ভালোবাসি_প্রিয় Part: 5+6

0
2193

Story: ভালোবাসি_প্রিয়
Part: 5+6
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
রিসাদ একটু আশেপাশে তাকিয়ে নাফিসার পাশেই বসে পড়লো।
দিনা আবিদের কাছে গিয়ে দেখলো আবিদ মেহেদীসহ আরো কয়েকজনের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। তাই সে একটু দূরেই দাড়ালো। আবিদ তাকে দেখে সেখান থেকে উঠে এসে জিজ্ঞেস করলো,
– এখানে কেন? কিছু বলবে?
– আমি কি বলবো? তুমি নাকি ডেকেছো আমাকে তাইতো এলাম।
– আমি কখন ডাকলাম!
– রিসাদ ভাইয়া যে বললো।
– দুষ্টুমি করেছে হয়তো। আমি ডাকিনি। আমাদের এখানে বসিয়ে রেখে ফাজলামো শুরু করেছে! কোথায় সে?
– ক্যান্টিনের দিকে ছিলো। এখন কোথায়, জানি না!
– আচ্ছা তুমি যাও।
দিনা ক্যান্টিনে ফিরে এসে দেখলো নাফিসা একা বসে আছে। নাফিসার পাশে বসতেই নাফিসা জিজ্ঞেস করলো,
– কিরে, কি এমন জরুরি তলব করলো?
– আরে কিছুই না। রিসাদ ভাইয়া দুষ্টুমি করছে। অনেক ফাজিল রিসাদ ভাইয়া।
– হিহিহি……
.
আজ দিনাদের বাসায় যাবে নাফিসা। তাই দিনা ছুটির পর ওয়েট করলো নাফিসার প্রাক্টিস শেষ হওয়া পর্যন্ত! প্রাক্টিস শেষ হতেই নাফিসা যখন বের হতে যাবে, মেহেদী নাফিসার কাছে একটা বই দিলো। নাফিসা বইটি দেখে অবাক হয়ে গেল! এটা তো তারই বই!
– আমার বই আপনার কাছে গেলো কিভাবে!
– তুমি গান গাওয়ার সময় নিয়েছিলাম তোমার ব্যাগ থেকে। না বলে নেয়ার জন্য সরি। আসলে আমার এক ছোট ভাই খুজেছিলো তার প্রয়োজন থাকায়। তাই তোমার ব্যাগে সার্চ করেছি। দেখে নাও, যেমন ছিলো তেমনই আছে।
নাফিসা একটু এলোমেলো ভাবে উল্টেপাল্টে দেখলো ঠিকই আছে। কিন্তু মেহেদী যে মিথ্যে বলেছে এটা নাফিসা নিশ্চিত। বই নিয়ে নাফিসা দিনার সাথে তাদের বাসায় এলো। দিনার হাত পা রীতিমতো কাপা শুরু করেছে!
দিনার মা কে সালাম দিলো। দিনার বাবা বাসায় আছে কিনা তা জিজ্ঞেস করলো। দিনার মা দিনাকে বললো আপ্যায়নস্বরূপ খাবার দিতে আর নাফিসাকে বসতে বলে দিনার বাবাকে ডেকে আনলেন। পাশের রুম থেকে দিনার বাবা এলে তাকেও সালাম দিলো নাফিসা। তারপর উনারাও পাশে বসলো। দিনা খাবার দিয়ে চলে যাচ্ছিলো, নাফিসা তাকে ডেকে পাশে বসতে বললো। অত:পর নাফিসা বলতে লাগলো,
– আংকেল আমি দিনার ফ্রেন্ড নাফিসা। আমরা একসাথেই পড়ি।
– হ্যাঁ, দিনা বলেছিলো তোমার কথা। পড়ালেখা কেমন চলছে?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আংকেল, দিনার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে?
দিনার বাবার মুখটা কিছুটা মলিন হয়ে উঠলো, তবুও জবাব দিলো,
– ঠিক হয়নি এখনো। তবে কথাবার্তা চলছে।
– অহ, ভালো। আসলে আমি দিনাকে নিয়ে একটু কথা বলতে চাচ্ছিলাম। কথাটা বলতে ইতস্তত বোধ করছি। কিন্তু এটা বলাটা খুব জরুরি মনে করছি আমি। আমি অনেক ছোট, আপনাদের জ্ঞান বুদ্ধির চেয়ে আমার জ্ঞান বুদ্ধি অনেক কম। এমনকি বিষয়টা জানানো উচিত হচ্ছে কিনা সেটাও আমার জানা নেই। জানিনা আপনারা কিভাবে নিবেন আমার কথাটা! আশা করি ভুল করলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
দিনার বাবা লক্ষ্য করলো নাফিসা অনেক ইতস্তত বোধ করছে। তাই হেসে সাহস যুগিয়ে বললো,
– আচ্ছা, কি বলতে চাও বলো।
– আংকেল দিনাকে একটা ছেলে খুব পছন্দ করে। মানে দিনাও…
দিনার বাবা মায়ের মুখ গম্ভীর হয়ে গেল। নাফিসা আবার বলতে শুরু করলো,
– আংকেল, বাবা-মা নিশ্চয়ই সন্তানের জন্য উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আপনারাও নিশ্চয়ই এর ব্যাতিক্রম না। কিন্তু দিনা আপনাদের এ কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না। আমিও জানতাম না। গত দুদিনের মধ্যেই জেনেছি তাই বিষয়টি আপনাদের জানানো প্রয়োজন মনে করলাম। দিনাও আপনাদের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে রাজি না। সে নিজেই আমাকে বলেছে আপনারা আপনাদের সর্ব চেষ্টা তাদের মঙ্গলের জন্য করছেন, তাই সে আপনাদের কিছুতেই ঠকাতে পারবে না। কিন্তু দিনার বিশ্বাস সেই ছেলের কাছেই সে খুব সুখী থাকবে। আপনারা যেন একটু ভেবে চিন্তে দেখেন। কিন্তু সেটা বলতেই পারছে না আপনাদের। আপনারাও নিশ্চয়ই মেয়ের সুখ বিবেচনা করে পাত্র ঠিক করছেন। জোর করে কোথাও বিয়ে হলে সে সম্পর্ক বেশিদিন টিকে না। মনের সুখই প্রকৃত সুখ। যারা সংসার করবে তাদের যদি মতামত, পছন্দ অপছন্দ না থাকে তাহলে সংসার টিকবে কিভাবে! তারা আপনাদের না জানিয়ে চাপে পড়ে যেন কোন ভুল সিদ্ধান্ত না নিতে পারে সেজন্যই আমার এখানে আসা। হয়তো ছোট মুখে কথা বেশিই বলে ফেলেছি। মাফ করে দিবেন প্লিজ।
দিনার বাবা দিনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– ছেলেটি কে?
দিনা কোন উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করেই বসে আছে। নাফিসা দিনাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলতে বললো। দিনা কাপা কাপা কন্ঠে জবাব দিলো,
– রিতু আপুর হাসব্যান্ড এর ফুপাতো ভাই, আবিদ।
– ছেলে কি করে?
– মাস্টার্সে পড়ছে, আমাদের ভার্সিটিতেই।
– ছেলে কাজ কি করে?
দিনা আর কোন জবাব দিচ্ছে না! কি বলবে সে! ছেলে বেকার! নাফিসা বুঝতে পেরে বললো,
– দিনা বলছিস না কেন? আংকেল না জেনে শুনেই কি সিদ্ধান্ত নিবে? বল, আবিদ যে NN গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির ম্যানেজার।
দিনা চমকে উঠে নাফিসার দিকে তাকালো! এতোবড় মিথ্যে কেন বললো! যদি বাবা খোঁজ করার পর ধরা পড়ে যায়! দিনার বাবা নাফিসার দিকে তাকিয়ে বললো,
– মোহাম্মদপুরের NNগ্রুপ?
– হ্যাঁ, আংকেল। দিনা বলেছে আবিদের ফ্যামিলির অবস্থা নাকি তেমন ভালো না। মানে আপনাদের চেয়ে একটু নিম্ন মানের। কিন্তু জবটা নতুন পেয়েছে।
– আচ্ছা, দিনা, মেয়ের বাবা হয়ে আমি তো আর প্রস্তাব নিয়ে যাবো না। আবিদকে বলো তার বাবা-মাকে নিয়ে বাসায় আসতে। কথা বলবো আমি তাদের সাথে।নাফিসা দুপুরের খাবার খেয়ে তারপর যেয়ো। আর দিনাকে একটু সাহস যুগিয়ে দিয়ো।
দিনার মা ও নাফিসা হাসলো।
– আচ্ছা আংকেল।
দিনা নাফিসাকে নিয়ে তার রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।
– থ্যাংক ইউ সো মাচ দোস্ত। তোকে এত্তগুলা ভালোবাসা।
– হয়েছে হয়েছে! আমার কিন্তু ক্ষুধা লেগেছে।
– হিহিহি….. আচ্ছা। বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। কিন্তু তুই মিথ্যে বললি কেন! এখন যদি বাবা খোঁজ নিয়ে দেখে আবিদ বেকার! আর আমি তাকে নিয়ে মিথ্যে বলেছি বাবার কাছে, এটা জানলে আবিদও রাগ করবে খুব।
নাফিসা পার্স থেকে একটা কাগজ বের করে দিনার হাতে দিয়ে বললো,
– এটা ভাইয়ার কাছে দিয়ে বলবি কাল সাড়ে দশটায় NN গ্রুপে গিয়ে ইন্টারভিউ দিতে।
– এটা কিভাবে সংগ্রহ করলি?
– আমার মামার কোম্পানি। আমি মামার সাথে কথা বলেছি, কাউকে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। শুধু ভাইয়াকে বলবি ইন্টারভিউ দিতে।
দিনা নাফিসাকে জড়িয়ে ধরে রইল।
– এতো কিছু করছিস কেন আমার জন্য?
– এখন কি আমি অপরাধী?
– হিহিহি…. না, কিন্তু আবিদকে বলতে হবে। বেশি কিছু বলবো না, শুধু এটুকু বলবো। এটা পেতে নাফিসা হেল্প করেছে।
– ওকে।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে নাফিসা বিদায় নিয়ে চলে আসার সময় দিনার মা বললো,
– নাফিসা, তোমার বাবা মা কে নিয়ে এসো আবার।
– সরি, আন্টি। বাবা মা আসবে না।
– কেন?
– দিনার মতো আমি এতোটা ভাগ্যবতী নই। তাই ছোট থেকেই বাবা মা কে হারিয়ে মামা মামীর কাছে আছি।
দিনার বাবা মা উভয়ই অনেক কষ্ট পেল। দিনার মায়ের কাছে এখন মনে হচ্ছে কথাটা বলে মেয়েটাকে আরো বেশি কষ্ট দিলো। আর দিনা তো আরো বেশি অবাক হয়েছে, আর খুব বেশি কষ্ট পেয়েছে। সে জানতোই না নাফিসার বাবা মা নেই!!! দিনার মা অত:পর বললো,
– মাঝে মাঝে আসবে দিনার সাথে। আর তোমার মামা মামীকে নিয়েও আসবে।
– আচ্ছা আন্টি। আল্লাহ হাফেজ।
.
রাতে নাফিসা পড়তে বসেছে। হঠাৎ করেই মনে হলো মেহেদী তার বই টা কোন না কোন কারণে নিয়েছে। তাই বইটা খুলে প্রথম থেকেই খুব ভালোভাবে দেখতে লাগলো। প্রথম পেজ দেখে দ্বিতীয় পেজে আসতেই চোখ আটকে গেল। খুব সুন্দর করে কিছু লেখা আছে বইয়ে। হাতের লেখাও খুব সুন্দর। প্রশংসা না করে পারলো না নাফিসা!
“হয়েছি মুগ্ধ তোমাতে আমি,
পেরেছো কি বুঝতে কবু তুমি?
গাইবো গান, তোমারই শানে,
চির অন্তর জামি!”
—- চিরকুট দিলে তো ছুড়ে ফেলে দিতে, তাই চুরি করে বইটা নিয়েছি। আশা করি এটা ফেলতে পারবে না।
প্রথম থেকেই ঝগড়া দিয়ে শুরু হয়েছে তোমার আমার পরিচয়, শেষটা যেন এমন না হয়! এভাবে আর কতো! ভালো কিছু প্রত্যাশা করতে পারি না আমরা একে অপরের কাছে? নাফিসা অনেক ভালো লাগে তোমাকে, এই ভালো লাগা শুধু ভালো লাগাতে রাখতে চাই না আমি। পারবে কি দিতে ভালো লাগা থেকে ভালোবাসার সুযোগ???
তোমার উত্তরের আশায় আছি, মেহেদী….
.
.Story: #ভালোবাসি_প্রিয়
Part: 6
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
লেখাটা পড়ে নাফিসা হাসলো। বইটা বন্ধ করে বালিশ টা কোলে নিয়ে খাটে হেলান দিয়ে বসে রইলো কিছুক্ষণ।
পরদিন ভার্সিটিতে পা রাখতেই মেহেদী সমান তালে নাফিসার সাথে হাটতে লাগলো। নাফিসা কিছু বলছে না তাই মেহেদী বললো,
– কুচ তুম কহো, কুচ হাম কাহে….
– কি বলবো?
– কি বলবে মানে! আমার প্রশ্নের উত্তর দিবে।
– কিসের প্রশ্ন?
– নাফিসা, তুমি বই পড়ো নি?
– কিসের বই?
– ইকোনমিকস।
-কেন! বইয়ে কি ছিল?
– নাফিসা, আমি শিউর তুমি বই পড়েছো। ইচ্ছে করে কথা এরিয়ে যাচ্ছো! আমি কিন্তু সিরিয়াস। প্লিজ কিছু বলো…
– কি বলবো?
মেহেদী এবার হাটা থামিয়ে হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নাফিসার দিকে। নাফিসা এভাবে তাকাতে দেখে হিহি করে জোরে হেসে ক্লাসের দিকে চলে গেলো।
দিনার সাথে দেখা হতেই জিজ্ঞেস করলো আবিদকে পেপার দিয়েছে কিনা! দিনা উত্তরে হ্যাঁ জানালো। আজ ক্লাস করতে তেমন একটা ভালো লাগছে না, তাই দিনাকে অফার করলো ক্যান্টিনে চটপটি খাওয়ার জন্য। পরপর দুটো ক্লাস করে ক্যানটিনে চলে গেলো। অর্ডার করার দুমিনিট পর চটপটি চলে এলো। আহ! গরম গরম চটপটি, সাথে টক পানি! গরম ধোঁয়া উঠে যাচ্ছে প্লেট থেকে। দু চামচ মুখে দিতেই ফুরুৎ করে মেহেদীর আগমন! মেহেদী এসে তারাহুরো করে নাফিসার পাশে চেয়ার টেনে বসে পড়লো। দিনা নাফিসা দুজনেই অবাক! এভাবে তাকাতে দেখে মেহেদী বললো,
– এভাবে তাকাচ্ছো কেন আমার দিকে! শুধু শুধু আমাকে দেখে লাভ নেই! আমি তোমাদের মতো এতো সুন্দর নই।
তারা দুজনেই হেসে উঠলো। তাদের হাসি দেখে মেহেদী আবার বললো,
– দিনা, রাগ করো না। তোমার হাসি থেকে নাফিসার হাসি অনেক সুন্দর। না মানে আমার কাছে মনে হয় আরকি! আবিদ থাকলে হয়তো তোমার হাসিটাই বেশি সুন্দর বলতো।
দিনা মিটিমিটি হাসছে আর নাফিসা রাগে ফাটছে!
– আপনি এখানে কেন?
– কি আপনি আপনি শুরু করেছো! দিনাই তো, অন্য কেউ তো আর নেই এখানে। তুমি দিনার ব্যাপার সব জানো, তাহলে আমাদের কথা দিনার কাছে লুকাচ্ছো কেন!
– মানে!
– ওফ! ড্রামা বন্ধ করো তো!এসবের মানে আজকাল ছোট বাচ্চারাও জানে!
দিনা নাফিসার দিকে অবাক হয়ে তাকালে নাফিসা বললো,
– দিনা, সত্যি বলছি। আমি তোর কাছে কিছুই লুকাচ্ছি না!
– ভাইয়া আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন!
– হুম, প্রেম পাগলা!
– হিহিহি….. তা এখানে এসেছেন কেন!
– কেন আবার! তোমাদের সাথে চটপটি খেতে। মামা, চটপটি শেষ না?
ক্যানটিনের ম্যানেজার জবাব দিলো, “না” মেহেদী আবার বললো,
– আচ্ছা, তার মানে শেষ! কিন্তু চামচ তো হবে, একটা চামচ পাঠান।
– হিহিহি…. ভাইয়া মামা বলেছে চটপটি শেষ না। এখনো আছে…
– একটু বেশিই বুঝে ফেলেছো তুমি, আমি বলেছি শেষ না? মামা বলেছে না। না এবং না কেটে গেলে বাকি আছে শেষ! তারমানে শেষ….
– হিহিহি….
কথা বলতে বলতে ক্যান্টিনে কর্মরত ছোট ছেলেটি চামচ নিয়ে হাজির।
– দূর ব্যাটা! চামচ আনতে এতোক্ষণ লাগে! চটপটি তো ঠান্ডাই হয়ে গেছে! নাফিসা খাও খাও…
নাফিসাকে খেতে বলে মেহেদী নিজেই নাফিসার প্লেট থেকে খাওয়া শুরু করলো। দিনা নাফিসা দুজনেই অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে রইলো। মেহেদী নাফিসার চামচ দিয়ে নাফিসার মুখে তুলে দিলো। মেহেদী এখন এটা করবে, কেউ ভাবতেই পারেনি! নাফিসা রেগে তাকাতেই মেহেদী বললো,
– বুঝেছি তো আমি খায়িয়ে দেওয়ার জন্যই হা করে ছিলে। সমস্যা নেই, দিনা ছাড়া কেউ দেখেনি। নেক্সট ও কি আমি তুলে দিবো?
– আপনি আমার প্লেট থেকে খাচ্ছেন কেন?
– শুনলে না, চটপটি আর নেই। তাছাড়া এক প্লেটে খেলে ভালোবাসা বাড়ে গো ভালোবাসা বাড়ে। দিনা খেয়েছো কখনো আবিদের সাথে এভাবে?
– না।
– হালকা হালকা প্রেম তোমাদের। ফুউউউউই দিলে বাতাসের সাথে উড়ে যাবে। আমাদের প্রেম গভীরের চেয়েও অনেক গভীর। তোমরা দুবছরেও এতোটা গভীরে যেতে পারো নি। নাফিসা খাচ্ছো না কেন? বিল আমি দিয়ে দিবো চিন্তা করো না। দিনারটা সহ দিয়ে দিবো। আর শোন, দিনা তো জেনেই গেছে আমাদের ব্যাপারে। তাই দিনার সামনে এখন থেকে আর লুকাচুপি খেলতে হবে না।
দিনা খেতে লাগলো, আর বলতে লাগলো,
– নাফিসা খা, খা… ভাইয়া প্লেট একটা কিন্তু চামচ দুইটা হলো কেন?
– কি বলো তোমার সামনে এক প্লেটে খাবো বলে এক চামচেও খাবো নাকি! লজ্জা করে না বুঝি আমাদের! সেটা তো চলবে গোপনে…
– হিহিহি…
– দিনা তুই যাবি এখন আমার সাথে?
নাফিসা বসা থেকে দাড়িয়ে গেলো, মেহেদী হাত টেনে আবার বসিয়ে দিলো।
– দিনার প্লেটের অর্ধেকও খাওয়া হয়নি, এখনি উঠে যাবে! আর তুমি উঠে যাচ্ছো কেন! ভালোবাসার মানুষ উঠে পড়লে কি খাবারের টেস্ট থাকে! আমারও খাওয়া শেষ হয়নি, বসে থাকো।
– আচ্ছা! এবার টেস্ট বাড়িয়ে দিচ্ছি….
নাফিসা প্লেটে মরিচের গুঁড়ো ঢেলে দিলো।
– এবার খান…
মেহেদী তার সবটুকু খেয়ে নিলো।
– খুশিতো এবার?
দিনা নাফিসা দুজনেই হা করে আছে।
– ভাইয়া এমন ঝাল কিভাবে খেলেন!!!
– প্রেমে পড়লে নাকি সব খাবার মিষ্টি লাগে। আজ তার প্রমাণ পেলাম…. যাইহোক, বিল দিয়ে আসি আমি। তোমরা আরো কিছু খাবে নাকি? আমি অর্ডার করে দেই।
– নাফিসা তোর তো খাওয়া হয়নি। খাবি কিছু?
– না চল। আর বিল আমি দিয়ে দিয়েছি।
– গার্লফ্রেন্ড নাকি শুধু খরচ বাড়ায়। আমার ক্ষেত্রে উল্টো! তুমি তো আমার খরচ কমিয়ে দাও!
নাফিসা আর কিছু না বলে দিনার সাথে বেরিয়ে গেলো। গানের প্রাক্টিস এর সময় মেহেদী আজ প্র‍্যাক্টিস করতে চাইছে না। স্যারকে বলে বাসায় চলে যেতে চাইছে। নাফিসাও দেখলো মেহেদীর চোখ মুখ লাল হয়ে আছে! স্যারও জিজ্ঞেস করছিলো মেহেদী অসুস্থ কি না! মেহেদী বললো সে ঠিক আছে, তবে একটু খারাপ লাগছে তাই চলে যাবে। স্যার সম্মতি দিলে মেহেদী বাসায় চলে গেলো।
.
মেহেদী ছাড়া আজ শুধু নাফিসা আর রিয়াদের প্রাক্টিস চললো।
গত দুদিন যাবত মেহেদী ভার্সিটি আসেনি। দুদিন পর দিনা ক্লাসে এসেই নাফিসাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো।
– আরে হচ্ছে টা কি!
– লাভ ইউ দোস্ত! ওহ, না এটা বলা যাবে না। থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ সো মাচ ডিয়ার।
– পাগল হয়ে গেলি নাকি!
– হুম। হিহিহি…
– কি হয়েছে, সেটা বল…
– বাবা মা আবিদের সাথে বিয়ে দিতে রাজি…. (হাতটা নাফিসার সামনে বাড়িয়ে) গট এনগেজড!
– এটা কিন্তু একদমই ঠিক হলো না! তুই আমাকে ইনভাইট না করে এনগেজড হয়ে গেলি!
– সরি দোস্ত, এরকম কিছু হবে আমি ভাবতে পারিনি। কাল আবিদের বাবা মা দেখতে এসে হঠাৎ করেই হলো। আর পরের শুক্রবার মানে, ৯দিন পর বিয়ে ঠিক করলো।
– হোয়াট! এতো তারাতাড়ি!!
– হুম। আবিদের বাবা মা বললো তারা কোথাও বেড়াতে যাবে। ফিরতে ২/১ মাস দেড়ি হবে। এজন্য হয় এ সপ্তাহে বিয়ে হবে আর না হয় দুমাস পর। বাবা কি বুঝে সামনের সপ্তাহ বাছাই করলো!
– যাক ভালোই হয়েছে। শুভ কাজে দেরি করতে নেই। হিহিহি….
– তোকে কিন্তু দু তিনদিন আগেই যেতে হবে। বাবা মা যাবে তোদের বাসায় দাওয়াত করতে।
– এতো আগে গিয়ে কি করবো। বাসা তো কাছেই। তাছাড়া এগারো দিন পর আমাদের সেকেন্ড টার্ম কমপিটিশন।
– আমাদের বাসা থেকে আসবি। আর দু একদিন প্রাক্টিস মিস হলে কিছু হবে না। তুই এমনিতেই ভালো গাইতে পারছ।
– আহহ! সবাই নিজ স্বার্থে মতলবি!
– হিহিহি… ভালো কথা মনে হয়েছে, মেহেদী ভাইয়া নাকি সেদিন ঝাল খাওয়ার পর জ্বরে ভুগছে। তাই দুদিন যাবত ভার্সিটি আসছে না! ঝালে ভাইয়ার এলার্জি আছে। বেচারা প্রেমে পড়ে এলার্জির কথা ভুলে গেছে!
– ভালো হয়েছে! আমি কি বলেছি নাকি, ঝাল খেতে!
– সত্যি করে বলতো, কি এমন করলি যার ফলে হঠাৎ প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে!
– আশ্চর্য! কি আযব কথাবার্তা বলছিস! আমি কিছু করিনি…
.
সেদিন ভার্সিটিতে এসে মেহেদীকে না দেখলেও ক্লাস শেষে প্রাক্টিস এ ঠিকই দেখেছে। রিয়াদের প্রাক্টিস চলাকালে নাফিসা চেয়ারে বসে রইলো। মেহেদীও কাছে এসে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো।
– কতোদূর এগিয়েছো নাফিসা?
– যতোদূর সম্ভব।
– আমি তো শুধু সেকেন্ড গুনেছিলাম কখন ভার্সিটি আসবো আর তোমার সাথে দেখা হবে!
– তাই নাকি! কতো সেকেন্ড গুনেছেন শুনি?
– কতো সেকেন্ড যেনো…… এই দেখো তোমাকে দেখার পর সব ভুলে গেছি!
– হিহিহি….
মেহেদী চুপিচুপি নাফিসার পার্সে কিছু রাখলে নাফিসা তা দেখে ফেললো। তাই বললো,
– ব্যাগে কি রেখেছেন তুলে নিন।
– এমন কেন করো!
– আমি কিন্তু ফেলে দিবো।
– আচ্ছা, ফেলে দিয়ো। কিন্তু আমার সামনে ফেলো না।
মেহেদী আর সেখানে বসে না থেকে উঠে চলে গেলো। নাফিসা শুধু ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here