশেপাশেও থাকবি না। আর তুই এসে লোকজনকে ডেকে ডেকে জানাচ্ছিস আমার বউ তুই! বের হ! এই মুহুর্তে বের হ… নাহলে খুব খারাপ পদ্ধতিতে বের করবো।
– হুহ্! বুঝি না আমি। বারবার তোমাকে এক কথা কেন বলতে হয়! বলেছি তো যাবো না আমি। তাছাড়া উনারা এসে যদি জিজ্ঞেস করে মেহেদী, ” তোমার বউ কোথায়? ” তখন কি জবাব দিবে?
– কেউ এসে জিজ্ঞেস করবে না। কেউ জানেই না, জিজ্ঞেস কি করবে! তুই এখন বের হ।
– গোলাপি বিল্ডিংয়ের আন্টি কিন্তু বলে গেছে একটু পর আসবে আমার সাথে গল্প করতে। তখন কি বলবে তুমি? উনি কিন্তু অনেক প্রশংসাও করে গেছে, ” মেহেদীর ভাগ্য ভালো, এতো সুন্দরী একটা বউ পেয়েছে!” এতোক্ষণে হয়তো আরো অনেকে জেনে গেছে মেহেদীর বউ এসেছে বাড়িতে। একে একে সবাই যদি নতুন বউ দেখতে আসে তাহলে কয়জনকে তাড়াবে তুমি!
– আল্লাহ! আরো কিছু বাকি রেখেছো আমার শর্বনাশের!
– ভালো কিছুকেও সর্বনাশ ভেবে নিচ্ছো! যাইহোক তালা খোল, অনেক্ক্ষণ যাবত বাইরে রেখেছো।
– তুই যাব…
আর কিছু বলতে পারলো না মেহেদী। ইতোমধ্যে ওই আন্টির সাথে একজন মহিলা এসে পড়েছে বাসায়।
– মেহেদী এসেছো! অনেক্ক্ষণ যাবত দাড়িয়ে আছে তোমার বউ। তালা খোল এবার।
মেহেদী নাফিসার দিকে চোখ রাঙিয়ে অবশেষে তালা খুলে দিলো। আন্টিরা নাফিসার প্রশংসা করে গেলো। মেহেদীকেও নানান বানী বুঝিয়ে গেলো। যাতে অতীতকে ভুলে ভবিষ্যৎ টা সুন্দর করে সাজায়। আন্টিরা চলে গেলো। মেহেদী ঘরে প্রবেশ করলো। নাফিসা খুশি হয়ে লাগেজটা টেনে ঘরে এলো। মেহেদী দরজা লাগিয়ে দিলো। নাফিসার চুলের মুঠি ধরে বললো,
– আমাকে কি একটু শান্তি দিবি না! সব তো শেষ করে দিলি। এখনো পড়ে আছিস কেন!
– ব্যাথা লাগছে আমার। ছাড়ো…
– এইটুকু ব্যাথা সহ্য হয় না! আমাকে যে ব্যাথা দিয়েছিস সেটা সহ্য করে নিচ্ছি কিভাবে!
নাফিসা আর ছুটার চেষ্টা করলো না। মেহেদীর দিকে তাকিয়ে চুপচাপ দাড়িয়েই আছে। মেহেদী নিজেই তাকে ছেড়ে দিলো। সকালে ফেলে যাওয়া টাকাটা এখনো আগের জায়গাতেই আছে। নাফিসা টাকাটা উঠিয়ে মেহেদীর হাতে দিয়ে বললো,
– সারাদিন কি না খেয়েই ঘুরে বেড়াও! এভাবে জীবন চলবে! বাজার করে এনো, রান্না করে খাবো দুজন।
মেহেদী টাকাটা মুঠো করে মুড়ে আবার নাফিসার মুখে ছুড়ে মেরে বললো,
– খবরদার, আমার মায়ের ব্যবহার করা জিনিসে হাত লাগাবি না।
– তাহলে নতুন এনে দাও।
– কিছু পাবি না। তোকে এখানে থাকতে বলেছে কে! চলে যা।
বারবার একই কথা শুনতে ভালো লাগছে না নাফিসার। তাই তার কোন প্রতুত্তর না করে ফ্রিজ থেকে খাবারের বাটিটা বের করলো। রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে যেতে যেতে বললো,
– হাতমুখ ধুয়ে নাও। খাবার গরম করে আনছি, খেয়ে নাও।
মেহেদী রুম থেকে বেরিয়ে নাফিসার হাত থেকে বাটিটা নিয়ে দেখলো বিরিয়ানি।
– এটা কোথা থেকে এলো?
– কাল বাসা থেকে আসার সময় নিয়ে এসেছি।
মেহেদী বাটিটা নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে বাড়ির পেছনের ময়লায় বাটিসহ ফেলে দিলো। আবার ঘরে আসতেই নাফিসা বললো,
– খাবার কেন ফেলে দিলে? ওটা কি দোষ করেছিলো! তোমার খেতে ইচ্ছে না হলে আমি খেয়ে নিতাম।
মেহেদী কোন জবাব না দিয়ে বারান্দার দরজা বন্ধ করে ভেতরে রুমে এসে শুয়ে পড়লো। ঘরেও শান্তি নেই, এখন বাইরে গিয়েও লোকেদের জন্য শান্তি পাবে না। সব ধ্বংস করে দিচ্ছে এই মেয়েটা!
চলবে