গল্পঃ #ভালোবাসি_প্রিয়_তোমাকে
পর্বঃ ০৭
নিঝুম জামান (ছদ্মনাম)
সকালে নিরা ঘুম থেকে উঠে দেখে আসার ঘরে বড়রা বসে আলাপ-আলোচনা করছে। খুব সম্ভবত
ওর বিয়ে নিয়েই। নিরাকে দেখে ওর খালামনি বলে
উঠল,
‘নিরা আম্মু, সকলে তোমার মতামত জানার জন্য অপেক্ষা করছে। ‘
নিরা গতকাল রাতে অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ও এই বিয়েতে রাজি। ওর পরিবার তো কখনোই ওর খারাপ চাইবেনা। ওকে তো সবাই অনেক ভালোবাসে। কিন্তু ও এখন কীভাবে সবার সামনে বলবে ও বিয়েতে রাজি। ওর যে ভীষণ লজ্জা লাগছে।
‘নিরা আম্মু, কিছু একটা তো বলো। তোমার উত্তর হ্যাঁ হলে হ্যাঁ বলে দাও আর না হলে না বলে দাও।’
‘খালামনি তোমরা সবাই আমাকে অনেক ভালোবাসো, আদর করো। তোমার আমার জন্য যা ভালো মনে হয় তাই করো। আমার কোন আপত্তি নেই। শুধু বিয়ের পরে আমাকে পড়তে দিলেই হবে। ‘
নিরার কথা শুনে ওর মা সালেহা বেগমের মুখে বিশাল হাসি ফুটে উঠল। রুমের সকলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে উঠল।
.
.
নিরা সকালের নাস্তা করে দীঘির পাড়ে এসে বসে আছে। ওর ভীষণ জানতে ইচ্ছা করছে, ওর বিয়েতে
রাজি হওয়ার কথা শুনে নিষানের রিয়েকশন কেমন
হবে? কে জানে নিষান কই আছে? অন্যসময় দীঘির
পাড়ে এসে বসলেই তো নিষান এসে জ্বালাতন করে।
মনে মনে নিরা নিষানকে মিস করা শুরু করল।
অনেকক্ষন দীঘির পাড়ে বসে থেকে নিরা ঘরে চলে গেল। ঘরের সকলের মুখের হাসির রেশ দেখা যাচ্ছে।
সকলে বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে আগামী সপ্তাহেই নাকি
বিয়ে। নিষানের মা ছোট ছেলের বউ ঘরে তুলতে
দেরী করতে চান না। তাই এতো জলদি বিয়ের আয়োজন করা। বাড়ির সকলে ঠিক করেছে
নিরার মামাবাড়ি থেকেই নিরার বিয়ের অনুষ্ঠান করা হবে৷ তবে একবারে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন নিয়ে
ঘরোয়াভাবে। একারণে নিষানের বাবা-মা আজকেই
তাদের বাড়ি ফিরে গেছে। লিজাকেও যেতে বলেছিল
কিন্তু ও বলেছে, মেয়েপক্ষ হিসেবেই ও দায়িত্ব পালন করবে। লিজার কাছ থেকেই কথায় কথায় জানতে
পারল নিরা, নিষানকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে
ওর বাবা ওকে মুন্সিগঞ্জে পাঠিয়েছে। নিষানের কথা জানতে পেরে নিরা মনে মনে ভাবল,
‘এইজন্যই জনাবের কোনো খবর- পাত্তা নাই।’
এরমাঝেই নিরার ফোনে একটা ম্যাসেজ আসল। নিরা সেটা ওপেন করতেই দেখতে পেল, সেখানে লিখা- ‘অবশেষে বিয়েতে রাজি হলে, এখন থেকে তোমাকে বউ বলে ডাকব।’
ম্যাসেজ পড়ে নিরা মুচকি হাসল। এতোক্ষণে জনাব খবর জেনেছে।
.
.
পরদিন কাজ শেষে বিকালে নিষান লিজাদের বাড়িতে আসল। ওর ভীষন ইচ্ছে করছিল নিরাকে নিয়ে একাকী কোথাও ঘুরতে যাওয়ার। কিন্তু নিরার পরিবার তো বিয়ের আগে ওকে একাকী কোথাও
ছাড়বে না। তাই নিষান ওদের পুরো গুষ্টিসুদ্ধ নিয়ে
ঘুরতে গেল। গুষ্টি বলতে ওর সব কাজিনরা।
ওরা সবাই মিলে একটা পার্কে ঘুরতে গেল। নিরা নেভী ব্লু রংয়ের একটা থ্রি পিস পড়েছে। নিষানও ওর সাথে ম্যাচিং করে নেভী ব্লু রংয়ের একটা পাঞ্জাবি পরল। ঘোরাঘুরি শেষে নিষান নিরাকে ডাকল একাকী কিছু কথা বলার জন্য। নিরার একা যেতে লজ্জা লাগছিল তাই রিমিকে সাথে নিতে চাইল।
কিন্তু লিজা রিমিকে ওর সাথে যেতে দেয় নি।
নিরা নিষানের কাছে যেতেই নিষান ওর হাতে একশ লালগোলাপ দেয়, সাথে একটা লাভ কার্ডও দেয়। সেখানে লিখা, ‘সারাজীবন থাকতে চাই তোমার সাথে, #ভালোবাসি_প্রিয়_তোমাকে।’
নিরা ফুল আর লাভ কার্ড নিতে খুব লজ্জা লাগছিল।
কিছুক্ষন চুপ থেকে নিষান ওকে বলে উঠে,
‘নিরা, কীভাবে ঠিক বলা উচিত আমি জানি না। তবুও বলছি, আমরা দুজনে তো নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছি। আগের কথা ভুলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। জানি এই ক্ষমা চাওয়াটা আমার আরও আগে চাওয়া উচিত ছিল। তোমার সাথে সেদিন খুব বাজে বিহেব করেছি। তোমার একা একা মেলায় যাওয়া দেখে সেদিন খুব রাগ হয়েছিল। তাই সাথে আন্টির কাছেও নালিশ দিয়েছিলাম। তবে ভাবি নি আন্টি যে তোমার সাথে এত রুড বিহেব করবে, যার জন্য আমি দায়ী ছিলাম।
যাইহোক, নিরা তুমি আমাকে আগের সব ভুলে ক্ষমা করবে না?’
‘সেদিন আপনার ওপর আমার ভীষণ রাগ হয়েছিল। এখনো মনে পড়লে রাগ লাগে। আপনাকে মাফ করতে পারি তবে একটা শর্ত আছে? ‘
নিষান এক ভ্রু উচু করে বলল,
‘কি শর্ত?’
‘আমাকে একটানা ১০০ বার সরি বলতে হবে। তাহলেই আপনাকে মাফ করে দিব নিষান ভাইয়া। ‘
‘নিষান ভাইয়া? আমি কি এখনো তোমার ভাইয়া লাগি?’
নিরা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
‘ভাইয়াই তো! এখনো তো জামাই হন নাই। ‘
‘ভাইয়া বললে কলিজায় গিয়ে লাগে।’
‘ইশ! ঢং। ভাইয়া থেকেই তো সাইয়া হয়ে গেলেন। এখন কি ভাইয়া না ডেকে চাচা বলে ডাকব।’
কথাটা বলে লজ্জায় নিরা দুহাত দিয়ে চোখমুখ ঢেকে ফেলল।’
‘থাক আর লজ্জা পেতে হবে না।’
‘এই যে, আপনি কিন্তু আমাকে ১০০ বার সরি বলেন নি। এড়িয়ে যাচ্ছেন।’
‘আরে না, এড়িয়ে যাব কেনো? এখনি বলছি-
“সরি,সরি,,সরি,,সরি,,,সরি,,সরি,,সরি,সরি,, সরি………
এভাবে নিষান নিরাকে একটানা সরি বলেই যাচ্ছে। ৩৬ বার সরি শোনার পরে নিরার আর সরি শুনতে ভালো লাগছিল না। কিন্তু শাস্তি তো শাস্তিই।
নিরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিষানের ১০০ বার সরি
বলা গুনল। নিষানের সরি বলা শেষ হলে হাঁপাতে থাকে আর বলতে লাগে,
‘সারাজীবনেও মনে হয় এতবার সরি কথাটা বলি নাই। আজকে যতবার বললাম। খুব শিক্ষা হয়েছে আমার। এই শাস্তি সারাজীবন মনে থাকবে যার কারনে আমিও ভালো ছেলে হয়ে থাকব।’
নিরা দাঁত বের হেসে বলে,
‘গুড মনে থাকে যেনো। আপনাকে এবারের মত মাফ করলাম। চলুন এবার আমরা ওদের কাছে ফিরে যাই।’
‘নিরা, তোমাকে একটা কথা বলি?’
‘বলুন।’
‘আমার খুব ইচ্ছে তোমার সাথে পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটার। আমার ইচ্ছেটা পূরণ করবে?’
‘অবশ্যই, করব। তবে আজকে না। এখন তাড়াতাড়ি
ওদের কাছে ফিরে যাই, ওরা কি ভাববে? কতক্ষন ধরে এখানে এসেছি? আমার খুব লজ্জা করছে।’
নিষান নিচুস্বরে বলল, ‘ আচ্ছা। ‘
.
.
বাড়িতে আসার পথে সবাই রেস্টুরেন্ট থেকে খেলেও শুধু নিরা খায় নি। ও একা রাস্তার ধারে বসে তিন প্লেট ফুচকা খেয়েছে। সবাই ওকে রাস্তার ধারের
ফুচকা খেতে নিষেধ করেছে তবুও ও কারো কথা শোনে নি। তিন – তিন প্লেট ফুচকা খেয়েছে। নিষান ওদের সবাইকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে নিজেদের বাড়িতে চলে গেল। তারও তো বাড়িতে বিয়ে নিয়ে অনেক কাজ আছে। এদিকে নিরা কারো কথা না শুনে তিন প্লেট ফুচকা খেয়েছে এখন বাড়িতে আসার পরে ওর পেটব্যথা হচ্ছে।
.
পরদিন সকালে নিরা ওর ছোটবোন মিরাকে খুঁজছে দোকানে পাঠাতে ওরস্যালাইন কিনার জন্য।
কিন্তু মিরা একা যাবে না, ওর সাথে কাউকে পাঠাতে হবে। নিরা অনেক বলে-কয়ে মিরাকে ২০ টাকা ঘুষ দিয়ে দোকানে পাঠালো। যাওয়ার আগে বলে দিল,
মিরা যাতে পরিচিত কাউকে না বলে যে নিরার ফুচকা খেয়ে ডায়রিয়া হয়েছে।
কিন্তু মিরা সে তো ছোটবোন। তার কাজ বড়বোন যা বলতে নিষেধ করে তাই সকলের কাছে প্রচার করে বেড়ায়।
দোকানে যাওয়ার পথে পরিচিত যেই জিজ্ঞেস করেছে, ‘মিরা কই যাও?’
মিরাও রচনা আকারে উত্তর দিয়েছে, ‘কালকে নিরা আপু রাস্তার ধারের ফুচকা খেয়ে ডায়রিয়া হয়েছে। ওর অবস্থা বেশি ভালো না তাই স্যালাইন কিনতে
দোকানে যাচ্ছি। ‘
স্যালাইন কিনে মিরা বাড়ি ফিরতে ফিরতে সকলে যেনে গেল নিরার ডায়রিয়া হয়েছে। বাড়ির সকলে
এসে নিরার সেবাযত্ন করতে লাগল নতুন বউ এখনই অসুস্থ হয়ে গেলে কি হবে? আবার পাশাপাশি বকাও খেল একসাথে তিন প্লেট ফুচকা কেনো খেয়েছে।নিরা সেই রেগে আছে
মিরার ওপর। মিরা স্যালাইন নিয়ে ঘরে আসতেই
নিরা ওর মাথায় দুটো গাট্টা মে’রে বলল,
‘যাওয়ার সময় তোকে এই শিখিয়ে দিয়েছিলাম? ক্লাস ফোরে পড়িস এখনো কি কিছু বুঝিস না?’
মিরা ঠোঁট উল্টে উত্তর দিল,
‘আমাকে তো তোমার মোবাইলে গেমস খেলতে দাও না তাই সবার কাছে বলে দিয়েছি। একদম ঠিক করেছি। নিষান ভাইয়া থাকলে বেশি ভালো হতো তাকেও বলে দিতাম।’
নিরা চোখ রাঙিয়ে মিরার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘তুই ছোটবোন না আর কিছু। তোকে যে দোকানে যাওয়ার জন্য ২০ টাকা দিলাম সেটা? আর কাউকে
আমার কিছু বলবি তো তোর জিভ কে’টে
দিব বলে দিলাম।’
‘এহ! তুমি জিভ কা’টবে আমি তোমাকে ছেড়ে দিব নাকি?’
নিরা মুখে ভেংচে বলল,
‘হইছে হইছে, যা ছোটবোন নামক বান্দর।’
‘তোমার থেকে সুন্দর আছি। তুমি যে হনুমান, বানররা হনুমান থেকে অনেক সুন্দর। ‘
‘হুম, তোর মত বান্দরের রূপ বাইয়্যা পড়ে। তোরে দেখলে বান্দরও দৌড়ায় পালাইব।’
মিরা নিরার কথার বিপরীতে কিছু বলবে তার আগেই খাটে থাকা নিরার ফোনটা বেজে উঠল। নিরা ফোনটা ধরার মিরা এক লাফে ফোনটা রিসিভ করে বলে উঠল,
‘আপনি কি নিষান ভাইয়া? না হলেও চলবে। শোনেন নিরাআপু ডায়েরিয়ার রোগী। অবস্থা বেশি ভালো না।
নিরা মিরার কাছ থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে মুখ চেপে ধরার আগেই মিরা সবটা বলে ফেলল। ও প্রান্তে থাকা ব্যাক্তিটি বুঝতে পেরেছে কিনা কে জানে? লজ্জায় নিরা তাড়াতাড়ি ফোন কে’টে দিল। আননোন নম্বর থেকে কল এসেছে, লাস্টে 87। তার মানে এটা নিষান ভাইয়ার নম্বর। সেদিন এটা থেকেই
মেসেজ এসেছিল।৷ নিরাও আর নম্বর সেভ করে নি।
নিরা মিরার দিকে তাকাতেই মিরা একটা শয়তানী হাসি দিয়ে বলল, ‘বলে দিয়েছি।’
‘দাঁড়া।’ বলে নিরা মিরার দিকে তেড়ে যেতেই মিরা দৌড়ে পালালো।
#চলবে
(ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়। কেমন হয়েছে জানাবেন?)