গল্পঃ #ভালোবাসি_প্রিয়_তোমাকে
পর্বঃ ০৯,১০
নিঝুম জামান (ছদ্মনাম)
০৯
শোয়া থেকে উঠে বসার ঘরে গিয়ে যা শুনলাম তা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
নিষান ভাইয়াদের গাড়ি নাকি যাওয়ার পথে এক্সিডেন্ট করেছে। কথাটা শোনা মাত্র আমার
বুকের ভিতর মোচর দিয়ে উঠল। বাড়ির বড়রা
সকলে সিদ্ধান্ত নিল নিষান ভাইয়াদের ওখানে যাবে।
তারা সাথে সাথেই রওনা হয়ে গেল। আমারও যেতে
খুব ইচ্ছা করছিল কিন্তু তারা আমাকে নেয় নি।
ঘরটা কিছুক্ষনের মধ্যে একদম নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
রিমি, তিন্নি ওরা সবাই ঘুমাচ্ছে। বাড়ির কেউ জেগে
নেই আমি ছাড়া। আমার কেনো জানি
গলা ফাটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছিল। খবরটা শোনার পর থেকে ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছিল। কয়েক ঘন্টা আগেও কত সুন্দর হাসি-আড্ডা দিলাম। অথচ পাঁচঘন্টার ব্যবধানে কি ঘটতে চলছে? না, আর ভাবতে পারছি না। মহান আল্লাহর কাছে এখন একটাই প্রার্থনা গাড়িতে থাকা
সকলে যেন ভালো থাকে।। তাদের যেন কোন বড় ক্ষতি না হয়।
নিরাদের বাড়ির সকলে হাসপাতালে গিয়ে পৌঁছালো। সেখানে নিষানের বাবা-মা, ভাই,লিজা
আগেই ছিল। গাড়ীতে নিষানেরা ছয় বন্ধু ছিল।
তাদের মধ্যে নিষান আর ওর বন্ধু সাগর গুরুতর আহত হয়েছে। ওরা দুজন সামনের সিটে ছিল, আর সাগর ড্রাইভিং করছিল। এজন্য ওরা গুরুতর আহত হয়েছে। বাকি বন্ধুরা ব্যথা পেলেও কোথাও মারাত্মক
জখম হয় নি। নিষানের মাথার একসাইডে কিছুটা কেটে গেছে, বাম হাতেও প্রচন্ড চোট পেয়েছে আর সাগর জ্ঞান হারিয়েছিল কিছুক্ষন আগে সাগরেরও জ্ঞান ফিরেছে।
নিরাকে লিজা ফোন করে জানিয়ে দিল নিষানসহ ওর বন্ধুরা সুস্থ আছে। তেমন কোনো ক্ষতি হয় নি।
লিজার কথা শুনে নিরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল আর মনে মনে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়ে নিল।
.
সারাদিনের ঝামেলা কাটিয়ে রাত আটটার দিকে নিষান বরবেশে নিরাদের বাড়িতে আসল। যে বিয়ে দুপুরে হওয়ার কথা ছিল সেটা হচ্ছে রাতে।
নিষান আসার সাথে সাথেই বিয়ে পড়ানো শুরু হয়ে যায়।৷ তিন কবুলের মাধ্যমে
ওরা দুজন পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ে শেষ হলে
দুজনকে পাশাপাশি বসানো হয়। নিরাকে দেখে
নিষান লিজাকে বলে উঠে,
‘কি ভাবী? বউ-টউ বদলে দেন নাই তো আবার। যা আটা-ময়দা মাখছে চিনার তো কোনো উপায় নাই।’
নিষানের কথা শুনে নিরা ওর হাতে জোরে একটা চিমটি দিয়ে বলে,
‘চিমটি খেয়ে কি মনে হয়? বউ বদল হয়েছে?’
‘উহ্ঃ! চিমটি দিয়েছো নাকি মাংস তুলে ফেলতে চাইছো?’
নিরা কিছু বলার আগেই তিন্নি হাত বের করে হেসে বলল,
‘ভাইয়া, ইন্জিনিয়ারিং পাশ করেও মেকাপকে যে মেকাপ বলতে হয় সেটাও জানে না, মেকাপকে আটা-ময়দা বলছে। হিহিহি।’
নিষান তিন্নি কথা কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেল। কিছু বলল না। এরপর লিজা একটা আয়না এনে নিষানের সামনে ধরে বলল,
‘ আয়নায় কি দেখতো পাচ্ছো নিষান?’
নিষান মুগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে বলে উঠল, ‘আকাশ থেকে নেমে আসা একটা পরী।’
নিষানের কথা শুনে রুমের সবাই হালকা চিৎকার দিয়ে শিষ বাজিয়ে উঠে। এবারে নিরাকে জিজ্ঞেস করা হলে নিরা উত্তর দেয়,
‘আমিও দেখতে পাচ্ছি আকাশ থেকে নেমে আসা হ্যান্ডসাম একটা জ্বীন। হিহিহি।’
নিরার কথা শুনে রুমে সবাই হাহাহা করে হেসে দেয়।
.
.
এবার নিরাকে বিদায় দেওয়ার পালা। অন্যদের বিয়েতে বউদের কান্না দেখলে নিরার ভীষণ হাসি পেতো। কিন্তু আজ পরিস্থিতি ভিন্ন। মা-বাবাকে
ছেড়ে যেতে তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। এই কষ্টদায়ক অনুভূতি এই পরিস্থিতিতে আসার আগে সে
কখনো অনুভব করে নি। যদিও বিয়ের আগে নিষানের পরিবারের সাথে কথা হয়েছে ইন্টার পরীক্ষার পর্যন্ত নিরা ওদের বাড়িতেই থাকবে। তবুও নিরার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। নিরার বাবা নিষানের তুলে দিল। নিরা ওর বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষন কাঁদল। একটু পরে নিরা দেখে মিরা চিল্লিয়ে কাঁদছে আর বলছে, ‘ও আল্লাহ গো,, নিরাপু যাইতাছে গা গো!’..
মিরার কান্না দেখে নিরা কান্নার মাঝেই ফিক করে হেসে দিল। নিষান মিরাকে বলল,
‘এভাবে কাঁদছো কেন? তুমিও আমাদের সাথে চলো।’
মিরা কান্না থামিয়ে বলল,
‘না গো নিষানা ভাইয়া, আমি আম্মুকে ছাড়া থাকতে পারি না। আর এখন কাঁদছি যাতে নিরাপুও
আমার বিয়ের সময় কাঁদে।’
‘ওরে বাব্বা! এই বয়সেই কি চিন্তা! ‘(নিষান)
মিরার কথা শুনে সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। সাথে নিরাও হেসে ফেলল।
.
নতুন বউ নিয়ে নিষান রাত বারোটায় বাড়িতে পৌছাঁল। চোখে হাজারো রঙিন স্বপ্ন নিয়ে নিরা
শ্বশুরবাড়িতে পা রাখল। ওকে বরণ করে ঘরে নেওয়া হলো।
.
রাত একটায় কাজিনদের সাথে অনেক যুদ্ধ করে
নিষান বাসর ঘরে ঢুকলো। কাজিনদের কথা তিন হাজার টাকা না দিলে বাসর ঘরে ঢুকতে দিব না,
অন্যদিকে নিষানের কথা আমার বউ,আমার ঘর
তোদের কেন টাকা দিব? এ নিয়ে একঘন্টা তর্ক-বিতর্কের পরে নিষানের মা নিষানের কাজিনদের দুই হাজার টাকা দেওয়ার পরে নিষানকে যেতে দেয়। বাসর ঘরে ঢুকতেই নিরা ওর পায়ে সালাম করতে যায় তখনি নিষান পা সরিয়ে ওকে
হাত ধরে উঠায়।
‘আরে, আরে কি করছো? সালাম করছো কেনো?’
‘আপনার বাবার আম্মু মানে দাদী বলেছে বাসর ঘরে
স্বামীর পায়ে ধরে সালাম করতে হয়। এটাই নাকি নিয়ম।’
‘ওরে বাব্বাহ! তাই নাকি?’
‘হুম।’
নিষান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
‘এখন বিয়ে করেছি, আমার কত দায়িত্ব। বউয়ের সব দায়িত্ব তো আমার। নিজেকে ভালো রাখার পাশাপাশি তোমারও তো ভালো রাখার দায়িত্ব নিয়েছি। কে জানে কতটুকু খুশি রাখতে পারব? তবে
আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব তোমাকে খুশি রাখার।’
‘হঠাৎ এই কথা বলছেন?’
‘ এমনিই কথাগুলো বলছি। তোমার বাবা-মা আমাকে কত ভরসা করে তোমাকে আমার হাতে
তুলে দিয়েছেন তার একটা দায়িত্ব আছে না। আমাকে তো শীঘ্রই একটা জবও পেতে হবে।’
‘আচ্ছা, এখন এই কথা বাদ দিন।’
‘আচ্ছা। সারাদিন অনেক ধকল গেছে, কাল সারারাত ঘুমাতে পারি নি,আজকে সারাদিনও ঘুমাই নি। এখন না ঘুমাতে পারলে পাগল হয়ে যাব। তুমি আমার চুল নেড়ে দিবে একটু।’
‘ঠিক আছে।’
নিরা নিষানের চুলে বিলি কাটতে কাটতে একসময় সেও ঘুমিয়ে পড়ল।
.
পরদিন সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে নিরার ঘুম ভাঙল। ঘুম ভেঙে নিরার বুঝতে কিছুসময় লাগলো সে আসলে কোথায় আছে। পাশে তাকিয়ে দেখে
নিষান নেই। কোথায় গেল নিষান?
মামাতো বোনের শ্বশুরবাড়ি হিসেবে নিরা এবাড়িতে একবার এসেছিল তাও বৌভাতের দাওয়াত খেতে।
এ বাড়ির তেমন কিছুই চিনে না নিরা। হাতমুখ ধুয়ে
নিরা রুমের বাইরে গেল। সবাই হয়ত ঘুমাচ্ছে। কালকে সবারই মোটামুটি ধকল গেছে। কিন্তু নিষান ভাইয়া কোথায়? নিষানের রুমের সাথের রুমটা খোলা আবার আলোও জ্বলছে তাই নিরা সেখানে যাওয়ার জন্য পা পাড়ালো।
সেই রুমে গিয়ে তো নিরা পুরো টাস্কি খেল। রুমটাতে তিনটা বড় বড় বইয়ের সেলফ। সবগুলো বই দিয়ে ঠাসা । খুব সম্ভবত নিষানদের পারিবারিক লাইব্রেরি।
সেখানে একটা ছোট টেবিল আর চেয়ার। সেই চেয়ার-টেবিলে বসে বসে নিষান পড়াশোনা করছে।
নিরা আলতো পায়ে হেঁটে নিষানের কাছে
গেল।
‘এতো সকালে আপনি পড়তে বসেছেন?’
নিষান নিরাকে দেখে অবাক হয়ে যায়।
‘হুম, ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে পড়তে বসেছি। বিয়ে করেছি, এখন চাকরি পেতে হবে না। তা তুমি এত সকাল সকাল উঠে গেলে? আরেকটু ঘুমাতে, তোমার ডিস্টার্ব হবে বলে এখানে পড়তে
এসেছি।’
‘তাই বলে এত সকালে উঠে পড়তে বসবেন? আপনি
গতকাল এক্সিডেন্ট করেছেন, এখন আপনার উচিত দুই-তিনদিন রেস্ট করা।’
‘ নাহ,আমি ঠিকঠাক আছি। মা বলেছে, দুই মাসের মধ্যে চাকরি পেতে হবে। শুনেছি বউ পালা আর হাতি পালা সমান। সো শীঘ্রই চাকরি পেতে হবে রাগী ম্যাডাম।’
নিরা নাক ফুলিয়ে কোমড়ে দিয়ে বলল,
কিহ! আমি হাতি??’
‘আরে নাহ! হাতি বলব কেন? লোকমুখে এই কথাটা খুব প্রচলিত যে, বউ পালা আর হাতি পালা এক সমান। এই কথাটা ব্যঙ্গ করে বলে না। বলে
এইজন্য যে হাতি পালতে অনেক টাকার দরকার , আর বউয়ের শখপূরন করতেও টাকার প্রয়োজন।
আর হাজবেন্ড যদি শখপূরণ না করে তাহলে
কে করবে? ‘
‘হইছে হইছে আর ব্যাখ্যা করতে হবে না।
আপনি পড়ুন, আমি যাই দেখি লিজা আপু উঠেছে কিনা?’
‘ঠিক আছে। বাই নিরা। ব্রেকফাস্ট করতে গেলে
দেখা হবে নিরু।’
বলে নিষান নিরার দিকে ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে মা’রল।
‘ইশ! ঢং।’ বলে নিরা চলে গেল।
#চলবে..
গল্পঃ #ভালোবাসি_প্রিয়_তোমাকে
পর্বঃ ১০
নিঝুম জামান (ছদ্মনাম)
.
সকালের নাস্তা করতে নিষান সবার আগেই চলে এলো। অন্যদিন নিষানের মা চিল্লিয়ে যেখানে
ছেলেকে ঘুম থেকে উঠাতে পারেন না, সেখানে আজকে নিষান সবার আগে চলে এসেছে দেখে নিষানের মা সোফায় বসে বসে মিটমিটিয়ে হাসল।
নিষান দুহাত ঘষতে ঘষতে চেয়ারে বসতে বসতে
মাকে জিজ্ঞেস করল,
‘মা, ভাইয়া আর বাবা কই? তারা সকালের নাস্তা করবে না, নাকি? ‘
নিষানের মা মুচকি হেসে বলে,
‘সবাই নাস্তা করবে।’
‘তা নিষান আজ এতো তাড়াতাড়ি নাস্তা করতে চলে এলে, অন্যদিন ডাকতে ডাকতেও আসো না। কি ব্যাপার? হুম?’
লিজা গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে কথাগুলো বলল।
নিষান গলাকেশে বলল,
‘উহ, ভাবী সকাল সকাল পঁচাবে না একদম। তা যাকে খুঁজছি সে কোথায়?’ (লাজুক স্বরে)
‘তার আসার সময় হলে সে ঠিকই আসবে। এখন তোমার সে রান্নাঘরে আছে।’
‘ওহহ, আচ্ছা।’
কিছুক্ষনের ভিতরেই নিষানের বড়ভাই জিষান আর
ওর বাবা নাস্তা করতে চলে এলেন। নিরাও রান্নাঘর থেকে পরোটা, সবজি আর ডিম পোচ নিয়ে এলো।
সাথে দুকাপ চা নিয়ে এলো নিষানের বাবা-মায়ের জন্য।
পরোটা আর সবজি মুখে দিতে না দিতেই নিষান উচ্চস্বরে বলে উঠল,
‘ওয়াও, রান্না তো ফার্স্ট ক্লাস হইছে। আজকের পরোটা আর সবজির স্বাদ অসাধারণ। ডিম পোচটাও পারফেক্ট।’
নিষানের কথা শুনে ওর মা-ও বলে উঠল,
‘এতকাল বুঝি রান্না ঠিকঠাক ছিল না?’
লিজা এক ভ্রু উঁচু করে বলল,
‘দেবর সাহেব, যাকে ভেবে খাবারের রিভিউ দিচ্ছেন সে কিন্তু এসব রান্না করে নি।’
‘ ম-মানে? এগুলো নিরা রান্না করে নি? ওকে না দেখলাম রান্নাঘর থেকে এগুলো আসতে?’
নিরা মাথা নিচু করে বলল,
‘রান্না সব আম্মা করেছে। আমি রান্না করতে জানি না। আমি শুধু আব্বা-আম্মার জন্য চা বানিয়েছি আর রান্নাঘর থেকে এগুলো এখানে এনেছি।’
‘আজকে দেবর সাহেব নিজের বউয়ের রান্না ভেবে
প্রশংসা করছে, কই অন্য সময় তো
করো না? ‘ (লিজা)
‘আহারে, ভাই আমার এখনই বউ পাগল হয়ে গেছে।
বউকে খুশি করতে রান্না মজা হয়েছে বলেছে, তুমি এটাও বুঝ না লিজা?’
‘হ্যাঁ, বুঝেছি তো। সেই জন্যই তো বললাম। আমার বিয়ের পর থেকে আজ অবধি একদিনও নিষান নিজে থেকে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করতে আসে নি।অথচ আজ নিজে থেকে আগে তো এসেছেই সাথে
খাবার মুখে দেওয়ার আগেই রান্নার প্রশংসা
করছে। ‘(লিজা)
‘একেই বলে বউয়ের… ‘ জিষান কথাটা শেষ করার আগেই নিষান দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল,
‘ধ্যাত, আমি আর নাস্তাই করব না। সবাই আমাকে লজ্জা দিচ্ছে।’ বলে নিষান চলে যাওয়ার আগেই ওর মা বলল,
‘বাবা, রাগ করিস কেন? ওরা তো মজা করছে। খেয়ে যা, খাবারের ওপর রাগ করতে নেই।’
‘তাহলে নিরাকে দিয়ে নাস্তা রুমে পাঠিয়ে দিও।'(নিষান)
জিষান নিষানের কথা শুনে মজা করে কিছু বলবে
তার আগেই ওর মা চোখ দিয়ে ইশারা করে থামতে
বললেন। তাই জিষানও চুপ হয়ে গেল।
নিষানের মা নিরাকে বললেন, ওদের দুইজনের খাবারের প্লেট নিয়ে রুম চলে যেতে।
নিরাও কোন কথা না বলে তাদের নাস্তার প্লেট নিয়ে
রুমে চলে গেল।
নিরা নিষানের হাতে নাস্তার প্লেট দিতে দিতে বলল,
‘ঢং দেখিয়ে উঠে আসলেন কেন নাস্তা না করে? আবার আসার সময় আম্মাকে বললেন কেন
নিরাকে দিয়ে নাস্তা রুমে পাঠাতে?’
‘কি করব? দেখছিলে না ভাইয়া ভাবী আমাকে লজ্জা
দিচ্ছিল তাও আবার বাবা-মায়ের সামনে।’
‘ঠিকআছে, আরও লজ্জা দেওয়া উচিত ছিল। আপনাকে অতি পন্ডিতি করে কে বলতে বলেছিল
রান্না মজা হয়েছে। এতদিন বলেন নাই, বিয়ে করার পরদিনই বলছেন লজ্জা দিবে না তো কি করবে?’
‘আমি কি জানি যে তুমি রান্না করো নাই? তোমাকে দেখলাম রান্নাঘর থেকে ঘেমে-টেমে বের হচ্ছো, তাই ভাবছি তুমি রান্না করছো।’
‘তাহলে আমাকে খুশি করতে এতক্ষণ মিথ্যা প্রশংসা করছিলেন?’
নিষান আমতা-আমতা করে বলল,
‘মিথ্যা বলতে যাব, খাবার ভালোই লেগেছিল। যাইহোক, আমার প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে এখন খেতে দাও।’
★
খাওয়া শেষে নিরা এঁটো প্লেটগুলো রান্নাঘরে রেখে
আসার সময় ওর শাশুড়ী ওকে ডাক দিল। নিরা
রুমে গিয়ে দেখে লিজাআপুও আছে। ওদের শাশুড়ী
আলমারি খুলে তিনটে শাড়ি বের করল। তার মধ্যে দুটো জামদানী শাড়ি এক ডিজাইনের৷ একটা লাল-খয়েরী, অন্যটা জাম কালার। নিরার হাতে ওর শাশুড়ী নীল কাতান শাড়িটা তুলে দিয়ে বলল,
‘নিরা, আজকে হিসাব অনুযায়ী তোমাদের বৌভাত হওয়ার কথা ছিল। আমরা বৌভাতের অনুষ্ঠান
করতে চেয়েছিলাম কিন্তু নিষান নিষেধ করেছে। ও বলেছে যেদিন ও চাকরি পেয়ে তোমার দায়িত্ব
নিতে পারবে সেদিন ও বৌভাতের অনুষ্ঠান করবে।
বৌভাত উপলক্ষে নীল কাতান শাড়িটা দিলাম। যদিও বৌভাত করছি না তবুও এ শাড়িটা সময় পেলে কোন একসময় পড়ে সেজেগুজে দেখাবে।’
‘জ্বি, আম্মা।’
নিষানের মা এবারে লিজা আর নিরাকে জাম কালার আর লাল-খয়েরি জামদানী শাড়ি তুলে দিয়ে বলে,
‘আমার খুব ইচ্ছা ছিল আমার দুই ছেলের বউকে
আমি শাড়ি দিব। আজ সে ইচ্ছাটা আমার পূরণ হচ্ছে। তোমরা দুইজন আজ সন্ধ্যায় দুজনে এই শাড়ি দুটো পড়বে। আমি আমার মেয়েদের মন ভরে দেখব।তোরা আমার মেয়ে।’
বলে নিষানের মা ফুপিয়ে কেঁদে উঠল।
লিজা আর নিরা দুজনই অবাক হয়ে শাশুড়ীর ‘তুই’ ডাক শুনে। লিজাকে বিয়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত কখনোই তুই বলে ডাকেনি ওর শাশুড়ী। আজ হঠাৎ কি হলো?
ওর শাশুড়ী নিজে থেকেই বলা শুরু করে,
‘আমার একটা পরীর মতো ফুটফুটে মেয়ে ছিল। আমার বিয়ের চার বছর পরে আমার কোল জুড়ে এসেছিল। সারাদিন একা একা কথা বলতো আর খেলতো। আমাদের গ্রামের বাড়িতে
বিল্ডিংয়ের ছাদে রেলিং ছিল না, একদিন খেলতে
খেলতে ও ছাদ থেকে পড়ে যায়।
নাআআ… আমি আর সেদিনের কথা চিন্তা করতে পারছি না।(চিৎকার করে)
এরপর আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাকে নানান কথা বলে।আমি প্রায় পাগলের মত হয়ে যাই। প্রায় দুই বছর পরে আমার কোল জুড়ে জিষান আসে এর ছয় বছর পরে নিষান জন্ম নেয়। ছেলে দুটো হওয়ার পরেও আমি স্বাভাবিক হতে পারি নি। সবসময় আমি অসুস্থ থাকতাম। এখনোও অসুস্থ হয়ে যাই, মাঝে মাঝে মনে হতো নিষানের বউ হয়তো দেখে হয়ত ম’রতে পারব না। তাই ওকে তাড়াতাড়িই বিয়ে করিয়েছি। এখন আমার আশা পূরণ হয়েছে ঘরে দুটো লাল টুকটুকে বউ এনেছি। আমার মেয়ের অনেক শখ ছিল। তাই আমি ছেলের বৌদের মেয়ে মনে করি। তোরাও আমাকে মা ভাববি।
লিজা আর নিরা দুজনই নিচুস্বরে বলে, ‘জ্বি।’
.
.
নিরা আর লিজা সন্ধ্যায় শাড়ি পড়ে সাজগোজ করছিল। দুপুরে নিষান একটা কাজে বেরিয়েছিল, সন্ধ্যায় বাড়ি এসেছে। রুমে এসে দেখে
নিরা সাজগোজ করছে। নিষান রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে,
‘কি ব্যাপার ? হঠাৎ এতো সাজগোজ? ‘
‘মা বলেছে আজ তার দুই মেয়েকে মন ভরে দেখবে।’
‘লাল-খয়েরী শাড়িতে তো আমার বউটাকে অনেক সুন্দর লাগছে। ‘
‘হুহ, আমি তো এমনিতেই সুন্দর। এ আর নতুন কি?আপনিও গিয়ে রেডি হোন। রাতে ডিনার করতে সবাই মিলে বাইরে যাব মা বলেছে। ‘
‘ওমা তাই নাকি? তাহলে তো আমাকেও নায়কের মতো সাজতে হবে।
যাই গিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হই বলে নিষান রেডি হতে
চলে গেল।
রাতে ওরা সবাই মিলে বাইরে ডিনার করতে গেল। নিরার খুব ভালো লাগছে এমন একটা মায়ের মত শাশুড়ী পেয়ে। সকলে ঘুরাঘরি করে অনেক রাতে
বাড়ি ফিরল।
#চলবে..