#ভালোবাসি_বুঝে_নাও??
#পর্ব_৩৩,৩৪ শেষ
#সুমাইয়া_সুলতানা _সুমী(writer)
৩৩
আম সরি মেহরাব ভাই প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন,, আমি জানি না আমার কি হয়ে গিয়েছিলো সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি, বাবা মা ভাই সবাইকে আঘাত দিয়েছি,, আমি একটা ভুল ধারনা নিয়ে ছিলাম কিন্তু কাল রাতে আমার সেই ভুল ধারণা একজন ভেঙে দিয়েছে,,,আমি ক্ষমা চেয়েছি সবার কাছে তবুও ওদের যা কষ্ট দিয়েছি তারপরেও ওরা আমায় ক্ষমা করেছে এটাই আমার কাছে অনেক,,, আমি মাহিকে ভালোবাসি এটা ঠিক কিন্তু এটাও সত্যি আমি কখনোই আপনার মতো করে ওকে ভালোবাসতে পারবো না,,, প্লিজ ভাইয়া আমায় ক্ষমা করে দিন, আপনি তো আমার বড় ভাইয়ের মতোই ছোট ভাই ভেবে এই অধম কে মাফ করে দিন (নেহাল মেহরাব এর হাত ধরে বলল)
আমি তোমাকে অনেক আগেই মাফ করে দিয়েছি নেহাল,,, এখানে তোমার কোনো দোষ নেই একজন একজনকে ভালোবাসতেই পারে,, ভালোবাসার উপর তো আর জোর করা যায় না,, এই যে তুমি তোমার ভুলটা বুঝতে পেরেছো এটাই অনেক,,,, এই দাখো আমরা কত শত ভুল করি তবুও মহান আল্লাহ তায়লা আমাদের ক্ষমা করে দেন আর আমি তো তার সৃষ্টি করা মানুষ মাএ আমি ক্ষমা না করার কে বলো,, দেরিতে হলেও তুমি যে তোমার ভুলটা বুঝতে পেরেছো এটাই অনেক (নেহাল এর কাঁধে হাত রেখে বলল মেহরাব)
ধন্যবাদ ভাইয়া,, আর তুমি (মাহির সামনে গিয়ে) জানিনা তোমার কাছে কি বলে ক্ষমা চাইবো সত্যি অনেক লজ্জা লাগছে নিজের করা কাজের জন্য তবুও বলছি পারলে মাফ করে দিও।
ছি ভাইয়া আপনি আমার বড় হয়ে প্লিজ এভাবে আমার কাছে মাফ চাইবেন না,, আর তাছাড়া মানুষ মাএই ভুল,, ভুল হতেই পারে এতে এতো লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই, সব থেকে বড় কথা হলো নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে ভুল শিকার করাই আসল।
তুমি ছোট হলেও তোমার অনেক বুদ্ধি মাহি (নেহাল)
হুম দেখতে হবে তো বউটা কার (মাহিকে একহাতে জরিয়ে বলল মেহরাব)
নেহাল ওদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল। আমি এদের আলাদা করতে চেয়েছিলাম?? দুজনে কত খুশি কত ভালোবাসে দুজন দুজনকে,, আমার কাছে থাকলে আমি ওকে এতোটা ভালো রাখতে পারতাম না,, আর সবথেকে বড় কথা হলো ভালোবাসার মানুষ কে খুশি রাখাটাই আসল।
ভাইয়া একটা কথা বলবো??(মাহি)
অবশ্যই বলো??
বলছি যে মীরা আপু আপনাকে অনেক ভালোবাসে প্লিজ ওনাকে কষ্ট দিবেন না৷,,, আর আপনি দাড়িয়ে আছেন কেনো?? প্লিজ বসুন (মাহি)
না এখন একদম বসার সময় নেই অনেক বড় একটা ভুল হয়ে গেছে,, সেই ভুলটা এখনি না সুধরালে পরে অনেক দেরি হয়ে যাবে আমায় এখন যেতে হবে,,, ভালো থেকে হ্যাপি ম্যারেড লাইফ (মুচকি হেসে কথা গুলো বলে নেহাল চলে গেলো)
এটা কি হলো??(মাহি)
কোনটা কি হলো??
এই যে নেহাল এভাবে চলে গেলো কেনো?? আর ওনি কোন ভুলের কথা বলছিলো??
কি জানি হয়ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু।
উফ বাঁচলাম এখন মনে হচ্ছে বুকের উপর থেকে অনেক বড় একটা বোঝা সরে গেলো,,,(জোরে শ্বাস নিয়ে বলল মাহি)
তাই নাকি?? তা কই আমি তো তোর বুকের উপর কোনো কিছু দেখতে পাচ্ছি না অবশ্য তুই চাইলে দেখতেই পারি (চোখ মেরে দুষ্ট হেসে বলল মেহরাব)
ছি কি সব কথাবার্তা অসভ্য লোক একটা চলুন দেরি হয়ে যাচ্ছে (এটা বলে মাহি কপট রাগ দেখিয়ে গাড়ির কাছে চলে গেলো)
কি রাগ বাবা,, এই রাগি মেয়েটাকেই তো আমি এতো ভালোবাসি,, হায়! (বুকে হাত রেখে বলল মেহরাব)
অনেকদিন হলো ভালো করে ভার্সিটিতে যাওয়া হয় না,, নানা কিছুর চক্করে পড়াশুনা তো লাটে উঠেছে,, এতো ভুলো মন হয়েছে ছাতা টাও আনিনি আর বাইরে এতো রোদ একটা গাড়িও পাওয়া যাওয়া না,, উফ (অনেক বিরক্তি নিয়ে কথাগুলো বলতে বলতে হেঁটে যাচ্ছিলো মীরা)
মাথাটা ও কেমন ঝিমঝিম করছে,, কাটা জায়গায় হাত দিতেই নেহাল এর কথা মনে পড়ে গেলো,,, আচ্ছা ওনি কি কখনোই আমায় বুঝবে না?? আমার কপাল টাই খারাপ যখন ভালোবাসা কি বুঝতে পারলাম তখনি এমনটা হওয়ার ছিলো (মীরা কথাগুলো ভাবতে ভাবতে রাস্তার একপাশ দিয়ে হাঁটছিলো তখনি কেউ পিছন থেকে ডেকে উঠল)
হেই ময়দা সুন্দরী,,,
মীরা ডাকটা শুনে হাঁটা থামিয়ে দিলো,,বুকের ভিতর ধক করে উঠল সেই চিরোচেনা কন্ঠ,,, আমি ঠিক শুনলাম তো?? আমাকে তো এই নামে,, তারমানে ওনি (মীরার ঠোঁটের এককোণে হাসি ফুটে উঠল তারপর পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখলো নেহাল ওর থেকে পাঁচ হয় হাত দূরে বাইক নিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে আসছে)
কি ময়দা সুন্দরী তুমি কানে কম শোনো নাকি?? আগে তো জানতাম তুমি শুধু ময়দা সুন্দরী এখন তো দেখছি কানেও কম শোনো (মীরার সামনে এসে বলল নেহাল)
ওনাকে দেখে অনেক ভালো লাগছে,, তারমানে আমার কাল রাতে বলা কথাগুলো কাজে লেগেছে ওনি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে,, অনেক খুশি লাগছে, তবুও মুখে হালকা রাগ রেখে বললাম)
আমি মোটেও ময়দা সুন্দরী নয়,, হ্যাঁ এটা সত্যি যে আগে অনেক মেকাপ করতাম কিন্তু এখন করি না,, তাই আমি ময়দা সুন্দরী নয় ওকে।
হমমম এই জন্যই তো এতো সতেজ আর সজীব লাগছে যেনো ভোরের ফোঁটা সদ্য কোন এক রজনীগন্ধা (নেহাল)
হম?? হয়ত। তা আপনি হঠাৎ এখানে কেনো?? কি করছেন এখানে??
ওই যে কাল তুমি যেটা করতে বললে সেটাই করছি।
কোনটা বলুন তো??
চেষ্টা,,,। চেষ্টা করছি, কাউকে ভোলার আর কাউকে আপন করার।
ওহ ভালো তো,, তা আমার কাছে কি চাই??
আপন করতে চাই,,, ভালোবাসতে চাই,, অতীত ভুলতে চাই,, প্লিজ সাহায্য করো আমায় (মীরার হাত ধরে বলল নেহাল)
মীরা শুধু ড্যাব ড্যাব করে নেহাল এর দিকে তাকিয়ে ছিলো,, তারপর আস্তে করে নিজের হাতটা নেহাল এর হাত থেকে ছাড়িয়ে পিছন ফিরে গেলো।
করবে না আমায় সাহায্য?? আমি তোমার প্রতি যা অন্যায় করেছি সেটা শুধরানোর একটা সুযোগ দিবে না আমায়?? আমি কি এতোটাই দোষী?? এই অধম কে কি আর একটা সুযোগ দেওয়া যাই না??
মীরা নেহাল এর কথা শুনেও না শুনার ভান করে চলে যেতে লাগলো,, তারপর কিছুদূর গিয়ে পিছন ফিরে দেখল নেহাল মাথা নিচে করে দাঁড়িয়ে আছে,, মীরা চিৎকার করে বলল।
পুলিশ বাবু আমি আর একি ভুল বার বার করবো না,, আর আপনার সাথে তো প্রেম করবোই না আপনি শুধু কষ্ট দেন, তাই এখন থেকে যা হবে সব বিয়ের পর হবে,, সব কথা বিয়ের পর হবে ওই যে কি যেনো বলে (একটু ভেবে) হ্যাঁ, বলব কথা বাসর ঘরে, , বাড়ি গিয়ে নিজের বাবা মা আর ভাই কে আমার বাড়িতে বারাত নিয়ে পাঠান তারপর সব কথা হবে। আপনি আমার সাথে যা যা করেছেন সব কিছু বিয়ের পর উসুল করবো (এই বলে মীরা দৌড়ে চলে গেলো)
আর নেহাল মীরার কথা শুনে ওখানে কিছুক্ষণ হাবলার মতো দাড়িয়ে থাকলো তারপর কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেল।
,,,,,রাতে,,,,,
ওই বউ কই তুই (রুমে আসতে আসতে বলল মেহরাব)
কি হয়েছে এভাবে ষাঁড়ের মতো চিল্লাচ্ছেন কেনো?? আমি কালা নাকি যে জোরে না ডাকলে শুনতে পাবো না (কাপড়ে হাত মুছতে মুছতে রুমে এসে বলল মাহি)
মাহিকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বলল মেহরাব,,, কি মেড্যাম আপনি রেডি তো আবার নাচ করার জন্য??
মানে??
মানে হলো শেষ মেষ আমাদের নেহাল বিয়ে করতে রাজি হলো,, ও নাকি বিকালে বাড়ি গিয়ে সোজা মেঘ আর আংকেল আন্টির সামনে গিয়ে বলেছে ওহ মীরাকে বিয়ে করতে চাই।।
কিহ?? সত্যি?? ইয়ে কি মজা (মাহি খুশিতে লাফিয়ে উঠলো আর ভুল বসত মাহির হাত মেহরাব এর নাকে লাগল)
আহ এই মেয়ে খুশিতে বরের নাক ফাটিয়ে দিবি নাকি (মেহরাব নাক ধরে বলল)
অ! লেগেছে বুঝি সলি বাবুতা (সরি) আদুরে গলায় বলল।
হুম লেগেছে তো তবে নাকে নয় এখানে (ঠোঁট দেখিয়ে) আদর করে দে (মাহির কমর জরিয়ে বলল)
বদ লোক ছাড়ুন আমাকে,, সব সময় শুধু লুচুগিরি (মাহি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল)
উমম ছাড়ার জন্য তো ধরিনি জান,, আমি তো আমার পাওয়া নিয়েই ছাড়বো আর তুই যখন লুচু বলেছিস তখন তো একটু লুচুগিরি করতেই হয়,, এই বলে মাহির ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁটের ভাজে নিয়ে নিলো।
,,,,,পরদিন নেহাল এর পুরো পরিবার মীরার বাড়িতে গেলো, ওখানে মাহি মেহরাব আর মাহির পুরো পরিবার সহ মেহরাব এর পরিবারের সবাই ছিলো,,,আর কয়েকমাস পর ইশিতার বিয়ে তাই ঠিক করা হলো নেহাল আর মীরার বিয়েও ওইদিন হবে মানে দুটো বিয়ে একসাথে হবে তাও আবার গ্রামে, সেই আগের মতো জাকঁজমক করে,, ঠিক যেমন মেঘলার বিয়েতে হয়েছিলো তেমন,,,, মাহির ছোট মামা নানু মামী আর ইশিতা ভিতিও কলে ছিলো,, ইশিতা তো সেই খুশি,,
যেহেতু বিয়ে আরো পরে হবে তাই,, আজকে শুধু আংটি বদল করে রাখা হলো,,,,, আংটি পরনোর সময় মীরার লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো আর৷ নেহাল আংটি টা পরিয়ে দিয়ে বড়সর একটা শ্বাস নিলো যেনো অনেক বড় একটা বোঝা কাধ থেকে নেমে গেলো, এখন নিজেকে হালকা লাগছে।মেহরাব মাহির পাশে দাঁড়িয়ে মাহির কানে কানে বলল।
কি বলিস আমরাও আবার বিয়েটা করে ফেলি??
সখ কত বদলোক একটা (এটা বলেই মাহি মুচকি হেসে ফেলল)
(ওরে বাবা কতবড় একটা পার্ট দিলাম?☺)
চলবে,,,,,,,,??
#ভালোবাসি_বুঝে_নাও??
#পর্ব_৩৪ শেষ
#সুমাইয়া_সুলতানা _সুমী(writer)
.
,,,,,,,,৩ বছর পর,,,,,,
ওটির সামনে সমানে পায়চারি করছে মেহরাব কেননা ভিতরে যে তার অবুঝ পরী টার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে খুবি যন্ত্রণা দায়ক চিৎকার ভেসে আসছে,,, চেয়ারের উপর মাহির মা আর মেহরাব এর মা বসে আছে আর ওনাদের মীরা এবং মেঘলা শান্তনা দিচ্ছে, মীরা ৪ মাসের পেগনেন্ট,,, মেঘলার মেয়েও বড় হয়ে গেছে প্রায় আড়াই বছর ছুঁই ছুঁই।
মেহরাব এমন করিস না শরীল খারাপ করবে তো এখানে একটু চুপচাপ বস (মেঘ)
হ্যাঁ মেহরাব ভাই,, ভাইয়া ঠিকি বলেছে তুমি এখানে একটু বসো,, এভাবে টেনসন করলে কি সব ঠিক হয়ে যাবে?? (নেহাল)
তোরা এসব কি বলছিস, তোরা শুনতে পাচ্ছিস না ভিতরে মাহি কতটা কষ্ট পাচ্ছে আর আমি এখানে চুপচাপ কী করে বসে থাকবো,, আমার তো দম আটকে আসছে (মেহরাব)
তখনি মেঘ আর মেঘলার মেয়ে মেহের মেঘের মা আর বাবার সাথে আসলো,, দূরে বাবাকে দেখতে তে পেয়ে দাদুর কোল থেকে নেমে দৌড়ে গিয়ে বাবার পা জড়িয়ে ধরল।
মেঘকে হঠাৎ পিছন থেকে কেউ জরিয়ে ধরায় পিছনে তাকিয়ে দেখলো ছোট ছোট হাত দিয়ে তার রাজকন্যা ওর পা জরিয়ে ধরে আছে,, মেঘ নিচু হয়ে মেয়েকে কোলে নিয়ে বলল।
তুৃমি এখানে কার সাথে আসলে আম্মু(মেঘ)
আমি তো দাদুর সাথে এসেছি আব্বু(আদো আদো গলায় বলল মেহের)
মেহরাব আর সয্য করতে না পেয়ে ওখানের দেওয়াল ঘেঁষে ফ্লোরে বসে পড়ল,, নেহাল ওকে ধরতে গেলে মেহরাব হাত দিয়ে থামিয়ে দিলো।
মামার কি হয়েছে আব্বু??(মেহের)
তোমার মামার অনেক মন খারাপ ওই ওই রুমের ভিতর তোমার মামনি আছে (মাহিকে মামনি বলে মেহের) তোমার মামনির অনেক কষ্ট হচ্ছে তো তাই তোমার মামার অনেক মন খারাপ (মেঘ)
তাহলে তোমরা মামনিকে ওখান থেকে বার করে এনে মামার কাছে দাও তাহলেই তো হয়।
হুম আনবো তো শুধু তোমার মামনি নয় তার সাথে তোমার মিষ্টি একটা ভাইকেও আনবো একদম ছোট্ট (মেঘ এমনিতেই বলল যে ভাইকে আনবো,, আসোলে মেহের শুধু ভাই এনে দাও বলে সারাক্ষণ তাই বলল মেঘ,,, মেহরাব অবশ্য বলেছিলো যে স্নো করে দেখতে যে কি হবে কিন্তু মাহি নিষেধ করেছিলো বলেছিলো এসব করার কোনো দরকার নাই আল্লাহ যা দিয়ে খুশি হবে আমরাও তা নিয়ে খুশি,,, তাই আর স্নো করানো হয়নি)
সত্যি??
হুমম তো। বাবার কথা শুনে মেহের মেঘের কোল থেকে নেমে গেলো তারপর গুটিগুটি পায়ে মেহরাব এর কাছে গেলো,, গিয়ে মেহরাব এর কোলের উপরে বসে মেহরাব এর মুখে হাত দিয়ে বলল,, কাঁদে না।
মুখে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে মেহরাব মাথা উঠিয়ে তাকিয়ে দেখলো, মেহের,, আর কিছুক্ষণ পর আমারও এরকম কেউ আসবে এমন ছোট্ট ছোট হাত দিয়ে আমায় ছোঁবে মনে মনে এটা ভেবে মেহরাব মেহের এর মাথায় হাত রেখে ওকে বুকের সাথে চেপে ধরল,,,
মামনির কিছু হবে না,,, দেখবে মামনি ভাইকে নিয়ে জলদি চলে আসবে (মেহের)
অনেকক্ষণ পর ওটির লাইট অফ হলো,, আর নার্স সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে একটা ছোট্ট ফুটফুটে বেবি নিয়ে বেরিয়ে আসলো,,, সবাই খুব খুশি, সবাই এগিয়ে গেলো নার্স এর দিকে মেহরাব ও মেহের কে নিয়ে নার্সের দিকে গেলো,,,,
নার্স আমার ওয়াইফ কেমন আছে?? (ভয়ে ভয়ে জিগেস করল মেহরাব)
ডোন্ট ওয়ারি, ওনি একদম ভালো আছে,,, প্রথমে একটু প্রবলেম হয়েছিলো কিন্তু এখন ওনি সম্পূর্ণ ঠিক আছে,,, একটু পরে ওনাকে কেবিনে দেওয়া হবে,,,।
নার্সের কথায় যেনো মেহরাব একটু হলেও সস্তি পেলো, তবে মাহিকে নিজে চোখে না দেখা অবধি শান্তি নেই,, নার্সের কোল থেকে কাঁপা কাঁপা হাতে বেবি নিলো,,, বেবি চোখটা খুলে টিপটিপ করে চারিদিকে তাকাচ্ছে, মেহরাব আলতো করে এক আঙুল দিয়ে বেবির গালে ছোঁয়ালো, হ্যাঁ এটা ওর আর ওর অবুঝ পরীর ভালোবাসার প্রতীক,,,। এখন ওকেও কেউ বাবা বলে মিষ্টি করে ডাকবে যে ডাকটা শুনলে মনটা শীতল হয়ে যাবে।
কিছুক্ষণ পর মাহিকে বেডে দেওয়া হলো,, স্যালাইন চলছে, একে একে সবাই মাহির সাথে দেখা করে বাইরে চলে আসলো,, তারপর মেহরাব আসলো বেবিকে পাশেই দোলনাই রাখা হয়েছে মাহি একহাত চোখের উপর দিয়ে শুয়ে আছে৷ মেহরাব গিয়ে আস্তে করে মাহির পাশে বসে মাহির মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে একটা চুমো খেয়ে বলল।
,,শিশির,,
মানে??(ভ্রু কুঁচকে বলল মাহি)
শিশির হলো তোর প্রশ্নের উত্তর আর আমার ছেলের নাম। কি ঠিক উওর দিয়েছি তো??
মাহি মুচকি হেসে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল,,, তারপর বলল।
একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পুরো প্রায় ৫ বছর লাগিয়ে দিলেন।??
বলছিলাম তো সঠিক সময় আসলে উওর দেবো,, আমি তো অনেক আগেই উওর পেয়ে গিছিলাম কিন্তু বলিনি।
তারমানে আপনি উওর টা আগে থেকেই জানতেন আর বেবির জন্য অপেক্ষা করছিলেন তাই তো??
নাহ আগে থেকে অবশ্য জানতাম না অনেক ভেবে তারপর পেয়েছি আর সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করছিলাম আজকে সেই সময়টা এসেই গেলো।
আচ্ছা যদি ছেলে না হয়ে মেয়ে হতো তাহলে কি করতেন,?? উওর টার?
উমম মেয়ে হলেও এই নামটাই রাখতাম (মুচকি হেসে বলল মেহরাব)
এখন বলেন আপনি বুঝলেন কীভাবে যে ওই প্রশ্নের উত্তর টা,, শিশির হবে (মাহি)
কি করে বুঝলাম শুনবি?? প্রথমত তুই বলছিস যে আমরা তিন জন শীতের সময় বিকেল বেলা পার্কে গিছিলাম,, তো আমরা তো জানিই যে শীতের সময় বিকেল এর দিকে হালকা হালকা শিশির পড়ে যেমটা ভোরে হয় তেমন টা,, তো মেঘলা যেহেতু আগে গিয়েছে আর ওকে আগে ফুল বানানো হয়েছে তাহলে ওর ফুলের উপর বেশি শিশির পড়বে আর আরো অনেক পরে তুই গিয়েছিস তাহলে তোকে আরো অনেক পরে ফুল করা হয়েছে তাহলে তোর ফুলের উপর অল্প শিশির পড়বে,, তো যে ফুলে অল্প শিশির পড়বে সেটাই তুই,,, আর এভাবেই উওর টা পেয়ে গেলাম,, সিম্পল (মেহরাব)
বাবা গো কি বুদ্ধি,,, হুম বুদ্ধি তো হতেই হবে দেখতে হবে না বরটা কার (মাহি)
তাই নাকি
হুম তাতো বটেই।
মেহরাব হেসে মাহির কপালে নিজের কপাল ঠেকালো আর বলল,, ভালোবাসি বউ।
আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি মিষ্টার বর,,
হসপিটালে তিনদিন থাকার পর মাহিকে বাসায় নিয়ে আসা হলো,,,, চৌধুরী বাড়ি তো এখন একদম রমরমা হইচই একে বারে সেই রকম অবস্থা,, আর মেহরাব তো মাহির যতনে কোনো রকম কমতি রাখছে না,, ডয়িং রুমে সবাই বসে আছে,, মেঘ মেঘলা মাহির মা বাবা আর মেহরাব এর বাবা মা সবাই মাহি ওর রুমে আছে এসময় সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা করলে নাকি প্রবলেম হবে তাই মেহরাব ওকে নামতে দেইনি মেহরাব ও মাহির সাথে রুমেই আছে,, বেবিকে মাহির কাছ থেকে খাইয়ে নিয়ে মাহির মা বেবিকে কোলে নিয়ে সবার সাথে বসে আছে।
এই সরো সরো আমি ভাইকে দেখবো (মেহের আস্তে আস্তে এসে বলল)
আমার মা টা এতোক্ষণ কোথায় ছিলো শুনি (মেঘ মেহের কে কোলে নিতে নিতে বলল)
আরে আমি তো ভাই এর জন্য এটা আনতে গিছিলাম (হাতের কমলা টা দেখিয়ে বলল) তোমারা ফলগুলো এতো উপরে রাখো আমি তো নিতেই পারছিলাম না তারপর চেয়ারে উঠে নিয়েছি(আদো আদো গলায় বলল,,,,আর কমলা সহ আরো ফল একটা ঝুড়িতে করে ডাইনিং টেবিলে রাখাছিলো তাই বলল যে উপরে ছিলো)
এ বাবা তুমি এটা কি করবে??(মেঘলা)
কেনো এটা ভাইকে দেবো ভাই খাবে,,, আমি তো আপেল আনতাম কিন্তু কালকে দেখিলাম ভাইয়ের একটাও দাঁত নাই তাই কমলা এনেছি ,, নাও ভাইকে খাইয়ে দাও (মেঘলার দিকে কমলা টা দিয়ে বলল)
ওরে আমার পাকা বুড়িটা, ভাই তো এখন এগুলো খাবে না।
কেনো?? আর ভাই সব সময় এমন ঘুমাই থাকে কেনো?? ছোট মনি তাই?? আচ্ছা ও চোখ খুল্ললে খাইয়ে দিও নাও (মেহের)
ভাই তো এখনো অনেক ছোট তাই এখন ও এগুলো খাই না সোনা,, আর ভাই যখন তোমার মতো বড় হবে তখন তুমি এগুলো ওকে খাইয়ে দিও ওকে??(মেঘ)
আচ্ছা ঠিক আছে।
,,,,রাতে,,,,
আরে আমাকে এভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?? (মাহি)
গেলেই দেখতি পাবি,, আর এতো কথা বলিস কেনো তুই(মাহিকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল মেহরাব)
আরে রুমে বেবি একা আছে তো যদি কান্না করে।
আমি কি তোর মতো পাগল নাকি,, আমি মা কে বেবির কাছে থাকতে বলেছি,, আর আমরাও একটু পরেই নিচে চলে যাবো।
তারপর মেহরাব মাহিকে নিয়ে ছাঁদে নিয়ে এনে দোলনাই বসিয়ে দিলো,, নিজেও ওর পাশে বসল। মাহিকে একহাতে জরিয়ে ধরে বলল।
থাংক্স বউ আমার না বলা অনুভূতি গুলো না বলা ভালোবাসা গুলো বুঝে নেওয়ার জন্য,, আমি যে তোকে কত ভালোবাসি তা তুই কল্পনাও করতে পারবি না (মাহির কপালে চুমো দিয়ে বলল)
হুম আপনি তো বলেনও নাই শুধু বলতেন #ভালোবাসি_বুঝে_নাও ,,, আরে আমি কি জাদু জানি নাকি যে আপনার মনের কথা বুঝতে পারবো।
তাও যে বুঝেছিস এটাই আমার কাছে অনেক,,, আর আমাকে এতো সুন্দর একটা গিফট দেওয়ার জন্য আমাকে বাবা হওয়ার যে অনুভূতি টা এটা অনুভব করানোর জন্য তোকে অনেক অনেক অনকে ভালোবাসা।
উমমম আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি। (মেহরাব এর বুকে মুখ গুজে বলল মাহি)
তারপর,, তারপর আর কি ওরা সুন্দর করে সংসার করবে,,, ওদের জীবন আরো সুন্দর আর সুখময় হোক।
সমাপ্ত