Story: #ভালোবাসি_প্রিয়
Part: 17+18
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
একটু এগিয়ে আসতেই রিসাদ সামনে পড়লো। নাফিসা তাকে দেখে চমকে উঠলো!
রিসাদও এখানে নাফিসাকে দেখবে ভাবেনি। নাফিসা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই রিসাদ পথ আটকালো।
– কোথায় গিয়েছিলে।
– অন্যের ব্যাপারে এতো তথ্য নিতে আসবেন না।
– এদিকে এখন কি তুমি মেহেদীর বাসায় যাচ্ছো?
– হ্যাঁ যাচ্ছি। সরে দাড়ান।
– নাফিসা, তোমার আচরণ আমার ভালো লাগছে না। এমন করছো কেন আমার সাথে।
– আপনি আমার সাথে কথা বলতে আসেন কেন!
– সিনক্রিয়েট বন্ধ করো আর আমার সাথে চলো।
– আপনার সাথে কেন যাবো?
– আমরা বিয়ে করবো। কারো সাপোর্টের প্রয়োজন নেই। আমরা দুজনই সবটা গুছিয়ে সুন্দরভাবে সংসার করবো। কোনো কিছুর অভাব হবে না তোমার।
– আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আমার হাসব্যান্ড আছে। আমি আমার হাসব্যান্ড এর কাছে ভালো আছি, সুখে আছি, শান্তিতে আছি। পথ ছাড়ুন।
রিসাদ হঠাৎ করেই নাফিসার খালি হাতটা ধরে ফেললো। কাটা জায়গায় হাত লাগতেই নাফিসা ওফ্ফ শব্দ করে উঠলো। রিসাদ হাতে কাটা দেখে বললো,
– এটা কিভাবে হলো? মেহেদী তোমাকে টর্চার করে?
– হাত ছাড়ুন।
– নাফিসা তুমি একটুও ভালো নেই। তোমার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। প্লিজ চলে আসো আমার কাছে।
– হাত ছাড়তে বলেছি।
– নাফিসা এমন করো না। বুঝার চেষ্টা করো। আমার কথা মানো।
পাশের চায়ের দোকানে থেকে কেউ যে তাদের কথোপকথন শুনছে আর তাদের দেখছে তারা দুজনের কেউই লক্ষ্য করেনি সেটা। মেহেদী ইচ্ছে করেই চায়ের অর্ডার করেছে। নাফিসার হাত ধরার পর সাথে সাথেই গরম চায়ের কাপটা হাতে নিয়েছে। ঠিক যেসময় চা টা রিসাদের দিকে ছুড়ে মারবে হাত ছাড়ছে না বলে তার আগেই নাফিসা অন্যহাতের ব্যাগগুলো ফেলে রিসাদকে জোরে একটা থাপ্পড় মারলো। মেহেদী আর চা ছুড়ে না মেরে কাপে চুমুকে চায়ের স্বাদ উপলব্ধি করতে লাগলো। নাফিসা থাপ্পড় দেয়ার পর রিসাদ হাত ছেড়ে দিলো।
– তোর সাহস কি করে হয়, রাস্তায় আমার হাত ধরার! আমি যে বারবার বলছি আমি অন্য কারো বউ। সেটা তোর কানে যাচ্ছে না! এবার ভালো করে শুনে নে, আমি শরীরে, মনে সব দিক দিয়ে এখন মেহেদীর। আমাদের সম্পর্ক বহুদূর এগিয়ে গেছে। দ্বিতীয় বার আমার সামনেও আসার চেষ্টা করবি না। এরপরও যদি কোনোভাবে আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিস তো আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। আর একবার আমার পিছু নেয়ার চেষ্টা করলে রাস্তার লোক ডেকে গণপিটুনি খাওয়াবো।
নাফিসা ব্যাগ হাতে তুলে নিলো। জ্যাম ছুটে গেছে কখন জানা নেই। সামনে থেকে একটা রিক্সা নিয়ে উঠে চলে গেলো। রিসাদ নাফিসার যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে রইলো। সরাসরি এতো সুন্দর একটা সিনেমা দেখে মেহেদী খুব আনন্দ পেয়েছে। মেহেদী দোকানের বিল পরিশোধ করে রিসাদের সামনে দিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে হেটে চলে গেলো বাড়ির পথে। রিসাদ মেহেদীকে দেখে অবাক! সে এতোক্ষণ এই দোকানে ছিলো! অথচ দেখতেই পায়নি! দেখবেই কিভাবে! দোকানে পর্দা টানানো। খুব কষ্ট লাগছে আজ তার। বিপরীত পথে সেও ধীর পায়ে হেটে যেতে লাগলো।
.
নাফিসা বাসায় ফিরে তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো। মেহেদী এর মাঝে বাসায় এসেছে কিনা কে জানে! কিছুক্ষণ পর মেহেদী বাসায় ফিরে দেখলো নাফিসা শপিং ব্যাগগুলো একে একে ওয়ারড্রব এ রাখছে। দরজাটা লাগিয়ে মেহেদী জিজ্ঞেস করলো,
– কোথায় গিয়েছিলি?
– শপিং করতে। তুমি তো কিছু এনেই দাও না। তাই নিজেই শপিং করে এলাম।
– শপিং করতে গিয়েছিলি নাকি রিসাদের সাথে দেখা করতে?
নাফিসা চমকে উঠলো মেহেদীর কথা শুনে! হঠাৎ সে রিসাদের কথা বললো কেন! নিজেকে অনেকটা স্বাভাবিক করে বললো,
– রিসাদের সাথে দেখা কেন করতে যাবো! শপিং ব্যাগগুলো কি তোমার চোখে পড়ছে না!
– তা তো পড়ছেই!
মেহেদী নাফিসাকে একটানে নিজের খুব কাছে নিয়ে এলো। একটা হাত নাফিসার পেছনে রেখে তাকে নিজের সাথে চেপে ধরলো। অন্য হাতে নাফিসার সামনে আসা চুলগুলো কানের পেছনে গুজে দিলো। একটা আঙুল দিয়ে কপাল নাক ঠোঁট স্পর্শ করতে করতে গলা পর্যন্ত নামালো। নাফিসার ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। এই স্পর্শ অজানা এক অনুভূতির জন্ম দিচ্ছে। মেহেদী গলা থেকে হাতটা নিয়ে নাফিসার মাথার পেছনে রাখলো। তার নাক ও ঠোঁট দিয়ে নাফিসার সারা মুখে স্লাইড করতে করতে মাতাল সুরে বললো,
– আমার হাসব্যান্ড আছে, আমি আমার হাসব্যান্ড এর কাছে ভালো আছি, সুখে আছি, শান্তিতে আছি। আমি শরীরে, মনে সব দিক থেকে মেহেদীর হয়ে গেছি। আমাদের সম্পর্ক বহুদূর এগিয়ে গেছে! রাস্তায় দাড়িয়ে কে বলছিলো এসব?
নাফিসা চোখ খুলে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। চোখে তার বৃষ্টি ঝরছে। মেহেদী এসব জানলো কিভাবে! সে কি আশেপাশে ছিলো! তাহলে তাকে দেখতে পেল না কেন! মেহেদীর এখনকার আচরণও নাফিসা বুঝতে পারছে না! সে কি স্বাভাবিক আছে নাকি রেগে আছে! মেহেদী এখনো নাফিসার গালে, ঠোঁটে, চোখে, কপালে ছোয়া দিয়েই যাচ্ছে। আস্তে আস্তে ঠোঁট জোড়াও আটকে ধরেছে। সে এখন ঠোঁটের স্বাধ নিতে ব্যস্ত। নাফিসা পরম সুখে ভেসে যাচ্ছে। এ কি বাস্তব নাকি স্বপ্ন! মেহেদী রেগে যাওয়ার বদলে বিপরীত আচরণ করছে! এবার নাফিসাও একহাতে মেহেদীর শার্ট খামচে ধরে অন্যহাতে মেহেদীর চুল আঁকড়ে ধরেছে। যেন মেহেদীর সাথে পাল্লা দিয়ে যাচ্ছে। কতক্ষণ সে এমন সুখে ভেসেছে তার জানা নেই। হঠাৎ করে মেহেদী তার নিচের ঠোঁটে খুব জোরে কামড় বসিয়ে দিলো। নাফিসা চিৎকারও দিতে পারছে না। মেহেদী এখনো ঠোঁট কামড়ে ধরে আছে। শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে মেহেদীকে সরানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। এবার মেহেদী নিজেই ছেড়ে দিলো। নাফিসা ঠোঁট চেপে ধরলো। চোখ দিয়ে তার অনবরত পানি পড়ছে। ঠোঁট দিয়ে রক্ত ঝরছে। ঝাপসা চোখে মেহেদীর দিকে তাকিয়ে দেখলো মেহেদীর ঠোঁটেও রক্ত লেগে আছে। মেহেদী হাতের পিঠে রক্ত মুছে বললো,
– রিসাদ তো বারবার বলছিলো তার সাথে যাওয়ার জন্য। যাসনি কেন? তবে তোদের ড্রামাটা সত্যিই অসাধারণ ছিলো।
নাফিসার সহ্য হচ্ছে না মেহেদীর কথা। এদিকে ঠোঁট চেপে ধরেও রক্ত পড়া বন্ধ করতে পারছে না। বাথরুমে গিয়ে পানি দিলো। কিন্তু একটুও বন্ধ হচ্ছে না। পার্স থেকে টিস্যু নিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে বসে রইলো।
.
মেহেদী গোসল করে খাটে শুয়ে পড়লো। নাফিসা প্রায় আধঘন্টা ঠোঁট চেপে ধরেই বসে ছিলো। এখন রক্ত পড়া বন্ধ হয়েছে। ঠোঁট ফুলে গেছে। ক্ষত জায়গায় পাউডার দিয়ে থ্রিপিস পাল্টে শাড়ি পড়ে নিলো। ফ্রিজ থেকে ডাটাশাক নিয়ে ভাজি করলো আর আলু পটল দিয়ে নিরামিষ সবজি রান্না করলো। আমিষ ছাড়া এসব ছাড়া আর কি-ই বা রান্না করা যায়! ড্রামের চাল তো শেষ পর্যায়! বড়জোর আর তিনবেলা খাওয়া যাবে!
বিকেলে ফোনের রিংটোনে মেহেদীর ঘুম ভাঙলো। নাফিসা মেহেদীকে কারো সাথে কথা বলতে শুনে রান্নাঘর ছেড়ে রুমে এলো। দরজার কাছ থেকেই শুনতে পেল মেহেদী বলছে, “মাফ করবেন স্যার। আমি কোথাও এটেন্ড করতে পারবো না।” পলাশ স্যার কল করেছে তাহলে! স্যার তো একটা শেষ চেষ্টা করলো, কিন্তু এই ঘাড় ত্যাড়া ছেলে সরাসরি না করে দিলো! নাফিসা আবার রান্নাঘরে চলে এলো। মেহেদী উঠে বেরিয়ে গেছে। সন্ধ্যায় মামা কল করে কথা বললো নাফিসার সাথে। একা একা আর কতোক্ষণ বসে থাকা যায়! এই বাড়িতে সে একা। কেউ মেরে চলে গেলেও আশেপাশের লোক জানতে পারবে না। প্রায় এগারোটা বাজতে চলেছে। খুব ভয় লাগছে তার। হঠাৎ দরজায় নক করলো কেউ! মেহেদী কি ফিরেছে!
– কে?
– তোর জম। দরজা খোল!
নাফিসা মেহেদীর কন্ঠ শুনে দরজা খুললো। মেহেদী ভেতরে চলে গেলো। নাফিসা দরজা লাগিয়ে রুমে এসে দেখলো মেহেদী ওয়ালেট থেকে বের করে টাকা দেখছে। দশ টাকা, বিশ টাকার নোট দেখা যাচ্ছে। ষাট সত্তর টাকা হবে হয়তো! ওয়ালেট পকেটে রেখে জানালার পাশে দাড়িয়ে একটা সিগারেট জ্বালালো। শার্টটা খুলে ঢিল মেরে খাটে ফেলে দিলো। মেহেদী ফোনটা হাতে নিয়ে কাউকে কল করে বললো, ” আমার ফোনটা বিক্রি করবো। বারো হাজার দিয়ে কিনেছি। ফুল ফ্রেশ, সাত আট হাজারে কেউ কিনলে বলিস।”
ভান্ডার বুঝি ফুরিয়ে গেছে এখন ফোন বেচে খাবে। নাফিসা বিড়বিড় করতে করতে শার্টটা তুলে চেয়ারে ছড়িয়ে রাখলো। মেহেদী বাইরে তাকিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়েই যাচ্ছে। নাফিসা কাছে এসে মেহেদীর উন্মুক্ত পিঠে মাথা রেখে দু’হাতে জড়িয়ে ধরলো। মেহেদী ছাড়ানোর চেষ্টা করলে নাফিসা আরও শক্ত করে ধরলো।
– কি শুরু করেছো এসব! জীবন এভাবে চলে না। জমানো টাকা শেষ এখন ফোন বেচে খাবে! এভাবে কয়দিন চলবে! সিগারেট খাও কেন তুমি? এভাবে শুধু শুধু নিজের ক্ষতি কেন করছো! ভালো কাজ করে উপার্জন করে খাও। সব ভুলে জীবনটা সুন্দরভাবে সাজাও। চাচীরাও তো এসবই বলে গেছে। শুধু শুধু নিজেকে ধংস করে দিচ্ছো কেন!মাও নিশ্চয়ই তোমাকে নিয়ে এসব ভাবেনি। ফিরে আসো এ পথ থেকে। আমরা সুন্দরভাবে সবটা গুছিয়ে নিবো।
– ছাড় আমাকে।
– প্লিজ মেহেদী, এভাবে ধংস হয়ে যেওনা। দুদিন পর কমপিটিশন। এটেন্ড করো তুমি। তোমার স্বপ্ন পূরণ করো।
নাফিসা ছাড়ছে না বলে মেহেদী তার হাতে জ্বলন্ত সিগারেট চেপে ধরলো। চিৎকার দিয়ে নাফিসা সরে গেলো।
– তোর সাহস কি করে হয় আমাকে জ্ঞান দেওয়ার। কিসের উপার্জন, কিসের স্বপ্ন হ্যাঁ? আমার মা কে তুই মা বললি কেন!
মেহেদীর চোখ রক্তাবর্ণ ধারণ করেছে। নাফিসার চুলের মুঠি ধরে কাছে এনে হাতে আরও কয়েকবার সিগারেট চেপে ধরলো। নাফিসা চিৎকার করে মাকে ডাকছে, আল্লাহকে ডাকছে। মেহেদী তার পেটে পিঠেও সিগারেট চেপে ধরেছে। হাজার চেষ্টা করেও পারেনি থামাতে। সিগারেটের আগুন নিভে গেলে ছেড়ে দিলো। নাফিসা যন্ত্রণায় ছটফট করছে। জ্বালা কমানোর জন্য কান্না করতে করতেই ঠান্ডা মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আগুনের জ্বালা কি কোনোভাবে সহ্য করা যায়! নাফিসার ছটফটানি দেখে মেহেদীর শরীর কাপছে। সে রুম থেকে বেরিয়ে তালা খুলে মায়ের রুমে চলে গেলো। দীর্ঘক্ষণ কান্না করতে করতে অস্থির হয়ে নাফিসা একসময় চুপ হয়ে গেল। মেহেদী অনেক্ষন পর তার মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে এলো। তার চোখমুখও ভেজা। রুমে এসে দেখলো নাফিসা চোখ বুজে এলোমেলো হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে। আস্তে আস্তে হেটে হেটে নাফিসার কাছে এসে বসলো। হাতে আলতো করে স্পর্শ করলো। ক্ষত জায়গা চামড়া পুড়ে লাল হয়ে গেছে। কাপা কাপা হাতে পেটের উপর থেকে শাড়িটা সরিয়ে দেখলো কোন কোন ক্ষত হতে রক্ত বের হচ্ছে। এসব দেখে তার ভেতরটা কাপছে চোখ থেকেও নিরবে টুপটাপ পানি পড়ছে। সে যে একটা জানোয়ার হয়ে গেছে তা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে। নাফিসার আধমরা চেহারায় তাকিয়ে বললো,
– এই কষ্ট তো আর সহ্য হচ্ছে না, তাই না? এবার নিশ্চয়ই নিজের জীবন নিয়ে পালাবি এখান থেকে।
দু’হাতে নাফিসাকে পাজাকোলে তুলে নিলো মেহেদী। শরীরে যেন শক্তি পাচ্ছে না সে! নাফিসাকে খাটে শুয়িয়ে ফ্রিজ থেকে বরফের টুকরো আনলো। নাফিসার হাতে পেটে আস্তে আস্তে বরফ ঘষতে লাগলো। ঠান্ডা পেয়ে নাফিসা নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে মেহেদীকে দেখলো। তার শরীরে বিন্দু মাত্র শক্তিটুকুও পাচ্ছে না। ক্ষতর জ্বালায় শব্দ করে কাদতেও পারছে না! শুধু চোখের পানি ফেলছে। মেহেদী আরো বরফ নিয়ে নাফিসার পাশে বসলো। নাফিসাকে টেনে তুলে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে পিঠে বরফ লাগাচ্ছে। নাফিসা ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বললো,
– জীবনটাকে নষ্ট করো না। উপার্জন করো, জীবনটা সুন্দরভাবে গুছিয়ে নাও মেহেদী। আমি সবসময় থাকতে চাই তোমার পাশে।
মেহেদী বরফ লাগানো রেখে তাকে বুকের সাথে চেপে ধরলো, মাথায় চুমু দিলো। নিশব্দে দুজনের চোখেই অশ্রু ঝরছে। নাফিসা কোন সারা দিচ্ছে না, ঘুমিয়ে পড়েছে তার বুকেই। সবগুলো বরফ লাগিয়ে নাফিসাকে বালিশে শুয়িয়ে দিলো। বরফ করার জন্য আরো পানি রেখে এলো ফ্রিজে। নাফিসার পাশে এসে শুয়ে নাফিসার চোখের পানি মুছে দিলো। কপালে, কাটা ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইলো।
Story: #ভালোবাসি_প্রিয়
Part: 18
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
নাফিসার পাশে এসে শুয়ে নাফিসার চোখের পানি মুছে দিলো। কপালে, কাটা ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইলো।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাফিসার দিকে আনমনে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো মেহেদী। অনেক মায়া জেগে আছে এই চেহারায়! আভিজাত্যের সৌন্দর্য বিলীন হয়ে নির্যাতনের ছাপ পড়েছে নাফিসার চোখেমুখে, যা মেহেদীর চোখেও স্পষ্ট! জীবনটা এভাবে উল্টাপাল্টা হয়ে গেলো কেন! ছোটখাটো বিষয় নিয়ে পুরো জীবনটাই নষ্ট! না সে যেত হিংসে করতে আর না তাকে এদিন দেখতে হতো! এই চেহারাটা দেখলে একবার ইচ্ছে হয় একেবারে শেষ করে দিতে আবার ইচ্ছে করে খুব কাছে টেনে নিতে! খুব ভালোবাসা দিতে ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে! মেহেদী খুব বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে নাফিসার হাত উঠিয়ে দেখলো পোড়া জায়গা দিয়ে আঠালো পানি বের হচ্ছে! খুব বিশ্রী হয়ে গেছে দেখতে! নিজেরই ভেতরটা তছনছ করছে মেহেদীর! বিশ্বাসই হচ্ছে না তার হাত দিয়ে এমন জঘন্য অত্যাচার হয়েছে!
মেহেদী হাতটা আস্তে করে বিছানায় রাখলো। আধশোয়া অবস্থায় থেকে নাফিসার পেটের উপর থেকে শাড়ি সরালো। সেখানেও একই অবস্থা! রক্ত জমাট বেঁধে আঠালো পানি বের হচ্ছে! মেহেদী নাফিসার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে উঠে গেলো। হাতমুখ ধুয়ে শার্ট গায়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। এতো সকালে কোন দোকানপাট খুলেনি, ডিসপেনসারি তো দুরেই থাক! অনেক্ক্ষণ বসে থেকে নয়টার পর ডিসপেনসারি খুললে বার্ন রিমোভ ওয়েনমেন্ট নিয়ে বাসায় ফিরলো। পকেটে মাত্র পনেরো টাকা আছে, এটাই শেষ সম্বল!
ঘরে এসে নাফিসাকে দেখতে পেল না! কিচেনে উঁকি দিলো সেখানেও নেই, বাথরুমেও নেই! কোথায় গেছে! সে কি চলে গেলো! দুবার নাম ধরে ডাকলোও কিন্তু কোন সাড়া পেল না! মেহেদী ওয়েনমেন্ট ঢিল মেরে খাটে ফেলে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে খাটের কিনারায় বসলো।
– শেষ পর্যন্ত পালিয়ে গেলি তো! আসল রুপ বেরিয়ে এসেছে! অত্যাচার আর সহ্য হয়নি, না! এবার নিশ্চয়ই আরো কঠিন মামলায় আমাকে ফাসাবি! কর যা করার! নিজের নিশ্বাসটা বন্ধ হওয়ার অপেক্ষায়ই আছি আমি! কিছুই তো আমার কাছে ছিলো না, শুধু শুধু কিসের লোভে এসেছিস! তবে এটা ঠিক, ঘরটা একটু ফাকা হয়ে গেছে!
হঠাৎ করেই নাফিসার লাগেজে চোখ পড়লো! মেহেদী খাট থেকে উঠে ওয়ারড্রব খুলে দেখলো কাপড়চোপড় সব এখানেই আছে! এসব আবার এখানে রেখে গেছে কেন!
– পালিয়ে যাইনি আমি কোথাও!
নাফিসার কন্ঠ শুনে মেহেদী দরজার দিকে তাকালো। শাড়ির আঁচল পেচিয়ে পুরো শরীর ঢেকে রেখেছে। নাফিসা ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
– আমি যাওয়ার জন্য তো আসিনি, তাহলে পালাবো কেন! প্রায় অনেক্ক্ষণ যাবত এখানে দাড়িয়ে দেখছি পাগলের মতো একা একা কথা বলে যাচ্ছো! আমাকে এতো ভালোবাসো আর এতো মিস করো তাহলে আঘাত কেন করো! আচ্ছা সেটাও না হয় বুঝলাম, বেশি ভালোবাসো তাই বেশি আঘাত করো কিন্তু নিজেকে কষ্ট দাও কেন শুধু শুধু! এতো ভালোবেসে অত্যাচার করো তুমি আর আমি সহ্য না করে থাকি কিভাবে বলো! আলহামদুলিল্লাহ, তোমার দেয়া কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন! জীবনটা তুমি নিজ হাতে নিয়ে নেওয়ার সময়ও একটাই প্রার্থনা করবো যাতে নিজেকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে নিতে পারো। আর কিছু এই জগতে আশা করা ভুলে গেছি আমি, মেহেদী!
– তোর লেকচার তোর কাছেই রাখ। পালিয়ে যাস নি তো কোথায় গেছোস?
নাফিসা চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,
– হ্যাঁ, তুমি তো আর শুনবে না, আমার কাছেই রাখতে হবে! বাড়ির পেছনের দিকটায় গিয়েছিলাম ঔষুধী গাছ খুজতে। পাইনি! আমি টাকা দেই, একটা ওয়েনমেন্ট এনে দিতে পারবা?
মেহেদী খাট থেকে ওয়েনমেন্ট নিয়ে নাফিসার হাতে দিলো। নাফিসা কিছুটা অবাক হয়ে তাকালো! মেহেদী রুম ছেড়ে বেরিয়ে যেতে নিলে বললো,
– আমার কাছে কিছু টাকা আছে। লাগলে নিয়ে যাও, দয়া করে সিগারেটের পেছনে খরচ করো না!
মেহেদী তার কথায় কান না দিয়ে কিচেনে চলে গেলো। পানি খেয়ে আবার রুমে এসে দেখলো নাফিসা হাতে ওয়েনমেন্ট লাগিয়ে পেটের ক্ষতগুলো টিস্যু দিয়ে মুছতে চেষ্টা করছে কিন্তু ব্যাথার জ্বালায় পারছে না! চোখ থেকে টুপটাপ পানি পড়েই যাচ্ছে। মেহেদী ফ্রিজের দিকে এগিয়ে গেলো। মেহেদীকে রুমে আসতে দেখে নাফিসা শাড়ি ছেড়ে পেট ঢেকে চুপচাপ বসে রইলো। মেহেদী বের হলে তারপর করবে।
মেহেদী ফ্রিজ থেকে বরফ এনে নাফিসার কাছে হাটু ভাজ করে মেঝেতে বসলো। নাফিসা একটু অবাক হলো! নিজ হাতেই শাড়ির আঁচল খাপিয়ে উপরে তুললো মেহেদী। নাফিসার লজ্জা লাগছে তাই শাড়ির আঁচল নামাতে গেলে মেহেদী আরও বেশি উপরে তুলে দিলো। আর নামানোর সাহস দেখায়নি নাফিসা। ঘাড় ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো! মেহেদী বরফ ঘষে আস্তে আস্তে পরিষ্কার করে ওয়েনমেন্ট লাগাচ্ছে। নাফিসা দাতে দাত চেপে চোখের পানি ফেলছে আর বিছানার চাদর খামচে ধরেছে। জ্বালা করছে খুব! মেহেদী পিঠে লাগানোর জন্য টেনে দাড় করাতেই নাফিসা মেহেদীকে ঝাপটে ধরে রইল।
– প্লিজ রাখো! আর লাগবে না! অনেক জ্বালা করছে, সহ্য হচ্ছে না আমার!
মেহেদী এভাবে দাড়িয়ে থেকেই আঁচল ফেলে আস্তে আস্তে বরফ লাগিয়ে ওয়েনমেন্ট লাগিয়ে দিচ্ছে পিঠে! নাফিসা সহ্য করতে না পেরে দু’হাতে শার্ট খামচে ধরেছে পাশাপাশি চোখের পানিতে মেহেদীর শার্ট ভিজিয়ে দিচ্ছে!
– প্লিজ মেহেদী, স্টপ! আর পারছি না আমি!
– শেষ!
নাফিসা মেহেদীর গলা জড়িয়ে গলার নিচে নাকমুখ ঘষে বললো,
– স্বাভাবিক জীবনযাপন করার চেষ্টা করো প্লিজ। নিজেকে এভাবে ধংস করো না! তুমি একা নও, আমি আছি তো তোমার সাথে। সবসময় থাকতে চাই। এসব অভিনয় না, তুমিতো অনেক মেধাবী বুঝার চেষ্টা করো। একবারও কি আয়নায় দেখেছো চেহারার কি হাল করেছো! নিজেকে সামলাও, সুন্দরভাবে গুছাও! ঝড় এলেই কি তার অনুকূলে চলতে হয়! প্রতিকূলে চলার চেষ্টা করো, মেহেদী!
নাফিসা মেহেদীর কানের কাছে মুখ এনে বললো,
– ভালোবাসি প্রিয়। খুব ভালোবাসি তোমাকে!
নাফিসার হঠাৎ হুশ এলো! সে মেহেদীর কান পর্যন্ত পৌছালো কিভাবে! সে তো এতো লম্বা না! মেহেদীর গলা ছেড়ে পায়ের দিকে তাকাতেই দেখলো সে মেহেদীর পায়ের উপর ভর করে দাড়িয়ে আছে! মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেহেদী চুপচাপ তার দিকে তাকিয়ে আছে! নাফিসা লজ্জা পেয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। রান্নাঘরে এসে একা একাই মিটিমিটি হাসছে!
রান্না সেড়ে খেয়ে নিয়েছে, মেহেদী বাইরে বেরিয়ে গেছে, তাকে খাবার দেয়ার জন্য এক ঘন্টার মতো অপেক্ষা করলো নাফিসা। মেহেদী আসেনি! না এভাবে হবে না! সে বোরকা হিজাব পড়ে ঘর তালা দিয়ে বেরিয়ে গেলো। একটা রিকশা নিয়ে NN গ্রুপে চলে এলো। মামার কেবিনে যাওয়ার আগেই ম্যানেজারের কেবিন। আবিদের সামনে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– ভাইয়া, কেমন আছেন?
আবিদ কলমে কাগজে কিছু লিখছিলো! হঠাৎ মুখ তুলে উপরে তাকাতেই নাফিসাকে দেখতে পেল! তাকে চেনা মুশকিল! নাফিসা যদিও যথেষ্ট ফ্রেশ হয়ে চেহারার ছাপ ঢেকে আসতে চেয়েছে, কিন্তু কিছুটা হলেও তা স্পষ্ট! কদিন আগে দেখা এতো সুন্দরী মেয়েটা কেমন হয়ে গেছে! রোগা রোগা দেখাচ্ছে! চোখ গর্তে চলে গেছে, গায়ের রঙও পরিবর্তন হয়েছে! আবিদ তার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করলো,
– তুমি এখানে!
– আপনার কাছেই এসেছি। একটু জরুরি কথা ছিলো।
– তোমার সাথে কোন কথা বলতে ইচ্ছুক নই।
– ভাইয়া প্লিজ! মেহেদীকে নিয়ে কিছু কথা বলতে চাচ্ছি।
– খবরদার, মেহেদীকে নিয়ে একটা শব্দও উচ্চারণ করবে না। ছেলেটার জীবন একেবারে শেষ করে দিছো। তোমার সাহস কি করে হয়, সরাসরি আমার অফিসে আসার! আমি এখানে গল্প করতে আসিনি, আমার কাজে এসেছি। তুমি চাকরির খবরটা দিয়ে হেল্প করেছো বলে তুমি যখনতখন এখানে আসতে পারো না! এটা একটা অফিস! বের হও…
– আমি জানি এটা অফিস, একটু তো শুনুন!
– আমি কিছু শুনতে চাচ্ছি না! বের..
হঠাৎ কোম্পানির CEO কে আসতে দেখে আবিদ চুপ হয়ে গেলো! দাড়িয়ে সম্মান জানালো।
– নাফিসা! তুমি এখানে!
– আসসালামু আলাইকুম, মামা। কেমন আছো?
– ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু তোমার অবস্থা এমন কেন! চেহারার একি হাল করেছো! এমন দেখাচ্ছে কেন তোমাকে! অসুস্থ তুমি?
– মামা, একটু জ্বর হয়েছিলো। তাই এমন দেখাচ্ছে।
– সেকি! আমাকে জানালে না কেন! মেডিসিন নাও নি?
– হ্যাঁ নিয়েছি। আল্লাহর রহমতে এখন সুস্থ আছি।
– আমাকে না জানিয়ে হঠাৎ করে এখানে!
– এমনি এলাম দেখা করতে, পাশাপাশি সারপ্রাইজ দিতে। মামি অহনা কেমন আছে?
– হুম, ভালো। দেখা করতে এসেছো অথচ তোমার কেবিনে না গিয়ে এখানে দাড়িয়ে আছো! রনি না বললে তো জানতেই পারতাম না!
– ওটা আমার কেবিন না, ওটা তোমার।
– হাহাহা… উহুম তোমারই! আবিদ তো মনে হয় অন্যকোনো ভাবে চেনো নাফিসাকে! কিন্তু অফিসের অন্যান্য সদস্যদের মতো কি জানো তাকে?
– বুঝলাম না স্যার!
– মামা প্লিজ! তোমার লেকচার বন্ধ করো!
– উহুম! একজন ম্যানেজার হিসেবে কোম্পানি সম্পর্কে সকল তথ্য জানা দরকার! আবিদ বলো কোম্পানির পূর্ণ নাম কি?
– নূর নাফিসা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি।
আবিদ কথাটা বলে নিজেই অবাক হয়ে গেছে! এতোদিন পূর্ণ নাম জানলেও কখনো নাফিসার কথা মাথায় আসেনি! কিন্তু এখন তার মাথায় হোচট খাচ্ছে! স্যার নাফিসার মামা! কোম্পানিও তাহলে তার নামে! স্যার বলতে লাগলো,
– হ্যাঁ, নামটা ঠিক বলেছো। আর এই কোম্পানি নাফিসার নামেই। সুতরাং, এর আসল মালিক নাফিসা। তুমি ছাড়া সকলেই জানে ও চিনে নাফিসাকে। তুমি জয়েন করার পর নাফিসা আসেনি এখানে তাই পরিচয় করাতে পারিনি! নাফিসা, খুব ভালো একজন ম্যানেজার কালেক্ট করেছো তুমি। অসাধারণ পরিশ্রম করে আমাদের ম্যানেজার সাহেব!
নাফিসা মুচকি হাসলো! মামা আবার বললো,
– আজকে একটা ডিলিং মিটিং আছে দুইটা কোম্পানির সাথে। তুমি যেহেতু উপস্থিত আছো, মিটিংয়ে এটেন্ড করো।
– কিন্তু মামা, আমাকে যে একটু তারাতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে!
– মাত্রই তো এলে, আবার কবে না কবে আসো! কিছুক্ষণের মধ্যেই মিটিং শুরু হবে। থেকে যাও। আসো আমার সাথে, আমি ফাইলগুলো দেখিয়ে দিচ্ছি। আবিদ, ফাইল রেডি না?
– জ্বি স্যার।
– দাও আমি নিয়ে যাই।
– স্যার আমি নিয়ে আসছি।
– ওকে, এসো।
মামা নাফিসাকে নিয়ে চলে গেলো! আবিদ ফাইল নিয়ে পিছু পিছু যাচ্ছে! অফিসের সকল স্টাফ নাফিসার সাথে ফ্রেন্ডলি কথা বলছে নাফিসাও জবাব দিচ্ছে হাসিমুখে। সবাই তাকে ম্যাম বলে সম্মোধন করছে। আবিদের এখন খুব লজ্জা লাগছে! তুচ্ছ মনে হচ্ছে নিজেকে! এখানে সবার উপরে যার স্থান, সবাই যাকে এতো সম্মানস্বরূপ কথা বলছে আর সে কি না তার সাথে রূঢ় ব্যাবহার করেছে! যার অফিস তাকেই অফিস থেকে বেরিয়ে যেতে বলছিলো! আবিদ খুবই অসস্তি বোধ করছে! সকল স্টাফের দিকে তাকিয়ে দেখলো নাফিসাকে দেখে সবাই খুশি হয়েছে! সবাই নাফিসাকে একই কথা জিজ্ঞেস করছে, “ম্যাম আপনি অসুস্থ? ”
আবিদ ফাইলগুলো নিয়ে স্যারের কেবিনে এলো! আবিদ ইতস্তত বোধ করে অনেক চেষ্টা করে নাফিসাকে ম্যাম বলে ফাইলগুলো বুঝিয়ে দিচ্ছে। ম্যাম বলায় নাফিসারও ভালো লাগছে না কিন্তু মামার সামনে কিছু বলতে পারছে না! সবটা বুঝে নিয়ে নাফিসা মিটিংয়ে এটেন্ড করলো। সবকিছু এতো সুন্দরভাবে সাজিয়ে ঘুছিয়ে বলছে, আবিদ পাশে দাড়িয়ে অবাকের উপর অবাক হয়ে আছে! বয়স তার বেশি না! এতো ছোট একটা মেয়ে বড় বড় কোম্পানির অফিসারদের সাথে মিটিং করছে, অসাধারন লেকচার দিয়ে যাচ্ছে আবিদ আশ্চর্য না হয়ে পারলো না! কিভাবে সম্ভব এটা! আজকের মিটিংএ নাফিসা দুইটা ডিলই কনফার্ম করলো! অফিসারদের সাথে লাঞ্চ করলো নাফিসা, সাথে আবিদকেও ডেকে নিয়েছে। অফিসাররা চলে গেলে নাফিসা কোম্পানির স্টাফদের নিয়ে মিটিংয়ে বসলো। তাদের মতামত জানলো। অনেকে নাফিসার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো মাসিক বেতন না দিয়ে পাক্ষিক অর্থাৎ পনেরো দিন পরপর বেতন ব্যাবস্থা চালু করায় তারা অনেক সন্তুষ্ট! নাফিসাও জানালো প্রয়োজনীয় আরও সুযোগ সুবিধা প্রদান করার চেষ্টা করবে, শর্ত একটাই অফিসের কাজ যথাসময়ে শেষ করতে হবে। সবাই নাফিসার সাথে একমত পোষণ করলো! আবিদ শুধু হা হয়ে নাফিসার কর্মকাণ্ড দেখছে! এই মেয়ে তো স্যারের চেয়েও বেশি এগিয়ে আছে মনে হচ্ছে! তাহলে নাফিসার কোম্পানি হওয়াতেই স্বল্প যোগ্যতায় এতো ভালো চাকরি পেয়েছে সে! দিনা তো তাকে এমন কিছু বলেনি! দিনা কি জানতো সবটা!
চলবে