ভালোবাসি_প্রিয় Part: 21+22

0
2353

Story: #ভালোবাসি_প্রিয়
Part: 21+22
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
মেহেদী রাতে বাসায় ফিরেছে। নাফিসা তার জন্য বসে আছে। দিনের খাবারই রয়ে গেছে ওসব গরম করে শুধু ভাত রান্না করেছে। মেহেদী এলে প্লেটে করে ভাত নিয়ে রুমে এলো।
– হাতমুখ ধুয়ে এসো। ভাত খেয়ে নাও।
– খাবো না।
– রান্না করেছি, এখন খেতে হবে। খাবার নষ্ট করা যাবে না। হাতমুখ ধোও।
নাফিসা তরকারির বাটি নিয়ে এলো, মেহেদী জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
– কি হলো, যাচ্ছো না কেন!
– খাবো না।
নাফিসা মেহেদীর কাছে এসে হাত টান দিতেই মেহেদী সজোরে একটা থাপ্পড় মারলো।
– বলেছি না খাবো না! বারবার এমন বিরক্ত করছিস কেন! রান্না করেছিস পেট ভরে নাকমুখ ডুবিয়ে খা। আমাকে আরেকবার বললে গলা কেটে ফেলবো।
মেহেদী লাইট অফ করে খাটে এসে শুয়ে পড়লো। ঢিল মেরে একটা বালিশও নিচে ফেলে দিলো। খাটে শুতে দিবে না নাফিসাকে! নাফিসা চোখের পানি মুছে বারান্দার লাইটের আলোয় খাবার ফ্রিজে তুলে রাখলো। তারও খাওয়া হলো না। কোন কাথা কম্বল ছাড়া বালিশে মাথা রেখে ঠান্ডা ফ্লোরে শুয়ে রইলো। বালিশ ভিজে যাচ্ছে তবুও চোখের পানি যে ঝড়া শেষ হয়না! ঠান্ডা লাগছে খুব, শাড়ির আঁচল মুড়ে কাচুমাচু হয়ে শুয়ে আছে। মাঝরাতে মেহেদী বাথরুমে যাওয়ার জন্য উঠে লাইট জ্বালালো। খাটে নাফিসাকে না পেয়ে নিচে তাকাতেই ফ্লোরে কাচুমাচু হয়ে শুয়ে থাকতে দেখলো। সন্ধ্যার কথা মনে হতেই মেহেদী পা ঝুলিয়ে খাটের কিনারায় বসে নাফিসার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। ওয়ারড্রব খুলে একটা কাথা বের করে নাফিসার গায়ে ছড়িয়ে দিলো। থাপ্পড় দেয়ায় গালটা লাল হয়ে আছে। মেহেদী বাথরুমে চলে গেলো। বাথরুম থেকে ফিরে এসে দেখলো নাফিসা কাথা মুড়ে শুয়েছে। মেহেদী দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে খাটে এসে শুয়ে পড়লো।
ঘুম থেকে উঠে মেহেদীকে আর দেখেনি তবে তার গায়ে কাথা দেখতে পেয়েছে। এই কাথা এলো কোথা থেকে! মেহেদী এনে দিয়েছে নিশ্চয়ই। মায়া আছে তাহলে এমন কষ্ট দেয় কেন! সকালে আর রান্নার আয়োজন করে নি নাফিসা। রাতের খাবারই গরম করে নিলো। মেহেদী সকাল থেকে মায়ের রুমে ছিলো। হঠাৎ বাইরে কারো গলার আওয়াজ শুনতে পেল। মেহেদীকে ডাকছে, মেহেদী বেরিয়ে গেলো। নাফিসা কিচেনের দরজার সামনে দাড়িয়ে তাদের কথা শুনছে।
– আপনার দুমাসের বিল জমে গেছে। পরিশোধ করছেন না কেন?
– টাকা নেই, পরিশোধ করতে পারবো না।
– এটা কোন কথা হলো! বিল পরিশোধ করতে না পারলে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ব্যাবহার করছেন কেন! পরিশোধ না করলে আপনার বাসার লাইন কেটে দেওয়া হবে।
– যা খুশি করুন। পরিশোধ করতে পারবো না।
মেহেদী ঘরে এসে পড়লো আর লোকটা ফুসতে ফুসতে চলে গেলো। একটু পর মেহেদী রেডি হয়ে নিচ্ছে। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে কাগজ পত্র বের করে দেখছে। প্রয়োজনীয় গুলো আলাদা ফাইলে রাখছে। সে কি অফিস যাবে তাহলে! নাফিসা দ্রুত কিচেনে এসে প্লেটে ভাত নিয়ে রুমে এলো। টেবিলে রেখে চুপচাপ এখানেই দাড়িয়ে আছে। মেহেদী নতুন একটা শার্ট পড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করে নিলো। ফাইলটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলো এমন সময় নাফিসা হাত ধরে বাধা দিলো।
– কোথায় যাচ্ছো? খেয়ে যাও অন্তত।
– হাত ছাড়।
– খেয়ে যাও, কতক্ষণ সময় লাগবে এতে!
মেহেদী নাফিসার গালে আরেকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
– ভালো একটা কাজে যাচ্ছিলাম, তার মধ্যে তোর এই অলক্ষুণে মুখটা দেখতে হলো! এখন কাজ তো হবেই না! শান্তি দিবি না একটু? এখানে থেকে থেকে আমাকে জ্বালাচ্ছিস কেন! মরণ আসে না কেন আমার!
– মেহেদী, কি বলো এসব!
মেহেদী হাত জোর করে দাড়িয়ে বললো,
– দয়া কর, দয়া কর একটু। তোর এই মুখটা আমাকে আর দেখাবি না। অসহ্য লাগে তোকে!
মেহেদী বেরিয়ে গেলো ফাইল নিয়ে। বারান্দার দরজা বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে গেলো।
– চাকরি করবি না তুই, কর বেশি করে চাকরি। পিওনের চাকরি খুজবি, খুজ!
বিড়বিড় করতে করতে মেহেদী বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।
নাফিসা কাদতে কাদতে ফ্লোরে বসে পড়লো। একটুও কি পারেনি সে তাকে ঠিক করতে! সে তো ভেবেছিলো আস্তে আস্তে মেহেদী ঠিক হয়ে যাচ্ছে! এদিকে আবার তাকে ঘরে বন্দী করে গেছে! না, এভাবে আর চলবে না। আর একটা শেষ চেষ্টা করবে সে। এর পর যদি ব্যার্থ হয় তাহলে আর থাকবে না এখানে!
– ঠিক আছে, তুমি যেহেতু আমার মুখ দেখতে চাও না আমি দেখাবো না! এবার যদি আমি হেরে যাই তুমি চিরতরে হারাবে আমাকে।
নাফিসা বসা থেকে উঠে বাথরুমে এলো চোখেমুখে পানি ছিটাতে। কল ছেড়ে দেখলো পানি নাই! এটা কি হলো! ঘরে এসে দেখলো কারেন্ট নেই! লোকটা কি লাইন কেটে দিলো! এতো তাড়া! ওফ্ফ! নাফিসা আবিদের কাছে কল করলো।
– হ্যালো?
– ভাইয়া আপনি কি অফিস চলে গেছেন?
– না, যাচ্ছি।
– ভাইয়া ইউটিলিটি বিল পরিশোধ অফিসের নম্বর আছে?
– হ্যাঁ, কেন?
– সকালে লোক এসেছিলো, দু মাসের বিল আটকে আছে। মেহেদী রূঢ় ব্যাবহার করায় সব লাইন কেটে দিছে। আপনি একটু কল করে জানবেন মেহেদীর কত টাকা জমা হয়েছে! আমি মামাকে কল করে পাঠানোর চেষ্টা করবো।
– আচ্ছা, দেখছি।
আবিদ একটু পর জানিয়ে দিলে নাফিসা মামাকে কল করে রনিকে দিয়ে পাঠিয়ে দিলো। নাফিসার কোন ব্যাপারে যেন মেহেদীকে কোনকিছু জানানো না হয় সেটা নিশ্চিত করে দিলো মামাকে আর আজ অফিস গেলে যেন কাল থেকেই জয়েন করার অনুমতি দিয়ে দেয় সে সব ব্যাবস্থা করে দিলো বাসায় বসে।
দু’ঘন্টার মধ্যেই পানি বিদ্যুৎ চলে এলো।
মেহেদী অফিসে গিয়ে যথারীতি ইন্টারভিউ দিলো। স্যার খুশি হয়েছে, এবার কাজ কতটা সামলাতে পারে সেটাই দেখার। নাফিসার কথায় তাকে জয়েনিং লেটার দিয়ে দিলো। অফিসে একটু ঘুরেফিরে কাজ দেখে ভার্সিটি গেলো। একা যেতে বিব্রতবোধ করছিলো তাই কাজের বিরতি নিয়ে আবিদ গেলো সাথে। সোজা অফিস রুমে গিয়ে আবিদের কাছ থেকে টাকা ধার করে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করলো। যদিও প্রিন্সিপালের কাছে গেলে কিছু টাকা মওকুফ করিয়ে নিতে পারতো কিন্তু আত্মসম্মানবোধ নিয়ে আর যায়নি। এডমিট কার্ড উঠিয়ে নিয়ে সেখান থেকে আবিদের সাথে অফিসে চলে এলো। আবিদের সাথে সময় কাটালো, স্যারের সাথে বেশ আলাপন করলো। সম্পূর্ণ অফিস টাইম এখানে কাটিয়ে বিকেলে বাসায় ফিরলো। তালা খুলে ঘরে এসে নাফিসাকে চোখে পড়ছে না! শার্ট খুলে গোসল করতে চলে গেলো। প্যান্ট সেখানেই রেখে মাথা মুছতে মুছতে চলে এলো। কিচেনে একবার উঁকি দিয়ে রুমে চলে এলো। নাফিসা কোথায়, চলে গেছে নাকি! যাবে কিভাবে ঘরে তো তালা লাগানো ছিলো! টেবিলে ঢাকা খাবার দেখতে পেল! সকালের খাবার এখনো এখানে ফেলে রেখেছে! পাশে গিয়ে ঢাকনা খুলে দেখলো গরম খাবার। পাশে একটা ভাজ করা কাগজ! কাগজ খুলে দেখলো,
– ক্ষুধা লাগলে খেয়ে নিয়ো।
গোসল করতে করতে এতটুকু সময়ে কি সে বেরিয়ে গেছে কোথাও! আবার চিরকুট দিয়ে গেছে! মেহেদী ফ্যান ছেড়ে বসলো। দুপুরে আবিদের সাথে ক্যানটিনে লাঞ্চ করেছে। তাই খাবার আবার ঢেকে রাখলো। কিছুক্ষণ পা ছড়িয়ে শুয়ে রইলো। সন্ধ্যার দিকে বেরিয়ে গেলো তালা ছাড়া বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে। রাতে ফিরে বাইরে থেকে লাগানোই দেখলো। নাফিসা কি এখনো বাসায় ফিরেনি! ঘরে এসে দেখলো বারান্দায় তার ভেজা প্যান্ট ঝুলছে। তারমানে নাফিসা এসেছে! মেহেদী আবার কিচেন, রুম আর বাথরুম দেখলো। নাফিসা তো কোথাও নেই! কে করেছে এসব! নাকি এসেছিলো আবার কোথাও চলে গেছে! সে শুধু শুধু নাফিসার চিন্তা করছে কেন! সে রুমে এসে পড়লো। বই হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো। আবার মায়ের রুমে চলে গেলো বই হাতে নিয়ে। নাফিসার সামনে সে পড়বে না। সেখান থেকে বেরিয়ে আবার বারান্দার দরজা খোলাই রাখলো নাফিসার জন্য। অনেক্ক্ষণ পড়েছে সে। এর মাঝে একবার বাথরুমের দরজা লাগানোর শব্দ পেয়েছিলো। নাফিসা এসেছে হয়তো। পড়া শেষ করে মায়ের রুম তালা দিয়ে নিজের রুমে এলো। নাফিসা তো এসেছিলো, কোথায় সে! বারান্দার দরজাও লাগানো! পরক্ষণে সকালের কথা মনে হতেই বুঝতে পারলো সে লুকিয়ে আছে। কারণ সে ই তো বলেছিলো তার মুখ যেন আর না দেখায়! তাহলে এই পদ্ধতি বেছে নিয়েছে সে!
বিকেলে রাখা খাবার এখনো সেখানেই পড়ে আছে সাথে চিরকুটও। ক্ষুধা লেগেছে তাই খেয়ে নিলো খাবার। প্লেট এখানেই রেখে দিয়েছে। এখনো নাফিসা বেরিয়ে আসেনি। মেহেদী লাইট অফ করে দিলো। এবার নিশ্চয়ই বেরিয়ে আসবে। মেহেদী অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছে। মাঝরাতে ঘুম ভাঙলে পাশে হাত দিয়ে নাফিসাকে পায়নি পেয়েছে খালি বালিশ! উঠে লাইট জ্বালিয়ে মেঝেতে তাকালো সেখানেও নেই! নাফিসা কি আসেনি! খাটের নিচে তো যাওয়া সম্ভব না! প্লেট গুলো সেখানেই আছে! কি হচ্ছে তার সাথে সে বুঝতে পারছে না! নাকি নাফিসা বিকেলে কোথাও চলে গেছে! সে বাসায় থাকলে তো একবার হলেও দেখতে পেতো সে! প্লেট গুলো এখনও টেবিলেই আছে! নাফিসা বাসায় থাকলে অন্তত এগুলো এখনো এভাবে পড়ে থাকতো না! তাহলে মায়ের রুমে থেকে যে শব্দ শুনেছিলো! ভুল শুনেছে হয়তো! মেহেদী বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে গেলো। আবার কিচেনে একবার উঁকি দিয়ে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলো নয়টা বেজে গেছে! ওফ্ফ! দশটায় অফিস আবার আজ প্রথম দিন, আজকেই কি লেট হবে! মেহেদী গোসল না করে হাতমুখ ধুয়ে নিলো। শার্ট পড়তে পড়তে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে খাবার দেখতে পেল! আগের বাটিগুলো সেখানে নেই! নতুন রান্না করা খাবার। নাফিসা এসেছে, তাহলে ডাকেনি কেন তাকে! সে ডাকলে কি লেট হতো!
ডাকবে কিভাবে, তাকে তো জানায়নি অফিসের কথা! চিরকুট পেল সাথে,
– না খেয়ে কোথাও যেও না।
মেহেদী হাত ধুয়ে প্লেটের অর্ধেক খাবার খেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কিচেনে উঁকি দিতে ভুলেনি কিন্তু আফসোস, নাফিসাকে পায়নি! বাইরে থেকে দরজা আটকিয়ে তালা না দিয়ে চলে গেলো। কারণ তার ধারণা নাফিসা বাইরে থাকে।
সারাদিন অফিসে কাটিয়ে ভালোই লেগেছে। নতুন পরিবেশে নতুন অনুভূতি নিয়ে আবিদের সাথে কাজ করেছে। ক্লান্ত হলেও মনটা ফ্রেশ। অফিস টাইম শেষে আবিদের সাথে আরও কিছুক্ষণ ঘুরাফেরা করে বাসায় ফিরেছে। ঘরের দরজা লাগানোই আছে। মেহেদী দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো। নাফিসাকে এখনো দেখতে পাচ্ছে না! কিন্তু টেবিলে খাবার আর চিরকুট ঠিকই রাখা আছে। মেহেদী গোসল করে শার্ট প্যান্ট সেখানেই রেখে এলো। আজ ঘরের বাইরে যায়নি। মাগরিবের আযান শুনে ঘরে নামাজ আদায় করলো। নাফিসাকে একবারও দেখে না কেন! মন যেন একবার দেখার জন্য সারাক্ষণ এদিক সেদিক খুজেই যাচ্ছে! দুদিন ধরে তার কন্ঠ শুনতে পায়না! এতোক্ষণ নিশ্চয়ই লুকিয়ে থাকতে পারবে না। একবার না একবার তো বের হয়ে আসবেই! মেহেদী আর মায়ের রুমে গেলো না। নিজের রুমেই বই নিয়ে মনে মনে পড়তে লাগলো। সময় অনেক্ক্ষণ পেরিয়ে গেছে, আজ কোন শব্দও পাচ্ছে না। মেহেদী উঠে বাথরুমে গেলো, বিকেলে জামাকাপড় রেখেছে এখনো সেখানেই আছে! মেহেদী তার চালাকি বুঝে গেছে। তাকে দেখার জন্য মেহেদী বসে আছে সেটা বুঝতে পেরে ইচ্ছে করেই আজ একটুও বের হচ্ছে না। মেহেদী এবার খোজাখুজি শুরু করে দিলো। ঘরেই তো লুকিয়েছে। এখানে খোঁজে পাওয়া তার জন্য ব্যাপার না। মেহেদী দরজার পেছনে, টেবিলের কোনার ফাকে, ওয়ারড্রবের আলমারিতে, চেয়ার টেবিলের নিচে খুজেও পেল না! খাটের নিচে উঁকি দিতে গিয়েও থেমে গেলো। বক্স খাটের নিচে যাওয়ার তো কোন ওয়েই নেই, এখানে যাবে কিভাবে! না পেয়ে রেগে জোর গলায় ডাক দিলো…
– নাফিসা….
– আসছি!
ডাকে সাড়া দিয়ে নিজেই জ্বিভ কেটে বসে রইলো নাফিসা! এটা কি করলো! ওফ্ফ! না জানি এখন জেনে যায় কোথায় আছে! সে তো তার সামনে যাবে না!
মেহেদী জবাব পেয়ে থমকে গেলো! শব্দটা বারান্দার দিক থেকে আসছে! তবুও না গিয়ে খাটে বসে রইলো। দুতিন মিনিট পাড় হয়ে গেছে, সেই যে আসছি বলেছে এখনো আসছে না! এবার নিজেই রুম থেকে বেরিয়ে এলো। বারান্দায় কিচেনের দরজার ফাকে, বাথরুমে, বারান্দায় নাড়া শাড়ির পেছনে সব খুজলো কিন্তু পেলো না! চালের ড্রামও বাদ রাখেনি! না পেয়ে রেগে আবার রুমে চলে এলো। হাত ধুয়ে ভাত খেয়ে ঘরের সব লাইট অফ করে এসে শুয়ে পড়লো। অন্ধকারে এবার ভয় পেয়ে নিজেই বেরিয়ে আসবে। মেহেদী চোখের পাতা বন্ধ না করে শুয়ে আছে। নিজেই বুঝতে পারছে এখন নাফিসাকে সে কতটা মিস করছে! সবকিছু ঠিকঠাক পেয়েও তার কন্ঠ না শুনে তাকে না দেখে থাকতে পারছে না! একসাথে থাকতে থাকতে তো অজানা কারো প্রতিই মায়া জন্মে যাবে আর সে তো একসময় নাফিসাকে ভালোবেসেছিল। তার ক্ষেত্রে তো আরও বেশি টান পড়েছে! এতোদিন ঘরে এলেই সারাক্ষণ কানের কাছে বকবক করতো, এই সেই উপদেশ দিতো, নানান কাজে লেগে থাকতো। আর এখন কোন শব্দই হচ্ছে না! একদম নিরব বাড়ি! মা মারা যাওয়ার পর আর নাফিসা আসার আগে এমনটা মনে হয়েছিলো। কিন্তু সে একাকিত্ম নাফিসা বেশিদিন উপলব্ধি করতে দেয়নি! এখনো এখানেই পড়ে আছে।
মেহেদী রেগে আবারও ডাকলো,
– নাফিসা… নাফিসা সামনে আসো। বেরিয়ে আসতে বলছি…
কোনো সাড়া নেই এবার! মেহেদী উঠে লাইট জ্বালিয়ে বসলো। এসব কি তার কল্পনা! না, সে খেয়েছে। খাবারের বাটি এখনো আছে এখানে। এসব কল্পনা হয় কিভাবে! কিন্তু এখন ডাকার পর জবাব দিচ্ছে না কেন! তখন কি সে ভুল শুনেছিলো নাফিসার কন্ঠ! না ভুল শুনবে কেন! নাফিসা তো আছে এখানে! কিন্তু কোথায় সে!

Story: #ভালোবাসি_প্রিয়
Part: 22
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
কিন্তু এখন ডাকার পর জবাব দিচ্ছে না কেন! তখন কি সে ভুল শুনেছিলো নাফিসার কন্ঠ! না ভুল শুনবে কেন! নাফিসা তো আছে এখানে! কিন্তু কোথায় সে! মেহেদী আবারও ডেকে বললো,
– নাফিসা, খাবারের বাটি নিয়ে যাও।
কোনো সাড়া নেই! সে উঠে বারান্দার লাইট জ্বালিয়ে বারান্দাটা আবার ভালোভাবে খুজে দেখলো বাথরুমে দেখলো অবশেষে কিচেনে এলো। ভাতের পাতিলের ঢাকনা খুলে দেখলো ভাত সবটাই রয়ে গেছে! শুধু মেহেদীকে যা দিয়েছে ততটুকুই খালি! তার মানে সে ভাতও খায়নি! সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে নিলে চোখ পড়লো তার পায়ের দিকে! কাপড়ের কোনা দেখা যাচ্ছে! এ তো নাফিসার শাড়িই মনে হচ্ছে! চুলার নিচের ফাকা জায়গা আছে, সেখানে পাতিল, ঝুড়ি হাবিজাবি রেখে দেয়! এখন উপর থেকে নিচ পর্যন্ত চটের বস্তা দিয়ে ঢাকা। আর এই চটের বস্তার ফাকা দিয়েই শাড়ির কোনা বেরিয়ে আছে! মেহেদী হাটু ভাজ করে বসলো। চটের বস্তাটা আস্তে আস্তে সরিয়ে দেখলো নাফিসা কাচুমাচু হয়ে হাতপা এক করে এইটুকু জায়গাতে গোল হয়ে শুয়ে আছে! ডাকে সারা দিবে কিভাবে, সে তো গভীর ঘুমে মগ্ন! এর আগে যতবার কিচেনে খুজেছে, এই জায়গাটা ভালো করে দেখা হয়নি! এখানে তাকে পাবে সেটা কল্পনার বাইরে। নাফিসার মুখটা দেখেই বুকের ভেতর মোচড় দিলো! খায়নি বুঝাই যাচ্ছে, আর মেহেদী বাসায় আসার পর থেকে সে এখানেই বসে আছে সেটাও নিশ্চিত। ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। হাবিজাবি রাখার জায়গা পরিষ্কার করে চটের সাহায্যে সুন্দর বিছানা বানিয়ে নিয়েছে। না আছে কোনো কাথা আর না আছে বালিশ! ঘাড়টা কাত হয়ে পড়ে আছে। মেহেদী মুচকি হেসে তাকে খুব সাবধানে সেখান থেকে বের করে কোলে তুলে নিলো। তাকে খাটে শুয়িয়ে দিয়ে বারান্দার আর কিচেনের লাইট অফ করে বিছানায় গেলো। লাইট অফ করে, ফ্যান ছেড়ে মেহেদী তার নিজের বালিশে শুতেই নাফিসা তার বালিশ থেকে উঠে মেহেদীর বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরলো। মেহেদী কোলে নেয়ার পরপরই তার ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো কিন্তু সে চোখ না খুলে চুপচাপ ছিলো। এখন মেহেদী তাকে সরাতে গেলে বললো,
– থাকি না একটু। এমন করো কেন! তোমার কথামতো তো সারাদিনও আমার মুখ দেখাই না, তোমার সামনে আসিনা। অন্তত এই অন্ধকার রাতটা তোমার বুকে মাথা রেখে কাটাতে দাও।
মেহেদী আর তাকে সরালো না। কাথাটা নিজের দিকে টানতেই নাফিসা টেনে এক কাথার ভেতর ঢুকে পড়লো।
খুব সকালে উঠে খাবার রেডি করে ফেললো। মেহেদী উঠে গোসল সেড়ে নিলো। আজ সে নাফিসাকে দেখলেও তার মুখ দেখতে পারছে না! আজ আবার নতুন বেশ ধরেছে। মাথায় লম্বা ঘোমটা টেনে সব কাজ করছে। কোন কথা বলছে না। চুপচাপ রুমে খাবার রেখে একটা চিরকুট রেখে বাইরে বেরিয়ে গেলো। মেহেদী বিড়বিড় করে বললো,
– নতুন সং ধরেছে! রংঢং দেখলে আর বাচিনা!
মেহেদী খেয়ে রেডি হয়ে অফিসের জন্য বেরিয়ে গেলো সাথে তালা দিয়ে গেলো বাইরে থেকে। নাফিসাকে ঘোমটা দিয়ে ঘরের কোনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে চাবি তালার মধ্যেই ঝুলিয়ে চলে গেলো।
সারাদিন অফিসে কাটিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছে সে। নাফিসাকে কিচেনে বসে থাকতে দেখলো সে। রুমে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বড় একটা চিরকুট দেখলো।
” খাবার এনে দিবো? খাবে এখন? ”
মেহেদী চিরকুট মুড়ে রেগে কিচেনে গেলো! নাফিসাকে দাড় করিয়ে ঘোমটা সরিয়ে ফেললো।
– এসব কি হচ্ছে, হ্যাঁ? এসব কি???
– কোনসব?
– মাথায় এমন লম্বা ঘোমটা কেন? আর এই চিরকুট মিরকুট এসব কি!
নাফিসা মাথা নিচু করে জবাব দিলো,
– তুমিই তো বলেছো আমার অলক্ষুণে মুখ আর না দেখাতে। তাই তো ঘোমটা দিয়ে থাকি। তুমিই তো বলেছো আমাকে সহ্য হয় না, তাই তো চিরকুট লিখে রাখি! এখানে আমার দোষ কোথায়, বল..
– তাহলে চলে যাচ্ছিস না কেন! এখানে পড়ে আছিস কেন!
– এটাই তো আমার আসল ঠিকানা। চলে গেলে থাকতে পারবে আমাকে ছাড়া? আবার খুঁজে বেড়াবে না তো?
মেহেদী কোন জবাব না দিয়ে বেরিয়ে গেলো। হাতমুখ ধুয়ে শার্ট পাল্টে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। নাফিসা মুচকি হেসে রুমে এলো। মেহেদীর শার্ট খাট থেকে নিয়ে বারান্দায় ছড়িয়ে রাখলো। হঠাৎ চোখ পড়লো ওয়ারড্রবের উপর। সেখানে একটা চাবি রাখা! এটা কিসের চাবি! মায়ের রুমের নাকি! এখানে আসার পর সবসময় রুমটা তালা দেওয়া দেখেছে। মাঝে মাঝে মেহেদী যায় এই রুমে আর কান্নাকাটি করে বেরিয়ে আসে, সেটা তার চোখ দেখলেই বুঝা যায়! নাফিসার ইচ্ছে মায়ের রুমটা দেখার। সে চাবি নিয়ে তালা খোলার চেষ্টা করতেই তালা খুলে যায়। একটু খুশিই হলো সে। সুইচ খোঁজে লাইট অন করে ভেতরে প্রবেশ করলো। জানালাও খোলে না এই রুমের। কাপড়ের আলনায় মায়ের কাপড় দেখা যাচ্ছে। খাটের উপর জায়নামাজ পাশে কুরআন শরীফ আর তজবী। একপাশে একটা বালিশ আর একটা কাথা রাখা। খাটের সামনেই রাখা সেলাই মেশিন। মেশিনে হাত রেখে বুঝতে পারলো ময়লা হয়ে গেছে। নাফিসা আলনা থেকে গামছা নিয়ে মেশিনটা মুছে দিলো। ছোট সুকেচের দিকে তাকিয়ে দেখলো কাচের থালাবাসন আছে সুন্দরভাবে গুছানো। কিন্তু হালকা ময়লা হয়ে গেছে বুঝাই যাচ্ছে। একটা ছোট কুরআন শরীফের সোপিচও দেখতে পেল সুকেচের ভেতর। খুব সুন্দর দেখতে, কুরআন শরীফ কাচের বল দ্বারা আবদ্ধ! হঠাৎই কেউ তার চুলের মুঠি ধরে টানলো! নাফিসা ব্যাথায় চিৎকার করতে লাগলো। মেহেদী তাকে রুমে এনে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দিলো! মায়ের রুমে তালা লাগিয়ে আবার রুমে এলো। নাফিসা উঠে দাড়াতেই তাকে এলোপাথাড়ি থাপ্পড় দিতে লাগলো! আবার ধপাস করে পড়ে গেলো সে। কিছু বলার সুযোগই পাচ্ছে না থামাবে কি করে মেহেদীকে!
– তোর সাহস কি করে হয় আমার মায়ের রুমে যাওয়ার! তুই চাবি ধরলি কেন! তালা খুললি কেন! মায়ের খুনি হয়ে তুই ওই পাপ হাতে আমার মায়ের জিনিসপত্র স্পর্শ করলি কেন!
মেহেদী অদ্ভুত গর্জন করে কথা গুলো বলছে আর আশেপাশে তাকিয়ে কিছু না পেয়ে প্যান্টের বেল্ট খুলে নাফিসাকে আঘাত করতে লাগলো! আর বারবার একই কথা বলে যাচ্ছে। নাফিসা ব্যাথায় চিৎকার করতে করতে বলছে,
– মাফ করে দাও, আর যাবো না। মেরো না, আমায়। মাফ করে দাও। আর কখনো যাবো না মায়ের রুমে। থামো মেহেদী! আল্লাহ..!
মেহেদী থামছে না, তার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। রাগে পুরো শরীর ঝিমঝিম করছে। আর হাত চলছে নাফিসার উপর। এতো চিৎকারও তার কানে যাচ্ছে না! আর এদিকে নাফিসা চিৎকার করতে করতে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। একসময় সে চিতকার করার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছে। মেহেদী ক্লান্ত হয়ে থেমে গেছে। বেল্ট ঢিল মেরে ফেলে বেরিয়ে গেছে! কোথায় গেছে কে জানে!
ভেতর বাইরে উভয় দিক থেকে সে ক্লান্ত! না চাইতেও বাসায় ফিরতে হয় তাকে! থাকবে কোথায়! অনেক্ষন বাইরে কাটিয়ে ইশার আযানের পর বাসায় এসেছে। দরজা খুলে রেখে গেছে এখনো খোলাই আছে। ভেতরে এসে দেখলো সব অন্ধকার! একটা লাইটও জ্বালায়নি। বারান্দার লাইট জ্বালিয়ে রুমে এসে লাইট জ্বালালো। নাফিসা এখানো মেঝেতে পড়ে আছে, ঠিক যেভাবে দেখে গিয়েছিলো সেভাবেই ঠিক একই জায়গায় এখনো পড়ে আছে। মেহেদীর ভেতরটা ধুক করে উঠলো! সে ধীর পায়ে নাফিসার কাছে এসে বসলো। পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন ভেসে আছে! কিছু কিছু জায়গা ফেটে রক্ত পড়ছে! নাকের গোড়ায়ও রক্ত লেগে আছে। পুরো মুখ লাল হয়ে আছে। কোনো নাড়াচাড়া নেই! মেহেদী ভয়ে ভয়ে নাফিসার মুখটা নাড়ালো। কোন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছে না! ভয়ার্ত কন্ঠে ডাকলো,
– নাফিসা! এ..এই নাফিসা!
কোনো সাড়া নেই! মেহেদী ভয় পেয়ে যায় খুব! নাফিসার নাকের কাছে হাত রেখে শ্বাসপ্রশ্বাস বুঝার চেষ্টা করলো! বুকে কান পেতে হার্টবিট শুনার চেষ্টা করলো। তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া পাচ্ছে না! বুঝতে পারছে না কিছু! তার নিজের শরীরই রীতিমতো কাপছে! চোখে পানি এসে ভীড় জমিয়েছে! দৌড়ে গিয়ে বাথরুম থেকে পানি এনে নাফিসার মুখে ছিটিয়ে দিচ্ছে! বারবার মুখ নেড়েচেড়ে ডাকছে!
– না..নাফিসা উঠো। নাফিসা তাকাও। উঠো…
কোন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছে না! শেষ পর্যন্ত কি তার দ্বারা একটা খুন হয়েই গেলো! তার মাথা কাজ করছে না! এটা কি করলো সে! এখন কি করবে কিছুই তার মাথায় আসছে না!
গায়ে হাত দিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো। মারা গেলে তো শরীর ঠান্ডা হয়ে যাবে! ওর শরীর তো অনেক গরম! কি করবে! হসপিটালে নিবে! না, সেখানে গেলে এক বিপদের উপর অন্য বিপদ এসে পড়বে সামনে!
মেহেদী তাকে খাটে তুললো। যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব গড়িয়ে পড়া রক্ত মুছে দিলো। দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে ক্লিনিকের ডাক্তারের কাছে এলো। ডাক্তারকে তাড়া দিয়ে বাসায় নিয়ে এলো। ডাক্তার আবার তার দূর সম্পর্কের মামা হয়। ডাক্তার নাফিসাকে দেখে হতবাক! আঘাতের চিহ্ন গুলো স্পষ্ট তার চোখে! তিনি পালস চেক করলেন। তার অবস্থা ভয়াবহ!
– এটা কি করে হলো মেহেদী?
– ও কি বেচে আছে?
– আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি। এই অবস্থা কি করে হলো? তুমি কি টর্চার করেছো?
– হ্যাঁ করেছি টর্চার! আপনার কি? আপনাকে সেসব ঘাটতে বলেছি? চিকিৎসা করার জন্য এনেছি চিকিৎসা করে চুপচাপ চলে যান।
– করবো না আমি চিকিৎসা।
আর যাই হোক, একজন মানুষের কাছে ভালো ব্যাবহারটা সবাই আশা করে। ডাক্তার অপমানবোধ নিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগলো। মেহেদী তৎক্ষনাৎ ডাক্তারকে আটকিয়ে ডাক্তারের পায়ের কাছে বসে পড়লো। হাত জোর করে বলতে লাগলো,
– সরি, মামা। প্লিজ ওর চিকিৎসাটা করুন। যাবেন না প্লিজ। আমি রেগে গিয়ে ওকে মেরেছি। এখন আমি কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না। চিকিৎসা না করলে ও মরে যাবে। মামা, বাচান ওকে। মাথা গরম হয়ে আছে, তাই রূঢ় ব্যাবহার করেছি। প্লিজ, যাবেন না।
আকুতি মিনতি করায় ডাক্তার আর যায়নি। নাফিসাকে আরেকবার চেকাপ করে বললো,
– ওর অবস্থা বেশি ভালো না। হসপিটালে নিয়ে যাও। আর না হয় আমার ক্লিনিকে নেওয়ার ব্যবস্থা করো।
– হসপিটালে না নিয়ে বাসায় করা যায়না? আপনি যা যা লাগে সব এখানে নিয়ে আসুন। আমি হেল্প করছি। মামা, বাইরে নিলে বিপদ আরো বাড়বে। আমাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেলে ওকে দেখার কেউ নেই!
– কি হয় তোমার?
– ওয়াইফ।
ডাক্তার কাগজে কিছু লিখে মেহেদীর কাছে দিলো।
– এটা নিয়ে আমার ক্লিনিকে যাও। যা যা লিখে দিয়েছি সব নিয়ে এসো। নার্সের কাছে দিলেই ও ম্যানেজ করে দিবে।
মেহেদী আর দেড়ি না করে দৌড়ে চলে গেলো। এতোক্ষণে ডাক্তার মুখের হাতের ক্ষতগুলো ওয়াশ করে ওয়েনমেন্ট লাগিয়ে দিচ্ছে। মেহেদী সব নিয়ে এলে ডাক্তার জ্ঞান ফেরার ইঞ্জেকশন পুশ করলো। শ্বাস প্রশ্বাস গতি বাড়ানোর জন্য বুকে চাপ দিলো। হাতে স্যালাইন লাগিয়ে তারপর মেহেদীর কাছে ওয়েনমেন্ট দিলো বাকি ক্ষত জায়গায় লাগানোর জন্য।
– এটা লাগিয়ে দিও। আশা করছি, জ্ঞান ফিরবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। বাকি টা আল্লাহর হাতে। জ্বর এলে জলপটি দিও। সকালে আসবো আমি।
– আচ্ছা। মামা বাইরের কেউ যেন কিছু না জানে প্লিজ।
ডাক্তার নিরবে আশ্বাস দিয়ে চলে গেলো। মেহেদী দরজা লাগিয়ে রুমে এলো। মেঝেতে পড়া পানি আর রক্ত মুছে দিলো একটা কাপড় দিয়ে। নাফিসার মুখের পাশে মেঝেতে বসে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। চোখ দিয়ে নিরবে পানি পড়ছে তার! কাপা কাপা একটা হাত বাড়িয়ে তার মুখটা ধরে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
– এমনটা কেন করলি তুই? খুব ভালোবেসে ফেলেছিলাম তো তোকে! সব এভাবে ধ্বংস করে দিলি কেন! কই, ফাইনাল রাউন্ড তো চলে গেলো, এটেন্ড করলি না কেন! কারো উদ্দেশ্যই তো সফল হলো না! আজ সবকিছু ঠিক থাকলে তো আমাদের জীবনটা অন্যরকম ভাবে চলতো! বিয়ে করার জন্য এমনটা করলি? বিয়ে কি আমি ইচ্ছে করে করেছিলাম? এখানে আমার দোষ থাকলে তোরও তো দোষ আছে। এভাবে এলি কেন আমার জীবনে? স্বাভাবিক ভাবে অধিকার নিয়ে এলে তো আমার সামর্থ্যের সবটা দিয়ে তোকে রানি করে রাখতাম! একটা টোকাও পড়তো না তোর গায়ে। আমার মায়ের কাছে একমাত্র ছেলের বউ হিসেবে অনেক যত্নে থাকতি! সবকিছু ধংস করে আবার আমার কাছে এসে নিজের জীবন ধংস করলি কেন! আমি তো তোর কাছে কোন কৈফিয়ত চাইনি তাহলে এখানে থেকে আমার হাতে নির্যাতিত হচ্ছিস কেন! খুব মেরেছি না তোকে! এতো রাগিয়ে দেস কেন আমায়?
মেহেদী কান্না করতে করতে নাফিসার মুখে কতগুলো চুমু দিলো। তাকে ছেড়ে দিয়ে বাথরুমে এসে চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে দিলো। মুখ মুছে ওয়েনমেন্ট নিয়ে খাটে উঠে বসলো নাফিসার কাছে। কাপড় সরিয়ে সব কাটা গুলোতে ওয়েনমেন্ট লাগিয়ে দিচ্ছে। সমস্ত শরীরে লম্বা লম্বা দাগ বসে গেছে! লাগানো শেষ হতেই কাত হয়ে নাফিসার পাশে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর দেখলো শরীর প্রচুর গরম হয়ে গেছে। জ্বর উঠেছে খুব! বাটিতে করে পানি এনে রুমালের সাহায্যে জলপটি দিতে লাগলো।জ্বর যে বেড়েই চলেছে, এদিকে মেহেদীর মনের ভয়ও বেড়ে যাচ্ছে!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here