Story: #ভালোবাসি_প্রিয়
Part: 15+16
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
মেহেদী কোন জবাব না দিয়ে বারান্দার দরজা বন্ধ করে ভেতরে রুমে এসে শুয়ে পড়লো। ঘরেও শান্তি নেই, এখন বাইরে গিয়েও লোকেদের জন্য শান্তি পাবে না। সব ধ্বংস করে দিচ্ছে এই মেয়েটা! নাফিসাও রুমে এসে মেহেদীর পাশে দুরত্ব বজায় রেখে শুয়ে পড়লো। এখন শুধু শুধু বিরক্ত করবে না। সেও ঘুমাক একটু, এই ভেবে কাছে যায়নি মেহেদীর। এমনিতেই তার নিজের শরীরটা দুর্বল লাগছে। হঠাৎ মাথার নিচ থেকে বালিশ সরে গেলো। নাফিসা ঘুরে তাকাতেই মেহেদী ঢিল মেরে বালিশ মেঝেতে ফেলে দিলো।
– ঘুমাতে হলে নিচে যা। আর না হয় ঘর থেকে বেরিয়ে যা।
– এখানে তোমার সমস্যা কি?
হঠাৎ একহাতে নাফিসার দুই গালে ধরে মুখ চেপে ধরে বললো,
– কথার উপর একটা কথা বলবি, জ্বিভ ছিড়ে ফেলবো। নিচে যা, না হয় লাথি দিয়ে ফেলবো।
নাফিসার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। মেহেদীর হাত সরিয়ে চুপচাপ নিচে চলে এলো। কাথাটা টানছিলো, মেহেদী পা দিয়ে আটকে রেখেছে। শুধু বালিশটা নিয়েই ঠান্ডা মেঝেতে শুয়ে পড়লো। সুস্থ থাকলে হয়তো এই গরমে এখানে শুতে আরাম লাগতো, কিন্তু এখন খুব ঠান্ডা লাগছে। এই ঠান্ডায়ই ঘুমিয়ে পড়লো নাফিসা। ঘুম থেকে উঠে দেখলো প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। তার কাছে মনে হচ্ছে এখন শীতের দিন। এতো শীত লাগছে কেন! বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলো মেহেদী নেই। কোথায় গেছে কে জানে! নাফিসা বালিশটা খাটে রেখে বাথরুমের দিকে পা বাড়ালো। মেহেদী বাথরুম থেকেই বের হচ্ছে মুখে পানি দিয়ে। চোখমুখ একটু ফোলা ফোলা। সেও মাত্রই ঘুম থেকে উঠেছে হয়তো।
নাফিসা ফ্রেশ হয়ে রুমে এলো। ক্ষুধা লেগেছে খুব। মেহেদী জানালার পাশে দাড়িয়ে ফোনে কিছু করছে। এই ছেলের কি ক্ষুধা লাগে না! ঘরে তো কোনো খাবারও নেই, কি খাবে সে! নাফিসা পেট চেপে ধরে রান্নাঘরের দিকে এলো। খাওয়ার মতো তেমন কিছুই নেই। সবজি রাখার ঝুড়িতে কয়েকটি আলু আছে, আর পেয়াজ পচে গেছে। এমনিতে হলুদ মরিচ লবণ তেল সবই আছে অল্প অল্প। বারান্দায় চালের ড্রামে এসে দেখলো, ড্রামের তলায় চালও আছে। কিন্তু এখন রান্না করে খাওয়ার শক্তিও যে নেই! ফ্রিজ খুলে দেখলো এক প্যাকেট মুরগির মাংস আছে শুধু। আর কিছুই নেই। আর নিচে একটা বক্সের অর্ধেক আমের আচার রাখা আছে। আচার প্রিয় হলেও এখন ভালো লাগছে না। পেট ভরে শান্ত হবে এমন কিছু দরকার। এটাসেটা ঘাটতে দেখে মেহেদী বললো,
– তোকে নিষেধ করেছি না, আমার মায়ের কোন জিনিসে হাত লাগাতে!
– ক্ষুধা লেগেছে আমার।
– আমাকে খেয়ে ফেল, শান্তি পাবি তুই।
– এসব কি বলো! মানুষ মানুষকে খায় কিভাবে!
– তোর দ্বারা সব সম্ভব।
– ঝগড়া করলে পড়ে করো। আগে খাবার এনে দাও। দোকান থেকে কিছু নিয়ে আসো।
– টাকা নেই আমার কাছে।
– আমি দিচ্ছি।
– আমি কি তোর চাকর?
– না, তুমি আমার বর।
নাফিসা পার্স হাতে নিতে নিতে এদিকে মেহেদী ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। এর মানে কিছুই বুঝলো না নাফিসা! সে কি খাবার আনতে গেছে! নাফিসা পেট চেপে ধরে আরো পাচ মিনিট খাটে বসে রইলো। মেহেদী আসছে না এখনো। নাহ, তার আশায় থাকা যাবে না। নাফিসা আস্তে আস্তে হেটে রান্নাঘরে এলো। দুইটা আলু নিয়ে সিদ্ধ বসালো। আরও বিশ মিনিট অপেক্ষা করে চুলা বন্ধ করলো। এতো গরমটাও যে খাওয়া যাবে না। গরম আলুতেই কয়েকবার হাত দিয়ে ছেকা খেয়েছে। রুমে এসে ফ্যান ছেড়ে দিলো। দুপুরে ব্যাথার ওষুধ খাওয়ায় পেট এতো বেশি জ্বালাতন করছে। আলু ঠান্ডা হয়ে গেলে একটা আলু লবণ দিয়ে মেখে খেলো। আপাতত পেট শান্তি।
.
নাফিসা বসে বসে কতোক্ষন ফেসবুকে ঘুরাঘুরি করলো। মাস্টার্স এর এক্সাম সামনের সপ্তাহে! মেহেদী কি এক্সাম দিবে না! বই ও তো কয়েকটা ছিড়ে ফেলেছে। ভার্সিটি থেকে নাকি বহিষ্কার করা হয়েছে! সারাবছর পড়ে এখন লাস্ট পর্যায়ে এক্সাম মিস করবে! ভার্সিটিতে একবার যাওয়া দরকার। কিন্তু যাবে কিভাবে! লগ আউট করে নাফিসা রুমে পায়চারি করে নানান কথা ভাবতে লাগলো। মেহেদী রাত দশটার দিকে খালি হাতে ঘরে ফিরলো। নাফিসা তার আশায় না থেকে ভালোই করেছে। কোনো খাবার আনেনি হাতে করে! রুমে এসেই নাফিসাকে টেনে উঠোনে নিয়ে এলো সাথে নাফিসার লাগেজও।
– ভালোয় ভালোয় চুপচাপ এখান থেকে চলে যা। দ্বিতীয় বার আসার নাম নিবি না। যেতে বলছি!
নাফিসা মেহেদীর কাছে এসে ছলছল চোখে তাকিয়ে খুব শান্ত গলায় বলতে লাগলো,
– মেহেদী, বারবার এক কথা শুনাও কেন! আমি বলেছি তো আমি বিনা স্বার্থে তোমার সঙ্গ দিতে এসেছি। আমি সব ছেড়ে তোমার সাথে থাকতে চলে এসেছি। প্লিজ এমন করো না। তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। এছাড়াও কাল আরো অনেক কিছু হয়েছে। প্লিজ থাকতে দাও একটু তোমার কাছে। তুমি তো আমাকে ভালোবাসো। আমরা সারাজীবন একসাথে কাটিয়ে দিবো। খুব ভালো কাটবে আমাদের দিনগুলো। একটু স্বাভাবিক হও তুমি। এভাবে দূরে ঠেলে দিও না প্লিজ!
– রাস্তার একটা কুকুরের সাথেও থাকা যায় কিন্তু তোর সাথে থাকা যায় না। আর কি বললি! ভালোবাসি! তাও তোকে!
মেহেদী সজোরে একটা থাপ্পড় দিয়ে আবার বললো,
– তোর মতো মেয়েকে ভালোবাসা যায় কখনো! বেরিয়ে যা এখান থেকে। আশেপাশের লোকজনকে জানানোর চেষ্টা করেছিস তো তোকে শেষ করে দিবো আর না হয় আমি নিজে শেষ হয়ে যাবো। যা তুই, তোর রিসাদের কাছে। খুব ভালো রাখবে তোকে।
মেহেদী হনহন করে ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো। এই অন্ধকারে নাফিসা এখন কি করবে! এতো জোরে কেউ থাপ্পড় দেয়! মাথা ঘুরছে তার। গাধা একটা! লাগেজটা যে খালি সেটাও কি বুঝতে পারেনি! কাপড়চোপড় তো সব ওয়ারড্রব এ তুলে রেখেছিলো! কতো চেষ্টা করে যাচ্ছে, পাষানের মন গলাতে পারেনি। থাকবে না এখানে, তার নিজের রাজপ্রাসাদ ছেড়ে কি জন্য পড়ে আছে এখানে শুধু শুধু। মার তো খাচ্ছেই! ঘরেও জায়গা পাচ্ছে না!
নাফিসা জেদ করে উঠুন ছেড়ে বেরিয়ে যেতে নিলে আবার থমকে দাড়ালো। মেহেদী তো কষ্ট পেয়েই তার সাথে এমন ব্যবহার করছে। এমন তো নয়, সে এখান থেকে গেলে মেহেদী শান্তি পাবে! না যাবে না সে, মেহেদীর কাউকে প্রয়োজন। না হয় আস্তে আস্তে সে নিজের জীবনটা ধংস করে দিবে! শুধু শুধু নিষ্পাপ জীবনটা এভাবে ধংস হয়ে যাবে কেন! মেহেদীর ইচ্ছায় আর অনিচ্ছায় নাফিসা এখন সম্পূর্ণই তার।
নাফিসা আবার ঘরের কাছে ফিরে এলো। রাতটা কি বাইরেই কাটাতে হবে! বারান্দায় জায়গা দিলেও তো হতো! ঘরের কাছে মেহগনি গাছের নিচে হাত পা গুটিয়ে বসে রইলো। ভয় লাগছে এই অন্ধকারে এখানে বসে থাকতে। এই মনে হচ্ছে ভুত নেমে আসছে। আবার এই মনে হচ্ছে শেয়াল কুকুর এসে টেনে নিয়ে যাবে। রাস্তার দিকে কুকুরগুলো কেমন যেন শব্দ করে যাচ্ছে। প্রায় এক ঘন্টার মতো বসে আছে এখানে। ভয়ে কলিজা কাপছে! হঠাৎ মেহেদী বারান্দার দরজা খুললো। উঁকি দিয়ে নাফিসাকে উঠুনে না দেখতে পেয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। সে কি চলে গেছে তাহলে! আশেপাশে তাকিয়ে গাছের নিচে গুটিসুটি মেরে বসে থাকতে দেখলো। নাফিসা গাছে হেলান দিয়ে তাকিয়েই আছে তার দিকে। মেহেদী কিছু না বলে ঘরে চলে গেলো। কিন্তু দরজা বন্ধ করেনি। নাফিসা মলিন হাসলো আর বললো,
– যতই না বলো, তুমি যদি আমাকে কখনো ভালোবেসে থাকো তাহলে এখনো ভালোবাসো। সেটা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি মেহেদী। এটা ঠিক আমাকে অনেক ঘৃণাও করো। কিন্তু ভালোবাসাটা ঠিকই রয়ে গেছে।
নাফিসা আস্তে আস্তে হেটে ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে ভেতরে এলো। মেহেদী জানালার পাশে দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। এটা একদমই ভালো লাগছে না নাফিসার। পাশে এসে দাড়িয়ে বললো,
– সিগারেট খাও কেন তুমি?
মেহেদী তার দিকে ধুয়ো ছেড়ে বললো,
– তাতে তোর কি?
ধোঁয়া তার নাকে লাগায় নাফিসা আঁচল টেনে নাক চেপে ধরে বললো,
– রাগ ঘৃণা তো সব আমার উপর। এভাবে শুধু শুধু নিজের জীবনটাকে ধংস করছো কেন!
নাফিসাকে নাক চেপে ধরতে দেখে সিগারেট জানালায় রেখে এক টানে নাফিসাকে খুব কাছে নিয়ে এলো। মুখ থেকে আঁচলটা সরিয়ে নাফিসার মুখে মুখ লাগিয়ে ধোঁয়া ছাড়লো। এদিকে নাফিসার দম বন্ধ হয়ে আসছে! শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে মেহেদীকে ছাড়িয়ে কাশতে কাশতে খাটে বসে পড়লো। মাথা যেন ভনভন করে ঘুরছে! শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে! কোনোমতো উঠে বাথরুমে এসে চোখেমুখে, মাথায় পানি দিলো। কুলি করে বড় বড় নিশ্বাস ছাড়লো। কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে ফ্যান ছেড়ে খাটে এসে শুয়ে পড়লো। শীতও লাগছে তাই কাথাটা টেনে গায়ে দিলো। মেহেদী সিগারেট শেষ করে নাফিসার খুব কাছে চলে এলো। এমনিতে কাছে এলে হয়তো একটু হলেও ভালো লাগতো, কিন্তু এখন খুব অসহ্য লাগছে। মুখে শরীরে লেগে থাকা সিগারেটের গন্ধে নাফিসার দম বন্ধ হয়ে যাবার পালা হয়েছে ! তবুও বাধা দিতে পারছে না মেহেদীকে। সেই শক্তিও যে তার শরীরে নেই!
সকালে ঘুম ভাঙলে দেখলো মেহেদী তাকে ঝাপটে ধরে এক কাথার নিচে এক বালিশে মাথা রেখে শুয়ে আছে। একটা পা ও নাফিসার উপর তুলে দিয়েছে। জানালা কাল রাতে খোলাই রেখেছে। পুরো রুমে সূর্যের আলোতে ভরে গেছে। বেলা হয়ে গেছে অনেক। কিন্তু এখান থেকে উঠা তো দূরে থাক, একটু নড়াচড়া করারও সুযোগ নেই! ধাক্কা দিয়ে সরাতে গেলেও মেহেদীর ঘুম ভেঙে যাবে। নাফিসা ঘাড় একটু কাত করে মেহেদীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। খুব কাছ থেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে তাকে। চুল কাটে না, সেভ করে না। কেমন এলোমেলো হয়ে আছে। ইচ্ছে করছে তার নিজেই সব করে দিতে। কিন্তু তাও তো সম্ভব না! ঘুমিয়ে থাকলে মনে হয় খুব শান্ত ছেলেটা! আর জেগে থাকলে আগুন। হবেই না কেন! ভেতরে যে হাজারো কষ্ট চেপে আছে। নাফিসা কিভাবে তাকে স্বাভাবিক করবে! ওর নিজের ভেতরে যে একটুও চেষ্টা নেই স্বাভাবিক হওয়ার! নাফিসা আর একটু কাছে এসে মেহেদীর থুতনিতে আলতো করে ঠোঁটের ছোয়া দিলো। একটু পর মেহেদী মোচড় দিতেই নাফিসা চোখ বন্ধ করে রইলো। মেহেদীর হাত পা সব সরে গেছে তার উপর থেকে। উঠে গেছে কিনা দেখার জন্য চোখ একটু ফাক করলো। না উঠেনি। অপরদিকে ঘুরে বুকে ভর দিয়ে উল্টো হয়ে শুয়ে আছে। নাফিসা কাপড়চোপড় ঠিক করে খুব সাবধানে উঠে পড়লো।
ওয়ারড্রব থেকে শাড়ি নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো। গোসল করে এসে দেখলো মেহেদী এখনো ঘুমাচ্ছে। সূর্যের আলো এসে পিঠের একপাশে পড়ছে। জানালাটা একটু চাপিয়ে রান্নাঘরে এসে রাতে সিদ্ধ করা আলুটা খেয়ে পানি খেয়ে নিলো। খুব কষ্ট করে ড্রামের তলা থেকে চাল উঠিয়ে ভাত বসালো। সবজি বলতে শুধু আলু আছে। মরিচও নেই ভর্তা বানাবে। ফ্রিজে মুরগির মাংস আছে, কিন্তু রান্না তেমন ভালো পারে না। তাই ওটা রান্নার চিন্তা বাদ দিয়ে দিলো। কখনো রান্না করে খায়নি, পারবে কিভাবে! মামিকে রাধতে দেখে টুকটাক জানে। নাফিসা আলু কুচি করে তেল আর লবণ দিয়ে ভাজি করলো। যেমনই হোক পেটে গেলেই হলো! ভাতের মার গালতে গিয়ে হাতে গরম মার পরেছে। “ও মা” বলে একটা ছোটখাটো চিৎকার দিলো। পাতিল সোজা করে কতোক্ষন ঠান্ডা পানিতে হাত চুবিয়ে রাখলো। চিৎকার শুনে মেহেদীর ঘুম ভেঙে গেছে। রুমে তাকিয়ে নাফিসাকে দেখতে না পেয়ে বিছানা ছেড়ে বেরিয়ে এলো। রান্নাঘরে নাফিসাকে দেখলো পানিতে হাত ডুবিয়ে রেখেছে। হাত কেটে ফেলেছে না হয় পুড়ে গেছে! রান্না করে খা বেশি বেশি। মেহেদী গোসল করতে বাথরুমে চলে গেলো। নাফিসার ভাত রান্না আর আলু ভাজি হয়ে গেছে। রুমে এসে দেখলো মেহেদী ওয়ারড্রব খুলে শার্ট বের করছে। নাফিসা দ্রুত রান্নাঘরে এসে মেহেদীর জন্য এক প্লেট ভাত নিয়ে ভয়ে ভয়ে রুমে এলো। না জানি ফেলে দেয়!
– কোথায় যাও? ভাত খেয়ে তারপর যাও।
মেহেদী অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাত নিতে গেলে নাফিসা দ্রুত প্লেট সরিয়ে নিলো।
– না খেলেও ফেলো না প্লিজ। অনেক কষ্ট করে হাত পুড়িয়ে রান্না করেছি। তাছাড়া খাবার নষ্ট করতে নেই। আল্লাহ রাগ হবেন।
মেহেদী হনহন করে বেরিয়ে গেলো। পেছন থেকে নাফিসা একটু জোর গলায় বললো, আসার সময় বাজার করে নিয়ে এসো।
সেই প্লেটে নাফিসা নিজেই খেয়ে নিলো। আহ! শান্তি লাগছে আজ। দুদিন পর ভাত খেলো। ভাত খেয়ে ব্যাথার ওষুধ খেয়ে নিলো। জ্বর নেই শরীরে কিন্তু ব্যাথা কমার জায়গায় মেহেদী আরো বাড়িয়ে দিয়েছে! পোড়া জায়গায় কালকের আনা সেই মলমটা লাগিয়ে দিলো। জ্বালা করছে খুব। সব কিছু গুছিয়ে বাথরুমে গিয়ে দেখলো মেহেদী কাপড়চোপড় এখানেই রেখে চলে গেছে। বউয়ের উপর কাজ দিয়ে গেছে বুঝি! নাফিসা সেগুলো ধুয়ে বাইরে শুকাতে দিলো। হঠাৎ দূর থেকে দেখলো সেই আংকেল রাস্তার দিকে যাচ্ছে। মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। নাফিসা এক প্রকার দৌড় দিয়ে উঠুনটা পাড় হয়ে আংকেল কে ডেকে বললো, মেহেদীর সাথে দেখা হলে যেন একটু বলে দেয় বাসায় বাজার নেই। তাই বাজার করে নিয়ে বাসায় ফিরতে। আংকেল ঠিক আছে বলে চলে গেলো। নাফিসা মনে মনে খুশি হয়ে বললো, আন্টিটা কাল আমার কত্তবড় উপকার করে দিয়ে গেছে! ভালো একটা আইডিয়া দিয়ে গেছে। আমার কথা তো শুনবেই না। বাইরের লোক দিয়ে বলবো।
Story: #ভালোবাসি_প্রিয়
Part: 16
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
নাফিসা মনে মনে খুশি হয়ে বললো, আন্টিটা কাল আমার কত্তবড় উপকার করে দিয়ে গেছে! ভালো একটা আইডিয়া দিয়ে গেছে। আমার কথা তো শুনবেই না। বাইরের লোক দিয়ে বলবো।
আংকেল এর কথা শুনে মেহেদী রেগেমেগে বাড়ির দিকে আসছে। পেয়েছেটা কি সে! লোকদের ডেকে এটা সেটা শোনাচ্ছে! কি চাইছে সে! আজ এর বিহিত করে ছাড়বে। ঘরে প্রবেশ করতেই দেখলো আরও গোলাপি বিল্ডিংয়ের চাচিসহ পাশের বাড়ির আরও দুজন চাচি এসে গল্প করছে নাফিসার সাথে। মেহেদীকে দেখেই তাদের মধ্যে একজন বললো,
– মেহেদী, খুব ভালো বউ পেয়েছো। যেমন সুন্দরী তেমন আচার-আচরণও ভালো। তোমার মা থাকলেও আজ ছেলের বউয়ের প্রশংসা করে বেড়াতেন।
অন্য একজন বললো,
– যা হয়েছে হয়েছেই। পুরনো সব ভুলে নতুন করে সব গুছিয়ে নাও। সুন্দরভাবে সংসার সাজাও।
দু’চারটা কথা বলে আরো প্রশংসা শোনাচ্ছে নাফিসার আর তাদের জ্ঞান দিচ্ছে। মেহেদী জোর করে মুখে একটু হাসি ফুটানোর চেষ্টা করলো। ভেতরটা রাগে ফাটছে। এর মধ্যে নাফিসা ঝোপ বুঝে কোপ মারলো।
– কি গো! বাজার করে আনোনি যে?
মেহেদীর এখন অনেক কিছুই ইচ্ছে করছে কিন্তু কিছুই করতে পারছে না। তাই খুব শান্ত গলায় উত্তর দিলো,
– সাথে টাকা নিতে ভুলে গেছি।
– ওহ!
নাফিসা বসা থেকে উঠে এসে ওয়ারড্রব খুলে মেহেদীর মোড়ানো পাচশত টাকার নোটটা মেহেদীর হাতে দিলো। মেহেদী অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়েছে কিন্তু নাফিসা মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলেছে। মেহেদী কিছু না বলে টাকা নিয়ে বেরিয়ে গেলো। আন্টিরা একটু পরই চলে গেলো। মেহেদী এবার সত্যি সত্যিই বাজার করে বাসায় ফিরেছে। নাফিসা ঘর থেকে দেখেই হাসছে। যাক, কাজ হয়েছে তাহলে! নাফিসা বাজার এগিয়ে নিতে দরজার কাছে এসে দাড়ালো। মেহেদী কাছে আসতেই নাফিসা বাজার নেয়ার জন্য হাত বাড়ালো। মেহেদীও নাফিসার হাতে ব্যাগ দিয়ে দিলো। নাফিসা রান্নাঘরে এলো ব্যাগ রাখতে। মেহেদী রুমে এসে দেখলো চাচীরা চলে গেছে কিনা। ঘরে কাউকে না পেয়ে এবার প্রথমে বারান্দার দরজা লাগালো। পরে নাফিসার হাত ধরে টেনে নিয়ে রুমে এসে তার রুমের দরজা আটকে দিলো। সজোরে দুই গালে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। নাফিসা চোখে যেন হলদে ফুল দেখছে! আর চোখের বৃষ্টি ঝরতে তো সময়ই নেয় না! মেহেদী চুলের মুঠি ধরে বললো,
– বাইরের লোক ডেকে বাজার আনতে বলা! কিসের বাজার! হ্যাঁ? টাকা কি তোর বাপ দিয়ে গেছে!
– আমার বাপ দিবে কেন! বউকে খাওয়াবা, উপার্জন করতে পারো না!
মেহেদী চুলের মুঠি ছেড়ে জোরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।
– কিসের বউ! কিসের বিয়ে! কাউকে খাওয়াতে পারবো না। কারো জন্য উপার্জন করতে পারবো না। যা তোর বাপের কাছে। টাকা নিয়ে এসে ইচ্ছে মতো বাজার করে খা।
নাফিসা উঠতে উঠতে বললো,
– ছি! তুমি একজন শিক্ষিত ছেলে হয়ে যৌতুক নিবে! তবে সমস্যা নেই। তুমি বললে আমি এনে দিবো টাকা।
মেহেদীর মেজাজ গেলো চড়ে! পড়ার টেবিলের সামনে থেকে চেয়ারটা হাতে নিয়ে বিকট একটা চিৎকার করে নাফিসাকে মারতে এলো। নাফিসা চোখ বন্ধ করে দু’হাতে মাথা চেপে ধরলো। কিন্তু মেহেদী থেমে গেছে। কি করতে যাচ্ছিলো সে! মাডার হয়ে যেত এক্ষুনি। চেয়ারটা ঢিল দিয়ে মেঝেতে ফেলে দিলো। নাফিসা চোখ খুলে তাকাতেই মেহেদী তার সামনে এসে দুহাত ধরলো। হাতের চুড়ি জোড়া খুব ভালো করে দেখে চিনতে পারলো।
– এগুলো পড়েছিস কেন! খুল…
– না খুলবো না। আমার স্বামীর দেয়া প্রথম গিফট পড়বো না কেন! ছাড়ো প্লিজ। আহ! মেহেদী ব্যাথা পাচ্ছি আমি, ছাড়ো..
মেহেদী জোর করেই যাচ্ছে। নাফিসা খুলবে না তাই হাত মুঠো করে রেখেছে। আর কান্না করে যাচ্ছে। মেহেদী টানতে টানতে চুড়ি দিয়ে হাত কেটে ফেলেছে। রক্ত পড়ছে টুপটাপ তবুও নাফিসা মুঠো ছাড়ছে না। মেহেদী নাফিসার চোখে তাকিয়ে দেখলো কান্না করছে, মুখে তাকিয়ে দেখলো কষ্টের ছাপ স্পষ্ট। না, এসব অভিনয় হতে পারে না। ব্যর্থ হয়ে নিজেই ছেড়ে দিলো।
সকালে হাতে মার পড়েছে আবার সেই জায়গাতেই এখন কেটে গেছে। ব্যাথা আর কত সহ্য করা যায়! নাফিসা শব্দ করে কান্না করতে করতেই দৌড়ে বাথরুমে চলে গেলো। মগে পানি নিয়ে হাত চুবিয়ে রাখলো। খুব ব্যাথা লাগছে, জ্বালা করছে! মেহেদী সেখানেই দাড়িয়ে মেঝেতে পড়া রক্তের দিকে তাকিয়ে আছে। পকেট থেকে ওয়ালেট নিয়ে দেখলো বাজার করে অবশিষ্ট কিছু টাকা আছে, মোবাইলটা ওয়ারড্রব এর উপর থেকে নিতে গেলে কাটা জায়গায় লাগানোর মলমটা চোখে পড়লো। এটাই তো আনতে যাচ্ছিলো সে। এটা এখানে কিভাবে এলো! নাফিসা এনেছে! নাফিসা হাতে ফু দিতে দিতে রুমে প্রবেশ করলো। এখনো রক্ত পড়া বন্ধ হয়নি! আর না বন্ধ হয়েছে তার কান্না। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে সে। মেহেদী তার দিকেই তাকিয়ে আছে। নাফিসা তার উদ্দেশ্যে বললো,
– খাওনি তো কিছু। খাবার এনে দেই?
মেহেদী ওয়ারড্রব এর উপর থেকে মলমটা হাতে নিয়ে নাফিসাকে টেনে খাটে বসালো। নাফিসার শাড়ির আঁচল দিয়ে রক্ত মুছে আস্তে আস্তে কাটা জায়গায় মলমটা লাগিয়ে দিলো। নাফিসা অশ্রুসিক্ত নয়নে হা করে তাকিয়ে আছে মেহেদীর দিকে। মলম লাগানো হলে আবার বললো,
– আলু ভাজি আর ভাত রান্না করা আছে। এনে দেই খাবার?
মেহেদী কিছু না বলে সোজা বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। নাফিসা হতাশ হয়ে তাকিয়ে রইলো। একটুপর রান্নাঘরে এসে দেখলো কি বাজার এনেছে। যা এনেছে এখানে আলুর পরিমাণই বেশি! আলু কি সস্তা নাকি বেশি দাম! কোন হিসেবে এতো আলু এনেছে! নাফিসার একা হলে তো মাসব্যাপী খেতে পারবে! সবজি ছাড়া আমিষ জাতীয় কিছুই দেখা যাচ্ছে না। নাফিসা কষ্টের মাঝেও হেসে আলু আর পেয়াজ ঝুড়িতে রেখে বাকি সবজি ফ্রিজে রাখলো। যা রান্না করা আছে তা দুপুরে খেয়েও বেশি হবে। মেহেদীর জন্যই তো বেশি করে রান্না করেছিলো। না খেলে আর কি করার! পেটে কি পাথর বেধেছে! দেখেতে মনে হয়না হোটেলে খায়! হোটেলে খাবেই কিভাবে! উপার্জন আছে! আগের জমানো যা ছিলো এসবই হয়তো সিগারেটের দোকানে ফেলছে।
.
দুপুরে খেয়ে নাফিসা মোবাইলটা নিয়ে ইউটিউবে রান্নাবান্না দেখতে লাগলো। হঠাৎ তার ফোনে অচেনা নম্বর থেকে কল এলো। কে ফোন করেছে!
– আসসালামু আলাইকুম।
– ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো?
রিসাদের কণ্ঠ শুনে নাফিসা থমকে গেলো। ওটা ব্লক করেছে, এতোদিন পর এখন আবার অন্য নম্বর থেকে কল করেছে!
– কেমন আছো? ভালো নেই?
– আলহামদুলিল্লাহ। ফোন করেছেন কেন?
– আমার নম্বর ব্লক করেছো কেন?
– আমার ইচ্ছে।
– অহ আচ্ছা, একটু আগে তোমাদের বাসায় গিয়েছি। তোমাকে না পেয়ে ফিরে এলাম। বাসায় তালা দেওয়া। কোথায় আছো তুমি?
– যেখানেই আছি, আপনাকে বলতে বাধ্য নই।
– এই! তুমি কি মেহেদীর কাছে গিয়েছো?
– যদি বলি হ্যাঁ!
– মেনে নেয়নি তোমাকে। তাড়িয়ে দিয়েছে না?
– না। আমি এখনো মেহেদীর কাছেই আছি। তার ঘরে বউ হয়ে আছি।
– নাফিসা, কি বলছো তুমি এসব! এগুলো কিছুতেই সম্ভব না। মিথ্যে বলছো তুমি আমাকে। মেহেদী তোমাকে মানবে না। আর যদি সেখানে থেকেও থাকো তাহলে, চলে আসো তুমি আমার কাছে। আমি অনেক ভালো রাখবো তোমাকে, অনেক ভালোবাসবো। মেহেদীর কাছে তুমি একটুও ভালো থাকতে পারবে না। প্লিজ শুনো আমার কথা।
– আমি মেহেদীর কাছে অনেক ভালো আছি, সুখে আছি, শান্তিতে আছি। আর সম্পূর্ণই মেহেদীর হয়ে গেছি। আর কখনো কল করে বিরক্ত করবে না আমাকে।
নাফিসা কল কেটে নম্বর ব্লক করে দিলো। অসহ্যকর! বিকেলে অল্প খাবার রান্না করলো। ভালো না হলেও তেমন খারাপ না। খাওয়া যায়। রাতেও মেহেদীকে খাওয়ার জন্য বললো কিন্তু খায়নি সে। আজ আর কোন টর্চার করেনি নাফিসার উপর। পরপর দুটো সিগারেট জ্বালিয়ে শুতে এলো। নাফিসা আগেই শুয়ে পড়েছে কিন্তু ঘুমায়নি। আজ তার কাছেও আসছে না। খাটের একপাশে শুয়ে আছে। নাফিসাও এদিকেই চুপটি মেরে শুয়ে রইলো।
সকালে নাফিসার ঘুম ভাঙতেই দেখলো তারা দুজনেই খাটের মাঝামাঝিতে শুয়ে আছে এক কাথার নিচে। তবে তাদের মাঝে একটু দূরত্ব বজায় আছে। মাথার উপর স্লো স্পিডে ফ্যান চলছে। মেহেদীর একটা হাত নাফিসার বালিশের কাছে। নাফিসা মেহেদীর হাতের উপর তার হাতটা আলতো করে রাখলো। আঙুলের ফাকে আঙুল রাখতেই যেন ঘুমের মধ্যেই মেহেদী আঁকড়ে ধরলো হাতটা। নাফিসা মুচকি হেসে সেও মুঠোয় ধরলো মেহেদীর হাত। হঠাৎই মেহেদীর ঘুমটা ভেঙে যায়। হয়তো নাফিসার হাতের স্পর্শেই। চোখ কপাল কুচকে তাকাতেই নাফিসার মুখে হাসি দেখতে পেল আর তার হাত যে নাফিসার হাত ধরে আছে সেটাও চোখে পড়লো। মেহেদী হাত সরিয়ে নিতে চাইলে নাফিসা আরো বেশি চেপে ধরলো। মেহেদী এবার ঝাটকা দিয়ে সরিয়ে নিলো। যার ফলে নাফিসা কাটা জায়গায় ব্যাথা পেল। মেহেদী উঠে চলে গেলো। নাফিসাও উঠে বিছানা ও ঘর গুছিয়ে নিলো। সকালের জন্য আর রান্না করেনি। শুধু শুধু রান্না করবে কার জন্য! রাতের খাবার গরম করে খেয়ে নিলো সে। মেহেদী নিত্যদিনের মতো বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। নাফিসা শাড়ির সাথে দুটো থ্রিপিস এনেছিল। গোসল করে সেখান থেকে কলারযুক্ত থ্রিপিসটা নিয়ে পড়লো। যার ফলে গলার ঘাড়ের দাগগুলো ঢেকে গেছে। কিন্তু কাল যে থাপ্পড় দিয়েছে দুই গাল এখনো লাল হয়ে আছে। ক্রিম, পাউডার ভালোভাবে মেখে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। জর্জেট ওড়নাটা মাথায় ঘোমটা দিয়ে পার্স আর ফোন হাতে নিয়ে দরজা তালা দিয়ে বেরিয়ে গেলো। এর মাঝে মেহেদীর বাসায় আসার সম্ভাবনা কম। ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে রিক্সায় উঠে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। পথে মেহেদীকে দেখেছে নাফিসা। বাজারের পাশে চায়ের দোকানে দাড়িয়ে কলা খাচ্ছে আর হাতে বিস্কুটের মতো কিছু দেখা যাচ্ছে। তাহলে ভাত না খেয়ে বাইরে এসে রুটি কলা খেয়ে দিন কাটায়! কয়দিন চলবে এভাবে! নাফিসা বড় একটা নিশ্বাস ছাড়লো। রিক্সা নিয়ে সে ভার্সিটি চলে এলো। ভাগ্যের পরিহাসে প্রিন্সিপালের রুমে এসে প্রিন্সিপালকে একা পেল। মেহেদীকে ভার্সিটির সব শিক্ষকরা চিনেন। স্যারের অনুমতি নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে অনেক আকুতি মিনতি করে মেহেদীর সাথে ঘটা সব ঘটনা বললো। আর মেহেদীকে যেন ভার্সিটি থেকে এক্সাম দেয়ার সুযোগ দেয় সেটাও অনুরোধ করলো। ফরম পূরন তো আগেই করেছে, এখন এডমিট কার্ড দিলেই এক্সাম দিতে পারবে। প্রথমে না করলেও পরে রাজি হলেন প্রিন্সিপাল। আর নাফিসাকেও বিভিন্ন কথা শুনিয়েছেন। নিজের সাধ্যমতো বুঝানোর চেষ্টাও করেছেন। নিজের পড়াশোনাও চালু রাখতে বলেছেন। নাফিসা এতোটা ভালোকিছু আশা করেনি। তবুও পেয়ে গেছে। এটাই শিক্ষার গুরুত্ব প্রকাশ করে । একাধারে বকাও দিয়েছে, জ্ঞানও দিয়েছে আবার ভবিষ্যতের লক্ষ্যও দেখিয়েছে! একজন অশিক্ষিত লোকের কাছে নিশ্চয়ই এসব পাওয়া যেত না। নাফিসা প্রিন্সিপালের অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। সেখান থেকে ফেরার পথে পলাশ স্যারের সাথে দেখা হয়েছে। স্যার জানালো দুদিন পর ফাইনাল রাউন্ড কমপিটিশন। নাফিসা ও মেহেদীকে নিয়ে স্যারের অনেক স্বপ্ন ছিলো। মেহেদীকে তো নিবে না, এখন নাফিসা ই আছে এটেন্ড করার মতো। নাফিসাকে অনেক বলার পরও রাজি হলো না। এই কমপিটিশনের জন্য এতো কিছু ঘটেছে, এটাতে কখনো এটেন্ড করবে না সে। মেহেদীকে নেয়ার জন্য স্যারের কাছে অনুরোধ করলো। স্যার মুখটা মলিন করে ফেললো। নাফিসারও কষ্ট হচ্ছে তবুও এর চেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে মেহেদীর স্বপ্নটা ভেঙে দেয়ার জন্য।
ভার্সিটি থেকে সে সোজা শপিংমলে চলে গেলো। আরও পাচছয়টা শাড়ি কিনলো। আর দুইটা বোরকা সাথে হিজাব কিনলো। বোরকা হিজাব বাসায়ই ছিলো। কিন্তু এখন ওবাড়িতে যাবে না। দ্রুত শপিং শেষ করে বাসার দিকে রওনা হলো।
রাস্তায় জ্যাম থাকায় রিক্সা হতে বাজারের কাছেই নেমে গেলো। কতোটা পথ এখন হেটে যেতে হবে! একটু এগিয়ে আসতেই রিসাদ সামনে পড়লো। নাফিসা তাকে দেখে চমকে উঠলো!
চলবে