ভালোবাসি_প্রিয় Part: 25+26

0
2790

Story: #ভালোবাসি_প্রিয়
Part: 25+26
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
নাফিসা আর কোনো জবাব দিলো না। কি বলবে? তাকে বুঝানোর ভাষা তার নেই। চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়লো সে। তার পেটে কেউ আছে সেটা ভেবেও খুব কষ্ট লাগছে তার। চোখের অশ্রু তো সারাদিনই ঝরেছে কিন্তু কষ্ট কমে না কেন! এভাবে চলতে থাকলে বাচ্চাটার কি হবে? বাচ্চাটা কি আসতে পারবে দুনিয়াতে! মেহেদী রেগে গেলে তার হুশ থাকে না! কি থেকে কি করে বসে কেউই বলতে পারবে না! তাকে রেখেও এখান থেকে যেতে পারবে না নাফিসা! এসেছেই তো সে তার সঙ্গ দেওয়ার জন্য! কিন্তু মেহেদী যে তার উপর অত্যাচার বন্ধ করবে না এটাও সে নিশ্চিত! থেকে থেকে বাচ্চাটা কষ্ট পাবে! বাচ্চাটার তো কোনো দোষ নেই, সে কেন নির্যাতিত হবে শুধু শুধু ! না, এই নিষ্পাপ জীবনটাকে অযথা কষ্ট পেতে, নির্যাতিত হতে দিবে না সে। তার চেয়ে ভালো আগে থেকেই সরিয়ে দেওয়া! ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে তার! কি করবে কিছুই মাথায় আসছে না। সে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে এখান থেকে দূরে পালিয়ে যেতেও পারবে না, মেহেদী তাকে যেতেও দিবে না। বন্দী করেই রাখবে!
চোখের পানিতে বালিশ ভিজিয়ে দিচ্ছে নাফিসা। মেহেদী সিগারেট শেষ করে হাতপা ছড়িয়ে খাটে পড়লো। নাফিসা চোখের পানি মুছে বিপরীত দিকে ফিরেই শুয়ে আছে। মেহেদী নাফিসার কাথার নিচে ঢুকে পড়লো। নাফিসাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পড়লো। নাফিসার চোখে ঘুম নেই আছে শুধু কষ্টের অশ্রু!
অনেক্ক্ষণ জেগে থেকে শেষ রাতে চোখ লেগে এসেছে। আবার সেই সকাল সকালই উঠতে হয়েছে তাকে। নামাজ পড়ে রান্না বসিয়েছে। মেহেদীও উঠে নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। নাফিসা রান্না শেষ করে ডেকে দিলো। গোসল করে নাস্তা শেষে অফিসের জন্য বেরিয়ে গেলো মেহেদী। নাফিসা সারারাত ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাচ্চাটা এবোরশন করাবে। সে নির্যাতিত হয় হোক কিন্তু নিষ্পাপ জীবন নির্যাতিত হতে দিবে না। মনের সব কষ্ট একপাশে ফেলে সে ডক্টর শাহনাজকে কল করলো। বিষয়টি নিয়ে অনেকক্ষণ কথা বললো। ডক্টর বাচ্চার জীবন নষ্ট করতে নিষেধ করলেও এজীবন বাচিয়ে রাখলে যে আরও ভয়ানক হবে সেটা ডক্টরকে জানিয়ে তার সিদ্ধান্তেই অটুট হলো। কথা বলে জানতে পারলো অপারেশন করার পর সুস্থ হতে দুতিনদিন লাগবে তার। অর্থাৎ দু তিনদিন তাকে হসপিটালেই থাকতে হবে। সবকিছু ভেবেই সে আজকেই অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। কিন্তু মেহেদী যদি তাকে খুঁজে বেড়ায় তাহলে কি হবে!
নাফিসা তার ফোন থেকে মেহেদীকে একটা টেক্সট করলো, ” অনেক দিন হলো বাসা ছেড়ে এসেছি। মামিকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। আজকে যাই আমি? দুদিন থাকবো, প্লিজ না করো না! দুদিন পরেই চলে আসবো।”
নাফিসা প্রায় ত্রিশ মিনিটের মতো মেহেদীর উত্তরের আশায় অপেক্ষা করলো। হঠাৎ দেখলো মেহেদী তাকে “ওকে” লিখে টেক্সট পাঠিয়েছে। সে একটা ব্যাগে জামাকাপড় গুছাতে লাগলো। দুপুরের খাবার যা আছে তা খেয়ে নিতে পারবে মেহেদী। আর না হয় সে রান্না করেও খেতে পারবে। ঘরের চাবি বারান্দার চালার উপর রেখে গেছে এটাও টেক্সট করে দিলো সে। বাসা থেকে বের হতে হতেই দুপুর একটা বেজে গেছে। সে বোরকা নিকাব পড়ে বেরিয়েছে। টাকা তোলার জন্য ব্যাংকে এলো। এখানে লম্বা সিরিয়াল! কোন ফ্যাক্টরির নাকি বেতন দিয়েছে, কর্মীরা টাকা তোলার জন্য ব্যাংকে ভির জমিয়েছে! এখানে দাড়িয়ে থাকতে থাকতেও অস্থির হয়ে যাচ্ছে সে। খুব ক্ষুধা লেগেছে তার! অপারেশন করবে এখন কি সে খেতে পারবে!
না খেয়েই দাড়িয়ে আছে। খেলে যদি আবার বমি হয়! এই পরিস্থিতিতে এখানে দাড়িয়ে থাকতে এমনিতেই অস্থির লাগছে। তাই খাওয়ার চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে ফেললো। এদিকে চিন্তায় আছে ডাক্তার না জানি আবার চলে যায়! বিকেল চারটা বেজে গেছে! এই মাত্রই সে টাকা তুলতে পেরেছে। টাকা নিয়ে সে খুব তাড়াহুড়ো করে হেটেই হসপিটালের দিকে যাচ্ছে। ব্যাংকের নিকটেই হসপিটাল।
অফিসের কাজ একটু তাড়াতাড়ি শেষ হওয়ায় মেহেদী আবিদের সাথে রিকশা দিয়ে ফেরার পথে তার মনে হলো সে নাফিসাকে দেখেছে! রিকশা থামিয়ে সে ভালো করে খেয়াল করলো। নিকাব পড়া থাকলেও সে দূর থেকেই নাফিসার দৈহিক গড়ন দেখে বুঝে গেছে এটা নাফিসা। আর সে দ্রুত হসপিটালে যাচ্ছে কেন! সে তো বলেছিলো তার মামির কাছে যাবে!
– আবিদ তুই যা, আমি পরে যাচ্ছি।
– আরে কোথায় যাচ্ছিস?
মেহেদী কোন জবাব না দিয়ে দ্রুত রিকশা থেকে নেমে রাস্তা পাড় হওয়ার চেষ্টা করছে। রাস্তা পাড় হয়ে দৌড়ে হসপিটালের দিকে যেতে দেখে রিকশা ওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে আবিদও নেমে গেলো। আবিদ রাস্তা পাড় হতে হতে মেহেদী হসপিটালে প্রবেশ করেছে।
নাফিসা ডাক্তার শাহনাজের কেবিনে এসে তাকে পায়নি। নার্সের কাছে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো ডাক্তার শাহনাজ ১০৭ নম্বর কেবিনে আছে। সে সেদিকেই এলো। ডাক্তার শাহনাজ কোলে একটা নবজাতক শিশু নিয়ে প্রসূতি মাকে উপদেশ দিচ্ছেন। নাফিসার চোখে পানি এসে পরেছে নবজাতককে দেখে। কত সুন্দরভাবে একটা শিশু জন্ম দিয়ে মা হাসিমুখে কথা বলছে আর সে এসেছে তার বাচ্চাকে খুন করতে! একটা হাত নিজের পেটে রেখে মনে মনে বললো,
– মাফ করে দিসরে বাবু! পরিস্থিতির শিকার হয়ে আমি এই পাপ কাজে এগিয়ে যাচ্ছি! কি করবো বল! তোকে নিজ চোখে নির্যাতিত হতে দেখি কিভাবে! আমি যে তোর বাবাকে ছেড়েও কোথাও চলে যেতে পারছি না!
ডাক্তার শাহনাজ কেবিনের দরজার দিকে তাকিয়ে নাফিসাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলেন। নবজাতককে পাশে থাকা এক মহিলার কাছে দিয়ে তিনি বেরিয়ে এলেন।
– দেখেছো, কি ফুটফুটে বাচ্চা। পরিবারের সকলে খুব খুশি। আর তুমি জঘন্য কাজ করতে এসেছো!
– ইচ্ছে থাকলেও কোনো উপায় নেই মেডাম। আমি বাধ্য হচ্ছি এটা করতে। এবোরশন করাটা জরুরি। আমি টাকা রিপোর্ট সব নিয়ে এসেছি। এখন কি করতে হবে বলুন আমাকে।
– সাথে কে এসেছে?
– কেউ না। আমি একা।
– হোয়াট! একটা অপারেশন হবে সেটার জন্য তুমি একা এসেছো! সাহস দেখলে অবাক না হয়ে পারি না! এবোরশন করাবে সেটার পক্ষপাত সদস্যও তো লাগবে, আমরা এতো রিস্ক নিয়ে কাজ করতে পারবো না। তাছাড়া, তোমার দেখবালের জন্যও তো কাউকে লাগবে! এভাবে অপারেশন হবে না।
– প্লিজ অপারেশনটা করুন। আমি কাকে নিয়ে আসবো! কেউ আমার পাশে দাঁড়াবে না।
– দেখো এসব পুতুল খেলা ভাবলে চলবে না। তুমি আগে ফ্যামিলি মেম্বার নিয়ে আসো পরেই তোমার এবোরশন হবে। তা না হলে আমি কিছু করতে পারছিনা।
এক্সিউজমি? আপনি এখানে দাড়িয়ে আছেন কেন? কাকে প্রয়োজন?
– আপনার কাছে এবোরশন করতে আসা রোগীকে প্রয়োজন।
মেহেদীর গলা শুনে নাফিসা চোখ বড় বড় করে পেছনে তাকালো! সে এখানে কিভাবে! মেহেদী নাফিসার দিকেই তাকিয়ে আছে! তার চোখ লাল হয়ে আছে! নাফিসার ভয় করছে খুব! সে কখন এসেছে এখানে! এতোক্ষণ যা বলেছে তার সবটাই কি শুনেছে সে! সাথে আবিদও দাড়িয়ে! নাফিসা ভয়ে এক ঢোক গিললো! ডাক্তার শাহনাজ মেহেদীকে জিজ্ঞেস করলো,
– আপনি ওর কে হন?
মেহেদী ডাক্তারের কথার কোন জবাব না দিয়ে নাফিসাকে জিজ্ঞেস করলো,
– কার বাচ্চা? কার বাচ্চা এবোরশন করতে এসেছিস?
নাফিসার মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না! হাত পা তার কাপা শুরু করেছে! মেহেদীকে দেখতে একটুও স্বাভাবিক লাগছে না! সে কি করবে এখন, সে চিন্তাই করে যাচ্ছে নাফিসা! মেহেদী কোন জবাব না পেয়ে নাফিসার হাতে থাকা রিপোর্টটা হাতে নিলো। চোখ বুলিয়ে দেখলো প্রেগন্যান্সি রিপোর্টটা। বাচ্চার কথা শুনতেই তার মন শতভাগ নিশ্চিত বলছিলো নাফিসার গর্ভে তার সন্তান! নাফিসাকে বমি করতে দেখে কয়েকবার সন্দেহও হয়েছিলো সে প্রেগন্যান্ট কিনা! পরক্ষণে মনে হয়েছে জ্বরে ভুগার কারনে এমনটা হচ্ছে! কিন্তু এখন রিপোর্ট কি দেখলো! এটা নাফিসার প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্ট আর নাফিসার নামের পাশে তারই নাম! মেহেদী কোন শব্দ উচ্চারণ না করে নাফিসার হাতটা ধরলো। তাকে টেনে সোজা হাটা ধরলো। এমনভাবে ছুটছে নাফিসার হোচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার পালা হয়েছে!
– মেহেদী কি করছো! এভাবে টানছো কেন! ছাড়ো। মেহেদী থামো!
মেহেদী কোন কথা শুনছে না। সে একাধারে হেটে যাচ্ছে। আবিদও তার পিছু পিছু যাচ্ছে। আর মেহেদীকে থামতে বলছে! মেহেদী নাফিসাকে টেনে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এসেছে। হসপিটালের সামনে থেকেই একটা রিক্সায় উঠেছে। নাফিসার হাতে ব্যাগ থাকায় ঠিকমতো উঠতেও পারছে না। মেহেদী এক প্রকার টেনে হিচরেই রিকশায় উঠালো তাকে! তাদের রিকশা চলতে শুরু করেছে। আবিদ বুঝতে পারছে এই ছেলে কিছু না কিছু করে বসবে এখন। তাই সেও একটা রিকশা নিয়ে তাদের পিছু যাচ্ছে। মেহেদী সেই যে হাত ধরেছে এক সেকেন্ডের জন্যও ছাড়েনি! নাফিসা হাতে ব্যাথা পাচ্ছে তবুও কিছু বলছে না। একদম চুপ হয়ে আছে সে, শুধু গাল গড়িয়ে চোখের পানি পড়ছে তার। একবার হাতের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার মেহেদীর মুখে তাকাচ্ছে! মেহেদী সোজা সামনে তাকিয়ে আছে। মেহেদীর চোখ লাল টুকটুকে হয়ে আছে! আজ তার কপালে কি আছে কে জানে!
রিকশা একেবারে বাসার সামনে নিয়ে এসেছে। নাফিসাকে নিয়ে নেমে একহাতেই ওয়ালেট বের করে ভাড়া দিয়েছে। বাসায় ঘরের দরজার সামনে এসে দাড়িয়ে বললো,
– তালা খুল।
নাফিসা ভয়ে ভয়ে কাদো কাদো গলায় বললো,
– চাবি চালের কিনারায়।
মেহেদী এবার নাফিসার হাত ছেড়ে লাফ দিয়ে চালের কিনারা থেকে চাবি নিলো। তালা খুলে নাফিসাকে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো। নাফিসার হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে ঢিল মেরে একপাশে ফেলে দিলো।
– মামার বাড়ি বেড়াতে গেছস না? মামিকে দেখতে যাবি? হসপিটাল তোর মামার বাড়ি? আমার সন্তানকে খুন করা তোর মামিকে দেখতে যাওয়া? আর কি চাস তুই? আমাকে একের পর এক ধংস করে যাচ্ছিস, আর কি চাস?
কথাগুলো বলতে বলতে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে দু হাতে নাফিসাকে চড় মেরে যাচ্ছে! নাফিসার মাথা ঘুরছে, সে দাড়িয়ে থাকতে না পেরে ঠাস করে ফ্লোরে বসে পড়লো! মেহেদী পাগলের মতো চিৎকার করে টেবিলের কাছ থেকে চেয়ারটা নিয়ে নাফিসার উপর মারতে গেলো নাফিসা চিৎকার দিয়ে দুহাতে মাথা ধরে রইল! আবিদ দৌড়ে এসে মেহেদীকে থামিয়েছে। হাত থেকে চেয়ার নিয়ে দূরে ফেলে দিয়েছে। মেহেদী নাফিসার কাছে যেতে নিলে আবিদ তাকে বাধা দিয়ে ধরে বললো,
– কি করছিস তুই! মেরে ফেলবি!
– খুন করে ফেলবো আমি। ছাড় আবিদ, খুন করে ফেলবো তাকে! ওর সাহস কি করে হয় আমার বাচ্চাকে এবোরশন করতে যেতে! আবিদ, রিপোর্টে গতকালের ডেট লেখা আছে। সে আমাকে জানায়নি পর্যন্ত আমি বাবা হবো! মামার বাড়ির কথা বলে সে এবোরশন করতে গেছে! শুরু থেকে আমার পেছনে পড়ে আছে! একে একে সব ধংস করে দিয়েছে আমার! আমার মা, আমার ভবিষ্যৎ, আমার জীবন সব ধংস করে দিয়েছে, সব! অবশেষে আজ আমার সন্তানকেও খুন করতে গেছে! তাকে আমি বাচিয়ে রাখি কিভাবে! আমাকে একেবারে খুন করে ফেলতে পারছে না কেন সে? আর কিভাবে আমাকে শেষ করতে চায় জিজ্ঞেস কর৷ জিজ্ঞেস কর তাকে!
মেহেদী পাগলের মতো চিৎকার করে যাচ্ছে! আর নাফিসা ফ্লোরে বসে কান্না করছে! এবার নাফিসা কান্না করতে করতেই বললো,
– আমি ইচ্ছে করে যাইনি। ইচ্ছে করে যাইনি আমি। বাধ্য হয়েছি যেতে!
– আর একটা শব্দ উচ্চারণ করলে জ্বিভ ছিড়ে ফেলবো তোর! কে তোকে বাধ্য করতে এসেছে? রিসাদ আসছিলো বলতে এবোরশন করা তুই?
নাফিসা কান্নার মাঝেই পলক ফেলে তাকালো তার দিকে! এই মুহুর্তে সে রিসাদকে টেনে আনছে কেন! আবিদ মেহেদীকে খাটে বসিয়ে বললো,
– মেহেদী, শান্ত হ তুই। এভাবে চিৎকার করিস না তুই।
– কিভাবে শান্ত হবো আমি! আমার শেষ চিহ্নটুকুও সে রাখতে চায় নি! এই ভালোবাসোছ আমাকে? আরে কেমন মা তুই, যে নিজের সন্তানকে নিজ হাতে খুন করতে যায়! তোর মতো কলঙ্কিনী মা কয়টা আছে পৃথিবীতে! মায়েরা তো নিজের আগে সন্তানকে আগলে রাখে! কোন মা তোকে জন্ম দিয়েছে? জন্মের আগে তোর মতো কলঙ্কিনীকে গর্ভে মেরে ফেললো না কেন!
নাফিসা দু’হাতে নিজের কান চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে বললো,
– মেহেদী চুপ করো প্লিজ! আমাকে যা বলার বলো আমার মাকে নিয়ে কোনো কথা বলবে না! মা গো, আজ আমার জন্য তোমাকেও কথা শুনতে হচ্ছে! ক্ষমা করে দিও পারলে!

Story: #ভালোবাসি_প্রিয়
Part: 26
Writer: #Nur_Nafisa
.
.

– মেহেদী চুপ করো প্লিজ! আমাকে যা বলার বলো আমার মাকে নিয়ে কোনো কথা বলবে না! মা গো, আজ আমার জন্য তোমাকেও কথা শুনতে হচ্ছে! ক্ষমা করে দিও পারলে!
নাফিসা হুহু করে কাদতে লাগলো। আবিদ বললো,
– মেহেদী আর একটা কথাও বলবি না তুই। নিজেকে শান্ত কর। নাফিসা এই বাচ্চা কি মেহেদীর?
– ছি ভাইয়া! মেহেদী ছাড়া আমার জীবনে কোন পুরুষ আসেনি সেটা সেও খুব ভালো করে জানে!
– তাহলে তুমি এবোরশন করতে গেছো কেন?
– মেহেদীর জন্য।
মেহেদী আর আবিদ দুজনেই নাফিসার দিকে তাকালো! আবিদ বললো,
– মেহেদীর জন্য মানে?
– দিন রাত এখানে থেকে থেকে আমি অত্যাচারীত হচ্ছি। প্রতিটা মুহূর্ত আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি তাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে। ইচ্ছে করে নিজের জীবনটা অসৎ পথে নিয়ে নষ্ট করতে চেয়েছে সে। কিন্তু ওকে অনেকটা সঠিক পথে নিয়ে এলেও আমার উপর তার নির্যাতন বন্ধ হয়নি! অবশ্য সে নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই! আমি অবহেলিত নির্যাতিত হবো সেটা জেনেও এসেছি এখানে তার সঙ্গ দিতে। চেষ্টাও কম করিনি! মনে আছে আপনাকে বলেছিলাম সে সিগারেট খায় আর আমার হাতের স্পষ্টও দেখেছিলেন আপনি। এখনো সে সিগারেট খায়, আমার উপর টর্চার করে। এই পরিস্থিতিতে থেকে বাচ্চাটা আমি কিভাবে দুনিয়াতে আনার কথা চিন্তা করবো বলতে পারেন আমাকে? সে রেগে গেলে তার হুশ থাকে না। আমি তো নির্যাতিত হবোই সাথে গর্ভে থেকে বাচ্চাটাও নির্যাতিত হবে! একটা নিষ্পাপ জীবনকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখার চেয়ে কি এটা ভালো নয়, আগে থেকেই তাকে সরিয়ে দেই! বলুন আপনিই! সে হয়তো আমার পেটেই আঘাত করবে যার ফলে আমি খবরটা তাকে জানাতে পর্যন্ত পারিনি৷ আমি কি করবো বলতে পারেন আমাকে? কি করা উচিত ছিলো বলবেন একটু! যদি জানতাম সে বাচ্চার জন্য এতোটা আগ্রহী হবে তাহলে কখনোই যেতাম না এটা করতে!
– মিথ্যে বলছে আবিদ, সব মিথ্যে বলছে এখন বাচার জন্য।
আবিদ মেহেদীকে উল্টো ধমক দিয়ে বললো,
– তাহলে তুই কি চাস? মেরে ফেলবি তাকে? মেরে ফেল! তুই ই সত্যি বলছিস কি? বাচ্চাটা চাইলে তুই তাকে মারছিলি কেন? কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রক্তাক্ত করে ফেলছোস! এগুলো কি মিথ্যে? সে শুরু থেকেই চেষ্টা করছে সেটা আমিও জানি। সেদিন সে চাকরি খুজতে যায়নি, শুধু মাত্র তোর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার জন্য আমার কাছে হেল্প চাইতে গেছে। বহিষ্কার করা সত্ত্বেও তুই এক্সাম দিতে পেরেছিস শুধু নাফিসার জন্যই। নাফিসা প্রিন্সিপালের পায়ে পড়ে তোকে এক্সাম দেয়ার অনুমতি নিয়েছে।
– ভাইয়া প্লিজ স্টপ!
– তুমি চুপ করো, বলতে দাও আমাকে। তোর চাকরিটাও আমি যোগাড় করিনি! বরং আমারটা সহ নাফিসাই দিয়েছে। তার নিজস্ব কোম্পানি সেটা। নূর নাফিসা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি তার নামেই। কোনো পোস্ট খালি না থাকা সত্ত্বেও সে এক্সট্রা ম্যানেজিং পোস্ট তৈরি করেছে তোকে নিয়োগ দিয়ে সঠিক পথে আনার জন্য। আমাদের CEO নাফিসার মামা। তোকে আমি কোনো টাকা দেইনি, ভার্সিটির সকল ফি আর এক্সামের যাবতীয় খরচের টাকা নাফিসা আমার কাছে এডভান্স দিয়েছে তোর খরচের জন্য। তার কথা বললে তো তুই নিবি না তাই আমার কথা বলেছি। আমাকে তো তুই কিছু জানতেই দেছ না, নাফিসাই তোর সব তথ্য আমাকে জানিয়েছে তাই আমি তোকে এক্সাম ও জবের জন্য জোর করেছি। কম কষ্ট করেনি তোর জন্য, বরং শাস্তি অনেক বেশি পেয়েছে সে!
আবিদ কথা বলার পুরোটা সময় মেহেদী নাফিসার দিকে তাকিয়ে ছিলো আর নাফিসা মেঝের দিকে। মেহেদীর চোখেও পানি চলে এসেছে। আবিদ তার কাধে হাত রেখে বললো,
– অনেক ধৈর্য ধারণ করেছে নাফিসা। আমি তো বলবো এখন সবকিছু ভুলে নতুন করে সুখের সংসার গড়ে তোল। কিন্তু এই অবহেলা নির্যাতনে তো সংসার টিকে না! এখন তুই কি বলিস? বাচ্চাটাকে কি তুই চাস? না হলে নাফিসার যা ইচ্ছে সে সেই পদক্ষেপই নিতে পারবে। সম্পূর্ণ অধিকার আছে তার। চাস তুই বাচ্চা?
মেহেদী ধাধালো কন্ঠে বললো,
– চাই, খুব করে চাই আমি।
নাফিসা অশ্রুসিক্ত নয়নে অবাক হয়ে তাকালো মেহেদীর দিকে। মেহেদী এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে। আবিদের ফোন বেজে উঠলে আবিদ রিসিভ করেই বললো,
– আমি মেহেদীর বাসায় এসেছি। একটু পরই বাড়ি ফিরছি।
দিনা ফোন করেছে হয়তো। কল কেটে আবিদ আবার মেহেদীকে বললো,
– এভাবে শুধু বললেই হবে না। বাচ্চার মা কে ও সঠিকভাবে গ্রহণ করতে হবে।
– আমি কখন বললাম বাচ্চার মাকে এক্সেপ্ট করবো না !
মেহেদীর মুখে একটু হাসির ঝিলিক দেখে আবিদ মুচকি হেসে তার পিঠ চাপড়ে বললো,
– বিয়ে করলি আমার পরে, বাবা হয়ে গেলি আগে! যাইহোক, মিষ্টি খাওয়াবি কখন সেটা বল।
মেহেদী নিজের চোখ মুছে হেসে আবিদের দিকে তাকিয়ে বললো,
– কাল খাওয়ালে হবে না? না হয় আমার কাছে কিছু টাকা আছে তুই নিয়ে যা। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, ওদের রেখে আমি এখন বাইরে যাবো না।
– বাব্বাহ! এখনই ওদের হয়ে গেছে! থাক, আমি না হয় আরেকদিন ওয়েট করি মিষ্টি খাওয়ার জন্য!
আবিদ উঠে দাড়াতেই মেহেদীও ওঠে দাড়ালো। আবিদ মেহেদীকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– অভিনন্দন হবু বাবা! আর কোন পাগলামি না করে এবার একেবারে নরমাল হয়ে যা। কেউ আসছে তোকে শাসন করার জন্য। আসি আমি।এহেম, আসি ভাবি। আল্লাহ হাফেজ।
মেহেদী হেসে আল্লাহ হাফেজ বললো, আর নাফিসা আবিদের মুখে ভাবি ডাক শুনে নিজের মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়ে তুললো। আবিদ বেরিয়ে গেলে মেহেদী বারান্দার দরজা লাগিয়ে রুমে এলো। নাফিসা ফ্লোরেই বসে আছে। থাপ্পড় দেয়ার কারণে তার দু গাল লাল হয়ে আছে, নাকের দিক কেটে রক্ত পড়ছে। মেহেদী কাছে এসে বসে দুহাতে নাফিসার মুখটা ধরলো। ডান হাতের বৃদ্ধা আঙুলে নাক থেকে পড়া রক্ত মুছে সামনে এগিয়ে গেলো কপালে চুমু দেওয়ার জন্য। কাছে যাওয়ার আগেই নাফিসা তার মাথা পেছনে সরিয়ে নিলো আর মেহেদীর হাত সরিয়ে উঠে দাড়ালো। নাফিসার এমন কান্ডে মেহেদী বসে থেকেই হতবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। নাফিসা দাড়িয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,
– অনেক হয়েছে! অনেক সহ্য করেছি! আর না! এখানে থেকে থেকে আমি কিসের শাস্তি পেয়ে যাচ্ছি শুধু শুধু! মাকে কি আমি নিজ হাতে খুন করেছিলাম! কিসের শাস্তি পেয়ে যাচ্ছি? মানুষের হায়াত যতদিন আছে পৃথিবীতে সে ততদিনই বাচবে। এখানে আমার দোষ কোথায়? আমি কি এসে গলা টিপে হত্যা করেছিলাম? শাস্তি তো তোমাকে দিতে চেয়েছিলাম তোমার পরিবারে তো আমি কোন আঘাত হানিনি! তাহলে আমি কেন অযথা মিথ্যে অপবাদ নিয়ে এখানে বাচবো! এসেছিলাম তোমার জীবন গুছাতে তা তো আর হলো না! পারবো না আর, এতো ঠেকা পড়েনি আমার! নিজের জীবন তো শেষ করেছি ই। এখন বাচ্চার জীবন শেষ হতে দিবো না। চলে যাবো আমি এখান থেকে। আর থাকবো না এখানে!
নাফিসা কথা বলতে বলতে গিয়ে ওয়ারড্রব খুলা শুরু করলো নিজের জামাকাপড় নেয়ার জন্য। মেহেদী উঠে দাড়িয়ে রেগে বললো,
– কোথাও যেতে পারবে না তুমি। এক পা বাড়ালে পা কেটে ফেলবো। আমার সন্তানের কোন ক্ষতি হলে সব নিজের হাতে ধংস করে দিবো।
– ওকে, তোমার সন্তানের কোন ক্ষতি করবো না। তোমার সন্তান এলে তোমার কাছে দিয়ে যাবো।
– কোথাও যাবে না তুমি! আমার সন্তান নিয়ে আমার কাছেই থাকবে।
নাফিসা ড্রয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো। জোর গলায় বলতে লাগলো,
– কেন থাকবো আমি তোমার কাছে? কেন থাকবো বলো? প্রতিদিন নির্যাতিত হওয়ার জন্য? এখানে থেকে থেকে সিগারেট খাওয়ার জন্য? নিজে তো খাও ই, সাথে আমাকেও খাওয়াও! এখন থেকে আবার বাচ্চাকেও খাওয়াবে। এ জীবন নিয়ে আমি বাচতে পারবো না। ওদিকে আমার প্রাসাদ পড়ে আছে। অনেক ভালো থাকতে পারবো আমি বাচ্চাকে নিয়ে। থাকো তুমি যেভাবে ইচ্ছে! আমি আর এক মুহূর্তও থাকছি না!
নাফিসা লাগেজ টেনে এনে ওয়ারড্রব থেকে জামাকাপড় লাগেজে তুলতে লাগলো। মেহেদী ওয়ারড্রবের উপরের ড্রয়ার থেকে সিগারেটের প্যাকেট হাতে নিলো। প্যাকেটসহ মুচরে সব গুড়ো করে জানালা দিয়ে ছুড়ে মারলো। নাফিসা দেখেছে তবুও কিছু বললো না। নিজের কাজ করতে লাগলো। মেহেদী নাফিসার কাছে এসে বসে লাগেজ থেকে জামাকাপড় আবার ড্রয়ারে রাখতে লাগলো। নাফিসা বিরক্তি নিয়ে তাকাতেই মেহেদী মলিন সুরে বললো,
– আর খাবো না কখনো।
নাফিসা তার কথায় কান না দিয়ে যেগুলো ছিলো সেগুলো নিয়েই লাগেজ বন্ধ করে দিলো। ফেলে রাখা কাপড়ের ব্যাগটা নিয়ে লাগেজটা সাথে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। রুমের দরজার কাছে এসে থেমে দাড়ালো। পেছনে তাকিয়ে দেখলো মেহেদী ওয়ারড্রবের পাশেই দাড়িয়ে আছে আর পলকহীন কেমন অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে! মেহেদীর চোখে পানি টলমল করছে! আজ তার চোখে কষ্ট এসে ধরা দিয়েছে, তার মুখে মায়ার ছাপ স্পষ্ট ভেসে উঠেছে। নাফিসা আর থাকতে পারলো না! দু’হাতের ব্যাগ ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে মেহেদীর দিকে যেতেই মেহেদী হাত বাড়িয়ে তাকে বাহুডোরে বেধে ফেললো! শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দুজনেই কাদছে! নাফিসা শব্দ করে আর মেহেদী নিরবে। নাফিসা মেহেদীর বুক ভাসিয়ে দিচ্ছে আর মেহেদী নাফিসার কাধ! এ কান্না দুখের নয়, এটা সুখের কান্না! এটা জয়ের কান্না! কাউকে আপন করে জয় করে নেওয়ার কান্না!
কতোক্ষন তারা এভাবে জড়িয়ে ধরে কেদেছে কে জানে! এক পর্যায়ে নাফিসা মেহেদীর বুকে আষ্টেপৃষ্টে লেগে থেকেই বললো,
– ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি প্রিয়!
মেহেদী নাফিসার কাধে, মাথায় চুমু দিলো। দুহাতে মাথা ধরে বৃদ্ধা আঙুলে চোখের পানি মুছে কপালে চুমু দিলো। নিজের হাতেই নাফিসার হিজাব বোরকা খুলে দিলো। নাফিসা হেসে মেহেদীর চোখের পানি মুছে পায়ের উপর ভর দিয়ে দাড়িয়ে মেহেদীর কপালেও চুমু দিলো! মেহেদী হেসে আবার তাকে জড়িয়ে ধরলো। এখন দুজনের মুখেই ভুবন জয়ী হাসি! মেহেদী এভাবে থেকেই বললো,
– আমি কোন স্বপ্ন দেখছি না তো? তুমি আমাকে মিথ্যে বলছো না তো? রিপোর্টটা কি সত্য? বাবুটা সত্যিই আছে তো?
নাফিসা মেহেদীকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিলো! মুখের হাসি বিলীন হয়ে জোর গলায় বললো,
– কেন? এখন বাবু না থাকলে কি আবার সিগারেট খাইবা আবার আমার উপর অত্যাচার শুরু করবা?
মেহেদী মুচকি হেসে নাফিসার কাছে এসে আচমকা নাফিসাকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,
– উহুম! বাবু না থাকলে এবার সত্যি সত্যি বাবু এনে দিবো তোমার কোলে।
নাফিসা লজ্জা পেয়ে মেহেদীর বুকে মাথা ঠেকিয়ে বললো,
– লাগবে না। আগে এই বাবুটাই আসুক সুস্থ ভাবে।
– বাবু এলে কি কি করতে হয় আমি তার কিছুই জানিনা। বাবুর মা, বলে দাও আমাকে সবটা।
নাফিসা হিহি করে হেসে বললো,
– বাবুর বাবা ঠিক থাকলেই হবে। আর কিছুর প্রয়োজন নেই।
– সে ব্যাপারে নিশ্চিত থাকো। খাবার কি আমি রান্না করবো?
– নামাও আমাকে।
মেহেদী তাকে খাটে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলো।
– বাথরুমে যাবে?
– না।
– আগামী দুঘণ্টা একটুও নড়বে না এখান থেকে।
– কেন?
– আমি বলেছি তাই। চুপচাপ বসো।
মেহেদী উঠে সামনে এগিয়ে যেতেই ফ্লোরে কিছু দেখে থমকে গেলো! বসে কাছে এসে দেখলো রক্ত! সে নাফিসার দিকে তাকিয়ে বললো,
– এখানে রক্ত কিসের?
নাফিসা তার শাড়ি একটু উপরে তুলে পা দেখালো। মেহেদী দ্রুত তার পায়ের কাছে এসে বসলো। অনেকটা কেটে গেছে! এখনো রক্ত পড়ছে!
– পা কাটলো কিভাবে?
– রিকশায় উঠতে গিয়ে কেটেছে।
মেহেদী দ্রুত মগে করে পানি নিয়ে এলো। সুতি কাপড় দিয়ে মুছে পায়ে তুলা লাগিয়ে আরেকটা কাপড় দিয়ে বেধে দিলো। নাফিসাকে নাড়াচাড়া করতে নিষেধ করে সে গোসল করতে চলে গেলো। নিজের কাপড় চোপড় নিজেই ধুয়েছে। রান্না করেছে সে নিজেই। নাফিসা বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে যাচ্ছে! মেহেদী খাবার নিয়ে এসে নাফিসাকে ডেকে তুললো। নাফিসা হেটে হেটে বাথরুমে এসে ফ্রেশ হয়ে এলে মেহেদী নিজ হাতে তাকে খায়িয়ে দিলো। বমি আসতে পারে তাই ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও বেশি খেতে পারেনি। ঘুমানোর সময় মেহেদী এসে তার পাশে শুতেই নাফিসা তার দিকে ঘুরে তার বুকে মাথা রাখলো। মেহেদী বললো,
– এভাবে শুয়েছো কেন! বাবুর সমস্যা হবে। সোজা হও।
– বাবু এখনো একেবারে ছোট। কোনো সমস্যা হবে না।
– সোজা হও তুমি। আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরবো।
– আশ্চর্য! বাবুর তো এখনো দৈহিক গড়নই হয়নি! এখনি কিসের প্রব্লেম হবে!
মেহেদী নিজেই তাকে সোজা করে শুয়িয়ে দিলো। নাফিসা মুখ গোমড়া করে রেখেছে। কাথা টেনে নিয়ে সে নাফিসার কাধে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। মেহেদী বললো,
– এবার হয়েছে তো! ঘুমাও এবার।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here