Story: #ভালোবাসি_প্রিয়
Part: 19+20
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
এই মেয়ে তো স্যারের চেয়েও বেশি এগিয়ে আছে মনে হচ্ছে! তাহলে নাফিসার কোম্পানি হওয়াতেই স্বল্প যোগ্যতায় এতো ভালো চাকরি পেয়েছে সে! দিনা তো তাকে এমন কিছু বলেনি! দিনা কি জানতো সবটা!
মিটিং শেষ করে ব্যক্তিগতভাবে মেহেদীকে নিয়ে মামার সাথে কিছু কথা বললো নাফিসা। কিছু কিছু বিষয় গোপন রেখে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু জানিয়েছে সে। অত:পর টাকা দিয়ে রনিকে বাজারে পাঠালো। মাছ যেন কেটেকুটে নিয়ে আসে সেটাও বলে দিলো। কেননা কোন কাজের চেষ্টা করার এনার্জি আপাতত তার শরীরে নেই!
নাফিসা আবার আবিদের কেবিনে এসে দাড়ালো।
– ভাইয়া, এখন মনে হয় আপনার তেমন কোনো জরুরি কাজ নেই। আমি কিছু কথা বলতে চাই, প্লিজ শুনুন একটু।
– সেকি ম্যাম, আপনি অনুরোধ করছেন কেন! বলুন না কি বলবেন! আপনার আদেশ অমান্য করার সামর্থ আছে নাকি আমাদের!
– ভাইয়া প্লিজ! এসব কুশলাদি ভালো লাগছে না। কিছু সময়ের জন্য ক্যান্টিনে চলুন।
আবিদ নাফিসার সাথে ক্যান্টিনে চলে এলো। টিফিন পিরিয়ড শেষ হয়ে গেছে তাই ক্যানটিন এখন ফাকা!
– বসুন।
– জ্বি, বলুন ম্যাম!
– কখন থেকে কি ম্যাম ম্যাম শুরু করেছেন! বন্ধ করুন ম্যাম ডাকা!
– ম্যাম, চাকরিটা আমি হারাতে চাই না! আমাদের মতো গরীবদের ভয় থাকে সারাক্ষণ চাকরি নিয়ে।
– একটা কথা বলুনতো ভাইয়া, আমাকে কি কোনো দিক থেকে মানুষ মনে হয় না! কতবার একজন মানুষকে এভাবে এড়িয়ে চলা যায়! একটা জরুরি কথা বলতে এসেছি আর আপনি এভাবে আমাকে তিরস্কার করে যাচ্ছেন! একটাবার কি বলার সুযোগটুকু দিবেন না! আল্লাহ আমার মাঝেও একটা হৃদয় দিয়েছেন, আমিও কষ্ট অনুভব করতে জানি। একটু স্বাভাবিক আচরণ কেন করতে পারছেন না! তাছাড়া আমি তো আমাকে নিয়ে কথা বলতে আসিনি, মেহেদীর জন্য এসেছি।
– কষ্ট অনুভব করতে জানলে কি আর অন্য কাউকে কষ্ট দিতে পারতে! বলো কি বলবা!
– মেহেদীর সাথে আপনার দেখা হয়?
– হয় দুতিনদিন পর পর।
– ওর অবস্থা কি একবারও দেখেছেন লক্ষ্য করে!
– এই অবস্থার জন্য কি তুমি দায়ী নও?
– হ্যাঁ আমি দায়ী, অস্বীকার করবো না সেটা! আর আপনাদের এটাও মানতে হবে মেহেদীর পদক্ষেপে আমি বাদ্য হয়েছি উল্টো পদক্ষেপ নিতে।
– কাল তো মনে হয় ফাইনাল রাউন্ড কমপিটিশন এর! এটেন্ড করবে না? এর জন্যই তো ছেলেটার সর্বনাশ করেছো!
– এর জন্য আমি তার সাথে কিছু করিনি। মামলাটা দিয়েছিলাম বিয়ের জন্য।
– এখন আবার সেই বিয়ের অধিকার খাটাতে যাচ্ছো কেন! শান্তি দিবে না তাকে! আর কতভাবে ধংস করতে চাও!
– হ্যাঁ, শান্তি দিতেই এসেছি। কোনভাবে ধংস করতে চাইছি না। সাধ্যমতো যতটুকু সম্ভব ফিরিয়ে দিতে চাই। ভাইয়া আমি আপনার কাছে হেল্প চাইতে এসেছি মেহেদীর জন্য। ও অনেক খারাপ পথে চলে যাচ্ছে। আপনি একটু হেল্প করুন ওকে ভালো পথে আনতে। আমার বিশ্বাস ও আপনার কথা একটু হলেও শুনবে।
– মেহেদীর নামে বাজে কথা বলো না অন্তত! আর তোমার এইসব নাটক সিনেমা বন্ধ করে চলে যাও মেহেদীর কাছ থেকে। ছেলেটাকে একটু স্বাধীনভাবে চলতে দাও।
– আমি কোনো নাটক করছি না!
– বললেই কি বুঝা যায় নাকি!
নাফিসা বোরকার হাতা উপরে তুলে হাতদুটো আবিদের সামনে রাখলো। আবিদ চমকে উঠে একবার নাফিসার মুখের দিকে তাকালো আরেকবার হাতের পোড়া জায়গায় তাকালো।
– বলুনতো এসব নাটক হয় কিনা! নাটক করতে করতে নিজের ক্ষতি অন্তত কেউ করে না! আর আমি মেহেদীকে নিয়ে কোন মিথ্যে বলছি না। মেহেদী যে সিগারেট খায় সেটা কি আপনি জানেন? দেখেছেন কখনো তাকে সিগারেট খেতে?
– মেহেদী সিগারেট খায় মানে!
– হ্যাঁ, সিগারেট খায়। শুধু সিগারেট না, বাজে লোকদের সাথে চলাফেরা করতেও দেখেছি তাকে। বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, এক সপ্তাহের মতো আমি আছি সেখানে। একবেলা তার মুখে কোন খাবার তুলে দিতে পারিনি। বাইরে কলা, বিস্কুট, চা খেয়ে দিন পার করে। আর রাতের বেলা একসাথে তিনচারটে সিগারেট শেষ করে! কয়দিনে চেহারার কি হাল করেছে সেটাও কি আপনার চোখে পড়েনি! এই চিনেন আপনার বন্ধুকে! আর এখন আমাকে বলছেন আমি নাটক করছি! আপনি নিজেই জিজ্ঞেস করে দেখেন তাকে। কি জবাব দেয় সে! জমানো টাকা হয়তো ছিলো কিছু ওসব শেষ করে এখন ফোন বিক্রি করে দিবে। গতকাল রাতে শুনলাম কাকে যেন ফোন করে বলছে সাত আট হাজারে বিক্রি করবে! হয়তো বলবেন মাকে হারানোর শোকে এমন হয়ে গেছে। কিন্তু মা কি আর কারো হারায় না! জীবনে কি আর কারো দুসময় আসে না! তাই বলে নিজের জীবন এভাবে ধংস করে দেয় কেউ! তার বাসায় আমি নিজে রান্না করে খেয়েছি অথচ তার মুখে একটা দানা তুলতে পারিনি! আমার কথা শুনবে না সেটা জেনেও সেখানে থেকে আমি প্রত্যেকটা মুহূর্ত চেষ্টা করে যাচ্ছি তাকে বুঝানোর। ভাইয়া আপনি একটু বুঝান তাকে। এভাবে কতদিন চলবে! ও লাইফটাকে স্বেচ্ছায় ধংস করে দিচ্ছে।
– হাতের স্পট গুলো কি সিগারেটের?
নাফিসা হাত ঢেকে চোখের পানি মুছে বললো,
– ভাইয়া, দুতিনদিন পর বোধহয় আপনাদের এক্সাম। মেহেদীকে এক্সাম দেয়ার জন্য আপনি একটু বলুন। আর ও যাতে উপার্জন করে সুন্দরভাবে চলতে পারে তাকে বুঝিয়ে বাধ্য করুন। দেখুন, আমি এসব কিছু আমার স্বার্থের জন্য করছিনা। সবটা মেহেদীর জন্য চাইছি। আমার স্বার্থের জন্য হলে মেহেদীর কাছে না গিয়ে আমি অন্য পথে সুন্দরভাবে এগিয়ে যেতে পারতাম। অন্তত একজন মানুষ ভেবে এইটুকু বিশ্বাস করুন আমাকে।
– তুমি বোধহয় জানো না মেহেদীকে ভার্সিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
– হ্যাঁ জানি আমি। আর গতকাল প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলে আমি সবটা ঠিক করে এসেছি। ফরম পূরন তো আগেই করা আছে, এখন এডমিট উঠিয়ে এক্সাম দিলেই হবে।
– ওর ভার্সিটির ফি বকেয়া আছে। এডমিট দিবে না।
– আমি আপনাকে টাকা দিয়ে যাই, আপনি ধারস্বরূপ মেহেদীকে দিবেন।
– সে কি নিবে! তার যেহেতু আয় নেই, সে আমাকে ফেরত দেয়ার কথাও বারবার চিন্তা করবে।
– আমি মামার সাথে কথা বলে রেখেছি। মেহেদীর জন্য একটা পোস্ট ঠিক করে রেখেছি, আস্তে আস্তে দক্ষ হলে বাকিটা পরে ব্যাবস্থা করবো। ও কাজের মধ্যে থাকলে ওসব বাজে পথে অগ্রসর হবে না। এখন শুধু আপনি ওকে বুঝিয়ে সাপোর্ট করলে ও আসবে ভাইয়া।
– কি পোস্টে?
– ম্যানেজিং।
– ম্যানেজিং!
– হ্যাঁ, আপনার টা সরাচ্ছি না। একাধিক ম্যানেজার হিসেবে মেহেদীর জন্য পোস্টটা ফাকা করলাম। আপনি ওকে কাজ বুঝিয়ে দিবেন আর আপনার সাথে কাজ করলে ও সময়টা ভালো কাটাবে। এখন বলুন ভাইয়া, আপনি একটু হেল্প করবেন কিনা!
– তোমার কথা সত্য হলে আমি চেষ্টা করবো। একটা রিকোয়েস্ট, এর বিপরীতে কোন চাল চেলো না।
– আপনি নিশ্চিত থাকুন সে ব্যাপারে। দিনা কেমন আছে?
– ভালো।
এমন সময় রনি এসে বললো,
– ম্যাম বাজার নিয়ে এসেছি। বাইরে রিকশা অপেক্ষা করছে।
নাফিসা ব্যাগ থেকে একটা কাগজ নিয়ে কিছু লিখে রনিকে বললো,
– ভাইয়া, রিকশাওয়ালাকে এই এড্রেসে পাঠিয়ে দিন। চালের বস্তা যেন ঘরের সামনে রেখে আসে, আর বাজারের ব্যাগটা আমার কাছে নিয়ে আসুন।
– ওকে।
রনি চলে গেলে আবিদ বললো,
– পুরো সংসার সামলানোর ব্যাবস্থা করছো!
– চেষ্টা করছি, এখন মেহেদী শোধরালেই হয়।
– আমি ওকে হঠাৎ করেই চাকরির কথা বলি কিভাবে!
– তাও ঠিক! আপনি ওকে আগে এক্সাম দেয়ার কথাটা বলবেন আর বকেয়া পরিশোধের জন্য আপনি হেল্প করতে চাইবেন। তারপর সে যদি টাকা রিটার্নের কথা বলে তখন চাকরির কথা বলবেন। আমার কথা যেন জানতে না পারে।
– ওকে চেষ্টা করবো।
– আপনার ফোন নম্বর দিন, আর একাউন্ট নম্বর দিন। আমি দশহাজার টাকা ট্রান্সফার করে দেই।
– আগে তাকে মানিয়ে নেই, তারপর টাকার হিসাব।
– আমি তো আর প্রতিদিন আসবো না অফিসে! রেখে দিন। প্রয়োজন হলেই কাজে লাগাবেন।
– ওকে।
– এখনই কল করে আপনি দেখা করতে বলুন। আমি বাসায় যাচ্ছি।
– এখন তো অফিস টাইম!
– ছুটি হয়ে গেছে তো এতোক্ষণে। পরপর দুইটা মিটিংয়ের পর অফিস টাইম ওভার করে দিয়েছি। কাল থেকে আবার কাজে লেগে যাবে সবাই।
– ওহ, ওকে।
আবিদ নাফিসার সাথে ক্যান্টিন থেকে বের হতে হতে মেহেদীকে কল করে বললো দেখা করতে। অফিসের সবকিছু গুছিয়ে নাফিসা আর আবিদ একসাথেই বের হয়েছে। বাইরে আসতেই মেহেদী হাজির! তিনজনই অবাক! মেহেদী আবিদের সাথে নাফিসাকে এখানে দেখে অবাক! নাফিসা আর আবিদ ফোন করার সাথে সাথেই মেহেদীকে অফিসের সামনে হাজির হতে দেখে অবাক! মেহেদীই প্রথম বলে উঠলো,
– তুই এখানে কেন?
– অফিসে মানুষ কেন আসে! তোমাকে তো কতোবার বললাম, তুমি তো আর চাকরি করবে না। এখন না পেরে আমাকেই খুজতে হচ্ছে। ভাইয়া, আপনাদের অফিসে পিওনের পোস্টটা খালি হলেও আমাকে জানাবেন প্লিজ। খাবারের টাকাটা উপার্জন করতে পারলেই হবে। আপনার বন্ধুর মতো না খেয়ে থাকার জন্য তো কেউ আর পৃথিবীতে আসেনি !
নাফিসা এখানে অপেক্ষা না করে বাজারের ব্যাগ নিয়ে রিকশা ডেকে চলে গেলো। আবিদের হাসি পাচ্ছিলো নাফিসার কথায় কিন্তু মেহেদী সামনে থাকায় হাসি প্রকাশ করলো না।
– আবিদ এই মেয়ে এখানে কেন এসেছে রে?
– চাকরি খুজতে। কিন্তু তুই এতো তারাতাড়ি আমার অফিসের সামনে?
– এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম। ফোন করেছিস তাই ভাবলাম দেখা করেই যাই। কেন ডেকেছিস?
– আয় আমার সাথে। কিছু কথা আছে তোর সাথে।
– চল।
আবিদ মেহেদীকে নিয়ে পাশের একটা রেস্টুরেন্টে এলো। এদিকে নাফিসা বাসায় চলে এসেছে। চালের বস্তা দরজার সামনেই রেখে গেছে। কিন্তু এটা ভেতরে নিবে কিভাবে! তালা খুলে ফ্রেশ হয়ে নিলো। কিছুক্ষণ বস্তা টানাটানি করলো! এমনিতেই অসুস্থ তার উপর এই বস্তার সাথে পারা যায়! অনেক টেনে হিচরে কোনোমতে বারান্দার দরজা পাড় করে আনলো। অত:পর গোসল সেড়ে নিলো। ভাত খেয়ে রাতের জন্য রান্না বসালো।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে মেহেদী আসছে না! এদিকে আবিদের ফোন ও মেহেদীর দুটোরই অপেক্ষায় আছে নাফিসা। রাত আটটায় মেহেদী ফিরেছে। তার চোখমুখ কেমন যেন দেখাচ্ছে! কেদেছে নাকি! একবার নাফিসার দিকে তাকায়ওনি! ওয়ারড্রব থেকে জামাকাপড় নিয়ে সোজা বাথরুমে চলে গেলো। নাফিসা খাবার বাড়লো। মেহেদী গোসল করে এসে সাথে সাথে শুয়ে পড়েছে। নাফিসা বাথরুমে উঁকি দিয়ে দেখলো জামাকাপড় ঠিকই রেখে গেছে। মুচকি হেসে শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুজে শার্ট প্যান্ট ধুয়ে দিলো। কাজ তার জন্য এখন কষ্টের হলেও ভালো লাগছে করতে। নিজেকে দায়িত্বশীল সংসারী মনে হচ্ছে। বারান্দায় জামাকাপড় নেড়ে মেহেদীর কাছে এসে বসলো। মেহেদী চোখ বুজে আছে। শরীর খারাপ নাকি! নাফিসা মেহেদীর কপালে হাত রাখলো। না, শরীর ঠান্ডাই আছে। মেহেদী হাত সরিয়ে দিলো।
– খাবে না? সারাদিন এমন না খেয়ে কাটাও কিভাবে!
– কোন কথা বলবি না। যা এখান থেকে!
-পরে আবার খোজবা না তো!
– যাবি এখন!
মেহেদীর ধমকে নাফিসা উঠে গেলো। মেহেদী চোখের উপর হাত রেখে শুয়ে আছে। নাফিসা ওয়েনমেন্ট নিয়ে আবার কাছে এসে দাড়ালো।
– ওয়েনমেন্ট লাগিয়ে দিবে একটু?
মেহেদী হাত সরিয়ে তাকালো নাফিসার দিকে। কিছু না বলে উঠে বসে হাত থেকে ওয়েনমেন্ট নিলো। পেট থেকে শাড়ি সরাতে গেলে নাফিসা পিছু সরে গিয়ে বললো,
– এটা আমি লাগাতে পারবো। তুমি পিঠে লাগিয়ে দাও।
মেহেদী বিছানা ছেড়ে নাফিসার পেছনে দাড়ালো। সাথে সাথে নাফিসা মেহেদীকে জরিয়ে ধরে বললো,
– এভাবে থেকেই লাগিয়ে দাও, প্লিজ।
মেহেদী সামনে থেকেই আস্তে আস্তে ওয়েনমেন্ট লাগাচ্ছে নাফিসা তাকে শক্ত করে ধরে কান্না করছে। পিঠে লাগানো শেষ হতেই মেহেদী খাটে বসে নাফিসাকে কাছে টেনে দাড় করিয়ে পেটেও লাগিয়ে দিচ্ছে। নাফিসা বাধা দিচ্ছে,
– রেখে দাও। পরে লাগাবো, জ্বালা করছে অনেক।
মেহেদী না থেমে পেটে ও হাতেও লাগিয়ে দিলো। আবিদের কল আসতেই জানালার কাছে চলে গেলো আর নাফিসা রান্নাঘর থেকে এক প্লেট খাবার এনে ভয়ে ভয়ে মেহেদীর সামনে দাড়ালো। মেহেদী কথা বলা শেষ করতেই বললো,
– কয়দিন না খেয়ে বাচবে? খাবার তো কোন দোষ করেনি! শুধু শুধু অবহেলা করছো কেন! রাগ তো আমার উপর, শাস্তিও তো আমি পাচ্ছি। প্লিজ খেয়ে নাও অল্প। আল্লাহর রহমতের দানা, ফেলো না প্লিজ। দয়া করে খেয়ে নাও কিছু।
মেহেদী প্লেট হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে আর এদিকে নাফিসা বলে যাচ্ছে,
– মেহেদী প্লিজ ফেলো না। খাবার ফেলতে নেই, আল্লাহ অসন্তুষ্ট হবে।
হঠাৎ দেখলো মেহেদী তো বাইরে যায়নি! নাফিসা দরজার কাছে আসতেই দেখলো মেহেদী মায়ের রুমের দরজা ঠাস করে লাগিয়ে দিয়েছে! কি করতে চাচ্ছে সে! খাবার কি খাবে নাকি জানালা দিয়ে আবার ফেলে দিবে! নাফিসা ভাবতে ভাবতে রান্নাঘরে এসে তার প্লেট নিয়ে খেতে লাগলো। অনেকক্ষণ পর মেহেদী বেরিয়ে এসেছে। এতোক্ষণে নাফিসার খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। মেহেদীর চোখ ভেজা ভেজা দেখাচ্ছে! প্লেটটা না ধুয়ে কিচেনে রেখে হাত ধুয়ে রুমে এসেছে। নাফিসা প্লেট দেখে কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে মেহেদী খেয়েছে, কিন্তু শিওর না! রুমে এসে দেখলো মেহেদী আবার সিগারেট ধরিয়েছে! আজ ভয়ে আর কিছু বলতে যায়নি নাফিসা। চুপচাপ খাটে এসে কাথা টেনে শুয়ে পড়েছে। একটা সিগারেট শেষ করে শার্টটা খুলে আবার নাফিসার খুব কাছে চলে এসেছে! ইচ্ছে করে মুখ ভর্তি ধোঁয়া এনে নাফিসার মুখে ছেড়েছে! সহ্য হচ্ছে না এই সিগারেটের গন্ধ! দম বন্ধ হয়ে আসছে নাফিসার! তবুও তাকে বাধা দিতে পারছে না! একটু কি মায়া নেই, এই অসুস্থ শরীরে ঝাপিয়ে পড়েছে! এটা কি ভালোবাসা না প্রতিশোধ দেখাচ্ছে, কিছুই বুঝতে পারছে না নাফিসা!
Story: #ভালোবাসি_প্রিয়
Part: 20
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
একটু কি মায়া নেই, এই অসুস্থ শরীরে ঝাপিয়ে পড়েছে! এটা কি ভালোবাসা না প্রতিশোধ দেখাচ্ছে, কিছুই বুঝতে পারছে না নাফিসা!
সকালে মেহেদীর ফোনে রিংটোন বাজতেই দুজনের ঘুম ভাঙলো। মেহেদী চোখ না খুলেই আশেপাশে হাত নেড়ে ফোন খুজতে লাগলো! নাফিসা ঘুমঘুম চোখে তাকালো। মেহেদী এখনো নাফিসার উপর পড়ে আছে! একটা পা সহ প্রায় শরীরের অর্ধেক ভাড় নাফিসার উপরই ছেড়ে দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলো। নাফিসা উঠার চেষ্টা করতেই মেহেদী নাফিসার কাধে মাথা রেখে শুয়ে ফোন রিসিভ করলো। নাফিসা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে সে এখন উঠতে দিবে না তাকে! তাই অযথা আর চেষ্টা করলো না। কল রিসিভ করে মেহেদী ঘুমঘুম কন্ঠে বললো,
– হ্যালো?
– এখনো ঘুমাচ্ছিস নাকি!
– হুম।
– ফ্রী থাকলে বিকেলে দেখা করিস।
– ওকে।
আবিদ কল করেছিলো। কল কেটে দিলে ফোন রেখে হাত পা আরও ভালো করে নাফিসার উপর তুলে আরাম করে শুয়েছে সে।
– উঠবো তো আমি। বেলা হয়ে গেছে অনেক।
– ধরে রাখছে কে?
– ধরে না রাখলে আমি আটকে আছি কেন?
– আমি কি জানি!
কাধ থেকে মাথা বুকের মাঝামাঝিতে চলে গেলো আর শুরু হলো তার খুনশুটি! নাফিসা মেহেদীর মাথাটা বুকে চেপে ধরে রাখলো! মনের ভেতরে আনন্দ লাগছে কিন্তু বাইরে অশ্রু ঝরছে! কিছুক্ষণ পর মেহেদী উঠে চলে গেলো। নাফিসা কাপড়চোপড় ঠিক করে বিছানা ঘর গুছিয়ে নিলো। মেহেদী গোসল সেড়ে এলে সে গেলো। বাথরুম থেকে বেরিয়ে কাপড়চোপড় বাইরে শুকাতে দিয়ে ঘরে এলো। মেহেদী নেই ঘরে! এসময় আবার কোথায় গেলো! কাল রাতের কথা মনে হতেই চুল মুছতে মুছতে নাফিসা ঘরের পেছনের দিকে গেলো। মায়ের রুমের জানালা বরাবর তাকিয়ে দেখলো কোন খাবার ফেলা নেই। তাহলে মেহেদী খেয়েছে খাবার! ভাবতেই আনন্দ লাগলো। এতোদিন পর একবেলা খাবার মুখে তুলতে পেরেছে! পেছন থেকে কেউ কথা বলায় হঠাৎ নাফিসা চমকে উঠলো।
– এখানে কি?
নাফিসা বুকে থু থু দিয়ে জবাব দিলো।
– কই, কিছু না তো!
নাফিসা ঘরে চলে এলো সাথে মেহেদীও। চালের বস্তা কাল যে এখানে রেখেছে এখনো এখানেই আছে! নাফিসা মেহেদীকে আটকিয়ে বললো,
– চালগুলো ড্রামে ঢেলে দাও না!
– বাইরে নিয়ে ফেলে দে।
– সেটাও সম্ভব নয়। পর্যাপ্ত শক্তি নেই! কোনোমতো টেনে ঘরে নিয়ে এসেছিলাম! প্লিজ একটু তুলো।
নাফিসার জোরাজুরিতে মেহেদী বস্তা তুলে ড্রামে চাল ঢেলে দিলো। রুমে এসে নাফিসা চুল আচরানোর জন্য ড্রেসিং টেবিলের সামনে যেতেই মেহেদী কাছে এসে পেছনে দাড়ালো। নাফিসা তাকে আয়নায় দেখে শিউরে উঠলো! মেহেদী পিঠ ঢাকা চুলগুলো সরিয়ে একপাশে সামনে এনে রাখলো। কাধ থেকে শাড়ির আঁচলটাও ফেলে দিলো! সামনে আয়না দাড়ানো! নাফিসা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেললো! মনের ভেতর ঢাকঢোল পেটাচ্ছ কেউ! মেহেদীর হাত তার পিঠ স্পর্শ করতেই কেপে উঠলো সে! হঠাৎ করেই যন্ত্রণায় লাফিয়ে উঠলো! সে তো ভেবেছিলো অসময়ে মেহেদীর রোমাঞ্চ জেগে উঠেছে! এ তো রোমাঞ্চ নয়! পোড়া ঘা তে ওয়েনমেন্ট লাগাতে এসেছে সে! নাফিসা এক লাফে খাটের ওপাশে চলে গেলো। শাড়ির আঁচলটাও তুলে গায়ে জড়িয়ে নিলো।
– কি করছো তুমি! এভাবে কেউ ওয়েনমেন্ট লাগায়!
– মেরেছি নাকি?
– মারোনি, কিন্তু আমি তো ভাবছিলাম…
– কি?
– কিছু না। এখন এটা লাগাতে হবে না। রাতে ঘুমানোর আগে লাগালেই হবে।
মেহেদী আর কিছু না বলে সোজা গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। ওয়েনমেন্ট হাতে নিয়ে নাফিসার দিকে এগিয়ে গেলো। কোনদিকে পালাবে সেটা নাফিসা ভাবতে ভাবতে মেহেদী তার কাছে এসে পড়েছে। এবার সামনে থেকে জরিয়ে ধরে আবার শাড়ির আঁচল ফেলে দিলো। এভাবে না দাড়ালে ওয়েনমেন্ট লাগাতে দিবে না! লাগানোর আগেই নাফিসা মেহেদীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ গুজে রেখেছে। ওয়েনমেন্ট লাগানোর পুরোটা সময় এভাবে গলা ঝাপটেই পড়ে আছে আর দাতে দাত চেপে চোখের পানি ফেলে মেহেদীর কাধ ভিজিয়ে দিচ্ছে। মেহেদী তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই নাফিসা গলায় একটা চুমু দিয়ে বললো,
– ভালোবাসি প্রিয়।
মেহেদী কোনো প্রতিক্রিয়া না করে হাটু ভেঙে বসে পড়লো। পেটে ও হাতে ওয়েনমেন্ট লাগিয়ে দিলো।
নাফিসা রান্নাঘরে এসে ভাত আর শাক ভাজি করলো সকালের নাস্তার জন্য। মেহেদী আবার বেরিয়ে গেছে। তার জন্য অপেক্ষা করে নাফিসা একাই খেয়ে নিলো। গরম ভাত আর সাথে রাতের বেচে যাওয়া তরকারি। যোহরের আজানের পরে বাসায় ফিরলো মেহেদী । বিছানায় বালিশ ঠিকঠাক মতো রেখে শার্ট খুলছে। নাফিসা মনে মনে বললো, “এখন কি ঘুমানোর ব্যাবস্থা করছে! সারাদিন তো এক ওয়াক্তও নামাজ পড়ে না! আজ শুক্রবার, জুমুআর নামাজও কি পড়বে না! ” সাহস নিয়ে মেহেদীর কাছে গেলো। শার্টের বোতাম খুলে ফেলেছে সেটা নাফিসা জোর করে লাগিয়ে দিতে দিতে বললো,
– কি গো? নামাজ পড়তে যাবে না?
– না, যাবো না। সর..
মেহেদী নাফিসাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে আবার বোতাম খুলছে। নাফিসা কলার টেনে শক্ত করে ধরে বলতে লাগলো,
– কেমন মানুষ তুমি! জুমুয়ার নামাজ কেউ মিস করে! আল্লাহ নারাজ হবেন। তাছাড়া নামাজ আদায় না করলে মৃত্যুর পর কঠিন আযাব হবে। যাও না, নামাজ পড়ে এসো। পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, মা বাবার জন্য দোয়া করবে, মায়ের কবর জিয়ারত করে আসবে, তাহলেই না তুমি একজন আদর্শ সন্তান হবে। জানো তো, সন্তানের দোয়া সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে। তুমি দোয়া না করলে মা শান্তি পাবে কিভাবে! যাও না, যাও… নামাজ পড়ে কবর জিয়ারত করে এসো। জুমুয়ার দিন আরও বেশি সওয়াব হবে।
মেহেদী তার হাত ছাড়িয়ে বাথরুমে চলে গেলো। নাফিসা একটু এগিয়ে বুঝতে পারলো সে ওযু করছে! মনটা আনন্দিত হয়ে উঠলো! শুনাতে পেরেছে তাহলে তাকে! ওয়ারড্রব খুলে মেহেদীর কাপড়চোপড় নেড়ে তিনটা পাঞ্জাবি পেয়েছে। সেখান থেকে রঙিনগুলো রেখে সাদা রঙের পাঞ্জাবিটা বের করে খাটে রাখলো। পাঞ্জাবিটা অনেক সুন্দর। গলা ও হাতার পাড় হাতের কাজ করা দেখা যাচ্ছে! এখন পড়বে কিনা কে জানে! মেহেদী ওযু করে এসে পাঞ্জাবিটা খাটে দেখে একবার নাফিসার দিকে তাকালো, আরেকবার পাঞ্জাবির দিকে তাকালো। এটা তার মা নিজের হাতে সুতার কাজ করে ঈদের সময় গিফট করেছিলো। নাফিসা চুপচাপ সোজা হয়ে দাড়িয়ে আছে। মেহেদী পাঞ্জাবিটা নিয়ে পড়লো। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল আচড়ে ঠিক করে নিলো। পাঞ্জাবিতে অনেক সুন্দর লাগছে তাকে। চুলগুলো কাটা থাকলে আরও অনেক সুন্দর লাগতো। মেহেদী ফোন বাসায় রেখে বেরিয়ে গেলো। নাফিসা মেহেদীর যাওয়ার পথে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। প্রশান্তির নিশ্বাস ছেড়ে শার্ট ও ফোন ঠিক জায়গায় তুলে রাখলো। একটু আগে মাত্র আযান পড়েছে। নামাজ শুরু হতে অনেক দেড়ি। নাফিসা ফ্রিজ থেকে মুরগির মাংস নামিয়ে পেয়াজ কেটে রান্নার আয়োজন করলো। এক নজরে ইউটিউবে আরেকবার হলুদ, মরিচ, মসলার পরিমাণটা দেখে নিলো। রান্না শেষ করে টেস্ট যাচাই করে নিলো। হুম মজা হয়েছে! নাফিসাও ওড়না বিছিয়ে নামাজ পড়ে নিলো। মসজিদের নামাজ তো শেষ হয়ে গেছে, মেহেদী আসছে না কেন! মায়ের কবর জিয়ারত করতে গেছে হয়তো! নাফিসা মেহেদীর ফোনটা নিয়ে দেখতে লাগলো। গ্যালারিতে মায়ের ছবিও আছে। দেখতে দেখতে হঠাৎ তার ছবি দেখে অবাক হলো! চারটা ছবি আছে। একটা ফুসকা মুখে তুলছে, আর এতো বড় হা করে আছে! আর একটা হাটার মাঝে তোলা হয়েছে! আরেকটা ভার্সিটির বারান্দায় বসে দিনার সাথে হেসে কথা বলছে! আরেকটা দিনার বিয়ের দিনের ছবি! এগুলো তুললো কখন! সে তো আন্দাজও করতে পারেনি! তার বন্ধুবান্ধবদের ছবিও আছে কিন্তু রিসাদের ছবি একটাও নেই! সব কেটে দিয়েছে হয়তো! মেহেদীর ও মায়ের ছবি দেখতে দেখতে আরও অনেক্ক্ষণ অপেক্ষা করলো নাফিসা , তার চোখে ঘুম নেমে এসেছে! বেশ কিছুক্ষণ পর মেহেদী এসেছে। পানি পড়ার শব্দে ঘুম ভাঙলো নাফিসার! এসময় কলে পানি পড়ছে কেন! পাঞ্জাবিটা খাটেই পড়ে আছে। নাফিসা হাতে নিয়ে দেখলো কোথাও মাটি লেগে আছে, আর ছোট ছোট চুল পড়ে ময়লা হয়ে আছে! একদিনেই এই অবস্থা! তারপর খেয়াল এলো, কবরস্থানে গিয়েছে হয়তো এজন্য মাটি লেগেছে! চুল খোপা করে পাঞ্জাবি হাতে নিয়ে বের হতেই মেহেদী বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো। গোসল করেছে আবার! একটু নয়, পুরো অন্যরকম লাগছে তাকে! নাফিসা লক্ষ্য করে দেখলো মেহেদী চুল কেটেছে, ক্লিন সেভও করেছে! এজন্যই পাঞ্জাবিতে ছোট ছোট চুল পড়ে আছে! মেহেদী রুমে চলে গেলো আর নাফিসা পাঞ্জাবি ধুয়ে খাবার বেড়ে নিয়ে প্লাস্টিকের টি টেবিলটা টেনে খাবারের বাটি রাখলো। মেহেদী ফ্যান ছেড়ে পিঠের নিচে বালিশ রেখে খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে। পরনে তার শার্টও নেই, শুধু কালো জিন্সের প্যান্ট পড়ে আছে। হালকা ভেজা চুলগুলো কালো কুচকুচে হয়ে আছে! ক্লিন সেভ, ফরসা গায়ে অসম্ভব ভালো লাগছে দেখতে! মনে হচ্ছে জংলী বেশ ছেড়ে সাধারণ মানুষের রূপ ধারণ করেছে! এখন পুরো আগের মেহেদী মনে হচ্ছে তাকে শুধু মুখটা একটু শুকিয়ে বিষন্নতার ছাপ পড়েছে! ইনশাআল্লাহ এটাও খুব দ্রুত চলে যাবে। বাটি রেখে এখানেই দাড়িয়ে পলকহীন তাকিয়ে আছে নাফিসা। মেহেদী মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে তার দিকে তাকাতেই নাফিসার পলক পড়লো। একটু লজ্জা পেয়ে বেরিয়ে এসে ভাতের প্লেট নিয়ে গেলো।
– এসব এখানে আনা হচ্ছে কেন! আমি খাবো না, নিয়ে যা এখান থেকে।
নাফিসা তার কথায় কান না দিয়ে পানির গ্লাস নিয়ে এলো। মেহেদীর কাছেই খাটে বসে বললো,
– একটা সত্যি কথা বলবো, বাচ্চাদের মতো জেদ করলে না তোমাকে পুরোই বাচ্চা মনে হয়। আমি বাচ্চাদের তেমন সামলাতে পারি না। এখন জেদ না করে তারাতাড়ি খেয়ে নাও। তোমার উদ্দেশ্যে রান্না করেছি, না খেলে খাবার নাকি আবার অভিশাপ দেয়!
– কে বলছে রান্না করতে! তুই রান্না করছোস তুই খা।
মেহেদী হেলান ছেড়ে উঠতে লাগলে নাফিসা বাধা দিলো।
– যাবে না প্লিজ। সকালেও খাওনি। নিজের পেটের দিকে তাকিয়ে দেখো কেমন গর্তে চলে গেছে! রাগ জেদ সব আমার সাথে সেটা আমার সাথেই দেখাও, খাবারের কোন দোষ নেই। তারাতাড়ি খাও।
বাটি আর পানির গ্লাস নিয়ে নিয়ে বললো,
– হাত কি আমি ধুয়িয়ে দেবো, নতুন জামাইয়ের মতো?
মেহেদী বিরক্তি নিয়ে ঠিক হয়ে বসে হাত থেকে গ্লাস নিয়ে নিজেই হাত ধুয়ে প্লেট হাতে নিলো। নাফিসা মুচকি হেসে প্লেটে শাক ভাজি তুলে দিলো তারপর তার নিজের প্লেটেও নিলো। প্লেট হাতে নিয়ে মাখতে মাখতে মেহেদীর খাওয়া দেখার জন্য বসে আছে। মেহেদী এক লোকমা মুখে দিতেই মুখ নাড়াচাড়া থামিয়ে নাফিসার দিকে তাকালো। মুহুর্তেই নাফিসার মুচকি হাসি বিলীন হয়ে মুখ মলিন হয়ে গেছে! চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– কি হয়েছে?
মেহেদী খাবার মুখে রেখেই আরেক লোকমা নাফিসার মুখে তুলে দিলো! খাবার মুখে দিতেই নাফিসা বাটি নিয়ে তা বাটিতে ফেলে দিলো! শাক ভাজিতে বিন্দু মাত্র লবণ নেই! সকালে তো সে এটা খায়ই নি! ইশশ! আজ প্রথম মেহেদীর সাথে খেতে বসলো তাও খাবারের এই হাল! এতোদিন তো এমন হেরফের হয়নি! দূর!!! নাফিসা মুরগির মাংসের টেস্ট আবার দেখে নিলো। এটা ঠিক আছে। তাই বললো,
শাক দিয়ে মাখানো ভাত ফেলে দিয়ে এটা দিয়ে খাও। এটা ঠিক আছে।
মেহেদী প্লেট রেখে নেমে বেরিয়ে গেলো।
– যেও না প্লিজ। এটা দিয়ে খাও। মেহেদী খেয়ে যাও…
মেহেদী আবার রুমে এলো হাতে লবনের কৌটা নিয়ে। লবণ এনে তার নিজের শাক মাখানো ভাতেও দিলো আবার নাফিসার শাক মাখানো ভাতেও ছিটিয়ে দিলো। আবার উঠে বসে সেগুলো খাচ্ছে। সে লবনের কৌটা আনতে গেছে আর এদিকে নাফিসা ভাবছিলো রেগে না খেয়ে চলে যাচ্ছে! নাফিসা মুচকি হেসে মেহেদীর মতো খাওয়া শুরু করলো। এবার খাওয়া যাচ্ছে। মুরগির মাংস দিয়েও খেয়েছে। খাওয়া শেষে প্লেট রেখে এসে দেখলো মেহেদী সোজা হয়ে শুয়ে আছে। নাফিসা আস্তে করে খাটে উঠে মেহেদীর কাধে মাথা রেখে একহাতে মেহেদীকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে বললো,
– মুরগির মাংস রান্নাটা কেমন হয়েছে?
মেহেদী নাফিসার হাত সরিয়ে শাড়ির নিচে পেটে হাত রেখে খামচে ধরলো। পোড়া ঘায়ে খামচি বসে যাওয়ায় নাফিসা চিৎকার করে উঠলো! মেহেদীও দ্রুত হাত সরিয়ে নিলো। তার মনেই ছিলো না পোড়া ঘায়ের কথা! আবার উঠে বসে পেটের ক্ষত দেখলো। একটা থেকে রক্ত বের হচ্ছে। সে দ্রুত বিছানা থেকে নেমে টিস্যু আর ওয়েনমেন্ট নিয়ে এলো। নাফিসাও উঠে বসেছে। নাফিসাকে টেনে আবার শুয়িয়ে দিয়ে রক্ত মুছে ওয়েনমেন্ট লাগিয়ে দিলো। আবিদের ফোন আসতেই ওয়েনমেন্ট লাগানো শেষ করে শার্ট পড়ে বেরিয়ে গেলো। আবার বারান্দার দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে গেছে। নাফিসা চোখের পানি মুছে ভেঙচি কেটে বললো,
– হুহ! দেমাক কতো! রান্না করে খাওয়ালামও আবার শাস্তিও পেলাম! লাগবে না তোমার প্রশংসা, খেয়েছো যে এটাই বেশি আমার জন্য!
মুচকি হেসে মেহেদীর বালিশটা টেনে কোলবালিশ ন্যায় রেখে আবার ঘুমিয়ে পড়লো।
অনেক্ক্ষণ ঘুমিয়েছে নাফিসা। ঘড়িতে দেখলো ৫টা বেজে গেছে। আসরের সময় তো পেরিয়ে যাচ্ছে! ওযু করে ফরজ নামাজ টা আদায় করে নিলো। নামাজ পড়তেও খুব কষ্ট হচ্ছে ঘা গুলোর জন্য! ঠিকমতো শুতেও পারেনা, কাত হয়ে শোয়ায় একপাশ ব্যাথা হয়ে যায়! কাল থেকে অপেক্ষায় থেকে নাফিসা নিজেই মোবাইলটা নিয়ে আবিদকে কল করলো। কিন্তু আবিদ রিসিভ না করে কেটে দিলো। প্রায় পনেরো মিনিট পর আবিদ কল ব্যাক করলো।
– আসসালামু আলাইকুম, ভাইয়া।
– ওয়ালাইকুম আসসালাম।
– আপনি তো মেহেদী সম্পর্কে কিছুই ইনফর্ম করলেন না! আমি কাল থেকে অপেক্ষায় ছিলাম।
– কি ইনফর্ম করবো! ও তো আমাকে তার কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি! কাল ও আজ তাকে বুঝানোর পর একটু আগে জানালো।
– কি জানিয়েছে ভাইয়া?
– কাল মনে হয় অফিস যাবে আমার সাথে ইনফরমেশন নিতে। মানতে চায়নি, অনেক বুঝিয়ে রাজি করিয়েছি পরীক্ষাটা দেয়ার জন্য। আমাদের অফিসে একটা পোস্ট খালি আছে সেটাতে ট্রাই করার জন্যও বললাম। জীবনটা কে সুন্দরভাবে সাজানোর জন্য বললাম। আমার সাধ্যমতো আমি চেষ্টা করেছি, এখন কতোটুকু মানে সেটাই দেখার।
– হুম। জুমুয়ার নামাজ পড়ে চুল কেটে এসেছে দেখলাম।
– হুম, আমার সাথেই নামাজ পড়েছে। আন্টির কবরের পাশে গিয়ে কান্নাকাটি করেছে খুব। সেখান থেকে ফিরে বকাঝকা করে সেলুনে পাঠিয়েছি।
– এজন্যই তো বলি, জঙ্গল বেশ ছেড়ে সুদর্শনে ফিরেছে কিভাবে! ভাইয়া ওকে সিগারেট খাওয়ার জন্য নিষেধ করেননি?
– আমি তো তাকে দেখিনি কখনো সিগারেট খেতে! সেই প্রসঙ্গ তুলি কিভাবে! তবে এটা বলেছি, ” নাফিসা তো এখন তোর বউ বলে পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে আবার অন্যদিকে চাকরি খুঁজে বেড়াচ্ছে। এভাবে চাকরি খুজতে থাকলে বা চাকরি করলে তো লোকে তোকেই খারাপ বলবে! পুরুষ মানুষ বেকার ঘুরে আর বউ চাকরি করে বেড়ায়! আর বউয়ের উপার্জনে চলবি তুই! এর চেয়ে কি এটা ভালো নয় সব ভুলে নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা কর।”
আবিদের কথা শুনে নাফিসা হিহিহি করে হেসে উঠলো। হাসি থামিয়ে বললো,
– ভালো একটা খোটা দিয়েছেন। আবার আগুনও জ্বালিয়ে দিয়েছেন! এমনিতেই তো মুখে ভাত তুলে না! যা ই কাল রাতে আর আজ দুপুরে অল্প খেয়েছে, এখন তো আরও খাবে না!
– কেন?
– ওই যে, বউয়ের উপার্জন বলে দিয়েছেন!
– সেটা তুমি ম্যানেজ করে নাও।
– হুম, ওকে। সে এখন কোথায়?
– বাসার দিকেই গেছে। ও যাওয়ার পরই তোমাকে কল ব্যাক করলাম।
– আসরের নামাজ পড়েছে?
– হ্যাঁ।
– আচ্ছা ভাইয়া, রাখি এখন। এসে পড়বে হয়তো! আল্লাহ হাফেজ।
– ওকে, আল্লাহ হাফেজ।
চলবে