গল্পঃ #ভালোবাসি_প্রিয়_তোমাকে
পর্বঃ ০৩
নিঝুম জামান (ছদ্মনাম)
আমাকে যে ছেলেগুলো নিয়ে যাচ্ছে কেউই কিছু বলছে না। আমিও যে চিৎকার লোকজনের কাছে সাহায্য চাইব, সেইটুকু গলার স্বরও আসছে না।হঠাৎ করে….
কেউ আমার হাত টেনে ধরল। পিছনে তাকিয়ে দেখিয়ে নিষান ভাইয়া, তানভীর। তাদের দেখে আমার মধ্যে প্রাণ ফিরে এলো। নিষান ভাইয়া আর তানভীর কয়েকটা কি’ল-ঘু’ষি দিতেই সবগুলো দৌড়ে পালালো। নিষান ভাইয়ার চোখে আমি স্পষ্ট রাগ দেখতে পাচ্ছি। তার চোখ দেখে আমি বুঝতে পারছি তিনি বলতে চাইছেন, এতো রাতে আমি এখানে কেন? কিংবা ওদের সাথেই বা আমি কোথায় যাচ্ছি?
আমি ঢোক গিলে আমতাআমতা করে উত্তর দিলাম,
‘আমি কোথাও যাচ্ছিলাম না, ওরা আমাকে ওই অন্ধকারে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি…
আর কিছু বলতে পারলাম না তার আগেই নিষান ভাইয়া আমাকে কষে একটা থা-প্পড় মারলেন। মৌমাছির চাকের মতো আমাদেরও দুজনের পাশে লোকজন ঘিরে ধরেছে। কিছু কিছু উৎসাহী জনতা পাশ থেকে কিছু বলছিল কিন্তু সেই কথাগুলো আমার কান পর্যন্ত পৌঁছালো না। কারণ এতগুলো মানুষের সামনে থা-প্পড় খেয়ে মানসম্মান খুইয়ে আমার মাথা হ্যাং হয়ে গেছে। থা-প্পড়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জিদ চাপলো আমার মনে। কিন্তু পাল্টা থাপ্পড়ও তো মারতে পারব না। রাগে তার হাতে থাকা ফোনটাকে টেনে নিয়ে মাটিতে আছাড় মারলাম। যেই জোরে আছাড় মারলাম, মনে হয় না আর ফোনটা জীবিত অবস্থায় আছে। আরেকটা থা-প্পড় খাওয়ার আগেই ওনার রাগী মুখের দিকে তাকিয়ে নাক ফুলিয়ে সামনের দিকে হাঁটা দিলাম। কিছুদূর এগোনোর পর পড়লাম বিশাল বিপদে। পিছনে তাকিয়ে দেখি তানভীর আর নিষান ভাইয়াও আসছে। এই বিপদ থেকে এখন একমাত্র নিষান ভাই পারে উদ্ধার করতে। কে জানে বজ্জাত লোকটা আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করবে নাকি ফোন ভাঙার প্রতিশোধ নিবে? আমি ওনার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।
নীরার চোখে ভাষা স্পষ্ট বলে দিচ্ছে, এখন মা- মামাদের হাত থেকে আমাকে বাঁচান। তারা সত্যিটা জানতে পারলে আমাকে খুন করে ফেলবে।
নিষান নীরার করুন দৃষ্টি উপেক্ষা করে বাঁকা হাসি হাসল। নীরার মা সালেহা বেগম এগিয়ে এসে রাগী গলায় নীরাকে জিজ্ঞেস করল,
‘এত রাতে একা একা মেলায় এসেছিস কেন? যদি একটা অঘটন ঘটে যেত।’
‘মা আমি একা আসি নি। নিষান ভাইয়া, তানভীর, বল্টু- ইকরাকে সাথে নিয়ে এসেছি।’
নিরার কথা শেষ হতেই নিষান বলে উঠল,
‘মিথ্যা কথা আন্টি। নিরা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলছে ।
ওরা তিনজন একা মেলায় এসেছে, আমাদের সাথে না। আর ওদের লিডার হচ্ছে আপনার সুন্দরী মেয়ে।
জানেন কি হয়েছে আন্টি?’
‘হ্যাঁ, আমি জানি।’
‘না আন্টি, আপনি কিছুই জানেন না। মেলায় মারামারি লাগার পরে বল্টু-ইকরা নিরাকে ফেলেই পালায়। মেবি বাড়ি চলে গিয়ে আপনাদের খবর দিয়েছে। এদিকে আপনার সাহসী সুন্দরী কন্যাকে চার-পাঁচটা ছেলে টেনে ওইদিকের ভাঙা অন্ধকার দোকানের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। ভাগ্যিস মেলা ঘুরতে এসেছিলাম, তখন নিরার দিকে চোখ পড়ল। এরপর…
বাকি কথা শোনার আগেই নিরার মা নিরার চুলের মুঠি ধরে গালের মধ্যে এলোপাতাড়ি কয়েকটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়। রাগী স্বরে বলে ওঠেন,
‘তুই কি বড় হস নি নিরা। কিছু কি বুঝিস না? আজ যদি কোনো অঘটন ঘটে যেত তোর বাপের কাছে কি জবাব দিতাম? এত শাসন আর চোখে চোখে রাখার পরও রাত-বিরেতে মেলা ঘুরা তোর বের করছি। বাড়ি চল আজ পিটিয়ে যদি তোর লা-শ না ফেলিও তবে আমিও সালেহা না। কলিজাটা এতবড় তোর।’ ( নিরার মা)
নিরার মামা নিরা মাকে থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু নিরার মা কি আর থামে! সারা রাস্তা ধরে বকতে বকতে নীরাকে বাড়ি নিয়ে গেলেন। বাড়ি আসার পরে সবাই সালেহা বেগমের কাছে কাছে ঘটনা জানতে চাইলে সবাইকে ঘটনা বলার সময়ও দুই-চারটা থা-প্পড় খায় নিরা। নিরাকে মায়ের হাতে
মা’র খেতে দেখে ওর কাজিনগুলো ফাজিলের মত
দাঁত বের করে হাসতে থাকে। কাজিনদের সামনে
মার খেয়ে নিরা ভীষণ অপমানিত বোধ করে।
কোনোরকম কান্না চেপে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে চলে যায় নিরা।ছাদে গিয়ে রেলিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ কাঁদে নিরা। নিরা তো নিষানের ওপর সেই রেগে আছে। মনে মনে ভাবছে ব্যাটাকে একবার একা পাই তারপর নিরা কি জিনিস হারে হারে টের পাবে!
নিরার কান্না দেখে একজনের মনে খুব আঘাত লাগে, সেই একজন হচ্ছে নিষান। নিরা যখন কাঁদতে কাঁদতে ছাদে আসছিল তখন নিষানও ওর পেছন পেছন আসে। নিজেকে অনেক বড় অপরাধী মনে হয় নিষানের।
কিছুক্ষন কাঁদার পরে নিরা ওর বাবাকে ফোন দেয়।
ফোন দেওয়ার সাথে সাথে ওপাশ থেকে কলটা রিসিভ করে নিরার বাবা হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করেন,
‘কিরে নিরা? এত রাতে কল দিয়েছিস? কোন সমস্যা হয়েছে? ‘
‘না আব্বু, কোন সমস্যা হয় নি। তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ?’
‘এই মাত্রই শুয়ে পড়তাম। তা তুই কাঁদছিস কেন?’
বাবার কথা শুনে নিরা হাউমাউ করে কেঁদে দিয়ে বলে,
‘বাবা, আজকে বিয়ের দাওয়াত খেয়ে তোমার সাথে চলে গেলেই ভালো হত। একটু মেলায় গিয়েছিলাম বলে আম্মু আজকে আমার সব
কাজিনদের সামনে আমাকে বকাঝকা করেছে, মেরেছে। আমি কি বড় হই নি আব্বু? বলো..
সবার সামনে আমার অনেক লজ্জা লাগছে। তুমি কালকেই আমাকে নিতে আসবা।
‘থাক আম্মু কেঁদো না, আমি কালকে সকালেই তোমাকে নিতে আসব। আর তোমার আম্মুকেও
‘আচ্ছা, রাখছি তাহলে। ভালো থেকো।’
নিরা খুব ভালো করেই জানে তার আব্বু কালকে তাকে নিতে আসবে না। তাকে মনের সান্ত্বনা দিয়েছে। তবুও মন খারাপের সময় এই সান্ত্বনাটুকুই অনেক কিছু। নিরা চোখ মুছে পিছনে ঘুরে দেখে নিষান দাঁড়িয়ে। নিষানকে দেখে নিরার মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যায়।
‘একি আপনি এখানে কি করছেন?’
‘সরি নিরা। আ’ম রিয়েলি সরি। ‘
নিরা ক্ষিপ্ত কন্ঠে উত্তর দেয়,
‘সরি? কিসের সরি? মেলায় সবার সামনে আমাকে আপনি থা-প্পড় মেরেছেন, আবার মাকে সব সত্যি কাহিনি বলে ভালো সেজে এখন এখানে ঢং করে সরি বলতে এসেছেন। ফালতু লোক কোথাকার!’
‘হ্যাঁ, আমি জানি কাজটা আমি ভালো করি নি।
তোমাকে মেলায় থা-প্পড় মা-রাটার জন্য সরি। আর
তোমার ভালোর জন্যই তোমার মাকে বলে দিয়েছি।
তবে ভাবি নি আন্টি সবার সামনে এমন করবে। ‘
‘মাকে যেন আপনি নতুন চিনলেন। দেড়বছর আগে লিজাআপুর বিয়েতেও আমি সেম কাজটা করেছিলেন। চিঠি দিয়েছিল মাইশা আপু আর আপনি মাকে বলে দিয়ে মা-র খাইয়েছিলেন আমাকে। তা মায়ের সামনে ভালো মানুষ সেজে আপনার দু-পয়সা লাভ হয়েছিল?’
‘না কোনো লাভ হয় নাই তবে মেয়েদের অতি সাহস থাকা ভালো না। আজকে মেলায় যদি তোমার সাথে একটা দূর্ঘটনা ঘটতো তখন কি হত? আন্টিকে বলেছি যাতে উনি তোমাকে শাসন করে আর ভবিষ্যতে যাতে তুমি অতিরিক্ত সাহস দেখিয়ে কিছু না করো। পরপর দুবার আন্টিকে ঘটনাগুলোর জানানোর কারন এগুলাই।
যাইহোক, রাগ দেখিয়ে যে ম্যাডাম আপনি আপনার
ফোন আছাড় দিয়ে ভা-ঙলেন তার কি হবে?’
‘ফোন আছাড় দিয়েছি, আপনার কপাল ভালো আপনাকেই তুলে আছাড় দেই নি।’
বলে নিরা একমুহূর্তও দেরী না করে ছাদ থেকে নেমে গেল।
নিরা চলে যেতেই ওর দিকে নিষান একটা ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে দিয়ে বলল রাগলে কিন্তু ম্যাডাম আপনাকে সেই লাগে! খুব শীঘ্রই আমি আপনাকে
আমার মনের কথা জানাবো।
#চলবে