#ভালোবাসি_বুঝে_নাও??
#পর্ব_১৫,১৬
#সুমাইয়া_সুলতানা _সুমী(writer)
১৫
রাতে ছাদে বসে বসে ভাবছে মেহরাব। কি হতে পারে মাহির প্রশ্নের উত্তর,,, আজব প্রশ্ন একি রকম দেখতে দুটো ফুলের মধ্যে থেকে আমি কীভাবে মাহি কোনটা জানবো,, উফ।
তোর ভালোবাসা যদি সত্যি হয় তুই যদি ওকে সত্যি নিজের সব টুকু দিয়ে ভালোবাসিস তাহলে অব্যশই তুই চিনতে পারবি (পিছন থেকে মেঘ বলল)
কি বলছিস,, তুই অন্তত এই কথা বলিস না, আর কেউ না জানুক তুই তো জানিস আমি মাহিকে কতটা ভালোবাসি (মেহরাব)
তাহলে এত চিন্তা করছিস কেনো?? ঠান্ডা মাথায় ভাব দেখবি ঠিক পারবি,,, আচ্ছা তুই কি একটা জিনিস ভেবে দেখেছিস??(মেঘ)
কি??
মাহি প্রশ্নের মধ্যে কিন্তু অনেক কিছু বলে দিয়েছে তোকে (মেঘ)
যেমন??(মেহরাব বলল)
আরে বুদ্ধু একবার ভালো করে প্রশ্ন টা ভাব তোরা তিনজন মেঘলা তুই মাহি বেড়াতে গিছিস পার্কে গিয়ে কিন্তু বাদামটা তুইও আনতে পারতি কিন্তু না মাহি সেখানে মেঘলাকে পাঠিয়েছিলো তারপর সেখানে তুই আর মাহি একা ছিলি,, আর মাহি ফুলের মধ্যে থেকে ওকেই কেনো বাছতে বলল মেঘলা কেউ তো বাছতে বলতে পারতো কেননা মেঘলা তোর বোন,, কিন্তু না মাহি তোকে ওকেই খুঁজে নিতে বলেছে তারমানে বুঝতে পারছিস??(,,,(লেখিকা;সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী)মাহি তোকে পরিক্ষা করছে যে তুই ওকে ভালোবাসিস কি না আর যদি বাসিসও তাহলে আদৌ কতটুকু ভালোবাসিস এবার বুঝলি??(মেঘ)
আরে বাবা বলিস কি এতটুকু মেয়ের মাথায় কত প্যাচ দেখেছিস?? তারমানে ও বোঝে যে আমি ওকে ভালোবাসি ওকে চাই তবুও ও না বুঝার ভান করে থাকে বাবাগো কতবড় শেয়ানা (মেহরাব)
হুৃম ভাই মেয়েরা এমনি ওরা চাই যে বাবার পরে যে ওদের ভালোবাসবে সে ঠিক ওকে কতটা সুখে রাখতে পারবে কতটা ভালোবাসতে পারবে,, বাবার মতো ঠিক কতটা আগলে রাখতে পারবে,,, তাই জন্যই তো ওরা বুঝেও না বোঝার ভান করে ওরা দেখতে চাই যে,,, যে ওকে ভালোবাসে বলছে সে ওর জন্য ঠিক কি করতে পারে। (মেঘ)
হুম বুঝলাম,,, আর এরপর কি করতে হবে সেটাও বুঝলাম,,, এখন চল ঘুমাই কালকে তো আবার তোর বিয়ে কত কাজ আছে পরশোদিন আবার ঢাকা ফিরতে হবে সকাল সকাল,,, অফিসে অনেকে কাজ জমে গেছে ঢাকায় ফিরে তো শ্বাসও নিতে পারবো না এতো কাজ (মেহরাব)
হুম আমারো তো থানায় অনেক কাজ জমা হয়ে গেছে ছুটি নিয়েছি তবুও কাজ তো আর বসে থাকবে না,, যেয়ে সেই কাজ করতেই হবে, এখন চল (এরপর দুজন নিচে চলে গেলো,,,,)
সকালে,,,,
কলপাড়ে দাড়িয়ে হাতে ব্রাশ নিয়ে ব্রাশ করছিলো মাহি ঠিক তখনি কেউ পিছন থেকে বলল।
এই পিচ্চি (নেহাল)
মাহি মুখ থেকে থু থু ফেলে পিছনে তাকিয়ে দেখলো নেহাল দাড়িয়ে আছে।
আপনি??এখানে কীভাবে??
বারে আমি আসবো না তো কে আসবে, আমি হলাম তোমার মেঘ ভাই এর একমাত্র ছোট ভাই নেহাল।
এতোদিন তো দেখিনী আজকে হঠাৎ করে কোথা থেকে উদয় হলেন।??
আরে আমার ভার্সিটীতে কিছু কাজ ছিলো তাই আসতে পারিনী,,, আর আমি কাল রাতেই এসেছি,, শুনলাম তোমরা নাকি এ কদিন অনেক মজা করেছো,, ইস আমি মিস করে গেলাম।
মাহি কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেহরাব ওকে ডাক দিলো।
তোর ওখানে কি?? এগিকে আয় ফুপি ডাকছে তোকে (রেগে বলল মেহরাব)
আ,,,আসছি ভাইয়া,, এই বলে মাহি চলে গেলো।
বুঝলাম না আমি যখনি মাহির সাথে কথা বলতে যায় তখনি মেহরাব ভাই এমন কেনো করে (নেহাল মনে মনে ভাবতে ভাবতে চলে গেলো)
এদিকে,,, মাহি বারান্দা দিয়ে হাঁটছে আর একা একা বকবক করছে।
কই মা তো আমায় ডাকছে না তাহলে ভাইয়া কেনো বললো যে মা আমায় ডাকছে শুধু শুধু মায়ের কাছে আমায় বকা শুনালো। মাহি যখন এসব ভাবছিলো তখনি কেউ ওর হাত ধরে টেনে একটা দেওয়ালের সাথে মিশে দাড় করালো।
এই কেরে (এই বলে যেই মাহি সামনে তাকালো দেখলো মেহরাব রাগি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে)
কি ভাইয়া আপনি মিথ্যা বললেন কেনো?? মা তো আমায় ডাকিইনি (মাহি)
নেহাল এর সাথে তোর এত কিসের কথা হুম (রেগেমেগে বলল মেহরাব)
আরে এমন কেনো করছেন আমি তো শুধু ভদ্রতার খাতিরে কথা বলছিলাম এই আর কি।
তোকে এতো ভদ্র না হলেও চলবে ওকে,, আর শোন ওর থেকে এবং বাকি সব ছেলেদের থেকে দূরে থাকবি বুঝলি?? নয়ত তোর এই গাল আর গাল থাকবে না মেরে খাল করে দেবো,,, এই বলে মেহরাব চলে গেলো আর মাহি ওখানে দাড়িয়েই বলতে লাগল।
বলবো বলবো একশো বার কথা বলবো,, নিজে তো ভালো করে কথা বলেই না আবার অন্য কেউ বললে কেমন খারুচ এর মতো করে,,,
উফ সব রুমে শুধু মানুষ আর মানুুষ একেবারে মানুষ এ গিজগিজ করছে,, কোথায় গিয়ে যে একটু রেস্ট নিই,, সারারাত জার্নি করে এসে আমি অনেক ক্লান্ত একটু ঘুমালে ভালো হতো (সব রুম দেখতে দেখতে বলল নেহাল,, তখনি একটা খালি রুম পেলো সেই রুমে কেউ নেই শুধু বিছানায় চাদরে মোড়ানো কিছু পড়ে আছে,, নেহাল ভেবেছে ওটা কোল বালিশ তাই বলল)
যাক বাবা অবশেষে একটা খালি রুম পেলাম সাথে তো আবার কোলবালিশ ও আছে দেখছি যায় শুয়ে পড়ি।
এই বলে নেহাল গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো সাথে ওটা কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে।
এদিকে,,, বিছানায় চাদর মুরি দিয়ে আরামে ঘুমিয়ে ছিলো মীরা তখনি কেউ ওকে আস্টেপিস্টে জরিয়ে ধরে আছে,, ও নরতেও পারছে না দম যেনো আটকে যাবে যাবে ভাব তখনি গায়ের সমস্ত জোর দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে মীরা উঠে বসল।
আরে কোলবালিশ দেখি আবার ধাক্কাও মারে এই বলে নেহাল সামনে তাকিয়ে দেখলো একটা মেয়ে বসে আছে তা দেখে নেহাল চেচিয়ে উঠলো।
আআআআআআআআআআআআআ(নেহাল)
আআআআআআআআআআআআআ(মীরা)
এই মেয়ে কে তুমি?? আর এখানে কি করছো?? এভাবে চিল্লাচ্ছো কেনো??(নেহাল)
আপনি কে হ্যাঁ?? আর এভাবে অসভ্যর মতো আমায় জরিয়ে ধরেছিলেন কেনো। আর আপনি চেচালেন তাই আমিও চেচালাম (মীরা)
তারপর দুজনের মাঝে ছোট খাটো একটা ঝড় বয়ে গেলো,,, কেউ কারো থেকে কম না, দুজন ঝগড়া করে দুদিকে চলে গেলো আর যাওয়ার আগে থ্রেট দিয়ে গেলো যে পরে দেখে নেবে।
,,দেখতে দেখতে দুপুর গরিয়ে বিকেল,,আর বিকেল গরিয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেলো, সবাই কাজে ব্যাস্ত গ্রামের মানুষ জনও সবাই আসতে শুরু করেছে,, পুরো বাড়ি যেনো গম গম করছে,, মেঘলাকে সাজানো হচ্ছে আজকে বিয়ে হবে তারপর কাল একদম ভোরে সবাই ঢাকা রওনা দেবে,৷,,
কই গো তোমাদের সাজানো হলো?? বর তো এসে পরবে (মাহির মা)
কি আম্মু তুমি কি যে বলো মেঘ ভাইয়ারা তো এখানেই ওনারা আবার কীভাবে আসবে??(মাহি)
বাহ আমার মেয়েকে আজ কি সুন্দর লাগছে একদম বউ বউ…
বারে ছোট ফুপি শুধু তোমার মেয়েকেই সুন্দর লাগছে আর আমাদের বুঝি বান্দর লাগছে?? (ইশিতা)
না না আমার সব গুলো মেয়েকেই ভীষণ সুন্দর লাগছে।
মেহরাব আজকে গোল্ডেন কালার এর শেরোআনি পরেছে,, মেঘ ও সেমই পরেছে দুই বন্ধ একেবারে সেম পোশাক।।
কি বন্ধু আজতো আমি নিশ্চিত মাহি তোকে দেখে ফিদা হবেই ১০০% শিওর।
হুম??? ফিদা না ছাই আমার সাথে দেখা হলেই শুধু বলছে মেহরাব ভাই উওরটা তো দিলেন না,,, কি আজব মেয়ে আজব প্রশ্ন করেছে,, কি আজব উওর কে জানে।
হুম এই আজব মেয়েকেই তো আপনি এতো ভালোবাসেন।
হয়েছে তোর ঙ্গান দেওয়া?? এখন চল সবাই বাইরে অপেক্ষা করছে।
তারপর দুজন বাইরে চলে গেলো মেহরাব স্টেজ এর দিকে যেতে গেলে দেখলো মাহি বারান্দায় দাড়িয়ে কি যেনো করছে তাই ও মেঘকে যেতে বলে বারান্দার দিকে গেলো।
এই তোরা কে কোনটা বলতো?? আমি তো কাউকেই চিনতে পারছি না,, তোরা দুজন কোনো চিন্হ রাখতে পারিস না?? তাহলে আমি চিনতে পারতাম। (আসোলে মাহি স্টেজ এর দিকে যেতে গেলে দেখলো যে রকি আর রাকিব দুজন সেম একি কালার এর জামা পড়ে একি রকম সেজে যাচ্ছে তাই মাহি ওদের ডেকে বলল)
কি আপু তুমি যদি না চেনো তাহলে আমরা কি বলবো বলো,, আচ্ছা শোনো আমি হলাম রকি আর ও হলো রাকিব বুঝেছো??
নারে ও বুঝবে না মাথায় গোবর পোড়া তো তাই (পিছন থেকে মেহরাব বলল)
মাহি পিছনে তাকিয়ে মেহরাবকে দেখে তো হা হয়ে গেলো,, কি সুন্দর লাগছে লোকটাকে একদম রাজকুমার এর মতো।
আর মেহরাব তো মাহির দিকে হা করে তাকিয়েই আছে প্রথম থেকে,, এই মেয়েটা যে আর কত ভাবে ওকে মারবে তা এই মেয়েই জানে,, মনে চাচ্ছে একদম রসগোল্লার মতো টুপ করে খেয়ে ফেলি উফ আমার পরীটা (মনে মনে বলল মেহরাব)
আচ্ছা এখন অনেক চেনা চেনি হয়েছে এখন চল সবাই বিয়ে পড়ানো হবে। তারপর মেহরাব মাহির হাত ধরে স্টেজ চলে গেলো,, অনেক সুন্দর ভাবে বিয়ে সম্পূর্ণ হলো,, বিয়ে পরাতে পরাতে অনেক রাত হয়ে গেলো তারপর বিয়ে শেষ হওয়ার পর বাধলো আরেক কান্ড।
চলবে,,,,,,
#ভালোবাসি_বুঝে_নাও??
#পর্ব_১৬
#সুমাইয়া_সুলতানা _সুমী(writer)
.
তোমরা এসব কি শুরু করলে বলো তো?? এতো রাতে, আর মেহরাব ভাই তুই কিছু বল ওদের (মেঘ)
আমি কি বলবো ভাই,, তুই জানিস না?? লেডিস ফাস্ট তাই আমার এখানে কিছুই বলার নাই (মেহরাব)
কি ভাইয়া আপনি যান না বাসর ঘরে আপনাকে আটকাচ্ছে কে??(মাহি)
হ্যাঁ সারাদিন কত খাটা খাটনি করেছেন এখন তো একটু রেস্ট নেওয়ার সময় তাই না??? তো যান আপনি রুমে গিয়ে সুন্দর করে ঘুমিয়ে পড়ুন(ইশিতা)
আরে আমার বোউন বিয়ের পর বউ ছাড়া বাসর ঘরে গিয়ে কি করবো মাছি মারবো? তোমরা তো আমার বউকেই দিচ্ছো নাহ(মেঘ)
মেঘের কথাশুনে মেঘলা লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিলো,,,, তারপর মেহরাব বলল।
আহ মেঘ এসব কি বলছিস তুই?? এখানে আমি আছি তুই আমার সামনে এসব বলছিস লজ্জা করছে না তোর??(মেহরাব)
ধূর ছাই রাখ তো তোর লজ্জা এখানে আমার বউ চুরি হয়ে যাচ্ছে আর তুই আছিস লজ্জা নিয়ে,,, মাহি বোন আমার পিল্জ আমার বউকে আমায় দিয়ে দাও,,, সময় কিন্তু আমারো আসবে তখন দেখাবো মজা (মেঘ)
এই এ তো দেখি রিতীমত আমাকে থ্রেট দিচ্ছে,, যাও বা ভাবলাম আপুকে দেবো কিন্তু এখন আর দেবো না,(লেখিকাঃ সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী) আর শোনেন এই খানে মানে এই গ্রামে আজকে আমাদের লাস্ট নাইট আবার কবে আসব তার ঠিক নেই তাই আমি চাই না আজকের রাতটা ঘুমিয়ে নষ্ট করতে। (মাহি)
রাতে মানুষ ঘুমাবে না তো কি করবে হা ডু ডু খেলবে??(মেহরাব)
এই তো শুরু হয়ে গেলো আরে আমি কি হা ডু ডু খেলতে বলেছি নাকি?? আমার পুরো কথাটা তো শেষ করতে দেন(মাহি)
হুম বল।
আমি বলছি কি আজকে রাতটা সবাই মিলে ছাদে বসে আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে দিলে কেমন হয়??
হমম খুব ভালো হয় তা তোমরা যাও না সবাই মিলে আড্ডা দাও মাঝখানে আমার বউকে টানছো কেনো??(মেঘ)
কি ভাইয়া বিয়ে হতে না হতেই এমন বউ পাগল হয়ে গেলেন??(মাহি)
ওদের কথা শুনে মেহরাব গলা খাক্কারি দিয়ে বলল৷
আচ্ছা অনেক কথা হয়েছে এখন চল সবাই ছাদে যায়,, মাহি যা বলল তেমনি হবে, সত্যি আজকে এখানে আমাদের লাস্ট নাইট আবার কবে আমরা সবাই এভাবে একসাথে হতে পারবো জানি না,, তাই এখন চল সবাই,, মাহি তুই আর ইশিতা মেঘলা কে চেঞ্জ করিয়ে, বালিশ আর কাথা নিয়ে উপরে আয় কেননা ছাদে তো অনেক ময়লা তাই ওগুলো বিছাতে হবে আর আমি মেঘ আর নেহাল পাটি নিয়ে আসছি ওকে।
ওকে ভাইয়া, এই চলো সবাই তারপর মাহিরা সবাই চলে গেলো।
কিরে এমন দেবদাশ মার্কা চেহারা করে আছিস কেনো? চল (মেহরাব)
আমি এর প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বো,,, তোর বিয়ের দিন না আমি মাহিকে লুকিয়ে রাখব তখন বুঝবি কেমন লাগে(মেঘ)
হাহাহা চেষ্টা করে দেখতে পারিস এখন চল।
তারপর মেহরাব মেঘ আর নেহাল রাও চলে গেলো,, সবাই চেঞ্জ করে ছাদে যাবে, বড়রা সবাই ঘুমিয়ে পরেছে সারাদিন অনেক ধকল গেছে, আবার ভোরে উঠতে হবে, তাই সকাল সকাল সবাই শুয়ে পরেছে।
নেহাল আর মেঘ পাটি নিয়ে ছাদে চলে গেছে,, মেহরাব ফোন নিতে রুমে এসেছিলো তারপর ফোনটা নিয়ে ছাদের সিঁড়ির দিকে পা বারিয়েছে।
ওই তো মেহরাব আসছে আমি ইচ্ছে করে ওর উপর পরে যাবো আর ও না চাইতেও আমার ধরবে আর আরে ওই তো মাহি কাথা আর বালিশ নিয়ে এদিকেই আসছে বাহ এতো দেখি মেঘ না চাইতেই জল,,, (মনে মনে বলে মীরা হাসলো তারপর মীরাও সিঁড়ির দিকে গেলো)
এই যে শুনুন না এগুলো একটু ধরুন না,, দেখুন আমি নিতে পারছি না,, আপুরা তো আমার উপর চাপিয়ে দিয়ে চলে গেছে,, সাহায্য করুন আমায় (দূর থেকে মাহি মেহরাবকে দেখে বলল)
একে তো দেড় ফুটের ছোট একটা বাচ্চা তুই তার উপর এতো কিছু নিয়েছিস কেনো?? (মেহরাব মাহির কাছে গিয়ে মাহির থেকে সব কিছু নিতে নিতে বলল,,)
শুনুন আমি মোটেও,,,,,(মাহি আর কিছু বলার আগেই ছাদের সিঁড়ির কাছে কিছু পড়ার আওয়াজ হলো মাহি আর মেহরাব সেদিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেলো,,, কেননা মীরা নেহাল এর উপর পড়ে গেছে, মানে নেহাল মাটিতে আর মীরা নেহাল এর উপর আর নেহাল মীরার কমর জরিয়ে ধরে আছে)
কিছুক্ষণ আগে,,,,
ছাদে মাহি আসছে না দেখে নেহাল ভাবলো মাহিকে ডেকে নিয়ে আসি তাই মাহিকে ডাকার জন্য সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিলো নেহাল,, আর তখনি মীরা মেহরাব মনে করে নেহাল কে ইচ্ছে করে ধাক্কা দেয় য়ার ফল সরূপ ওরা একে অপরের উপর..
এই আপনি তো খুব খারাপ মেয়ে দেখলেই জরিয়ে ধরতে ইচ্ছে করে??(মীরা নেহাল এর উপর থেকে উঠে জামা কাপড় ঝাড়তে ঝাড়তে বলল)
আমার নাহয় মেয়ে দেখলে জরিয়ে ধরতে ইচ্ছে করে কিন্তু আপনি কি হ্যাঁ ইচ্ছে করে ছেলেদের গায়ে পড়েন, গায়ে পড়া মেয়ে একটা (নেহাল জামা ঝাড়তে ঝাড়তে বলল)
এই মুখ সামলে কথা বলুন অসভ্য ছেলে কোথাকার।।
হুম??? কত সভ্য এলেন রে,, গায়ে পড়া মেয়ে কোথাকার।
এরকম এক দুই কথায় ওদের মধ্যে ঝগড়া বেধে গেলো আর দূর থেকে মাহি আর মেহরাব সেটা উপভোগ করছে।
আমি কি ভাবছি বলুন তো??(মাহি)
কি??
ভাবছি ওদের দুজন কে ধরে বিয়ে দিয়ে দিলে কেমন হবে বলুন?? তারপর দুজন মিলে সারাদিন ঝগড়া করবে আর একে অন্যর চুল ছিড়বে হিহিহি অনেক মজা হবে না??
হ্যাঁ আপনার মাথায় তো খালি এসব বুদ্ধিই ঘোরা ফিরা করে,, এখন চল ওদের থামাতে হবে নয়ত আজকের রাতটাই মাটি হয়ে যাবে।
তারপর মাহি আর মেহরাব গিয়ে ওদের ঝগড়া থামালো,, তারপর সবাই মিলে ছাদে গেলো আর সারারাত আড্ডা দিয়ে ভোরের দিকেই সব ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ল,৷ মীরা তো নিহাল কে মেহরাব ভেবে আস্টেপিস্টে জরিয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে আর নেহাল ও মীরাকে মাহি ভেবে জরিয়ে ধরে রেখে ঘুমাচ্ছে। মেঘলা মেঘ এর হাতের উপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে আর মেঘ এক হাতে মেঘলাকে আগলে রেখেছে।
ইশিতা একটু দূরেই ঘুমিয়ে আছে হাতে ফোন নিয়ে,,, আর মাহি তো মেহরাব এর বুকে একদম চার হাত পা তুলে দিয়ে আরামে ঘুমিয়ে আছে,, আর মেহরাব শুধু অপলক দৃষ্টিতে তার মাহিকেই দেখে যাচ্ছে যেনো মনে হচ্ছে চোখের পলক ফেললেই মাহি কোথাও হারিয়ে যাবে।
সকাল ৮ টার দিকে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মাহিরা বেরিয়ে পড়ল যদিও ভেবেছিলো আরো সকালে বেরোবে তবুও গোছগাছ করতে করতে আবার সবার থেকে বিদায় নিতে গিয়েই দেরি হয়ে গেলো। সারা রাস্তা মাহি মেঘলা মেঘ নেহাল মীরা আর মেহরাব ঘুমাতে ঘুমাতে এসেছে আর গাড়ি ড্রাইভার ড্রাইভ করেছে নেহাল এর সাথে ড্রাইভার ও এসেছিলো।
৭দিন পর,,
ঢাকা থেকে ফিরার আজ সাতদিন হয়ে গেছে,, মেঘলা আপু ওর শশুর বাড়ি আমিও গ্রাম থেকে এসেই পড়াশুনা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে গেছি,কেননা আর কিছুদিন পরেই আমার ইয়ার চেঞ্জ পরিক্ষা তাই,,, কিন্তু একটা কথা এই সাত দিনে মেহরাব ভাই এর টিকিটুকুও দেখিনি,, কোথায় ওনি বাড়ি আছে তো?? নাকি অসুস্থ,, না না অসুস্থ হলে তো আমি জানতে পারতাম,, ওনি তো আমায় রোজ অফিস যাওয়ার আগে কলেজে পৌঁছে দিতো,, হঠাৎ করে ওনার কি হলো কি গিয়ে একবার দেখবো নাকি?? রুমে বসে এসব কথা ভাবছিলো মাহি তারপর বিছানা থেকে নেমে উড়না টা নিয়ে গায়ে ভালোমতো জরিয়ে বাইরে বেরিয়ে নিজের মা কে বলল।
মা আমি বড় মামাদের বাসায় যাচ্ছি বিকেলেই চলে আসবো,,।
আচ্ছা শোন তুই যখন ওবাড়ি যাচ্ছিসই তাহলে এটা নিয়ে যা,,, আজকে তো ইলিশ মাছ রান্না করেছি মেহরাব তো আবার এটা খেতে খুব পছন্দ করে ধর এবার যা (এই বলে মাহির মা আবার রান্না করে চলে গেলো)
মাহিও টিফিন বাটিটা হাতে নিয়ে চলল,, আজকে শুক্রবার তাই মাহি বাড়িতে নয়ত এখন তো ও কলেজে থাকত।
বাটিটা হাতে নিয়ে মেহরাবদের বাড়ির দিকে গেলো,, বাইরে থেকে কলিং বেল টা বাজাতেই রুপালি দরজা খুলে দিলো।
কিরে এতো সকাল সকাল আয় ভিতরে (মিষ্টি হেসে মাহিকে নিয়ে ভিতরে গিয়ে বলল)
আর বলো না মামি মা আজকে ইলিশ মাছ রান্না করেছে তাই ভাইয়ার জন্য পাঠিয়ে দিলো। এই নাও।
সে নবাব তো এখনো ঘুম থেকেই উঠেনি সকাল ১০ টা বাজতে চলল এখনো পরে পরে ঘুমাচ্ছে কত ডাকলাম উঠলো না যাতো মা তুই গিয়ে ডেকে নিয়ে আয়।
আমি??
হ্যাঁ তুই,, আমি ততক্ষণে টেবিলে খাবার দিই যা যা।। এই বলে রুপালি রান্না ঘরে চলে গেলো,, আমি আর কি করবো আমিও গুটিগুটি পায়ে ওনার রুমের দিকে গেলাম,, আজকে তো ওনার খবর করে ছাড়বো এতো দিন কোনো যোগাযোগ করেনি কেনো আর কি এমন রাজকার্য করছিলো যে আমার সাথে কথাও বলেনি।
এসব ভাবতে ভাবতে মাহি মেহরাব এর রুমে পৌছালো,, পুরো রুম অন্ধকার হালকা ডিম লাইট জলছে জানালা তো সব গুলোই অফ এই রুমের ভিতর থাকলে বোঝাই যাবেনা এখন দিন নাকি রাত,,, বিছানায় উদম গায়ে উপুড় হয়ে কমর পযন্ত কাথা নিয়ে ঘুমিয়ে আছে মেহরাব ভাই,, বাবা গো এত বেশি কেউ এসির পাওয়ার দেই?? আমি তো মনে হয় ঠান্ডায় জমে যাচ্ছি এনি এমন করে আছে কীভাবে,,,
আমি আস্তে করে ওনার কানের কাছে গিয়ে জোরে ওনাকে ডেকে উঠলাম।
আমার ডাক শুনে ওনি ধরফর করে উঠে বসল, চোখগুলো টকটকে লাল চুলগুলো আগুছালো,, আমি তো ওনার এমন ভয় পাওয়া দেখে হেসে কুটিকুটি হচ্ছি,,
কি ভয় পেয়েছেন?? এখন বলেন তো এতোদিন কই ছিলেন কোনো খবর নেই, আর আমার প্রশ্নের উত্তর এর কি হলো??
ওনি রেগে চোখ লাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে ধমকে বললেন,, আমি তো আর তোর মতো সারাদিন শুয়ে বসে খাই না আমার অনেক কাজ থাকে,, আর এখন একদম বিরক্ত করবি না,, সব সময় শুধু কানেন কাছে প্যান প্যান করে,,, একেবারে বিরক্ত করে মারে যত্তসব ঝামেলা,, এখনো এখানে সং এর মতো দাড়িয়ে না থেকে বেরিয়ে যা গেট আউট (জোরে চিৎকার করে বলল)
ওনার চিৎকারে আমি কেঁপে উঠলাম চোখের কোনে বিন্দু বিন্দু জল জমতে শুরু করেছে,, কি এমন করলাম যে ওনি আমায় এভাবে বলল ঠিক আছে আর আসবো না কখনোই আসবো না ওনার কাছে।(কথাগুলো মনে মনে বলে) তারপর আমি ওনার রুম থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসলাম।
চলবে?