ভালোবাসি_প্রিয় Part: 9+10

0
2188

Story: #ভালোবাসি_প্রিয়
Part: 9+10
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
বাসায় ফিরে ফোনটাও অফ করে দিয়েছে নাফিসা। রাতে মেহেদী কল করে দেখলো ফোন অফ। যাক, কষ্টটা তাহলে লেগেছে মনে!
আজ সেকেন্ড টার্ম কমপিটিশন। পলাশ স্যার মেহেদী ও রিয়াদকে সাথে নিয়ে নাফিসার জন্য অপেক্ষা করছে। স্যার কল করে ফোনটা বন্ধ পাচ্ছে! এতো দেড়ি কেন করছে! মেহেদী বললো,
– স্যার, নাফিসা মনে হয় আসবে না। আমাদের চলে যাওয়া উচিত।
– আসবে না কেন! হয়তো গাড়ির জন্য লেট হচ্ছে। আর একটু অপেক্ষা করি। আরেক মেয়ে ফোনটাও অফ রেখেছে!
মেহেদী মনে মনে বললো, “করতে থাকুন অপেক্ষা। আসলে তো!”
আরো পাচ মিনিট পর নাফিসা এসে হাজির। মেহেদী তাকে দেখে অবাক! ও তো শিওর ছিলো, কালকের ঘটনার পর নাফিসা আসবে না! তাহলে এলো কেন! নাফিসা মেহেদীর দিকে তাকাচ্ছেও না, কোন প্রতিক্রিয়া করছে না। না হাসছে আর না মন খারাপ করছে! সে একদম স্বাভাবিক আছে কিভাবে! এমন ভাব করছে যেন কিছুই হয়নি! নাফিসা স্যারকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– সরি স্যার, রিক্সা পাচ্ছিলাম না। তাই একটু লেট হয়ে গেছে!
– ফোন বন্ধ কেন তোমার?
– স্যার ফোনে একটু সমস্যা হয়েছে।
– আচ্ছা চলো এবার।
– হুম।
স্যার তিনজনকে নিয়ে কমপিটিশন এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। মেহেদী বারবার তাকাচ্ছে নাফিসার দিকে। কিন্তু নাফিসা তাকাচ্ছে না। নাফিসা একদম নরমাল বসে আছে। স্যার থাকায় মেহেদী কিছু বলতেও পারছে না! অত:পর কমপিটিশনে এটেন্ড করলো তিনজনই। রেজাল্টের পর, নাফিসা ফার্স্ট হয়েছে, মেহেদী সেকেন্ড আর থার্ড হয়েছে সেই ছেলেটা যে, গত রাউন্ডে ফার্স্ট ছিলো। এগারো জন থেকে পাচজন সিলেক্ট করা হয়েছে এরাই ফাইনাল রাউন্ডে এটেন্ড করবে। রিয়াদ বাদ পড়ে গেছে। তবুও স্যার খুশি, কারণ প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান তাদের ভার্সিটিই দখল করে রেখেছে। ফাইনাল রাউন্ডে এ দুজনের মধ্যেই কেউ চ্যাম্পিয়ন হবে সেই প্রত্যাশা করছেন স্যার। এদিকে মেহেদী রাগে ফাটছে, ইচ্ছে করছে নাফিসাকে শেষ করে দিতে! এতো কঠোর ভাবে ভয় দেখালো, সে আজ এলো কেন! সে না এলে তো আজ মেহেদী ফার্স্ট হতো। স্যার তাদেরকে নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। ভার্সিটিতে খবর টা ছড়িয়ে পড়ায় জয়ের উল্লাসে মেতে উঠছে অন্যান্য শিক্ষার্থী! সেই আনন্দে তারা কয়েকজন বন্ধুবান্ধব মিলে পরের দিন একটা ছোটখাটো ট্যুরের ও আয়োজন করে ফেললো। বেশি দূর যাবে না। একটা বাস ভাড়া করে গাজীপুর জাতীয় গার্ডেনের দিকে যাবে। সকালে যাবে আর সারাদিন ঘুরাঘুরি করে বিকেলে চলে আসবে। মেহেদী শুধু সুযোগ খুজছে নাফিসার সাথে কথা বলার, কিন্তু সেই সুযোগ নাফিসা তাকে দিচ্ছে না। বারবার কোনো না কোনোভাবে এড়িয়ে চলছে। কখন ভার্সিটি থেকে চলে গেছে মেহেদী খেয়াল ও করতে পারেনি। রাতে অনেক বার কল করেও পায়নি, ফোন বন্ধ! সকালে ট্যুরে এটেন্ড করলো নাফিসা। সাথে নতুন দম্পতি দিনা আর আবিদও আছে। ট্যুর মিস করতে রাজি না তাই চলে এসেছে। নাফিসা দিনাকে পেয়ে অনেক খুশি। বাসে সারাক্ষণ দিনার সাথেই বসে ছিলো। আজ নাফিসার হাতে ফোন আছে। মেহেদী পাশের সিটে বসেই কল করে দেখলো, কল ঢুকেছে! তাই আবার কেটে দিলো। স্ক্রিন জ্বলে উঠায় নাফিসা ফোনে তাকিয়ে আবার মেহেদীর দিকে তাকিয়েছিলো এক পলকের জন্য। আবার দিনার সাথে কথা বলতে লাগলো।
ছেলেগুলো অনেকটা হৈচৈ, মজা করতে করতে গাজীপুর পৌছে গেল। খাবার খেয়ে তারা বাস থেকে নেমে শালবনের দিকে ঢুকলো। অনেক গাছপালা আছে, সাথে আছে পাখিদের কিচিরমিচির গান। দুপুরের দিকে নেমেছে তারা, জনশূন্য জায়গা এক একজন এক একদিকে হাটছে। ঘুরেফিরে দেখছে আর ছবি তুলছে। নিচে শুকনো পাতার স্তুপ। পা ফেললেই ঝুমঝুম আওয়াজ হয়। ভালোই লাগছে পরিবেশটা। সবাই সামনে এগিয়ে গেছে। পেছনে ধীর পায়ে দিনা নাফিসার সাথেই হাটছিলো, আবিদ ডাকলে ওদিকটায় চলে গেলো। নাফিসা একাই সেলফি তুলছিলো, হঠাৎ কেউ তার মুখ চেপে ধরে পেছন থেকে টেনে ঝোপের ধারে অন্যপাশে নিয়ে এলো। নাকমুখ একসাথে চেপে ধরায় নাফিসার দম প্রায় বন্ধ হয়ে আসছিলো। এমন সময় হাত ছাড়লে নাফিসা জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো। পেছনের লোকটার দিকে তাকিয়ে দেখলো মেহেদী!!!
নাফিসা কথাও বলতে পারছে না, মেহেদী পানির বোতলের মুখ খুলে সামনে এগিয়ে দিলো। নাফিসা পানি খেয়ে স্বাভাবিক হলো। বোতল ঢিল মেরে ফেলে চেচিয়ে বলতে লাগলো,
– সাহস কি করে হয় তোমার, এভাবে আমাকে এখানে নিয়ে আসার!
– আস্তে কথা বলো।
– আস্তে কেন বলবো! চিৎকার করে বলবো আমি…
মেহেদী আবার মুখ চেপে ধরে বললো,
– আস্তে কথা বলো, না হলে জবান কেড়ে নেবো। তোমাকে নিষেধ করা সত্বেও কাল কমপিটিশন এ এটেন্ড কেন করেছো?
– ইচ্ছে হয়েছে তাই করেছি। তুমি না করার কে?
– কি চাও? ছবি গুলো আপলোড করে দিবো? সময় এখনো আছে, স্যারকে বলে নাম কাটিয়ে নাও।
নাফিসা এবার জোরে হাসতে লাগলো। মেহেদী অবাক হলো, ভয় পাওয়ার জায়গায় হাসছে! নাফিসা হাসি থামিয়ে বলতে লাগলো,
– কি ভেবেছো তুমি! ছবি আপলোড করার ভয় দেখিয়ে, আমাকে হুমকি দিলেই নাম কাটিয়ে নিবো আমি! এবার আমি বলছি তুমি নাম কাটিয়ে নাও মি. মেহেদী! অভিনয় কি তুমি একাই করতে পারো! আমি পারিনা! হিহিহি….. ছবি আমার কাছেও আছে। দেখবে? দাড়াও দেখাচ্ছি……
নাফিসা তার ফোনে ছবি বের করে মেহেদীর সামনে তুলে ধরলো। মেহেদী অবাক হয়ে আছে! এটা সেই ছবি, যেখানে মেহেদী নাফিসার দিকে ঝুকে মালার বাড়ন্ত সুতা কেটেছিলো, আরেকটা আবিদের রুমের খাটে নাফিসার উপর পড়ে আছে মেহেদী! উভয় ছবিতেই মেহেদীকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখাচ্ছে! মেহেদী বড় বড় চোখ করে নাফিসার দিকে তাকালো! নাফিসা তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে আবার বলতে লাগলো,
– কি ভাবছো? এই ছবি তুললো কে! তাহলে শোন আমি বলছি, তোমার প্রাণপ্রিয় বন্ধু রিসাদ! হ্যাঁ রিসাদ, যাকে দিয়ে তুমি ছবি তুলিয়েছো সে ই তুলেছে এই ছবি। ওই কপিগুলো তোমাকে দিয়েছে আর এই কপিগুলো আমাকে দিয়েছে।
এখন কি ভাবছো? রিসাদ কেন এটা করলো! তাহলে শুনো, রিসাদ আমার রূপে মুগ্ধ হয়ে প্রেমে পড়ে গেছে। আর তা আমি তোমার প্রপোজালের আগেই বুঝতে পেরেছি। তোমার অনুপস্থিতিতে মাঝে মাঝে সুযোগ খুজতো আমার সাথে কথা বলার। আর যেদিন থেকে তুমি এই প্লান করেছো, তার পরেরদিন রিসাদ ক্যান্টিনে গিয়ে দিনাকে আবিদ ভাইয়ার কাছে পাঠিয়ে আমাকে সব বলে দিয়েছে। তখনো আমি বুঝতে পেরেছি রিসাদ কেন এটা করলো! প্রেমে পাগল হলে মানুষ ফ্রেন্ডকেও ভুলে যায়! কি আজব না!
কতটা পছন্দ করে আমাকে, বুঝতে পারছো! যার জন্য তোমার বিপরীতে গিয়ে আমাকে সাপোর্ট করে! সেদিন রাতে বসে বসে আমিও তোমার প্ল্যানের বিপরীতে প্ল্যান সাজাই। তোমার সাথে সাথে আমিও অভিনয় শুরু করি। যখন যেভাবে চেয়েছো সেভাবেই নেচেছি তোমার সাথে। হলুদের প্রোগ্রামে তোমার বোতামে ইচ্ছে করেই মালার সুতা পেচিয়ে দেই। রিসিপশনে তোমাকে হঠাৎ কাছে টেনে নেই! পরশু তোমার কথায় মন খারাপের অভিনয় করি। আর রিসাদ তো আছেই আমার সাপোর্টার! যে কোনো বিপদ ঘটলে সে তো আমাকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসবেই। কি আমার অভিনয় সুন্দর হয়নি? হিহিহি…… তুমি চলেছো ডালে ডালে আর আমি চলেছি পাতায় পাতায়। তুমি কি ভেবেছো, তুমি প্রপোজ করবে আমিও এতো সহজে তোমার কাছে ধরা দেবো! এতো তারাতাড়ি কি কেউ প্রেমে মাতাল হয়! তার উপর প্রথম থেকেই যে আমার শত্রু! একটুও কি তোমার মাথায় নাড়া দেয়নি সেটা! অথচ এতো বুদ্ধিমান তুমি!
মেহেদী চুপচাপ দাড়িয়ে নাফিসার কথা শুনে যাচ্ছে! রিসাদ তার এতো কাছের বন্ধু হয়ে কি করে এটা করতে পারলো! তাছাড়া রিসাদ নিজেই তো ভালোবাসার অভিনয়ের আইডিয়া দিয়েছিলো! বিভিন্ন চিন্তায় মগ্ন হয়ে মেহেদী জিজ্ঞেস করলো,
– সেদিন আমি নিষেধ করার পর তোমার চোখে পানি ছিল কেন?
– আর বলো না, কতো কষ্ট করে তোমার দিকে পলকহীন তাকিয়ে থেকে একটু পানি আনতে পেরেছি। হিহিহিহি…. তোমাকে দেখানোর জন্য প্রাক্টিসটাও করিনি, বারবার ইচ্ছে করে থেমে স্যারকে বুঝাতে চেষ্টা করেছি যে আজ আমার সমস্যা হচ্ছে! আর বাসায় গিয়ে একা একাই প্রাক্টিস করেছি যার ফলাফল কাল আমাকে ফার্স্ট করে দিয়েছে। প্রথম গান গাওয়া নিয়ে আমার কোন স্বপ্ন না থাকলেও, তোমার অভিনয়ে আমি ইম্প্রেস হয়ে গেছি। তাই আমি নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। যাই হোক, এখন আমি বলছি, তুমি নিজের নামটা সরিয়ে নাও।
– সরাবো না আমি। দেখতে চাই কি করতে পারো তুমি।
– চিন্তা করো না, আমি তোমার মতো পিক আপলোড করবো না। সোজা থানায় পৌছে দিবো।
মেহেদী বড় বড় চোখ করে আবার নাফিসার দিকে তাকালো! নাফিসা আবার বলতে লাগলো,
– তুমি ছবি আপলোড করলে কয়েকজনের চোখে আমি খারাপ হবো, আর কিছু না! আর আমি যদি ছবি দেখিয়ে তোমার নামে অপহরণের মামলা দেই, কেমন হবে! কমপিটিশন তো দূরে থাক, ভার্সিটি থেকে ছাটাই, পরিবার থেকে ছাটাই, সাথে রিমাইন্ডের মাইর! সহ্য করতে পারবে তো! সারাজীবন জেলের ঘানি টানতে হবে!
এখন কি ইচ্ছে করছে তোমার? আমার ফোন নিয়ে ছবি ডিলিট করতে? আমার ও রিসাদের কাছে কপি করা আছে। নাকি তোমার এটা ইচ্ছে করছে, এই জংগলে আমাকে মেরে চলে যাওয়ার! সেটা তুমি পূর্ণ করতে পারবে ঠিক, কিন্তু তবুও জেলের ঘানি টানতে হবে। কারণ রিসাদ জানে তো তুমি ছাড়া কেউ আমার পেছনে লেগে নেই! সে প্রমাণ করে দিবে! হিহিহি…….
মেহেদী স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে। সে কেন তার সাথে লাগতে গেলো! বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার! তার ছোট থেকে গড়া স্বপ্নটা ভেঙে দিতে হবে! আর না হলে থানায় যেতে হবে! তাহলে তার মায়ের কি হবে! তার পরিবার, তার পৃথিবী সব যে তার মাকে নিয়ে! না, প্রয়োজন নেই এই কমপিটিশন! চোখে পানি এসে পড়েছে তার। মেহেদী নাফিসার সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়লো!
– নাফিসা প্লিজ এটা করো না। এতো বড় ক্ষতি করো না আমার! আমি কমপিটিশন থেকে নাম কাটিয়ে নিবো। ফাইনাল রাউন্ডে এটেন্ড করবো না। প্লিজ তুমি এটা করো না। তুমি যা চাও তাই হবে। প্লিজ….
– আরে আরে কি করছো! এসব তোমাকে মানায় নাকি! উঠো…
– প্লিজ করো না এমনটা…
– ওকে, করবো না। তবে চালাকি করতে যেও না। আর শুনো, রিসাদের সাথেও উল্টাপাল্টা কিছু করতে যেও না। তাহলে কিন্তু ঝামেলা বেড়ে যাবে।
– ওকে।
মেহেদী উঠে দাড়ালো। এদিকে বিকেল পেরিয়ে যাচ্ছে। তাদের ফিরতে হবে, কিন্তু নাফিসা আর মেহেদীকে দেখা যাচ্ছে না। সবাই বাসের কাছে এসে চিন্তিত। তারা বনের ভেতরে আবার খুঁজে এসেছে, পায়নি। রিসাদ আরোও বেশি চিন্তিত! মেহেদী নাফিসার সাথে কিছু করে বসেনি তো! আগের সব প্ল্যান তো তার জানা ছিলো, কিন্তু আজকের কোনো প্ল্যান জানা ছিলো না! নানান চিন্তা নিয়ে আবার জংগলের দিকে আগাতেই দেখলো নাফিসা আর মেহেদী আসিছে! দুজনের মুখেই বিষন্নতা! কি হয়েছে তাদের! রিসাদ সামনে এগিয়ে গেলো। মেহেদীর সাথে কথা বলতে গেলে মেহেদী পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। নাফিসাকে নানান প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে সে মলিন সুরে উত্তরে শুধু এটা জানালো,
– মেহেদী তোমার কথা জেনেছে।
– জেনেছে ভালো কথা, কিন্তু তুমি মন খারাপ করে আছো কেন? কি হয়েছে তোমার?
– কিছু না। চলো…
– নাফিসা কিছু হয়েছে, বলো আমাকে…
– বললাম না, কিছু হয়নি!
নাফিসা এক প্রকার জেদ নিয়ে কথাটা বলে বাসে উঠে পড়লো। অনেকে অনেক প্রশ্ন করছে। নাফিসা চুপচাপ বসে আছে। মেহেদীও বলেছে যে কিছু হয়নি, পথ ভুলে গিয়েছিল তাই লেট হয়েছে! আর কোন কথা বলেনি কেউ। সবাই কম বেশি ফুর্তি করছে, শুধু নাফিসা, মেহেদী ছাড়া। রিসাদ ও একটু পর পর তাকিয়ে শুধু ভাবছে কি হয়েছে তাদের মাঝে! সারাদিন কাটিয়ে সন্ধ্যায় তারা বাসায় ফিরে এলো।

Story: #ভালোবাসি_প্রিয়
Part: 10
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
পরের দিন নাফিসা ভার্সিটি যায়নি। মেহেদী গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু ক্লাস করেনি। নাফিসাকে দেখছে না আজ, এদিকে পলাশ স্যার বলে দিলো আজ প্রাক্টিস হবে না। সে তো আর প্রাক্টিস করবে না, কিন্তু স্যার কে এটা বলতে সাহস পাচ্ছে না মেহেদী। রিসাদের সাথে কোন কথা বলে না, রিসাদও আসে না তার কাছে। আবিদের সাথে কিছুক্ষণ ঘুরেছে, আবিদ তার অফিসে চলে গেলে অন্যদের সাথে কিছুক্ষণ বসে ছিলো। কিন্তু এখানেও মন বসছে না। তাই বাসায় ফিরে এলো। দুপুরে কোচিং-এ গেল। সন্ধ্যার পর বাসায় পড়ছিলো, মা রান্নাবান্না শেষ করে ঘর গুছিয়ে রাখছিলো। এমন সময় মেহেদীর নাম ধরে বাইরে ডাক পড়লো। মেহেদী বেরিয়ে গেলো সাথে তার মা ও দরজা পর্যন্ত গিয়ে দাড়ালো। বাইরে চারজন পুলিশ!!! মেহেদী ও তার মা দুজনেই অবাক হয়ে আছে! পুলিশের মধ্যে একজন বললো,
– আমাদের সাথে থানায় চলো।
– থানায়! থানায় কেন, স্যার?
– থানায় কেন বুঝতে পারছো না? গায়ে যখন পড়বে এমনিতেই বুঝে যাবে।
মেহেদীর মা ভয়ে আৎকে উঠলো! ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,
– স্যার, আমার ছেলে থানায় যাইবো কে? কি করছে ও?
– আপনার ছেলের নামে অপহরণের মামলা আছে। নাফিসা নামের মেয়েকে অপহরণ করার চেষ্টা করেছে কয়েকবার।
মেহেদী বড় বড় চোখ করে তাকালো! নাফিসা পাঠিয়েছে! সে তো বলেছে নাম কাটিয়ে নিবে! তাহলে, মিথ্যে মামলা দিলো কেন! মেহেদীর মা তো কান্না করতে শুরু করেছে!
– স্যার কি কইতাছেন! আমার ছেলে এমন না।
– আপনি বাসায় থেকে কিভাবে জানবেন আপনার ছেলে কেমন! এই যে দেখুন, এটা কি আপনার ছেলে না?
মেহেদীর মা ছবি দেখে মেহেদীর দিকে তাকালো। মেহেদীও তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মায়ের চোখের পানি সহ্য হচ্ছে না তার। কি করে বলবে তার নামে মিথ্যে মামলা দেওয়া হয়েছে! মা মেহেদীর কাছে গিয়ে দাড়ালো,
– এইসব কি সত্যি? কছ না কে? এইসব সত্যি?
– মা, মিথ্যে মামলা দেওয়া হয়েছে আমার নামে। আমি এসব করিনি।
পুলিশ বললো,
– রিসাদ নামের আপনার ছেলের বন্ধুও সাক্ষী দিয়েছে মেয়েটির পক্ষে। প্রমাণ ছাড়া আমরা কাজে আগাই না।
মা সেটা খুব ভালো জানে রিসাদ মেহেদীর কাছের বন্ধু। তার উপর এই ছবি! বিশ্বাস না করে থাকতে পারলেন না! মা মেহেদীর গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে কান্না করতে করতে বললো,
– আজকে তোর বাপের পরিচয় দিয়ে দিলি। তোর কথা ভেবে জীবনটা শেষ করে দিছি! অতিত ভুইলা তোর মুখে তাকাইছি আর বলছি আমি হয়তো একজন সুখী মা! আমার ছেলে আছে আমার কাছে, আর কিছু লাগবো না! আমিতো এইটা ভুলেই গেছি, তোর শরীরে কার রক্ত বইছে! প্রমাণ করে দিলি বাপকা ব্যাটা! যতই ভালো করার চেষ্টা করি, রক্তের সম্পর্ক তো মুছা যায় না!নিয়ে যান স্যার। এমন শাস্তি দেন, জীবনে যাতে কোন মেয়ের দিকে না তাকায়!
– মা, বিশ্বাস করো। আমি এসব করিনি। তোমার ছেলে এমন কিছু কখনোই করেনি।
মা হু হু করে কান্না করতে লাগলো। মেহেদীকে পুলিশ সাথে নিয়ে চলে গেলো। যাওয়ার সময় বারবার চিৎকার করে বলছিলো,
” মা তোমার ছেলে এসব কিছু করেনি। বাবার মতো হইনি আমি!”
থানায় নিয়ে আসা হলে মেহেদীর ফোন নিয়ে নিলো পুলিশ।
– স্যার, একটা কল করবো। দু মিনিটের জন্য দিন স্যার।
– এসবের নিয়ম নেই।
– স্যার আমার মা এমনিতেই অসুস্থ। একজনকে বলবো যেন খেয়াল রাখে, প্লিজ স্যার!
অনেক রিকোয়েস্ট এর পর ফোন দিলো। পুলিশ মেহেদীর কাছেই দাড়িয়ে ছিলো। মেহেদী আবিদের কাছে কল করে বললো, সে থানায় আছে আর আবিদ যেন তার মায়ের কাছে যায় এখন। তার মায়ের একটু খেয়াল রাখে। আর কিছু বললো না। আবিদ মেহেদীর মায়ের কাছে গেছে। উনার কাছে সব শুনে নিয়েছে। আগে থেকেই উনার হার্টের সমস্যা। এই ঘটনার পর, নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি। আবিদ থাকাকালেই কাদতে কাদতে মাটিতে শুয়ে পড়লো! আবিদ ভয় পেয়ে গেছে! কয়েকজন ডেকে রাতেই হাসপাতালে নিয়ে এলো। সেবা করার জন্য দিনাকেও নিয়ে এসেছে হসপিটালে। ডাক্তার জানিয়েছেন ওনার অবস্থা বেশি ভালো না। তাও উনাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন সুস্থ করার জন্য। মেহেদী কারাগারে বন্দি হয়ে সব ফেলে শুধু ওর মায়ের কথা ভাবছে! মা কি এখনো কান্না করছে! আবিদ কি তার মায়ের কাছে গেছে! মায়ের কি একটু খেয়াল রাখছে! এমন নানান চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে!
.
রাতে বই সামনে রেখে বসে আছে নাফিসা। এমন সময় রিসাদ কল করলো তার ফোনে।
– হ্যালো।
– আই হ্যাভ এ গুড নিউজ ফর ইউ। কি হতে পারে বলো তো?
– মেহেদীকে নিয়েই কিছু হবে হয়তো। এতো না পেচিয়ে বলে ফেলো….
– এই মাত্র খবর পেলাম, মেহেদীকে থানায় নেওয়া হয়েছে।
– মামলা যখন দিয়েছি, থানায় তো যাবেই!
– কিন্তু এটা কি একটু বেশি হয়ে গেছে না, নাফিসা! তুমি অন্যভাবেও থ্রেড করতে পারতে।
– কেন? এখন কি বন্ধুর জন্য জ্বলছে খুব? তাহলে যাও, জামিন করিয়ে নিয়ে আসো।
– আমার সাথে এখন রাগ দেখাচ্ছো কেন! আমার শুধু মনে হয়েছে ডোজটা একটু বেশি হয়ে গেছে! আচ্ছা, বাদ দাও। তুমি কি করছো এখন?
– তোমার সাথে কথা বলছি।
– এছাড়া?
– বই সামনে রেখে বসে আছি।
– ওহ! পড়ার ডিস্টার্ব করলাম! সরি। আর দু’মিনিট ডিস্টার্ব করবো।
– কি বলবা তারাতাড়ি বলো।
– তোমার ফ্রেন্ডের তো বিয়ে হয়ে গেছে, তোমার বিয়ে কবে হবে?
– জানি না।
– বাবাকে পাঠাবো, বাসায়?
– বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না?
– সমস্যা কোথায়? আজ হোক কাল হোক আসবেই তো। আর ভেবো না আমি তোমাকে বন্দী করে রাখবো। তুমি তোমার ইচ্ছে মতোই চলবে। শুধু আমার পাশেপাশে থাকবে।
– পরেরটা পরে দেখা যাবে।
– পরের কাজটা আগেই করতে চাচ্ছি। আমি জানাবো আজ বাসায়।
– কদিন পর না এক্সাম। পড়াশোনা করো।
– ভয় হয় তোমাকে নিয়ে। মেহেদী ছাড়া পেলে তোমার ক্ষতি করে ফেলবে।
– ছাড়া পেলে তো। আর আমার চিন্তা বাদ দাও। এক্সামের চিন্তা করো। রাখি এখন। বাই…
– ওকে, বাই। লাভ ইউ…
নাফিসা কল কেটে শুয়ে পড়লো। আজ পড়তে ভালো লাগছে না। অহনা এসে ডেকে গেলো খাওয়ার জন্য। খেতেও ইচ্ছে করছে না। তাই ডাকতে নিষেধ করে দিলো। সকালে ঘুম ভাঙলো দিনার ফোনে। রিসিভ করে ঘুমঘুম কন্ঠে বললো,
– হ্যাঁ, বল।
– কি করে করতে পারলি এটা?
– কি করেছি?
– মেহেদী ভাইয়ার সাথে এমনটা কেন করলি?
– না জেনে আমাকে ভুল বুঝিস না। ও আমাকে ধোকা দিয়ে কমপিটিশন থেকে সরাতে চেয়েছে। রিসাদ আমাকে সেটা আগে বলে দেয়ায় তার চালে আমি তাকেই ফেলেছি।
– সাধারণ একটা কমপিটিশন এর জন্য এমনটা করলি! জেলে পাঠালি কেন! অন্য কোনভাবে শিক্ষা দিতে পারতি!
– তুই কি মেহেদীর শোকে কান্না শুরু করলি নাকি! আর সে আরও অনেক বড় একটা ভুল করেছে। সেই ভুলের শাস্তিই এখন পাচ্ছে সে।
– ছি এতোটা, পাষাণ তুই সেটা আমার জানা ছিলো না। তোর দেয়া শাস্তি শুধু মেহেদী ভাইয়া পায়নি। তার মা ও পেয়েছে। ছেলের অপবাদ সইতে না পেরে আজ ভোরে দুনিয়া ত্যাগ করেছেন তিনি। দোষ নিশ্চয়ই এই মায়ের ছিলো না!
নাফিসা শোয়া থেকে উঠে বসে পড়লো।
– মা দুনিয়া ত্যাগ করেছে মানে!
– মেহেদী ভাইয়ার মা মারা গেছে আজ। তার পরিবারে শুধুমাত্র তার মা আর সে ই ছিলো। আজ তোর এই প্রতিশোধের জন্য একা হয়ে গেলো ভাইয়া। পুলিশ ভাইয়াকে নিয়ে যাওয়ার পর কাল রাতেই হার্ট অ্যাটাক করেছে। আবিদ হসপিটালে নিয়ে এসেছে। আমিও এসেছি সাথে। শুধু শুধু তোকে এসব শুনাচ্ছি কেন! একটা হেল্প করতে পারবি? মাকে একবার দেখার সুযোগ করে দিতে পারবি সেই হতবাগা ছেলেটিকে? এইটুকু দয়া অন্তত কর একটা মানুষের উপর….
আবিদ গেছে থানায়, পুলিশের কাছে সুপারিশটা অন্তত করে দে!
– ক..কোন হসপিটাল?
শুধু হসপিটালের নামটা বলে দিনা কল কেটে দিলো। নাফিসা স্তব্ধ হয়ে বসে আছে! এটা কি শুনলো সে! মেহেদীর মা ছাড়া কেউ নেই পৃথিবীতে! তার প্রতিশোধের জন্য একজন মা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলো! ঝটপট ফোনটা হাতে নিয়ে বাবার বাল্যকালের বন্ধু পুলিশ আংকেলকে কল করে ব্যাপারটা বললো নাফিসা। পুলিশ জানালো মেহেদীকে নিয়ে হসপিটাল যাবেন। নাফিসা বিছানা ছেড়ে জামাটা পাল্টে হাতমুখ ধুয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলো হসপিটালের উদ্দেশ্যে! হসপিটালে দিনাকে পাশে বসে থাকতে দেখলো। মেহেদী এখনো আসেনি।
.
পুলিশ মেহেদীকে মায়ের কথা না জানিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। থানার গেইট থেকে বের হওয়ার সময় আবিদের সাথে দেখা হলো।
– আবিদ! তুই এখানে? আমার মা ঠিক আছে?
– হ..হ্যাঁ। স্যার আপনার সাথে একটু কথা আছে।
পুলিশ অফিসার আবিদের সাথে একপাশে এসে কথা বললো। আর জানালো, তারা এখন মেহেদীর মায়ের কাছে হসপিটালেই যাচ্ছে। আবিদসহ পুলিশ হসপিটালে এলো। কেবিনে ঢুকেই মেহেদী থেমে গেছে! বেডে কেউ শুয়ে আছে, দেহ সম্পূর্ণ সাদা কাপড়ে ঢাকা! মেহেদী পুলিশকে জিজ্ঞেস করলো,
– এখানে আনলেন কেন?
পুলিশ কোন জবাব দিলো না। আবিদ মেহেদীর হাত ধরে সামনে নিয়ে এলে নার্স মুখ থেকে সাদা কাপড়টা সরিয়ে দেয়। মেহেদী তার মায়ের চেহারাটা দেখে আৎকে উঠে! মুখটা ধরে বলতে লাগলো,
– মা, তুমি এখানে কেন? এভাবে আছো কেন! এই মা, উঠো।
– মেহেদী, আন্টি বেচে নেই!
মেহেদী আবিদকে খুব জোরে ধাক্কা দিলো।
– এই তুই কি বলছিস এসব! আমার মা এই যে। এই যে আমার মা। আর একবার এসব বললে খুন করে ফেলবো আমি।
– আন্টি স্ট্রোক করেছেন কাল রাতে। আজ ভোরে মারা গেছেন।
– আবিদ! চুপ থাকবি! আমি কিন্তু সত্যিই খুন করে ফেলবো তোকে!
এই মা উঠো না একটু! দেখো আবিদ কত খারাপ কথা বলছে তোমাকে নিয়ে! আমার সাথে রাগ করে আছো না তুমি! মা আমি সত্যি বলছি, তোমার ছেলে কাউকে অপহরণ করেনি। ওরা সবাই মিথ্যে বলেছে। বিশ্বাস করো একবার। মা গো উঠো…..
মেহেদী অনেক্ক্ষণ যাবত তার মাকে ডাকলো। মা যে আর কোন সাড়া দিলো না! পরক্ষণে হাউমাউ করে কাদতে লাগলো। রুমের এক কোনে দাড়িয়ে কেউ একজন ওড়না দিয়ে মুখ চেপে কান্না করছে! মেহেদী এসেছে ঠিকই, কিন্তু এই মেয়েটিকে খেয়াল করেনি এই পর্যন্ত! দিনা ও আবিদও কাদছে! অনেক্ক্ষণ মায়ের কাছে বসে কান্না করে মেহেদী স্তব্ধ হয়ে গেছে! কোন কথা, কোন শব্দ করছে না আর! মাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার ব্যাবস্থা করলো আবিদ। রুম থেকে বের করতেই উঠে দাড়ালো মেহেদী। হসপিটালের লোকেরা মা কে নিয়ে গেলো এম্বুলেন্স এ নেয়ার জন্য। পুলিশ দরজার কাছে দাড়িয়ে আছে। মেহেদী এক কদম সামনে এগিয়ে গেলেই দিনার পাশে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটির দিকে চোখ পড়লো! কান্না ভেজা চোখ দুটি ছলছল করে তাকিয়ে আছে মেহেদীর দিকে , আর মুখ চেপে ধরে আছে! মেহেদী দরজার দিকে না গিয়ে ধীরপায়ে নাফিসার দিকে এগিয়ে গেলো। নাফিসার হাত থেকে মুখে চাপা ওড়না সরে গেলো। মেহেদী একটা হাতে আলতো করে নাফিসার গাল স্পর্শ করে খুব শান্ত গলায় বলতে লাগলো,
– অভিনয় করতে করতে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছিলাম তোকে। শুধু নিজের স্বপ্ন পূরণের স্বার্থে কমপিটিশন এ এটেন্ড না করার জন্য থ্রেড দিয়েছিলাম। ছবিগুলো দেখিয়ে একটু ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম! উদ্দেশ্যটা সফল হলে তোর কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতাম। তোকে পুনরায় আপন করে নিতাম। তুই সরে না গেলেও ওসব আপলোড করতাম না! কোন মেয়ের সম্মান নিয়ে খেলা করার কোন ইচ্ছে ছিলো না আমার। এখন যে কথাগুলো বললাম না, তার একটাও মিথ্যে না। আমার মা আজ চলে গেছে, এটা যদি সত্য হয় তাহলে এই কথাগুলোও আমার সত্য। সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছিলাম, সত্যিই উদ্দেশ্য সফল হলে তোর কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে আপন করে নিতাম! কিন্তু তুই কি করলি! আমার পৃথিবীটা কেড়ে নিলি! বলেছিলাম তো, আমি নিজেই নাম সরিয়ে নিবো। তবুও কেন আমার সব শেষ করে দিলি! বিশ্বাস কর, মা ছাড়া আমার দুনিয়ায় কেউ ছিলো না। আজ মা ও নেই! আমি আছি কেন, বলতে পারিস? একটা কাজ কর, আমার মামলাটা এমনভাবে উপস্থাপন কর যাতে কয়েক ঘন্টার মধ্যে আমার ফাসির রায় হয়ে যায়। তাহলে আরও শান্তি পাবি তুই।
নাফিসার দুচোখ বেয়ে পানি পড়েই যাচ্ছে, কথাগুলো বলতে বলতে মেহেদীর দুচোখ বেয়েও পানি পড়ছে। হঠাৎ মেহেদীর হাতটা গাল থেকে নাফিসার গলায় নেমে গেলো! খুব জোরে চেপে ধরে বললো,
– রিসাদের সাথে থাকবি না তুই? রিসাদ কেন! দুনিয়ায় কোনো ছেলের সাথে থেকে শান্তি পাবি না তুই! কোথাও শান্তি পাবি না নাফিসা! কোন মায়ের কলিজায় আঘাত করেছিস তুই , কোথাও শান্তি পাবি না….
নাফিসা দু’হাতে মেহেদীর হাত ছাড়াতে লাগলো। পুলিশ দৌড়ে এসে মেহেদীকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেলো। যাওয়ার সময় মেহেদী চিৎকার করে শুধু একটা কথাই বলছিলো, “কোথাও শান্তি পাবি না তুই, নাফিসা!”
নাফিসা কাদতে কাদতে ফ্লোরে বসে পড়লো। তার সাথেই কেন এমন হয়! নিজের মা কে ও দেখেনি, আজ তার জন্যই অন্য কারো মা হারিয়ে গেছে! এটা কিভাবে করতে পারলো সে!
.
.
সেদিন তো মেহেদীকে যা তা বলছিলেন! আজ কেমন লাগছে?
পার্টটা লিখতে গিয়ে তো আমি নিজেই কেদেছি!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here