Story: ভালোবাসি_প্রিয়
Part: 3+4
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
ফিন্যান্স ক্লাস শেষে গেভ ক্লাসে নাফিসা দিনাকে নিয়ে বের হয়ে এলো ক্যানটিনের উদ্দেশ্যে। মাঠে দেখতে পেল আজও মেহেদীর টিম ফুটবল খেলতে নেমেছে। নাফিসা ইচ্ছে করেই আজ মাঠ দিয়ে ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছে। দিনা নাফিসাকে বললো,
– চলো এদিক দিয়ে যাই।
– দিনা, আমরা একে অপরকে তুই করেও বলতে পারি।
– হিহিহি, আচ্ছা চল এদিক দিয়ে যাই।
– কেন? মাঠ দিয়ে যেতে সমস্যা কি?
– বল লাগতে পারে শরীরে।
– বল লাগবে! নাকি কেউ দেখলে বকাঝকা করবে সেই ভয়ে! হুম?
– কি বলছিস এসব! কে দেখবে!
– হিহিহিহি… আচ্ছা, বল খেলছে মাঠের মাঝখানে। সাইডে আসবে কেন?
– আসতেও তো পারে! মাঠ তো আর বিশাল নয়!
– আচ্ছা, তুই এদিক দিয়ে যা। আমি মাঠ দিয়েই যাবো।
দিনা সাইড দিয়ে চলে গেলো আর নাফিসা প্রায় খেলার রাউন্ডে হাটছে। মেহেদী নাফিসাকে দেখতে পেয়ে বল আজও নাফিসার দিকে পাঠালো কিন্তু সেদিনের মতো এতোটা জোরে নয়।বল নাফিসার পায়ের কাছে আসতেই পা দিয়ে আটকে দিলো নাফিসা। ওদিকে মেহেদীর টিমের আবিদ এর রিসাদ রেগে ফায়ার মেহেদীর কান্ড দেখে। এমনিতেই বিপরীত দল তাদের থেকে এক গোল এগিয়ে আছে, তার উপর খুব ভালো একটা সুযোগ ছিলো এখন একটা গোল নেয়ার। এমন সময় কি ফাজলামো করার দরকার ছিল মেহেদীর! তাদের দলের অন্যজন বল আনতে যেতে নিলে মেহেদী নিষেধ করলো, তারপর সে এগিয়ে গেলো বল নিতে। নাফিসা এখনো বল পায়ের নিচে আটকে রেখে দাড়িয়ে আছে, আর দিনা মাঠের সাইডে থেকে দেখে দাড়িয়ে আছে। মেহেদী বল নেয়ার জন্য কাছে আসতেই নাফিসা খুব জোরে কিক মারলো। কিন্তু মেহেদীর দিকে নয়, গোলকির দিকে। যার ফলে গোল হয়ে গেল। মেহেদীসহ মাঠের বাকি খেলোয়াড়রা হা হয়ে তাকিয়ে আছে। নাফিসার কিক স্ট্যান্ডার্ড ছিলো! মেহেদী কিছু বলার আগে নাফিসাই বলে ফেললো,
– গোলকি তো কাছেই ছিলো, ফুটবল গোলকিতে না গিয়ে এদিকে এলো কেন?
– কি জানি!
– আমি জানি, কেন এসেছে।
– কেন?
– খেলোয়াড়ের নিশানা ভুল ছিলো।
– হাহাহা…. আচ্ছা! তুমি তো দেখছি ভালোই খেলতে জানো। চলো, নেমে পড়ো মাঠে, খেলা হয়ে যাক…
– ইচ্ছে নেই।
নাফিসা সেখান থেকে ক্যান্টিনের দিকে পা বাড়ালো। মেহেদীর টিম তাকে বকাবকি শুরু করেছে। সে ও মাঠের মাঝে যেতে যেতে চিৎকার করে বললো,
– ইচ্ছে আছে, সাথে হেরে যাবার ভয়ও আছে। তাই আসছ না…
নাফিসা তার কথায় কোন প্রতিক্রিয়া জানালো না। তার উপযুক্ত জবাব দিতে হলে এখন তাকে মাঠে নেমে খেলতে হবে। যা সে কিছুতেই করবে না। দিনার কাছে আসতেই দিনা বলে উঠলো,
– বলেছিলাম, বল আসতে পারে এদিকে।
– বল আসেনি, ইচ্ছে করে আনা হয়েছে।
– তুই বুঝলি কি করে?
– এটা সেকেন্ড টাইম ছিলো।
– মানে! আগে থেকেই জানা ছিলো?
– হুম। আর আসতে পারে বলেই আমি মাঠে পা বাড়িয়েছি।
– ডাল মে কুচ কালা হে! কি চলছে সত্যি করে বলতো!
– মানে?
– মানে বাইরে দেখাচ্ছেন একে অপরকে দেখতে পারেন না। মনে কি অন্যকিছু আছে নাকি! প্রেম টেম এমন কিছু? মেহেদী ভাইয়াকেও দেখলাম এক প্রকার হাসতে হাসতে মাঠে চললো!
– হিহিহি….. হাসালি আমায়! আর ডালে কালা থাকলে তো সহজেই চোখে পড়বে। চল…
– হুম..
.
কয়েকদিন পর ভার্সিটিতে নোটিশ এলো এক মাস পর ৭টি ভার্সিটির মধ্যে এক্সটার্নাল একটা প্রোগ্রামের আয়োজন আছে। “জয়গান” প্রোগ্রামটি শুধুমাত্র তরুণদের জন্য। ৩টি ধাপে প্রোগ্রামটি অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ, প্রথম দুই ধাপে বাছাই করে তৃতীয় ধাপে চ্যাম্পিয়ন নির্বাচন করা হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালক পলাশ স্যার অনেক ভেবে চিন্তে উনাদের ভার্সিটি থেকে মাস্টার্সের মেহেদী, অনার্স ফাইনাল ইয়ারের রিয়াদ আর ফার্স্ট ইয়ারের নাফিসাকে বেছে নিলেন। তাদের একসাথে ডেকে স্যার তাদের মতামত জানতে চাইলেন। সকলেই পার্টিসিপ্যান্ট করতে প্রস্তুত। স্যারও খুশি হলেন তাদের আগ্রহ দেখে। এই একমাসের মধ্যেই ৩ধাপে অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে তাই এখন থেকে নিয়মিত প্রাক্টিস করতে হবে তাদের। স্যার নির্ধারণ করে দিলেন, প্রতিদিন ক্লাস শেষে ১ ঘন্টা করে সময় দিতে হবে প্রাক্টিস এর জন্য। এতে মেহেদী সমস্যায় পড়ে গেলো, কারণ ক্লাস শেষ করে তাকে কোচিং-এ যেতে হবে। কোচিং মিস করলে তো তার উপার্জন বন্ধ হয়ে যাবে! তাই স্যারের সাথে কথা বলে সময়টা এগিয়ে লাস্ট ক্লাসে নিয়ে এলো। অর্থাৎ তারা ভার্সিটির লাস্ট ক্লাস টা মিস করে প্রাক্টিস করবে।
প্রাক্টিস শুরুও হয়ে গেলো। কারণ, নেক্সট উইকে ফার্স্ট স্টেপ চলবে। তাদের বন্ধুবান্ধবও তাদের গান শুনার জন্য ভার্সিটিতে অপেক্ষা করে মাঝে মাঝে ।
.
খুব ভালোভাবেই তাদের প্রাক্টিস চলছে। এক সপ্তাহ পর পলাশ স্যার তাদের নিয়ে প্রোগ্রামে উপস্থিত হয়েছে। ৭টা ভার্সিটি থেকে সর্বমোট ২৩ জন পার্টিসিপ্যান্ট করেছে প্রোগ্রামে। তাদের মধ্য হতে ১১জন বাছাই করা হয়েছে। অত্যন্ত খুশির বিষয়, মেহেদী, রিয়াদ ও নাফিসা ৩ জনেই বাছাইকৃত! মেহেদী ২য়, নাফিসা ৩য় এবং রিয়াদ ৮ম! পলাশ স্যার সহ ভার্সিটির সব শিক্ষক আর শিক্ষার্থী অনেক খুশি।
.
দিন যত যাচ্ছে মেহেদীর মনে ভয় তত বাড়ছে! জয়গান চ্যাম্পিয়ন হবে মাত্র একজন। এর উপর নাফিসা তার তীব্র প্রতিযোগী হয়ে উঠেছে। নাহ, এভাবে হচ্ছে না! নাফিসা তার আশেপাশে থাকলে সে এগোতে পারবে না! যে করেই হোক, নাফিসাকে প্রতিযোগিতা থেকে সরাতে হবে। ভার্সিটির ইন্টার্নাল প্রোগ্রাম হলে কোন প্রব্লেম ছিলো না। কিন্তু এক্সটার্নাল প্রোগ্রামে নাফিসাকে সহ্য হচ্ছে না মেহেদীর। এটা নিয়ে খুব বড় স্বপ্ন তার! কিন্তু নাফিসাকে সরাবে কিভাবে! মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে মেহেদীর! যখনই নাফিসার কাছে যাচ্ছে তখনই কোন না কোনভাবে ঝগড়া লেগে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে তাকে সরানো যাবে না প্রতিযোগিতা থেকে। অন্য কোন ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু কি করা যায়!!!
.
দিনা তারাহুরো করে ক্লাসে ঢুকতে নিলেই কারো সাথে ধাক্কা খেতে যাচ্ছিলো। ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলো নাফিসা সামনে দাড়িয়ে! খুব খুশি খুশি দেখাচ্ছে দিনাকে, তাই নাফিসা ব্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– এতো খুশির কারণ কি, শুনি?
– কই, কিছু না তো!
নাফিসা সাথে সাথে সেদিকে উকি দিলো যেদিক থেকে দিনা দৌড়ে এসেছে। বারান্দায় একটা ছেলে কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে ছিলো। এই মাত্রই হাত নামালো। হ্যাঁ, এটা সেই ছেলেটা ই যার সাথে দিনাকে আরো একবার কথা বলতে দেখেছিলো নাফিসা। নাফিসাকে উঁকি দিতে দেখেই ছেলেটি মাথা চুলকাতে-চুলকাতে চলে গেলো। এবার নাফিসা বললো,
– তুই বললি কিছু না, কিন্তু আমি যে অনেক কিছু দেখে ফেললাম! এবার কি হবে!!
– নাফিসা, চুপ। তুই কিছু দেখিস নি।
– হিহিহিহি….. আচ্ছা আমি কিছু দেখিনি। এবার বল এটা কি তোমার উনি?
– হুম।
– তা কি এমন বললো, যার ফলে এতো খুশি হয়ে দৌড়ে আসছিলেন?
– নাফিসা, ক্লাসে আছি। এদিকে আয় আমার সাথে।
দিনা নাফিসাকে টেনে কমনরুমের দিকে নিয়ে বারান্দায় ধীর গতিতে হাটতে লাগলো।
– এবার তো বল!
– কি বলবো! ও তো কিছুই বলেনি। হিহিহি….
– কিছু না বললে হাসলি কেন?
দিনা নাফিসার সামনে একটা ঘড়ি দেখিয়ে বললো,
– ওর ঘড়ি নিয়ে এসে পড়েছি।
– হিহিহি….. এজন্যই বুঝি ভাইয়া কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে ছিলো!
– হুম।
– নাম কি ভাইয়ার?
– আবিদ হাসান।
– বাহ! আবিদ এর শেষে দ আর হাসান এর শেষে ন! দি আর না! দিনা! ভালোই তো!
– হিহিহি….
– কবে থেকে চলছে এসব?
– প্রায় দুবছর। তিনমাস পরে দুবছর কমপ্লিট হবে।
– দু….. বছর! কিভাবে সূচনা হয়েছিল?
– আমার মামাতো বোনের বিয়েতে দেখা হয়েছিলো। বর পক্ষ ছিলো। ভাইয়ার ফুপাতো ভাই।
– বাবাহ! কতো দূর পৌছে গেছে! একদিকে কনের ফুপাতো বোন আর অন্যদিকে বরের ফুপাতো ভাই! তা শুধু শুধু ঘড়ি নিয়ে এলি কেন! এটা কি তোর কোন কাজে লাগবে।
দিনা নাফিসার সাথে কথা বলতে বলতে ঘড়িটা তার হাতে পড়ছে আর খুলছে…
– ভালো করেছি নিয়ে এসেছি। একটা কথাও শুনে না আমার। আমার কাজে না লাগুক, ওর কাজেও লাগতে দিবো না।
– দেখতে কিন্তু অনেক ভদ্রলোক মনে হয়।
– হুম, অনেক ভদ্র। ওর পরিবার ও অনেক ভালো। ওর মতো মানুষ আমি আর দেখিনি কখনো। যা বলবো তা ই করে।
– এখন না বললি একটা কথাও শুনে না তোর!
– আরে মাঝে মাঝে এমন করে। অর্থাৎ এমনিতে সব ঠিক আছে শুধু ওর নিজের প্রতি কেয়ার লেস!
– ওহ! বুঝেছি। অনেকের চেয়েও অনেক ভালো।
– হিহিহি… চল ক্লাসে যাই।
– হুম।
.
নাফিসা গেভ ক্লাসে দিনাকে সাথে নিয়ে কিছুক্ষণ লাইব্রেরিতে বই পড়েছে। পড়া শেষে বারান্দা দিয়ে আসার সময় চারজন মেয়ে এসে ঘিরে ধরেছে তাকে, গতকাল কি গান গেয়ে থার্ড হয়েছে তা শুনার জন্য। থার্ড কথাটা শুনে নাফিসার কেমন যেন লাগলো। মেহেদী না থাকলে আজ হয়তো সে সেকেন্ড থাকতো! যাইহোক, ভাগ্যকে মেনে নিতে হবে। সামনে কি হয়, তা দেখার অপেক্ষায় রইল নাফিসা। কিন্তু এখন তার গান গাইতে মোটেও ইচ্ছে করছে না। নাফিসা বলেছে তাদের, লাস্ট ক্লাসের সময় তাদের প্রাক্টিস চলবে, তখন যেন শুনে। কিন্তু মেয়েগুলো মানছে না। তাকে জোর করেই যাচ্ছে। হঠাৎ, পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো,
– এতো করে বলছে একটা গান গেয়ে শুনাতে পারছো না কেন তাদের?
.
চলবে….
Story: #ভালোবাসি_প্রিয়
Part: 4
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
নাফিসা পেছনে তাকিয়ে দেখলো মেহেদীর ফ্রেন্ড রিসাদ! রিসাদ আবার বলতে লাগলো,
– একটা গানের রিকোয়েস্ট ই তো করছে। তাছাড়া তোমার বড় আপুরা রিকোয়েস্ট করছে, তাও না!
নাফিসা জবাব দিলো,
– আচ্ছা গান গাইবো। তবে একটা শর্তে,
– কি?
– মেহেদী ভাইয়াকে গিটার বাজাতে হবে।
রিসাদ হা করে রইলো! আর মনে মনে বললো, ” মেহেদী গিটার না বাজিয়ে তোমার মাথায় গিটার দিয়ে বাড়ি দিবে!” নাফিসা চুপ থাকতে দেখে রিসাদকে আবার বললো,
– আসেনি আজ মেহেদী ভাইয়া?
– হ্যাঁ, এসেছে। কিন্তু গিটার ছাড়াই তো তুমি সুন্দর গাও।
– কিন্তু আমি যে এখন গিটার সহিত গাইবো…
মেয়েগুলো বললো,
– আচ্ছা মেহেদী ভাইয়াকে আমরা বলবো গিটার বাজাতে।
মেহেদী আবিদের সাথে রিসাদের বাইকে গেইটের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে ছিলো। মেয়েগুলো তাকে অনেক রিকুয়েষ্ট করে বললো। মেহেদী খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে নাফিসা ইচ্ছে করেই তেলে বেগুন ভাজছে। সেও রাজি হয়ে গেল। নাফিসাকে বাগানে নিয়ে আসা হলে নাফিসা গান গাইলো আর মেহেদী গিটার বাজালো। মেয়েগুলোর সাথে আরো অনেক ছেলে মেয়ে জড়ো হলো। নাফিসার গান শেষ হতেই সবাই মেহেদীকে গান শুনাতে বললো। এবার মেহেদীর আবদার, নাফিসাকে তার সাথে গান গাইতে হবে। মেহেদী কে জ্বালাতে পেরে এতোক্ষণ নাফিসার আনন্দ হলেও এখন খুব রাগ হচ্ছে। সুযোগ বুঝে মেহেদীও তাকে পাল্টা ধাওয়া দিচ্ছে! এখন তো না করারও সুযোগ নেই। তাকে গান গাইতেই হলো। দুজনের একত্রে গান শুনে সবাই খুব খুশি হলো। আর তাদের খুব সুন্দর জুটির প্রশংসা করলো। বাইরে থেকে খুশি দেখালেও ভেতরটা দুজনেরই রাগে ফাটছে। যে যার মতো চলে গেলো। আসার সময় দিনা আবিদের কাছে ঘড়িটা ফেরত দিলো।
– দিচ্ছো কেন? রেখে দাও।
– তোমার ঘড়ি নিয়ে আমি কি করবো!
– তাহলে পড়িয়ে দাও, হাতে নিবো না।
– তাহলে পায়ে পড়িয়ে দিবো?
আবিদ হেসে তার হাত বাড়িয়ে দিলো। দিনা ঘড়ি পড়িয়ে দিতেই আবিদ দিনার হাতে একটা র্যাপিংএ মোড়ানো প্যাকেট দিলো।
– এটা কি?
– হবে হয়তো কিছু!
– আমার এসবের কোন প্রয়োজন নেই। তুমি নিজের প্রতি কেয়ার কর। এটাই এনাফ!
– ফেরত দিবে?
– না। চাকরির ইন্টারভিউ রেজাল্ট কি হলো?
আবিদ নিশ্চুপ থাকায় দিনা তার উত্তর পেয়ে গেল। তাই আবার বললো,
– আমার কাছে কিন্তু বেশি সময় নেই। আমি কাউকে কিছু বলতেও পারছি না। আর এসব সইতেও পারছি না। যা করার তারাতাড়ি করো। না হলে খারাপের চেয়েও খারাপ কিছু হয়ে যাবে।
আবিদ কিছু বলতে পারলো না। দিনা তার আগেই দ্রুত পায়ে চলে গেলো সেখান থেকে। চাকরি না হলে এখানে তার তো কোন দোষ নেই! সে তো চেষ্টা করেই যাচ্ছে!
নাফিসা সেখান থেকে ফিরে এসে বই পড়ছিলো। ক্লাস শুরু হতে আরো দশ মিনিট বাকি। শিক্ষার্থীরা দুএকজন ছাড়া সবাই বাইরে। দিনাকে মন খারাপ করে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে নাফিসা প্রশ্ন করলো,
– কি হয়েছে তোর? এভাবে আছিস কেন?
-…..
– দিনা, কি হয়েছে। বল আমাকে….
– আবিদকে ছাড়া আমি অন্য কারো কাছে যাবো না, নাফিসা। অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না।
– কেন ভাইয়ার ফ্যামিলি কি তোকে মেনে নিবে না?
– ওর ফ্যামিলিতে কোন প্রব্লেম নেই। কিন্তু আমার ফ্যামিলি কি মানবে! এদিকে বাসায় আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলা হচ্ছে।
– বাসায় বলেছিস ভাইয়ার কথা?
– না।
– না বললে তো বিয়ে ঠিক করবেই।
– কি বলবো আমি! কিছু বললেই তো জানতে চাইবে ছেলে কি করে, পরিবারের অবস্থা কেমন! তখন আমি কি জবাব দিবো! সব ফ্যামিলি চায় তাদের মেয়েকে তাদের চেয়েও উচ্চ ফ্যামিলিতে বিয়ে দিতে। আবিদের অবস্থা এতোটা ভালো না। প্রায় আমাদের চেয়েও একটু নিম্ন।
– বাসায় বলিস নি। অথচ আগে থেকেই জানা তোর ফ্যামিলি কি বলবে না বলবে! প্রেমে পড়ার আগে আবিদের অবস্থা জেনে নিলি না!
– অবস্থা, ধনসম্পদ, মর্যাদা, রূপ দেখে কেউ কাউকে ভালোবাসে না, নাফিসা। মানুষের মনটা সবথেকে বেশি মূল্যবান।
– কে বলেছে! রূপ দেখেই তো মানুষ প্রেমে পড়ে। পরে না মনটা যাচাই করে। তেমন তোর ফ্যামিলিও এটাই করবে।
– এখন আমি কি করবো বল..!
– বাসা থেকে পালিয়ে বিয়ে কর।
– কি যা তা বলছিস! এটা আমি কখনোই করবো না। বাবা মায়ের একটাই মেয়ে আমি। আমাদের দু ভাইবোনকে নিয়ে, আমাদের স্বার্থের কথা ভেবে তাদের সকল চেষ্টা। তা ধংস করে দেই কিভাবে!
– তাহলে, ভুলে যা আবিদ ভাইয়াকে। আর যার সাথে বিয়ে ঠিক হচ্ছে তাকে বিয়ে করে নে।
দিনা অশ্রুসিক্ত নয়নে, অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
– এটাও সম্ভব না!
নাফিসা মলিন হেসে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
– জীবন অনেক কঠিন। এমন কিছু সময় আসে যা মানুষকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে দোটানায় ফেলে দেয়। আর সেই চিন্তা করতে করতেই মানুষ তার জীবনটাকে শেষ করে দেয়। কিন্তু এই বোকাপ্রান, একটা বারের জন্যও চেষ্টা করে দেখে না সে সফলতা অর্জন করতে পারে কি না! আগে তুই বাসায় বল, তারপর দেখ কি হয়।
– সেই সাহস নেই আমার। অন্তত একটা চাকরি যোগাড় করতে পারলেও আমি একটু সাহস পেতাম। কবে থেকে বলছি একটা চাকরি যোগাড় করতে। একটা কথাও আমার শুনছে না। খুব বেশি কিছু চেয়েছি আমি তার কাছে! কেউ কি কোন বেকার ছেলের কাছে মেয়েকে বিয়ে দিবে! অবশ্য এতে তারও দোষ দেয়া যায় না, সে চেষ্টাও করছে অনেক।
– বুঝেছি খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছেন। আর খুব দামি ও কঠিন একটা জিনিস চেয়েছেন, যা বাংলাদেশে খুজে পাওয়া খুব এবং খুবই কঠিন। চাকরি বললেই আর খুজলেই পাওয়া যায় না। ভাগ্যেও থাকতে হবে। ভাইয়া কোন সাবজেক্ট নিয়ে অনার্স কমপ্লিট করেছে?
– একাউন্টিং ই।
– আমি যাবো তোর বাসায় আংকেল আন্টির সাথে কথা বলতে।
– কিহ!!
– কি আবার! নিবি না নাকি তোর বাসায়?
– আমি সেটা বলছি না! তুই কথা বলে তো আমার ঘুম হারাম করে দিলি! যদি বাবা মা রেগে আরো উলটাপালটা কিছু করে ফেলে!
– করলে করবে, ধরে নিবি তা তোর ভাগ্যে ছিল। চুপ করে বসে থাকলে তো আর কোন সমাধান খুঁজে পাবি না!
– কবে যাবি?
– আজ যাবো না। কালকে দেখি…
– আচ্ছা।
.
.
বাসায় ফিরে মেহেদী তার গিটারকে সাবান দিয়ে ইচ্ছে মতো ঘষেমেজে ওয়াশ করতে লাগলো। রাগে তা গা ঝিমঝিম করছে। এই গিটার শেষ পর্যন্ত ওই মেয়ের গানে ব্যাবহৃত হলো! মেহেদীর মা ছেলের কান্ড দেখে অবাক!
– কি করছস এইসব! পাগল হইয়া গেছস! নষ্ট হইয়া যাইবো তো!
– হোক নষ্ট!
– আরে! ওঠ! গিটার দে। কার জিদ এর উপর ঝারতাছস?
মেহেদী কোন জবাব না দিয়ে গিটার রেখে চলে গেলো। মা গিটার সুতি কাপড় দিয়ে মুছে যত্নসহকারে রেখে দিলেন।
.
পরদিন ভার্সিটি একটু আগেই চলে এলো মেহেদী। নাফিসা গেইট দিয়ে ঢুকতেই মেহেদী তার সমানে হাটতে লাগলো। নাফিসা একটু অবাকই হলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো,
– কিছু বলবেন?
– হ্যাঁ, তোমার সাথে পাশাপাশি হাটতে পারি?
নাফিসা এবার চরম পর্যায়ে অবাক!!! অত:পর জবাব দিলো,
– হাটছেন ই তো!
– হ্যাঁ, এটাই বলতে চাচ্ছি। আর কিছু না।
– আযব মানুষ!
নাফিসা ক্লাস পর্যন্ত এসে ক্লাসে প্রবেশ করলে মেহেদী বারান্দা দিয়ে তার ক্লাসের দিকে চলে গেলো। গেভ ক্লাসে দিনার সাথে ক্যান্টিনে বসে কফি খাচ্ছিলো আর গল্প করছিলো। হঠাৎ মেহেদীর ফ্রেন্ড রিসাদ এসে দিনাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– দিনা, কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে আবিদ তোমাকে ডাকছে।
দিনা একটু অবাক হলো, কারণ আবিদ ওকে কখনো এভাবে কাউকে দিয়ে ডাকে না। তাও রিসাদ তার ফ্রেন্ড, হয়তো কোন প্রয়োজনে ডেকেছে। তাই ভেবে নাফিসাকে বলে দিনা বেরিয়ে গেলো ক্যান্টিন থেকে। রিসাদ নাফিসাকে বললো,
– একটু বাইরে আসবে নাফিসা? ক্যান্টিনের ওপাশটায়…
– কেন?
– তোমার সাথে একটু কথা ছিলো।
কয়েকদিন যাবত রিসাদের আচরণ ভালো লাগছে না নাফিসার কাছে। কাল আবার ওই আপুদের সাথে জোট হয়ে গান গাইতে বললো। আজ কথা বলার জন্য সুযোগ খুজছে! দিনাকে হয়তো এজন্যই পাঠিয়ে দিয়েছে। এতোসব ভেবে নাফিসা জবাব দিলো,
– না, আমি এখন কোথাও যাবো না। যা বলার এখানেই বলুন।
রিসাদ একটু আশেপাশে তাকিয়ে নাফিসার পাশেই বসে পড়লো।
চলবে