#ভালোবাসি_প্রিয়_তোমাকে
#সূচনাপর্ব
#নিঝুম_জামান
মামাতো বোনের বিয়েতে এসে একটা ছেলের
ওপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে আমার দুই খালাতো বোন রিমি আর তিন্নি। এখন ওদের ক্রাশকে দেখার জন্য আমাকে টানাটানি করে নিতে এসেছে।
আমি নিরা। মামাতো বোনের বিয়েতে এসেছি। গায়ের হলুদ উপলক্ষে এতক্ষণ সাজগোজ করছিলাম। হঠাৎ রিমি- তিন্নি দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে আমার কাছে ওদের ক্রাশের কথা বলল ছেলেটা নাকি সেই হ্যান্ডসাম। রিমি আমাকে অনুরোধ করছে ওদের ক্রাশকে পটিয়ে রাজি করাতাম ওর সাথে প্রেম করার জন্য। ওর কথা শুনে আমি ভীষণ অবাক হলাম। আজকাল ছোটবোনরাও বড়বোনদের অনুরোধ করে প্রেম করিয়ে দেওয়ার জন্য। যদিও আমি ওদের থেকে খুব বেশি বড় না।তবুও বড় তো! আমি ওদের উদ্দেশ্য বললাম,
‘তোরা দুইবোন একছেলের ওপর ক্রাশ খেয়েছিস, এখন আবার বলছিস প্রেম করিয়ে দিতে? তা একছেলে কি দুইবোনের সাথে প্রেম করবে নাকি?’
রিমি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ আরে নিরাপু, তিন্নি ক্রাশ খেয়েছে ঠিকই প্রেম করতে চায় না, বাট আমি হ্যান্ডসাম বয়ের সাথে প্রেম করতে চাই।’
‘এই তোদের কি আমাকে পাগল মনে হয়? ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি অথচ একটা প্রেম করলাম না, তুই ক্লাস টেনে পড়েই প্রেম করতে চাইছিস, বলি থাপ্পড় চিনিস?’
‘ইশ, নিরাপু তুমি এমন ভাব করছো যেন তুমি কত বড়! আমার থেকে মাত্র দুই বছরের আর তিন্নির থেকে সাড়ে তিন বছরের বড়। এটাকে বড়বোন বলে না; বলে বান্ধবী। সমবয়সী কাজিনরা বান্ধবীই হয়। বুঝছো? ছেলেটা দেখতে সেই সুন্দর । দেখলেই মন চায় প্রেমে পড়ে যাই। ‘
নিরা এক ভ্রু একটু উপরে তুলে বলল,
‘হুম, বুঝলাম। তবে তোদের মুখে ছেলেটার যেই রূপের প্রশংসা শুনলাম, মনে হচ্ছে তো আমিই বুঝি প্রেমে পড়ে যাচ্ছি। বাই দ্য ওয়ে, যদি তোর সাথে প্রেম করিয়ে দিতে গিয়ে আমার সাথেই তোর ক্রাশ বয়ের প্রেম হয়ে যায় তখন কি করবি তুই? ‘
রিমি কিছুটা চিন্তিত মুখে নিরার দিকে তাকালো। তারপর বলল,
‘আরে ধুর। আমি আমার নিরাপুকে খুব ভালো করেই চিনি। সে কখনোই এমন করবে না।’
নিরা হাহাহা করে হেসে দিয়ে বলল,
‘এত বিশ্বাস ভালো না বনু।’
‘ কিন্তু আমি তোমাকে বিশ্বাস করি নিরাপু। প্লিজ চলো ওই ছেলের কাছে নিয়ে যাই তোমাকে।’
‘না রে, রিমি আমি কোনো ছেলের কাছে গিয়ে তোর কথা বলতে পারব না। নিজেকে ছ্যাঁচড়া মনে হয়।’
‘আরে এখানে ছ্যাঁচড়ার কি আছে? তুমি তো আর প্রেম করবে না।’
আমি ওদের ক্রাশের কাছে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই। ওদের কথার প্যাঁচে ফেলে তাড়ানোর চেষ্টা করছি৷ কারণ এই জীবনে একজনের প্রেমের ডাকপিয়ন হয়ে অনেক শিক্ষা হয়েছিল। মায়ের কাছে খুব মার খেয়েছিলাম।
কিন্তু রিমি তো নাছোড়বান্দা। আমাকে ও ওর ক্রাশকে দেখাবেই। এক প্রকার বাধ্য হয়েই রিমির
সাথে গেলাম। হলুদের স্টেজের কাছাকাছি যাওয়ার
পরে রিমি আঙুল দিয়ে দেখাল,
‘ওই যে নিরাপু, ওই ফর্সা ছেলেটা। আকাশি রংয়ের পাঞ্জাবি পরণে।’
নিরা ছেলেটার দিকে এক নজর তাকিয়ে বলে উঠল,
‘সর্বনাশ করেছে! এতো নিষান ভাইয়া। আমি তোর প্রেমের প্রস্তাব নিয়ে যেতে পারব না।’
নিরার কথা শুনে রিমির চোখ-মুখে খুশির আভাস দেখা গেল। সে বলল,
‘ নিষান, সুইট নেইম! নিরাআপু, তুমি এই ছেলেকে আগে থেকে চিনো?
তাহলে তো কথাই নাই। আপু তাড়াতাড়ি যাও না তার কাছে প্লিজ। ‘
নিরা রিমির দিকে চোখ রাঙিয়ে বলল,
‘আমি ওনাকে অনেক আগে থেকেই চিনি। দুনিয়াতে এতো পোলা থাকতে তোর ওনার দিকেই নজর গেলো?’
‘কেনো নিরাপু? তুমি কি ওনাকে ভালবাসো?’
কথাটা বলে উঠল তিন্নি।
তিন্নির কথা শুনে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।আমি ওকে কিছুটা রাগী স্বরে বললাম,
‘ওনাকে ভালোবাসতে যাব কেনো? ওনার মত বদরাগী পোলা দুনিয়ায় দুইটা নাই। সাথে আস্ত ডেভিল। জানিস ওনি আমাদের মামাতো বোন লিজা আপুর একমাত্র ছোট দেবর। লিজা আপুর বিয়েতে যখন এসেছি তখন ওনাকে দেখেছি সাথে ওনার ডেভিলগিরিও দেখেছি। তোরা তো তোদের পরীক্ষার জন্য লিজাআপুর বিয়েতে আসতে পারিস নি। তাই চিনিস না। এই নিষান ভাইয়ার কারণে মায়ের হাতে
সকলের সামনে মার খেয়েছিলাম।’
‘আগে তো কখনো এই তোমার কাছে শুনি নি। পুরো কাহিনিটা খুলে বলো না প্লিজ। (রিমি)
‘আমাদের কলিজার টুকরো মাইশা আপু, যার মাথায় দিনরাত প্রেমের চিন্তা ঘুরে সে লিজাআপুর বিয়েতে এসে তোদের হ্যান্ডসাম ক্রাশবয় আই মিন
নিষান ভাইয়ার ওপর ক্রাশ খেয়েছে। তোদের মত মাইশা আপুও আমাকে তার প্রেমের প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। এক টুকরো কাগজে কি জানি লিখে দিয়ে দূর থেকে নিষান ভাইয়াকে দেখিয়ে বলেছিল
তাকে দিয়ে আসতে। আমি আগে-পিছে কিছু না ভেবে তার কাছে কাগজটা দিলাম। আমি উনাকে বললাম যে আমার এক আপু আপনাকে এই চিঠি দিয়েছে। তিনি একনজর আমাকে দেখে কাগজ
পড়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল, তোমার মা কই? আমিও সরলমনে তাকে আমার মায়ের কাছে নিয়ে যাই। উনি কাগজটা আমার মায়ের হাতে দিয়ে বলে, দেখুন আন্টি আপনার মেয়ের মাথায় এই বয়সেই কিসব ঘুরে? মাকে আমি বোঝানোর ট্রাই করলাম
আমি না চিঠিটা মাইশা আপু ওনাকে দিয়েছে। মাকে তো চিনিসই, সবার সামনে আমাকেই থাপ্পড় লাগিয়ে
ধমকাতে লাগল।
এরপর থেকে এই বদরাগী পোলার থেকে আমি দশহাত দূরে থাকি। যদিও দেখতে ভালো, কিন্তু এক নাম্বারের বদ।’
রিমি-তিন্নিকে কাহিনি বলতে বলতেই দেখি নিষান ভাইয়া আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তাকে দেখে আমরা তিনজনই ভয় পেয়ে গেলাম।। তার নামে এতোক্ষণ যেসব কথা বলছিলাম তা কি তিনি শুনে ফেললেন নাকি? আমাদের সামনে এসে
একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন,
‘নিশ্চয়ই আমাকে নিয়ে কথা বলছিলে? বেশ কিছুক্ষন খেয়াল করে দেখলাম আমার দিকেই তিনজন হাঁ করে তাকিয়ে ছিলে?’
নিরা মুখ ভেংচে উত্তর দিল, ‘আপনি কোথাকার কোন সেলিব্রিটি যে আপনার দিকে তাকিয়ে থাকব?
আমরা স্টেজটা দেখছিলাম। ‘
নিষান মুচকি হাসি হাসল, নিরার সাথে তর্কে জড়ালো না। অথচ নিষান অনেক যাবত খেয়াল করে দেখেছে নিরা আর ওর সাথেরগুলো ওকেই দেখছিল। নিষান গলাটা কেশে বলে উঠল,
‘ভাবী ফোন দিয়েছিল, বলেছে আমার আশেপাশে কোন সুন্দরী রমণী থাকলে তার কাছে পাঠাতে?
তো আমার চোখের সামনে তোমরা আছ, তাই তোমাদের বললাম। ‘
‘কি কারণে লিজা আপু যেতে বলেছে?’ (নিরা)
‘গাঁয়ের হলুদের বউকে চান্দিনা ধরে স্টেজে আনার জন্য, সাথে ভিডিও + এক গাদা ছবি তোলার জন্য। ‘
‘ওহহ, আচ্ছা। ‘
আমরা বউয়ের চান্দিনা ধরার উদ্দেশ্য হাঁটা দিলাম। রিমি-তিন্নি কিছুটা এগিয়ে আর আমি ওদের থেকে একটু পেছনে।হঠাৎ পেছন থেকে কে যেনো আমার হাতটা টেনে ধরলো। তাকিয়ে দেখি নিষান ভাইয়া। আমি ওনার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই তিনি বললেন,
‘তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। এতটা সুন্দর লাগছে যে ভাষায় বর্ণনা করতে পারব না।’
ওনার মত মানুষের মুখে আমার সৌন্দর্যের প্রশংসা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। তাকে কিছু বলব এমন সময় দেখি মা…
(ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়।)
#চলবে?